আকাশে তারার মেলা ২ পর্ব-৪৯+৫০+৫১

0
706

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৪৯

কাছ থেকে পাখির ডাক তুলির কর্ণে এসে বিঁধছে। চারদিকে নিজের সুমিষ্ট ধ্বনিতে প্রভাত কে যেন মুখরিত করে তোলার জন্য উদ্যেগী হয়ে উঠেছে অচেনা, অজানা, না দেখা পাখি টা। তুলির মন জুড়িয়ে আসছে ছোট্ট ছোট্ট আওয়াজে। শহরে পাখির ডাক হাতে চাঁদ পাওয়ার ন্যায় তুলির কাছে। কতকাল শুনে না এমন সুন্দর ডাক। শাড়ি টা সামলে তুলি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল। পাখির আওয়াজ টা অনুসরণ করে গুটি গুটি পায়ে, নিঃশব্দে বারান্দার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। সামান্য একটু শব্দেই যেন পাখিটা টের পেয়ে যাবে,সাথে চুরমার হয়ে যাবে পাখি টা কে দেখার স্পৃহা, অভিলাষ। কেননা পদলির ধ্বনিতে উড়ে যাবে সঙ্গে সঙ্গে।

তুলি দরজার একপাশে আড়াল করে দাঁড়াল। মাথা বের করে একটুখানি উঁকি দিতেই দেখল একটা ঝুঁটিওয়ালা পাখি। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকাল তুলি। চক্ষুদ্বয় পাখিটার উপর নিবদ্ধ রেখে ভাবতে লাগল কিছুক্ষণ। আকস্মিক ভাবনার সুতোয় টান পড়ে মস্তিষ্কে কিছু একটা ধরা দিতেই। চক্ষু জোড়া চকচক করে উঠল। মনে পড়ল এটা তো বুলবুলি। বুলবুলি পাখি। গ্রামে হুটহাট দেখা মিললেও শহুরে পরিবেশে দেখতে পাওয়া দুষ্কর। পাখি টা বেলকনির রেলিং এর উপর বসে আছে। তুলি আরেকটু এগিয়ে নিল দেহ টা। হাতে উপর অন্য একটা হাত পেঁচিয়ে ধরতেই তুলির শান্তিপূর্ণ আঁখি যুগল ভীত হয়ে উঠল তৎক্ষনাৎ। ঘাড়ে শুষ্ক ওষ্ঠের অনবরত স্পর্শে বুক টা থেকে থেকে কেঁপে উঠছে। ওষ্ঠ যুগল তো ছুঁয়ে দিচ্ছে বাহ্যিক অংশ কিন্তু! তুলির মনপাজরে অদ্ভুতভাবে বিচরণ করে চলেছে,বিস্তার লাভ করছে,প্রখর হয়ে উঠছে অনুভূতি।

আদ্র তুলির মাথার উপর দিয়ে উঁকি দিল। ঠোঁটের কার্ণিশে মৃদু হাসি নিয়ে বললো,

‘ পাখি দেখছিলে?’

তুলি তখনও এক নজরে চেয়ে আছে বেলকনিতে। আদ্রর কন্ঠে ঘুরে দাঁড়াল। সাথে সাথেই রিমঝিম আওয়াজ তুলল হাতভর্তি কাঁচের চুড়ি গুলো। নিমিষেই ফ্যাকাসে রূপ ধারণ করল পুরো শ্যামবর্ণ মুখশ্রী। করুন চাহনি ছুঁড়ে দিল আদ্রর দিকে মাথা তুলে। আদ্র মৃদু হাসি বজায় রেখে বলে উঠল,

‘ তোমার চুড়ির ঝংকার শব্দেই বেচারা অথবা বেচারী বুলবুলি ভয়ে পেয়ে পালিয়েছে তুলা।’

তুলি আলতো হেসে আদ্রর কাছ থেকে সরে যাওয়ার জন্য উদ্যত হলো। বাড়ানো পা টা থামিয়ে স্থির হলো সামনে। ঘাড় কাত করে জিজ্ঞেস করল,

‘ রেডি হয়েছি তো। কোথাও কি যেতে হবে?’

‘ যেতে হবে। খুব স্পেশাল একটা দিন আজ আবার কারো কারো জন্য সবচেয়ে নিকৃষ্ট, কুফা দিনও বলা চলে।’

কথাটা বলে আদ্র দ্রুতবেগে প্রস্থান করল। তবে অধর কোণে প্রস্ফুটিত তির্যক হাসি টা তুলির চক্ষু এড়ালো না। কিছু টা চিন্তিত, শঙ্কিত দেখালো তুলি কে। আদ্রর কথার আগামাথা না পারল বুঝতে,না পারল অর্থ উদ্ধার করতে।
.
.
আমরিন গালে হাত দিয়ে তুলিকে দেখে চলেছে নিষ্পলক। তুলি আমরিনের দৃষ্টি বুঝতে পেরেও নির্জীব, নির্বিকার বসে আছে। তোয়াক্কা করলেই যেন আমরিন ঝেঁকে ধরবে। কিন্তু কেন ধরবে?আমরিনের হাবভাব কেমন যেন ঠেকছে!পুরোই অসবর্ণ রহস্যের মতো। এক পলক তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিল। সূক্ষ্ম নিঃশব্দ নিঃশ্বাস ছেড়ে আমরিন তুলির সাথে বসে পড়ল গুটিশুটি মেরে। ব্যাকুল কন্ঠে বললো,

‘ আমি ফুপি হবো বললে তোকে খেয়ে ফেলব আমি?বেস্টফ্রেন্ড ভাবী হলে এমন শত্রু হয়ে যায় জানতাম না তো।’

তুলি পাশ ফিরে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে চাইল। বেশ বৃহৎ আকার ধারণ করেছে আঁখিদ্বয়। মনটা নুইয়ে পড়ছে লজ্জায়, সংকোচে। কন্ঠে চরম অবাকতার ছাপ।

‘ কে বলেছে?’

‘ ভাইয়া বলেছে। শুধু আমাকে না এমনকি বাবা-মা,খালা-খালু সবাইকে জানিয়েছে। ‘

‘ কখন?’

‘ একটু আগে। জানিস ভাইয়া না খুশিতে বাবা কে জড়িয়ে বলেছে আমিও আপনার মতো বাবা ডাক শুনতে পাবো খুব শীগ্রই।’

প্রশান্তিতে ভরে গেল আমরিনের মুখ থেকে এসব শুনে। যতটুকু ভয় ছিল আদ্রর মনের অবস্থা নিয়ে তা নিঃশেষ হয়ে গেল। হ্যাঁ আদ্র খুশি। তার চেয়েও অনেক বেশি খুশি আদ্র। তুলির কাছে নিজের খুশি টা আদ্রর খুশির কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে। খুবই নগন্য।
—————-

আজ বাহিরের পরিবেশ টা বেশ নির্মল। যেখানে অন্যান্য দিন বের হলেই কড়া রোদে,উত্তাপে মাথা ঘোরে,শরীর ঘেমে ভিজে উঠে আজ তার একটাও হচ্ছে না। বরং শান্তি শান্তি লাগছে সবকিছুতে। শেষ রাতের দিকে ঝড় হয়েছিল প্রচন্ড যার ফলে প্রকৃতিতে উত্তাপ নেই আছে কেবল ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। আদ্র হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিল। ১১টা বেজে ২০ মিনিট। শার্টের হাতা গুটিয়ে পাশ ফিরে তুলির দিকে তাকাল। নির্বিঘ্নে, নিভৃতে শাড়ি পড়ে ছোট ছোট পা ফেলে পাশাপাশি হেটে চলেছে মেয়েটা। ডান হাত টা বাড়িয়ে তুলির হাত মুঠোতে পুরে নিল নিমেষে। তুলি তীব্র অবাক হলো। চমকিত নয়নে চাইল সাথে সাথেই। কপোলে লাল আভা ছড়িয়ে পড়ল কিঞ্চিৎ। আদ্র কন্ঠে মুগ্ধতা এঁটে বলে উঠল,

‘ মনে হচ্ছিল দু’জন পথচারী কেবলমাত্র ফুটফাট ধরে হাঁটছি পাশাপাশি। এখন তোমার হাত টা মুষ্টিমেয় নিয়ে অনুভব করতে পারছি আমি কোনো অচেনা মেয়ের সান্নিধ্যে নয়,হাঁটছি আমার তুলার পাশাপাশি। তুমি কি অনুভব করতে পারছো তোমার আমার শুদ্ধ স্পর্শে এতক্ষণের শূন্যতা পূর্ণতায় রূপান্তর হয়েছে?’

তুলি জবাব দিল না। দাঁড়িয়ে পড়ল হঠাৎ। সেই সাথে দাঁড়িয়ে পড়ল আদ্র। প্রশ্নসূচক দৃষ্টি ফেলতেই আদ্রর বাহুতে ধাক্কা দিতে লাগল তুলি। আদ্র হকচকালো। আচমকা এহেন কান্ড মোটেও বোধগম্য হচ্ছে না তার। বিচলিত কন্ঠে বলে উঠল,

‘ কি হয়েছে?’

‘ নিচে নামুন আপনি ডাক্তার সাহেব। ফুটপাত থেকে রাস্তায় নেমে হাঁটুন।’

পথচারী অনেকে চেয়ে আছে ওদের দিক। আদ্র তুলিকে তীক্ষ্ণ নজরে দেখল। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

‘ এগুলো কেমন কথা?আশপাশে সবাই দেখছে। ‘

‘ হুম। দেখছে তো সবাই। আপনি আইফেল টাওয়ার আর আমি লিলিপুট। রাস্তায় নামুন বলছি নয়তো আমি উল্টো ঘুরব এখন৷ তারপর সোজা হেঁটে বাসায় চলে যাব।’

এ মুহুর্তে গা কাপিয়ে হাসতে ইচ্ছে করছে আদ্রর। কিন্তু তা যে তার সাথে মানানসই নয়। তাই বোধহয় হাসল না। বাধ্য স্বামীর ন্যায় নেমে দাঁড়াল রাস্তায়। তুলি ফুটপাতের কিনারায় দাঁড়িয়ে আদ্রর দিকে হাত এগিয়ে দিয়ে লজ্জালু হেসে বললো,

‘ এবার ধরুন। ‘

বলা মাত্র ধরল আদ্র। তুলি আদ্রর দিকে তাকাতেই নিজেকে একদম আদ্রর বরাবর আবিষ্কার করল। পার্থক্য এতটুকু সে এখন উঁচুতে এবং আদ্র রাস্তাতে। আবারও হাঁটছে দু’জন। গন্তব্য কোথায় জানা নেই তুলির। তবে আদ্র যখন বললো দু’জন আজ অনেকখানি হাঁটবে তুলি নাকচ করে নি। করবেই বা কেন?ঠিক কবে পাশাপাশি হেঁটেছে দু’জনে মনে পড়ছে না। তুলি মনে মনে বললো,’ হাঁটি নি কখনও এতোটা কাছাকাছি হয়ে,ভীরু ভীরু হয়ে পালিয়ে বেরিয়েছি সবসময়। ‘

বাড়ি থেকে খানিকদূরে চলে এসেছে দু’জন। রাস্তা জনমানবহীন। মাঝে মাঝে এক দু’জন লোক আসছে,যাচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যে। আজ কি এই রাস্তায় মানুষের অভাব পড়ল নাকি!নানাবিধ কল্পনায় যখন মগ্ন তুলি তখনই আদ্র গাল ছুঁয়ে দিল অতি সন্তর্পণে। সর্বাঙ্গে কম্পন ধরে গেল তুলির। আদ্র ফের ছুঁয়ে দিল। সেকেন্ড বাদে ওষ্ঠ সরিয়ে এনে বললো,

‘ আমিই ছুঁয়েছি,দেখেছিও আমি। তবুও লজ্জা তোমার চিরসঙ্গী বুঝি?’

নিরুত্তর থাকল তুলি। আদ্র হাত টেনে কাছে নিয়ে এলো। কোমর আঁকড়ে ধরে শূণ্যে তুলে এনে নামাল রাস্তাতে। একহাতে বাহু জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। লহু স্বরে বললো,

‘ আমার ভালোবাসার অস্তিত্ব তোমার গর্ভে অথচ আমার থেকেই দূরে থাকা? আমি মানছি না,কখনও মানব না,মানতে হবে এমন সিচুয়েশন জীবনে আসতে দিব না। ‘

তুলি বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকাল আদ্রর হাসোজ্জল মুখের দিকে। আদ্রের দু চোখে ভাসছে তার শ্যামবর্ণা চেহারা টা। রাস্তায় আদ্রর অদ্ভুত অদ্ভুত বাক্য তুলির অন্তস্থল কাঁপিয়ে তুলছে। মুখে কিছু বলবে তার পূর্বেই একটা গাড়ি এসে থামল কাছ ঘেঁষে। গাড়িটা চেনা চেনা মনে হলো। জানালার কাঁচ খুলে গেল আস্তে আস্তে। চক্ষে ভাসল চেনা,প্রিয় মুখের মানুষ গুলোকে। পায়েল বসে আছে ব্যাক সিটে। সামনে অন্তু,নিবিড়।

গাড়ি দরজা মেলে পায়েল বেরিয়ে এসে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল তাকে। তুলি হতভম্ব হয়ে গেল। পরক্ষণেই ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললো,

‘ তোমরা এখানে আপু?’

‘ তোমার ডাক্তার সাহেবই আসতে বলল। সাথে কিন্তু মিষ্টিও এনেছি। কংগ্রাচুলেশন।’

তুলি নত মস্তকে মিহি স্বরে বলে উঠল,

‘ ধন্যবাদ। ‘

পায়েল তুলি কে নিয়ে গাড়িতে বসে পড়ল। আদ্রও বসল তুলির পাশে। অন্তু দাঁত কেলিয়ে বললো,

‘ পাঁচ কেজি মিষ্টি ওদের খাওয়াবি?তুই শিউর?’

‘ ইয়াহ!মিষ্টির সাথে আরও অনেক কিছু খাওয়াব। পারফেক্ট সময় হয়ে গেছে। এবার চল।’

তুলি একরাশ বিস্ময় নিয়ে বললো,

‘ কোথায় যাচ্ছি আমরা?’

‘ গেলেই দেখতে পাবে। ‘

আদ্রর গম্ভীর কন্ঠে তুলি চুপ মেরে গেল। ঘন্টা দুয়েক অতিবাহিত হতেই দেখল গাড়ি একটা বাড়ির গেইট দিয়ে ঢুকছে। বাড়িটা তুলির জন্য সম্পূর্ণ অচেনা। আদ্র কে উপেক্ষা করে চারদিকে ব্যস্ত চোখ বুলালো। বিয়ে বাড়ির মতো সাজানো সমস্ত বাড়িটা। ওরা কি কোনো বিয়ের দাওয়াতে এসেছে? তাই বলে কি মিষ্টি নিয়ে এল?সকাল হতেই আদ্র রেডি করিয়ে রেখেছিল! তুলির ছোট্ট মস্তিষ্কে কিছুই ঢুকছে না। আদ্রের পিছু পিছু হেঁটে সবার সাথে বাড়িতে ঢুকল। উদ্ভট লাগছে ভীষণ। তবে বধূবেশে ইতি কে দেখে মাথা ঘুরে গেল। চোখের ভুল ভেবে ভালো করে তাকাল। একই রকম দেখল সবকিছু। ইতির পাশে বর বেশে অভিক কে দেখে আরেকদফা হতবিহ্বল হয়ে পড়ল তুলি। ইতির সাথে অভিকের বিয়ে? বাড়িটা ইতিদের নাকি অভিকের?ওদের হলেও আদ্রসহ সকলে এখানে কেন এল?তুলি চমকপ্রদ দৃষ্টিতে চেয়ে রইল শুধু। আজ বুঝি চরমভাবে চমকে যাওয়ার দিন!

#চলবে,,,

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব___৫০

ইতি,অভিক কিংকর্তব্য বিমূঢ়!আদ্র দের উপস্থিতি যেন ওদের জন্য একেবারেই কাম্য ছিল না। আর তাও যদি হয় কবুল বলার ঠিক আগ মুহুর্তে তবে তা খুবই ভয়ংকর কিছুর বার্তা দেয়। আদ্র হাতের মিষ্টি গুলো সামনের টেবিলে রেখে দিল।

‘ কি রে বিয়ে বসে যাচ্ছিস হুট করে তা-ও আমার সংসার ভাঙ্গার চেষ্টায় সফল না হয়েই?’

ইতি ফাঁকা ঢোক গিলল। গলা শুকিয়ে প্রায় কাঠ হয়ে গেছে। আদ্রর আগমন যে তার জন্য সুফল নয় তা দিব্যি বুঝতে পারে। পাশে থাকা অভিকের দিকে তাকাল ভয়ার্ত চোখে। অভিকের পরিবার,ইতির পরিবার এবং নিকট কয়েকজন আত্মীয় স্বজন বিয়েতে উপস্থিত। সকলে ফ্যালফ্যাল নয়নে চেয়ে আছে ওদের দিকে, যেন কোনো ড্রামা চলছে এখানে। ড্রামার থেকে কমও তো নয়। একটা চেয়ার টেনে আনল আদ্র। তুলির দিকে তাকিয়ে দেখল তুলির হাত পা কাঁপছে। হাত টা ধরে বসিয়ে দিল চেয়ারে। তুলিসহ সকলে হতবাক। ইতস্তত কন্ঠে বললো,

‘ আমি দাঁড়িয়েই ঠিক আছি ডাক্তার সাহেব।’

‘ একদম ঠিক নেই দাঁড়িয়ে তুমি।’

‘ কিন্তু! ‘

‘ আর একটা কথা যদি বলেছ তাহলে মুখ সেলাই করে দিব। এটা আমার জন্য খুব একটা কষ্টকর নয়।’

তুলি চুপচাপ বসে রইল। কারণ আদ্রর দ্বারা মুখ সেলাই করা একদমই কঠিন হবে না। একদমই না। হৃদয় পাষাণ বলেই তো অন্যের হৃদপিণ্ডের চিকিৎসা করার ক্ষমতা রাখে,তুলি হলে তো মিনিটে মিনিটে বেহুঁশ হতো। অন্যের হার্ট সার্জারি করবে এমন সাহস নেই।

পায়েল মিষ্টির প্যাকেট খুলে একটা মিষ্টি হাতে তুলে নিল। ইতির মুখের সামনে ধরে দু ঠোঁট প্রসারিত করে বলে উঠল,

‘ মিষ্টি খা তোর হেরে যাওয়ার খুশিতে,বিয়ের খুশিতে এবং আদ্রর বাচ্চার আন্টি হওয়ার আনন্দে।’

ইতির মুখের আদল পরিবর্তন হয়ে গেছে। ক্রুদ্ধ চোখে চাইল পায়েলের দিক। পায়েল হাসল। বিস্তর হাসি। জোর করে ইতির মুখে মিষ্টি টা পুরে দিয়ে টিস্যু নিয়ে হাত মুছল। কাঠ কাঠ স্বরে বললো,

‘ আমার সাথে ধানিলংকা হবার চেষ্টা করাও বৃথা। চোখ দুটো নিচে রাখ এখনও অনেক কিছু বাকি। তখন নাহয় তেঁতে উঠিস চরিত্রহীনা মেয়ে।’

অভিক ফোড়ন কেটে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে,

‘ হাউ ডেয়ার ইউ পায়েল?তুলি বড্ড বাড় বেড়েছ। ইতিকে চরিত্রহীনা বলছো তার বাড়িতেই এসে?বেয়াদব মেয়ে।’

‘ চরিত্রহীন ব্যক্তি চরিত্রহীনার পক্ষ নিচ্ছে। বাহ্ ব্যাপক ইন্টারেস্টিং তো! দু’জন দু বিছানায় অন্যদের নিয়ে মেতে থাকে অথচ মন থেকে দু’জন একই ছাদের নিচে বসবাস করে।’

কথাটা বলে সবগুলো দাঁত প্রদর্শন করে হাসল অন্তু। পায়েলের হাত টা ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। রাগে,আক্রোশে ফেটে পড়ছে অভিক। উঁচানো স্বরে চিল্লিয়ে উঠল,

‘ গেট আউট ফ্রম হেয়ার।’

‘ রিলেক্স! এতো জোরে চিল্লানো স্বাস্থ্যের জন্য একেবারে ভালো নয়।’

আদ্রর লহু স্বরে অভিক দমে গেল। সহজ সরল, সাদামাটা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

‘ কি চাই?’

‘ কিছু না। আপাতত কবুল বলে দু’জন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারপর নাহয় বাকি টা শুরু করা যাবে।’

অভিকের বাবা এতক্ষণ অব্দি শান্ত হলেও আর থাকতে পারল না। গলা উঠিয়ে বলে উঠলেন,

‘ কি হচ্ছে এসব?তোমরা এখানে কেন?’

‘ বিয়ে এটেন্ড করতে এলাম বিনা নিমন্ত্রণে।’

জবাবে নিরলস ভঙ্গিতে বাক্যটা আওড়াল আদ্র। অভিকের বাবা থম মেরে গেলেন এমন অভিব্যক্তিতে। পায়েলের সাথে অভিকের বিয়ে যেদিন ভেঙে গেল সেদিনই বুঝতে পারলেন তিনি আদ্র ঠিক কেমন ধাঁচের ছেলে। কে চায় নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারতে!তাই তো তিনি নিরুত্তর থাকলেন,কাজী সাহেব কে তাগিদ দিলেন বিয়ে পড়ানোর।

তুলি ক্যাবলাকান্তের ন্যায় তাকিয়ে। আদ্র,পায়েল,অন্তু, নিবিড়ের উদ্দেশ্য একটু আকটু আঁচ করতে পারছে। এই একটুও বুঝতে যেন মাথার ঘাম পায়ে ঝরে পড়ছে। কি ভয়ংকর এরা!তবে তুলির নরম, আবগি মনে ইতির জন্য আজ এক ফোঁটাও দয়া আসছে না। মনের আয়নায় দৃশ্যমান হচ্ছে ডায়েরি তে লিখিত আদ্রর কথাগুলো বাস্তব রূপে,ইতির সেদিনের মিথ্যে বলে আদ্র ও তার সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা। এছাড়া অভিক!তুলির দ্বারা যদি সম্ভব হতো অভিক কে নিজ হাতে ভয়ংকর মৃত্যু দিত। কিন্তু কাউকে আঘাত করার মতো মনমানসিকতা নেই তার।

ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ইতি কবুল বললো। আঁড়চোখে বারংবার অবলোকন করতে লাগল পায়েল,আদ্র সকলকে। বিয়ে সমাপ্ত হতেই আদ্র হাত তালি দিল। সাথে সকলে। আদ্রের এরকম উদ্ভট বিহেভিয়ার তুলির মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আবার এখানে উপস্থিত থাকতেও খুব একটা স্বস্তি পাচ্ছে না। কেমন বন্ধ বন্ধ হয়ে আসছে নিঃশ্বাস। জঘন্য দু’টো পারসন সামনে স্থির থাকলে কারই বা স্বস্তির দেখা মিলবে!

আদ্র ক্লান্ত ভঙ্গিতে নিঃশ্বাস বিমোচন করে দিল। তুলির হাত টেনে দাঁড় করাল চেয়ার হতে। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে তুলির। একবার নিজে বসাল, আবার নিজেই টেনে উঠাল। আদ্র আবার পাগল হয়ে যায় নি তো অতিশয় রাগের দাপটে!

‘ যাও অভিক সাহেব ও ইতি কে বিয়ের গিফট দিয়ে আসো তুলা।’

এবার বোধহয় তুলি জ্ঞান হারিয়েই বসবে। এই যে আদ্রর এতো দুর্বোধ্য হাসি, ভাবলেশহীন, নির্বিকার,নির্লিপ্ত মুখভঙ্গি তা ঝড়ের অব্যবহিত পূর্বের আকাশের স্থিরভাব মাত্র। কোন সময় প্রকান্ড ভাবে ধরণীতে এসে লন্ডভন্ড করে দিবে তা বুঝার ক্ষমতা কারো নেই। আমতা আমতা করে প্রশ্ন করল তুলি,

‘গিফট?’

‘হুম। চলো ওদের গিফট দিবে।’

‘ কিন্তু আমরা তো গিফট আনি নি।’

তুলিকে এনে ইতির সম্মুখে দাঁড় করাল আদ্র। ঘাড় কাত করে পাশ ফিরে আদ্রর দিকে তাকাল তুলি করুণ চাহনি নিক্ষেপ করে। আদ্র মুচকি হেসে বলে উঠল,

‘ ইতির গালে থাপ্পড় মারো। আশা করি এর থেকে বড় গিফট তুমি দিতে পারবে না। এবং এটাই ইতির জন্য যোগ্য উপহার।’

তুলি রসগোল্লার মতো চোখ বড় বড় করে তাকায় আদ্রর কথার প্রেক্ষিতে। অথচ আদ্র শান্ত ও ঠোঁটে লেগে আছে ক্ষীণ হাসি। বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত সকলে নিস্তব্ধ,হতবুদ্ধি এমন কথায়। আদ্র ফের বলতেই তুলি নিজের চিকন,দুর্বল হাতের দিকে এক পলক চাইল। মাথা তুলে আনতস্বরে না বলল। সাথে সাথেই শুনতে পেল আদ্রর চাপা,গম্ভীর স্বর।

‘ ইতির গালে তোমার হাতের থাপ্পড় না পড়লে,তোমার কানে, গালে আমার হাতের স্পর্শ পড়বে। খুব কঠিন স্পর্শ। ‘

তুলি ঢুক গিলল। ইতি কিছু বুঝে উঠার আগেই শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে থাপ্পড় মেরে বসল গালে। একেকটা মানুষের চক্ষু কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার অভিপ্রায়। তুলির কি হলো জানে না তবে অভ্যন্তর হতে একটা চাপা রাগ জাগ্রত হয়ে গেল। আদ্রর বলার অপেক্ষা না করে পুনরায় কষিয়ে একটা থাপ্পড় মারল ইতি কে। তুখোড় দৃষ্টিতে তাকাল। রাগান্বিত কন্ঠে আওড়ালো,

‘ আপনি জঘন্য। আমার খালামণি কে অপদস্ত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। ডাক্তার সাহেবের দিকে কুনজরে তাকিয়েছেন। আমার সংসার ভাঙার জন্য মিথ্যে,বানোয়াট কথা বলেছেন। সবচেয়ে বড় কথা একটা মেয়ের সম্মান,যা একদমই ঠুনকো নয়। তা আপনি বিলিয়ে দিয়েছেন অনায়সে।’

তুলির রণচণ্ডী রূপ দেখে বিস্মিত পায়েল,ইতি সকলে। তবে আদ্র শান্তি পাচ্ছে। জীবনে মানুষকে একদম বোকা হতে নেই। সরল সোজা মন, সবার হৃদয় ছুঁয়ে দিতে পারে না। কেউ কেউ বোকামির সুযোগ নেই, হাসিল করে নেয় স্বয়ং উদ্দেশ্য। অভিকের মেজাজ গরম হয়ে গেল। হাত উঠিয়ে তুলির গালে মারতে যাবে তার আগেই নিজের বুকে তুলি কে চেপে ধরল আদ্র। তীক্ষ্ণ,রোষপূর্ণ চাউনি ফেলল। চোখ দুটো হতে এই বুঝি ঝরে পড়বে এক ফোঁটা লাল তরল রক্ত।

‘ খুন করে ফেলব! আমার প্রাণে যে আঘাত করবে তাকে কষ্ট করে পৃথিবীতে বাঁচতে দিব না আমি। তাই ভুলেও ছোয়ার চেষ্টা করবি না। আমার ভালোবাসা, আমার তুলা। তোর মতো জানোয়ার থেকে বছরের পর বছর আড়ালে ওকে প্রটেক্ট করে আসছি। আর তুই সামনেই ছুঁয়ে দিবি!’

বাড়ন্ত হাতে চাপ পড়তেই অভিকের পুরো মুখ বিষিয়ে এল। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠল। কন্ঠনালি হতে বেরিয়ে এল অসহ্য ব্যাথা মিশ্রিত চিৎকার। কেউই আদ্রর ক্রোধের কাছে এগিয়ে এসে অভিক কে সাহায্য করার সাহস করে উঠতে পারল না। ইতি জমে গেল ভয়ে৷ পিছিয়ে গেল কয়েক পা।

‘ কি ভেবেছিলি দু’জন মিস তামান্না কে সুইসাইড করার জন্য ফোর্স করে বেঁচে যাবি?মেয়েটা এতোটা ভীতু ছিল না যে হার মেনে যাবে। কিন্তু তোরা ওকে সুইসাইড করতে বাধ্য করেছিস। ইন্টিমেট হবার ভিডিও ভাইরাল করার হুমকি দিয়েছিস। দু’জন তো একে অপরের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশনে আবদ্ধ ছিলি তাহলে খুব কি দরকার ছিল অন্যের সাথে খারাপ করার?তোদের মতো মানুষ আমি আমার লাইফে একদমই দেখি নি। এতোই যখন দেহ চাহিদা পতিতা পল্লিতে বিজনেস করলেও পারতি। ‘

আদ্র অভিক কে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিল। সবাই এক নজরে চেয়ে আছে। অভিক,ইতির বাবা-মা নিস্তব্ধ। উনাদের মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না পূর্বে।

‘ পায়েল কে বিয়ে করার প্ল্যান টা ইতির ছিল। তোরা দু’জন মিলে চেয়েছিলি সেদিন জন্মদিনে ইতিকে সম্মুখে থাপ্পড় মারার কারণে পায়েল কে বিয়ে করে প্রতিশোধ নেওয়ার। পতিতার সমতুল্য এই মেয়ের তো ভাগ্য ভালো আমি ওকে জ্যন্ত সমাহিত করি নি। মেয়ে বলেই বেঁচে গেল। মেয়েদের গায়ে হাত তোলা আমার স্বভাবে নেই। খুব বেশি রাগের চোটে ওইদিন থাপ্পড় মেরে ফেলেছি। তোরা মনে করেছিলি সব তোদের পরিকল্পনা মতে হবে৷ বাট লেট মি টেল ইউ।

তোর অতীত,বর্তমান সব আমার জানা। যেদিন ইতি আমাকে খারাপ প্রস্তাব দিয়েছল সেদিনই আমি সব খোঁজ খবর নেই। জানতে পারি প্রায়ই তোর বেড পার্টনার হয় ইতি। ভাবলি কি করে কোনো খোঁজ খবর না নিয়েই জীবনের প্রিয় বান্ধুবী কে তোর মতো জানোয়ারের কাছে তুলে দিব?তোরা মানুষ রূপে অমানুষ। কেবল দেহ সুখ টা-ই খুঁজে গেলি। পায়েলের বিয়ে অব্দি শুধুমাত্র প্রমাণ জোগাড়ের জন্য নিরব ছিলাম। আমি তোদের শাস্তি দিব না। দিবেন আল্লাহ। কিন্তু প্রত্যেক টা মানুষের, তোদের বাবা -মার জানা উচিত ছিল বিলাসিতায় কতটা বকে গিয়েছিস তোরা। কতটা নিকৃষ্ট তাদের সন্তান। সবসময় সত্য গোপন রেখে অন্যকে শান্তি দেওয়ার জন্য পাপ বাড়তে দিতে নেই। বাগানের সৌন্দর্য নষ্ট করে এমন আগাছা কে উপড়ে ফেলে দেওয়ায় শ্রেয়।’

ইতির বাবা পড়ে যেতে নিলে পিছন থেকে সামলে নেয় নিবিড়। সোফায় বসিয়ে দিয়ে পানি এগিয়ে দেন। গ্লাস টা ফিরিয়ে দিলেন। চোখ থেকে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে গেল। বড় ভাইয়ের ছেলে ও নিজের মেয়ে এতটা কলুষিত তিনি জানতেন না। ইতি গতরাতে জানাল সে অভিক কে ভালেবাসে। অভিকও তাকে বিয়ে করতে চায়। আদ্র মোবাইল বের করে সব প্রমাণ ইতির বাবার হাতে ধরিয়ে দিল। তামান্নার সাথে সেদিন দেখা করার ভিডিও টা। এছাড়া ভার্সিটির বিভিন্ন মেয়েদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ফিজিক্যালি এটাচ হওয়ার চেষ্টা। ইতির বাবা মেয়ের দিকে একবার তাকালেন। পুলিশ কে ফোন করে খুলে বললেন কিভাবে অভিক মেয়েদের সাথে প্রতারণা করত এবং সুইসাইড করতে বাধ্য করত। নিজের মেয়ের দোষ টাও ঢাকলেন না ভদ্রলোক। তবে একটাই রিকুয়েষ্ট করলেন যদি সম্ভব হয় ইতি কে যেন বিষ খাইয়ে মেরে ফেলা হয়।

পায়েল নিজের ৭৮০ টাকা দিয়ে কেনা জুতা টা হাতে তুলে নিল। ব্যাথায় মেঝেতে কুঁকড়ানো অভিক কে এলোপাতাড়ি মারতে মারতে বলে উঠল,

‘ শালা!সামান্য হাতের ব্যাথা সহ্য হয় না আবার প্রতিশোধ নিতে চাস। দেখা প্রতিশোধ নিয়ে। জেলে যেতে হবে না জুতো পিটা করে রক্তাক্ত করব তোকে। আমার বোনকে মারার জন্য হাতও তুলিস। তোর গালে মারব আমি জুতা দিয়ে।’

মারতে মারতে অভিকের গালের অবস্থা খারাপ। ছিলে গিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। অন্তু কোমর জরিয়ে টেনে আনল। ফিসফিস করে বললো,

‘ ছেড়ে দে জান। ও তো তোর মার খাওয়ার যোগ্য না। তবুও কেন মারছিস?ওকে মেরে তোর হাত টা আর নষ্ট করিস না। প্লিজ!’
.
.
তুলির খারাপ লাগছে ইতির বাবার দিকে তাকিয়ে। এ মুহুর্তে একজন অসহায় বাবা দেখতে পাচ্ছে সে। কোথায় ইতি আর কোথায় তার বাবা। এ যেন আকাশ-পাতাল পার্থক্য। উনি হয়ত অনুশোচনায় ভুগছেন ভালো করে মানুষ করতে পারেন নি মেয়েকে। আজ এই মুহুর্ত থেকে প্রত্যেক টা মানুষ আঙ্গুল তুলবে কিন্তু সবাই কি জানে প্রত্যেক টা বাবা -মা-ই সন্তান কে সঠিক পথে মানুষ করার চেষ্টা করে। বড় হয়ে কেউ কেউ বিগড়ে যায়। বাবা-মা তো কখনও বলে না বিগড়ে যাও তোমরা!ইতি নিজের জন্যও ভাবে নি, শয়তানের প্ররোচনায় পরে খুইয়ে বসেছে জীবনের সব। মোহ,চাওয়া, নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি বাড়বেই তবে নিজের বিবেকে বুঝে নিতে হবে কোনটা ভুল এবং কোনটা সঠিক। আজ আদ্র সবটুকু খোলাসা না করলে হয়ত ওদের পাপ বেড়েই যেত কমতো না বৈকি!

#চলবে,,

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যারা যারা গল্পটা পড়েন রেসপন্স করার অনুরোধ রইল।)

#আকাশে_তারার_মেলা_২
#লেখিকাঃআসরিফা_সুলতানা_জেবা
#পর্ব_৫১

হাতে দু’টো চিরকুট ও মনে দুপুর হতে জমে থাকা ভাবনা নিয়ে তুলি বেলকনিতে পাতানো কাউচে বসে আছে। পা দুটো গুটিয়ে রেখে হলদে দীপ্ততায় নির্নিমেষ চেয়ে আছে মেঝেতে। অন্তস্থল কাঁপছে, মনে জাগছে প্রশ্ন। মস্তিষ্কে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে আদ্রর উচ্চারিত ‘ বছরের পর বছর আড়ালে প্রটেক্ট করে আসছি আর তুই সামনেই ছুঁয়ে দিবি’ বাক্যটা। তুলির মন বলছে আদ্র তাকে বহু আগে থেকে ভালোবাসে। নয়তো এই চিরকুট দুটোতে এমন কেন লিখত! আঠারো তম জন্মদিনে দেওয়া সেই চিরকুট টা এক হাতের মুঠোয়, অন্য হাতে গ্রামে দেওয়া ‘বেক্কল’ বলে সম্বোধন করা প্রথম চিরকুট।

তুলি কখনও এই চিরকুটে লিখিত প্রত্যেক টা শব্দের গভীরতা কল্পনা করে দেখে নি। আজ আদ্রর কথায় কেমন রহস্য রহস্য ঠেকছে তার নিকট। চিরকুট দু’টো ও আজকের সমীকরণ মেলালে ফলাফল বেরিয়ে আসে দীর্ঘদিনের ভালোবাসা। কিন্তু কবে,কখন, কিভাবে ভালোবাসল আদ্র!তাকে তো তুলি কখনও দেখে নি। সেইবার যখন সায়েরা বেগম বলেছিল তখনও দেখার সুযোগ হয় নি। আর প্রথম যেই চিরকুট টা দিয়েছিল সেটাতে স্পষ্ট ভালোবাসার ছোঁয়া কিন্তু অবুঝ তুলি কোনো কালেই ঠাহর করতে পারে নি তা। তাহলে ভালোবাসে আগে থেকে কিন্তু তুলির আদ্রের সাথে দেখা হয়েছে ঢাকা শহরে এসে প্রথম। সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে তুলির। কোথায় মিলবে এই রহস্যের সমাধান?

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাঁড়াল তুলি। আজ এত বেশি খাইয়েছে আদ্র জোর করে নিজ হাতে,এখন মনে হচ্ছে পেট ফুলে বড় আকার ধারণ করেছে। লাভ কি!দেখা যাবে একটু পরেই বমির সাথে সব বের হয়ে যাবে। কোনো কিছু খেয়ে শান্তি নেই তুলির। আদ্রও হাল ছাড়ার পাত্র নয়,বারংবার জোর করে খাওয়ায়। না খেলে জেদ দেখিয়ে নিজেও খায় না। তুলি নিজের জন্য তো আর তার ডাক্তার সাহেব কে কষ্ট দিতে পারে না। অতএব চুপচাপ গিলে যায় সব খাবার। আগে এতোটা জোর করত না আদ্র তবে যখন থেকে শুনেছে প্রেগন্যান্সির কথা তখন থেকেই এমন করে যাচ্ছে। তুলি জানে আদ্রর মাঝে খুশির পাশাপাশি প্রচন্ড ভয়ও কাজ করছে। হারিয়ে ফেলার ভয়। আজ সন্ধ্যার দিকে বেহুঁশ হয়ে গিয়েছিল তুলি। তখন পায়েল ভালো করে দেখে কিছু টেস্ট করে জানাল তুলির শরীর খুব বেশি দুর্বল। প্রেগন্যান্সি টাইমে এতো দুর্বলতা পরবর্তীতে ভয়ংকর হয়ে দাঁড়াতে পারে। তখন থেকেই আদ্র কে অস্থির দেখাচ্ছে, কথা বলছে না খুব একটা। আদ্র এতো জলদি বেবী চাই নি,তুলিকে শারীরিক ও মানসিক দু’ভাবে স্ট্রং হওয়ার সময় দিতে চেয়েছিল। অথচ! তুলির জেদের কাছে হেরে গিয়েছে, নত হয়ে গেছে ভালোবাসার মানুষের অশ্রুসিক্ত কন্ঠের আবদারে।

ধীর স্থির ভঙ্গিতে হেঁটে রুমে এল তুলি। আদ্র নেই। নীরবতা, নিস্তব্ধতা ছেয়ে আছে পুরো রুমে। এখনই তো বসে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল,হুট করে কোথায় উদাও হয়ে গেল! দরজা টা খোলা। হয়ত নিচে গিয়েছে। একটু ঝুঁকে ড্রয়ার থেকে ডায়েরি টা বের করে হাতে নিল তুলি। ওই বাড়ি থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছিল। পুরোটা পড়া তো হয়নি সেদিন আদ্রর আকস্মিক আগমনে। হতে পারে বাকি রহস্য উন্মোচন হবে এই ডায়েরি পড়ার পর। বিছানায় পা তুলে বসল।শাড়ির আঁচল মেঝে ছুঁই ছুঁই।
.
.
বিষাক্ত যন্ত্রণায় যখন প্রতিনিয়ত ছটফট করছিল অন্তঃকরণ, হৃদপিন্ড,তখনই সাগরের ঢেউ যেন আছড়ে পড়ল আমার বুকে। দহন নিভে গেল কিন্তু বেড়ে গেল তৃষ্ণা। যে নিঃশেষ করেছিল অনল তাকে দেখার নিমিত্তে দিনকে দিন তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়লাম। কল্পনার জগতে,মন মস্তিষ্কে বিচরণ করতে লাগল ঘর্মাক্ত ক্লান্ত দেহটুকু নিয়ে দৌড়ে আসা সেই মেয়েটা। পিচ্চি একটা মেয়ে! দুই বেনুনি দুলছিল দুই দিকে দৌড়ার তালে তালে। গায়ে কালো রঙের একটা থ্রি পিস। ডাগরডাগর আখিঁ যুগল অবিন্যস্ত দৃষ্টি ফেলে হাতে কাঁচা হলুদ নিয়ে এগিয়ে আসছে। মেঠোপথে দাঁড়িয়ে আমি তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে কয়েক পলক। হাতের সিগারেট টা ফেলে দিলাম। ইচ্ছে করছিল মেয়েটা কে থেমে যেতে বলি। কিন্তু পারলাম না। চলে গেল পিচ্চি টা পাশ কাটিয়ে। চোখের আড়াল হলেও বাড়িয়ে দিয়ে গেল আমার হৃদস্পন্দন। শ্বাস ফেলতে কষ্ট হচ্ছিল। গাড়িতে উঠে পাঁচ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করে চলে এলাম নানুর বাড়িতে।

নানুর বাড়িতে আসার ইচ্ছে ছিল না। কোথাও গিয়ে বেড়ানোর ইচ্ছে টা হয় না আমার সচরাচর। ছোট বেলাতে তিন -চার বার হয়ত এসেছিলাম আর আসা হয় নি। মামাতো বোন নাহিদার রিকুয়েষ্ট ফেলতে পারলাম না। মেয়েটার বিয়ে এটেন্ড করেই চলে আসার ডিসিশন নিয়েই কুমিল্লা আসলাম। কিন্তু কে জানত যেখানে বছরের পর বছর পদলি পড়ে না আমার সেখানে আমার মন ছুটে আসার জন্য পাগলপ্রায় হয়ে উঠবে!

নানুর বাড়িতে প্রবেশ মাত্র ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে গেল। তীব্র অবাকতা আষ্টেপৃষ্টে আবেষ্ট করে নিল আমায়। উঠোনে বসে পিচ্চি মেয়েটা হলুদ বাটা দেখছে। ভালো করে তাকাতেই মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠল। আমরিন কে দেখে এক সাইডে এনে জিজ্ঞেস করলাম,

‘ মেয়েটা কে?’
‘কোন মেয়েটা ভাইয়া?’
‘ উঠোনে কালো ড্রেস পড়া পিচ্চি মেয়েটা।’
‘ ওহ্ তুলি। তুমি তো ওকে দেখো নি,আফসানা খালা মণির মেয়ে। ‘
‘ ওকে বলিস সুন্দর ভাবে চলাচল করতে।’

এতটুকু পড়ে তুলি অপর পৃষ্ঠা উল্টালে সাদা পাতা ভেসে উঠল চক্ষে। দম বন্ধ হয়ে আসছে তুলির সবকিছু জানার জন্য। পরে কি হয়েছিল?আদ্র কেন সুন্দর করে চলতে বলেছিল!পুরো ডায়েরি তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কোনো লিখা পেল না তুলি। এতটুকুতেই শেষ ডায়েরির লিখা। তুলির বুকের উচাটন বেড়ে গেল। অস্থির অনুভব করতে লাগল ক্রমাগত। আদ্র কেন লিখে নি আর!এ কেমন জ্বালায় ফেলে দিল? ইচ্ছে করেই কি এমন করল সুদর্শন ডাক্তার সাহেব!

তুলি ভাবনার প্রাসাদ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেল অকস্মাৎ। বিড়বিড় বন্ধ হয়ে এল নিমেষে। স্থবির দৃষ্টি চোখের সামনে ধরে রাখা দুধের গ্লাসের দিকে। আদ্র দুধের গ্লাস টা বাড়িয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ঠাঁই। বার কতক ইশারা করল নেওয়ার জন্য। তুলি হাতে নিয়ে নিল। মুখ টা মলিন হয়ে আছে মেয়েটার। একটুখানি খেয়ে রেখে দিল টেবিলে গ্লাস টা। আদ্রর সাথে তার ঢেড় অভিমান হয়েছে। এটুকুই যখন লিখল তাহলে কি দরকার ছিল ডায়েরি টা দেবার?আবার যেচে জিজ্ঞেস করতেও পারছে না, লজ্জা লাগছে।

টু শব্দও করল না তুলি। গুটিসুটি মেরে শুয়ে পড়ল বিছানায় এক পাশে। আদ্র গায়ে কাঁথা টেনে দিল। ড্রিম লাইট টা জ্বালিয়ে শুয়ে পড়ল তুলির পাশে। কোমরে ধীর ধীর স্পর্শে তুলির বক্ষে দ্রিমদ্রিম শব্দ হচ্ছে। শাড়ির ফাঁক দিয়ে হাত গলিয়ে আদ্র কাছে টেনে নিল। পিঠ গিয়ে ঠেকল তার প্রশস্ত বুকে। তুলি ঘুরে তাকানোর পূর্বে আদ্র স্মিত হেসে বলে উঠল,

‘ প্রথম যেদিন তোমাকে দেখেছিলাম সেদিনই তোমাকে কষিয়ে থাপ্পড় মারতে ইচ্ছে করছিল আমার।’

আদ্রর মুগ্ধতায় পরিপূর্ণ কন্ঠ কর্ণপাত হতেই তুলি হুড়মুড়িয়ে উঠে বসল। উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করল,

‘ মারতে ইচ্ছে করছিল মানে?’

হাত টেনে তুলি কে শুয়ে দিল আদ্র। চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো,

‘ উঠোনে বসে যখন হলুদ বাটা দেখছিলে হয়ত ভুলবশত তোমার ওড়না সরে গিয়ে বুকের অনেকখানি দৃশ্যমান ছিল। মেয়েদের এতো বেখেয়ালি হতে নেই। তখন আমার অভ্যন্তরীণ সত্তা বার বার সেদিকে চেয়ে থাকার প্রস্তাব দিচ্ছিল। বহু কষ্টে নিজেকে সংযত করে নেই আমি। তবে আমার মাথায় উদয় হয়েছিল যদি আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকত?অন্য কোনো পুরুষ যদি তোমায় এভাবে দেখত?আমি প্রথম দেখায় তোমার প্রেমে পড়ি নি,ভালোও বাসি নি তবে নিদারুণ অধিকারবোধ জাগ্রত হয়েছিল। মন বলছিল তুমি আমার জন্যই। মেজাজ এত খারাপ হয়েছিল আমার হাতে সত্যিই থাপ্পড় খেতে তুমি। বেঁচে গেলে বিয়ে বাড়ি হওয়াতে এবং সেদিন বিকেলেই জরুরি কাজে আমি ঢাকা ব্যাক করায়।’

তুলির সঙ্গে সঙ্গে চক্ষুদ্বয় বুঁজে ফেলল। ছিঃ!আমরিন তার জন্যই সেদিন কৌশলে ওড়না টা ঠিক করে দিয়েছিল!মান সম্মান সব শেষ হয়ে গেল,ডুবে গেল জলে। আদ্রর হাত গাল স্পর্শ করতেই চোখ দুটো আরও খিঁচে নিল। আদ্র মন্ত্রমুগ্ধের ন্যায় চেয়ে থেকে মৃদু হাসি হাসল। কানের কাছে মুখ নিয়ে রসাত্মক স্বরে ফিসফিস করে বলে উঠল,

‘ এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আর লজ্জা পেয়ে, মুখ লুকিয়েই বা কি হবে? মান-সম্মান সর্বস্ব তো আমি কেঁড়ে নিয়েছি বউ।’

আকাশ থেকে পড়লে তো মানুষ মরে যাবার কথা!তুলি শ্বাস ফেলছে কেন?আদ্রর কথা শুনে তো সদ্য অন্তরিক্ষ হতে লাফ দিয়ে পড়েছে মনে হলো। বুক টা ভীষণ কাঁপছে। পাশে অবস্থিত ব্যক্তির বুকে মুখ লুকানোরও জো নেই। পিটপিট করে নেত্র মেলতেই আদ্র ভ্রুঁ নাচালো। সাথে সাথে মুখ ফিরিয়ে নিল তুলি। ডাক্তার রা এতো অসভ্য হয়!তৎক্ষনাৎ অনুভব করল কপোলে উষ্ণ পরশ। গলায় ওষ্ঠ ছুঁয়ে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল আদ্র, তুলির নরম দেহটাকে। আলতো করে নয় বরং শক্ত করে। নিষ্প্রভ স্বরে বলতে লাগল,

‘ তোমাকে বিয়ে করব না বলে মা কে কতো এড়িয়ে গেলাম অথচ একটা সময় আমি নিজেই পাগলের মতো ছুটে এসেছি মায়ের কাছে। তোমাকে বিয়ে করব বলে আবদার করেছি। তোমাকে প্রথম দেখে আসার পর থেকে ভালোবাসা না জন্মালেও বড্ড তৃষ্ণা পেয়ে থাকত আমার তোমাকে দেখার। মনের সাথে জোর চলে কার!সপ্তাহে তিনদিন তোমাকে দেখতে ছুটে যেতাম কুমিল্লা। কষ্ট হতো এতো বার আসা যাওয়া কিন্তু পরিশ্রান্ত অক্ষি যুগল তোমার মুখটা দেখলেই শান্তি পেত। বিলীন হয়ে যেত সকল ক্লান্তি। একদিন স্কুল শেষে মর্মিতার সঙ্গে হাসতে হাসতে বাসায় ফিরছিলে। আমি গাড়িতে ছিলাম। ঠিক সেই মুহুর্তে উপলব্ধি করতে পেরেছিলাম আমার হৃদয় স্পর্শ করা প্রথম মেয়ে তুমি যাকে পাওয়ার ঝোঁক প্রবল ভাবে ঝেঁকে ধরেছে আমাকে। তোমার বাবা কে তোমাদের নিয়ে আসার প্রস্তাব টা আমিই দেয়। কি করব তিনদিন একটু একটু করে দেখাতে প্রশান্তি পাচ্ছিলাম না। বছরের পর বছর কষ্ট বাড়তে লাগল উল্টো। তাই প্রতিদিন দেখার জন্য এমনটা করতে হলো।’

আদ্র থামল। তুলির চোখে চোখ রেখে বললো,

‘ তুমি আরেকটু বড় হতে পারলে না তুলা?তুমি যদি আমার অপেক্ষার মুহুর্তগুলো অনুভব করতে পারতে তবে বোধহয় আরও আগেই আমার বুকে থাকতে।’

শেষ কথাটা বলতে গিয়ে আদ্রর গলা ধরে এল,তুলি তা বুঝতে পারল স্পষ্ট। নিস্তব্ধ,নির্বাক তুলি!পরমুহুর্তে একটু উপরে উঠে আদ্রর কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিল। আদ্রর ভালোবাসা এত প্রখর কেন!গরম নিঃশ্বাস ছুঁয়ে দিচ্ছে তুলির অধর বরাবর। ঠিক সেখানেই আদ্র স্পর্শ করল গভীরভাবে।
____________

হসপিটালের করিডোরে তুলিকে বসে থাকতে দেখে স্তব্ধ পূর্ব। মেয়েটার পেট টা খানিক উঁচু হয়ে আছে। শরীরটা আগের থেকে গুলুমুলু হয়েছে। সুন্দরও হয়েছে বেশ। পূর্বর হৃদয়ে কোথাও একটা নাড়া দিয়ে উঠল ব্যাথা৷ অতি সূক্ষ্ম জমিয়ে রাখা ব্যাথা!চোখ ঝাপসা হয়ে এল। পাশে দাড়িয়ে থাকা তিশা অস্ফুট স্বরে বললো,

‘ আপনার কি খারাপ লাগছে পূর্ব?তুলি কে কিন্তু অনেক সুন্দর লাগছে। ছোট্ট মেয়েটা মা হবে আজ বাদে কাল।’

পূর্ব তিশার কাছ থেকে ত্রিহান কে নিয়ে নিল। কিঞ্চিৎ ফাঁক হলো দু ঠোঁট। তিশার কপালের এক কোণে ছুঁয়ে বললো,

‘ আমাকে ক্ষমা করে দিও তিশা। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু কোথাও না কোথাও তুলি মনের সুপ্ত কোণে থেকে গেছে। ও শুধুই সুপ্ত কোণে থাকে। বর্তমানে আমি তোমাকে ভালোবাসি এটাই সত্য।’

‘ আমি জানি পূর্ব। এই যে আমাদের ছেলে আমাদের ভালোবাসার চিহ্ন। ত্রিহান কে তো ডাক্তার দেখিয়ে ফেলেছি, চলুন তুলির কাছে যাই।’

‘ না। ‘

তিশা কে বাঁধা দিয়ে সামনে তাকাতে বললো পূর্ব। দেখতে পেল আদ্র তুলি কে কোলে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আর তুলি!সে তো লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রেখেছে। পূর্ব ক্ষীণ হাসল। তিশার হাত টা ধরে বললো,

‘ ভালোবাসা মনে দ্বিতীয় বারও জন্মে। ভালোবাসি তিশা।’

#চলবে,,,

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প কেমন হচ্ছে বলবেন প্লিজ!)