#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৬
ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে চুপ হয়ে থাকি। ওপাশ থেকেও চুপ! নিঃশ্বাসের শব্দ পাচ্ছি আমি। বলে উঠি,
“হ্যালো!
ওপাশ থেকে বলে উঠে,
“ভূতনি!
আমি ঘরে এসে উঁকি দিয়ে দেখি উনি কানে ফোন নিয়ে খিলখিলিয়ে হাসছে। কোমরে হাত রেখে বলে,
“এটা কি হলো!
“কি আর হবে, দেখলাম তুমি আমার গলা চিনতে পারো কি না।
“আমার সেই কুখ্যাত ডাকনাম শুনে যে কেউ চিনতে।
“কুখ্যাত কেন বলছো বলো বিখ্যাত। নাম্বার টা সেভ করে রাখো পারলে মুখস্থ করো। যখন দরকার পরবে তখন’ই ফোন করবে। আমি কোন সুপার হিরো না যে তুমি বিপদে পড়লেই আমি বুঝে চলে আসবো। বুঝলে!
“কিন্তু আজ পর্যন্ত তো এমনটাই হয়েছে বলে আমার মনে হয়।
“তবে সময়সাপেক্ষ! যদি আমি বুঝতে পারতাম তাহলে আমি আরো আগেই আসতাম।
“নিতি কে কিছু বলেছেন।
“চা আনতে বলেছিলাম তোমাকে?
আমি মুখ ভেংচি দিয়ে উঠে গেলাম। কিছুক্ষণ পর চা নিয়ে এসে উনার সামনে বসলাম। দেখি উনি নিজের জ্যাকেট খুলছেন। আমি ভ্রু কুঁচকে বলি,
“জ্যাকেট খুলছেন কেন?
“গরম লাগছে তাই!
“গরমের মধ্যে চা খাবেন।
“চা খাবো মাথাব্যাথা কমাতে।
বলেই চায়ের কাপ নিয়ে চুমুক দিলেন। আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলি,
“কিছু বলেছিলেন নিতি কে?
উনি শীতল গলায় বলেন,
“ওকে কিছু বলার চেয়ে কথা না বলে থাকা ভালো।
“মানে!
“মানে না এমন তুমি কারো উপর বেশি রেগে থাকলে তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দাও। সে এমনেতেই নিজের ভুল বুঝতে পারবে।
“আপনাদেরকে বন্ধুত্ব তো অনেক দিনের
“তাই বলে সবকিছুর ক্ষমা হয় না
“আপনার মনে হয় সে আমাকে সরি বলবে।
“সরি তো বলবে, তার সাথে কাল থেকে তুমি আমার সাথেই ভার্সিটিতে যাবে।
“যেন আমার আরো ভাল ক্লাস নিতে পারে।
“সেই চান্স নেই, আমি থাকবো তোমার সাথে।
“তাহলেই হলো।
“হ্যাঁ হবে তো অনেককিছু! এতো কিছু করছে তোমার থেকে আমাকে আলাদা করার জন্য। কিন্তু এতো কিছুর পরও যদি দেখে তুমি আমার সাথেই আছো তখন নিজ থেকেই হার মেনে যাবে।
“আপনার মনে হয় নিতি সেই দলের লোক।
“না তবে মানুষ বদলাতে সময় লাগে না।
উনার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম! অতঃপর উনি আমার ফোন থেকেই চাচা কে কল করলেন। চাচা, মা বাবা সবার সাথে কথা বললাম। মা কে বলে দিলাম এটা আমার ফোনের নাম্বার। যখন মন চায় সে যেন তখন’ই কল করে।
.
দুজনেই একসাথে বের হলাম। আমাকে বাইকে করে রিনুর বাসার সামনে নামিয়ে দিলেন। আমি উনাকে বিদায় দিয়ে তিনতলায় উঠলাম। রিনুরা তিনতলায় থাকে। দরজা নক করতেই রিনুর মা দরজা খুলে আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালেন। তার তাকানোতে আমি একটু হাসার চেষ্টা করলাম। আমি রুমে গিয়ে বসলাম। তিনি আমার পাশে এসে বসলেন। আমি বলি,
“রিনু নেই।
“এই একটু বাইরে গেছে এসে পরবে, আচ্ছা নিহা তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি।
“জ্বি করুন
তিনি অস্বাভাবিক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন। তার চাহনিতে আমার শরীর শিউরে উঠলো। কে জানে কি জিজ্ঞেস করবে। উনি বলে উঠেন,
“তুমি সাথে যে ছেলেটা রোজ আসে সে কে?
তার কথায় আমি বেশ ভালো ভাবেই চমকে যাই। তবুও নিজেকে স্বাভাবিক করে বলি,
“কোন ছেলে?
“মিথ্যে বলো না। আমি জানি তুমি একা থাকো। তোমার সেই দাদা দাদী তোমার একমাত্র আশ্রয় কিন্তু ইদানিং দেখছি তুমি প্রতিদিন একটা ছেলের বাইকে করে আসো। সে কে?
বলেই সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তৎক্ষণাৎ বলি,
“আন্টি সে আমার বন্ধু!
উনার চোখ থেকে সন্দেহ এবার চলে গেল। শীতল গলায় বলেন,
“ছেলে বন্ধুরা সবসময় ভালো হয় না। এই শহরে তুমি একা থাকো তোমারটা তোমার নিজেকেই দেখতে হবে। মেয়ে মানুষ হলো ফুলের মত। এর সৌন্দর্য সবাই নিতে চায়। কিন্তু সবাই সেটা রাখতে চায় না। একবার তার সৌরভ নিয়েই ছুঁড়ে ফেলে দেয়। তোমাকে তাই সাবধান করছি সতর্ক থেকো।
তার কথায় আমি ভালো মেয়ের মতো নাড়লাম। তিনি হয়তো আরো কিছু বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা আর বলা হলো না। দরজা আবারো কেউ নক করল। রিনু এসেছে। তাকে দোকানে পাঠানো হয়েছিল কিছু আনার জন্য হয়তো। পলিথিন ব্যাগ টা আম্মু কে দিয়ে আমার কাছে চলে আসে সে।
রিনু কে পড়িয়ে বের হলাম তোহার বাসায় যাওয়ার জন্য বের হই। রাস্তায় হাঁটছি আর রিনুর আম্মুর কথা গুলো ভাবছি। তার মানে আমাকে আর আহিয়ান কে দেখেছিলেন একসাথে। আর সেটা একবার না অনেকবার তাইতো এই কথা বলেছেন। এসব ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। কারন তিনি আর যাই বলুক না কেন এসব আমার ভালোর জন্য ভেবেই বলেছেন। তিনিও আমার ভালো চান তাহলে !
.
সন্ধ্যায় উনি আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলেন। ইয়ান নাকি তাকে বলে দিয়েছে জলদি জলদি বাসায় ফিরতে। দু চার বার ফোন ও দিয়ে ফেলেছে বাইকে চালানোর সময়। তাই আর উনি আজ থাকলেন না। আমি ঘরে না গিয়ে গেলাম দাদা দাদী’র কাছে। কিছুক্ষণ তাদের সাথে গল্প করার জন্য’ই গেলাম তাদের কাছে। অতঃপর গল্প করে বের হতে অনেক দেরি হয়ে গেল। ঘরে এসে দেখি ঘরের দরজা খোলা। এর মানে মিতু আর মুন্নি আপু চলে এসেছে।
ঘরে এসে ব্যাগটা বিছানায় রেখে বসে পড়লাম। মিতু আপু রান্না ঘর থেকে বলল,
“নিহা চলে এসেছিস।
“হুম আপু।
“এতো দেরি হলো যে!
“আরো আগেই এসেছি, দাদির কাছে ছিলাম।
“ওহ আচ্ছা!
বাথরুম থেকে মুন্নি আপু বের হলো। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে আমাকে বলল,
“বাসায় আজ কেউ এসেছিল!
“না তো।
“তোর সাথে দেখা করতে কেউ আসে নি।
“না তো।
“কোন মেয়ে!
আমি ভ্রু কুঁচকে বলি,
“না।
আপু চোখ মুখ শক্ত করে বলে,
“কোন ছেলে!
আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলাম। মিতু আপূ হাতে খুন্তি নিয়ে রান্না ঘর থেকে বের হয়ে বলল,
“কি সব বলছিস তুই মুন্নি!
মুন্নি আপু কোন ভাবান্তর হলো না। সে তোয়ালে রেগে বিছনায় গা এলিয়ে দিয়ে শীতল গলায় বলল,
“কি জিজ্ঞেস করলাম নিহা, কোন ছেলে এসেছিল।
“ননা তো!
“তুই সিউর।
আমি হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম। আসার মধ্যে শুধু আহিয়ান এসেছিল। ওর কথা বললে সবাই এখন খারাপ ভাববে। মুন্নি আপু আবারো বলে উঠে,
“কিছু বলছিস না কেন?
মিতু আপু বলে,
“ও যখন একবার না বলেছে তারপরও এতোবার জিজ্ঞেস করছিস।
“করছি তার কারন আছে।
“কি কারন!
মুন্নি আপুর কথায় আমার বুক কেঁপে উঠলো। পুরো শরীর কাঁপতে লাগল। মুন্নি আপু বিছানার ওপাশ থেকে একটা জ্যাকেট বের করে বলল,
“এটা কার নিহা!
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি। এই জ্যাকট তো আহিয়ানের। তার মানে উনি জ্যাকেট নিতে ভুলে গেছেন আর এটা মুন্নি আপুর হাতে পড়েছে। ইয়া আল্লাহ এটাই বাকি ছিল। শেষমেষ মুন্নি আপু।
“কিরে কিছু বল!
“আপু!
মিতু আপু বলে,
“হয়তো এটা নিহা’র।
“কিন্তু এটা ছেলেদের।
“এখন কি ছেলে আর মেয়ে আছে নাকি। যার যেটা পছন্দ সে সেটাই পরে।
“কিন্তু নিহা তোকে তো কখনো এটা পড়তে দেখে নি।
আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলি,
“আপু এটা আমার না।
মিতু আপু কপাল কুঁচকে আমার দিকে তাকায়। মুন্নি আপু হেসে বলে,
“জানতাম। এখন বল এটা কোন ছেলের!
“কোন ছেলের না আপু। এটা ইতি’র। গতকাল আমরা দু’জন বের হয়েছিলাম না। ইতি এই জ্যাকেট পড়ে এসেছিল। পরে গরম লাগছিল বলে খুলে আমার হাতে দেয় আর আমি নিয়ে আসি।
“কই আমি তো কাল তোর হাতে এটা দেখলাম না।
“হাতেই তো ছিল। হয়তো তুমি খেয়াল করো নি।
“কিন্তু..
বলার আগেই মিতু আপু বলে,
“তুই কখনো ভালো ভাবে কিছু্ই দেখিস না। এটা ওর’ই ছিল হয়তো তুই খেয়াল করিস নি। এখন বাদ দে তো এসব।
বলেই মিতু আপু রান্না ঘরে চলে গেল। মুন্নি আপু খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে জ্যাকেট টা আমার কাছে দিল। বাহ কি সুন্দর মিথ্যে বললাম আমি। যদিও মনে হচ্ছে না মুন্নি আপু সেটা বিশ্বাস করেছে। তার মনে নিশ্চিত এই ব্যাপারে কিছু চলছে।
.
পরপর তিনদিন ভার্সিটিতে গেছি, আহিয়ান তিনদিন’ই চিপকে আমার সাথে লেগেছিল। আমাকে ভার্সিটিতে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে ক্লাস শেষ হওয়া অবদি ক্লাসের বাইরে থাকতো। নিতি’র সাথে এই তিনদিন কোন কথা বলে নি সে। শুধু তিনি না আকাশ ভাইয়া ও চুপ। এর মাঝে ঘটেছে আরেকটা কান্ড! ইতি আমার আর আহিয়ানের বিয়ের ব্যাপারটা জেনে গেছে। এই নিয়ে বেশ হইচই করেছে সে। তবে আমি তাকে জানিয়ে দিয়েছি একথা যেন সবাই না জানে। কারন আহিয়ানের মা বাবা এখনো বিয়ের কথা জানে না। তারা জানার আগে অন্যকেউ এই ব্যাপারে জানলে সেটা আহিয়ানের বাবার কানে যেতে সময় লাগবে না। নিজের ছেলের বিয়ের কথা অন্য জনের মুখ থেকে শুনলে অবশ্যই তার সেটা ভালো লাগবে না!
বলা বাহুল্য আহিয়ান টিনা থেকে শুরু করে নাহান এদের কারো সাথেই কোন কথা বলছে না। এখানে নাহান আর আনাফ ভাইয়া কিছু করে নি সেটা ঠিক তবে এতো কিছু দেখেও তারা কিছু বলেনি তাই তাদের উপর আহিয়ানের ক্ষোভ জমে আছে।
.
আজ ক্যাটিনে বসে আমরা চারজন গল্প করছি। কিছুক্ষণ পর পরই খিলখিলিয়ে হাসছি সবাই শুধু আহিয়ান বাদে। উনার হাসি অমাবস্যার চাঁদের মতো। সবসময় দেখা যায় না।
এর মাঝেই তারা সবাই এসে উপস্থিত হলো ক্যান্টিনে। নিতি আমার দিকে একবার তাকাল। আমি ঠিক আহিয়ানের পাশে বসে আছি। এটা দেখে যে তার বেশ জ্বলছে সেট আমি বুঝতে পারছি। এদের সবার সাথে আজ সিফাতকেও দেখা যাচ্ছে। যদিও গত ৩ দিন ওর মুখ দর্শন হয় নি।
তারা সবাই আহিয়ানের কাছে সরি বলল। আহিয়ান বলল,
“আমার সাথে কিছু করেছিস যে সরি বলেছিস।
নিতি উঠে আমাকে সরি বলল। আহিয়ান উঠে দাঁড়াল। আমার হাত ধরে বাইরে বের হলো। পেছন পেছন বাকি সবাই বের হলো। ভার্সিটির ক্যাম্পাসে সামনে আসতেই নিতি এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“সরি তো বলছি তারপরও এতো ইগনোর কেন করছিস!
আহিয়ান আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
“সবার সামনে যেভাবে অপমান করেছিস তেমনি সবার সামনে ওর কাছে ক্ষমা চাইবি। পুরো ভার্সিটি দেখবে তোকে ক্ষমা চাইতে।
“আহি পাগল হয়েছিস।
“তোর কাছে যা মনে হয়। ৩০ সেকেন্ড দিলাম এর মধ্যে ভেবে নে কি করবি। ক্ষমা চাইবি নাকি ওকে নিয়ে চলে যাবো আমি।
নিতি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। ঠিক ৩০ সেকেন্ড পর’ই আহিয়ান আমার হাত ধরে চলে যেতে নিলে নিতি বলল সে সরি বলবে।
অতঃপর পুরো ভার্সিটির সামনে তারা সবাই আমার কাছে ক্ষমা চাইলো। অন্যান্য স্টুডেন দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখতে লাগল। আমি কিছু বলতে যাবো এর আগেই আহিয়ান আমার হাতটা খপ করে ধরল। এর মানে হলো চুপ থাকো। আমি চুপ হয়ে গেলাম।
ক্ষমা চাওয়ার কিছুক্ষণ পর নিতি বলে উঠে,
“কি হলো নিহা ক্ষমা করবে না নাকি।
ইতি এর মাঝে বলে উঠে,
“হেনস্তা করার সময় মনে থাকে না এখন এসেছে সরি বলতে।
তার কথায় আকাশ ভাইয়া তার দিকে তাকাল। ইতি একটা মুখ ভেংচি দিল। আকাশ ভাইয়া মুচকি হাসি দিল। নিতি বলে উঠে,
“আমার পক্ষে যেভাবে সরি বলা দরকার সেভাবেই বলেছি। এখন যদি বলো পা ধরে ক্ষমা চাইতে তাহলে আমি তাই করছি!
ইতি পাশ থেকে বলে উঠে,
“তাই করো।
ইতির কথায় সবাই চোখ ঘুরিয়ে তার দিকে তাকায়। ইতি কাউকে পাত্তা দেয় না। নিতি আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি বলে উঠি,
“আরে না না আপু! কি করছো? আমি ক্ষমা করে দিয়েছি তোমাদের সবাইকে!
“বাঁচালে আমায়!
আনিকা আমার সামনে এসে হাত বাড়িয়ে বলল,
“তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড! যেহেতু তুমি আহি আর আকাশের ভালো বন্ধু তাহলে আমাদের ও বন্ধু!
আমি আহিয়ানের দিকে তাকালাম। উনি বললেন,
“তোমার ইচ্ছা!
আমি হেসে হাত বাড়িয়ে দিলাম। দুজনেই হাত মিলালাম। টিনা, নিতি তারাও হাত মিলাল! তবে নিতির হাসি আমাকে যেন অন্যকিছু বলছিল!
.
কয়েকদিন পর..
মনে হচ্ছে আজকের সারা দিনটাই আমার ভালো যাবে। দিনের শুরু ভালো হলে নাকি সবকিছুই ভালো হয়। আর আমার সকাল শুরু হলো ভোরের আকাশ দেখে। চমৎকার ছিল এইটা!
বাইকে করে চলে এলেন উনি। আমি সাথে সাথেই ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে গেলাম। উনার বাইকে চড়ে বসলাম। দুজনেই একসাথে এলাম ভার্সিটিতে!
আমাকে নামিয়ে দিয়ে উনি আবারো বাইক ব্যাক করলেন। আমি বলে উঠি,
“চলে যাচ্ছেন যে!
“আকাশের গাড়ি মাঝরাস্তায় খারাপ হয়ে গেছে। ওর কাছে যাচ্ছি।
“ওহ আচ্ছা!
অতঃপর উনি চলে গেলেন। আমি একা একা এসে ক্লাসরুমে বসলাম। অপেক্ষা করছি ইতি’র! প্রায় অনেকক্ষণ”ই বসে রইলাম এভাবে। ইতি এখনো আসে নি।
হঠাৎ করেই ক্লাসে সিফাত এলো। সে ইশারায় আমাকে ডাকছিল। যদিও কয়েকদিন আগেই তার সাথে সবকিছু ঠিক হলো আমার। খুব ভালো ব্যবহার করেছে এ ক’দিন সে। আহিয়ান আমাকে বলেছে সিফাত কে সে তার ছোট ভাইয়ের মতো দেখে!
আমি সিফাতের কাছে যেতেই সিফাত বলল,
“আহি ভাইয়া তোমায় ডাকছে।
“চলে এসেছেন উনি।
“হুম!
আমি ক্লাসরুম থেকে বের হলাম। আমার পেছন পেছন সিফাতও এলো। আমি সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে যাবো সিফাত বলে উঠে,
“আরে আরে নিচে কোথাও যাচ্ছো!
“উনি!
“ভাইয়া তো উপরে গেছেন।
“উপরে!
“হুম।
সিফাতের কথা বিশ্বাস করে আমি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। উপরের ক্লাসরুম গুলো বরাবর খালিই থাকে। সিফাত আমাকে কোনার রুমে চলে যেতে বলল। বলেই আবারো সিঁড়ি’র দিকে গেল। আমি ভেবেই নিলাম সিফাত সত্যি বলছে। তা না হলে আমাকে রেখে সে চলে যেত না। আমি হাঁটতে হাঁটতে কোনার রুমে চলে এলাম। রুমটা অন্ধকার নয়। বেশ আলো আছে এতে। আমি আহিয়ান কে ডাকতে ডাকতে রুমের ভেতরে চলে এলাম। ক্লাসরুমটা খুব বড়। পুরো ক্লাসরুম খুঁজেও তাকে না পেয়ে পিছনে ফিরতেই সিফাত কে দেখতে পেলাম।
#চলবে….
#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৭
তাকে দেখেই ভয়ে আমি পিছিয়ে গেলাম। সে আমার কাছে আগাতে লাগলো। তার মুখের একধরনের হাসি দেখতে পাচ্ছি। এ হাসির অর্থ আমি জানি। খালেদ কে দেখেছি এই হাসি হাসতে। আমি তার পাশ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করার সময় সে আমার হাত ধরে ফেলল।
আমি তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। সে আরো শক্ত করে আমার হাত ধরল।
“সিফাত কি করছো।
সিফাত হেসে বলল,
“তোমার মতো বুদ্ধিমান মেয়ের কাছে এমন প্রশ্ন আশা করি নি। তুমি কি বুঝতে পারছো না কিছু!
“না পারছি না! তুমি আমার হাত কেন ধরেছো ছাড়ো।
“আমি তো শুধু হাত ধরলাম। কিন্তু আমার কাছে এ খবর কাছে আহিয়ান ভাইয়া নাকি রাত বেরেতে তোমার বাসায় ও যায়।
“সিফাত! কি সব বলছো তুমি এসব।
“চিৎকার করে শক্তি অপচয় করে লাভ নেই। কেউ আসবে না। আর চিৎকার কেন করছো, তোমার জন্য অনেক ভালো অপশন এনেছি আমি!
আমি ভ্রু কুঁচকে ওর দিকে তাকালাম। সিফাত আমার হাত ছেড়ে দিল। আমি বলে উঠি,
“অপশন!
“হ্যাঁ , এই ধরো আহিয়ান ভাইয়া তোমাকে যতটুকু দেয় তার চেয়ে বেশি আমি দেবো!
সিফাতের কথা গুলো আমার শরীরে কাঁটার মতো বিঁধতে লাগলো। হুট করেই একটা চড় মেরে দিলাম ওর গালে। সিফাত রক্তবর্ণ ধারণ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মুখ চোখ শক্ত করে বলি,
“কি মনে হয় কি তোমার, এতো বাজে তোমার ভাবনা চিন্তা ছিঃ। কতোটা নিচ তুমি!
“ওহ আচ্ছা তুমি করলে কিছু না আর আমি করলেই নিচ।
“আর একটা কথা বললে..
“কি করবে মারবে আমায়, চড় মারবে।
“পুলিশে দেবো তোমায় আমি।
সিফাত জোরে জোরে হেসে বলল,
“আরে ডার্লিং এর আগে তুমি এখান থেকে তো যাও।
“তোমার মনে হয় তুমি আটকে রাখতে পারবে আমায়। কখনো না।
“তোমার ধারনা নেই আমি কি করতে পারি।
বলেই আমার দিকে আগাতে লাগলো। আমি পিছনে যেতে যেতে বলি,
“তুমি কিন্তু এটা ঠিক করছো না সিফাত।
“আমি জানি আমি করছি!
আমি কিছু বলতে যাবো এর মাঝেই ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা আমার হাতেই ছিল। আমি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান। আমি ফোনটা রিসিভ করতেই যাবো এর আগেই সিফাত আমার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিল। আমি ওর হাত থেকে ফোনটা নিতে যাবো সে আমার হাত ধরে পিছনে ঘুরিয়ে নিল। হেসে বলল,
“বাহ আহিয়ান! কি ফোনটা আহিয়ান ভাইয়া দিয়েছে নাকি।
“সিফাত ছাড়ো আমায়!
সিফাত কলটা কেটে ফোনটা ফেলে দিল। আমাকে ছুড়ে সামনে ফেলে বলল,
“তোমাকে ফোন না আরো অনেক কিছু দেবোই আমি।
“সিফাত তুমি তোমার সীমা পার করছো।
“আহিয়ান ভাইয়া করলে কিছু না আর আমি করলেই দোষ বাহ! আমি তো ঠিক ততোটুকুই চাচ্ছি, যতটুকু আহিয়ান ভাইয়া পেয়েছে!
“বন্ধ করো তোমার বাজে কথা!
“কেন মিথ্যে বললাম নাকি আমি।
বলেই সিফাত আবারো সামনে আগাতে থাকে। আমি আশপাশ তাকিয়ে দেখি দরজা খোলা। একবার সিফাতের দিকে তাকাই। সে আমার দিকেই আগাচ্ছে। আমি দরজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠি,
“আহিয়ান আপনি!
আহিয়ানের নাম শুনে সিফাতের মুখের রং উড়ে যায়। সে মুখ ঘুরিয়ে দরজার দিকে তাকায়। আমি দ্রুত তাকে ধাক্কা দিয়ে দরজার দিকে দৌড়ে যাই।
ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে এসেও দৌড়াচ্ছি আমি, সিফাত আমার পিছনেই। দৌড়াতে দৌড়াতে সিড়ির কাছে চলে আসি। পিছনে ঘুরে আবার সামনে ঘুরতেই কারো সাথে ধাক্কা খাই।
সামনে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান। তাকে দেখেই আমি চমকে উঠি। আহিয়ান দুই হাত দিয়ে বাহু ধরে বলে,
“কি হয়েছে?
“আহি…আহিয়ান! আহিয়ান আমি।
“শান্ত হও, মাথা ঠান্ডা করো।
আমি আহিয়ানের হাত আঁকড়ে ধরি। ভয়ে আমার মুখ দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না। শুধু ঘামছি আমি। পুরো শরীর কাঁপছে আমার। আহিয়ান বার বার আমায় জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে? আমি হাতের ইশারায় তাকে ওই ক্লাসরুম দেখলাম। আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে সেখানে তাকাল।
অতঃপর আমাকে বলল,
“কে আছে ওখানে?
আমি নিশ্চুপ!
“আচ্ছা চলো আমরা দেখি।
বলেই আমার হাত ধরে টানল। আমি সেখানেই স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। আহিয়ান আমাকে আশ্বাস দিয়ে সেই রুমের কাছে নিয়ে গেল। রুমের দিকে উঁকি দিতেই থমকে গেলাম। কেউ নেই রুমে। আহিয়ান আমাকে নিয়ে রুমের ভিতরে নিয়ে এলো। নিচে আমার ফোনটা পড়ে আছে। আহিয়ান আমাকে বেঞ্চে বসিয়ে ফোনটা উঠিয়ে আমাকে দিলো। আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার হাতে হাত রেখে বলল,
“তুমি এখানে কেন এসেছিল।
আমি বির বির করে বলি,
“আপনি এখানে ডেকেছিলেন আমাকে।
আহিয়ানের কানে হয়তো কিছুই যায় নি। সে অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। একপর্যায়ে আহিয়ান দাঁড়িয়ে আমার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে থাকে। আমি কিছুটা হলেও শান্ত হই। আমি স্বাভাবিক ভাবে বলি,
“আহিয়ান এখানে কিছু হয়েছিল?
“কি হয়েছিল!
“আহিয়ান এখানে কেউ একজন তো ছিল। কিন্তু সে নেই।
আহিয়ান ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকাল। আমি উত্তেজিত হয়ে বলি,
“আহিয়ান আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন। এখানে কেউ ছিল। আমি তার সাথেই এখানে এসেছি। সে আপনার নাম করে আমাকে এখানে নিয়ে আসে।আমার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করে। কিন্তু এখন সে নেই এখানে!
আহিয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তুমি জানো তো এখানে আসার রাস্তা আর যাবার রাস্তা একটাই।
“আহিয়ান আমি সত্যি বলছি।
“শান্ত হও, আমি জানি তুমি সত্যি বলছিলে। তুমি হয়তো হ্যালুসিনেশনে ছিলে তাই তোমার এমন মনে হচ্ছে।
আমি দাঁড়িয়ে বলি,
“আহিয়ান আপনি আমাকে পাগল বলছেন!
“একদমই না। পাগল’রা মুখে মুখে তর্ক করে না। হ্যালুসিনেশন হলেই সে পাগল হয় না। এটা মানুষের মনের ভুল। ভ্রম বলতে পারো।
আমি চুপ হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে থাকি। কি করে প্রমাণ করবো আমি এখানে কেউ ছিল। কেউ এখানে নিয়ে এসেছিল আমায়। আমার মুখের কথা আহিয়ান বিশ্বাস করছে না। সে আমাকে বলেই দিচ্ছে এটা আমার হ্যালুসিনেশন কিন্তু আমি জানি এটা সত্যি ছিল।
আহিয়ান আমাকে বলল,
“চল ক্লাসে চল।
“আপনি এখানে কিভাবে এলেন।
“আমাকে একজন বলল তোমাকে এখানে আসতে দেখেছে।
“আমার সাথে কেউ ছিল না।
“না! তুমি একা এসেছ!
আহিয়ানের কথায় আমি দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এই কারনেই উনি এতো সহজে বলে দিলেন আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আদৌও কি আমি ঘোরের মধ্যে ছিলাম! সেটা যদি না হয় তাহলে সিফাত কোথাও! তার তো এখানেই থাকার কথা। এখানে আসা আর যাবার রাস্তা একটাই। সিফাত গেলে তো আমাদের সামনে দিয়েই যাবে। রুমের জানালায় গ্রিল দেওয়া। সেখান দিয়ে লাফ দেওয়া সম্ভব না। তাহলে!
.
অতঃপর দুজনেই একসাথে নেমে গেলাম। সবকিছুই ধোঁয়াশা লাগছে। নিচে নামতেই দেখি সিফাত আকাশ ভাইয়ার সাথে। তার সাথে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে। এটা দেখার পর আমার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিল। আহিয়ান তো বিশ্বাস’ই করছে সেখানে কেউ ছিল। এখন যদি বলি সেটা সিফাত তাহলে উনি নির্ঘাত আমাকে পাগল বলেই দাবি করবেন।
সিফাত আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করল। আমি উওর না দিয়ে হেঁটে ক্লাসরুমে চলে গেলাম। সবকিছু’ই গন্ডগোল লাগছে আমার কাছে। কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছি না আমি। এদিকে আমার পাশে বসে ইতি বক বক করেই যাচ্ছে।
.
ক্লাসের শেষে আহিয়ানের বাইকে চড়ে রিনুর বাসায় যাচ্ছি। আমার মাথায় এখনো সেই কথা। আহিয়ান হঠাৎ আমাকে বলে উঠে,
“তুমি এখনো সেই কথা নিয়ে ভাবছো।
“না।
“হ্যাঁ তুমি ভাবছো।
“আমি বললাম তো না।
“না ভাবলে এখানে বসে আছো কেন? তোমাকে গন্তব্য তো চলে এসেছে।
আমি আশপাশ তাকিয়ে দেখি আসলেই রিনুর বাসার সামনে চলে এসেছি। আমি দ্রুত বাইক থেকে নেমে গেলাম। আহিয়ান বলে,
“এতো ভেবো না মাথা ফেটে যাবে।
“না আমি ভাবছি না কিছু!
“আচ্ছা! সন্ধ্যার সময় ওখানে দাঁড়াব।
“না দরকার নেই।
“কেন?
“আজ অর্ণ পড়বে না। ওর নানু বাড়ি যাবে।
“তাহলে তুমি ফোন করে বলো কোথায় আসবো।
“দরকার নেই। তখন আলো থাকবে আমি একাই যেতে পারবো।
“আচ্ছা!
অতঃপর আহিয়ান বাইক নিয়ে চলে গেল। আমি রিনু কে পড়াতে গেলাম। যদি এর মাঝেও আমার মাথা থেকে এসব বের হয়। অন্য কোন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখলে হয়তো মাথা থেকে এসব বের হয়ে যাবে। তবে আমি এটা জানবোই এখানে কি হয়েছিল। সিফাত হঠাৎ করেই কি করে উধাও হলো।
.
অর্ণ কে পড়াতে হবে না বলে তুহিন কে পড়িয়ে বাসায় না গিয়ে পার্কে এসে বসে রইলাম। এখন হচ্ছে বিকাল বেলা। দিনের এই সময়টায় সবচেয়ে সুন্দর হয়। পার্কে কিছু বাচ্চারা খেলছে। মায়েরা গল্প করছে। পাখিরা উড়ছে। আমি একটা বেঞ্চে বসে এসব দেখছি। সময়টা খারাপ না।
হঠাৎ করেই “ভূতনি” ডাকটা কানে এলো। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে ওদিকে তাকিয়ে দেখি আহিয়ান আসছে বাদাম খেতে খেতে। আমি ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছি। সে এসেই আমার পাশে বসল। আমার দিকে বাদামের প্যাকেট দিয়ে বলল,
“ভূতনি বাদাম খাবে।
“আপনি এখানে কেন?
“কি স্বভাব তোমার, জিজ্ঞেস করছি উওর দিবা তা না করে আবার জিজ্ঞেস করছো। না খাও!
বলেই আমার হাতে ধরিয়ে দিল। আমি উনার হাতেই প্যাকেট টা রেখে বলি,
“খাবো না। এখন বলুন এখানে কি করছেন!
“আসলে কি বলো তো, ১ দিনের সময় ৩ রকম। সকাল বেলা, দুপুর বেলা আর সন্ধ্যা বেলা। এই ৩ বেলা তোমার সাথে ঝগড়া না করলে আমার জমে না।
আমি উনার দিকে একবার তাকিয়ে আবারো সামনে তাকালাম। একটা বাচ্চা মেয়ে বেলুন হাতে নিয়ে খেলছে। ভালোই লাগছে দেখতে। আহিয়ান বলে উঠে,
“বুঝলে ভূতনি তুমি শীঘ্রই তোমার স্বামীর বিয়ের দাওয়াত মানে!
আমি কপাল কুঁচকে বলি,
“কি?
আহিয়ান বাদাম মুখে দিয়ে বলে,
“হুম! আজ নিতির মা আর বাবা আমাদের বাসায় এসেছিল নিতি আর আমার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে! আর মনে হচ্ছে বিয়েটা হবে!
উনার কথায় আমি ভ্যাবলার মত তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।
#চলবে….
#ভালোবাসার_ফোড়ন_২
#মিমি_মুসকান
#পর্ব_৩৮
“কনগ্রেচুলেশন! কি এটা শুনতে চেয়েছিলেন।
“হুম থ্যাংকু!
“আজব আপনি মজা করছেন।
“আরে মজা করার কি আছে। তোমার স্বামী আমি হলেও আমার মা বাবার কাছে তো এখনো আমি সিংগেল তাই না।
“কিন্তু আপনি যে বললেন আপু আসলে আমাকে আপনার বাড়িতে নিয়ে যাবেন।
“তুমি যাবে!
উনার কথা শুনে হতচকিয়ে গেলাম। থমকে গিয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। উনি মুচকি হেসে বলে,
“তুমি তো আমাকে স্বামী হিসেবেই মানো না, ডির্ভোস দিয়ে দিবে। তাহলে অন্য কাউকে বিয়ে করলে কি খুব বেশি ক্ষতি হবে তোমার।
“মোটেও না, একটা না দশটা বিয়ে করুন।
বলেই উঠে চলে এলাম। রাগে পুরো শরীর জ্বলছে। এটা কি ধরনের কথা! আমি না হয় রেগে বলেই ছিলাম আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি না। এটা ধরে কি বসে থাকতে হবে না কি। এতোদিন এতো কেয়ার করছিলো এগুলো কি ছিল। সব’ই কি নাটক নাকি। এখন বলছে বিয়ের দাওয়াত দিতে এসেছে। ভালোই করুক বিয়ে। এমন স্বামী আমার দরকার নেই। যে বুঝবে না আমি রেগে আছি না খুশি আছি। হুহ!
ঘরে এসে ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দিলাম। পুরো শরীর রাগে কাঁপছে আমার। আমি উঠে একবার রান্না ঘরে গিয়ে দাঁড়ালাম। আচ্ছা উনি কি এটাও বুঝে নি আমি রেগে ওখান থেকে চলে এসেছি। নাকি ভাবছে কোন কোন মেয়ে কে বিয়ে করবে। বলেই তো এলাম ১০ টা বিয়ে করতে। নিশ্চিত মেয়ে ঠিক করছে বিয়ে করার জন্য!
অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম উনি আর এলেন না। আমি উঠে বিছানায় ধপাস করে বসলাম। ফোনটা হাতে নিয়ে ভাবছি ফোন করবো কি না। করবো ফোন নাকি করবো না। একবার নাম্বার টা ডায়াল করে আবারো কেটে দিলাম। নিজের মন কেই বোঝাতে পারছি না কি করবো। রেগে ফোনটাকেই ধপাস করে ফেলে দিলাম।
বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। সন্ধ্যা নেমে আসছে। বাইরে থেকে আজানের ধ্বনি আমার কানে আসছে। আপুরা বলেছে আজ নাইট ডিউটি করবে আসবে না। ঘরে কোন রান্না নেই কিছু করতেই মন চাইছে না। বেশ মন খারাপ লাগছে। কি করে বললেন উনি, নিতি কে বিয়ে করবেন। বেশ কান্না পাচ্ছে। চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। আমি কাঁদছি! কিন্তু কেন কাঁদছি? কষ্ট কেন পাচ্ছি আমি। জানি না, তবে কাঁদতে বেশ ভালো লাগছে। এসময় বৃষ্টি হলে বেশ ভালো হতো তবে এখন বৃষ্টির মৌসম নয়।
কাঁদতে কাঁদতে কখন যে বিছানায় ঘুমিয়ে পড়েছি টের পাই নি। প্রায় অনেকক্ষণ’ই ঘুমালাম আমি। ঘুম থেকে উঠি দেখি ভালোই রাত হয়েছে। এতোক্ষণ ঘুমালাম কিভাবে? মাথায় হাত দিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকার পর মনে হলো মাথা ঝিম মেরে আছে। একটু চা খাওয়া দরকার। ক্ষিদেও পেয়েছে খুব!
আমি উঠে ঝিমুতে ঝিমুতে রান্না ঘরে গেলাম। ঘরে বিস্কিট আছে, চা আর বিস্কুট খেয়ে নেই। ক্ষিধেও মিটবে মাথা ব্যাথাও কমবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ঘরে চুলার পানি বসিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ঘর থেকে ফোনের টিং টিং শব্দ বাজছে। কেউ আমাকে স্মরণ করছে কিন্তু আমার এখান থেকে উঠতে মন চাইছে না। রিং বাজতে বাজতে ফোন বন্ধ হয়ে গেল।
আমি এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে, আবারো ফোনের টিং টিং শব্দ বাজতে লাগলো। আমি এবার হেঁটে ঘরে এসে ফোন হাতে নিয়ে ধপাস করে বসলাম। উনি ফোন করেছেন। ফোনটা রিসিভ করে কানে নিয়ে বলি,
“বলুন!
“সালাম দিতে জানো না।
“হুম জানি। আসসালামুয়ালাইকুম হয়েছে! এখন বলুন ফোন কেন করেছেন?
“ফোন ধরছিলে না কেন?
“আপনি তো খুব অসভ্য মশাই। ফোন কেন করেছেন তা জানতে চাইছি তা না বলে আবার জিজ্ঞেস করছেন..
বলার আগেই ওপাশ থেকে বলল,
“এই রাখো তোমার লেকচার! দরজা খোল ঘরের।
“দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকলে নক’ই করতে পারতেন। আমাকে আবার ফোন করলেন কেন?
ওপাশ থেকে লাইন কেটে দাওয়ার শব্দ এলো। ফোন কেটে দিয়েছেন। কি ঝামেলা! আমি দরজা না খুলে রান্না ঘরে গেলাম। আমার আগে চা খেয়ে মাথা ঠান্ডা করা দরকার। পানি ফুটে এসেছে। পানিতে চা পাতা ফেলে, বিস্কিট বের করলাম। একটা বিস্কিট মুখে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। চা হয়ে এসেছে। দু কাপে চা ঢেলে বিছানায় এসে রাখলাম। বিস্কিট খেতে খেতে দরজা খুললাম। গম্ভীর মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন উনি।
“এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে, কখন ফোন করেছি আমি।
“হিসেব করি নি। ভিতরে আসলে আসুন না হলে দরজা বন্ধ করে দিচ্ছি।
“তোমাকে দেখে এমন কেন লাগছে।
“কেমন লাগছে!
“কিছু না!
বলেই ঘরে এলেন। বিছানায় বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন,
“কাঁদছিলে তুমি!
“আমার মুখ দেখে এটা মনে হলো।
( কিছু না বলে আবারো চায়ের কাপে মুখ দিলেন )
“মাথা ব্যাথা করছিল বলে এমন দেখাচ্ছে!
উনি কথা না বলে নিজের গায়ের জ্যাকেট খুললেন। আমি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বলি,
“জ্যাকেট খুলেছেন যাবার সময় মনে করে নিয়ে যাবেন। জানেন আপনার আগের জ্যাকেটের জন্য কি বিপদে পড়েছি।
“ওটা তোমার বাসায় ছিল, এদিকে ঘরে খুঁজতে খুঁজতে আমি কাহিল।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চায়ের কাপে চুমুক দিলাম। এর মাঝেই দরজা কেউ নক করল। আমি হঠাৎ করেই চমকে উঠলাম। উনি শান্তিতে বসে বসে চা খাচ্ছেন। আমি উনার দিকে তাকিয়ে বলি,
“কে এলো এখন!
“আমি কিভাবে বলবো?
“আমি এখন কি করবো?
“কি করবে মানে! তোমার সাথে তোমার স্বামী আছে। ভয় পাওয়ার কি আছে এতো।
“আপনি বুঝতে পারছেন না।
“বুঝার কিছু নেই। যাও দরজা খুলে দিয়ে আসো।
“আমি বলছি কি?
“তুমি উঠবে নাকি আমি উঠবো।
কথা না বাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম। আপুরা আজ আসবেনা। তাহলে কে এলো? এসময় কারো তো আসার কথা না। দাদি এলো নাকি। ভয়ে আমার বুক কেঁপে উঠছে। কাঁপা কাঁপা হাতে দরজা খুললাম। দরজার ওপাশে আপুদের দেখে চক্ষু আমার ছানাবড়া। আপু আমার দিকে তাকিয়ে সোজা ঘরে ঢুকে এলেন। আহিয়ান শান্ত ভাবে বসে ফোন টিপছে। তারা দুজনেই অবাক!
মুন্নি আপু বলে ওঠে,
“দেখলে আপু! আমি বলেছিলাম তোমায় এখানে কিছু চলছে। এখন দেখলে, বিশ্বাস হলো তোমায়। আমরা ঘরে না ঘরে এসব চলছে।
মিতু আপু হতবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি। মিতু আপু হয়তো আমার থেকে এমনটা আশা করে নি। মুন্নি আপু অনেক কথা বলছে। আমি সব শুনছি। উনি এক জায়গায় চুপচাপ বসে আছে। আজব তো কিছু শুনতে পাচ্ছেন না নাকি উনি। এখনো আগের মতো নেই এভাবে বসে আছে। মুন্নি আপু জানায় এটা তাদের প্ল্যান ছিল। সে নাকি আমায় সন্দেহ করছিল। আজ আমাকে হাতে নাতে ধরার জন্য’ই এমনটা করেছে সে। সেদিন শুক্রবার নাকি আহিয়ানের বাইকে করে আমাকে যেতে দেখেছে। এখন মনে পড়ছে কেন সেদিন এতো কথা জিজ্ঞেস করল। জ্যাকেট নিয়েই বা কেন এতো প্রশ্ন।
মুখের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। কিছু বলার পরিস্থিতি তে ছিলাম না আমি। আপু এবার রেগে যাচ্ছে। কারন সে অনেকক্ষণ ধরেই আহিয়ান কে কিছু বলছে কিছু আহিয়ান তা পাত্তা দিচ্ছে না। আপু রেগে আহিয়ানের সামনে দাঁড়িল। তার সামনে চুটকি বাজাল। আহিয়ান এবার ফোনের দিক থেকে মুখ সরিয়ে আপুর দিকে তাকাল। কান থেকে কিসব বের করে আপুর দিকে তাকিয়ে বলে,
“কিছু বলছিলেন আমায়!
আপু সহ আমরা সবাই হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আহিয়ানের দিকে। আর যাই হোক এটা বুঝতে পেরেছি উনি কিছুই শুনতে পারে নি। কানে এসব লাগিয়ে বসে ছিলেন। পারেন ও উনি। আপু রেগে বলে,
“কে তুমি এখানে কি করছো? কেন এসেছ?
উনি দাঁড়িয়ে বলেন,
“ভূতনির সাথে আই মিন নিহার সাথে দেখা করতে।
“কেন নিহা কে হয় তোমার? কয়দিন ধরে চলছে এসব। কতোদিন ধরে আসো তুমি এখানে!
“আজ প্রায় ১৫ দিন।
“এই ছেলে এতো জোর গলায় তুমি এসব বলছো কোন সাহসে। দাদা দাদী জানে এসব কিছু। আমি এক্ষুনি গিয়ে তাকে জানাচ্ছি!
বলেই আপু এদিকে আসতে নেই এর আগেই পেছন থেকে কারো গলার স্বর পেয়ে পেছনে ফিরি। তাকিয়ে দেখি দাদা আর দাদি দাঁড়ানো। দাদির হাতে ট্রে। তিনি মুখের আকৃতি ভিন্ন করে বলেন,
“কি বলবি রে তুই ছেমড়ি।
মুন্নি আপু বলে উঠে,
“ভালোই হয়েছে দাদি, তুমি চলে এসেছ। আমি এক্ষুনি যেতাম তোমার কাছে।
“কেন যেতি! আর নিহা সর দেখি সামনে থেকে। এভাবে সামনে খাম্বার মত কেন দাঁড়িয়ে আছিস।
আমি আর মিতু আপু একটু সরে দাঁড়ালাম। দাদা দাদী দুজনেই ঘরে এলেন। আহিয়ান কে দেখে দু’জনের মুখেই হাসি। দাদি ট্রে টা রেখে বলে,
“তুমি ছিলে বাবা, আর বলো না এই বুড়ো কে কিচমিস আনতে পাঠিয়েছিলাম। কিচমিস আনতে গিয়ে বুড়ো নিজেই কিচমিস হয়ে গেছে। এখন বলো পায়েসে কিসমিস না দিলে কেমন লাগে খেতে।
মুন্নি আপু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“দাদী তুমি চিনো একে।
“মরণ! কথা শোন ছেমড়ির। এটা তো আমার নাত জামাই!
মিতু আপু বলে,
“তোমার কোন নাতনির
“আমার নাতনি আবার কয়টা লা। নিহা! নিহার জামাই!
দাদি’র কথা শুনে আমার মাথায় আকাশ না ছাদ টাই মনে হলো ভেঙ্গে পড়ল। কি সব বলছে। মুন্নি আপু বলে,
“ও নিহার হাসবেন্ড।
“তোর কানে কি সমস্যা নাকি, একবার বলি শুনিস নি। দেখি নিহা!
বলেই আমার হাত টেনে মিতু আপুর বিছানায় বসাল। আমার হাতে পায়েসের বাটি দিয়ে বলল,
“নে পায়েস খা। এতো বড় একটা খুশির খবর মিষ্টি মুখ করতে হবে তো।
আমি দাদির মুখের দিকে তাকিয়ে বলি,
“হ্যাঁ!
“হ্যাঁ খা।
অতঃপর আরেকবাটি আহিয়ান কে দিল, দিয়ে বলল তাকে খেতে। আমার মনে হয় এতোক্ষণে আমি কিছু বুঝতে পারছি। আহিয়ান দাদা দাদী কে সবকিছু জানিয়ে দিয়েছে। আর মিতু, মুন্নি আপুর এখানে আসাটা কাকতালীয় ব্যাপার। তবে দেখে মনে হচ্ছে এই বিয়েতে দাদা দাদী সবচেয়ে বেশি খুশি!
পায়েসের বাটি হাতে নিয়ে আহিয়ান কে দেখছি। দাদি আমাকে একটা খোঁচা মেরে বলল, পায়েস খেতে। মুন্নি আপু এর মাঝে বলে উঠে,
“বিয়ে হয়েছে ভালো কথা, নিহা কে তাহলে ওর বাসায় কেন নিয়ে যাচ্ছে না।
মুন্নি আপুর কথায় সবাই চুপ। আহিয়ান হেসে বলে উঠে,
“আমার বউ কে আমি আজ সাথে করেই নিয়ে যাবো!
অতঃপর আহিয়ানের ফোনটা বেজে উঠে। আহিয়ান বাইরে চলে যায়। মিতু আপু আর দাদি দুজনে আমার দুই পাশে বসে। দু’জনেই বলছে আহিয়ানের কথা। মুন্নি আপু এখান থেকে চলে যায়। দাদা বসে দু’জনের কথা শুনছে। কার কথার কি উওর দেবো না ভেবে শুধু মাথা নাড়ছি।
কিছুক্ষণ বাদে একজনের প্রবেশ হলো ঘরে। আমি মাথা তুলে মেয়েটাকে দেখলাম। তাকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলাম। মেয়েটা দেখতে ভারী মিষ্টি! একটা কালো রঙের শাড়ি পড়ে আছে, শাড়ির উপরে একটা লেডিস জ্যাকেট। তবে মেয়েটাকে দেখতে খানিকটা আহিয়ানের মতো। পিছন পিছনেই প্রবেশ হলো আহিয়ানের। এখন আমি নিশ্চিত এটা আহিয়ানের বোন!
.
গাড়িতে বসে আছি আমি। আমার পাশেই আহিয়ানের বড় বোন আয়ানা। ড্রাইভিং সিটের পাশে আহিয়ান বসা। একটু আগেই সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠেছি আমি। আজ’ই আহিয়ানদের বাসায় যাবো। দাদা দাদী খুব কাঁদছিলেন আমাকে বিদায় দেবার সময়। মিতু আপুর মন ও খুব খারাপ। মুন্নি আপু কে দূর থেকেই দেখেছি। উনি আর কাছে আসে নি।
আয়ানা আপু এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এসেছে আমাকে নিতে। একটু আগেও তার ছেলে ইয়ান ফোন করেছিল। কখন আসবে, দেখা করবে বলে ছটফট করছে সে। বলা বাহুল্য আয়ানা আপুর এমন ব্যবহার আমার প্রত্যাশার বাইরে ছিল। কোনমতে তার থেকে এমন ব্যবহার আমি আশা করি নি। খুব ভালো মানুষ তিনি। আমাকে শুধু বার বার বলেই যাচ্ছে তার মা খুব ভালো। আমাকে দেখে অনেক খুশি হবে। তবে বাবা একটু রাগি। প্রথমে রেগে থাকবেন। তবে পরে তার রাগ কমে যাবে। পুরো রাস্তা জুড়েই তার এসব কথা শুনছিলাম। আয়ানা আপু নাকি বিশ্বাস’ই করে নি আহিয়ান আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে। যদিও এই কথা আমি বলি নি, আহিয়ান নিজেই বলেছে।
চৌধুরী ভবন এর সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর আহিয়ান। দুজনেই দরজার সামনে দাঁড়ানো। আয়ানা আপু ভেতরে গেছেন। আমি আহিয়ান কে বলি,
“আপনি আজ এতো কিছু করবেন আমাকে বলেন নি কেন?
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“সারপ্রাইজ!
আমি উনার থেকে মুখ সরিয়ে নেই। উনি বলে উঠেন,
“কেন ভালো লাগে নি।
“টেনশন দিয়ে বলছেন সারপ্রাইজ!
বলেই মুখ ঘুরিয়ে নেই।
“আচ্ছা ভূতনি তোমার কি মনে হয়, তোমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিবে তো!
“আপনার কি মনে হয়?
“আজ সারারাত দু’জনকেই বাইরে রাখবে। যখন আমি ছোট ছিলাম তখন আব্বু বলেছিল আমি ভুল করলে আমাকে আর বাড়িতে ঢুকতে দিবে না।
“কতরাত ছিলেন এমন বাইরে।
“কখনো ছিলাম না।
“আপনি বলতে চান আপনি কখনো ভুল করেন নি।
“ভূতনি কোথাকার! মানুষ ভুল না করে থাকে নাকি।
“তাহলে!
“কখনো ধরা পরি নি তাই! আপু সবসময় বাঁচিয়ে ফেলেছি।
“আজও তাই করবে বলে ভাবছেন।
“হুম!
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর’ই একজন ভদ্র মহিলা এলেন। আমি তাকে দেখে মাথা নিচু করে ফেলি। মহিলা টা আমার থিতুনি তে হাত রেখে মুখটা উঁচু করে তুলেন। অতঃপর মুচকি হেসে দিয়ে বলেন,
“নাম কি তোমার!
আমি আহিয়ানের দিকে তাকাই। অতঃপর বলি,
“নিহা!
“বাহ বেশ সুন্দর নাম তো!
পেছন থেকে আয়ানা আপু বলে উঠে,
“সুন্দর হবে না। দেখতে হবে তো কার পছন্দ!
বলেই আহিয়ানের দিকে তাকায়। ভুল না করলে এনি আহিয়ানের মা। আয়ানা আপুর পিছনে আরো কিছু মানুষ। তাদের সবার পরনে একরকমের পোশাক। মনে হচ্ছে তার সার্ভেন্ট। আহিয়ানের মা আমাদের দুজনকে বরন করে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করালেন।
.
আমাকে নিয়ে সোফায় বসানো হলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১০.১০ বাজে। অনেক বড় বাড়ি তবে পুরো বাড়িটাই শান্ত! আহিয়ান উঠে নিজের ঘরে চলে গেল। আহিয়ানের মা আয়ানা আপুর মতোই নাকি বলবো আয়ানা আপু তার মার মতো। দু’জনেই খুব মিশুকে। তাদের সাথে কথা বলতে গেলে অস্থির লাগে না। মা হেসে অস্থির এটা জেনে আহিয়ান আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে। তিনি এটা মেনেই নিতে পারছেন না। আয়ানা আপু বলে উঠে,
“দেখলে তো মা তোমার ছেলে দাদু কে ছাড়িয়ে গেছে।
“তা আর বলতে।
“কিন্তু মা, বাবা!
বাবার কথা বলতেই দুজনেই মুখ মলিন। আমি বেশ টের পাচ্ছি বাবা হয়তো তাদের মতো না। রাগি মানুষ! হঠাৎ একটা সার্ভেন্ট এসে বলল,
“ম্যাম স্যার চা দিতে বলেছেন।
মা উঠে দাঁড়ালেন। বাবা চা চেয়েছেন হয়তো। আমি চট করে উঠে দাড়িয়ে বলি,
“মা আমি চা নিয়ে যাই!
“তুমি!
“হ্যাঁ আমি! উনি তো আর আমাকে দেখতে আসবেন না। আমি বরং দেখে আসি!
আমার কথায় মা আর বাবা দুজনেই হেসে একাকার। অতঃপর আমি সার্ভেন্ট এর সাথে গেলাম রান্না ঘরের দিকে। সার্ভেন্ট আমাকে সব দেখিয়ে দিল। চা বানিয়ে নিয়ে গেলাম বাবার ঘরে। আমার পিছু পিছু মাও এলেন।
আমি দরজা নক করলাম, বাবা ভেতরে আসতে বললেন। একটা চেয়ারে বসে বই পড়ছেন তিনি। আমি পেছন থেকে চায়ের কাপ টা তার টি টেবিলের সামনে রেখে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইলাম। বাবা পিছনে না ফিরে চায়ের কাপ টা নিয়ে চুমুক দিলেন। অতঃপর বলেন,
“নাম কি তোমার!
“নিহা!
“চা তুমি বানিয়েছ!
“জ্বি, ভালো হয় নি খেতে।
“হয়েছে, কিন্তু চিনি এক চামচ দেবে।
“জ্বি।
“যাও এখন গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও। তোমার সাথে কাল সকালে কথা হবে।
“জ্বি আচ্ছা!
অতঃপর আমি ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। মা বাইরে দাঁড়িয়েই সব শুনছিলেন। আমি বার হতেই বাবা তাকে ডাক দিলেন। তিনি রুমে চলে গেলেন। আমি হাঁটতে হাঁটতে বসার ঘরে এসে দাঁড়ালাম। এখান থেকে দাঁড়িয়ে পুরো ঘর দেখছি। হঠাৎ করেই মনে হলো আমার পায়ের কাছে কেউ আছে। আমি তার উপস্থিত পাচ্ছি। কুকুর বা বিড়াল হতে পারে। বিড়াল হলে ঠিক আছে কিন্তু কুকুর কে আমি ভয় পাই। যাই হোক, মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকাতেই চমকে উঠলাম আমি। এটা তো…
#চলবে….