সীমাহীন ভালোবাসার নীড় পর্ব-১০

0
807

সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়
#লেখিকাঃনওশিন আদ্রিতা
#পার্টঃ১০
,
,
,
,
আদ্রির সকাল থেকেই ধুম জ্বর। জ্বর নিয়েই ঘাপটি মেরে শুয়ে ছিলো। আদ্রির ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস জ্বর বা অন্য কোন সমস্যা হলে ঘাপটি মেরে থাকা। যতক্ষন কেউ নিজ থেকে না দেখতো ততক্ষন কেউ বুঝতে পারতোনা আদ্রির অবস্থা আজকেও ব্যতিক্রম কিছু হয়নি।

আদ্রির ঘুম ভাঙে ১১ টার দিকে জ্বর তখন ও তার মতোই ছিলো। মাথা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে তার চোখ টাও কেমন জ্বালা করছে তার আর সাথে গলা ব্যাথা তো আছে। গলায় নিল দাগ বসে গেছে আর জায়গা টা ফুলে গেছে।

প্রচুর পানির তেষ্টা পাওয়াই আদ্রি টেবিলের দিকে হাত বারায় কিন্তু জগে এক ফোটা পানিও পাই না।অনেক কষ্টে বিছানা থেকে নেমে পানি নেওয়ার জন্য কিচেনের দিকে এগিয়ে যায় কিন্তু মাঝ পথেই মাথা ঘুরে উঠে আর মেঝেতেই অজ্ঞান হয়ে পরে যায়।

নির আদ্রির বাসায় এসে দেখে আদ্রি মেঝেতে পরে আছে অজ্ঞান অবস্থায়। নির দৌড়ে আদ্রির কাছে যেয়ে আদ্রির মাথা নিজের কোলে নেয়। এক রাতেই চোখের নিচের কালো দাগ বসে গেছে ফর্সা কপাল ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।

নিরঃআদর এই আদর পাখি চোখ বন্ধ করে আছো
কেন দেখো আমার কিন্তু এমন মজা মোটেও পছন্দ না তোমাকে আমার রাগী সাইড দেখাই নি তার মানে এটা না যে আমার রাগ নাই । এই উঠোনা গো প্লিজ(কেঁদে দিবে এমন অবস্থা)

এতো ডাকার পরেও যখন আদ্রি চোখ খুললোনা তখন নির এর পাগল প্রায় অবস্থা। নির তাড়াতাড়ি আদ্রিকে কোলে তুলে নেয় আর দ্রুত ওকে নিয়ে রুমে চলে যায়।

নিরঃহ্যালো ডক্টর তাড়াতাড়ি এখনি রয়েল কিংডম সোসাইটিতে চলে আসুন ফার্স্ট উইথ ইউর টিম রাইট নাও আপনার কাছে অনলি ১০ মিনিট আছে।

ঃ———

নিরঃআই ডোন্ট ওয়ান্ট টু হেয়ার এনি থিংক ইফ ইউ ডোন্ট ফলো মাই অর্ডার দেন আই উইল ডিসট্রোয় ইউ এন্ড ইউর হস্পিটাল জাস্ট কিপ ইট ওন ইউর মাইন্ড ইউ ব্লাডি
(রাগে চিৎকার করে).

বেস আর কি লাগে ডক্টর এর ভয়ে হাত পা কাপাকাপি শুরু যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের মেডিকেল টিম নিয়ে হাজির হয়ে যায় নির এর দেওয়া ঠিকানাই শুধু তারা না আরও একটা মেডিকেল টিম এসে হাজির হয় সেখানে।

ওয়ার্ড বয় রা রুমের ভিতরে সব রকমের প্রয়োজনীয় জিনিস সেট করে দেয় দেন বড় বড় ডাক্টার চেক আপ করতে শুরু করে। তারা ধরেই নেয় যে মেয়েটা নির এর স্পেশাল কেউ হবে নাহলে নির কারো জন্য এতোটা কন্সার্ন না তার বোনের কেয়ার পর্যন্ত তার নানা নানি করে।

সবাই চেকআপ করে বাহিরে এসে দেখে নির এদিক থেকে ওদিক পায়চারি করছে চিন্তাই। ওর মুখ দেখেই মনে হচ্ছে যেকোন মূহুর্তে কেঁদে দিবে।

ডাক্তারঃমিস্টার চৌধুরী
নিরঃইয়েস ইয়েস সে কেমন আছে ঠিক আছে তো কিছু হয়নি তো।ওর যদি কিছু হয় আমি আপনাদের মধ্যে কাউকে ছাড়বোনা। আই উইল কিল ইউ অল
(রাগে ডাক্তার এর কলার ধরে)
ডাক্তারঃমিস্টার নির আপনার ওয়াইফ এখন ঠিক আছে।তার জ্বর এর জন্য এতোকিছু। আর উনার একটু স্পেশাল কেয়ার নিবেন একদম খাওয়া দাওয়া করেনা বিপি একদম লো আর বড় কথা উনার গলায় অনেক বেশি চাপ লেগেছে ২ দিন ঠিক মতো কথা বলতে পারবেনা। চেষ্টা করবেন যেনো ২ দিন কোন রকমের কথা না বলে কারন আরেকটু চাপ উনার জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এমন ও হতে পারে সে আর কোন দিন ও কথা বলতে পারবেনা সো টেক কেয়ার।

ডাক্তার রা সবাই চলে গেলো। নির হাটু গেরে ফ্লোরে বসে পড়লো। দুই হাত দুই দিকে ছড়ায়ে চিৎকার করে উঠলো।
ঃআই এম সরি আদর পাখি আমার জন্য তোমার এই অবস্থা আমি তোমার লাইফে আসতে না আসতেই তোমার এই অবস্থা হয়ে গেলো। না জানি ভবিষ্যতে কি হয়।কিন্তু চিন্তা করোনা আমি তোমাকে সুস্থ করে তুলবো যে ভাবে হোক (চোখের পানি মুছে)

নির রুমে যেয়ে দেখে স্যালাইন চলছে। নির ধীরে ধীরে আদ্রির কাছে যেয়ে যে হাতে স্যালাইন লাগানো সে হাত ধরে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছোয়ালো। কাটা জায়গা যেখানে ব্যান্ডেজ করা সে জায়গাতেও নিজের ঠোঁট ছোয়ালো।

ঘুমন্ত অবস্থাতেই কেপে উঠলো আদ্রি নির এর এমন ছোঁয়ায়।

—–

সূর্যের আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো আদ্রির। চোখ দুইটা কচলে আসেপাশে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কোথায় সে।ধীরে ধীরে সব কিছু মনে পরে গেলো তার।শুয়া থেকে উঠে বসার চেষ্টা করতেই শরীরে ভারী কিছু অনুভব করলো। ভ্রু কুচকে নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক হলো। ইয়া বড় বড় দুইটা লেপ তার শরীরের উপর। জ্বর ছূটে যাওয়াই ঘামে অবস্থা খারাপ।

কোন রকম উঠে বসে শাওয়ার নিতে চলে গেলো আদ্রির।সে মনে করলো মেহের হয়তো এগুলা করেছে। কিন্তু সারারাত যে নির ওর সেবা করেছে সেটা সে ঘুনক্ষরেও টের পেলোনা রাতের মধ্যেই নির সব কিছু পরিষ্কার করে ফেলেছে।

আদ্রি শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে নির খাবারের প্লেট নিয়ে বসে আছে বিছানায়।

আদ্রি সেটা দেখে কিছু বলার জন্য মুখ খুলতেই নির বলে উঠলো
ঃখবরদার মুখ থেকে যেনো একটা আওয়াজ ও বের না হয় কালকের আগে কথা বললে তোমার গলার সমস্যা হতে পারে। সো কিপ ইউর মাউথ সাট এর এখানে এসে বসো।

আদ্রি হাত দিয়ে ইশারা করলো কেনো
নিরঃকারন আপনি একটা বাচ্চা যে কি না নিজের খেয়াল পর্যন্ত রাখতে পারেনা এই টুকু বয়সে বিপি লো সুগার হাই। খাওয়া দাওয়ার টাইম নাই।
(রাগী স্বরে)

আদ্রি মাথা নিচু করে নিলো আসলেই তো সে সময় মতো কবে খেয়েছে তার তেমন মনে নেয় আদ্রিয়ান যেদিন জোর করে খাওয়াতো সেদিন হয়তো টাইম মতো খাওয়া হতো নাহলে বাহির থেকে কিছু কিনে খেতো নাহলে পানি খেয়ে ঘুমায় পড়তো।

নিরঃকি বললাম কথা কানে যায় না এখানে এসে বসো
হঠাৎ নির এর চিৎকারে ভয় পেয়ে গেলো আদ্রি আর দৌড়ে নির এর সামনে বসে পড়লো। নির ধীরে ধীরে পুরো সুপ টা খেয়ে নিলো।ডাক্তার এর কাছ থেকে সব জেনে নিয়েছে কি করতে হবে না করতে হবে।

খাওয়া হয়ে গেলে নিজ হাতে আদ্রিকে পানি পান করায়ে মুখে মুছিয়ে দেয়। আদ্রি শুধু দেখে যাচ্ছে।

আদ্রি আয়নার সামনে দাঁড়ায়ে চুল মুছার জন্য হাত উঠাতেই ব্যাথায় আহ করে উঠলো। নির সুপ এর বাটি টা রেখে রুমে আসতেই আদ্রির চিৎকার শুনে বিচলিত হয়ে গেলো দৌড়ে এগিয়ে গেলো তার কাছে।

নিরঃকি হয়েছে লেগেছে কথাও গলায় ব্যাথা করছে।

আদ্রি করুন চোখে নিজের হাতের দিকে ইশারা করে আর ডান হাত দিয়ে চুল দেখায়।

নিরঃহাত ব্যাথার জন্য চুল মুছতে পারছনা(ভ্রু নাচিয়ে)
আদ্রি উপর নিচ মাথা নামায়।

নিরঃআমাকে বললেই তো হতো।
আদ্রি দুই সাইডে মাথা নাড়িয়ে বাহিরের দিকে ইশারা করে।
নিরঃকিহ মেহের কে ডাকতে বলচ্ছো
আদ্রিঃ( পুনরায় হ্যা তে মাথা নাড়ায়)
নিরঃমেহের গেছে প্রডাক্ট এর কিছু কাজে সিলেটে। আজকে ভোরের দিকেই রওনা দিলো।
(আদ্রির চুল মুছতে মুছতে)

আদ্রির কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তারমানে এই ফ্লাটে শুধু নির আর ওই ভয়ে ওর হাত পা কাপাকাপি শুরু হয়ে যায় এই জন্য না যে নির এর সাথে বরং এই জন্য যে একটা ছেলের সাথে সে জানে নির কেমন আর সে কেমন নির মানবতার খাতিরে তার সাথে আছে কিন্তু এই সমাজ তো আর সেটা বুঝবেনা তারা তিল কে তাল করার আগে দুই বার ও ভাববেনা।

আদ্রি নিজের ভাবনায় বিভোর ছিলো তার ধ্যান ভাঙে পিচ্চি কোন মধুর আওয়াজে।

চলবে!!!!!