#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ১৮
সময় সকাল এগারোটা। নীতু সবজি কাটতে ব্যস্ত।সাথি ফোলা পেটে গোমড়া মুখো হয়ে বললো,”আপু আজ কি রান্না করবে?”
“টমেটোর ডাল।তোর জন্য কবুতরের ঝোল।আর ডিম ভুনা।চলবে?”
“চলবে।তুমি যাই রাঁধো অমৃত লাগে আর আমি রান্না করলে করল্লা ফিলিং আসে।চুলে কি দিয়েছো?”
নীতু মাথায় হেয়ার প্যাক দিয়ে সবজি কাটতে বসেছিল।
“হোম মেড হেয়ার প্যাক দিলাম।একটু নিজের যত্ন,বুঝলি?”
সাথি হাসলো।বললো,”কি কি দিয়ে তৈরি করলে?”
“গতকাল অফিসে যাওয়ার আগে তিন চামচ মেথি ভিজিয়ে রেখে গিয়েছিলাম।আজ সেই মেথি আর তার নির্গত রস একসাথে ব্লেন্ডারে দিলাম।সাথে একটা পেঁয়াজ, ডিম, এলোভ্যারা দিয়ে ব্লেন্ড করে এক চামচ ক্যস্টার অয়েল।ব্যস তৈরি।”
“তুমিও পারো আপু।এত ঝামেলা আমার সয় না!এমনিতেই তোমার চুল সুন্দর।”
নীতু কেটে রাখা টমেটোর এক টুকরা সাথির মুখে ঠেসে দিয়ে বললো,”সবসময় নিজের যত্ন নিতে হয়।বুঝেছিস? অন্যকে ইমপ্রেস করার জন্য আমরা যতটা প্রচেষ্টা করি নিজের জন্য তার এক আনাও করি না।আমিও আগে এই কাজটাই করতাম।নিজেকে সাজাতাম অন্যের চোখে কি করে ভালো লাগবে তার জন্য। আর এখন নিজেকে সাজাই, যত্ন নেই আমার স্যাটিসফেকশনের জন্য।সবকিছুর যত্ন প্রয়োজন। সেটা হোক সম্পর্কে বা নিজের দৈনন্দিন ছোট ছোট কাজে।তোর কাছে সুন্দর শোপিস আছে বলে যত্ন নিচ্ছিস না,দেখবি একটা সময়ে এসে সেই জিনিসটা হয়তো নষ্ট হয়ে যাবে, না হলে মরিচা পড়ে যাবে।তখন সেই সুন্দর শোপিসটাও তোর কাছে বিদঁঘুটে লাগবে।সম্পর্ক গুলোর ক্ষেত্রেও তাই…. আর তোকে দিয়ে দিতাম কিন্তু ঠান্ডা লাগতে পারে তাই দিলাম না।”
সাথি নীতুর কথায় অবাক হলো না।বললো,”আপু তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে আমার।”
“তোর কাছেও আমার শিখার আছে।”
“কি?”
নীতু হাসতে হাসতে বললো, “কি করে বরকে জ্বালাতে হয়!”
সাথি কাঁদো কাঁদো চেহারায় তাকাঁলো।নীতু সাথির সেই কাঁদো কাঁদো মুখেই আবার একটা টমেটোর টুকরা ঠুসে দিল হাসি মুখে।
***********
নীতু আর সাথি বসে আছে অভীকদের ফ্লাটে।নীতুর অস্বস্তি হলেও সাথি খুবই চনমনে বসে আছে।অনবরত রুশিয়া বেগমের সাথে কথা বলে যাচ্ছে।আর নীতু চুপচাপ তাদের কথোপকথন শুনছে। এখানে আসার মোটেও ইচ্ছে ছিল না নীতুর কিন্তু অভীকের মা গতকাল থেকে দুবার তাদের চায়ের দাওয়াত দিয়ে গেছে।প্রতিবেশী মানুষ না আসলে অভদ্রতা হয়। তাই এখানে আসা।কিন্তু এসেও নীতু বিপাকে পড়েছে কিছুতেই নিজেকে সহজ করতে পারছে না।মনে হচ্ছে চুড়ি করে বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছে সেরকম ফিল হচ্ছে। ভদ্রমহিলা তাদের বসতে বলে কিচেনে চলে গেলো। সাথি বলে বসলো,”আপু তুমি এমন আনসসোশালের মত বিহেভ কেন করছো?আসার সময়েও গড়িমসি করলে, এখন তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে কিডন্যাপ করে এনেছি আমি।”
নীতু সাথির কথার জবাব দিতে পারলো না তার মধ্যেই রুশিয়া বেগম হাতে ট্রে নিয়ে ফিরলেন।নীতু গোপনে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। অভীককে দেখতে না পেয়ে অস্বস্তি কম হলেও একেবারে পুরোপুরি কাটছে না।আজ তো শুক্রবার।তারও তো বাসায় থাকার কথা। যদি নীতুকে এখানে দেখতে পেয়ে রাগারাগি করে?নীতুর গলা শুকিয়ে আসে।নিজেকে প্রবোধ দেয়, রাগারাগি কেন করবে? নীতু তার কি ক্ষতি করেছে?
এমনিতেও অফিসে বসে সবসময় নীতুর সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে।নীতু আবার ঘামতে শুরু করে!
রুশিয়া বেগম বলে ওঠে, “নীতু তুমি তো কিছুই নিচ্ছো না।শরীর খারাপ? এভাবে ঘামছো কেন?”
নীতু ফ্যাকাসে হাসলো।সেই হাসি দেখে যে কেউ বলবে, নীতুকে মেরে পিটিয়ে হাসানো হচ্ছে!নীতু বড় করে দম ফেলে বললো,”আমি ঠিক আছি আন্টি।”
নীতু টি টেবিলের দিকে তাকিয়ে দেখলো বড়সড় ট্রেতে তিন পদের ফল, ডিম পোঁচ, মিষ্টি, শরবত সব রাখা।নীতু শরবতের গ্লাস হাতে তুলে নিল।সাথির দিকে তাকিয়ে দেখলো। সাথির মুখ মেশিনের মত চলছে।নীতু সাথির হাতে চিমটি কাটলো।তাতে সাথির খাওয়ায় ব্যঘাত ঘটলো না একটুও।
ভদ্রমহিলা আবার উঠে গিয়ে আমস্বত্ব নিয়ে এলেন।দুজেনর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,”আমার ননদের হাতের আমস্বত্ব।খুবই ভালো খেতে, খেয়ে দেখো।”
তাদের কথার মাঝেই অভীক সদ্য ঘুম ভাঙা চোখে এলোমেলো চেহারা নিয়ে ড্রয়িং রুমে প্রবেশ করলো। প্রবেশ করেই বড়সড় ধাক্কা খেলো নীতুকে তাদের বাসায় দেখে।
রুশিয়া বেগম চিৎকার করে বললেন,”তুই এভাবে ন্যাংটো হয়ে আছিস কেন?”
অভীক গেঞ্জি পড়ে ঘুমাতে পারে না।থ্রী কোয়াটার প্যান্ট পড়ে ঘুমিয়ে ছিল।তাই দেখে তাকে কোন হিসেবে মা ন্যাংটো বললো?অভীক বুঝতে পারলো না। অভীক মায়ের এসব বেহিসেবী কথায় বিরক্ত হয়ে রাগী চোখে তাকালো।
ছেলের চাহনি দেখে রুশিয়া বেগম থতমত খেয়ে বলে উঠলেন,”আরে ওভাবে তাকাচ্ছিস কেন?আমি বলেছি মেহমানের সামনে এভাবে কেউ আসে?”
অভীক কিচ্ছু বললো না।গটগট করে নিজের রুমে ফিরে গেলো।
রুশিয়া বেগম নীতুর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,”মা তোমরা সময় সুযোগ করে এসো আমার কাছে।আমি বুড়ো মানুষ সারাদিন এই বাসায় থাকি।তোমরা আসলে আমার ভালো লাগবে।”
ঠিক তখনই অভীক গেঞ্জি পড়ে সোফায় এসো ধপ করে বসলো।নীতু মনে মনে গুটিয়ে গেলেও স্বাভাবিক থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।অভীক বসেই বললো,”মা চা দিলে না তোমার মেহমানদের।”
রুশিয়া বেগম চা আনতে উঠে গেলেন।অভীক সাথির দিকে তাকিয়ে বললো,”কেমন আছো সাথি?”
“ভালো ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?”
“ভালো আছি।মাঝে মাঝে মায়ের কাছে এসো সাথি। আর কোন সমস্যায় পড়লে কখনো সঙ্কোচ করো না।জানিও আমাকে।”
সাথি হাসলো।নীতুকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে অভীক কথা বলছে।নীতু বুঝতে পারলো। সাথি বললো,”ভাইয়া আমরা তো এলাম আপনাদের বাসায়, আপনারা কবে যাবেন?”
অভীক দুই হাত প্রসারিত করে সোফার উপরের অংশে রেখে বললো,”না বললে কি যাওয়া যায়?মা বলেছে তবেই না এসেছো।”
“এখন তো বললামই। ”
অভীক একবার নীতুর দিকে তাকিয়ে বললো,”বলেছো কিন্তু একশো পার্সেন্ট সম্মতি আমি পাইনি।”
“মানে?”….. সাথি বুঝতে না পেরে বললো।
” আমি তোমার বাসায় গেলে তোমার সমস্যা না হলেও অন্যকারো সমস্যা হতে পারে!”
সাথি বুঝতে না পেরে বোকার মত তাকিয়ে রইলো। নীতু বুঝতে পারলো না,মি.অভীক সবসময় এমন ডিপ্লোমেটিক কথা কেন বলে?
রুশিয়া বেগম চা বিস্কিট চানাচুর নিয়ে এলো।সাথি চানাচুরের প্লেট হাতে তুলে খাওয়া শুরু করলো।নীতু সেদিকে তাকিয়ে বিরক্ত হলো।দিনদিন প্রেগ্ন্যাসির সময় যত বাড়ছে সাথির তত খাওয়া বেড়ে যাচ্ছে।হয়তো হরমোনাল চেইঞ্জের কারণে। অভীক চা পানে মনোযোগ দিল।চোখ মোবাইলের স্ক্রিনে। রুশিয়া বেগম নীতুর পাশে বসে নীতুর হাত ধরে বললো,”নীতু জানি আমরা তোমার সাথে অন্যায় করেছি কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে না।তুমি সেসব ধরে রেখো না মা।মাঝে মাঝে আমার কাছে এসো।আমার ভালো লাগবে।”
নীতুর অস্বস্তি হলো এসব কথায়।নীতু তাকিয়ে দেখলো অভীক মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত।হয়তো শুনতে পেয়েছে সবটাই।নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,”আন্টি আপনি কষ্ট পাবেন না।আমি ওসব মনে রাখিনি।পুরানো সব কিছু ভুলতে না পারলে আমি আপনার সামনে বসে থাকতাম না।আমি বহুবার ভেঙেছি কারো কথায়, কারো কাজে, কারো ঘৃণ্য ব্যবহারে কিন্তু নিঃশেষ হয়ে যায় নি।এই যে আমাকে দেখছেন, অনেক কিছু ত্যাগ করে আজ আমি এখানে।সবটা সহজ ছিল না কিন্তু হয়েছে।আজ আমাকে ভাঙবার সাহস কারো নেই….সময় পেলে অবশ্যই আসবো আপনার কাছে।”
নীতুর কন্ঠে কিছু একটা ছিল।যা শুনে অভীক কেঁপে উঠলো।চোখের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো নীতুর কৃষ্ণবর্ণ মুখশ্রীতে!মুহুর্তেই অভীককে শেষ করে দিল নীতুর শক্ত, কঠিন ইস্পাতের মত ধারালো ব্যক্তিত্ব।একরাশ অপরাধবোধ ঝেকে বসলো অভীকের শুভ্র মুখটিতে!
****************
সেতু এসেছে শুনে ইতু এসেছে ছেলেকে নিয়ে দেখা করতে।মহিমা বেগম তাদের সাথে কথা বলে মেয়েদের জন্য নাস্তা বানাতে উঠে পড়লেন। সুরভি এখনো ফিরে নি।নিখিল সকাল সন্ধ্যা অফিস করে আর রাত হলে ছেলেকে বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। ছেলে আর ছেলের বউয়ের চিন্তায় মহিমা বেগম নিজের প্রেসার হাই করে ফেলেছেন।
মা উঠে যেতেই দু বোনে অনেক্ক্ষণ গল্প করলো।ইতু কথা বলতে বলতেই পর্বেক্ষণ করলো সেতুকে।সেতু আগের মত ফটফট করে কথা বললেও চঞ্চলতা কোথাও যেনো মিয়িয়ে গেছে। ইতু সেতুর মাথায় হাত রেখে বললো,”সেতু ওবাড়ির সব ঠিক আছে?কোন সমস্যা নেই তো?তাজ স্বামী হিসেবে কেমন? ”
সেতুর গলার কাছে কান্না এসে দলা পাকালো।আজ দুদিন হলো এসেছে মাত্র একবার কল করেছে তাজ।তাও জানতে ঠিকঠাক পৌঁছেছে কিনা? আর কোন খবর নেয় নি।অথচ ওই নিষ্ঠুর মানুষটার জন্যই সেতুর ক্ষণে ক্ষণে কান্না পাচ্ছে, বুকের ভিতর অস্থির লাগছে।বাড়িতে এসেও সবার সাথে ঠিকমত কথা বলতে পারছে না।হাসতে পারছে না,খেতে পারছে না।সবখানেই তাজকে অনুভব করে। ইতু পুনরায় একই কথা জিজ্ঞেস করলে সেতু হাসিমুখে বলে,”এমন গোয়েন্দার মত কথা বলছো কেন আপু?চিন্তা করো না সব ঠিকাছে।তাজ খুবই ভালো মানুষ। আর শাশুড়ীও খারাপ না কেবল একটু অহংকারী তা সামলে নিতে আমি নিজেই একশো।”……বলে সেতু তুতুনের সাথে খেলায় মেতে উঠলো।
আর ইতু বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো বোনের দিকে।ইতু সেতুর চোখের দিকে তাকিয়েই বুঝতে পেরেছে কিচ্ছু ঠিক নেই।তারপর তো এখন পুরোপুরি সিওর হলো।আগের সেতু হলে অভিযোগ করতো,কান্না করতো,আবদার করতো কিন্তু বর্তমানের সেতু তা কিছুই করলো না।যে মেয়ে ছোটবেলা থেকে সবকিছু বেশি বেশি পেয়েও অভিযোগ করতো তোমরা আমাকে ভালোবাসো না।আজ সে কি সুন্দর হাসি মুখে বলে দিল, সব ঠিক আছে। শুধুমাত্র বিয়ে নামক বন্ধনে জড়ালেই কি এতটা পরিবর্তন করে দিতে পারে মেয়েদের?
***********
একটা উন্নত ধরনের রেস্তোরাঁয় বসেছে আজকের মিটিং।অভীক, নীতু পলাশ,রিপা আরো তিনজন আছে আজকের সৌজন্য মূলক মিটিংয়ে।সামনে বসা ক্লায়েন্টদের সাথে অনবরত কথা বলে যাচ্ছে অভীক।নীতু এই অভীককে দেখে আশ্চর্য হয়।একটা মানুষ কাজকে কতটা প্রাধান্য দিলে এভাবে পরিশ্রম করতে পারে।স্বচক্ষে না দেখলে নীতু তা জানতো না।
দুই ঘন্টার মিটিং শেষে চললো খাওয়া দাওয়া।এত ব্যস্ততার মাঝেও অভীক ঠিকই খেয়াল করলো পলাশ আজকে মিটিংয়ের থেকেও নীতুকেই দেখতেই বেশি মগ্ন। অভীক খেতে খেতেই নীতুর দিকে তাকালো।ল্যাভেন্ডা রঙের শাড়ি, চোখে কাজল, কপালে ম্যাচিং টিপ,মাঝখানে সিঁথি করে লম্বা চুল গুলো ছড়িয়ে দেওয়া পুরো পিঠজুড়ে ।ঠোঁটে হালকা রঙের ছোঁয়া, এক হাতে ঘড়ি আর একহাতে চারটে কাচের চুড়ি।যাতে বর্তমানে রিনরিন শব্দ হচ্ছে চামচ নাড়িয়ে খাওয়ার ফলে। কাঁচের শার্সি ভেদ করে মধ্য দুপরের দুপুরী রোদ এসে পড়েছে নীতুর মুখের বাম পাশে। যেন একরাশ মিঠের রোদ্দুরের স্নিগ্ধতা!
অভীক দৃষ্টি সরিয়ে নিল।
ক্লায়েন্টরা চলে যেতেই নীতুরাও উঠে পড়লো।ঠিক সেই সময় ঘটলো অঘটনটা।নীতুর জুতোর সাথে শাড়ি পেঁচিয়ে পড়ে যেতে নিল আর খুব দ্রুততার সঙ্গে পলাশ নীতুকে ধরে ফেলল কোমড় পেঁচিয়ে। যেন পলাশ এই মুহুর্তের জন্যই তৈরি ছিল।অভীকের হাতের মুঠো শক্ত হয়ে গেলো,চোখের তারায় ঝিলিক দিল ক্রোধের আগুন।
পলাশ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে উঠলো,”তুমি ঠিক আছো নীতু?”
নীতু সাথে সাথেই সরে গিয়ে বললো,”আমি ঠিক আছি।”….বলে অভীকের দিকে তাকিয়ে কেঁপে উঠলো। রক্তাভ চোখ দুটিতে যেন অজস্র রুক্ষতা!
অভীক গমগম স্বরে বলে ওঠে, “এবার যাওয়া যাক।”
সবাই যে যার মত সামনে এগালে পলাশ এক্সকিউজ মি বলে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেলো।রিপা আর বাকি তিনজন একটু সামনে এগোতেই অভীক নীতুর দিকে ফিরে তাকালো।নীতু অভীকের পিছন পিছন হাঁটছিল।অভীকের এমন আকস্মিক দাঁড়িয়ে পড়ায় নীতু বিভ্রান্তের দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো।অভীক কিছুটা নীতুর দিকে ঝুঁকে হিসহিসিয়ে কিন্তু রাগী স্বরে বলে,”জানেন তো মিস নীতু সবাইকে সব কিছুতে শোভা পায় না।কাক কে যেমন ময়ুর সাজালে সুন্দর লাগে না তেমন ময়ুর কখনো কাক সাজে না।যার যতটুকু যোগ্যতা তার ততটুকু পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত!হাই হিল পড়ে যদি হাঁটতেই না পারেন তবে কেন মিছে মিছে আধুনিক সাজার চেষ্টা করা?সুন্দর শাড়ি পড়লে, হাই হিল পড়লেই কেউ বিশ্বসুন্দরী হয়ে যায় না। সৌন্দর্য বিষয়টা কখনো এভাবে আসে না!”
মুহূর্তেই নীতুর চোখে পানি এসে গেলো।এতবড় অপমানে শরীর বিষিয়ে উঠলো।নাক মুখ রাগে লাল হয়ে গেলো।সমস্ত রাগ গিয়ে পড়লো সাথির উপর।কতবার বলেছিল উচু জুতো পরবে না তবুও বলে কিনা শাড়ির সাথে এটাই মানানসই।আজকে মিটিং… হেনতেন বলে রাজি করালো।আর অপমানিত কার হতে হলো?নীতুকেই তো।
অভীক চলে যেতে নিলেই নীতু ছলছল চোখে দৃঢ় কিন্তু শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো,”স্যার আমার যোগ্যতা কতটুকু তা আমি জানি।আমার অফিশিয়াল যোগ্যতা সম্পর্কে বলার রাইট আপনার থাকলেও আমার ব্যক্তিগত কোন কিছু সম্পর্কে বলার রাইট আপনার নেই।আমি নীতুই ঠিক আছি, আমার বিশ্বসুন্দরী হবার প্রয়োজন অতীতেও ছিল না বর্তমান, ভবিষ্যতেও হবে না।বিশ্বসুন্দরীদের দরকার পড়ে আপনাদের। যারা মানুষ বিবেচনা করেন সৌন্দর্যের পারদ দিয়ে! আর ময়ুর হয়ে খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকার থেকে আমার কাকই সই!”…….বলে নীতু গটগট করে হেঁটে বেড়িয়ে গেলো।নীতু ফিরে তাকালেই দেখতো পেতো অভীকের ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসির রেখা!
চলবে,
#কাননবালা!
#আয়েশা_সিদ্দিকা
পর্বঃ১৯
নীতু পার্স ব্যাগটা শক্ত করে ধরে আছে।চোখ মুখ রাগে থইথই করছে! নীতু ভেবে পায় না, এই আধুনিক যুগেও মানুষ কি করে গায়ের রঙ নিয়ে কটাক্ষ করে? রাগে বেখেয়ালীতে হাঁটতে গিয়ে একজনের সাথে ধাক্কা লেগে যায় নীতুর।নীতু চোখ তুলে সরি বলতে নেয়। কিন্তু সরি আর বলা হলো না।সামনে দাঁড়ানো মানুষটিকে দেখে রাগের পারদ যেন সীমানা ছাড়ালো। এই মুহুর্তে এই পরিবেশে নীতু এই মানুষটিকে আশা করেনি।নীতু প্রথমে অবাক হলেও এখন ভীষণ রাগ হচ্ছে।
তাজ নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে দেখছে নীতুকে।আকস্মিক এই দেখা হওয়ায় তাজও বিস্মিত। কিন্তু বিস্ময়ের পাল্লা খুশির থেকে কম!তাজের মনে হচ্ছে দৃষ্টিতে একগুচ্ছ জারুল ফুলের স্নিগ্ধতা আঁটকে গেছে।কি সুন্দর লাগছে নীতুকে!তাজের মনে চাচ্ছে নীতুকে নিয়ে তার মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে, “দেখো তো মা, কে বেশি সুন্দর?জারুল ফুল নাকি আমার নীতু?”
তাজের অচিন্তনীয় ভাবনার সুতো কেটে দিয়ে নীতু রুঢ় স্বরে বলে, “আপনি এখানে কি করছেন? ”
তাজ নীতুর রাগান্বিত মুখ দেখে কষ্ট পেলো।এখানে একটা কাজে এসে এভাবে হুট করে যে নীতুর সাথে দেখা হবে তা কখনোই ভাবে নি। তাই ঠান্ডা স্বরে বলে,”কাজে এসেছিলাম, তুমি এখানে?”
নীতু টিটকারির সুরে বলে, “কেন আপনি জানতেন না আমি এখানে?নাকি ভান করছেন?”
“আমি কিভাবে জানবো তুমি এখানে নীতু?”
নীতু দুই হাত ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে বলে,”ওহ তাজ! অভিনয়ে আপনাকে আমার দশে দশ দিতে ইচ্ছে করছে।বাহ! ”
“আশ্চর্য আমি কি করে জানবো?কিসব বলছো নীতু?”…. তাজের চোখে মুখে বিস্ময়!
নীতু রুক্ষ স্বরে একটু জোরেই বলে,” আপনি জানতেন আমি এখানে। এখন একদম ভান করবেন না।আমি চাতুরীপনা একদম সহ্য করতে পারিনা।”
তাজের এবার একটু মেজাজ খারাপই হলো।কন্ঠে তেজের ভাব ফুটিয়ে বললো,”আশ্চর্য নীতু তুমি এরকম বিহেভ কেন করছো? রাস্তাঘাটে এরকম সিনক্রিয়েট করা তোমার শোভা পায় না।”
নীতু যেন এবার নিজের দিগবিদিক ভুলে গেলো।চোখ মুখ শক্ত করে কিছুটা চেচিয়েই বললো,” আমার জন্য কোনটা শোভনীয় তা আপনার ভাবতে হবে না।রোজ সকাল বিকেলে আমার অফিসের সামনে ঢুঁ মারা।এগুলো বুঝি খুব শোভনীয়? চুপিচুপি একটা মেয়েকে দেখা এটা বুঝি খুব শোভনীয়? শুক্রবার হলেই আমার বাসার সামনে পায়চারি করা এগুলো বুঝি শোভনীয়?….একজন বিবাহিত পুরুষ কখন অন্য একটা নারীকে ফলো করে জানেন মি.তাজ?যখন তার চরিত্রে দোষ থাকে!আপনি কি নিজেকে চরিত্রহীন হিসেবে পরিচিত করাতে চান?”
তাজের চোখে মুখে একই সাথে বিস্ময়, দুঃখ,অভিমান, রাগের অভিব্যক্তি ফুটে উঠলো।চোখের দৃষ্টি নতজানু হয়ে গেলো! নীতুর কাছে এমন করে ধরা পরা যাবে কল্পানাও করেনি তাজ।তাজ বিড়বিড় করে বলে উঠলো, “তুমি আমার জন্য অন্য নারী নও নীতু!কখনোই নও!”
তাজের অস্ফুটস্বরে বলা কথাও নীতু শুনে ফেললো।তাই বলে উঠলো,”আমি আপনার জন্য অন্য নারী।নিষিদ্ধ আপনার জন্য আমি!এইসব পাগলোমো বন্ধ করুন।আমাকে বাঁচতে দিন!”
তাজ আর্তনাদের সুরে বলে,”এভাবে বলো না নীতু।এতটা কঠোর তো তুমি নও।আমার হৃদপিণ্ড এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে তোমার তিক্ত ভাষা।আমি তোমাকে ডিস্টার্ব করার জন্য যাই না বিশ্বাস করো।তোমার ওই মুখটা আমার জন্য শান্তির নিঃশ্বাস! একটু স্বস্তির আশায় চুপিচুপি তোমাকে দেখে চলে আসি।আর কিছু তো নয়!”
নীতু আগের থেকেও রুক্ষ স্বরে বলে, “আমি কোন শান্তিশালা খুলে বসেনি তাজ।নিজের শান্তির এতই যখন পরোয়া তাহলে আপনার উচিত ছিল সময় ফুরাবার আগে গোটা দুনিয়ার সাথে লড়াই করা।তা যখন পারেন নি।এবার আমায় মুক্তি দিন।আর নিজেকেও পিছুটান থেকে মুক্তি করুন।আমি আপনার জন্য ততটাই নিষিদ্ধ যতটা স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ নিষিদ্ধ! “…….. এই পর্যায়ে এসে দুপা কিছুটা এগিয়ে তাজের আরো সামনে এসে দাঁড়ায় নীতু।চোখের তারায় আগুন ঝড়িয়ে এক আঙুল শাসিয়ে বলে,” আমার সাথে আপনি আর আপনার মা যাই করুন আমি প্রতিবাদ করিনি।আমার কষ্টের কারণ হিসেবে আপনাকে কখনো আমি দায়ী করিনি কিন্তু আমার বোনের কষ্টের কারণ আপনি হলে আপনাকে আঘাত করতে আমি একমুহূর্ত ভাববো না।সোজা পুলিশে দিবো।যোগ্য প্রেমিক হতে না পারলেও যোগ্য স্বামী হয়ে দেখান।নিজেকে কাপুরুষের দলে ফেলবেন না।আমি আপনার সূচনা হলেও সমাপ্তি হলো সেতু।তাই তাকেই আঁকড়ে ধরুন।”
একদমে এতগুলো কথা বলে তাজকে পাল্টা কিছু বলতে না দিয়ে নীতু সি এনজিতে উঠে পরে ।পিছনে এক আকাশ কষ্ট আর আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাজ!তাজের কাছে এই নীতুকে বড্ড অচেনা লাগে!
এতক্ষণের তাজ ও নীতুর কনভারসন অভীক শুনতে না পেলেও রাস্তার অপজিটে গাড়িতে বসে দুজনকেই দেখতে পেয়েছে।নীতুর এমন রাগী মুখ করে আঙুল নাচিয়ে কথা বলা দেখে অভীকও আশ্চর্য হয়েছে।শান্ত মুখশ্রীর আড়ালে যে এমন রণচন্ডীর রুপ লুকিয়ে আছে তা কখনো ভাবেনি অভীক।নীতু নামের মেয়েটা দিন কে দিন তাকে আশ্চর্য করছে।এতকিছু ছাপিয়েও অভীকের মনের মধ্যে খচখচ করে শুধু দুটো প্রশ্নই বিঁধছে, “কেন নীতু এতটা রেগে কথা বললো ছেলেটির সাথে? আর ছেলেটিও বা কে?”
সিএনজি ছেড়ে দিতেই নীতু দুহাতে মুখ ঢেকে হু হু করে কেঁদে দিল।নীতু জানে আজকের ব্যবহারে তাজ কষ্ট পেয়েছে।তবুও নীতু ইচ্ছাকৃত ভাবে রুক্ষ বিহেভ করেছে। এটা ছাড়া তো কোন গতি নেই।নীতুর কি তাজের জন্য খারাপ লাগে না?লাগে।তবুও নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে কিন্তু তাজ সেটা পারেনি।তাজের কাছে এখন কেবল একটাই অপশন, সে হলো সেতু!শুধুমাত্র সেতু!নীতু তাজের জীবনে কোন ম্যাটার করে না।তাজকে পিছুটান ফেলে বাস্তবতাকে মেনে নিতে হবে।আর আজকের ব্যবহারের পর তাজের জন্য তা খুবই সহজ হবে!নীতু চোখের জল শাড়ির আঁচলে মুছে দিয়ে ঠোঁটের কোণে ঈষৎ হাসি ফুটিয়ে বলে,”একদম কাঁদবি না নীতু।কান্নার মত কিছুই হয়নি।তাজ কখনোই তোর ছিল না।অযথা ছোট বাচ্চাদের মত কান্না করে লাভ নেই!আর কারো জন্য চোখের জল ফেলবিনা সেই ওয়াদা ভুলে যাচ্ছিস কেন?”
নীতুকে একা একা কথা বলতে দেখে সিএনজি ওয়ালা অবাক চোখে পিছনে ফিরে তাকায়। সিএনজি ওয়ালার চোখের দৃষ্টি বলছে তার গাড়িতে কোন মেয়ে প্যাসেঞ্জার নয় বরং কোন জিনে ধরা মেয়ে বসেছে।
*************
সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসের সবার সাথে কাজ করেছে নীতু।ভীষণ টায়ার্ড থাকলেও নতুন ডাটা প্রোজেক্ট নিয়ে সবাই ব্যস্ত।ছেড়ে দেয়া চুল গুলো এখন হাত খোঁপা করা।চোখের কাজলেও লেপ্টে রয়েছে।ঠোঁটের লিপস্টিক শুকিয়ে অবহেলায় পেলব ঠোঁটে লেপ্টে রয়েছে।নীতুর সেদিকে খেয়াল নেই। সে একমনে কাজ করে যাচ্ছে।
ঘন্টাদুয়েক পর অফিস ছুটি হলে নীতু কিছু কেনা কাটার জন্য বাজারে ঢুকে।নতুর প্রেজেন্টেশন নিয়ে সামনের দিনগুলো ব্যস্ত থাকতে হবে।বাসায় কিছু মুদি বাজার লাগবে তাই করা প্রয়োজন।আর সাথি ফোলা পেট নিয়ে এখন কিছুতেই এসব পারবেনা।
হাতে বাজারের ব্যাগ নিয়ে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আছে নীতু।শাড়ির আঁচল কাঁধের উপর গুটানো।খোঁপাটাও পিঠের কাছে এলিয়ে পড়েছে। এদিক ওদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে রিকশা খুঁজে যাচ্ছে নীতু।
অভীক মায়ের ঔষধ কিনে ফিরছিল রিকশায়। দূর থেকেই নীতুকে দেখতে পেয়ে রিকশা ছেড়ে দিয়ে পায়ে হেঁটে নীতুর সামনে এসে দাঁড়ায়। ভুতের মত অভীককে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নীতু চমকে ওঠে। অভীক হাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,”বাজার করলেন বুঝি?”
নীতু জবাব দিল না।চোখে মুখে বিরক্তি আর রাগ খেলে গেলো নীতুর।দুপুরের আচরণ মনে হতেই চোখের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘুরিয়ে ফেললো।নীতুর এমন আচরণে অভীক ঠোঁট টিপে হেসে ফেললো।তারপর বললো,”এখানে ভীর হয় বলে কোন রিকশা পাবেন না।কিছুটা গলির সামনে আগাতে হবে।চলুন একই সাথে না হয় হাঁটি যেহেতু গন্তব্য একটাই!”
নীতু অনেকটা অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাঁটা ধরলো। ব্যগের ভারে হাত ব্যথা করছে।দাঁড়িয়ে না থেকে চলাই ভালো।নীতুকে হাঁটতে দেখে অভীক মোবাইল পকেটে ঢুকিয়ে নীতুর পাশাপাশি হাঁটা শুরু করে।কয়েক মিনিট পরেই অভীক নীতুর হাত থেকে ব্যগ টান মেরে নিজের হাতে নিয়ে অভীকের হাতে থাকা ঔষধের প্যাকেট আর কোটটা নীতুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে আবার হাঁটা শুরু করে।এত দ্রুত সব ঘটে যাওয়ায় নীতু বোকা বোকা মুখ করে দাঁড়িয়ে পরে।তবুও অভীককে কিচ্ছু জিজ্ঞেস করেনা।অভীক কয়েক পা সামনে হেঁটে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। পিছনে ঘুরে নীতুর উদ্দেশ্যে বলে,”মিস নীতু দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন?আপনার মতলব কি?আপনি নিশ্চয়ই এটা আশা করছেন না?আমি আপনাকেও ব্যাগের মত কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করি?এসব চিন্তা মাথায় আসলেও ঝেড়ে ফেলে দিন। আমি এতটাও পরোপকারী নই।বুঝেছেন?দ্রুত আসুন!”
অভীকের এমন ধারার কথায় নীতুর পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে। অভীকের কাছে এসে নীতু শাসিয়ে বলে,”আপনি কি চাইছেন স্যার?আমি রাগের মাথায় আপনাকে খুন করি?”‘
“আমি কিছুই চাইছিনা।আর এখানে আপনার স্যার নই আমি।এখন আমি একজন কেবল দায়িত্বশীল প্রতিবেশী। বুঝেছেন মিস নীতু? ”
নীতু আর কিছুই বললো না।এখন কথা খরচ করা শুধুই বেকার। তাই ফুটপাতের রাস্তার পাশ ঘেঁষে নীতু হাঁটতে শুরু করে।পাশাপাশি নিঃশব্দে হাঁটছে অভীকও।মৃদু বাতাসে নীতুর শাড়ির আঁচল উড়ছে।হাতে ধরা অভীকের কোট আর চোখে অজস্র বিরক্তির নিশান! সোডিয়ামের আলোয় মাখামাখি নীতুর অন্যরকম এক রুপ!অভীক আড়চোখে সবটাই পর্যবেক্ষণ করছে।হুট করে একটা বেসামাল হোন্ডাচালক এলোমেলো ভাবে একদম নীতুর গা ঘেঁষে চলে যেতে নিলে অভীক একমুহূর্ত দেরি না করে নীতুর হাত ধরে অভীকের ডান পাশে নীতুকে সরিয়ে আনে। সাথে সাথেই আবার নীতুর হাত ছেড়ে দেয় অভীক এবং স্বাভাবিক ভাবে আবার চলতে শুরু করে।কিন্তু নীতু স্বাভাবিক হতে পারলো না।অভীকের এমন নিঃশ্চুপ অধিকার খাটানো কর্মকান্ডে নীতুর দম আটকে আসলো। হাত পা তিরতির করে কাঁপতে লাগলো।নীতুকে একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভীক শান্ত স্বরে বলে,”এবার কিন্তু ইভটিজিংয়ের স্বীকার হচ্ছি আমি!”
নীতু সাথে সাথেই দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফেললো।কিছুক্ষণ পর একটা রিকশা পেতেই অভীক হাতের ইশারায় রিকশা থামিয়ে নীতুকে উঠতে ইশারা করলো।নীতু যন্ত্রচালিত পুতুলের মত উঠে পরলো।নীতু যে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি তা অভীক বেশ বুঝতে পারলো।একটু হাতের ছোঁয়ায় কোন নারীযে এতটা লজ্জা পেতে পারে তা অভীকের ধারণা ছিলনা।নীতু বসতেই অভীক খুবই যত্নের সাথে বাজারের ব্যাগটা নীতুর পায়ের কাছে রাখলো।উদ্ধত শাড়ির আঁচলটা পায়ের কাছ থেকে উঠিয়ে নীতুর কোলের কাছে রাখলো।ঔষধের প্যাকেট হাতে তুলে নিলো।তারপর নীতুর চোখের দিকে একরাশ সম্মোহনী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,”মিস নীতু, ময়ুর বা কাক কখনোই আমার পছন্দের তালিকায় নেই।না আছে কোন বিশ্বসুন্দরীর স্থান।আমার তো পছন্দ নাকের ডগায় মুক্তোর মত জ্বলজ্বল করতে থাকা রাগের ন্যায় আত্মসম্মানটুকু!একটু রাগলেই যার নাক ঘামে সেটুকুই আমার পছন্দের তালিকায় বিদ্যমান!”
নীতু বিস্মিত বিহ্বলিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অভীকের দিকে।অভীক রিকশাওয়ালার পিঠ চাপড়ে দিয়ে বললো,”মামা সাবধানে যাবেন।আর ভাড়াটা ম্যাডামই আপনাকে দেবে।”
তারপর নীতুর দিকে ফিরে বলে,”মিস নীতু খুচরো টাকা নেই আমার কাছে ভাড়াটা দিয়ে দিবেন।কিছু মনে করবেন না যেন? আর মুখের হা বন্ধ করুন নতুবা পোকা মাকড় প্রবেশের সম্ভাবনা আছে! ”
এরপরই অভীক চলে গেলো।নীতুর হাতে তখনো শক্ত করে আঁকড়ে ধরা অভীকের কালো রঙের কোটটা।যা সম্পর্কে নীতু পুরোপুরি ভুলে বসে আছে।এই এতকিছু ছাপিয়ে অভীক যে তার পাশে রিকশায় বসলো না একটুকু ভদ্রতা নীতুর ভালো লেগেছে!এই ভালো লাগা দিয়ে নীতু অভীকের উপর দুপুরের রাগ কাটাকাটি করে ফেললো, ঠিক কাটাকাটি অংকের মত!
*************
রাত এগারোটা। সেতু কল করলো তাজকে।তাজ বিষন্ন মনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল।অফিস থেকে ফিরে কিছুই খায়নি তাজ।দরজা আটকে বসে আছে বারান্দায়। আজকে নীতুর ব্যবহার আর নীতু দুটোই কেন যেন তাজ মানতে পারছে না।ভীষণ অস্থির লাগছে।ঠিক সেই মুহুর্তে সেতু কল করে।অনিচ্ছা সত্বেও তাজ কলটা রিসিভ করে। ওপাশ থেকে সেতু উদ্ধিগ্ন কন্ঠে বলে ওঠে, “কি ব্যাপার আপনি নাকি অফিস থেকে ফিরে কিছুই খাননি?তারউপর রুম আটকে বসে আছেন।শরীর ঠিক আছে তো?”
এতক্ষণ নিজেকে সামলাতে পারলেও এখন আর সামলাতে পারলো না তাজ।হুট করেই সকল রাগ, মেজাজ খারাপ গিয়ে পরলো সেতুর উপর।এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো,এই মেয়েটাই সব কিছুর জন্য দায়ী? না সেতুর সাথে মায়ের দেখা হত আর না সেতু তার বউ হতো।আর না আজ নীতু তার জন্য নিষিদ্ধ কেউ হতো।
তাজ চিৎকার করে বলে ওঠে, “সব কৈফিয়ত তোকে দিতে হবে?কে তুই?বউগিরি দেখাস…..তোর বউগিরি *****!”
বিচ্ছিরি কিছু স্ল্যাংয়ের শব্দে সেতু বিমূঢ় হয়ে পড়ে।হাত থেকে খসে পড়ে মোবাইলটা। দুচোখের পাতা আপনাআপনি বন্ধ হয়ে আসে।চোখের সামনে তাজের মুখটাকে বড় কুৎসিত হয়ে ভেসে ওঠে! সেতু মুখচেপে হু হু করে কেঁদে দেয়!
চলবে,