ভালোবাসি তাই পর্ব-১৪+১৫

0
590

#ভালোবাসি_তাই
তন্বী ইসলাম-১৪

“ঘরে আয় ভাইয়া। শুধু শুধু উনার সাথে তর্ক করিস না, উনার মাথায় গন্ডগোল আছে।।।
আশার কথা শুনে সাদ বিষম খেলো। উনি তাহলে কিউটির বড় ভাই, আর আমি কি না কি ভাবলাম। ততক্ষণে আদিব রুমে চলে গেছে। সাদ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে গলা কাশি দিলো। মৃদু গলায় বললো
“আমি আসবো ভিতরে?
আশা অন্যদিকে তাকিয়েই বলল
“কোনো দরকার নেই।
আশার কথা শুনে মুখটা চুপসে গেলো সাদের। ওদের এহেন কথাবার্তায় সামান্য হাসলো আদিব। এরপর ভদ্রভাবে বললো
“আসুন ভিতরে।
সাদ হেসে রুমের ভিতরে গিয়ে ঢুকলো। আদিবের পাশে বসে বললো
“আমি আপনার অনেক ছোট, আমাকে তুমি করে বললেই খুশি হবো ভাইয়া।

আদিব কিছুক্ষণ সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সাদের দিকে। এক পর্যায়ে বললো
“এতোক্ষণ তো খুব রাগ দেখাচ্ছিলে। হটাৎ কি এমন হলো যে সরাসরি ভাইয়া বলে ডাকছো!!
সাদ কিছুটা লজ্জা পেয়ে বললো
“আমি তো জানতাম না আপনি কিউটির বড় ভাই। জানলে কি আর এমন করতাম। আমি ভেবেছিলাম, আপনি হয়তো কোনো বাইরের…
কথাটা বলতেই আশার চোখের দিকে চোখ গেলো সাদের। আশা চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। সাদ মৃদু হেসে বললো
“এভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমার দিকে?
“আপনার চিন্তা ধারা দেখে অবাক হচ্ছি। কিভাবে ভাবলেন আপনি যে আমি বাইরের কোনো ছেলেকে এভাবে জরিয়ে ধরবো৷
সাদ অপরাধীর স্বরে বললো
“আমার ভুল হয়ে গেছে কিউটি। স্যরি…

আদিব হাসলো এবার। এরপর বললো
“তোমার বাসা কোথায়? আশার সাথে কিভাবে পরিচয় তোমার?
সাদ লজ্জা সূচক হাসি হেসে বললো
“এটাই আমাদের বাসা। আমি কানাডায় থাকি।
“তুমি বাড়িওয়ালা আন্টির ছেলে?
“জ্বি!
আদিব হেসে বললো
“ওহ আচ্ছা। আমি প্রথমবার যখন এ বাসায় এসেছিলাম তখন উনি বলেছিলেন তোমার কথা।
সাদ হেসে মাথা নাড়ালো। হটাৎ করে আসায় ঘরে বাড়তি কোনো খাবার ছিলোনা, তাই ভাইকে খাওয়ানোর জন্য কিছু খাবারের বন্দোবস্ত করায় ব্যস্ত হয়ে গেলো সে।

অন্যদিকে আদিবের সাথে কথা বলার এক ফাঁকে সাদের ফোনের রিংটোন টা বেজে উঠলো। সে ভদ্রতার সাথে আদিবের কাছে বলে বাইরে চলে গেলো কথা বলার জন্য।
সাদ বেরিয়ে যাবার পর আশার দিকে তাকালো আদিব। মেয়েটা ব্যস্ত হয়ে গেছে ভাইয়ের জন্য খাবার তৈরি করার। আশাকে বাধা দিয়ে আদিব বললো
“এতো ব্যস্ত হোস না আশামনি। এগুলো করার কোনো প্রয়োজন নেই।
আশা অবাক হয়ে বললো
“প্রয়োজন নেই মানে, এতোটা রাস্তা জার্নি করে এলে খাবেনা?
আদিব হেসে বললো
“আমাদেরকে এক্ষুনি রওনা করতে হবে, নইলে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যাবে।

আশা অবাক হলো ভাইয়ের কথায়। সে হাতে থাকা খাবারগুলো একটা বাটিতে রেখে উঠে দাড়ালো। বিস্ময় নিয়ে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো
“আমাদেরকে রওনা করতে হবে মানে?
“আমরা বাড়ি যাবো তাই।
“আমিও যাবো? উত্তেজিত হয়ে বললো আশা। আদিব এক গাল হেসে বললো
“হুম। তোকে নিয়ে যেতেই তো এলাম।।
আশার মনের মধ্যে এক অজানা আনন্দের ধারা বয়ে গেলো মুহূর্তের মধ্যেই। সে ভাইয়ের পাশে এসে বসে বললো
“সত্যি? আমি সত্যিই বাড়ি যাবো?
আদিব চোখের ইশারায় সম্বোধন জানালো। আশার খুশি খুশি মুখটা মুহূর্তে মলিন হয়ে গেলো, খুশির বদলে সেখানে দেখা দিলো একরাশ দুশ্চিন্তা। আদিব সেটা খেয়াল করে বললো
“কি হলো? মুখ কালো করলি কেন হটাৎ?
আশা বললো
“বাড়ি যাবো কিভাবে? আমার পড়া আছে যে, ভার্সিটি খোলা তো।
“তাই বলে ভাইয়ের বিয়েতে থাকবিনা?

আদিবের কথা শুনে খানিক চমকালো আশা। সন্দিহান চোখে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। এরপর বললো
“কোন ভাইয়ের বিয়ে?
“তোর ক’ টা ভাই আছে শুনি?
প্রচন্ড উত্তেজনা নিয়ে আশা বললো
“তোর বিয়ে!!
“হুম।।
“কবে কি হলো, আমাকে তো কিছু বললি না?
“এই হয়ে গেলো হটাৎ করে। ওদের বাড়ি থেকে এসেছিলো গত পরশু। দেখে সবকিছু পাকাপোক্ত করে গেছে। সামনের শুক্রবার বিয়ের দিন ধার্য্য করা হয়েছে।
আশা অবাক হয়ে শুনলো ভাইয়ের বলা কথাগুলো। এরপর অভিমানী গলায় বললো
“আজ কাল তোরা আমাকে কিছুই জানাস না। মা ও জানায় না। আমি কি এতোটাই পর হয়ে গেছি তোদের থেকে?
“এভাবে বলছিস কেন আশামনি?
“আর কিভাবে বলবো? এর আগে তোরা মেয়ে দেখতে গেছিস, কিন্তু আমাকে জানাস কি। দেখে এসে পরে মা আমাকে বলেছে। এখনো বিয়ের মতো এতবড় একটা দিন ঠিক করে ফেললি, তাও আমি কিছু জানিনা।।

আদিব অভিমানী বোনকে একহাতে জরিয়ে ধরে বললো
“কানে ধরবো?
“না।
“তাহলে আমার সাথে যাবি তো? নাকি রেগে বসে থাকবি?
আশার রাগ মিলিয়ে গেলো মুহূর্তে। সে মাথা নাড়িয়ে বললো
“যাবো তো।

সন্ধ্যের আগ নাগাদ বাসায় ফিরলো সাদ। তখন এক বন্ধুর ফোন পেয়ে বেরিয়ে গেছিলো, আর ফেরা হয়নি বাসায়। এইবার বাসায় ফিরে সে দেখতে পেলো আশাদের রুমে তালা দেওয়া। কিছুক্ষণ আঁড়চোখে তাকিয়ে রইলো তালাটার দিকে। পরক্ষণে ভাবলো ভাইকে নিয়ে বোধহয় কোথাও হাঁটতে গেছে। সাদ আর বেশিক্ষণ সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে চলে গেলো।

সন্ধ্যে পার হয়ে গেছে। এখনো আশা কিংবা তার ভাইয়ের ফেরার কোনো নাম নেই। সাদ এবার কপাল কুচকে আবারও তাকালো আশাদের দরজার দিকে। বার বার রুমের এ মাথা থেকে ও মাথা পায়চারি করতে থাকলো সে। একটা অজানা চিন্তা মাথায় ভর করেছে তার। এ দুশ্চিন্তার কারণ সে জানেনা। একবার ভাবলো নীলাদের রুমে গিয়ে জিজ্ঞাসা করুক, ওরা নিশ্চয়ই জানে আশা ওর ভাইকে নিয়ে কোথায় গেছে। পরক্ষণে নিয়াশার কথা মনে পরতেই সেখানে যাওয়া ক্যান্সেল করে দিলো সে। মেয়েটা যেভাবে ক্ষেপে আছে ওর উপর, সে তার মুখো হতে চায় না সহজে। তারউপর দেখা হলে ত্যারাবাকা কথা বলতে দুবার ভাবে না।।

সাদের এইরকম পায়চারি করা অনেক্ষণ ধরেই খেয়াল করছিলেন লুৎফুন্নাহার।
ছেলে আশার রুমের দিকে বারবার নজর দিচ্ছেন সেটা স্পষ্ট হলো তার কাছে। কিন্তু কি কারণে? উনি যতদুর জানেন, ছেলে নিয়াশার প্রতি আসক্ত। তবে নিয়াশা তো রুমেই আছে, তাকে রেখে আশার রুমের দিকে বার বার চোখ বুলাচ্ছে কেন তার ছেলে? বিষয়টা জানতে উনি ছেলের মুখোমুখি হলেন। হটাৎ ছেলের সামনে চলে আসায় সাদ প্রথমে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো, পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো
“তুমিও না মা, এভাবে কেউ হটাৎ সামনে চলে আসে নাকি!
“তুই কি কিছু ভাবছিস? বার বার পায়চারি করছিস দেখছি।
সাদ একবার মায়ের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে ভাবলো মাকে কিছু জিজ্ঞাসা করবে না। কিন্তু মনের অস্থিরতাও কাটাতে পারছিলোনা কিছুতেই। এক পর্যায়ে মাকে জিজ্ঞাসা করলো
“তুমি কি জানো মা, কিউটি কোথায় গেছে?
“কার কথা বলছিস?
সাদ কিছুটা থতমত খেয়ে বললো
“আশা, আশার কথা বলছি। কোথায় গেছে জানো?
লুৎফুন্নাহার উল্টোদিকে ফিরে কিচেনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো
“ওর ভাই এসেছলো, ওকে নিয়ে গেছে বাড়িতে।

মায়ের কথা শুনে অবাক হলো সাদ। পালটা প্রশ্ন করলো
“কেন
“বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই।
সাদ হতভম্ব হলো, এ কি বলছে মা। কিউটির বিয়ে, মানে কি? সে সামান্য রাগান্বিত গলায় বললো
“অসম্ভব মা, এটা কি করে হতে পারে।
লুৎফুন্নাহার নিজ যায়গায় দাঁড়িয়ে বললো
“বিয়েটা কি অস্বাভাবিক কিছু? অসম্ভব হতে যাবে কেন!!
“কোনো কথা বার্তা ছাড়া হুট করে বিয়ে হয়ে যায় নাকি!
“হুট করে হতে যাবে কেন! মেয়ে দেখেছে, পছন্দ হয়েছে, পাকা কথা হয়েছে, তবেই না বিয়ে ঠিক হয়েছে।। আমাকেও দাওয়াত দিয়ে গেছে। কিন্তু আমি তো আর যেতে পারবো না। একে তো অপরিচিত যায়গা, তারউপর কিচ্ছু চিনিনা। সবচেয়ে বড় কথা আমার ছুটি হবে না।
সাদ অবাক হয়ে অবিশ্বাসের সাথে বললো
“মেয়ে তো এখানে ছিলো, দেখলো কিভাবে?
লুৎফুন্নাহার ছেলের দিকে তাকিয়ে কপালে ভাজ আনলেন।। বললেন
“মেয়ে এখানে ছিলো মানে? কোন মেয়ে এখানে ছিলো?
“কিউটি..

এবার হাসলেন লুৎফুন্নাহার। ছেলের কান মুলে দিয়ে বললেন
“ওরে বোকা, আমি কি আশার বিয়ের কথা বলছি নাকি!
“তাহলে কার বিয়ের কথা?
“ওর ভাইয়ের বিয়ের কথা বলেছি। ওর বড় ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাই আশাকে নিতে এসেছিলো। নিয়ে চলেও গেছে।
এতোক্ষণে একটা স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ালো সাদ। বললো
“তুমি ও যে কি না মা, এতো ঘুরিয়ে পেছিয়ে কেউ বলে। তখনই যদি বলে দিতে ওর ভাইয়ের বিয়ে তাহলে কি আর এতো দুশ্চিন্তায় পরতাম। আমাকে টেনশনে ফেলে দিয়েছিলে তুমি।
লুৎফুন্নাহার এবার সরু চোখে তাকালেন ছেলের দিকে। ইঙ্গিত দিয়ে বললেন
“তোর হটাৎ দুশ্চিন্তা হবার কারণ? মেয়ে হয়ে জন্মেছে, আজ নয়তো কাল বিয়ে তো হবেই। এতে তুই কেন টেনশন করবি?
সাদ খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে কি যেনো ভাবলো। পরক্ষণে বললো
“জানিনা মা, কিন্তু দুশ্চিন্তা হয়েছে। এর পিছনে কি কারণ আছে সেটা আমারও অজানা।

_____________
খুব জাকজমকভাবে সাজানো হয়েছে বাড়িটা। চারিদিকে লাইটিং করা হয়েছে। ফুলের গাছগুলো মরিচবাতি দিয়ে লতানোর মতো পেচিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বাড়ির সৌন্দর্য কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। একমাত্র ছেলের বিয়ে উপলক্ষে সকল আত্মীয় সজনদের দাওয়াত দিয়েছে দিলারা। সকলে এসেছেও। পুরো বাড়িটা কোলাহলময়। আয়োজন চওড়া, ছেলের বিয়েতে কোনো খামতি রাখেন নি তিনি। কার্পণ্যও করেন নি কোনোরুপ। রাত পোহালেই ছেলের বিয়ে। ছেলে নতুন জীবন শুরু করবে, ভাবতেই আনন্দ হচ্ছে খুব।।

ওদিকে কাজিনদের সাথে আড্ডায় মেতে আছে আশা। বাইরে কয়েকটা মাদুর একসাথে করে বিছিয়ে সকল ভাইবোনেরা এক সাথে চাপাচাপি করে বসে হাস্যরসের আজেমে মত্ত হয়েছে তারা। দুদিন হয়ে গেছে সে বাড়িতে এসেছে৷ খুব আনন্দ লাগছে তার। একেতো এতোদিন পর বাড়ি ফেরা, তারউপর ভাইয়ের বিয়ে৷ আনন্দঘন মুহুর্তটা যেনো দ্রুত থেকে দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। আশা এবার ভীড়ের মধ্যে থেকে উঠে দাড়ালো। সকলে একসাথে বলে উঠলো
“কোথায় যাচ্ছিস?
আশা হেসে বললো
“যতক্ষণ পেটে চা না পড়বে, ততক্ষণ আড্ডাটা কি পরিপূর্ণ হবে?
সকলে একসাথে বলে উঠলো
“ঠিক ঠিক।।
আশা হেসে বললো
“তোমরা থাকো, আমি এই গেলাম, আর চা নিয়ে ফিরে এলাম।।

আশা দু পা এগিয়ে গেলো চা আনতে যাবার জন্য। চায়ের কথা আগেই বলে এসেছে মাকে। এতোক্ষণে বোধহয় রেডি হয়ে গেছে৷ সেই তাড়না থেকে এগিয়ে যাচ্ছে সে। ঠিক তখনই একটা ডাক কানে এলো তার। থমকে দাড়ালো সে। চারিদিকে ঘুরে দেখতে লাগলো, কিন্তু কাউকে তো দেখতে পাচ্ছেনা। আশা আবারও হাটা ধরলো। এমন সময় আবারও কানে এলো
“কিউটি…
এবার বেশ বিরক্ত হলো আশা। বাড়ি আসার পর থেকে যখন তখন এই ডাকটা শুনতে পায় সে। এখানে ওখানে যেখানেই যাক, ডাকটা যেনো পিছু ছাড়ে না তার। এমন কেন হয়? ভাবতে থাকে আশা।

এইসব ভাবার এক পর্যায়ে আবারও শুনতে পায় সেই চেনা কন্ঠস্বর। কিছুটা রাগান্বিত হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় এবার। মুহুর্তেই চমকে যায় সে। এটা কি করে সম্ভব? উনি কি করে এলেন এখানে, এটা কি সত্যি নাকি কল্পনা?

চলবে….

#ভালোবাসি_তাই
তন্বী ইসলাম-১৫

আশা অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে সাদের দিক। সাদ সে তাকানো দেখে মুচকি হাসলো, ধীরপায়ে এগিয়ে এলো আশার দিকে। আশা এখনো নির্বাক, সে এখনো ভেবে যাচ্ছে এটা তার ভ্রম। একটা সময় আশা স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে এলো, সম্ভিত জ্ঞান ফিরলো তার। সামান্য নড়েচড়ে সাদের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো
“আপনি!! আপনি এখানে কিভাবে এলেন?
“কেন, আমি কি আসতে পারিনা?
আশা নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো
“সেটা নয়। কিন্তু আপনি আসবেন আমি কখনো ভাবি নি। আপনি সত্যিই এসেছেন তো?

আশার মুখে এমনটা কথা শুনে কিছুটা হাসি পেলো সাদের। সে হাসিটাকে কোনোমতে দমিয়ে বললো
“নাহ, আমার ভুত।
আশা কিঞ্চিৎ ভ্রু বাকালো। সুক্ষ্ম গলায় বললো
“হতে পারে, আজকাল ভুতেদের বিশ্বাস নেই। হয়তো আপনার রুপ ধরে চলে এসেছে।
সাদ এবার হাসিটা আর চেপে রাখলে পারলো না। হু হু করে হেসে ফেললো সে।
আশা নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে হাসির দিকে। এমন সময় পিছন থেকে ডাক এলো… দিলারা অবাক হয়ে সাদের দিকে তাকিয়ে আশাকে প্রশ্ন করলো
“কার সাথে কথা বলছিস, কে ছেলেটা?
আশা কিছু বলবে তার আগেই সাদ এগিয়ে গেলেন তার দিকে। কিছুটা ঝুঁকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নিলে দিলারা কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে সাদের মাথায় হাত রাখলেন। পরম মমতায় বললেন
“পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে নেই বাবা। কিন্তু কে তুমি, চিনলাম না তো।

সাদ উঠে দাঁড়িয়ে আশার দিকে তাকালো। মুচকি হেসে দৃষ্টি দিলারার দিকে দিয়ে বললো
“আমি সাদাত। কিউটি আমাদের বাসাতেই থাকে আন্টি।
দিলারা বিস্ময় নিয়ে বললো
“তার মানে তুমি আশা যে বাসায় থাকে সেখানকার বাড়িওয়ালা?
সাদ লজ্জাসুচক হাসি হেসে বলল
“আমি তো ওর বন্ধু।
দিলারা হেসে বললো
“বাহ! তোমার মা আসেনি বাবা। আদিব তো বলেছিলো উনাকে আসার জন্য বলেছে।
সাদ ভদ্রতার সাথে বললো
“মায়ের অফিসে ছুটি নেই, তাই আমাকে পাঠালো।
“ওহ আচ্ছা। ভিতরে আসো, কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকবে।

দিলারা আশার দিকে তাকিয়ে বললেন
“ওকে নিয়ে ঘরে আয় আশা।
আশা মাথা নাড়ালো। দিলারা চলে গেলে আশা অবাক হয়ে তাকালো সাদের দিকে। সাদ চোখের ইশারায় প্রশ্ন করলো
“কিহ?
“আপনাকে আন্টি পাঠিয়েছে এটা সত্যি?
“কেন, বিশ্বাস হয়না?
“বিশ্বাস হচ্ছেনা কেন জানি।
সাদ হাসলো। বললো
“তোমার সত্যিই খুব টেলেন্ট। আসলে আমাকে মা পাঠায়নি। বাসায় একা বোর হচ্ছিলাম খুব।
“নীলা নিয়াশা আছে তো।
“খোঁচা দিচ্ছো?
“খোঁচা কেন দিতে যাবো। ওরা নেই বাসায়?
“আছে, তবে বিউটি আমার উপর অনেক ক্ষেপে আছে, সামনে যেতে ভয় পাই। ভুলেও যদি ওর সামনে পরি, তখন আমার দিকে আগুনের গোলা নিক্ষেপ করে।

সাদের কথায় সামান্য হাসি পেলো আশার। সে আরো কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সাদের দিকে। এক পর্যায়ে প্রশ্ন করলো
“আপনি এখানে এলেন কিভাবে?
“গাড়ি করে এসেছি।
“সেটা নয়।
“তাহলে কোনটা?
“আমার বাড়ি তো আপনার চেনার কথা না। তার তাছাড়া আমার এক্সাক্ট লোকেশন সেখানকার কারোরই জানার কথা না। আপনি জানেন না, আমার বাড়িতে কিভাবে আসতে হয়। আমি অবাক হচ্ছি সত্যিই। কিভাবে এলেন?.
সাদ হাসলো। বললো
“তোমার রুম থেকে তোমার ঠিকানা উদ্ধার করেছি।
“মানে? ভ্রু বাকালো আশা।
সাদ বললো
“আন্টি বলেছে আমাকে রুমে নিয়ে যেতে। এই প্রথম বার তোমার বাড়ি এলাম৷ তাও এভাবে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছো। তোমার ঘরে কি আমার একটু যায়গা হবেনা?

আশা কপাল কুচকে বললো
“বলবেন না তাইতো?
“আগে রুমে যাই, ফ্রেশ হই। রেস্ট নিয়ে নাহয় বলবো।
আশা আর কোনো কথা না বাড়িয়ে সাদকে নিয়ে ঘরে গেলো।। বাড়িটা যথেষ্ট বড় হওয়া স্বত্বেও অনেক মেহমান থাকায় পুরো বাড়িটা গিজগিজ করছে। এতো অপরিচিত লোকের ভীড়ে সাদ কিছুটা অস্বস্তি বোধ করছিলো, সেটা নজরে এলো দিলারার। তিনি সাদের কাছে এসে বসলেন।।ড্রয়িংরুমের সোফায় এনে ওকে বসিয়েছে আশা। দিলারা মমতাভরে বললেন
“তোমার এখানে খারাপ লাগছে বাবা?
সাদ বিনীত গলায় বললো
“নাহ আন্টি, আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

দিলারা সাদকে কিছু না বলে আশাকে ডাকলে। আশা সাদকে বসিয়ে চলে গেছিলো আবার কাজিনদের কাছে। ওরা চায়ের জন্য অপেক্ষায় আছে, বার বার ডাক আসছিলো সেখান থেকে। আশা সকলের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে ছুটে চলে আসলো ঘরে। দিলারার দিকে তাকিয়ে বললো
“ডাকছিলে মা?
“সাদকে তোর রুকে নিয়ে যা।
“আমার রুমে? অবাক হয়ে বললো আশা।
দিলাশা সামান্য ধমকের স্বরে বললেন
“হ্যাঁ তোর রুমে।। পুরো বাড়ি জুরে ওই তোর রুমটাই তো ফাঁকা আছে। ছেলেটা এতটা দূর থেকে এসেছে। ওর একটু বিশ্রামের প্রয়োজন।
আশা আড়চোখে তাকালো একবার সাদের দিকে। সাদ মিটিমিটি হাসছে। আশা ভ্রু বাকালো সে হাসি দেখে।
দিলারা আবারও বলে উঠলেন
“তারাতাড়ি নিয়ে যা। বাথরুম টা দেখিয়ে দিস, হাতমুখ ধোয়া হলে তোয়ালেটা দিস। আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।

আশা অবাক হলো। মা এতোটা উদ্ধিগ্ন হলো কেন উনার আপ্যায়নের জন্য? যদিও মা সকল মেহমানদের বেশ খাতির যত্ন করেন। তবে উনার বেলায় একটু বেশিই দেখা যাচ্ছে। আমাদের বাড়িওয়ালা বলেই কি?
ঘোর ভাংলো সাদের ডাকে। সাদ আশার চোখাচোখি দাঁড়িয়ে আছে। আশা বললো
“কি?
“এখনো দাঁড় করিয়ে রাখবে? চলো রুমে যাই।
আশা দেখলো মা নেই এখানে। কখন চলে গেছে সে নিজেও দেখেনি। সে কিছুটা শক্ত গলায় বললো
“আসুন।
আশার রুমে গিয়ে অবাক হলো সাদ। রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজানো। সে ভাবতো গ্রামে হয়তো গোছগাছ টা এতো বেশি দেখা যাবে না। কিন্তু এতো বিশাল সৌন্দর্যে ভরা।

সাদ দুবার না ভেবে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পরলো। আশা বললো
“হাতমুখ না ধুয়ে এভাবে শুয়ে পরলেন যে?
“এটা তোমার বিছানা কিউটি?
“রুমটা যেহেতু আমার, বিছানা টা তো আমারই হবে তাইনা।
“হুম, তা ঠিক। তোমার রুমটা কিন্তু তোমার মতোই কিউট…
আশা উত্তর দিলো না। সাদ প্রশ্ন করলো
“সেদিন আমাকে না বলে এভাবে চলে এলে কেন?
আশা বড় বড় চোখ করে তাকালো সাদের দিকে। বিস্ময় নিয়ে বললো
“মানে?
সাদ আবারও বললো
“সেদিন বাসায় এসে তোমাদের আর পেলাম না। অনেক টেনশনে ছিলাম।।পরে মায়ের কাছ থেকে জানতে পারলাম তুমি বাড়ি চলে এসেছো। জানো, কথাটা শুনে আমার কত খারাপ লেগেছিলো! আমাকে বলে আসা উচিত ছিলো তোমার।

“আমি আমার নিজের বাড়ি এসেছি, আমার ভাইয়ার সাথে। তাহলে আপনাকে বলে আসবো কেন.? আর তাছাড়া আপনি আমার কে, যে আপনাকে বলে তারপর আমার বাড়ি আসতে হবে?
“আমি তোমার কেউ নয়?
সাদের আবেশি গলার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না আশা। সে চোখ সরিয়ে নিলো ঝটপট। এমন সময় দিলারা এসে ঢুকলো ঘরে। একটা ট্রেতে করে কিছু পিঠা আর মিষ্টি নিয়ে এসেছেন তিনি। সাদকে এভাবে দেখে বললেন
“তুমি এখনো হাতমুখ ধোওনি বাবা।
সাদ উঠে দাঁড়ালো। বিনয়ের সাথে বললো
“এখনি ধুবো আন্টি।
দিলারা ট্রেটা টেবিলের উপর রেগে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে বলে গেলেন হাত মুখ ধুয়ে এগুলো খেয়ে নিতে।

উনি যাবার পর আশা সাদকে ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিলে সে ফ্রেশ হবার জন্য পা বাড়ায়।

রাত প্রায় নটা। বাইরে একটা জটলার মতো বেধেতে। মুরুব্বিরা বসে হিসেব কষছে বরযাত্রী কারা কারা যাবে। আদিব ওদের চা পানের আপ্যায়ন করাচ্ছে। কিছুক্ষণ আগেই সে বাড়ি ফিরেছে। কোনো একটা কাজে কোথাও যেতে হয়েছিলো তাকে। বাড়ি ফিরে সাদকে দেখে প্রথমে অবাক হলেও পরবর্তীতে বেশ খুশিই হয়েছে সে। তাদের দুজনের মধ্যে কুশল বিনিময়, কথাবার্তা সবকিছুই হয়েছে। আশা বাড়ির মেয়ে বউদের নিয়ে বউয়ের জন্য আনা জিনিসপত্রগুলো খুটে খুটে দেখছে। এক পর্যায়ে বউয়ের জন্য আনা বেনারসির ওরনাটা সে দুষ্টুমির ছলে মাথায় দেয়। সেটা নজরে আসে সাদের। ওকে এতো কিউট দেখাচ্ছিলো বলার বাইরে, একদম বউ বউ লাগছিলো। সাদ সেই মুহুর্তটা মিস না করে পকেট থেকে স্মার্টফোন বের করে টুক করে কয়েকটা ছবি তুলে নেয়। বার কয়েকবার ছবিগুলো সে দেখতে থাকে। প্রতিটা এঙ্গেল থেকে ছবিগুলো অনেক ভালো উঠেছে। কিউটিকে আরো বেশ কিউট দেখাচ্ছে। এক অজানা খুশিতে মনটা হটাৎ ভরে গেলো সাদের। দৃষ্টি ছবি থেকে সরিয়ে আশার দিকে ফেরালো। ঠোঁটের কোনে একরাশ হাসি নিয়ে তাকিয়ে রইলো সেদিকে।

বিয়ে উপলক্ষে সারা বাড়ি গমগমে অবস্থায়, এতটা রাত হয়েছে তাও কারো চোখে নেই কোনো ঘুম।।দিলারার শরীরটা ক্লান্ত থাকায় তাকে রুমে নিয়ে জোর করে শুইয়ে দিয়ে এসেছে আশা। বাইরে ছোটবড়রা মিলে চাঁদের আলোয় আনন্দ করছে। পাড়ার বয়স্ক মহিলারা যে যেভাবে পারছে গীত গাইছে, নাচছে। ব্যাপারটা এক পাশের একটা চেয়ারে চসে উপভোগ করছে সাদ। শহরের বিয়ে সম্পর্কে সে অবগত। নাচে গানে, আনন্দ ফুর্তিতে থেকেছেও সে।কিন্তু সবটাই কেমন কৃত্রিম মনে হয়েছে তার। এই প্রথম কোনো গ্রামের বিয়ে সে দেখতে। সবটাই যেনো জীবন্ত, কোনো কৃত্রিমত্তার ছাপ নেই এখানে।
আশা সাদকে খেয়াল করে এগিয়ে এলো তার কাছে। একটা চেয়ার টেনে বসলো কিছুটা দুরত্বে। সাদ তখনও দেখেনি আশাকে৷ তার নজর সেদিকেই।
আশা সামান্য গলা কাশি দিলো। সাদ ফিরে তাকালো আশার দিকে। আশাকে দেখে সে সামান্য নড়েচড়ে উঠলো। শান্ত গলায় বললো
“এখানে কখন এলে কিউটি?
“এই মাত্রই।
“ওহ।
“কিছু ভাবছেন?
“ভাবছি, যদি এখানে না আসতাম তাহলে বোধহয় জীবনটা অপূর্ণই থাকতো।
“হটাৎ এমন কথা কেন বলছেন?
“তুমি জানো, আমি এই প্রথম গ্রামে এসেছি, আর এই প্রথমবার গ্রামের কোনো বিয়ে দেখছি। শহরের মতো এতো ডেকোরেট নেই, তাও মনে হচ্ছে জীবনের অর্ধেক আনন্দ যেনো এখানেই পেয়ে গেছি।
আশা হাসলো সাদের কথায়। কিছুক্ষণ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো আকশের ওই পূর্ণ চাঁদটার পানে।

সাদও নির্বাক। কিছুটা সময় নিরবতা বিরাজ করার পর মুখ খুললো আশা। শান্ত গলায় বললো
“আমাদের এখানকার ঠিকানাটা কিভাবে পেয়েছেন বললেন না যে।
সাদ আশার দিকে তাকালো। মিহি গলায় বললো
“বলবো?
“হুম।।
“রাগ করবে না তো আবার আমার উপর?
“রাগ করবো কেন। আপনি বলুন , আমি শুনছি।।

সাদ মুচকি হাসলো। এক পলক আশার দিকে তাকিয়ে সে বলতে শুরু করলো.

চলবে…..