#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৬
আফনান লারা
.
কুসুম সরাসরি ভেতরে চলে গেলেও অর্ণব এখনও বাহিরে রয়ে গেছে।চৌকাঠ পেরিয়ে ভেতরে যাবার সাহস পাচ্ছেনা।সুলতান শাহ চলে গেছেন সেই তখনই।
কুসুম ঘুরে ঘুরে দেখছিল সব।অর্ণব যে ভেতরে আসেনি তা খেয়াল করলোনা সে।
স্বপ্নে অর্ণব যে বাসা দেখছিল ঠিক সেটা এখন ওর চোখের সামনে।ভেতরে বেশ বড়সড় একটা রুম।সেটা হয়ত সোফার রুম।তবে ওখানে সোফা নেই,নিচে তোষক বিছানো,তাতে রঙিন বিছানার চাদর আর রঙিন কভারের কিছু কুশান।পাশেই একটা সবুজ গাছ টব সমেত।সেই রুমটার ডান পাশে গেলে ফ্লোর থেকে ছাদ ছুঁই ছুঁই গ্রিলের দরজা।সেটা খুললে ছোট আকারের মোটামুটি চলার মতন একটা বারান্দা।ঐ রুমটার পরে আরও তিনটে রুম দেখা গেলো।বাম পাশেরটা রান্নাঘর,দুই তাকের সংমিলিত ছোটখাটো বটে।বাকি দুটো রুম বেডের।
ঐ দুটোর মাঝে সুন্দর একটা বেডরুম দেখা গেলো।
হঠাৎ কুসুম কাছে এসে বললো,’পছন্দ হয়নি আপনার?আমার কিন্তু অনেক পছন্দ হয়েছে’
কথাটা বলে কুুসুম ছুটে রান্নাঘরের দিকে গেলো।চুলার সুইচ টিপে দেখে বললো,’রান্না সব পারি আমি।বলুন আজ কি খাবেন?’
অর্ণব উত্তর দিচ্ছেনা।চুপ করে মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছিল সে।
সেসময়ে মাথায় হাত দিয়ে ভেতরের একটা রুম বেছে নিয়ে গিয়ে বসলো খাটের উপর।
খুব বেশি যে ফার্নিচার তাও না।তবে মোটামুটি চলার মতন খাট,ওয়ারড্রব সবই আছে।মৃদুলের জন্য সাজানো বাড়ি তারা ব্যবহার করছে।
কুসুম হঠাৎ অর্ণবকে খুঁজতে খুঁজতে রুমে এসে বললো,’রাঁধবো কিসে?পাতিল তো নাই,তরকারি ও নাই’
অর্ণব মূর্তির মতন বসে আছে।কুসুম ওর কোনো জবাব না পেয়ে আরও একবার সব রুম দেখতে চলে গেলো।মা বলতো বিয়ে হলে তোর নিজের সংসার হবে।তুই হবি রাণী।তোর স্বামী হবে রাজা।
রাজারাণীর সংসারে কটাদিন পর রাজপুত্র রাজকন্যা এসে ছোটাছুটি করে সংসারটাকে আলোকিত করে তুলবে।
কুসুম মুচকি হেসে চোখের সামনে ছোট ছোট বাচ্চা কতগুলোকে দেখতে পেলো।মুখে হাত দিয়ে বাচ্চাগুলোর পিছনে যেতে যেতে বারান্দায় এসে থামলো সে।বারান্দা ঘেঁষে বিশাল জবা ফুল গাছ।তবে গাছটা মাটিতেই।ঢাল পালা গুলো দোতলা চলে এসেছে।কুসুম পা উঁচু করে ঝুলে নিচ থেকে একটা জবা ফুল হাতে নিয়ে কানে গুজে নিলো।খুশি আর ধরেনা তার।
কোথায় যেন বিশাল আয়নার ঝলক দেখেছিল।এত এত রুম যে ভুলে গেছে কোন রুমে আয়না দেখছিল।পরে মনে পড়লো অর্ণব যে রুমে সেই রুমে আয়না দেখেছে।
নেচে নেচে আয়নার সামনে এসে কানে হাত দিয়ে ফুলটা দেখছিল সে।অর্ণব ভূত দেখার মতন করে তাকিয়ে ওয়ারড্রবটা দেখছিল।কুুসুমের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘাঁড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে এমন দৃশ্য দেখে লাফিয়ে বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে সে।কুসুম আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকালো।অর্ণবের সারা শরীর ঘেমে গেছে।কপাল মুছতে মুছতে শুধু কুুসুমকে দেখছে।কুুসুম এগিয়ে এসে বললো,’কি হলো আপনার?’
-“জবা ফুল কই পেলে?’
-“বারান্দায়।কেন?ভাল লাগেনা দেখতে?’
-“সরাও ওটা’
কুসুম মন খারাপ করে ফুলটা কান থেকে নিয়ে রান্নাঘরে ভেসিনের কাছে এসে রেখে দিলো।অর্ণব বেরিয়ে যাওয়া ধরতেই ও আবার ছুটে এসে বললো,’শুধু যে তরকারি আনতে হবে তা তো না।মশলাও তো লাগবে’
অর্ণব এবার ধমক মেরে বললো,’এত কিছু কিনবে কে?পরে দেখা যাবে।আজ হোটেলের খাবার খাব আমরা’
কুুসুম মন খারাপ করে ফেললো।অর্ণব গেছে চলে।ও যাবার পর সে ছুটে গিয়ে জবাটা আবার নিয়ে কানে দিয়ে ফেললো।বুঝতে পারলোনা অর্ণব কি কারণে রাগ দেখালো।তার তো জবাটা বেশ লাগছে।
-‘কি কড়া রঙ।এগুলোকে বলে রক্তজবা।ভারতে যে জায়গায় আমি থাকতাম ওখানে তো কালীপূজা হতো।বিশাল কালী মন্দির ছিল।
কত কত জবা গাছ ছিল সেখানে।ফুলগুলো বেশ লাগতো।সবসময় কানে গুজে ঘুরতাম আমি।
বাড়িতে ফেরার পর জবা পেয়েছি তবে লাল পাইনি গোলাপি আর সাদা রঙের সব।
এখন লাল পেলাম।রোজ একটা করে নিয়ে কানে গুজে রাখার ইচ্ছা হলো কিন্তু উনি তো রেগে আগুন।কেন আগুন তার কারণ জানলে হয়তবা জবা ফুল দেওয়ার আগ্রহটা একটু কমতো আমার’
—
হোটেলে খাবারের অর্ডার দেবার সময় দেখা হয়ে গেলো সুলতান শাহের সঙ্গে।
তিনি তেল ছাড়া পরোটা কিনতে এসেছিলেন সাথে মিষ্টি।অনেকদিন ধরে ইচ্ছে হচ্ছিল মিষ্টি দিয়ে পরোটা খাওয়ার।আজ পূরণ হবে।
অর্ণবকে দেখে তিনি বললেন,”একি?তুমি এসময়ে হোটেলে কি করো?’
-“দুপুরের খাবার কিনতে এলাম’
-“তোমাকে জাহান কিছু বলেনি?’
-“কি বলবে?’
-“ওহ হো!এই মেয়েটা এত ভুলোমনের।আসলে আমি ওরে বলছিলাম তোমাদের গিয়ে বলে আসতে,আজ তোমরা আমাদের কাছে খাবে’
-“আঙ্কেল এসবের কি দরকার ছিল?’
-“পরে তোমরা দাওয়াত দিবে একদিন।আচ্ছা একটা কথা বলো,ওমন ছোট মেয়ে বিয়ে করলে কেন?’
-‘পরিবার ওকে পছন্দ করেছে তাই’
-‘আহা কি ভাল ছেলে।পরিবারের কথায় গুরুত্ব দেয়।এখনকার ছেলেরা তো নিজের পছন্দে ক্লাসমেটকেও বিয়ে করে নেয়।আর তুমি কিনা নিজের বাবা মায়ের পছন্দে পিচ্চি একটা মেয়েকে বিয়ে করে নিলে।
যদি আমার মৃদুলটাও এমন হতো।আচ্ছা ওর খবর কেমন?এখন প্রেম করে টরে নাকি?কাল কল দিয়ে বেশ ভালো ভাবেই কথা বললো।অথচ ও এমন করে কথা বলার ছেলেই না।জীবনে গ্রহ ঘুরে গেলে,প্রেম আসলে মানুষ অদ্ভুত আচরণ করে।মৃদুলের ও কি তা হলো?’
-‘না ওসব কিছুনা।ও তো এমনিতেও হাসিখুশি স্বভাবের।আচ্ছা আঙ্কেল আমি আসি।বাসায় কাজ আছে।কুুসুম একা তো’
—
অর্ণব কোনো মতে চলে আসলো।কুসুম কলিংবেলের আওয়াজ পেয়ে কান থেকে জবা খুলে ছুঁড়ে ফেেলে দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলো।অর্ণব ওর দিকে কিছুক্ষণ ব্রু কুঁচকে চেয়ে ওর কান থেকে সবুজ পাতা নিয়ে নিচে ফেলে বললো,’আজ উনাদের বাসায় দাওয়াত শুনলাম’
-“ওহ’
অর্ণব নিচে তোষকে বসে বললো,’আমার ব্যাগ তো মেসে।গিয়ে আনতে হবে।তুমি উনাদের কাছে থেকো আমি গিয়ে নিয়ে আসবো’
-“আচ্ছা।’
—–
-‘আজ অর্ণব নেই বলে আমি ক্লাস করাতে এসেছি তোমাদের।অর্ণব কোন অধ্যায় পড়িয়েছিল বলো কেউ।’
মৃদুলের কথা শুনে জুথি জবাব দিলোনা।মাথা নিচু করে টেবিলের উপরের কলমটা দেখছে।মৃদুল ওর উত্তরের আশায় তাকিয়ে ছিল।
পরে একটা মেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’তৃতীয় অধ্যায়’
ক্লাস টা শেষ হবার পর মৃদুল চলে যাচ্ছিল।তখন জুথি ব্যাগ রেখে ওর পিছু পিছু এসে বললো,’একটু দাঁড়ান’
-“কিছু বলবে?আমি তো ভাবলাম বলবেইনা’
-“দেখুন আমি চাইনা আপনি….’
-“এখানে এসব বলার সঠিক সময় না।ক্লাস শেষে দীঘির ঐ দিকটায় থেকো, আমি আসবো।এখন আমি ব্যস্ত অনেক।স্যার ডেকেছে’
মৃদুল চলে গেলো।জুথি হাত মুঠো করছে তো আবার খুলছে।চিন্তা লাগছে অনেক।মৃদুলকে মুখের উপর সব মানা করে দিতে প্রচুর সাহসের প্রয়োজন।এত সাহস কই পাওয়া যাবে।ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে একটা আইসক্রিম নিয়ে খেতে খেতে দীঘির ঐ প্রান্তের দিকে চলেছে সে।গায়ের ওড়নাটা বাতাসে খুব করে উড়ছে।এক হাতে আইস্ক্রিম ধরে রাখার কষ্ট আর আরেক হাতে এই বিশাল ওড়না।শেষে আইস্ক্রিমটা নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ঠিক করলো আগে খেয়ে নেবে।
পুরোটা খেয়ে পেছনে ফিরতেই দেখলো মৃদুল এসে দাঁড়িয়েছে।
-“আমি জানি তুমি কি বলবে।তুমি বলবে”””দেখুন আপনি আর আমায় মেসেজ করবেন না,কল করবেন না,দেখা করবেন না””” তাই তো?’
জুথি মাথা নাড়ালো।
মৃদুল হাত ভাঁজ করে বললো,’ঐ পথটা দেখছো?এটা থেকে একটু সামনে গেলো এক মামার ঝালমুড়ির দোকান পাবে।ভ্রাম্যমাণ অবশ্য।বেশ বানায়।খাবে?’
-“আপনি কি কখনও সিরিয়াস হবেননা?’
-“আমি তো সিরিয়াস হয়েছিলাম অনেক বছর আগে।সিরিয়াস হওয়ায় একটা মেয়ে ভালোমতন ধুয়ে দিয়েছিল।একেবারে ব্লিচিং পাউডার দিয়ে।
তারপর থেকে সিরিয়াস হওয়া ছেড়ে দিয়েছি।মরা অবধি সিরিয়াস হবোনা।’
-“আমি যাই।ভালো থাকবেন’
-“আর তো দেখা করবেনা জানি,হয়ত এখন গিয়ে ব্লক ও করে দেবে।ঝালমুড়ি খেয়ে যেতে ক্ষতি কি?’
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৭
আফনান লারা
.
-‘নাকি ভয় হয়?মৃদুলের প্রেমে পড়ে যাবার?নিজের প্রতি বিশ্বাস নেই?আচ্ছা মৃদুল নাহয় তোমাকে প্রেমে পড়তে দেবেনা।ধরে ফেলবে।যাবে এখন?’
জুথি কপাল কুঁচকে হাঁটা ধরলো সামনের দিকে।মৃদুল পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফোন বের করে দেখলো অর্ণবের কতগুলো মিসড্ কল।কল ব্যাক পরে করবে ভেবে ফোনটা পকেটে ভরে জুথির দিকে তাকিয়ে দেখলো সে অনেকদূর চলে গেছে তাই এক ছুট লাগালো মৃদুল।
জুথি ওকে ছুটে আসতে দেখে থামলো।মৃদুল কাছে এসে বললো,’আমাকে ছেড়ে পথ চলতে বলিনি’
-“কারোর সাথে মিট হলে ফোন ইউস করতে হয়না।খারাপ স্বভাব।’
-“আমি সরি’
জুথি মাথা নাড়িয়ে আবারও হাঁটা ধরলো।মৃদুল মুচকি হেসে যেতে যেতে বললো,’ রোজার ঈদে তোমার মাকে নিয়ে আসবে দেশে?’
-“আমাকে দেখার এত তাড়া?’
-‘না তা নয়।এমনি বললাম।আসলে আসবা না আসলে নেই।একান্তই তোমার ব্যাপার’
জুথি চুপ করে শুধু হাঁটছে।মৃদুল ঝালমুড়ির দোকানের সামনে এসে ঝালুমড়ির অর্ডারটা দিয়ে জুথির দিকে তাকালো।জুথির মুখটা বিষণ্ণতায় ভরা।কোথাও কোনো হাসি নেই।এমন মলীন মুখ দেখতে কেউই আশা করেনা।
জুথি মৃদুলের দিকে ফিরে হঠাৎ মুচকি হেসে দিলো।মৃদুল ও হাসলো।তারপর আবার দুজনের মুখ মলীন।
ঝালমুড়ি হাতে নিয়ে জুথি বললো,’লেবুর খোসা কুচি করে দেওয়ায় আলাদা একটা দারুণ ঘ্রান এসেছে।বিদেশ গেলে স্ট্রিট ফুড অনেক বেশি মিস করবো।’
মৃদুল খুশি হয়ে বললো,’তাহলে না গেলেই হয়।’
জুথি হাঁটতে হাঁটতে বললো,’নাহ।অনেকদিন আম্মুকে দেখা হয়না।
তাছাড়া এখন এখানে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।আপনি প্লিজ আর মানা করবেননা।কোথাও যাবার সময় কেউ এভাবে মানা করলে যাত্রা অশুভ হয়।’
—
কুসুম একটা শাড়ী হাতে গোসল করতে চলে গেছে।অর্ণব রুমগুলোর দেয়ালে দেয়ালে হাত রেখে ভাবছে কি করে এত হবুহু মিলে যেতে পারে।জবা গাছটাই যত ভয় দেখানোর দেখালো।
-‘না না। ঐ বাচ্চা মেয়েটাকে আমি কখনও ছুঁবোনা।আরেহ!এত সবের মাঝে জুথির কথাই তো ভুলে গেলাম।একবার খবর নিতে হবে।’
ফোন বের করে অর্ণব জুথির নাম্বারে কল করলো।ও তখন রিকশা দিয়ে বাসায় ফিরছিল।অর্ণবের কল দেখে বুকের ভেতর ধুক করে উঠলেও ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে কানে ধরলো ফোনটাকে।
-‘কেমন আছেন জুথি ম্যাডাম?’
-“ভালো।আপনি?’
-“আমি আছি কোনোরকম।শরীর ভালো আছে?ক্লাসে গিয়েছিলেন?’
-“হুম।’
অর্ণবের মনে হলো জুথি কথা বলতে চাইছেনা।তাই সে রেখে দিলো।জুথি ও চাইছিলনা কথা বলতে।শুধু শুধু কষ্ট হবে ভেবে নিজ থেকে কিছুই বলেনি।শুধু জবাব দিয়ে গেছে।
অর্ণব ফোন রেখে পেছনে তাকাতেই দেখলো কুসুম মাথায় গামছা বেঁধে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
গোসলের পানির শুদ্ধতা যেন ওর সাড়া অঙ্গে ভাসছে ঝলঝল করে।কোঁকড়া চুলগুলো ভিজে কেমন যেন হয়ে আছে।গামছার ফাঁকা অনেকখানি চুল দেখা গেলো।হলুদ শাড়ীতে যেন এক বিস্তর সরষে ফুলের ঝলক উড়ছে চোখের সামনে।
অর্ণবকে এমন করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কুসুম হাত নাড়িয়ে বললো,’আপনি গোসল করবেন?’
-“নাহ।আমার তো তোয়ালে,জামা নেই।ব্যাগ আনা ছাড়া করবো কি করে?’
-‘কাল কি হোটেলে খাবেন নাকি হাঁড়ি পাতিল কিনে আনবেন?’
-‘রান্না করার শখ হইছে তোমার?পারো রাঁধতে?’
কুসুম থতমত খেয়ে জবাব দিলো পারে।তার থতমত খাওয়া দেখে অর্ণবের সন্দেহ হলো কিছুটা।তাও ভাবলো মেস থেকে ফেরার সময় ওর কথা মতন পাতিল কিনে আনবে সাথে বাজার।এগুলো ভেবে মানিব্যাগটা বের করে বিছানায় গিয়ে বসলো।কুসুম চৌকাঠ ধরে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,’চামচ ও আনিয়েন।বড় চামচ।’
অর্ণব টাকা গুনছে শব্দ করে।কুসুম ছুটে ওর সামনে এসে বসে বললো, ‘আমাকে গোনা শিখিয়ে দেবেন?’
অর্ণব ব্রু কুঁচকে বললো,’পড়ালেখা শিখে কার মন জয় করবে?বিয়ে তো হয়েই গেছে।’
-‘আপনার মন জয় করবো’
-‘আমার মন জয় করলেও কি আর না করলেও কি।বিয়ের বন্ধনে তো আটকা পড়ে গেলাম’
-“আটকা পড়লেও মন তো পেলাম না।সংসার জীবন দিয়ে কি হবে যদি মূলহোতাই পছন্দ না করতে পারে?’
-‘শেখানো সহজ কথানা।অনেক সময় দিতে হবে।যেটা আমার হাতে নেই।আগামী মাসে আমার রেসাল্ট দিবে।এরপর আমি ভালো চাকরি খুঁজতে চলে যাবো’
-‘প্রতিদিন ভোরে ফজর নামাজের পর পারবেননা?’
অর্ণব আর কিছু বললোনা।টাকা গুছিয়ে পকেটে পুরে উঠে চলে গেলো।
কুসুম বিড়বিড় করে বললো,’এক দুই,তিন তারপর কি যেন!’
—
দুপুর দুইটার সময় কলিংবেলের আওয়াজ শোনা গেলো।কুসুম রেলিংয়ের সাথে লেগে জবা ফুলগাছটাকে মনযোগ সহকারে দেখছিল।আর অর্ণব ছিল তার রুমে।কলিংবেলের আওয়াজ শুনে কুসুম ছুটে এসে দরজা খুলেছে।ওপাশে জাহান দাঁড়িয়ে।
মুচকি হেসে বললো,’খালু কইছিল আজ আপনাদের দুপুরের খাবারের জন্য দাওয়াত দিতে।কিন্তু আমি না কাজল দিতে গিয়ে ভুলে গেছিলাম।আপনারা কি দুপুরের খাবার খেয়ে নিছেন?’
কুসুম মাথা নাড়িয়ে বললো,’না খাইনি’
-“তো চলেন।রান্না সব শেষ।একেবারে পোলাও,কোর্মা,ইলিশ ভাজা কিছু আর বাকি নাই।সব আমি রাঁধছি।খালা শুধু মসলা দেখিয়ে দিছে।খাইলে পাগল হই হাসপাতালে ভর্তি হইবেন।এত মজার খাবার।হাহাহাহা!’
কুসুম দাঁত কেলিয়ে বললো,’আচ্ছা’
জাহান চলে যাবার পর সে দরজাটা লাগিয়ে আবারও জবা ফুলগাছটার কাছে এসে উশখুশ করছিল কি করে একটা ফুল নিয়ে কানে গুজবে।অর্ণবের ধমকের ভয়ে সেটা আর হয়ে উঠছেনা।গাছটা ভর্তি জবা ফুল।মন চাইছে গিয়ে শুয়ে থাকতে।
অর্ণব রুম থেকে বের হয়ে দেখলো কুসুম বারান্দাতে দাঁড়িয়ে বারবার জবা ফুলগাছটা ধরে ধরে দেখছে।
-‘নিশ্চয় ফুল ছিঁড়তে চায় কিন্তু আমার ভয়ে ছিঁড়তে পারছেনা।’
কুসুম শেষে একটা ফুল ছিঁড়েই নিলো।অর্ণব তো তার রুমে।সে কি করে দেখবে?কানে দিয়ে আউশ মিটিয়ে আবার লুকিয়ে ফেলা যাবে।কানে গুজে দাঁত কেলিয়ে কুসুম শাড়ীর আঁচল ধরে ঘুরতে লাগলো।ঘুরতে যেইনা পেছনে তাকালো দেখলো অর্ণব তাকিয়ে আছে।হঠাৎ ওকে ওখানে দেখে কুসুম পিছলিয়ে পড়ে যাওয়া ধরতেই অর্ণব হাত ধরে ফেললো ওর।
কোনোমতে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ফুলটা কান থেকে সরিয়ে ফেললো কুুসুম।
-‘আমি না থাকলে ফুল নিয়ে যা খুশি তাই করো সমস্যা নেই’
-‘আচ্ছা এই ফুলটা আপনি অপছন্দ করেন কেন?ফুল তো অপছন্দ করার মতন না’
-” সুন্দর সবসময় পছন্দ হতে হবে?
আমি একটা স্বপ্ন দেখেছি যেটা ছিল দুঃস্বপ্ন।আর সেটাতে এই ফুল ছিল যার জন্য আমি এটা দেখলে আমার অস্বস্তি বোধ হয়।আশা করি তুমি আর আমায় অস্বস্তিতে ফেলবেনা?’
কুসুম মাথা নাড়ালো।অর্ণব ওকে নিয়ে নিচ তলায় এসেছে।ভেতরে মৃদুলের বাবা চেয়ারে বসে ছিলেন ওদের অপেক্ষায়।মিজুয়ানা বেগম রান্নাঘরে।
তারা দুজন গিয়ে দুটো চেয়ারে বসলো চুপচাপ।টেবিল সম্পূর্ণ সাজানো খাবার দাবারে।
সুলতান শাহ টুপি খুলে এক পাশে রেখে বললেন,’ভেবেছিলাম আজ মোঘলদের মেনু আমাদের দুপুরের মেনু বানাবো।ঘন করে ঝোল হবে।আহা!!
কিন্তু জাহান এগুলো পারেনা।সে পারে শুধু তরকারিকে ডালের মতন বানাতে।এত পানি মানুষ দেয়?মিজুয়ানা চোখে ঝাপসা দেখে বলে তাকে রান্নাঘরে যেতে মানা করেছি আমি।আর এখন জাহানের তরকারি নামক ডাল খেতে হয় রোজ।
মাঝে মাঝে তরকারিতে শীমের বিচি খুঁজতে আমার চশমা ধরে রাখা লাগে।এত এত ঝোল।তো মোঘলরা আবার মিষ্টি জাতীয় জিনিস অনেক খেতো বুঝলে।যেমন ধরো হালুয়া,কুলফি,কালোজাম।তো আমি আজ হালুয়ার ব্যবস্থা করেছি।কেমন একটা মোঘলীয় ভাব আসবে।তোমরা ভেবোনা।আজ মিজুয়ানা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রান্না দেখিয়ে দিয়েছে।পানি পানি ঝোল হবেনা।’
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৪৮
আফনান লারা
.
খাওয়ার সময় কুসুম বেশ কয়েকবার অর্ণবের দিকে তাকাচ্ছিল।তার কারণ অর্ণব শুরুতে বোঝেনি।এই বিষয় খেয়াল করলেন সুলতান শাহ।তিনি হালকা কেশে বললেন,”তোমার কি সমস্যা হচ্ছে মা?’
-“নাহ তো’
-“তাহলে খাবার ফেলে বারবার ওর দিকে তাকাও কেন? একান্তই গোপন কথা আছে নাকি?’
কুুসুম মাথা নাড়িয়ে চুপ করে থাকলো।অর্ণব বললো ‘আঙ্কেল ঐ আসলে খেতে বসলে ওর বমি পায় শুধু।এখন খেতে পারছেনা বলে এমন করছে।এটা সমস্যা না’
-“সমস্যা না মানে?বিরাট সমস্যা। বমি পাওয়া কি ভালো লক্ষণ। আমি বলছিনা সে গর্ভবতী।কারণ যৌবনে আমি পরিবার পরিকল্পনার কর্মী ছিলাম।এখন রিটায়ার্ড। তো জানি কে গর্ভবতী আর কে না।যদি হতো তাহলে সামনে রাখা এত সুস্বাদু জলপাই আচারটা একবার হলেও মুখে দিয়ে দেখতো।
তো গর্ভবতী যখন না তাহলে বমি পাওয়া তো সমস্যা।তুমি স্বামী হয়ে বসে আছো কেন?ডাক্তার দেখাও নি?’
-‘দেখিয়েছি।রিপোর্ট ও দেখেছি।তবে একটা পরীক্ষার রিপোর্ট পেলাম না।তাছাড়া রিপোর্টে কি আসে সেটা কি আর আমাদের মতন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে?সেটা তো একমাত্র ডাক্তার বুঝবে।রিপোর্ট নিয়ে তাকেই দেখাতে হবে।তিনি বসেন কুমিল্লায়।বোঝেন তো’
সুলতান শাহ গালে হাত রেখে বললেন,’ওহ এই ব্যাপার।’
—-
দুপুরের খাবার শেষে কুসুমকে মিজুয়ানা আন্টির কাছে রেখে অর্ণব গেছে মেসে।ফিরতে রাত হবে বলে গেছে।
কুসুম মিজুয়ানার পাশে বসেছিল সোফায়।তিনি পান সাজাচ্ছিলেন আর কুসুম সুপারি কেটে দিচ্ছিল।
-‘তোমার বাড়িতে কে কে আছে?’
-“আমি আর আমার মা, বাবা,ছোট বোন’
-“ঐ পোলার সাথে কি পালিয়ে বিয়ে করছো?’
-“নাহ।সবাই মিলে দিয়েছে’
-‘আমার মৃদুলের জন্য আমি তোমার মতন মেয়ে খুঁজতেছি।সুন্দর এক খানা মুখ হবে।যেন তারে দেখলেই মন ভাল হয়ে যায়।আর দুষ্টু হবে।আমার ঘরে আমি আমার দুইটা মাইয়া পোলার মাঝে একটারেও দুষ্টামি করতে দেখলামনা কোনোদিন।কত স্বাদ ছিল ওরা দুষ্টুমি করবে আর আমি বকাঝকা করবো।তো এখন শেষ উপায় হলো আমার ছেলের বউ।তাকে কোনো কিছুতে বাধা দেবোনা।তা কতদূর পড়লেখা করেছো তুমি?’
কুসুমের মুখটা কালো হয়ে গেলো।মাথা নিচু করে বললো,’আমি পড়িনি।কোনোদিন ইসকুলে যাইনি’
মিজুয়ানা বেগম নিচের ঠোঁট উলটে বললেন,’সেকি!এত কিছুর পরও ঐ ছেলে তোমায় সাথে সাথে রাখছে?’
কুসুম মাথা তুলে তাকিয়ে বললো,’কেন?’
-“আমাদের এই দিকে এক মেয়ে ছিল।নাম সুরমা।ও তোমার মতন পড়ালেখা জানতোনা।বিয়ে হয়েছিল রাজপুত্রর মতন একটা ছেলের সাথে।কারণ সুরমাও অনেক সুন্দর ছিল।তবে গরীব ছিল।টাকার অভাবে পড়ালেখা করতে পারেনি।ঐ ছেলে রুপে পাগল হয়ে বিয়ে করে শেষে জানতে পারলো মেয়ে অশিক্ষিত। ব্যস তালাক দিয়ে দিলো।’
কথাটা শুনে কুসুম সুপারি কাটতে গিয়ে নিজের আঙ্গুলটাই কেটে ফেলেছে।
মিজুয়ানা ওর ব্যাথা পাবার আর্তনাদ শুনে তড়িগড়ি করে ওর হাত টেনে ধরলেন।ঝাপসা চোখে লাল রঙ ছাড়া কিছুই দেখলেননা।ব্যস্ত হয়ে নিজের চশমা চোখে দিয়ে বললেন,’দিলে তো নিজের সর্বনাশ করে।সুরমার জামাই ওরে ছাড়ছে।তোমার জামাই তো ছাড়ে নাই তোমারে।এরকম বেখেয়ালি হলে চলে?এখন তোমার জামাই এসে যদি আমায় বকাবকি করে?’
কুসুম আঁচল দিয়ে আঙ্গুল বাঁধতে বাঁধতে বললো,’উনাকে বলবেননা।ঠিক হয়ে যাবে এটা’
মিজুয়ানা চশমা ঠিক করে বললেন,’তুমি যে পড়ালেখা জানোনা সেটা জানে তো নাকি?’
কুসুম আস্তে করে জবাব দিলো ‘জানে’
-‘তাহলে আর কি।সুখী হবা দেখিও।’
কুসুমের চোখে পানি এসে গেছে।অর্ণব তাকে যদি কোনোদিন তালাক দিয়ে দেয় ঐ সুরমা মেয়েটার মতো?হঠাৎ উঠে চলে আসলো সে দোতলায়।দরজা আটকে নিচে বিছানো তোষকে ধপ করে বসে পড়েছে।
ভাবছে কি করে শীঘ্রই পড়ালেখা শিখবে।কলি যদি থাকতো হয়ত একটু হলেও শিখিয়ে দিতো।উনার হাতে পায়ে ধরে হলেও পড়াতে রাজি করাতে হবে আজ।
—-
মেসে ফেরার পর মৃদুলকে আজ অন্যরকম লাগলো।পাক্কা দশ মিনিট হয়েছে অর্ণব রুমে এসে বিছানায় বসে ওর দিকেই চেয়ে আছে অথচ সে শুয়ে শুয়ে পায়ের উপর পা তুলে বই পড়ছে।তাও কিসের বই!প্রেম সংক্রান্ত।
এতদিন বিচ্ছেদ টাইপের বই পড়তো, রুখে দাঁড়ানোর বই পড়তো আর এখন কিনা প্রেমের বই পড়ছে।বিষয়টা বড্ড ভাবাচ্ছে।জনাব সুলতান শাহ যেটা ধারণা করছেন সেটা নয়ত?এই যে মৃদুল ভাই আমাকে চিনতে পারছেন?’
মৃদুল হঠাৎ চমকে উঠে বসে বললো,’আরেহহ তুই!কখন এলি?ওহ হো তুই তো কল দিছিলি।আমার ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল।চার্জে দিয়ে বই পড়ছি তাই’
-‘দেখি কি বই পড়ছিস?প্রেমের?
-‘না।প্রেমের কেন হতে যাবে?আমি কি ওসব পড়ি?’
-“ঐ যে আমি প্রেমের লেখা দেখলাম’
-‘তুইওনা।চুপ থাক।তোর বউয়ের কি খবর?সুন্দরী কেমন আছে?হিতাহিত জ্ঞান হয়েছে নাকি এখনও বাচ্চামো?’
-“ওসব বাদ দে।তোকে ফেন দিয়েছিলাম বাসার এড্রেস জানতে।তুই তো ধরলিনা।কত যুদ্ধ করে আমি বাসা খুঁজে পেয়েছি বাপরে!’
-“বাবাকে কেমন লাগে?
আর দুই দিন থাকতে পারবি তো?নাকি এখনি পালাবি’
-‘ভালোই, খারাপনা।জুথির সাথে আজ তোর দেখা হয়েছিল?ফোন দিলাম।সে ভাবে কথা বলতে চাইলোনা’
মৃদুল মুখ বাঁকিয়ে বইটা বন্ধ করে দিয়ে বললো,’আগামী সপ্তাহে সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছে’
কথাটা শুনে অর্ণব চমকে বললো,’কেন?ও তো বলেছিল যাবেনা।সামনে পরীক্ষা তাই’
-“এখন যাবে।পরীক্ষা নাকি দেবেনা।মেয়েটা কেমন যেন হয়ে গেছে। জোর করেও হাসাতে পারিনি।ভেবেছিলাম আরও কদিন থাকলে হাসিয়ে মাতিয়ে রাখবো।কিন্তু নাহ, সে বাঁধনে আঁটকানোর মতন না।বাঁধন ছিঁড়ে চলে যাচ্ছে।’
অর্ণব মন খারাপ করে ফেন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে জুথিকে কল করলো।জুথি তখন ব্যাগে বাবার আনা জিনিস পত্র ভরছিল।মায়ের জন্য তার কত আয়োজন।
অর্ণবের এসময়ে কল দেখে কিছুটা অবাক হয়ে রিসিভ করলো সে।
দেরি করলোনা।
-“শুনছি চলে যাচ্ছেন?’
-“হ্যাঁ’
-‘আমার সাথে রাগ করে?’
-‘নিজেকে প্রশ্ন করেন।কি কারণে মৃন্ময়ী চলে যাচ্ছে।রাখছি।আশা করি দ্বিতীয়বার ফোন করবেননা আমাকে। আর মনে করিয়ে কষ্ট দিয়েননা।এমন করলে বিদেশে ফিরে গিয়েও শান্তি পাবোনা।আপনি ভাল থাকেন,কুসুম নামের মেয়েটাকে ভাল রাখেন।আমার খবর জানার প্রয়োজন নেই।আমি কেমন আছি সেটা হয়ত আপনি জানেন।
হয়তবা জানেননা।জানলে জিজ্ঞেস করতেন ও না।আপনি জানুন বা না জানুন তাতে আর এখন কিছু যায় আসেনা’
কল কেটে দিয়েছে জুথি।অর্ণব ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবলো কল করা ঠিক হয়নি।
মন খারাপ করে রুমে ফেরত এসে সব জামা গুছিয়ে নিলো সে।বাসার ফেরার পথে বাজারে গিয়ে যা যা লিস্ট করা ছিল ওসব কিনতে কিনতে রাত আটটা বেজে গেছে।
বাসায় ফিরে মৃদুলের ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো কুসুম কোথায়।জাহান এসে বললো সে তো দু ঘন্টা আগেই চলে গেছে।
অর্ণব তাই দোতলায় আসলো।কলিংবেলে ক্লিক করে হাতের ব্যাগ গুলো নিচে রাখলো।হাত ব্যাথা হয়ে গেছে বয়ে আনতে আনতে।কুসুমের কোনো সাড়া নেই দেখে এবার সে দরজা ধাক্কিয়ে বললো,’কুসুম?শুনতে পারছোনা?আমি এসেছি’
কুসুম ঘুমে ছিল।অর্ণবের গলা শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো তার।বিছানা ছেড়ে ছুটে এসে দরজা খুলে দিয়েছে সে।অর্ণব ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো এত দেরি হলো কেন।কুসুম কিছু বলার আগেই ওর হাতে চারটা বই ধরিয়ে দিয়েছে সে।
কুুসম বইগুলো এক হাতে ধরতে না পেরে বইগুলো ফেলে দিলো।এক হাতে ছিল আঁচলে বাঁধা আঙ্গুল।অর্ণব বইগুলো নিচ থেকে তুলতে তুলতে বললো,’এমন করলে কেন?পাতলা বই ধরতে পারলেনা?এতই ভারী?’
কুসুম ও নিচে বসে বই কোনোমতে হাতে নিয়ে টেবিলের উপর রেখে আসলো। অর্ণব বাকি ব্যাগগুলো ভেতরে এনে রেখে বললো,’দেখো যা যা বলেছো ওসব আছে কিনা।আমি মেসে বাবুর্চির রান্না করা খাবার খেতাম।সংসারের এসব কেনার অভিজ্ঞতা আমার একেবারে ছিলনা তাও আন্দাজে কেনাকাটা করে এনেছি।বইগুলো এনেছি তোমার আকাশ ছুঁই আহ্লাদ পূরণ করতে।এবার পড়ো বসে বসে।না আনলে তো সারাদিন মিন মিন করতে।আচ্ছা!কি হলো তোমার?শুনতেছো আমি কি বলছি?
ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?তোমাকে না বলেছিলাম আমি আসা অবধি এখানে আসবেনা?ওদের সাথে থাকলেই হতো, জলদি ফিরে এলে কেন?একা ভয় করেনা তোমার?’
চলবে♥