#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
“পর্ব-১১”
একটি বাড়ি পরিপূর্ণ করতে অবশ্যই নারীর ভূমিকা অপরিসীম। বাড়ির অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য সুনিপুণভাবে একমাত্র নারীরাই তুলে ধরতে পারে। নারী ছাড়া প্রতিটি ঘরই অসম্পূর্ণ। তেমনি আয়ানদের ফ্যামিলিটাও। আয়ানদের বাড়িতে কোনো মহিলা মানুষ নেই।যে কয়েকজন সার্ভেন্ট আছে তারাও পুরুষ। মৃধা এদিক ওদিক তাকিয়ে ভাবছে, আগের দিনও কোনো মহিলাকে দেখে নি আর আজও কেউ আসছে না কেন? মৃধার ভাবনার মাঝেই আয়ান এসে বসে পরল সোফায়। আয়ানকে দেখে মৃধা একটু নড়েচড়ে বসল। তারপর ফাইলগুলো আয়ানের কাছে দিল। আয়ান ফাইলগুলো চেক করে বেশ অবাক হলো।মৃধা যে কাজগুলো এতো তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলবে তার সে ভাবতে পারেনি। ফাইল চেকিং করে আয়ান উঠে চলে যেতে নিলেই আফরোজ চৌধুরী বলে উঠলেন,
— “দাদুভাই মেয়েটিকে এতো রাতে একা যেতে দেওয়া তো ঠিক হবে না। ”
আয়ান থমকে দাড়াল।পেছন ফিরে বলল,
— ” তো আমি কী করব দাদুভাই?”
–” এতরাত অব্দি যখন ওকে আঁটকে রেখেছ তখন ওকে সেইভলি পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব টাও তো তোমার ওপরেই বর্তায়।”
— ” আমি ওকে আঁটকে রাখি নি দাদুভাই। ও নিজেই বলেছে এই কাজগুলো সম্পন্ন করে তারপর বাড়ি যাবে। এখন আমার পক্ষে তো আর ওর সঙ্গে অফিসে থেকে যাওয়া সম্ভব নয় তাই আমি দারোয়ানকে বলে চলে এসেছি যাতে ওকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এখন তুমিই বলো এখানে আমার দোষ কোথায়?”
আয়ানের এমন বানোয়াট কথায় মৃধা বেশ অবাক হয়। এসব কী বলল আয়ান? মৃধা কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারে না। কোথাও একটা আঁটকে যায়। আফরোজ চৌধুরী আয়ানকে এবার আদেশের সুরে বললেন,
–” এটা কেমন কথা দাদুভাই। ও ইচ্ছে করে কাজগুলো করলেও সেটা আমাদের কোম্পানির জন্যই করেছে সো আমাদের উচিত ওকে হেল্প করা। আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না দাদুভাই। তুমি এখুনি ওকে বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে এসো।”
মৃধা এবার মুখ খুলে আফরোজ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলল,
–” নাহ নাহ তার কোনো প্রয়োজন নেই স্যার। আমি একাই চলে যেতে পারব। আমার অভ্যেস আছে।”
আফরোজ চৌধুরীর শক্তপোক্ত উত্তর,
— ” একদম না। আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে। আয়ান তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”
অগত্যা কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে আয়ান আর মৃধা রওনা দিল গন্তব্যে।
,,,, ,,,, ,,,,
গাড়ি চলছে আপন গতিতে। রাত সাড়ে দশটা ওভার হয়ে গেছে। তাই রাস্তাঘাটে জনকোলাহল একদম কম। তারওপর বাহিরে ঝড় হাওয়া বইছে।যেকোনো মুহুর্তে বৃষ্টি নামতে পারে। এ বছর ঝড়-বন্যার প্রকোপ বেশি। মৃধা গাড়ির জানালা দিয়ে বাহিরে দৃষ্টি স্থাপন করে আছে। আর আয়ান রাগে গজগজ করতে করতে ড্রাইভ করছে। মৃধা এই প্রথম প্রাইভেট কারে চড়ছে। মাথাটা কেমন জানি ঘুরছে তার।একটু বমি বমিও পাচ্ছে। জানালা থেকে দৃষ্টি সরিয়ে কপালে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসল মৃধা। আয়ান লক্ষ্য করল ব্যাপারটা কিন্তু কিছু বলল না। বাকি রাস্তা টুকু ওভাবেই কাটল। মৃধার বাড়ির ঠিকানা গাড়িতে ওঠার পূর্বেই আয়ানকে বলে দিয়েছিল। তাই বাড়ি চিনতে অসুবিধা হয়নি আয়ানের। বাড়ির সামনে পৌছতেই আয়ান কোষে গাড়ি থামাল। জোরে ব্রেক করায় মৃধা জোর ধাক্কা খেল। যার ফলে সে চোখ খুলে ফেলল। চোখ খুলে বুঝতে পারল সে তার বাড়ির কাছে চলে এসেছে। সে দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরল। তারপর সোজা বাড়ির ভেতর চলে যেতে লাগল কিন্তু ঠিক সেসময়ই আয়ান পেছন থেকে বলে উঠল,
–” কেউ হেল্প করলে তাকে ধন্যবাদ জানাতে হয় এটুকু ম্যানার্সও কী জানা নেই?”
আয়ানের কথায় মৃধা থমকে দাড়াল।পেছন ফিরে চেয়ে দেখল আয়ানের দৃষ্টি গাড়ির স্টিয়ারিং-এ নিবদ্ধ। মৃধার মেজাজ ধুম করে খারাপ হয়ে গেল। নিজে বিপদে ফেলে আবার হেল্প করার জন্য খোঁটা দিচ্ছে? আশ্চর্য লোক একটা। মনের কথা মনে রেখে মৃধার সাবলীল উত্তর,
–“ধন্যবাদের কাজ করলে অবশ্যই জানাতাম কিন্তু আপনি যেটা করেছেন বা করে আসছেন সেটা শুধুই ধিক্কার জানানোর যোগ্য।”
আয়ানের রাগ হলো ভীষণ। এমন উত্তর সে কখনোই আশা করে নি। আয়ান আঙুল তুলে কিছু কড়া কথা বলতে নিবে কিন্তু বাহিরে তাকিয়ে দেখল মৃধা নেই। হয়তো আয়ানকে ওসব বলেই কেটে পড়েছে। রাগে গজগজ করতে করতে গাড়ি ঘুরিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো আয়ান।
,,,, ,,,, ,,,,
পুরোনো দিনের সৃতি ঘাটলে অনেক কিছুই সামনে আসে। তেমনই আফরোজ চৌধুরীও ডুব দিলেন অতীতে,,
–” আজ থেকে বাইশ বছর আগে তার মেয়ে তাকে একা করে চলে যায় তাদেরই অফিসের একজন কর্মচারীর হাত ধরে। আফরোজ চৌধুরীর মেয়ের সঙ্গে তার অফিসের কর্মচারী সুবাসের প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। এই কথা আফরোজ চৌধুরী জানার পর তিনি তাদের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেন নি। তার ইচ্ছে ছিল মেয়েকে আরও উচ্চ পদমর্যাদা সম্পন্ন কারো ঘরে বিয়ে দিবেন। কিন্তু তার মেয়ে তার ইচ্ছেকে অগ্রাহ্য করে বেছে নেয় তার ভালবাসার মানুষের হাত। হারিয়ে যায় একেবারে। তার মেয়ে চলে যাওয়ার পর পরই তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও তার মেয়ের খোঁজ পাওয়া যায় না সাথে সুবাসের ও । এই দীর্ঘ বাইশ বছরেও তাদের দেখা মেলেনি আর। আজ এত বছর পর মৃধার সঙ্গে তার মেয়ের অধিক মিল খুঁজে পান তিনি। মৃধার মায়ের নাম আর তার মেয়ের নামও একই। তাহলে কী মানুষ দুজনও একই? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে তাকে মৃধার মায়ের সম্মুখীন হতে হবে এবং সেটা খুব শীঘ্রই। আফরোজ চৌধুরীর ভাবনার অবসান ঘটিয়ে পেছন থেকে আদ্র এসে তাকে জড়িয়ে ধরল। তারপর আদুরে কন্ঠে বলল,
–” কী ব্যাপার দাদুভাই এখানে দাড়িয়ে কী ভাবছ এতো?”
আফরোজ চৌধুরী মুচকি হেসে বললেন,
–” ঘরে জোড়া নাত-বৌ আসতে চলেছে খুব শীঘ্রই তাই ভবিষ্যতের সুখময় দিনগুলির কথা চিন্তা করছি?”
নিজের মেয়ের কথা আদ্রর থেকে বেমালুম চেপে গেলেন আফরোজ চৌধুরী। আদ্র আয়ান তখন অনেক ছোট ছিল তাই ওদের নিজের ফুপির কথা মনে নেই। আর ওদের দাদিমাকে ওরা কখনো চোখেই দেখেনি।তিনি ওদের জন্মের আগেই গতো হয়েছেন।
আফরোজ চৌধুরীর কথা শুনে আদ্র কপালে ভাঁজ ফেলে বলল,
–” জোড়া নাত-বৌ কোত্থেকে আসবে শুনি।”
–” তোমাকে আর আয়ান দাদুভাইকে আমি খুব শীঘ্রই একত্রে বিয়ে দিবো।”
— ” দাদুভাই এটা তুমি কী বলছ? আমি তো তোমাকে আগেই বলেছি যে আমি বিয়ে করবো না। ”
–” এসব বললে কী চলে দাদুভাই। আমার এই অসুস্থ শরীর নিয়ে কতদিন আর বাঁচব? তোমরা কী আমার এই আশাটুকু পূরন করবে না দাদুভাই?”
— কিন্তু দাদুভাই…..
–” কোনো কিন্তু নয়। তোমাকে এবার বিয়ে করতেই হবে। আমি জানি তুমি বিয়েকে কেন এতো অবহেলা করো। সেটা হয়তো তোমার বাবা-মায়ের পরিস্থিতির জন্য? তবুও আমি বলব সব সম্পর্ক সমান হয় না বিয়েটা তুমি এবার করেই নেও। দেখো সবকিছু ভালোই হবে। ”
আদ্র মুখে গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলল,
–” ওকে, তুমি যখন চাইছ তাহলে তাই হোক।তবে মনে রাখবে এই বিয়েটা আমি শুধু তোমার কথায় করছি।”
–” তুমি যে রাজি হয়েছ এতেই আমি খুশি।বিয়ের পর দেখবে তুমি মানিয়ে নিতে শিখে যাবে হয়তো ভালবাসতে শিখবে। তাহলে শুরু করে দেই পাত্রীর সন্ধান?”
— যা ভালো বোঝো করো।
আদ্র আর এক মুহুর্ত দাড়াল না। সটান হেঁটে চলে গেল নিজেকে ঘরে। আফরোজ চৌধুরী আজ বেজায় খুশি। একজন নাত-বৌ এর সন্ধান তো সে পেয়েই গেছে এখন বাকি আছে আর একজন।খুব শীঘ্রই শুভ কাজ টা সেরে ফেলতে চান তিনি। কথায় আছে না,” শুভস্র শীঘ্রম”।
চলবে,