#কন্ট্রাক্ট_অফ_ম্যারেজ
Sadia afrin nishi
–পর্বঃ২৭
___________________
ন্যায়রার সামনে জলজল করছে এক ভিডিও ফুটেজ। যেখানে নয়ন আর ন্যায়রার সকল কথপোকথন কালেক্ট করা হয়েছে। ন্যায়রার শরীর ভয়ে কম্পমান। গলা শুকিয়ে কাঠ। কম্পিত কন্ঠে সে কোনো রকমে বলল,
” ত ত তু তুই এটা কী করে পেলি?”
আয়ানের ভাবলেস উত্তর,
“এটা আয়ান চৌধুরীর বা হাতের খেল। তুই আমার থেকে ক্ষমা চাওয়ার পর ভেবেছিলাম সত্যিই তুই শুধরে গেছিস কিন্তু না তুই আরও অধঃপতনে নেমেছিস। মৃধার মুখ থেকে সবটা শোনার পর আমি পারসোনাললি তোদের ওপর নজরদারি করি যার ফলাফল হাতে না হাতে পাই। এখন প্রস্তুত হয়ে যাও তোমার অন্যায়ের শাস্তি পাওয়ার জন্য মিস. ন্যায়রা।”
ন্যায়রার সারা শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে। সে এক হাতে কপালের ঘাম মুছে নিয়ে আয়ানের উদ্দেশ্যে বলল,
“তুই এটা কিছুতেই করতে পারিস না। আমি তো তোর বেস্ট ফ্রেন্ড তাই না বল? আমাকে শাস্তি তুই কিছুতেই দিতে পারবি না। তাই না?”
আয়ান খুব জোর হাসল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,
“বেস্ট ফ্রেন্ড। তুই। বেস্ট ফ্রেন্ড মানে জানিস তুই? তুই ফ্রেন্ড নামে কলঙ্ক। ওই নয়নকে তো আমি পুলিশে তুলে দিয়েছি আরও আগেই এখন তোর পালা।”
ন্যায়রা এবার কাঁদতে কাঁদতে আয়ানের পায়ে পড়ে বলল,
” প্লিজ এমন করিস না আয়ান। দেখ তুই তো জানিস আমি পুলিশে কতটা ভয় । তবুও তুই আমার সাথে এমনটা করতে পারবি?”
আয়ান ন্যায়রাকে ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিয়ে বলল,
” তোর মতো পাপীর কোনো ক্ষমা নেই।”
অতঃপর আয়ান পুলিশকে ফোন করতেই পুলিশ এসে ন্যায়রাকে তুলে নিয়ে গেল। ন্যায়রার জন্য আয়ানের খারাপ লাগছে ভীষণ তবুও কিছু করার নেই। সবাইকেই তার অন্যায়ের শাস্তি পেতেই হবে। এই খবর ছড়িয়ে পরেছে পুরো অফিসে। মৃধার কান অব্দিও গেছে তবুও সে নিশ্চুপ। সেও চায় অপরাধীদের শাস্তি হোক। গুরুতর শাস্তি।
____
সকল দুশমন দুর করে আজ আয়ান, মৃধা বেশ খুশিতে আছে। ন্যায়রা আর নয়নের তিন বছরের জেল হয়েছে। দেখতে দেখতে মৃধা আর আহিবার ফাইনাল এক্সাম শুরু হয়ে গেছে। রাতদিন এক করে এখন তারা পড়াশোনায় ব্যস্ত আছে। আদ্র আর আয়ান বউদের কেয়ার করতে ভীষণ এক্সপার্ট হয়ে উঠেছে। এক্সামের এই ব্যস্ততাপূর্ণ সময়ে তারা দুজনে পুরোপুরি ভাবে বউয়ের পাশে পাশে থাকছে সর্বক্ষণ। মৃধা আর আয়ান এখন আর আগের মতো ঝগড়া করে না। বেশ ভালোই বন্ধুক্তপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তাদের।
এমনই এক এক্সামের আগের রাত আজকে। মৃধা আর আহিবা দুজন দুজনের ঘরে বেশ মনোযোগ সহকারে পড়ছে। আহিবাকে পড়ায় ব্যস্ত দেখে আদ্র কী মনে করে টুক করে কিচেনে চলে গেল। এদিকে আয়ান আগে থেকেই কিচেনে ছিল। কিচেনের লাইক বন্ধ থাকায় কেউ কাউকে দেখতে পায় নি।ফোনটাও ঘরে ফেলে এসেছে। অনেক রাত হওয়ায় সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। আদ্র চুপিচুপি এদিক ওদিক কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করছে। অবশেষে পেয়েও গেছে। সেটা হলো দিয়াশলাই। আদ্র দিয়াশলাই এর আগুন জ্বালিয়ে ধরে আশেপাশে দেখার চেষ্টা করতে লাগল। এতরাতে লাইট না জালানোই ভালো। হঠাৎই সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে সে কিছু টা ভড়কে গেল। এত রাতে কে এখানে? আদ্র দিয়াশলাই এর আগুন টা আগন্তুকের সম্মুখে ধরতেই বুঝতে পারল ওটা আয়ান। আদ্র কৌতুহলী দৃষ্টি নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
“তুই এত রাতে, এই অন্ধকারের মধ্যে কী করছিস? আর তোর হাতে ওটা কী?”
আয়ান আমতা আমতা করে বলল,
“আসলে কফি খেতে ইচ্ছে করছিল তাই আরকি।”
আদ্র সন্দিহান দৃষ্টিতে বলল,
“তাই বলে তুই একা দু মগ কফি খাবি?”
আয়ান পরেছে মহা জ্বালায়। কফিটাও ঠান্ডা হতে চলেছে। ওদিকে মৃধা যদি ঘুমিয়ে পড়ে তখন। আয়ান আদ্রকে আর কিছু জেরা করার সুযোগ না দিয়ে বলল,
“আহ ভাইয়া এত কথা বলার সময় এখন নেই। আমার কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
অতঃপর আয়ান আদ্রকে পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আর আদ্র দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছে, ওকে যদি জেরা না করত তাহলে নিজেকেই জেরার মুখে পড়তে হতো।
আয়ান চলে যেতেই আদ্র ঝটপট দু মগ কফি তৈরি করে ফেলল। সাথে নিল আহিবার পছন্দের কিছু কুকিজ।
___
আয়ানের হাতে কফি দেখে মৃধা বেশ অবাক হলো। তার কৌতুহলী প্রশ্ন,
“আপনি এত রাতে কফি তৈরি করেছেন আমার জন্য?”
আয়ান বিস্তর হাসি টেনে বলল,
“আমার বউ এর জন্য এতটুকু তো আমি করতেই পারি। তাই না?”
মৃধা কিছু বলল না শুধু মুচকি হাসল। অতঃপর আবার পড়ায় মন দিল।এই বিয়ের চক্করে পড়াশোনা সব লাটে উঠেছে। এখন ভালো মতো না পরলে এক্সামের খাতায় কী লিখবে? মৃধা পড়ছে আর ফাঁকে ফাঁকে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। আয়ান খাটের ওপর আধশোয়া হয়ে কফি খাচ্ছে আর মৃধার দিকে তাকিয়ে আছে অপলক।
___
আহিবা ভীষণ খুশি। সে তো ভাবতেই পারছে না আদ্র তার জন্য কফি তৈরি করে এনেছে। পড়া বাদ দিয়ে এখন সে গভীর আনন্দে মত্ত। এদিকে আদ্র আহিবার এমন অবস্থা দেখে এক ধমকে বলল,
“এই মেয়ে এতো খুশি হতে হবে না। এখন সব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ায় মন দাও। কফিটা খেয়ে নাও গলাটা ফ্রেশ হবে। পড়তে আরও সুবিধা হবে।”
আহিবার মুখটা মলিন হয়ে গেল নিমেষেই। সে ফোলানো গালে ছোট্ট করে উত্তর দিল, “হুম”।অতঃপর মনোযোগ পড়ায়। আদ্র একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে ল্যাপটপ নিয়ে বসল।
___
সকাল সকাল ভার্সিটিতে গিয়ে মৌ এর সঙ্গে আড্ডায় বসে গেছে মুগ্ধ। মৌ এর সঙ্গে তার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। হতে পারে পর্যায়ক্রমে সেটা আরও গভীর হলো। সবকিছুর পরও মুগ্ধ মৌ এর থেকে একটা জিনিস স্কিপ করে গেছে। সেটা হলো, সে চৌধুরী বাড়ির নাতি। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে মৌ বড় লোকদের ভীষণ ভয় পায়। মৌ এর সান্নিধ্য হারানোর ভয়ে মুগ্ধ তার আসল পরিচয় মৌ-কে দেয়নি। যদিও মুগ্ধর আগের জীবন সম্পর্কে মৌ এর কোনোই ধারণা নেই। সেটা জানলে হয়তো মৌ বুঝত মুগ্ধ আর পাঁচ টা বড় লোকদের মতো নয়। তবুও কিছু একটা হারানোর প্রবল ভয়ে সে আগ বাড়িয়ে কিছুই বলতে যায় নি।
___
পরীক্ষার হল থেকে হাসিমাখা বদনে বের হয়ে এলো আহিবা আর মৃধা। আজ তাদের পরীক্ষার শেষ দিন ছিল। তাদের সবগুলো পরীক্ষাই আলহামদুলিল্লাহ ভীষণ ভালো হয়েছে। গল্প করতে করতে দু’জনে গেটের বাহিরে চলে এসেছে। হঠাৎই আহিবা বলে উঠল,
“এই মৃধা দেখ ওটা বাড়ির গাড়ি না?”
মৃধা আহিবার দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে সেদিকে তাকালো। সত্যিই তো তাদের বাড়ির গাড়িই ওটা। অতঃপর দু’জনে জোর পায়ে হেঁটে সেখানে উপস্থিত হলো। গাড়ির মধ্যে দুই ভাই বসে আছে। ওদের দেখতেই আদ্র গাড়ির দরজা খুলে দিল। তারপর ওদের উদ্দেশ্যে বলল,
“উঠে পড়ো তাড়াতাড়ি। ”
অগত্যা ওরা দুজনে গাড়িতে উঠতেই গাড়ি চলতে লাগল আপন গতিতে। দু’জনের মনে কৌতুহল আর দু’জনের মনে কিছু গোপন চিন্তাধারা। গাড়ি ছুটে চলেছে গন্তব্যে…….
চলবে,