রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে পর্ব-২৩

0
502

#রাখি_আগলে_তোমায়_অনুরাগে💕
#written_by_Liza
#২৩তম_পর্ব

কেন আমার এতবড় ক্ষতিটা করলেন। কি দরকার ছিলো ঐ বদমাসকে জেলে দেওয়ার। আজ আমার জন্য আমার বাবা-মা মৃত্যুর পথে”

ইন্সিয়া চোখ মুছে চুপচাপ বসে আছে বিছানায়।অরীন দরজার আড়ালে ইন্সিয়ার কথা শুনে ফেলে,অরীন কেউকে কিছু না জানিয়ে সোজা আরাশকে গিয়ে বলে দেয়
“জানিস ইন্সু কাঁদছে।মনে হয় কিছু একটা হয়েছে। তুই যাকে জেলে দিয়েছিস তার কথা বলে বলে কাঁদছিলো সে। মনে হচ্ছে ওকে কেউ কিছু বলেছে”

আরাশ ইন্সিয়ার কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে বলে “অভিক রয়? মানে ইন্সিয়ার ঐ স্যার? তো কি হয়েছে জেলে দিয়েছি! যার যেটা প্রাপ্য সেটাই পাবে। ইন্সিয়ার কান্নাতে আমার কিছু না। আমার ইচ্ছাতে সব হচ্ছে আগামীতেও হবে,এখানে ইন্সিয়ার কথায় কিছু যায় আসে না আমার”

ও কাঁদছে, তুই এটা বলছিস? মেয়েটার কিছু না হলে হুট করে কাঁদবে কেন? (অরীন)

সে আমাকে কখনো বলবে না।তার চেয়ে বরং আপু তুই জিজ্ঞেস করে নিস,আমি একটু বাহিরে যাচ্ছি।(আরাশ)

কথাগুলো সেরে দ্রুত গতিতে ফোন বের করে কাকে কল দিতে দিতে চলে গেলো আরাশ,অরীন আরাশের কথায় থ বনে গেলো। অরীন বিড়বিড় করে বলছে “ভাই তোর মতি গতি আমি বোন হয়েই বুঝি না। অন্য মেয়ে কি আর বুঝবে।”

অরীন ইন্সিয়ার রুমে চলে গেলো,ইন্সিয়ার চোখমুখ বেশ ফুলে আছে কান্না করার ফলে, অরীনকে দেখে ইন্সিয়া চোখ মুছে স্বাভাবিক হতে চেষ্টা করে। অরীন ইন্সিয়াকে দেখে মৃদু হেসে বলে “কি হয়েছে ইন্সু? মুখটা এত মলীন কেন? সকালে আরাশের কথায় খারাপ লেগেছে?”

না আপু তেমন কিছু না,এমনিই (ইন্সিয়া)

আমি বুঝি সব,একটু আগে কাঁদছিলে কেন? কি হয়েছে তোমার? আমাকে বলো (অরীন)

কই আপু না তো। এইযে আমি ঠিকঠাক, কাঁদবো কেন? (ইন্সিয়া)

ইন্সিয়া অরীনের কাছ থেকে এড়িয়ে যায় সব,অরীন জোর করে না ইন্সিয়াকে,কারণ বেশি জোর করলে ইন্সিয়া অস্বস্তি ফিল করবে তা অরীন জানে।

উষ্মী এসে ইন্সিয়াকে ডাকতে শুরু করে “ইন্সু একটু এদিকে আই তো। আমাকে একটু হেল্প কর”

ইন্সিয়া উষ্মীর সাথে চলে যায়,বিছানায় ইন্সিয়ার ফোন পড়ে আছে। অরীন ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা ইন্সিয়াকে দিতে গেলেই টুং টাং আবার ম্যাসেজ আসতে শুরু করে, ফোনের স্ক্রিনে ম্যাসেজ গুলো ভেসে উঠেছে, অরীনের চোখ পড়তেই অরীন ম্যাসেজ ফোল্ডার খুলে দেখতে থাকে ম্যাসেজ, অরীনের চোখ আটকে যায় একটা ম্যাসেজে,ম্যাসেজে লিখা ছিলো

“খবরদার এই কথা যেনো কোথাও লিক না হয়। সোজা আমার কথামতো কাজ করলে তোর বাবা-মা বেঁচে যাবে।নয়তো বুঝিস’ই তো কি হাল করতে পারি আমি। অভিক রয়ের কেইস টা তুলে ফেল জলদি। আজ রাতে নিজেকে সমপর্ণ করবি স্বেচ্ছায়। যদি গড়মিল করিস তাহলে শেষ করে দেবো তোর মা-বাবাকে”

অরীন ম্যাসেজটুকু পড়ে কাঁপছে, অরীনের কথা বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে,অরীন বিড়বিড় করে নিজে নিজে বলছে “তার মানে ইন্সিয়া এইজন্য ডিপ্রেসেড? আমার এক্ষুনি আরাশকে জানাতে হবে। নয়তো বিপদ ঘটে যেতে পারে, ইন্সিয়াকে গিয়ে জিজ্ঞেস করবো ব্যপারটা? না না থাক, ইন্সিয়াকে জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে না। তার চেয়ে বরং নিউ ম্যাসেজটাই ডিলেট করি,তাইলে সন্দেহ হবে না ইন্সিয়ার”

অরীন নতুন ম্যাসেজটুকু ডিলেট করে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে ইন্সিয়ার কাছে যায়। ইন্সিয়া কিচেনে উষ্মীর সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে, অরীন কিচেনে গিয়ে ইন্সিয়াকে বলে “ইন্সু এই নাও তোমার ফোন। ঘর ভর্তি মেহমান,যেখানে সেখানে ফোন ফেলে রাখলে চুরি হয়ে যাবে”

অরীনের হাতে ফোন দেখে ইন্সিয়া ঢোক গিলে হাত বাড়িয়ে দেয় ফোনের জন্য,অরীন স্বাভাবিক অবস্তায় হেসে বলে “নাও ফোন।”

ইন্সিয়া অরীনের মুখ দেখে স্বস্তির শ্বাস নেয়,ইন্সিয়া ভেবে নিয়েছে অরীন কিছুই দেখে নি। অরীন চুপচাপ ফোন দিয়ে চলে যায় রুমে, রুমে গিয়ে আরাশকে ফোন দিয়ে এক এক করে সব বলে দেয়, আরাশ অরীনের কথা শুনে বলে “হুম তাহলে এই ব্যপার। থাক ইন্সিয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করে ডিপ্রেসেড করিস না,সে এমনিতেও ভীতু। রাতে দেখছি ব্যপারটা”

আরাশ ফোন কেটে দেয়,অরীন বাচ্ছাকে খাওয়াতে চলে গেলো রুমে।

দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে সবাই যে যার রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে, ঘুম নেই ইন্সিয়ার চোখে। ইন্সিয়ার চোখ দুটো বেশ ফুলে আছে। ইন্সিয়া বারান্দায় ফুলগাছটার টবের পাশে দাড়িয়ে বাহিরের দৃশ্য দেখছে আনমনে। হঠাৎ ইন্সিয়া খেয়াল করে, আরাশের গাড়ি গেইটে ঢুকছে। ইন্সিয়া সরে যেতে চাইলেই থমকে দাড়িয়ে যায় কি যেনো দেখে, আরাশের গাড়ির ভেতর থেকে রীধী বেরোচ্ছে, রীধীকে দেখেই ইন্সিয়ার রাগ হচ্ছে৷ ইন্সিয়া চোখমুখ খিঁচিয়ে আরাশের দিকে তাকিয়ে আছে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে। আরাশ সব খেয়াল করছে ইন্সিয়ার কান্ড। আরাশ ইন্সিয়াকে দেখিয়ে রীধীকে নিয়ে কথা বলছে। রীধী ইন্সিয়াকে দেখে আরাশের সাথে ঘা ঘেষে কথা বলতে গেলেই ইন্সিয়া সরে যায়, ইন্সিয়ার হঠাৎ করে খুব রাগ হচ্ছে আরাশ আর রীধীর উপর,কিন্তু কেন হচ্ছে ইন্সিয়া বুঝতে পারছে না। ইন্সিয়া রাগে কাঁপছে। ইন্সিয়ার চোখে ভেসে উঠছে আরাশ আর রীধীর একে অপরের সাথে ঘা ঘেষে কথা বলার দৃশ্য।

ইন্সিয়া যাওয়ার পর আরাশ রীধীর কাছ থেকে দুরে গিয়ে বলে “রীধী ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট,আপনাকে আমার কাজে এনেছি সো সেখানেই ফোকাস দিন”৷

রীধী রেগে বিড়বিড় করে বলে “আপনাকে আমার করবোই আরাশ স্যার”

রীধী আরাশকে ঘরে দেখে ইহান বলে “রীধী কেমন আছেন?”

আমি তো ভালো থাকবোই,আরাশ স্যার যতক্ষন আছেন (রীধী)

ইহান চোখ বড় বড় আরাশের দিকে তাকিয়ে আছে, আরাশ রীধীকে ধমক দিয়ে বলে
“বেশি কথা বলেন আপনি।যেটা আমার অপছন্দ”
রীধী চুপ করে দাড়িয়ে আছে, ইহান আরাশকে একপাশে নিয়ে গিয়ে বলে “রীধীকে কেন এনেছিস? রীধীর কি কাজ?”

রীধীকে এনেছি একটা কারণে, রীধীকে আমার সাথে দেখলেই ইন্সিয়া নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে রাগে, রীধীকে ইন্সিয়া সহ্য করতে পারে না। এই না পারার কারণটা আমি জানতে চাই। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলবো। আর হে শোন ইন্সিয়া এখানে থাকবে না,আমার সাথে আমার বাড়িতে থাকবে (আরাশ)

মানে,কেন? এখানে থাকলে কি সমস্যা? উষ্মী আছে এখানে। ওর ভালো লাগবে (ইহান)

ওঁকে এখানে রাখা রিস্ক,আজ অরীন আপু বললো,ইন্সিয়াকে কে যেনো থ্রেড দিচ্ছে অভিক রয়ের কেইস তুলে ফেলার জন্য,নাহয় ইন্সিয়ার আব্বু আম্মুর ক্ষতি করবে। বর্তমানে ইন্সিয়ার আব্বু আম্মু বন্দী তাদের কাছে। ইভেন ইন্সিয়াকে রাতে দেখা করতে বলেছে তারা,ইন্সিয়া নিজেকে তাদের কাছে সমপর্ণ করতে যাবে যতটুকু জানি। কিন্তু আমি থাকতে এটা হতে দেবো না। ওর বা ওর ফ্যামিলির কারো উপরেই আঁচ আসতে দেবো না। আমি চাই না আমার মতো কেউ অল্প বয়সে মা-বাবা হারিয়ে অনাথ হোক,আমি সেইফ করবো ওদের। (আরাশ)

আরাশের কথায় ইহান কি বলবে বুঝতে পারছে না,ইহান দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আরাশের কাঁধে হাত রেখে বলে
“ঠিক আছে, তুই যা ভালো বুঝিস তাই কর। আমি আছি তোর পাশে।তবে হ্যাঁ ইন্সিয়ার মনে তোর জন্য ঘৃণা ঢুকতে দিস না। মেয়েটা হয়তো অজান্তেই তোর প্রতি আসক্ত,তার সফট কর্ণারে আঘাত করিস না।”

আরাশ রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে “সবাই সব নিমিষেই পেয়ে গেলে কদর থাকে না, আর আরাশ সহজেই সব হাসিল করতে পছন্দ করে না, লাইফ ইস গেইম। সো চিল”

আরাশ ইহানকে কথাগুলো বলে রীধীর কাছে চলে গেলো, আরাশ নিজের প্রয়োজনে রীধীকে ব্যবহার করছে, রীধী বুঝতেও পারলো না।
আরাশ ইন্সিয়াকে দেখলেই রীধীর সাথে বিজি হয়ে পড়ে, আরাশ চাই ইন্সিয়া ব্যথা পাক। এতে আরাশের আত্মতৃপ্তি মিটে।

রীধী আরাশকে কাছে পেয়ে এতটা সহজেই মিশতে পেরে খুব খুশি, রীধী ইন্সিয়াকে দেখিয়ে দেখিয়ে অরীনকে বলে “অরীন আপু আরাশ কিন্তু আমাকে চায়,এখন আপনি রাজি থাকলে আরাশ স্যার আমাকে বিয়ে করতে রাজি”

অরীন আরাশের দিকে তাকিয়ে আছে রাগীদৃষ্টিতে, আরাশ তখন ল্যাপটপে কাজ করছে,আরাশের কোনো খেয়াল নেয়। অরীন ইন্সিয়ার দিকে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে রীধীকে “তোমাদের ব্যপার তোমরা বুঝো।আমি কি বলবো!!

ওহ কাম’অন অরীন আপু, আপনি আরাশ স্যারের বড় বোন। আপনি না বললে কেমনে কি? (রীধী)

ইন্সিয়া রাগে কি করবে ভেবে না পেয়ে অরীনের উপর চিৎকার দিয়ে বলে উঠে “অরীন আপু আমার মাথা ব্যথা করছে, আমি একটু ঘুমাবো”

ইন্সিয়ার এক চিৎকারে অরীন ড্যাব ড্যাব করে ইন্সিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে, আরাশ সোফায় ল্যাপটপ এক পাশে রেখে এদিক ওদিক তাকিয়ে অরীনকে ইশারায় জিজ্ঞেস করছে “কি হয়েছে?”

এদিকে রীধী রাগে হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে পড়েছে। অরীন মনে মনে ভাবছে ইন্সিয়ার কান্ড দেখে “আরে আজব তো আমি কবে জোরে কথা বললাম,ইন্সিয়া এত রিয়েক্ট করলো কেন? রীধীকে না বলে আমাকে কেন বললো এসব? কিছুই বুঝলাম না।”

রীধী যাওয়ার পর ইন্সিয়া বিছানার এক পাশে মাথায় বালিশ গুজে শুয়ে পড়ে, ইন্সিয়ার চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে, ইন্সিয়া বুঝতে পারছে না তার কারণ। ইন্সিয়া চোখের পানি হাতে নিয়ে ভালো করে দেখছে আর ভাবছে
“কেন কাঁদছি আমি? কেন ভেতরটাই এত কষ্ট হচ্ছে? কি কারণে? কেন এভাবে অরীনকে আপুকে কথা শুনালাম?হয়েছে টা কি আমার!”

ইন্সিয়ার কাছে কোনো উওর নেই,ইন্সিয়া পারছে না চিৎকার করে কাঁদতে,ইন্সিয়ার মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে, ইন্সিয়া মায়ের কথা মনে করে কাঁদছে।

অরীন কিছু বুঝতে পারছে না৷ হচ্ছেটা কি,অরীন একবার আরাশের দিকে তাকায় একবার ইন্সিয়ার দিকে তাকায়। অরীন মনে মনে বলছে “রীধী এসব কি বললো! আরাশ আর রীধীর বিয়ে? এ কি করে সম্ভব? ইন্সিয়ার’ই বা কি হলো। সে কেন এমন করলো?”

অরীন হতাশ হয়ে চলে গেলো নিজের রুমে,আরাশ সোফায় বসে আছে রুমে আরাশ ইন্সিয়া একা৷ আরাশ অরীনের পিছু পিছু গিয়ে দাড়ায় আর বলে “আপু রীধী তোকে কি বলেছে?”

তোর রীধীকে জিজ্ঞেস কর,তুই নাকি বিয়ে করবি ওঁকে? আমি এ ব্যপারে মত দিতে পারলাম না ভাই। মাফ করিস, চলে যা এখন। মেজাজ বিগড়ে আছে আমার। (অরীন)

ধ্যাত, কিসের বিয়ে, রীধীর কথা কিভাবে বিশ্বাস করিস তুই? কোনো বিয়ে টিয়ে হচ্ছে না। (আরাশ)

তাহলে ঐ মেয়ে বললো কেন? (অরীন)

পাগলে প্রলাপ শুনে লাভ আছে? (আরাশ)

হুম, ইন্সিয়া এভাবে রিয়েক্ট করলো কেন? সত্যিই কি ওর ঘুম পেয়েছে? (অরীন)

সে রীধীকে সহ্য করতে পারে না। তার’ই রিয়্যাকশন দেখালো সে (আরাশ)

আরাশের কথায় অরীন ফিক করে হেসে বলে “বুঝেছি এবার।”

আচ্ছা আপু,রাতে একটু ইন্সিয়ার দিকে নজর রাখিস,আমার ঐ জায়গাতে পৌছাতে হবে ওর পিছু পিছু। (আরাশ)

ঠিক আছে, দেখছি ব্যপারটা (অরীন)

চলবে….