#অরুণরাঙা_প্রেম
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি
” বাবু কোথায় ছিলে তুমি?জানো আমি তোমাকে কতগুলো ফোন করেছি।এই তুমি কি অন্যকোন মেয়ের সাথে আছো?প্লিজ বাবু তুমি এরকম করোনা,আমি তোমাকে সত্যি খু্ব ভালোবাসি।”
মেয়েটার কথা শুনে আরোশী প্রচুর পরিমাণের অবাক হলো,সেইসাথে সে কনফিউজড মেয়েটা আসলে কে এবং তার সাথে আকাশের সম্পর্ক কি।সে কি আকাশের স্ত্রী নাকি প্রেমিকা?আর তার থেকেও বড় কথা সে কি আহিরের মা?মেয়েটা নানা কথা বলে যাচ্ছে কিন্তু আরোশী চুপচাপ তা শুনে যাচ্ছে।
” আরোশী।”
.
.
” খালা কেন আপনাকে সঙ্গে নিলো না?”
” কারণ মায়ের মতো আমি নাকি যেখানেই যায় মেয়ে পটা*তে যায়।ওখানেও গেলেও নাকি কোন মেয়েকে লা*ইন মার*বো।এর ভয়েই মা আমাকে নিজের সঙ্গে নিয়ে গেলোনা।”
অভ্রের কথা শুনে শিলার হাসি পেলেও সে নিজেকে সংযত করলো।
” আপু তুমিই বলো আমি কি এরকম?তুমি তো জানো আমি কতো ভালো।আমি কি মেয়েদের লাই*ন মা*রি নাকি?উল্টো তারই আমার সুন্দর মুখখানা দেখে লাই*ন মার*তে আসে।” দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বললো অভ্র।
” আরে না না অভ্র কে বলেছে তুমি এরকম।তুমি তো অনেক ভালো,সাদাসিধা একদম।খালা ভুল বলেছে।এরপর আমার খালার সাথে দেখা হলে আমি তাকে অবশ্যই বললো এই কথাটা।”
” কি জানি মা কখন আসবে।আমার ওই ভুত প্রসাদে একা একা থাকতে একদম ইচ্ছে করেনা।”
” একা থাকতে ইচ্ছে না হলে একটা বিয়ে করে বউ নিয়ে এসো।”
” না……।” চিৎকার করে বলে উঠলো অভ্র।অভ্রের চিৎকার শুনে শিলা ছিটকে দূরে সরে গেলো।
” কি হয়েছে?”
” আমি কোন বিয়ে টিয়ে করবোনা।বিয়ে মানেই ঝামেলা।আমার টাকা আমার কাছে অনেক প্রিয়।বিয়ে করে আমি আমার সাধের টাকাগুলো কে নিজের থেকে আলাদা করতে চায়না।সো নো বিয়ে করা,অনলি মানুষের বিয়ে খাওয়া।”
.
.
হুট করে আকাশের কণ্ঠ শুনে আরোশী কেঁপে উঠলো।সে ভয়ে ভয়ে পেছনে তাকালো কারণ সে আকাশের পারমিশান ছাড়া তার ফোন ধরেছে।আরোশী পেছন ফিরে তাকাতেই আহির ভ্রু উঁচিয়ে তার দিকে তাকালো।
” আসলে আপনার ফোনটা অনেক বার রিং হচ্ছিলো।আহির ঘুমিয়ে ছিলো আর আপনিও বের হচ্ছিলেন না তাই আমি ফোনটা রিসিভ করেছিলাম।”
আরোশীর কথা শেষ হতেই আকাশ তার হাত বাড়িয়ে দিলো ফোন দেওয়ার জন্য।আরোশী তাড়াতাড়ি ফোনটা আকাশকে দিয়ে দিলো।
” স….” আরোশীর কথা শেষ হওয়ার আগেই আকাশ ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।আরোশীও আর কিছু না বলে আহিরের দিকে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো।বের হতে হতে সে শুনতে পেলো আকাশ বলছে,
” আরে বেবি কি বলছো তুমি,আমি তো শুধু তোমাকেই ভালোবাসি।”
আরোশী নিচে এসে দেখতে পেলো অভ্র সোফায় বসে টিভি দেখছে।আরোশীকে দেখে অভ্র টিভির সাউন্ড ছোট করে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” আকাশ কোথায় আপু?আর আহির?এলো না যে?”
” আহির ঘুমাচ্ছে ভাইয়া আর স্যার কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।”
” ও আচ্ছা।” এটা বলেই অভ্র আবারো টিভি দেখতে ব্যস্থ হয়ে গেলো।আরোশী অভ্রের সামনে থাকা সোফাটাতে বসলো।সে অভ্রকে কিছু বলতে চাইছে কিন্তু জড়তার কারণে বলতে পারছেনা।অবশেষে জড়তাকে একপাশে রেখে সে একটু নড়েচড়ে বসলো।
” ভাইয়া আপনাকে কি একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?”
আরোশীর কথা বলার ধরণ দেখে অভ্র বুঝতে পারে আরোশী সিরিয়াস কিছু বলবে তাই সে টিভি অফ করে দিলো।
” কি কথা আপু?” একটু ঝুঁকে নিচুস্বরে বললো অভ্র।
” আব….আচ্ছা স্যারের কি কোন গার্লফ্রেন্ড আছে?”
” আরে না গা…..গার্লফ্রেন্ড!গার্লফ্রেন্ড কোথা থেকে আসবে আপু?আপনি কি আকাশকে কারো সাথে ঘুরতে দেখেছেন?”
” না দেখিনি তবে ফোনে কে যেন ওনাকে বাবু বলছিলো।”
” ফোনে?”
আরোশী সংক্ষেপে অভ্রকে সব খুলে বললো।সব শুনে অভ্রের মুখ পুরো হা হয়ে গেলো।
” কি সব বলছেন আপু?না এটা হতে পারেনা।আকাশ আমাকে এভাবে ধোঁকা দিতে পারেনা।”
অভ্রের কথা আরোশী কিছুই বুঝতে পারেনা,সে শুধু তার কথাগুলো শুনছে।
” কিরে অভ্র তুই কবে এলি?আমাকে ডাকলি না যে?”
” এতো কিছুক্ষণ আগে।” স্বাভাবিক ভাবেই বললো অভ্র কিন্তু পরক্ষণেই সে চিৎকার করে উঠলো।
” আকাশ আমার জানের বন্ধু,প্রাণের বন্ধু তুই কি করে এটা করতে পারলি?কি করে পারলি তোর এই বন্ধুটাকে ঠকাতে?আমি তোকে কতো বিশ্বাস করতাম আর সেই তুই আমার বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলো।আমি তো ভাবতেই পারছিনা তুই আমার সাথে এভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করবি।”
অভ্রের কথা শুনে আকাশের মাথায় বাজ পড়েছে মতো অবস্থা কারণ সে তো আর জানেনা অভ্র কেন এরকম করছে।
” কি হয়েছে?এরকম করছিস কেন?আর আমি তোর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছি?সিরিয়াসলি?”
” হ্যাঁ করেছিস,আলবাত করেছিস।আমাকে না বলাটা কি বিশ্বাসঘাতকতা নয়?”
” কিসব বলছিস তুই?এতো ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাসুজি বল কি হয়েছে।”
অভ্র কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।সে একবার আরোশীর দিকে তাকিয়ে আকাশকে সাইডে নিয়ে গেলো।
আরোশী পেছন ফিরে দেখলো অভ্র আকাশকে কিছু বলছে আর আকাশ তাকে হাত নাড়িয়ে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছে।আরোশী জানে তারা কি নিয়ে কথা বলছে কিন্তু আকাশ কি বলছে সেটা সে জানেনা।কিছুক্ষণ পর হুট করেই অভ্র আকাশকে জরিয়ে ধরলো।আকাশ নিজেকে অভ্র থেকে ছাড়িয়ে কিছু একটা বলে উপরে চলে গেলো।আকাশ যেতেই আরোশী উঠে দাঁড়ালো।সে ভেবেছিলো অভ্র এদিকে আসবে কিন্তু না অভ্র সোজা দরজা খুলে বেরিয়ে গেলো।আরোশী বোকার মতো শুধু দেখেই রইলো।
আকাশ আর অভ্রের মাঝে কি কথা হয়েছে তা জানার জন্য তার মন খচখচ করছে কিন্তু যাকে জিজ্ঞেস করবে সেই তো নেই।আরোশী হতাশ হয়ে সোফায় বসে চিন্তা করতে লাগলো তারা কি কথা বলতে থাকতে পারে।
__________________________________________
আজ শনিবার বিদায় আহিরের স্কুল বন্ধ।আহির আরোশীর কাছে আবদার করেছে সে নাকি আজ আকাশের অফিসে যাবে।আরোশী শিলার সাথে কথা বলে আহিরকে নিয়ে যেতে রাজি হয়ে গেলো।বারোটার দিকে আরোশী আহিরকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো,সঙ্গে আকাশের জন্য দুপুরের খাবারও নিলো।যেহেতু বাড়িতে ড্রাইভার ছিলো তাই আরোশী আগে থেকে না চিনলেও যেতে কোন সমস্যা হয়নি।
আকাশের অফিসটা ৫ তলা বিশিষ্ট।নিচের রিসেপশেনে জিজ্ঞেস করে আরোশী জানতে পারলো আকাশের কেবিন তিল তলায়।আরোশী আহিরকে নিয়ে সিঁড়ি দিয়েই উঠলো যেহেতু বেশি উপরের নয়।তিন তলায় এসে রিসেপশনে জিজ্ঞেস করার পর তারা আরোশীকে অপেক্ষা করতে বললো কারণ আকাশ নাকি মিটিং রুমে আছে।
কিছুক্ষণ বসার পর আহির বললো সে নাকি ওয়াশরুমে যাবে।আরোশী খাবারের ব্যাগটা রিসেপশনে রেখে আহিরকে নিয়ে ওয়াশরুমে গেলো।তবে বের হওয়ার সময় আরোশীর মনোযোগ আহিরের দিকে তাকাই সে সামনে যে কেউ আসছে সেদিকে খেয়াল করেনি।যার ফলে না চাইতেও সে একটা লোকের সাথে ধাক্কা খেলো।আরোশী তাড়াতাড়ি লোকটা দিকে তাকালো এবং তাকে সরি বলে আহিরকে নিয়ে তাড়াতাড়ি চলে গেলো।এদিকে ধাক্কা খাওয়া লোকটা আরোশীর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
রিসেপশেনিস্ট এসে আরোশীকে বললো আকাশের মিটিং শেষ তারা যেন আকাশের কেবিনে গিয়ে বসে।আরোশী রিসেপশন থেকে খাবারের ব্যাগটা নিয়ে কেবিনের ভিতরে গিয়ে বসলো।
আরোশী ভেবেছিলো আহির হয়তো এখানে এসে দুষ্টুমি করবে,তাকে সামলানো কঠিন হয়ে যাবে কিন্তু না সবসময়ের মতো এখনো আহির চুপচাপ আরোশীর পাশে বসে আছে।
” এই কে তোমরা?”
হুট করে একটা মেয়ের কন্ঠ শুনে আরোশী চমকে যায়।সে ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখলো ফরমাল ড্রেসে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
” কি হয়েছে?এভাবে কি দেখছো?আর কে তোমরা?এখানে চুরি করতে এসেছো নাকি?”
” আমরা স্যারের সাথে দেখা করতে এসেছি।” যদিও মেয়েটা কথাগুলো রুড ভাবে বলছে তাও আরোশী মুখে হাসি বজায় রেখে উওর দিলো।
” কেন?চাকরির জন্য নাকি?এখন কোন চাকরি দেওয়া হচ্ছে না।যাও এখান থেকে।”
” না আপু আপনি ভুল ভাবছেন।আমরা স্যারের বাড়ি থেকে এসেছি।উনি আমাদের ভালো করেই চেনেন।”
” ও তুমি বলবে আর আমি বিশ্বাস করে নেবো,হা….।তোমার পাশের বাচ্চাটা কে?তোমার বাচ্চা বুঝি?বাহ্ তোমাকে দেখে তো মনেই হয়না তুমি এক বাচ্চার মা।কিভাবে ফিগার মেইনটেইন করো তুমি?
” না আপু আহির আমার নয় স্যারের ছেলে।”
হুট করে কি হলো আরোশী বুঝতে পারলোনা,মেয়েটা হুট করেই হেসে উঠলো।এমনভাবে হাসছে যেন আরোশী খুব মজার কিছু বলেছে।
চলবে……..