কন্ট্রাক্ট অফ ম্যারেজ পর্ব-১৬(বিয়ে-চতুর্থাংশ)

0
896

#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi

“পর্ব-১৬(বিয়ে-চতুর্থাংশ)”

ইতিমধ্যে বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে চৌধুরী বাড়িতে। এরমধ্যে মৃধা তার মাকে অনেক বোঝাতে চেয়েছে যে সে এই বিয়েটা করতে চায় না কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। মৃধার মায়ের এক কথা বাবার মুখের ওপর সে আর কিছুই বলতে পারবে না। তাছাড়া তার আয়ান যথেষ্ঠ পারফেক্ট মৃধার জন্য। এক্ষেত্রে এই প্রস্তাব না করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। শেষমেশ হাল ছেড়ে দিয়ে বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে মৃধা। আর ওদিকে ন্যায়রা সেও বারকয়েক আয়ানকে বোঝাতে চেষ্টা করেছে যে মৃধার সঙ্গে তার যায় না। কিন্তু আয়ান তো আয়ানই সে প্রতিবারই ন্যায়রাকে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিয়ে বিদায় করে দিয়েছে।

দেখতে দেখতে ঘনিয়ে এসেছে গায়ে হলুদের দিন। আগামীকাল ওদের গায়ে হলুদ। এজন্য আজ আফরোজ চৌধুরী জোড়ায় জোড়ায় শপিং করতে পাঠিয়ে দিলেন। মূলত মৃধা যেন আহিবাকে আগে থেকে দেখতে না পারে সেজন্য আফরোজ চৌধুরী আদ্র- আহিবাকে একসঙ্গে পাঠিয়েছেন আর মৃধা -আয়ান একসঙ্গে। আর বাদবাকি সবার জন্য তিনি নিজেই শপিং করবেন বলে ঠিক করেছেন। ওদেরকে আলাদা আলাদা পাঠানোর আরও একটা কারণ আছে। সেটা হলো ওদেরকে নিজেদের মতো টাইম স্পেন্ড করতে দেওয়া। আলাদা আলাদা গেলে ওদের সংকোচ কম হবে আর দুজন দুজনের আরো কাছাকাছি আসতে পারবে।

—————————

লজ্জা রাঙা মুখ নিয়ে আদ্রর পেছন পেছন হাঁটছে আহিবা। এই প্রথম সে কোনো ছেলের সঙ্গে বাহিরে এসেছে। তাও আবার নিজের হবু বরের সঙ্গে। ফিলিংস -টাই অন্যরকম। কিন্তু আদ্রর সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মতো হাঁটছে। শপিং মলের দোতলায় এক কর্ণারে ছেলেদের জিনিস আর অন্য কর্ণারে মেয়েদের। আদ্র আহিবার দিকে তাকিয়ে বলল,

–‘ তুমি ওই কর্ণারে গিয়ে তোমার যা যা পছন্দ হয় প্যাক করে নাও। তারপর এখানে এসে দাড়াও। আমি আমার টা শপিং করে এখানে আসছি। তারপর বিল পে করে একসঙ্গে যাব।’

আদ্রর কথা শুনে আহিবা হতভম্ব। হবু বরের সঙ্গে শপিংয়ে এসে কিনা নিজের জিনিস নিজেকে পছন্দ করতে হবে? হাউ আনরোম্যান্টিক হি ইজ? আহিবা মুখ গোমড়া করে শুধু “হুম” বলে জবাব দিল। আহিবার উত্তর পাওয়া মাত্র আদ্র চলে গেল নিজের কাজে। এদিকে আদ্রের যাওয়ার পানে করুণ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে আহিবা। লোকটা আস্ত নিরামিষ। শেষে কিনা তার কপালে একটা নিরামিষ বড় জুটল। ছলছলে নয়নে আহিবা হেঁটে গেল গন্তব্যে।

—————————–

‘এই যে শুনুন আমি কিন্তু এই বিয়েটা একদমই করতে চাই না। তাই যেকরেই হোক এই বিয়েটা আপনি ভেঙে দিন।’

শপিং মলে ঢুকতে ঢুকতে আয়ানকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলল মৃধা। আয়ানের তখন সাবলীল উত্তর,

–‘ করতে চাও না বেশ ভালো কথা, কোরো না।দাদুভাইকে গিয়ে বলে দাও ব্যস তাহলেই তো মিটে গেল।’

মৃধা বিরক্ত হয়ে বলল,
–‘ আমি বলতে পারলে কী আর আপনাকে বলতাম?আমি নানাভাই এর মুখের ওপর কিছু বলতে পারব না তাই তো আপনাকে বলতে বলছি।’

আয়ান এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে বলল,
–‘ তাহলে আমারও আর ঠ্যাকা পড়েনি তোমার কথা মতো বিয়ে ভাঙতে।’

মৃধা তেঁতে উঠে বলল,
–‘ এই আপনার না গার্লফ্রেন্ড আছে। ওই যে আপনার পি.এ. ন্যায়রা। এজন্যই তো দাদুর সিদ্ধান্তে ওই মেয়েটা সেদিন এত্তো রিয়েক্ট করেছিল। আচ্ছা ওকে ছেড়ে আমাকে বিয়ে কেন করছেন আপনি?’

আয়ান একবার পেছন ফিরে মৃধার দিকে তাকালো। তারপর আবার সামনে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,

–‘ শুধু ন্যায়রা নয় আমার আরও অনেক গার্লফ্রেন্ড আছে। এখন তুমিই বলো আমি কাকে ছেড়ে কাকে বিয়ে করব?এজন্যই তো দাদুর সিদ্ধান্তে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেছি।’

আয়ানের কথা শুনে মৃধার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলল,

–‘ হায় আল্লাহ, শেষে কীনা নানাভাই আমাকে একটা প্লে-বয় এর কাঁধে ঝুলিয়ে দিতে চাইছে।’

মৃধার এরুপ বাচ্চামোতে দেখা মিলল আয়ানের অধরে সুক্ষ্ম হাসির রেখা কিন্তু সেটা থেকে গেল মৃধার দৃষ্টির অগোচর।

—————————-

এত বড় শপিংমলে শপিং করা তো দুর কখনো গেট অব্ধি আসার সুযোগ হয়নি আহিবার। চোখ বড় বড় করে সবকিছু দেখছে সে। কিন্তু ভয়ে ভয়ে কিছু স্পর্শ করছে না। একটা ড্রেস ধরতে গিয়েও আবার সরে যাচ্ছে বারবার। তার মনে হচ্ছে ড্রেসগুলো ছুলে কেউ তাকে বকা দিবে। ওদিকে তার পেছনে দাড়িয়ে সবটাই অবলোকন করছে আদ্র। এক ঘন্টা যাবত শপিং করে ক্লান্ত হয়ে ফিরে এসে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় আহিবার দেখা না পেয়ে সে ঢুকে পড়েছে লেডিস্ শপিং কর্ণারে। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পরই আহিবার সন্ধান পেয়ে যায় সে। কিন্তু আহিবার এরুপ আচরণ দেখে তার বুঝতে বাকি রইল না যে, আহিবা এখনো নিজের জন্য কিছুই চয়েস করতে পারে নি। আদ্র হতাশার নিশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল আহিবার কাছে। পেছন থেকে বলল,

–‘ এক ঘন্টা ধরে কিছুই চুজ করতে পারো নি?’

হঠাৎ পুরুষালি কন্ঠস্বরে ভয় পেয়ে যায় আহিবা। তড়িঘড়ি করে পেছন ফেরে। তার হাত পা কাঁপছে থরথর করে। আদ্র বুঝতে পারল আহিবা নার্ভাস হয়ে আছে। সে আহিবাকে নর্মাল করার জন্য তার এক হাত টেনে নিয়ে বলল,

–‘ ওকে চলো, আমি তোমার জন্য ড্রেস দেখে দিচ্ছি।’

আদ্রের স্পর্শে আহিবা যেন পাথর হয়ে গেছে। মনের মধ্যে এক অদ্ভুত শিহরণ সৃষ্টি হচ্ছে তার। অগত্যা আদ্রের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রোবট গতিতে চলতে শুরু করেছে সে ও।

—————————-

পিংকের সঙ্গে মিক্সিং গোল্ডেন কালারের একটা লেহেঙ্গা হাতে নিয়ে বসে আছে মৃধা। তার পেছনে দাড়িয়ে আছে আয়ান। লেহেঙ্গা টা মৃধার বেশ পছন্দ হয়েছে কিন্তু সে কনফিউজড এটা নিবে নাকি নিবে না। আয়ানকেও জিজ্ঞেস করতে পারছে না। এদিকে আয়ানের চোখেও লেহেঙ্গা টা ভীষণ পছন্দ হয়েছে। কিন্তু মৃধাকে যদি সে ডিরেক্ট এটা নিতে বলে তাহলে মৃধা এখনই এটা ফেলে অন্যটা নিবে। তাই সে কৌশলে মৃধাকে বলল,

–‘ এই লেহেঙ্গা টা ভীষণ সুন্দর কিন্তু তোমার গাঁয়ে একদম বেমানান। তুমি বরং এটা রেখে ওই কলাপাতা রঙের লেহেঙ্গা টা দেখতে পারো।’

আয়ানের কথা শুনে মৃধা এক লাফে উঠে দাড়াল। তারপর লেহেঙ্গা টা হাতে নিয়ে দোকানিকে তাড়াতাড়ি ওটাই প্যাক করে দিতে বলল। আয়ান মনে মনে ভীষণ খুশি হলো। কারণ সেও পিংক কালার সেরওয়ানি নিয়েছে। মৃধা এখানো জানে না সে কথা। জানলে কিছুতেই এই লেহেঙ্গা টা নিত না।

—————————

লাল টকটকে একটা বেনারসি পছন্দ করল আদ্র আহিবার জন্য । আহিবাকে বেশ মানাবে এই বেনারসি টিতে। আদ্র নিজের জন্য লাল সেরওয়ানি নিয়েছে এজন্য ম্যাচিং করে আহিবার জন্যও লাল বেনারসি নিয়েছে। সে দেখেছে বিয়েতে বর-কনেকে ম্যাচিং গেট আপ করানো হয়। আহিবাও খুব খুশি হয়েছে আদ্র তার ড্রেস চুজ করে দেওয়ায়। আদ্র আর আহিবা দু’জনে একসঙ্গে আরও কিছু শপিং করে নিল। যদিও আহিবা শুধু চুপচাপ আদ্রর পাশে দাড়িয়ে ছিল। আদ্রই সব কেনাকাটা করেছে। শপিং শেষে আদ্র আহিবাকে নিয়ে আফরোজ চৌধুরীর নির্দেশনা মতো চৌধুরী বাড়িতে চলে গেল।

—————————

‘এটা তুই কীভাবে করতে পারলি আয়ান? আমার সঙ্গে তুই যেটা করলি সেটা একদম ঠিক করিস নি। এরজন্য তোকে খুব পস্তাতে হবে দেখে নিস?’
রাগান্বিত কন্ঠে কথাটি বলল ন্যায়রা।

শপিংমল থেকে মৃধা আর আয়ান যখন বের হবে
ঠিক তখনই কোথা থেকে যেন আগমন ঘটে ন্যায়রার। সে এসেই মৃধার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে আয়ানকে এক হাত ধরে টানতে টানতে কিছুটা দুরে নিয়ে যায়। মৃধা বোকার মতো তাকিয়ে তাকিয়ে সবটা দেখে।আয়ানও কিছু বলতে পারে না। শত হোক ন্যায়রা তার বেস্ট ফ্রেন্ড। সেই কলেজ লাইফ থেকে বিপদে আপদে সবসময় ছায়ার মতো আয়ানের সঙ্গে রয়েছে সে। কিছুটা দুরে গিয়েই ন্যায়রা আয়ানকে উপরোক্ত কথাটি ব্যক্ত করে। ন্যায়রার কথা শুনে আয়ান বিরক্তিকর মুখভঙ্গি করে বলে,

–‘ আমি আবার তোর সঙ্গে কী করেছি?’

ন্যায়রা দ্বিগুণ জ্বলে ওঠে আয়ানের কথায়। সে জোরে চিৎকার করে বলে,

–‘ কী করেছিস বুঝতে পারছিস না? তুই কেন ওই মেয়েটাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছিস আয়ান?’

আয়ান এবার রেগে গেল ভীষণ। সেও পাল্টা চেঁচিয়ে বলল,

–‘ এক কথা আর কতদিন বলতে হবে তোকে?বারবার এক কথা বলতে বলতে আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। আমি তো এটাই বুঝতে পারছি না আমি মৃধাকে বিয়ে করলে তোর এতো প্রবলেম কীসের?’

ন্যায়রা আয়ানের শার্টের কলার ধরে ঝাকিয়ে বলে,
–‘ বিকজ আই লাভ ইউ ড্যাম ইট।’

ন্যায়রার এমন উত্তর আয়ান কখনোই আশা করেনি। তার এই মুহুর্তে ন্যায়রার প্রতি ভীষণ ঘৃণা হচ্ছে। সে আর এক মুহুর্তে দেড়ি না করে স্বজোরে নিজের কলার থেকে ন্যায়রার হাত ঝাড়া মেরে ফেলে দিল।তারপর কপট রাগ দেখিয়ে মৃধার কাছে চলে গেল। ন্যায়রাকে কয়েকটা কটু কথা বলার মতো ইচ্ছেও তার এখন আর করছে না। মৃধা এতক্ষণ ওদের মধ্যকার কোনো কথাই শুনতে পায় নি। দুরে থাকার দরুন ওদের দেখতে পেলেও কোনো কথা তার কান পর্যন্ত পৌঁছায় নি। কিন্তু ওদের মধ্যে যে ঝগড়া হয়েছে এটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছে।এখন ওদের এই ঝগড়ার কারণ হিসেবে সে মনে মনে নিজেকেই দ্বায়ী করছে।

চলবে,