আমার অগোছালো জীবনে গোছালো তুই পর্ব-৪ এবং শেষ পর্ব

0
1106

#আমার_অগোছালো_জীবনে_গোছালো_তুই
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

পার্ট-৪ (অন্তিম পার্ট)

নাহিদঃ‌কি জানি না আমি।

ভাবি সব কথা নাহিদকে বললো। সবটা শুনে নাহিদ দু পা পিছিয়ে গেলো। রাগে চিৎকার করে বললোঃ তোমরা আমাকে একবার এসব জানানোর প্রয়োজন বোধ করলে না।

পেছন থেকে নাহিদের মা বলে উঠলেনঃ তোকে জানিয়ে কি হতো!

নাহিদঃ মা জারা আমার স্ত্রী।

নাহিদের মা হেসে বললোঃ এতক্ষনে মনে পড়লো ওহ তোর স্ত্রী। কখনোই কি ওকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছিস,আগলে রেখেছিস, ভালোবেসেছিস বল।

নাহিদঃ‌মা তুমি সবটা জেনেও

মাঃ হ্যা আমি সবটা জেনেও বলছি। সব ভালোবাসা পূর্নতা পাইনা। তাই বলে নিজের জীবনকে থামিয়ে রাখবি এটা কিরকম কথা। তোর সাথে আরেকটা জীবন জড়িয়ে আছে তার কথাও ভাব।

নাহিদ মাথা নীচু করে নিলো।

মাঃ আমার কথাগুলো মন দিয়ে ভাবিস আর মেয়েটাকে কস্ট দিস না। ডাক্তার বলেছে ঠিকমতো খাওয়া আর ঘুম না যাওয়ার জন্য মাথাটা ওর ঘুরে গেছে।

নাহিদ অপরাধী কন্ঠে বললোঃ মা আমি হসপিটালে যাবো।

মাঃ তোর বউ তুই যেতেই পারিস .. তবে খবরদার আমার মেয়েকে রাগ দেখাবি না।

নাহিদ হসপিটালে উদ্দেশ্য রওনা দিলো। ঠিকমতো শরীরের যত্ন না নেওয়ার ফলে জারা অসুস্থ হয়ে পড়ে আর মাথা ঘুরে পড়ে যায় সিঁড়িতে এবং মাথায় অনেকটা চোট লাগে ।জ্ঞান না ফেরার জন্য ওকে হসপিটালে ভর্তি করতে হয়।

নাহিদ হসপিটালে গিয়ে দেখলো। জারার মাথায় ব্যান্ডেজ করা। নাহিদ জারার দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে বললোঃ কিভাবে এলো এসব।

জারা নাহিদের দিকে তাকিয়ে ,, আবারো চোখ বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। জারার কিছুই ভালো লাগছে না। মানুষটার অবহেলা আর মেনে নিতে পারছে না। এতদিন হবার পরও নাহিদের মধ্যে সত্যি কোনো পরিবর্তন আসিনি। জারার প্রতি কোনো রকম মায়া জন্মাইনি।‌

নাহিদঃ জারা আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি।

জারা … নিশ্চুপ

নাহিদ জারার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে, কিন্তু জারা সেদিকে পাত্তা দিলো না। নাহিদ কিছু একটা বলতে যাবে তখনি ওর বাবা চলে আসে।

বাবাঃ আরে নাহিদ তুই কখন এলি।

নাহিদঃ এক্ষুনি।

বাবাঃ ভালো হয়েছে তোরা জারা কে নিয়ে চলে যা।

নাহিদঃ আচ্ছা

জারা আর নাহিদ চলে গেলো। সারা রাস্তায় একটাও কথা বলেনি দুজন,, নাহিদ কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু জারা কথা বলেনি।

৩ দিন পর…

জারা চুপচাপ থাকে। নাহিদ জারার যথেস্ট খেয়াল রাখে‌ … জারা চুপচাপ বসে আছে দেখে নাহিদ কিছু বলতে গিয়েও বললো না, চুপচাপ চলে যাবে বলে যাচ্ছিল জারার ডাক শুনে থমকে গেলো।

নাহিদঃ কিছু বলবি।

জারাঃ তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার।

নাহিদঃ কি কথা।

জারা উঠে দাঁড়িয়ে নাহিদের সামনে দাঁড়িয়ে,, নিজের ডান হাতটা সামনে আনলো। নাহিদ চমকে উঠলো। জারার হাতে একটা ছুড়ি ছিলো।

নাহিদঃ এটা তোর হাতে কেন?ফেল।

জারাঃ না,,, আমি জানি এই সমাজের ভয়ে কখনোই তুমি আমাকে মুক্তি দিতে পারবে না। আমাকে ডির্ভোস দেবে না,, তাই আমি নিজেকেই নিজে শেষ করে দেবো।

নাহিদ আঁতকে উঠে জারার কথা শুনে।

নাহিদঃ জারা পাগলামি করিস না।

জারাঃ তুমি আমাকে খুব ভালো করেই চেনো আমি কখনোই পাগলামি করি না ,, যা করি সত্যি সত্যিই করি। আমি আর পারছি না এই জীবন নিয়ে বাঁচতে আমি মুক্তি চাই ,,মুক্তি চাই।

জারা ছুড়িটা নিয়ে নিজের হাত কাটতে যাবে তখনি নাহিদ ছুড়িটাকে নিয়ে ছুড়ে ফেলে দিয়ে জারার গালে একটা থাপ্পর মারলো। জারা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো,,নাহিদ নিজের বুকের সাথে জারাকে জড়িয়ে বললোঃ কেন আবারো আমার জীবনটাকে অগোছালো করে দিতে চাইছিস! আমি আর অগোছালো হতে চাই না, এলোমেলো হতে চাই না আমি তোর সাথে গুছিয়ে বসবাস করতে চাই তোকে নিয়ে তোর সাথে।

নাহিদের চোখেও পানি …. জারা নাহিদকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। নাহিদের কথাগুলো অনেক কিছুই প্রমান করে দিচ্ছে অনেককিছু।

কেটে যায় ২ বছর…

নাহিদ আর জারা এখন সুখী দাম্পত্য জীবন যাপন করছে। সকলেই খুব খুশি। নাহিদ আর জারার কোল আলো করে একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে। নাহিদ আর জারার জীবনটা সুখে ভরে উঠেছে।

নাহিদ অফিস থেকে ফিরতেই জারা ওর সামনে পানি ধরলো। নাহিদ মুচকি হেসে পানিটা খেলো এটা জারার রোজকার দিনের নিয়ম। নাহিদ খেয়াল করলো জারার মুখটা একটু গম্ভীর হয়ে আছে। পানির গ্লাসটা রেখে জারাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে নাক ঘষতে ঘষতে বললোঃ কি হয়েছে আজকে ম্যাডামের মুড অফ কেন?

জারা চুপ করে আছে। নাহিদ জারাকে সামনে নিয়ে এসে বললোঃ কি হয়েছে।

জারা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে নাহিদকে জড়িয়ে ধরলো। নাহিদ আলতো হেসে জারাকে জড়িয়ে ধরলো.. মেয়েটা বাচ্চার মা হয়ে গেছে তবুও এখনো বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করে।

নাহিদঃ কি হয়েছে বলো।

জারা কান্না করতে করতেই বললোঃ তুমি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না।

জারার এমন কথায় নাহিদ হতবাক হয়ে গেলো এই মেয়ে বলে কি? ওকে ভালোবাসে না মানে।

নাহিদঃ জারা কি বলছো এসব।

জারাঃ হ্যা ঠিক বলছি,,বাবু হবার পর তুমি আর আমাকে ঠিক মতো সময় দাও না বাবুকে নিয়েই পড়ে থাকো আমার বুঝি কস্ট হয়না।

নাহিদ হা হা করে হেসে উঠলো। জারা কান্না বন্ধ করে নাহিদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকলো। মানুষটাকে হাসলে কত সুন্দর লাগে,,

নাহিদ হাসি থামিয়ে, জারার দুই গালে হাত রেখে বললোঃ পাগলি এমন কথা বলিস না তোর কস্ট আমি দেখতে পারবো না।*আমার_অগোছালো_জীবনে_গোছালো_তুই* এসে ছিলিস বলে আমি নিজেকে গুছিয়ে উঠতে পেরেছি সেখানে তোকে কিভাবে অগোছালো হতে দিই বল।

জারাঃ আমি যে তোমাতেই অগোছালো হয়ে গেছি।আমি আর চাইনি গোছাতে,,তোমার সাথেই অগোছালো হয়ে থাকতে চাই আজীবন।

নাহিদ জারার কপালে একটা কিস করলো। ওদের ধ্যান ফিরলো নাহিদের ছোটো বোনের গলার আওয়াজে।

নাহিদ আর জারা দুজন দুইদিকে সরে গেলো। জারার খুব লজ্জা লাগছে।

বোনঃ আহা গো কি দৃশ্য।

নাহিদ ওর বোনের কানটা ধরে বললোঃ বড্ড পেকে গেছো তাই না।

বোনঃ লাগছে দাদা ছাড়ো,,

নাহিদ কানটা ছেড়ে দিয়ে বললোঃ পাকামি করিস কেন

বোনঃ আরে দাদা যদি দরজা খুলে প্রেম করে তাহলে তো বোন পেকেই যাবে তাই না।

নাহিদঃ মার খাবি তুই।

বোনঃ থাক আর মারতে হবে না। আমি এমনি এমনি আসিনি এই নে তোর মেয়েকে ঘুমিয়ে পড়েছে।

নাহিদ ওর মেয়েকে কোলে তুলে নিলো।

বোনঃ ভাবি মা তোমাকে ডাকছে।

জারাঃ হুম যাচ্ছি‌।

জারা চলে গেলো। নাহিদ ওর মেয়েকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে,কপালে একটা চুমু দিয়ে বললোঃ সোনা আমার কখনোই নিজের মাকে কস্ট দিস না,,তোর মায়ের কস্ট তোর আব্বু দেখতে পারবে না। আগলে রাখিস সবসময় মাকে।

জারা কাজ সেরে এসে দেখলো। মেয়েকে জড়িয়ে ধরে নাহিদ ওহ ঘুমিয়ে পড়েছে। জারার চোখ ভোরে পানি চলে আসলো‌,কি সুন্দর দৃশ্য। তার কপালটা এতটা ভালো জানা ছিলো না। সত্যি আজকে সে সবথেকে সুখী। সে তার স্বামী সন্তান নিয়ে সুখেই আছে। আল্লাহ তায়ালা সবসময় জেনো তাদের এভাবেই সুখে রাখে।

~ সমাপ্ত~

বিঃ দ্রঃ-ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। পুরো গল্পটা কেমন লাগলো সকলে বলবেন।

হ্যাপি রিডিং।