অনুভবের প্রহর পর্ব-২২

0
505

#অনুভবের_প্রহর
#অজান্তা_অহি (ছদ্মনাম)
#পর্ব_____২২

রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিল প্রহর। কপালের চুলের ভাঁজে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে তার। ওড়নার এক অংশ দিয়ে মুছে নিল। আজ সারাটাদিন দাঁড়িয়ে ল্যাব প্র্যাক্টিস করতে হয়েছে। ফিজিক্স নিয়ে পড়ার মহাযন্ত্রণা। বিশাল সাইজের কোর্স নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখন। পাস মার্কস উঠানো নিয়ে টানাটানি অবস্থা। অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ একটু বেশি ক্লান্ত লাগছে। ঘন ঘন শ্বাস ফেলল সে। আপাতত রুমে দিয়ে শুয়ে পড়বে। লম্বা একটা ঘুম দরকার। গলির মধ্য দিয়ে দ্রুত হাঁটতে লাগলো।

কিছুদূর আসতে একটা কুকুর চোখে পড়লো। দৃষ্টি তার পানে। ক্লান্তির মাঝে ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো প্রহরের। হাঁটার গতি কমিয়ে দিল। সে প্রথম যখন অনুভবের বাড়ি আসে গলির মাথায় এই কুকুরটাকে দেখেছিল। তখন অসম্ভব ভয় পেতো একে। কিন্তু তারপর থেকে নিয়মিত দেখতে দেখতে, ভয়কে একটু একটু করে ফেস করতে করতে এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। এই বয়স্ক কুকুরটা এখন তার বন্ধু বলা চলে। প্রতিদিন ভার্সিটি থেকে ফেরার পথে ঠিক এভাবে গলিতে শুয়ে থাকে। যেন তারই জন্য অপেক্ষা করছে। প্রহর কাছে গিয়ে পায়ে ভর দিয়ে বসে পড়লো। হ্যান্ডব্যাগ থেকে আধ খাওয়া বিস্কুটের প্যাকেটটা হাতে নিল। কাগজ বিছিয়ে বিস্কুট গুলো রেখে সে ইশারায় খেতে বললো। কুকুরটা তৎক্ষনাৎ বিস্কুট কামড়ে ধরলো। প্রহর আর অপেক্ষা করলো না।

দরজায় তালা ঝুলানো৷ তার মানে অনুভব এখনো ফেরেনি। চাবি দিয়ে তালা খুলে সে ভেতরে ঢুকলো। ভোরবেলা অনুভব তার আগে বের হয়েছে। সারাদিন কোথায় আছে, কি করছে তা প্রহরের অজানা। না চাইতেও বড্ড চিন্তা হতে লাগলো। রুমে ঢুকে সে ফোনটা হাতে নিল। একবার খোঁজ নেওয়া দরকার৷ কিন্তু অনুভব কি তার কলের রেসপন্স করবে? তবুও মনের শান্তির জন্য সে ফোন দিল। একবার রিং হয়ে গেল। কিন্তু কল ধরলো না। শ্বাস ফেলল প্রহর। ফোনটা বিছানায় ফেলে রেখে রান্নাঘরে ঢুকলো। ক্ষুধা লেগেছে। আজকের দুপুরের খাবারটাও স্কিপ হয়ে গেছে।

রান্নাঘরের চারপাশে একবার নজর বুলাতে মন খারাপ ভাব বেড়ে গেল তার। একটা নির্দিষ্ট মানুষের কথা মনে পড়লো৷ বাড়িতে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ ওই একজন মানুষকে প্রচন্ড মিস করে। তার শ্বাশুড়ি মা! তিনি থাকা অবস্থায় এতটা একা লাগতো না৷ অনুভবের নিরুৎসাহ ভাব, কম কথা বলা, অবহেলা কিছুই গায়ে লাগতো না। শ্বাশুড়ি মায়ের সাথে দিব্যি সময় কেটে যেতো৷ এখন ফাঁকা বাড়িতে বড্ড একা লাগে তার। সময় যাচ্ছে দ্রুতগতিতে! দিনগুলো কাটছে কোনোরকম। তিনি নেই এক মাসের বেশি হলো। তবুও প্রহরের মনে হয়, এইতো সেদিন সে রান্নাঘরে মোড়া পেতে বসে শ্বাশুড়ি মায়ের রান্না দেখছে। এইতো সেদিন মানুষটা জোর করে তার মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছে। কত দ্রুত সবকিছু পরিবর্তন হয়ে গেল। মুহূর্তের মাঝে তিনি তাদের একা করে দিয়ে চলে গেলেন। প্রহরের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো।

কিছুক্ষণ পর চোখ মুছে সে র‌্যাক খুললো৷ কিছুটা অবাক হলো৷ র‌্যাকে খাবার ঢেকে রাখা। বুঝতে পারলো কাজটা অনুভবের। দুপুরে হয়তো একবার বাড়ি এসেছিল। রান্না করে রেখে গেছে। অনুভব সর্বদা চেষ্টা করে তার কাজ কমিয়ে দেওয়ার। কাজটা করে সংগোপনে এবং খেয়াল রাখে প্রহর যেন টের না পায়। সে টের পায় ঠিকই তবুও ভান করে সে বুঝতে পারেনি। এতগুলো বছর ধরে সে ভান করে-ই আসছে যেন! অনুভবের দৃষ্টিতে যদি নিজের জন্য এতটুকু ভালোবাসা না দেখতো, তাহলে কোনোদিনই সে জোর করতো না মানুষটাকে। সে জানে অনুভব তাকে ভালোবাসে, অনুভব নিজেও জানে। তবুও দুজন একই সুতোর দুপ্রান্তে রয়ে গেছে।

প্রহর মাথা ঝাঁকিয়ে সমস্ত চিন্তা ঝেরে ফেলে দিল। প্লেটে খাবার নিয়ে রুমে ঢুকলো। খাওয়ার এক ফাঁকে অনুভবকে মেসেজ করলো,

‘আপনি কোথায় বলুন তো! কখন ফিরবেন?’

সহজে রিপ্লাই আসবে না। প্রহরের জানা সেটা। তবুও এই কাজ গুলো করতে তার ভালো লাগে। কিন্তু ইদানীং অনুভবকে একদম বুঝতে পারছে না সে। কি করে, কোথায় যায় কিছু সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। তবে ভার্সিটি যায় না এ ব্যাপারে নিশ্চিত। সে খোঁজ নিয়েছে। এর মাঝে তার নিজের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গেল। কিন্তু অনুভবের পড়াশোনার কোনো খোঁজ নেই। ভার্সিটিতে তিনবার রিএড নেওয়ার সুযোগ আছে। অনুভবের তিনটা সুযোগই শেষ। প্রহর চিন্তায় আছে এটা নিয়ে।

ফোন বাজছে। প্রহর দৌঁড়ে গিয়ে ফোন হাতে নিল৷ ভেবেছিল অনুভব! কিন্তু না! তার মা। মায়ের সাথে দিনের মধ্যে বহুবার কথা হয়। এই মানুষটাকে সে সবসময় বলে তাকে নিয়ে যেন দুশ্চিন্তা না করে। সে ভালো আছে! তবুও তার দুশ্চিন্তা বিন্দুমাত্র কমে না। মায়েরাই বোধ হয় এমন হয়। প্রহর ফোন কানে নিল।

‘হ্যাঁ, মা! বলো। কেমন আছো?’

‘আমি ভালো। তোর ক্লাস শেষ হয়েছে না?’

‘হুঁ। বাবা কোথায়?’

‘বাসায়। প্রহর, তোর বাবা তোদের দুজনকে বিকেলে এসে ঘুরে যেতে বলছে৷ দু-চারদিন তো এসে এখানে থাকতে পারিস। কেন আসিস না বলতো?’

প্রহরের মনোকষ্ট হলো। বিয়ের পর গত কয়েক মাসে খুব কম যাওয়া হয়েছে বাবার বাসায়। নিজের মর্জিতে বিয়ে করেছে৷ বাবা-মাকে কোনো প্রকার দুশ্চিন্তা দিতে চায় না। তার না যাওয়ার আরেকটা কারণ অনুভব৷ অনুভব ও বাসায় যেতে চায় না। গত কয়েক মাসে মাত্র দু বার অনুভব গিয়েছিল। কিন্তু কোনোবারই রাত থাকেনি৷ রাত তো দূরের কথা! দু-চার ঘন্টাও না! সর্বোচ্চ আধ ঘন্টা। এর বেশি না। প্রতিবার বসার ঘর থেকে চলে এসেছে।

‘কি হলো প্রহর? অনুভব বাড়ি নেই? ওকে সাথে নিয়ে চলে আয়। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।’

প্রহর বাঁধা দিয়ে বলল,

‘না মা! আজ থাক। অনুভব বাড়ি নেই। আসুক। আজ বলে দেখি কি বলে। তারপর দু-একদিনের মধ্যে গিয়ে ঘুরে আসবো।’

‘তুই একা আয় আজ?’

প্রহর লম্বা করে দম নিল। রুমের লাইট নিভিয়ে দিল। বিছানায় শুয়ে বলল,

‘তুমি তো জানো মা। আমি উনাকে একা রেখে যেতে পারবো না। এখনো সম্পূর্ণ ঠিক হতে পারেননি উনি। রাতের বেলা হুটহাট ঘুমের মধ্যে কেঁদে উঠে। আমার পাশে থাকা দরকার।’

আরো কিছুক্ষণ কথা বলে প্রহর ফোন রেখে দিল। মাঝে মাঝে ভাবতে অবাক লাগে তার। গত কয়েক মাসে কতটা বদলে গেছে সে। অনুভবের পৃথিবীতে টিকে থাকতে তাকে কম লড়াই করতে হয়নি৷ তবে সে সফল। সারাক্ষণ বকবক করা হয়, একে-অপরকে স্পর্শ করা হয় না, ছোঁয়া হয় না তবু দিনশেষে একই ছাদের নিচে দুজন ঘুমিয়ে পড়ছে। একে-অপরকে চোখের দেখা দেখতে পাচ্ছে। একে-অপরের অগোচরে লুকিয়ে যত্ন নেওয়া হচ্ছে। আর কি চাই!

ফোনের ওয়ালপেপারের অনুভবের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে প্রহর হাসলো৷ এই মানুষটা বড্ড উদাসীন আর অগোছালো। একে যে স্বযত্নে গুছিয়ে রাখতে হবে। আগলে রাখতে হবে।

______

সন্ধ্যা থেকে প্রবল ধারায় বৃষ্টি হচ্ছে। একনাগাড়ে পড়ছে তো পড়ছেই! থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। সাথে ঝড়ো হাওয়া। প্রহরের দিশাহারা ভাব। ভয়ে চোখ মুখ চুপসে গেছে। নাহ! বিদ্যুৎ চমকানোর জন্য বা একা বাড়িতে থাকতে তার ভয় হচ্ছে না। ভয় হচ্ছে অনুভবকে নিয়ে। অনুভব বাড়ি ফেরেনি এখনো। অথচ সুড়সুড় করে রাত বেড়ে চলেছে।

অস্থির হয়ে আবার সে অনুভবের ডায়ালকৃত নাম্বারে ফোন নিল। বরাবরের মতো সুইচট্ অফ শোনা গেল। রাগে হাতের ফোনটা বিছানায় ছুঁড়ে মারলো সে। অনুভব কোথায় আছে, কেমন আছে ভাবতে চিন্তায় গলা শুকিয়ে এলো। কি করবে এখন সে? একা একটা মেয়ে হয়ে কোথায় খুঁজবে তাকে? বেশিক্ষণ রাগ ধরে রাখতে পারলো না। দুহাতে মাথা চেপে ধরে ঝরঝর করে কেঁদে দিল।

অনুভব বাড়ি ফিরলো রাত বারোটার পর। তখনো বৃষ্টি কমেনি। অঝোর ধারায় ঝরছে। প্রকৃতিতে উন্মাদ অবস্থা। শহরের বুকে উথাল পাথাল হাওয়া। বৃষ্টিতে অনুভবের জবুথবু অবস্থা। ভিজে একাকার। দরজা খুলে তাকে দেখে প্রহর কয়েক মুহূর্ত থমকে রইলো। অনুভব বরাবরের মতো স্বাভাবিক। গায়ের পানিতে মেঝে ভিজে যাচ্ছে দেখে সে আর দাঁড়ালো না৷ ভেজা হাতে দরজা বন্ধ করে দিল। তারপর পায়ের জুতা খুলে রাখলো। প্রহরকে পাশ কাটিয়ে রুমের দিকে যেতে প্রহর ডাক দিল।

‘অনুভব!’

অনুভব থমকালো৷ ভেজা কাপড়ে অনেকক্ষণ থাকায় প্রচন্ড শীত লাগছে৷ শরীরের ভেতর দূর্বলতা অনুভূত হচ্ছে৷ এমতাবস্থায় প্রহরের অতিশয় শীতল কন্ঠ ভেতরে কাঁপুনি ধরিয়ে দিল।

‘কোথায় ছিলেন আপনি? ফোন বন্ধ কেন?’

শীতে দাঁতে দাঁত আটকে আসছে অনুভবের। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তবুও নরম গলায় বললো,

‘একটা কাজে আটকা পড়েছিলাম। ফেরার পথে দেখি বৃষ্টি।’

অনুভবের উত্তরে প্রহর সন্তুষ্ট হতে পারলো না৷ হঠাৎ হিংস্র বাঘিনীর মতো এগিয়ে এলো। সমস্ত শক্তি দিয়ে অনুভবকে জোরেশোরে ধাক্কা দিল৷ ক্রুদ্ধ স্বরে বললো,

‘ফোন বন্ধ রেখেছিলি কেন তুই? বেয়াদব ছেলে! আমাকে দুশ্চিন্তা দিয়ে, কষ্ট দিয়ে খুব আনন্দ পাস, না? খুব মজা হয় তোর! তাই না?’

অনুভব অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো রুদ্র মূর্তিময় প্রহরের পানে। আস্তে ধীরে ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ হাসির রেখা দেখা দিল। তার নিরুত্তরে প্রহর আরো ক্ষেপে গেল। এগিয়ে এসে কলার চেপে ধরে বললো,

‘কথা বলছিস না কেন এখন? চুপ করে আছিস কেন? বল কেন তুই……’

নিজের অর্ধসমাপ্ত বাক্য শেষ করতে পারলো না প্রহর। শব্দ করে কেঁদে উঠলো। বৃষ্টির ফোঁটার মতো অশ্রু গড়িয়ে পড়লো দু গাল বেয়ে। কাঁদতে কাঁদতে বললো,

‘কোথায় ছিলেন আপনি অনুভব? জানেন, কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম? সেই সন্ধ্যা থেকে দরজার সামনে ছটফট করছি। হাজার বার ফোন দিয়েছি, মেসেজ করেছি। ভেবেছিলাম আপনাকে বুঝি আর দেখতে পাব না!’

প্রকৃতির তান্ডব সময় অতিক্রমতার সাথে বেড়ে চলেছে। সমস্ত ঢাকা শহরের বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। কয়েক হাত ড্রয়িং রুমে এক চার্জার লাইট জ্বলছে। তার স্বল্প আলোয় অনুভব চেয়ে আছে প্রহরের পানে। কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেছে সে! দু চোখ জুড়ে শুধু মুগ্ধতা। বুকের ভেতর অজানা সুখানুভূতি। মস্তিষ্ক জুড়ে চোখের সামনে থাকা এই মেয়েটি। কানে টিনের চালের বৃষ্টির একটানা সেতার। মুচকি হাসলো সে। বাম হাত বাড়িয়ে প্রহরের গাল স্পর্শ করলো। চোখের জল মুছে দিয়ে বলল,

‘উঁহু! একদম কান্না করে না। ফোন ইচ্ছে করে বন্ধ করে রাখিনি। অল্প দামের ফোন ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে গেছে।’

কিছুক্ষণ ম্লান থাকলো প্রহর। ধাতস্থ হতে অনুভবের বাড়িয়ে দেওয়া হাতটা স্পর্শ করলো। পরক্ষণে মুখ দিয়ে অস্ফুট শব্দ করলো। দ্রুত অনুভবের কপাল স্পর্শ করলো৷ দু গাল, গলা স্পর্শ করে বললো,

‘আপনার গা এত গরম কেন? জ্বর এসেছে? কখন থেকে? কতক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজেছেন? শরীর এত উষ্ণ কেন?’

‘হুস! এগুলো কিছু না। আমি ঠিক আছি। কোনো জ্বর-টর আসেনি!’

প্রহরের উত্তেজনা কমলো না। তার ছটফটানি ভাব দেখে অনুভব একটানে তাকে বুকে জড়িয়ে নিল। অন্য সময় হলে প্রহর চমকে যেতো, ভয়ানক অবাক হতো। কিন্তু এখন কিছুই হলো। তার মধ্যে চিন্তার ঝড় বইছে। বাহুডোরে থেকেও তার নড়চড় বন্ধ হলো না। অনুভবের গায়ের তাপ সে দিব্যি টের পাচ্ছে। ভেজা কাপড় ভেদ করে তার দেহ অবধি পৌঁছাচ্ছে। সে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো,

‘ছাড়ুন আমাকে৷ ভেজা কাপড় এক্ষুণি পরিবর্তন করতে হবে। মেডিসিন খেতে হবে। জ্বর এসে গেছে আপনার। এখন ঠান্ডা লেগে যাবে।’

‘এত উতলা হচ্ছো কেন? জ্বর আসলে আসুক। ঠান্ডা লাগলে লাগুক! আমার কাজ আমাকে করতে দাও।’

অনুভবের একগুঁয়েমি দেখে আবার প্রহরের চোখে অশ্রুরা ভিড় জমলো। কান্না আটকাতে গিয়ে শরীর কেঁপে উঠলো। অনুভব এবার ছেড়ে দিল তাকে। একটানে দেহের ভেজা শার্ট খুলে ফেললো।

‘ভেজা কাপড় খুলে ফেলেছি। এবার হয়েছে তো?’

প্রহর কিছু বলার চেষ্টা করলো। তার আগেই অনুভব বাঁধা দিল। অকস্মাৎ প্রহরকে ভাবনাতীত কাছে টেনে নিল সে। প্রহরের অর্ধভেজা ওড়নাটা বুকের উপর থেকে ফেলে দিল। কয়েক মুহূর্ত চেয়ে রইলো প্রহরের চোখের পানে। ওই গভীর দৃষ্টির অতলে হারিয়ে যাওয়া নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না। দূরে থাকার শপথ ভঙ্গ করে প্রহরের অধরে অধর স্পর্শ করলো। কয়েক সেকেন্ডের জন্য প্রহর থমকে গেলেও বাঁধা দিল না। ‘আনন্দাশ্রু’ নামে আখ্যায়িত দিঘির যে কয়েক ফোঁটা অশ্রু জমিয়ে রেখেছিল তা চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো। জীবনে প্রথমবারের মতো উপলব্ধি করলো, এই মানুষটাকে সে ঠিক কতটা ভালোবাসে। এই মানুষটাকে ছাড়া সে একটা সেকেন্ডও এ ধরায় শ্বাস নিতে পারবে না।

কাছে কোথাও বজ্রপাত হলো। কিন্তু তার শব্দে দুজনের ভাবান্তর হলো না। সময়ের সাথে সাথে একে অপরের শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর হয়ে উঠলো।

(চলবে)