#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৮৫
আফনান লারা
.
মৃদুল বারান্দায় বিন ব্যাগটাতে এসে আরামসে বসেছে।যেন এই বাসা থেকে আর কোনোদিন বের হবেনা।রেগেমেগে জুথি ওর সামনে এসে বললো,’আপনি যাচ্ছেন না কেন?’
‘সকালের নাস্তা করাবেনা?হোটেলে গিয়ে খেতে হবে নাকি?কেমন হবু বউ তুমি?’
‘আমি আপনাকে বিয়ে করবোনা।বের হোন এখন’
‘করতে হবে!নাহলে তুলে নিয়ে যাব।এখন যাও নাস্তা নিয়ে এসো।আমি ওয়েট করছি, অনেক খিধে পেয়েছে’
জুথি হনহনিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে গেছে সোজা।মৃদুল জানত সে নাস্তার জন্য যাবেনা।মেয়েটা সেই আগের মতই আছে।কোনো চেঞ্জ নাই।কবে ভালবাসবে?
জুথি ফ্রেশ হয়ে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বের হতেই দেখলো মৃদুল কোমড়ে হাত রেখে চেয়ে আছে।একদম বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল।ওকে ইগনর করে জুথি বিছানায় গিয়ে বসে বললো,’আপনি যান।আমার উপর জোরাজুরি চলবেনা’
কথাটা শেষ করতে না করতেই মৃদুল বিছানায় উঠে ওর একদম কাছে চলে এসে বললো,’চলবেনা?’
‘আমি কিন্তু চেঁচাবো’
সেসময়ে দরজায় নক করে বাবা বললেন,’জুথি মা খেতে আয় জলদি,দেখ তোর আম্মু নুডুলস রান্না করছে’
মৃদুল দাঁত কেলিয়ে জুথির হাত চেপে ধরেছে।জুথি তখন বললো,’বাবা আমি এখানেই খাব।আসতেছি’
‘দু বাটি নেবে।তোমাকে এয়ারপোর্ট থেকে আনতে গিয়ে আমার আজ সকালের খাওয়া এখন অবধি হয়নি’
‘আপনাকে সম্মান করি বলে চেঁচাচ্ছিনা।আর তাই আপনি অনেক জ্বালাচ্ছেন,সরুন সামনে থেকে’
‘সম্মান করতে বলেছি?অসম্মান করো।তোমার সব ভাল্লাগে’
কথাটা বলে মৃদুল লম্বা হয়ে শুয়ে পড়েছে জুথির পাশে।জুথি রাগে কটমট করতে করতে বিছানা থেকে নেমে পড়লো।রাগে ক্ষোভে মৃদুলের পেটে দু তিনটা ঘুষি মেরে চলে গেলো খাবার আনতে
—
‘কিরে তুই তো এক বাটির বেশি নুডুলস খাসনা, এখন দু বাটি নিচ্ছিস?বেশি খিধে পেয়েছে?’
‘না মানে হ্যাঁ।অনেক খিধে।বেশি করে দাও তো।ঐ গাজরের টুকরো গুলোও দাও’
মা এবার কোমড়ে হাত রেখে জুথির গাল টিপে ডানে বামে ঘুরিয়ে বললেন,’তোর শরীর ঠিক আছে?গাজর তো জীবনেও খাস না।আজ কি হলো?’
‘কিছু হয়নি।জলদি দাও’
মৃদুল জুথির রুম খুঁজে একটা ফ্যামিলি এলবাম পেয়েছে ততক্ষণে।সেখানে জুথির ছোটকালের একটা ছবি পেয়ে ছবি তুলে নিয়ে আগের জায়গায় রেখে দিয়েছে।
জুথি বাটি নিয়ে রুমে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বাটি ওর হাতে দিয়ে বললো,’খান আর চলে যান।আর একদিন যদি আমার বাসায় এসেছেন তো বাবাকে জানিয়ে দেবো সব’
‘আমি গ্র্যাজুয়েট!!নাম করা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র,ভাল সিজিপিএ পেয়ে পাশ করেছি।
কাল পরশু ভাল বেতনের চাকরিও পেয়ে যাব।প্রাইভেট কোম্পানি তো রীতিমত বাসায় লেটার পাঠিয়েছে ইন্টার্ভিউ দিতে যাওয়ার জন্য।তোমার বাবা অনায়াসেই তোমার হাত আমার হাতে দিয়ে দিবে আর এই বাসায় আসার কথা বলছো?আজ রাতে আবারও আসবো।কি করবে বলো এবার’
জুথি কিছু না বলে বিছানার এক কোণায় বসে নুডুলস খাওয়ায় মন দিছে।মৃদুলের সাথে তর্কে পারা যায়না।সব কিছুর সমাধান তার কাছে থাকে।ঝগড়ায় সবসময় সে জেতে বলে এখন আর তর্ক করতে ইচ্ছে করেনা।
মনে হয় যুক্তিবিদ্যা ওনার প্রিয় সাবজেক্ট ছিল ইন্টারে।
——
কুসুম আর কলিকে রেখে রুমের বাহিরে চলে এসেছে অর্ণব।ওর ডাক্তারের কল এসেছিল।সচরাচর এই ব্যস্ত ডাক্তার কখনওই কলব্যাক করেন না,বরং কল দিলেও ধরেন না।কিন্তু আজ হঠাৎ তার কল এসেছে দেখে অর্ণব অবাক হলো কিছু।
‘ভাল আছেন স্যার?’
‘আগে বলুন মিসেস কুসুম কেমন আছে?আপনাদের পাসপোর্ট রেডি তো?কবে যাচ্ছেন?’
‘টাকা তো জমা দিলাম।দেরি হবে মনে হয়।’
‘পাসপোর্ট যদি আগে করিয়ে রাখতেন! এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছেনা।যেকোনো সময়ে দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।এটা নরমাল অসুখ না।আপনাদের মাঝে আমি কোনো সিরিয়াসনেস দেখছিনা।একটু জলদি করতে হবে।সময় বেশি নেই।রুগীর যে অবস্থা ‘
‘হ্যাঁ আমারও অনেক চিন্তা হয় এ নিয়ে।তবে বেশি দেরি হবেনা।ততদিন আমি ওকে সুস্থ রাখার সব চেষ্টা করবো।’
‘সুস্থ রাখতে চাইলেই যে সুস্থ হওয়া যায় তা কিন্তু না।চাইলেই যদি সব হতো তাহলে আমরা ডাক্তাররা কেন আছি?’
অর্ণব মন খারাপ করে ফোন রেখে দিয়েছে।এরপর পেছনে ফিরে তাকিয়ে থাকলো রুমের দরজার দিকে।ভেতর থেকে কুসুমের অট্টহাসি শুনা যাচ্ছে।দোলনায় দোল খেতে খেতে সে হাসছে।তার এই ইচ্ছাটার ব্যাপারে যদি সে আগে জানত তবে অনেক আগেই পূরণ করত।বারবার মনে হয় বড্ড দেরি হয়ে গেছে।
—
‘বুবু আসো আবার দুলবে’
‘নাহ।তুই দোল,আমার শরীর ভাল লাগেনা’
কলি দোলনা ছেড়ে নেমে কুসুমের কপালে হাত রেখে মুছে দিয়ে বললো,’কেমন লাগে রে বুবু??শুবে?কিছু খাবে?’
‘ওনাকে একটু ডেকে দে যা’
কলি ওর কথা মতন বাহিরে এসে অর্ণবকে ডেকে বললো কুুসুমের কাছে যেতে।এরপর মায়ের কাছে ফিরে গেছে।মা তো বলেছিল অর্ণব দুলাভাই কুসুমের সাথে থাকলে ওদের রুমে না যেতে।
অর্ণব রুমে এসে দেখেছে কুসুম বিছানায় বসে ওর দিকে হাসি মাখা মুখে চেয়ে আছে।
‘কি হলো?ডেকেছিলে?’
‘আমার পাশে বসুন একটু’
অর্ণব বসেছে।কুসুম হয়ত অনেক কিছু বলতে চাইছিল।শুকনো ঠোঁট দিয়ে সেই রচনা তার আর বলা হলোনা।মলিন মুখে শুধু অর্ণবের ঝলঝল করা চোখ দেখছিল।এত বেশি ভালোবাসে মানুষটাকে যে তাকে আর দেখা হবেনা ভেবে বুকটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে।ইচ্ছে হচ্ছে তাকে আঁকড়ে রাখতে।
এই মানুষটাকে পেয়েও পাওয়া হলোনা।কেন নিয়তি এমনটা করলো।তার ভালোবাসার প্রহর গুনা হয়নি,তার জন্য সেজে বিছানা তৈরি করা হয়নি।ফুলের বাসর হয়নি,প্রেম নিবেদন করা হয়নি তার আগে কেন অধ্যায় শেষের পথে!
মিশু ভাবী গর্ভবতী।তার কোল জুড়ে সন্তান আসবে।
‘আমার নিজের রাজপুত্র, রাজকন্যা দেখা হলোনা।আমার ঘর জুড়ে তাদের আনাগোনা,তাদের হইচই দেখা হলোনা।
এই মানুষটার ছোঁয়া পাওয়া হলোনা।আমার তো কিছুই পাওয়া হলোনা।পাওনা নিয়ে মরে যাব কাল পরশু অথবা আজই!’
‘কুসুম?কি হলো?ওমন করে কি দেখছো?কি দরকারে ডেকেছিলে?’
‘আমি না!’
‘কি?’
‘ভুলে গেছি।আপনি একবার আমায় জড়িয়ে ধরবেন?যেমন করে কাল ধরেছিলেন ঠিক সেরকম করে’
অর্ণব একটা সেকেন্ড দেরি না করে এগিয়ে এসে ওকে বুকে টেনে নিলো।কুসুম যে তার অসুখটা নিয়ে বিরাট বড় ডিপ্রেশনে আছে তা আর বোঝা বাকি নেই।ওর মাথায় হাত বুলাতে গিয়ে সে টের পেলো মাথায় আর চুল নেই বললেই চলে।তার পরেও সে আলতো করে হাত বুলিয়ে কুসুমের কানের কাছে ঠোঁট রেখে বললো,’তুমি ভয় পাচ্ছো?’
‘উহু’
‘তবে আমাকে খাঁমছে ধরে আছো কেন?’
‘আপনি দয়া করে এভাবে আমাকে ধরে রাখতে পারবেন?আমি যেন কোথাও না চলে যেতে পারি!আমাকে ধরে রাখলে আমি যেতে পারবোনা সত্যি!আমাকে ধরে রাখেন যেমন করে আমি ধরে রেখেছি আপনাকে।আমি আসলে যেতে চাইনা কোথাও!!
আমি আপনার সংসারে থাকতে চাই।এই সংসারটা আমার।আমি এর মিষ্টি-তেতোর স্বাদ নিতে চাই।আমি কোথাও যাব না,আমাকে যেতে দিয়েননা।ধরে রাখেন শক্ত করে।
আমি সবাইকে ছেড়ে যেতে চাইনা একটু বুঝেন।আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।আপনার প্রেমের অনুপস্থিতি আমাকে কষ্ট দেবে অনেক।আমি কিছু হারাতে চাইনা,কিন্তু আমার রোগ আমাকে জোরজবরদস্তিতে নিয়ে যাচ্ছে বিশ্বাস করেন!!!
আমি যেতে চাই না।আমি আরও বাঁচতে চাই।আমি আমার সংসারে আমার নিজের ছোট্ট রাজকন্যা,রাজকুমার দেখতে চাই,মা হতে চাই।আপনি ধরে রাখলে আমি যেতে পারবোনা জানেন?ছাড়বেন না!ছেড়ে দিলে আমি মরে যাবো,আর চোখ মেলবেনা আমার।ভোররাতের স্বপ্ন গুলো তবে সত্যি হয়ে যাবে’
কুসুমের কান্নাজড়িত বলা প্রতিটি কথা অর্ণবের গায়ে কাঁটার মতন এসে লাগছে।ওর কাঁপুনি সে সইতে পারছেনা।কাঁদতে কাঁদতে ওর হাঁপিয়ে ওঠা দেখা যাচ্ছেনা আর।
মিথ্যে আশ্বাস দিয়েও লাভ হলোনা।কুসুমের কান্না থামেনি।বরং সে আরও বেশি করে কাঁদছে।
অর্ণব ওর অগোচরে এত কেঁদেছে যে এখন তার চোখে পানি আসেনি।কুসুম ভেঙ্গে পড়েছে।ওকে সামলানোর কোনো উপায় তার মাথায় আসছেনা।
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৮৬
আফনান লারা
.
কুসুমকে আর কি সামলাবে অর্ণব আজ নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
কি গায়ে ব্যাথা!!মনে হয় হাঁড় কাঁপানো জ্বর আসতে চলেছে।এই বুঝি ঝড় আসার পূর্বলক্ষণ!
বিছানা ছেড়ে ওঠার শক্তি হারিয়েছে।শুয়ে শুয়েই দেখছে কুসুম দোলনায় দোলে।পা তার শূন্যে।আলতা রাঙা পা।ঘন্টা কয়েক আগে কলি স্বাদ করে ওর পায়ে রঙ করে দিয়েছিল।
সে পা শূন্যে দুলাতে দুলাতে ছাদ দেখছে।এখনও জানেনা অর্ণব অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে।অর্ণব অবশ্য বলেনি।বললে এমন দৃশ্য দেখা হবেনা।
কুসুমের মুখের হাসি তার কাছে এত বেশি দামি মনে হচ্ছে যে চোখ ফেরাতেও ইচ্ছের কাছে জানতে চাইতে হয়না।মুগ্ধ নয়নে এই বালিকার প্রাণচঞ্চল ভাবটা মনের আনন্দ দিয়ে উপভোগ করে নিচ্ছে।কুসুমের বাঁকা চুলগুলো বাতাসের সাথে দুলছে।যেন আজ অন্য একটা কুসুমকে সে দেখতে পায়।
তার কোনো রোগ নেই,সে একেবারে সুস্থ।ওর এমন রুপ দেখে অর্ণব হাসতে গিয়েও পারেনি,কাশি এসে গেলো।তার কাশির আওয়াজে কুসুম দোল খাওয়া বন্ধ করে পা মেঝেতে রেখে বললো,’কি হলো?’
‘নাহ কিছুনা,দোলো।আমি দেখি’
‘আপনার গলা ওমন শোনায় কেন?শরীর খারাপ নাকি?’
দোলনা ছেড়ে কুসুম ওর পাশে এসে বসে কপালে হাত দিয়ে বললো,’একি!অনেক জ্বর।আমাকে বলেননি কেন?’
এবার সে দেরি না করে ছুটলো মাকে জানাতে।কিন্তু অর্ণব ওর আঁচলটা ধরে ফেলে বললো,’না।যাবেনা।বসো এখানে’
‘আপনার তো সেবা দরকার।নাহলে জ্বর অনেক বেড়ে যাবে’
‘তুমি বসে থাকলেই হবে’
‘পোটি দিতে হবে তো’
‘না।বোসো এখানে’
অর্ণবের জোরাজুরিতে আগের জায়গায় এসে বসলো সে।অর্ণব যেইনা আঁচলটা ছাড়লো ওমনি সে দৌড়ে গেলো বাহিরের দিকে।অর্ণব বিরক্ত হলো।সে চায়নি এ কথা অন্য কাউকে জানাতে,আর কুসুম হন্য হয়ে জানানোর জন্য উঠে পড়ে লেগে আছে।এতক্ষণে সবাইকে খবরটা দিয়েও দিয়েছে হয়ত।
পাঁচ মিনিট পর কুসুম একটা মগ আর একটা নরম সুতি কাপড়ের টুকরো নিয়ে এসে হাজির।কাপড়টাকে ভিজিয়ে চিপে অর্ণবের কপালে লেপে দিয়ে বললো,’আমি কাউকে জানাইনি’
‘ভাল করলে।এসবের ও দরকার ছিলনা।আমার অসুখ খুব তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে যায়।তোমার মতন না’
কয়েক মিনিট ভেজা কাপড় দিয়ে মুছে অর্ণবের কপালের জ্বরের তাপমাত্রা কমিয়ে এনেছে কুসুম।তারপর ওর পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে ও দিয়েছে।
অর্ণব ওর হাতটা বারবার ধরে আটকে ফেলছে আর বলছে সে যেন এত টেনসন না করে।ডাক্তার তাকে টেনসন করতে মানা করেছে।
—-
আকাশ আজ ভারী।মেঘের সাথে মেঘের ঝগড়া লেগেছে।একজন আরেকজনকে বকছে।
তাদের ঝগড়া শেষ হলে বৃষ্টি শুরু হবে।যখন শুরু হবে তখনও হয়ত তাদের একটু একটু ঝগড়া হবে।ডাক শোনা যাবে মেঘের।
অর্ণব ঘুমায়।কুসুম দুবার রান্নাঘর থেকে ঘুরে এসেছে।দুজন মা আর মিশু ভাবী তাকে কোনো কিছুতে হাগ লাগাতে দেয়না বলে সে শুধু ঘুরে চলে আসে।কত কি রান্না হচ্ছে আজ,কিন্তু অর্ণবের যে অবস্থা সে হয়ত কিছুই মুখে তুলতে পারবেনা।তখন মা ধরে ফেলবে তার অসুখ।এমনিতেও তার চোখ মুখ দেখলেই বোঝা যাবে তার যে কত জ্বর।কেন যে মায়ের থেকে লোকাচ্ছেন!মা জানলে কত কি টোটকা কাজে লাগিয়ে জ্বর সারিয়ে তুলবেন তা বুঝি তিনি জানেন না?তিনি কি সুস্থ হতে চান না?
ঘাঁড় ঘুরিয়ে একবার বিছানার দিকে তাকালো কুসুম।অর্ণব উপুড় হয়ে ঘুমায়।তার এভাবে ঘুমানোটা দেখতে কত যে ভাল লাগে কুসুমের।একটু কাছে গিয়ে দেখছে সে এখন।ইচ্ছে হলো নিজের সেই পুরোনো গানটা গাইতে,কিন্তু অর্ণবের ভয়ে গাইলোনা।অর্ণব জানেও না সে যতক্ষণ না থাকে ততক্ষণ কুসুমের সময় কাটেনা।প্রতিটা সেকেন্ড কাটে বছরের সমান।
সে যদি এটা জানত তবে কখনওই ঘুমাতোনা,কোথাও যেতোনা।সারাক্ষণ ওর চোখে চোখ রেখে চেয়ে থাকতো।
অর্ণবের অপরিষ্কার পাঞ্জাবি গুলো ঝুঁড়িতে জমিয়ে রাখা ছিল।গুনে গুনে ১০/১২টার মতন হবে।সে একসাথে সব ময়লা হলে তারপর ধোয়।
মা বলে স্বামীর জামাকাপড় ধুয়ে রাখতে হয়।এতদিন অর্ণব ওকে এসব করতে বলেনি,দেয় ও নি।চট করে ধুয়ে দিয়ে বাগানে মেলে দিয়ে আসতো দড়িতে।কিন্তু আজ কয়েকদিন সে ওকে নিয়ে এত ব্যস্ত যে জামাকাপড় ধোয়ার সময় কৈ।
কুসুম তাই আজ সব একত্র করে ধুয়ে দিয়েছে।শরীর তার ও খারাপ।কিন্তু যেটা কখনও করেনি সেটা করে দেখতে ক্ষতি কি?
সব বাগানে মেলছে এখন,কিন্তু আকাশের অবস্থা দেখে মন খারাপ হলো।মনে হয় বৃষ্টি হবে।এত কষ্ট করে এক ঝাঁক পাঞ্জাবি মেলে দেবার পর এই দৃশ্য মনটাই খারাপ করে দিয়েছে।
অর্ণব মায়ের ডাকে উঠে গেছিল।দুপুর দুইটা বাজে,এতক্ষণ ঘুমিয়েছে মনে করে নিজেই নিজেকে বকে নিলো।
কত কাজ বাকি সেসব রেখে এত ঘুমালো!!এরপর কুসুমের কথা মনে আসায় তড়িগড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করলো ও কোথায়।মা নিজেও জানেননা।তাই বলতে পারলেননা।
কলি দোলনায় গিয়ে বসতে বসতে জানালো কুসুম নাকি বাগানে।
তাই সে ওদিকেই গেছে।এসে দেখে তার বউ সব ধুয়ে শুকাতে দিচ্ছে।রাগ হলো অনেক।এই শরীর নিয়ে এত খাটনি করেছে বলে তার প্রচণ্ড রাগ হলো ওর উপর।কিন্তু কুসুমের গলায় সুন্দর একটা গান শুনে মনটা গলে গেলো সবসময়কার মতন।কুসুমের উপর করা রাগ কখনও ঘন্টা পার হয়না।এই মেয়েতে জাদু আছে,কঠিন জাদু।এই জাদু আমাকে গ্রাস করবে একদিন।
যেতে যেতে ওর একদম কাছে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সে।তার এলোমেলো পাতলা চুলগুলোকে সরিয়ে নরম ঘাঁড়ে হাত দিলো সে।সম্ভবত এভাবে ছোঁয়ার চিন্তা তার ছিল না।ওকে ডাকতেই সে হাত রেখেছে।কুসুম আচমকা ভয় পেয়ে পেছনে তাকিয়েছিল,ভেবেছে কে না কে!
অর্ণবকে দেখে তার ভীতি কমলো কিছু।মুচকি হেসে তাই আবারও পাঞ্জাবি মেলতে মন দিলো।
‘কি হলো?এড়িয়ে চলছো?’
‘একদম না’
‘তবে মুখ ঘুরিয়ে পিঠ দেখালে কেন?’
‘দেখতে বলছে কে?’
হুট করে মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি শুরু।দৌড়ে যে পালাবে তার সময়টুকু বৃষ্টি দিলো না,ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি পড়া শুরু।
কুসুম অর্ণবের হাত ধরে দৌড় দিলো বাসার দিকে।কিন্তু অর্ণব গেলোনা।থেমে গেছে সাথে থামিয়ে রেখেছে কুুসুমকেও।
‘আরে আপনার খুব জ্বর। এই বৃষ্টির পানিতে আরও বেড়ে যাবে,চলুন যাই’
কুসুম হাত কপালের উপর চ্যাপ্টা করে রেখে কথাগুলো বলছিল।অর্ণব ওকে কাছে টেনে ধরে ওর মাথার উপর নিজের হাত রেখে বললো,’আমার কিছু হবেনা,তোমারও হবেনা দেখো’
‘আমার কথা আমি ভাবছিনা,আপনাকে তো সুস্থ থাকতে হবে’
‘আমার কথাও আমি ভাবছিনা।বিয়ের পরের প্রথম বৃষ্টি আমাদের,না ভিজলে ভুল হবে।চলো ভিজি’
কথাটা বলে অর্ণব কুসুমের মাথার উপর থেকে হাত সরিয়ে ফেললো।বৃষ্টিতে ভিজতে কুসুমের দারুণ লাগে তবে এখন তার কাছে সব চাইতে জরুরি অর্ণবকে বাসায় নিয়ে যাওয়া।জ্বরের মধ্যে শীতল বৃষ্টির পানিতে ভিজলে অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে।
অর্ণব আরও নাছোড়বান্দা,কুসুমের দুহাত ধরে আরও একবার কাছে নিয়ে আসতে গিয়ে কি ভেবে যেন দোতলার বারান্দার দিকে একবার তাকালো। কেউ যদি দেখে,যদি সাগর ভাইয়া দেখে তো লজ্জায় আর থাকা যাবেনা।
এসব ভেবে কুসুমের হাত ধরে জবা ফুল গাছটার তলায় নিয়ে আসলো সে।
‘এখন ঠিক আছে।গাছের কারণে বৃষ্টির পানি কম লাগছে গায়ে।তাই না?’
‘শোনো আমি কিন্তু কখনও তোমার ঠোঁটের স্বাদ কেমন সেটা জানতে যাইনি।মৃদুল বলেছিল স্বাদ এমন হয়।ওটা থেকে বলেছি।তুমি আবার ভেবোনা যে আমি তোমায় ছুঁয়েছিলাম তোমাকে না বলে’
‘তা কেন ভাবতে যাব?’
অর্ণব হালকা কেশে বললো’আচ্ছা যদি এখন ছুঁই?রাগ করবে?’
‘কেমন ছুঁবেন?’
‘ছোঁয়ার ধরণ আছে?থাকলে সেটা জানো কিভাবে?কে বললো?’
‘না জানিনা,এমনি জানতে চাইলাম’
মেঘে ডাক দিলো।অর্ণব আর কুসুম নড়েচড়ে দাঁড়িয়েছে।কুসুম দুষ্টুমি করে বললো,’শেয়ালের ডাকে ভয় পান,মেঘের ডাকে ভয় পান না?’
‘মেঘ এসে কামড়াবেনা আমাকে,শেয়াল কামড়াবে’
কুসুম হাসি আটকে দুহাত দিয়ে তার হাতগুলো চেপে দাঁড়ালো।শীত লাগছিল ভীষণ
এরপর করুণ চোখে বাগানে মেলা পাঞ্জাবিগুলো দেখছিল সে।কেন যে এত কষ্ট করে মেলতে গেলো।সব এখন পানিতে ।
অর্ণব কুসুমের পিঠের পাশ দিয়ে হাত নিয়ে ঘাঁড় ধরলো ওর।কুসুম মাথা নিচু করে ভেজা,স্যাঁতসেঁতে মাটি দেখছে।সেখানে পড়ে আছে ঢাল সমেত জবা ফুল।ঝড়ের দাপটে ছিঁড়ে পড়েছিল ওখানে।নিচ থেকে সেটা তুলে নিলো সে।কানে গুজে অর্ণবের দিকে ফিরে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সে বললো,’অসাধারণ’
চলবে♥
#লীলাবালি🌺
#পর্ব_৮৭
আফনান লারা
.
‘আপনি না বলেছিলেন বৃষ্টিতে ভিজবেন।তবে এখানে কেন আবার?’
‘কেউ দেখলে লজ্জায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে থাকতে হবে,বুঝলে।তোমার তো এখনও সেই জ্ঞান হয় নাই’
‘বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা দারুণ ব্যাপার।আমাদের সেই দারুণ ব্যাপার অন্য কেউ দেখলে তাতে ক্ষতি কোথায়?’
‘ঐ যে বললাম সে জ্ঞান তোমার এখনও হয়নি,আমার পরিবার যে নিরামিষ টাইপের,আমার মনে হয়না বারান্দায় এসে দাঁড়াবে বৃষ্টি দেখবে বলে।চলো তবে বৃষ্টিতে ভেজা যাক’
কথাটা বলে সে কুসুমকে টান দিয়ে বাগানের মাঝে নিয়ে আসলো।ওর হাত ছেড়ে আকাশের দিকে চেয়ে বললো,’জীবন তো একটাই,কোনো কিছু বাদ রাখা যাবেনা।সবকিছু করে দেখে নিতে হবে’
বৃষ্টি পড়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে অনেক।কুসুম মাথায় হাত দিয়ে হাসতে হাসতে সবুজ ঘাসের উপর বসে পড়ে।অর্ণব ওর দেখাদেখি নিজেও বসলো।আসলেই খুব মনকাড়া একটা মূহুর্ত।কখনও বৃষ্টির সময় ঘাসে বসে দেখা হয়নি।এখন মনে হয় এর চেয়ে সুখকর আর কি হতে পারে।এত ভাল কেন লাগে??
কুসুম হাসি আটকাতে পারছেনা।শুধু হেসেই চলেছে।অর্ণব ওর হাসি দেখে নিজের হাসিটাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি,সেও খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো আনন্দে।
কুসুম কাদা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হঠাৎ হাত বাড়িয়ে অর্ণবের সারামুখে ডলে দিয়ে এক ছুট লাগিয়েছে।কিন্তু আফসোস! পিছলে কাদা মাটিতে নিজেই ধপাস করে পড়ে গেছে কিছুদূর যেতেই।এদিকে অর্ণব কাদা মাটি এক মুঠোর মতন নিয়ে এগিয়ে এসে ওকে ঝাপটে ধরে লাগিয়ে দিলো তার সারা মুখে, সারা গায়ে।
বৃষ্টির আওয়াজে ওর চিৎকার চেঁচামেচি কেউ শুনতে পায়নি।
‘কেমন লাগে এখন?আমি একটু লাগিয়েছিলাম আর আপনি পুরা সারা শরীরে কাদা মাখিয়ে দিলেন?এটা ঠিক করেননি।’
‘সবাই দেখলে বলবে পড়ে গেছিলে’
‘পড়ে গেলে এমন লেপটে লেপটে কাদা লাগে?সবাই কি বাবু যে কথা বুঝবেনা?’
—-
বাসায় এসে মৃদুল জ্বালাবে বলে জুথি আজ তার এক বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে এসেছে।মণিতার বাসায়।মণিতা ওকে রেখে টইটই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে সারা বাসায়,কিসব রান্না করছে।তার বাসায় তার মা- বাবা আর বড় ভাইয়া থাকে।কিন্তু তারা সবাই যার যার অফিসে এখন।বাসায় মণিতা একা।সারাদিন একা থাকা হয় না,ছোটখাটো একটা জব করে সে।
আজ শুক্রবার বলে অফিস ও বন্ধ।এই সুযোগ জুথি হাত ছাড়া করেনি।শান্তিতে মণিতার বিছানায় বালিশ জড়িয়ে ঘুম দিয়েছে।
কলিংবেল বাজার আওয়াজ পেয়ে মণিতা রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখলো মৃদুলকে।
মণিটা আর জুথি দুই বান্ধুবী হলেও পড়েছে আলাদা ভার্সিটিতে, যার কারণে সে মৃদুলকে চেনে নাই।
‘কাকে চাই?’
‘জুথি আপনার বাসায়?’
‘হুম।আপনি কে?ওকে চিনেন কিভাবে?’
‘ওর উড বি হাসবেন্ড আমি।এইবার ভিতরে আসতে বলবেন নাকি বাহিরে থেকে বিয়ের কার্ড কোন কারখানায় ছাপা হয়েছে সেটারও ডিটেইলস জানতে চাইবেন?’
মণিতা লজ্জিত হয়ে ওকে ভেতরে আসতে বললো।মৃদুল সোফায় বসে সেন্টার টেবিলের উপর থেকে একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে বললো,’মহারাণীকে ডাকুন,একটু মুখ দর্শন করি তার’
‘সে তো ঘুমাচ্ছে।আচ্ছা আপনার কথা তো জুথি আমায় বললোনা কখনও,আপনি কে আসলে?’
‘বলবে বলবে।কফি খাওয়াবেন না??নিজের বান্ধুবীর হবু বরকে মানুষ এত প্রশ্ন করে?আচ্ছা আপনি কফি নিয়ে আসুব,আমি আমার বউয়ের ঘুম তাড়াচ্ছি,সে নাহয় পরিচয়টা দেবে’
কথাটা বলে সে সোজা চলে গেলো সামনের রুম গুলোর দিকে।দরজা খোলা ছিল বলে জুথিকে দেখলো রুমে উঁকি মারতেই।সে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমে কাতর।
—-
মিশু ভাবী দরজা খুলে দেখলেন কাদা মাখামাখি করে দুই ভূত এসে দাঁড়িয়েছে দরজার ওপারে।অর্ণবকে দেখে চিনতে পারলেও কুসুমকে চিনতে কষ্ট হলো।সে বেশি মাখো মাখো হয়ে গেছে কাদায়।
হাসতে হাসতে ভাবী সাগর ভাইয়াকে ডাকতে চাইলেন সেসময়ে অর্ণব তাঁকে থামিয়ে বললো যেন না ডাকে।
এরপর দুজনে চুপিচুপি রুমে চলে আসলো।কুসুম মাথার চুল থেকে কাদা হাত দিয়ে ঘঁষতে ঘঁষতে বাথরুমে গেছে।ঢুকে দরজা লাগানোর আগ মূহুর্তে অর্ণবও এক দৌড়ে ওর সাথে বাথরুমে ঢুকে গেলো।
‘আপনি এখানে কেন?’
‘সাগর ভাইয়া আমাকে ডাকতে আসতেছে এদিকে।এই হালে দেখলে এক ঘন্টা ধরে হাসবে’
এদিকে সাগর ভাইয়া ওদের বিছানায় বসে অর্ণবের অপেক্ষা করছেন
কুসুম আর অর্ণব দুজনে চোরের মতন দাঁড়িয়ে আছে ভেতরে।
কুসুম মোড়া একটা টেনে সেটাতে বসে আঁচল বালতির পানিতে ভিজিয়ে মুখ থেকে কাদা তুলছিল।অর্ণব দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দেখছে সেসব।
সাগর ভাইয়া এইবার মিশু ভাবীকে নিয়ে বাদাম খাচ্ছে আর ওদের নিয়ে কথা বলছে ওখানে বসে বসেই।মানে তারা এখান থেকে যাবেই না বলে ঠিক করেছে।তারা জানেও না এই বাথরুমে সেই দুইজন একসাথে যাদের নিয়ে তারা আলাপ করছে এখন।
অর্ণব গাল ফুলিয়ে ঝর্না ছেড়ে দিলো।কুসুম একটু দূরে গিয়ে বসে হাত থেকে কাদা তুলছে এবার।কি কাদা এগুলো কে জানে।অল্প সময়েই শুকিয়ে গেছে।উঠছেও না।
অর্ণব দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে ঝর্ণার পানিতে ভিজছে।কুসুম গাল থেকে কাদা তুলে নিয়ে ওর দিকে ফিরে বললো,’এত যে ভিজছেন আজ আপনার কত জ্বর আসতে পারে সে বিষয়ে জানেন?’
‘জ্বর হবেনা।রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি আমার।তুমি নিজেরটা ভাবো’
কুসুম উঠে বললো,’আমার তো এখন গোসল করতে হবে।আপনি না বের হলে কেমন করে গোসল করবো?কি দরকার ছিল এখানে ঢুকে পড়ার?বারান্দার দিকেও তো গিয়ে লুকাতে পারতেন’
‘বারান্দার দরজা আটকানো ছিল,ওটা খুলতে খুলতে ভাইয়া এসে পড়তো’
ওদিকে রুমে এবার বাবা মায়ের ও কথা শোনা যাচ্ছিল।অর্ণব মাথায় হাত দিয়ে কুসুমের থেকে মোড়াটা কেড়ে সেটাতে বসে পড়েছে।কুসুম দরজার কাছে গিয়ে কান পেতে শোনার চেষ্টা করছে সবাই কি বলে।
অর্ণব বসে বসে মগ দিয়ে পানি নিয়ে মাথায় ঢেলে মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা চালায়।
কুসুম ঝর্নার কাছে এসে ঝর্ণাটাকে আবার ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকলো।যেন এক বন্দি জীবন,অথচ কিসের এক ভাললাগা গায়ে এসে হেসে খেলে যায়।
যেন এক সুন্দর মূহুর্ত তাদের সামনে অথচ তারা সেটাকে উপভোগ করার উপায় জানেনা।সত্যি তাই!
অর্ণব ভেজা চুল চিপে চিপে পানি টেনে নিলো মাথা থেকে।তারপর হাঁচি একটা দিয়ে গায়ের পাঞ্জাবিটা খুলে ফ্লোরে রেখে বললো,’আমার হাঁচি কি জোরে শোনা গেলো?’
‘নাহ,আমি তো আওয়াজই শুনে ভাবলাম কি যেন বললেন,ওটা হাঁচি ছিল আসলে?’
অর্ণব এবার হাত দিয়ে গায়ের থেকে পানি ঝরানোর বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে।কিন্তু কুসুম তো আর ওর মতন করতে পারবেনা।ঝর্ণা অফ করেছে,তার গোসল ও শেষ কিন্তু ভেজা শরীরে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে।তাড়াহুড়োতে শুকনো শাড়ী নেওয়া হয়নি।
বাহিরে থেকে সবার হট্টগোল কমে গেলো মনে হয়।আওয়াজ নেই বললেই চলে।তাই সে লুকিয়ে দরজাটা একটু খুললো।কেউ নেই দেখে বেরিয়েও পড়েছে।অর্ণব ওকে বেরুতে দেখো সেও দরজার কাছে গেলো দেখতে,যদিও এখনও বের হয়নি।
বিছানা থেকে গামছাটা নিয়ে কুসুম পেছনে তাকাতেই দেখলো সবাই একসাথ হয়ে এদিকেই আসতেছে আবার।
আজ ওরা এই রুমটাকে আড্ডাঘর বানিয়ে তুলবে মনে হয়।কুসুম এক ছুটে আবার বাথরুমে ঢুকে পড়েছে,সঙ্গে সঙ্গে অর্ণবের সাথে খেলো জোরেশোরে এক ধাক্কা।
‘আরে কি হলো আবার!বুকে ব্যাথা পেলাম,হাঁড় মনে হয় নড়ে গেছে,এমন করতেসো কেন?’
‘আবার সবাই আসছে দেখেই তো দৌড় দিলাম,আচ্ছা আপনি ও বলিহারি! আমি বের হলাম সাথে সাথে বের হতে পারলেন না?তবে তো আর একসাথে বন্দি হয়ে এখন থাকতে হতো না আবার’
‘আমি তো বের হতেই যাচ্ছিলাম,তুমিই তো ঝড়ের গতিতে আবার ঢুকে পড়লে।সব দোষ এখন আনার?’
কুসুম গাল ফুলিয়ে গামছা গায়ে জড়িয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে কোনো কথা না বলে।অর্ণব নিজের গায়ে ফু দিয়ে পানি শুকানোর চেষ্টা করছে আগের মতন।ওর এই কাজে হাসি পেলো কুসুমের কিন্তু কিছু বললোনা।কিছু বললে দেখা গেলো ওর গায়ের থেকে গামছাটা কেড়ে নিয়ে যাবে সে।
—-
গালের নিচে কারোর নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে জুথি মুচকি হেসে বললো,’মণিতা সুড়সুড়ি কেন দিচ্ছিস?হাত সরা!কাতুকুতু লাগে আমার,’
সুড়সুড়ির পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জুথি বাধ্য হয়ে চোখ খুললো।খুলে দেখলো মৃদুল ওর হাত গোল করে চেয়ে আছে।এতক্ষণ হাত দিয়ে ওর গালে সুড়সুড়ি দিচ্ছিল সে।মৃদুলের হাত নরম এটা জুথি জানতোনা,ছেলেদের হাত শক্ত হয় এটা সে জানে,কিন্তু কিছু কিছু ছেলের হাত যে এতটা নরম হয় এটা সে জানতোনা বলেই গুলিয়ে ফেলেছিল।হন্তদন্ত হয়ে পিছিয়ে যাওয়া ধরতেই খাটের স্ট্যান্ডের সঙ্গে ধুরুম করে বাড়ি খেয়ে তার ঘুমের রেশ একেবারে কেটে গেলো।বলতে গেলে বাপ বাপ করে পালালো।
‘আরে আরে এত ভয় পাও কেন,আমি মৃদুল,তোমার হাসবেন্ড!😂’
‘আপনি এখানে কি করে!’
‘তোমার ভাই ফরহাদকে ক্রিকেট ব্যাট কিনে দিয়েছি,বাজারে দেখা হয়েছিল।ওই তো আমাকে মণিতার চৌদ্দ গুষ্টির ঠিকানা দিয়ে দিলো।হেহে!যেখানেই লুকিয়ে থাকবেনা কেন,আমি তোমার আশেপাশে রয়ে যাবো সারাটাজীবন ‘
‘সরুন সামনে থেকে’
‘উহু!আজ আমি এখানেই থাকবো।যতক্ষণ না তুমি বেরুবে ততক্ষণ, এরপর বাসা থেকে বের হলে তুমি যেখানেই যাবে আমিও সেখানে যাব’
চলবে♥