তুমি নামক অনুভূতি পর্ব-৬১ এবং শেষ পর্ব

0
1709

#তুমি_নামক_অনুভূতি
#পর্ব :৬১[অন্তিম পাতা]
#Lutful_Mehijabin (লেখা)
[কপি করা নিষেধ]

— ও আফু, আফু, আপু তো ভালো একটু দেওনা তোমার ফোনটা?

কিৎক্ষণ যাবত জারার কে অতিষ্ঠ করে তুলেছে মেহের। যার দরুন ভীষণ বিরক্ত জারা। ইতোমধ্যে মেহেরের আচরণে কিঞ্চিৎ ক্রোধ এসে জেকে বসেছে তার অন্তরালে! মেহেরের প্রত্যুত্তরে জারা ক্রোধ মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,

— ঘ্যান ঘ্যান করিস না মেহের, দিব না। যা পড়তে বস গিয়ে।

— না আপু একটু দেও।

— পড়াশোনা ছেড়ে মোবাইলের ধ্যান্দা। একবারে দিবানি কিন্তু,,

জারার উত্তর পেয়ে ও ক্ষান্ত হলো না মেহের। জারাকে ঠান্ডা করার প্রয়াসে দ্রুত জারাকে জড়িয়ে ধরলো । জারার গাল যুগল দু হাতের মধ্যে আবদ্ধ করে, আদুরে স্বরে বলে উঠলো,

— আমার সোনা আপু, কিউটি আপু, সুন্দরী আপু। একটু দেও না আফু। শুধু একটা গল্প পড়ব।

মেহেরের আচরণে বিরক্ত জারা। যার ফলে ঠোঁট যুগল হতে বিরক্তির ‘চ’ উচ্চারণ নির্গত করতে গিয়ে থেমে গেল সে। অতঃপর মেহের কে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল,

— ঢং বাদ দে মেয়ে। সর, যা গিয়ে পড়তে বয়। ভাইয়ার বকা খাওয়ার শখ হয়েছে বুঝি! যা,,

বিষন্ন হৃদয় নিয়ে জারার থেকে দূরে সরে এলো মেহের। ঠোঁট উল্টো করে জারার উদ্দেশ্য বলল,

— তুমি ভীষণ পচা আপু। দেখবা তোমার একটাও বই ও থাকবে না। কোন এক ঝড়ে তোমার বই গুলো উড়ে যাবা। পচা আপু।

মেহেরের কথার প্রেক্ষিতে জারা ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো নিমিষেই! অতঃপর মেহেরের প্রত্যুত্তরে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
— হ্যাঁ আমি পচা। আমার বইগুলো নেওয়া ধান্দা তাই না! কোনদিন ও দিব না। যা।
_________
তৎক্ষণাৎ পাংশুটে মুখশ্রীতে, সমুদ্র কক্ষে এসে উপস্থিত হলো মেহের। গাল ফুলিয়ে সোফার উপর গিয়ে নতজানু হয়ে বসলো। এক পলক সমুদ্রের মুখশ্রীতে আড়চোখে দৃষ্টি ফেলে, ওড়ানা দ্বারা সীমান্ত পর্যন্ত আবৃত করে নিয়ে, চোখ যুগল বন্ধ করে ফেলল।

মেহেরের উপস্থিত লক্ষ্য করে ফির কাজে মনোযোগ দিলো সমুদ্র। তার মুখশ্রীতে নিত্যদিনের ন্যায় গম্ভীরতা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে! স্তব্ধ হয়ে লেপটপ এর স্কিনে দৃষ্টিপাত আবদ্ধ করে রেখেছে। মেয়েটার উপর ভীষণ বিরক্তি সে। তাকে দৃশ্যমান হলেই ওড়ানা নিয়ে টানাটানি আরম্ভ করে! আজ ও বিষয়টা সমুদ্রের দৃষ্টি গোচড় হয় নি। বিরক্তিতে তপ্তশ্বাশ ত্যাগ করলো সে। খানিক বাদে আন্দাজ করতে পারল মেহের বিষন্ন হয়ে বসে! হয়তো কোন বিষয় নিয়ে মন খারাপ করে রয়েছে।আকস্মিক গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

— কি হয়েছে?

মেহের সমুদ্রের হঠাৎ প্রশ্নে অপ্রতিভ হলো। খানিক নড়েচড়ে নিম্ন কন্ঠে উত্তর দিলো।

— কিছু না।

— পড়া কম্পিলট করেছো?

— হুম।

মেহেরের হ্যাঁ বোধক মন্তব্য পেয়ে সমুদ্র গাঢ় স্বরে বলল,

— ফোন চার্জে। বেশিক্ষণ ইউস না করে সন্ধ্যার পর পড়তে বসবে।

সমুদ্রের শেষোক্ত বাক্য কর্ণপাত হতেই স্তম্ভিত হয়ে পড়ল মেহের! একপলক সমুদ্রের মুখশ্রীতে দৃষ্টিপাত নিক্ষেপ করতেই তার দেহে শীতল হাওয়া বয়ে গেল। সে যেন আশ্চর্যের চরমে! লোকটা কি করে তার হৃদয়ে সকল প্রকার পরিস্থিতি আন্দাজ করতে পারে! কি করে তার সব অভিপ্রায় পূরণ করে। নিজেকে ভাগ্যবতী ভেবে তার চোখ যুগল সজল হয়ে উঠেছে।
__________________________

আঁধারে ঢেকে রয়েছে প্রকৃতি। আষাঢ়ের ঢল নেমেছে কিৎক্ষণ পূর্বে। এক পলশা বর্ষণের ফলে স্নিগ্ধ প্রকৃতি মোহনীয় রূপে সেজে উঠেছে। এই পরিবেশে বাইরে ঘুরতে বেরিয়েছে জারা। অবশ্য একা নয় সঙ্গে তার প্রিয় মানুষটি। এতোক্ষণ যাবত ইয়াদের সঙ্গে কথা বলায় মত্ত ছিল জারা। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে সেও নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে। নিদ্রা প্রেমিকা গভীর নিদ্রায় মগ্ন! ইয়াদ বিষয়টা মোটেও প্রত্যাশা করে নি। প্রিয়তার সঙ্গে ভ্রমন করতে এসে মহা মুশকিল অবস্থায় পড়েছে সে। যার সঙ্গে সে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে এসেছে সেই কী গভীর তন্দ্রা বিলাস করতে ব্যস্ত! এতে করে বেশ ব্যতীত তার হৃদয় গহীন! দীর্ঘ ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে তাদের স্বাভাবিক সংসারের। জারা তাকে ক্ষমা করে দিয়েছে। পূর্বের ন্যায় প্রাণোচ্ছল হয়ে গিয়েছে সে। প্রতিদিন প্রায়ই ভিডিও কলে মেহেরের সঙ্গে ঘন্টা এক মুহূর্ত অতিবাহিত করে। লোকে বলে, দুই বোন একই সংসারে বেমানান! তাদের নাকি কোলাহল লেগেই থাকে। কিন্তু জারা এবং মেহেরের সম্পর্কে সম্পূর্ণ আলাদা। শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে ও বেশ ভাব তার। সবকিছুর মধ্যে বই পড়া এবং সময়ে অসময়ের নিদ্রা লেগে থাকে তার সঙ্গে। যার দরুন ইয়াদ ব্যথিত!

নির্জন স্থানে গাড়ি পার্কিং করেছে ইয়াদ। নিত্যদিনের ন্যায় আজও জারার অসময়ের নিদ্রায় ভীষণ যন্ত্রণা দিচ্ছে ইয়াদকে। তাই বর্তমানে নিজেকে প্রফুল্ল রাখার প্রয়াসে আধ ঘণ্টা যাবত জারার মায়াবী মুখশ্রীতে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখেছে সে। এই সুযোগে নয়ন তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছে! শুধু তাই নয় জারার মুখশ্রীতে দৃষ্টি রেখে বিরবির করে অনুভূতি প্রকাশ করতে ব্যস্ত ইয়াদ। মুচকি হাসির সহিত তার চোখ যুগলে অশ্রু স্পষ্ট।

জারা তার বাহুতে মাথা হেলিয়ে রয়েছে। ইয়াদ তার নিদ্রায় যেন ব্যঘাত না ঘটে তাই স্তব্ধ হয়ে বসে রয়েছে।

— এই যে আমার প্রিয়তা! এতো ঘুমান কেন আপনি? আপনি কেন বোঝেন না আপনাকে এই অবস্থায় দেখলে যে আমি নেশা হয়! আপনার ওই কোঁকড়া চুল গুলো আমাকে নিয়ন্ত্রণহীন করে তুলে। আপনার চশমার আড়ালে লুকিয়ে থাকা চোখ জোড়া আমাকে অস্থির করে তুলে। আপনি বর্তমানে যেমন আছেন ভবিষ্যতে এমন থাকবেন এই কামনা করি! আপনার বাচ্চামো আমার হৃদয়ে অদ্ভুত অনুভুতি জাগ্রত করে তুলে! আমি যে ভীষণ ভালোবাসি আমার জেবুটাকে। আমার এই ভালোবাসা নামক রহস্যে চিরকাল রবে। আপনি কখনই এই রহস্যের উম্মাচন করতে পারবেন না। লাভ ইউ ঘুম পাগলি। নিজ অজান্তেই আপনাকে আমি বেদনার সম্মুখীন করেছি। ভীষণ যন্ত্রণা দিয়েছি আপনাকে। আর কষ্ট পেতে দেব না আপনাকে। কথা দিলাম।

ইয়াদের ফিসফিসানি বাক্যগুলো জারা কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্রই নড়েচড়ে উঠলো সে। যার ফলে তার নিদ্রা মাখা আঁখি জোড়া স্বল্প কাঁপছে! তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি বিদ্যমান! মুহুর্তেই ঘুমন্ত অবস্থায় জারা আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো,

— হেই আর্মি! আমার বর্ষণ আই লাভ ইউ সো মাচ!
আই জাস্ট নিড ইউ আর্মি সাহেব।

কথাগুলো শুনেই চোখ যুগল বুঁজে ফেলল ইয়াদ। নিমিষেই তার হৃদয় পুলকিত হয়ে উঠল অজানা রহস্যে!
____________________
ঘড়ির কাঁটায় ছুঁই ছুঁই দুই। আজ অফিসে যায় নি সমুদ্র। বেলকনিতে গিয়ে বৃষ্টি বিলাস করতে ভীষণ আনন্দ হচ্ছে তার। বর্ষণের অবিরাম ঢল থামতে নারাজ! প্রকৃতির স্নিগ্ধতা সমুদ্র কে ভীষণ প্রশান্তি দিচ্ছে। আষাঢ়ের ঢলের অবিরাম বর্ষণে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে সমুদ্রের অন্তরালে! মেহের নামক অনুভূতি বারংবার তার হৃদয় গহীনে জাগ্রত হয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে যে করেই হোক, মেহের কে তার চাই। সমুদ্র পকেটে হাত প্রবেশ করিয়ে, চোখ যুগল বন্ধ করে ভেবে চলছে সেই মারাত্মক রাতের দৃশ্য! যেই রাত্রি অতীত হয়ে ও তাকে শান্তি দেই না। তার রাত্রির নিদ্রা কেড়ে নেই এখন অবধি। যে রাত্রি বেলায় মেহেরের গলা ক্ষত দর্শনের উদ্দেশ্যে সমুদ্র প্রথম লুকিয়ে মেহেরের কক্ষে উপস্থিত হয়। সেই রাত্রি যে তার কাল হয়ে দাঁড়াবে তা অপ্রত্যাশিত ছিল তার নিকট। সেদিন মেহের ঘুমন্ত মুখশ্রী দেখা নেশায় আক্রান্ত হয় সমুদ্র। যে নেশা তার অন্তরালে এক অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করে। ক্রমশ মেহের নামক অনুভূতি তার অন্তরালে আষ্টেপিষ্টে চেপে বসে। তারপর থেকেই প্রতিরাতে মেহেরের কক্ষ না গেলে তার শান্তি হতো না।
___
মেহেরের দীর্ঘ কেশ হতে বিন্দু বিন্দু জল গড়িয়ে পড়ছে। প্রকৃতির বর্ষণের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে মেহেরের কেশ বর্ষণ। ইতোমধ্যে কেশের জলে ভিজে উঠেছে মেহের। ছাদের উপর বর্ষণ দৃশ্যমান না হলেই মেহের কেশ বর্ষণ হতে দৃষ্টি সরাতে ব্যর্থ সমুদ্র। প্রকৃতির বর্ষণে চেয়ে দ্বিগুণ ইন্দ্রজাল পূর্ণ মেহেরের কেশ বর্ষণ! এতোদিন প্রকৃতির সৌন্দর্যের বারংবার মুগ্ধ হয়েছে সমুদ্র। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম! আজ সমুদ্র তার পুচকির ইন্দ্রজালে মুগ্ধ হচ্ছে বারংবার। প্রকৃতির স্নিগ্ধতা যেমন হৃদয় অদ্ভুত অনুভূতির সৃষ্টি করে ঠিক তেমনি মেহেরের স্নিগ্ধতা সমুদ্রের অন্তরালে এক অদ্ভুত অনুভূতি জাগ্রত করছে। সে অনুভূতির নাম দেওয়া বেশ জটিল। কিন্তু মেহেরেকে ঘিরে যে অনুভূতি জাগ্রত হয়েছে তার নিশ্চয়ই নির্দিষ্ট নাম বিদ্যমান! যে অনুভূতি হৃদয়ে প্রেম নামক রহস্যের উন্মোচন করে সে, হৃদয় গ্রাস করে ফেলে তার মায়াজালে! সেই অনুভূতি যে তুমি নামক অনুভূতি।

সমুদ্র ধীর পদে বলেকনি প্রস্থান করল। ঘরে প্রবেশ করতেই তার দৃশ্যমান হলো, মেহের মাথা মুছতে ব্যস্ত। খানিক বিরতি নিয়ে মাথা মুছছে সে! হাজার হোক অতি দীর্ঘ কেশ সামলাতে ব্যর্থ মেয়েটা। বারবার মাথায় হাত দেওয়া হাত ব্যথা হয়ে এসেছে বোধহয়। তাই মেহেরের মুখশ্রী ফ্যাকাশে বর্ণ ধারণ করে! সমুদ্র ধীর গতিতে মেহেরের সন্নিকটে উপস্থিত হলো। আকস্মিক মেহেরের হাত থেকে টাওয়াল নিয়ে নিলো। অতঃপর দায়িত্ব সহকারে আলতো করে মেহেরের সিক্ত কেশ মুছতে আরম্ভ করলো।

হঠাৎ সমুদ্রের স্পষ্ট পেয়ে চমকে উঠলো মেহের। এমনটা মোটাও প্রত্যাশা করেননি। যার দরুন কিছুটা অপ্রতিভ হয়ে পড়েছে সে! মিনিট দুই এক অতিবাহিত হতেই মেহেরের হৃদয় শান্ত হলো। মনের এক কোণে আবির্ভাব ঘটলো একরাশ তুমি নামক অনুভূতি। তার কৈশরীর মনে এক ভয়ঙ্কর রহস্যের আগমন ঘটলো। লজ্জায় কুঁকড়ে উঠলো মেহের। সময় যেন থমকে গেল দু কাপত কাপতী মধ্যে। সমুদ্র অতি যত্ন সহকারে মেহেরের কেশ মুছতে লাগল। মেহেরের পরিস্থিতি লক্ষ্যে করে দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করলো সমুদ্র। লহমায় সমুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

— ইশ! আমার তো ভবিষ্যৎ নিয়ে ভীষণ চিন্তা হচ্ছে পুচকি। যে মেয়ে সামান্য চুল মুছতে পারে না সে কীভাবে আমার বেবিদের সামলাবে?

সমুদ্র কথাগুলো মেহেরের কর্ণকুহুরে পৌঁছানো মাত্রই তার হৃদয় স্পন্দন তড়িৎ বেগ নিলো। তুমুল ঝড় হাওয়া বয়ে গেল অন্তরালে! অদ্ভুত অনুভূতিতে কাঁপতে আরম্ভ করল মেহের। অতঃপর ঠোঁট জোড়া সংকুচিত করে মিনমিন করে বলে উঠলো,

— দেখুন, আমি কেয়ারলেস মা না। আগে আমার বেবিরা পৃথিবীতে আসুক তারপর দেখে নিবেন আমি তাদের কেমন যত্ন নেই। হু,

মেহেরের প্রত্যুত্তরে পেয়ে সমুদ্রের ভ্রূ যুগল আপনি আপনি কুঁচকে এলো। মুহূর্তেই গম্ভীর কন্ঠে বলল,

— বাহ্! বেবিদের দেখার শখ জেগেছে?

সমুদ্রের কথার প্রেক্ষিতে মেহের আনমনে বলে উঠলো,

— হুম।

— তাই! ওকে এইস এস সি পর্যন্ত ওয়েট কর। ইনশাল্লাহ অনার্সে উঠে বাচ্চাদের নিয়ে ভার্সিটিতে যাবে। আই প্রমিজ পুচকি।

— না না,,, আমি এতো অপেক্ষা করব না।

মেহেরের কথার প্রেক্ষিতে সমুদ্রের অধর কোণে এক চিলতে হাসির রেখা স্পষ্ট ফুটে উঠলো। বাতাসে জনালা কাঁপানো মৃদু শব্দে বারংবার তাদের মধ্যে কার নিরবতা ভেঙে দিতে মরিয়া হয়ে উঠলো। তৎক্ষণাৎ সমুদ্র মেহেরকে দূরবর্তী চলে এলো। পকেট থেকে মোবাইল ফোন বের করে সোফার উপর গিয়ে বসল। চোখে মুখে গম্ভীর বজায় রেখে নিজ কর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

সমুদ্র চলে যেতেই মেহের কাঁপতে আরম্ভ করলো দ্বিগুণ হারে! খানিক পূর্বে ভূলবশত কী বলে ফেলেছে তা স্মরণ হতেই জিহ্বা দ্বারা ঠোঁট যুগল ভিজিয়ে নিলো সে। একরাশ দ্বিধা, সংকোচের আবির্ভাব ঘটেছে তার অন্তরালে!

মিনিট পাঁচেক অতিবাহিত হতেই সমুদ্র মেহের উদ্দেশ্যে হঠাৎ গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

— বেশ ভালোই পেকেছেন আপনি! নিশ্চয়ই ওসব গল্প পড়ে তোমার এমন পরিস্থিতি হয়েছে। এর একটা বিহিদ করা দরকার তাই না?

সমুদ্র স্বল্প ভভর্ৎসনা পেয়ে মেহের গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো,

— আপনি সব সময় আমাকে বকা দেন। একটু ভালোবাসেন না আমাকে!

মেহেরের অভিমান মাখা বাক্য শুনে সমুদ্র সোফা থেকে উঠে পড়ল। দ্রুত মেহেরের সংকটে উপস্থিত হয়ে আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো,

— তাই বুঝি? আমার ভালোবাসা সহ্য করতে পারবে তো!

সমুদ্রের কথার ভিত্তিতে মাথা নিচু করে ফেলল মেহের। খানিকটা সংকোচ এর সহিত মিনমিন কন্ঠে বলে উঠলো,

— আপনি ভালোবাসতে জানলে তো! আপনি তো শুধু গম্ভীর হয়ে রাগ করতে জানেন।

মেহেরের নির্গত বাক্যগুলো সমুদ্রের কর্ণকুহরে পৌঁছানো মাত্রই তার ঠোঁটের কোণে তীর্যক হাসির রেখা ফুটে উঠলো। তৎক্ষণাৎ মেহেরের সন্নিকটে চলে এলো সে। স্বল্প দূরত্ব ঘুচিয়ে ফেলল মূহুর্তেই! মেহেরের কর্ণের নিকট মুখশ্রী এনে, ঠোঁট যুগল কিঞ্চিৎ প্রসারিত করে ফিসফিস কন্ঠে বলল,

— আপনার ধারণা সম্পূর্ণ ভুল ম্যাম। আজ নাহয় তার প্রমাণ হয়ে যাক। আমি চাই না এভাবে ভুল ধারণা নিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে থাকুক কেউ!

মুহুর্তেই কেঁপে উঠলো মেহের। তার শান্ত হৃদয় গহীন অশান্ত হলো নিমিষেই! সমুদ্রের মুখশ্রীতে এক পলক দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই তার গাল যুগল রক্তিম আভায় ভরে উঠলো। তৎক্ষণাৎ সমুদ্র হতে দূরত্ব বজায় রাখার প্রয়াসে বিছানা থেকে উঠে পড়ল সে। অতঃপর শুকনো ঢোক গিলে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো,

— না না,,প্রমাণ চাই না। আমি গেলাম।

কথাগুলো বলেই পা যুগল সংকুচিত করলো মেহের। লহমায় সমুদ্র মেহেরের বা হাত টেনে ধরলো। অতঃপর অদ্ভুত কন্ঠে নিম্ন গলায় বলে উঠলো,

— নোপ ম্যাম, প্রুভ চাই না তোমার! So just shut up পুচকি।
(সমাপ্ত)

[সমাপ্তিটা হয়তো আপনাদের প্রত্যাশার বাইরে ছিল। আজকের পর্বটাও বেশ অগোছালো হয়েছে। প্রথম গল্প হিসেবে অনেক ক্রটি করে ফেলেছি নিজ অজান্তেই। তাই ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে যারা এই দীর্ঘ সময় ধরে আমার পাশে ছিলেন। আসালামু আলাইকুম। ]