শেষের পঙক্তি পর্ব-২৬+২৭

0
501

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৬
সদ্য স্নানে স্নিগ্ধ নববধূ। লাল জামদানী গায়ে জড়িয়ে আরশিতে প্রিয়তমের ঘুমন্ত প্রতিচ্ছবি দেখে লাজুক হাসে তূর। গতকাল রাতে গল্প করতে করতে ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গিয়েছিল তারপর একসাথে নামাজ পড়ে ঘুমিয়েছে দুজনে। সকাল ৯টা বাজে এখন। পরিপাটি হয়ে বসে আছে কেউ ডাকতে আসবে তার অপেক্ষায়। কিন্তু এখনও কেউ এলো না। তূর মিহালকে ডাকবে ভাবছে আবার ভাবছে ডাকবে না। দর্পনে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে এরকম ভাবতে ভাবতে কখন যে আনমনা হয়ে গেছে খেয়াল নেই। হঠাৎ কাঁধে কারও ঠোঁটের স্পর্শে ঘোর কাটে। আয়নায় দিকে নজর যেতে মিহালকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে যায়। মিহাল চোখে হাসে। মিহাল বলে,

–গুড মর্নিং বউজান।

প্রিয়তমের মুখ নিঃসৃত “বউজান” শব্দটা হৃদয়ে ঝড় তুলেছে প্রগাঢ় ভাবে। লোমকূপ দিয়ে শীতল উদ্দীপনা বয়ে চলেছে যার ফলশ্রুতিতে শরীর কাঁ’টা কাঁ’টা দিয়ে উঠছে। তূর আড়ষ্ট ভঙ্গিতে নতমস্তকে বসে থাকে। মিহাল তূরকে নিজের দিকে ঘুরায় অতঃপর হাঁটু ভেঙে তূরের সামনে বসে প্রেমময় স্বরে বলে,

–এই মায়াকন্যা! এতো লাজুকলতা হলে চলে? তুমি লাজুক হলে আমার যে বেশি বেশি প্রেম জাগে। তখন নিজেকে কন্ট্রোলেস মনে হয়। ইচ্ছে করে তোমাকে টুপ করে খে য়ে ফেলি! কী ভয়ংকর ইচ্ছে আমার! আবার ইচ্ছে করে, বক্ষ গহ্বরে থাকা খাঁচাতে আবদ্ধ করে ফেলি। এখন থেকে কম করে লজ্জা পাবে কাজলমায়া! নাহলে কখন তোমাকে কা ম ড়ে কু ম ড়ে খেয়ে ফেলি বলা যায় না।

তূর আর সহ্য করতে পারলো না। মিহালকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে আলতো ধা-ক্কা দিয়ে দৌঁড়ে দরজা খুলে রুম থেকে পাগারপার। রান্নাঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জড়োসরো হয়ে। মিহালের মা ও বোন রান্না করছে। আজকেই তূর ও মিহালের রিশেপশন তাই অনেক কাজ। কায়রা কী মনে করে পেছোনে ঘুরে তূরকে দেখতে পেলো তারপর হাসি মুখে এগিয়ে এসে বলে,

–আরে তূর। আসো।

তূর ভিতরে যায়। মিহালের মা হাতের কাজ থামিয়ে হাসি মুখে বলেন,
–খিদে পেয়েছে? এখনও অনেকের ঘুম ভাঙেই নি। কাল অনেকরাত করে ঘুমিয়েছে তো। তুমি বসো নাস্তা হয়ে এসেছে। দুধ চুলায় বসিয়েছি এখন চালটা দিয়ে দিবো।

তূর আমতা আমতা করে বলে,
–পায়েসটা আমি করি? এমনিতেই ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেছে। কোনো সাহায্য করতে পারলাম না।

মিহালের মা তাড়াহুড়ো করে বলেন,
–আরে না না। আমরা কিছু মনে করি নি। তোমাকে কস্ট করতে হবে না। তুমি রেস্ট করো একটু। আমাকে ওরকম শাশুড়ি ভেবো না যে প্রথমদিন বউকে কাজ না করার জন্য খোঁটা দিবো বা কটুকথা বলবো। আমি প্রথমে অন্যরকম থাকলেও চোখের পর্দা হটার পর আমি তোমাকে মন থেকে মেনে নিয়েছি।

তূর খুশি হয়। এবার সে একটু অধিকার নিয়েই এসে শাশুড়ির হাত থেকে চালের বাটিটা নিয়ে নিজে ধৌত করতে থাকে। মিহালের মা তূরের কাজে তাকিয়ে থেকে আলতো হেসে নিজের কাজে মন দেয়।

_______
ওদিকে নীরা সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে রান্নাঘরে গিয়ে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছিলো কিন্তু কাউকে না দেখে ড্রয়িংরুমের সাথে লাগানো টেরেসে বসে আছে। কিছুক্ষণ বসে থাকার পর পেছোন থেকে কেউ নীরার দিকে কফির মগ বাড়িয়ে দিলো। নীরা হকচকিয়ে গেলো কারণ অচেনা বাড়িতে তারপর সবাই ঘুমে তাই তার গা ছমছম করছিল। ইফতি নীরার পাশে একটু এঙ্গেল করে মোরা নিয়ে বসে কফির মগে চুমুক দিয়ে বলে,

–তোমাকে বুঝিয়ে লাভ নেই। সময় নেও সহজ হতে। এখন কফিটা টেস্ট করে বলো কেমন হয়েছে?

নীরা মুচকি হেসে কফির মগে চুমুক দেয়। কফিটা দারুন তবে চিনি যুক্ত না। মধু দিয়ে বানানো। নীরার ভালোই লাগে। নীরা বলে,
–ডাক্তার মানুষ চিনি খাবে না এটাই আশা করা যায়। তবে আপনি দারুন কফি বানান।

ইফতি হেসে বলে,
–হুম। মধুটাও সরাসরি লোক দিয়ে সুন্দরবন থেকে আনানো হয়েছে। বাজারজাত মধু না।

দুইজন নিরব হয়ে যায়। সকালের স্নিগ্ধ প্রকৃতি দুইজনে পাশাপাশি উপভোগ করছে। পাখির কিচিরমিচির শুরু হয়েছে। এক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। ছোট বেলায় “আরলি রাইজিং” প্যারাগ্রাফে সবসময় সকালের প্রকৃতি সম্পর্কে বর্ণনা থাকতো। যা পড়ে মনে হতো হয়তো বাড়িয়ে বলছে কিন্তু সেটা সত্যই বলতো।

নীরার শাশুড়ি ঘুম থেকে উঠলে নীরা বলে সে কিছু বানাবে। তাই তার শাশুড়ি তাকে পায়েস বানাতে দেন।

______

রিসিপশনের অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। তূর হালকা কমলা রঙের বেনারসি পড়েছে সাথে ক্যাজুয়াল সাঁজ। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তূরকে। মিহাল পড়েছে নেভিব্লু ব্লেজারের সাথে সাদা শার্ট, বো টাই, নেভিব্লু প্যান্ট। চুলগুলো পেছোনের অর্ধেক পেছোন দিকে নেয়া আর সামনের গুলো কপালে ফেলে রাখা। তূর বারবার মিহালের দিকে আঁড়চোখে তাকাচ্ছে আর ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলছে। তূরের ভাবনা মতে, “মিহালকে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে আর মেয়েরা মিহালকে চোখ দিয়ে গি’লে খাবে। কিন্তু নিজেকে নিজের কাছে কেমন যেনো লাগছে।”

মিহাল ও তূর দুজনে স্টেজে বসে। গেস্টরা গিফট দিয়ে যাচ্ছে। তূরের বাড়ির লোক ও নীরারা এখনও আসে নি। ওরা রাস্তায় আছে। মিহাল তূরের দিকে খানিকটা ঝুঁকে কানের কাছে চুপিসারে ফিসফিস করে বলে,

–তোমাকে পুতুল পুতুল লাগছে। আচ্ছা, কেউ নজর দিচ্ছে নাতো আমার পুতুল বউয়ের উপর? আমার কেনো জানি হিংসে হচ্ছে। কী করা যায় বলোতো?

তূর চোখ ছোটছোট করে মিহালের দিকে তাকালো অতঃপর সেও আস্তে করে বলে,
–জেলাস তো আমার হচ্ছে। কে বলেছে এতো হ্যান্ডসাম হতে? এমনিতেই মেয়েরা তোমাকে দেখে দফায় দফায় ক্রা’শ খায়।

মিহাল ভাব নিয়ে ব্লেজার ঠিক করে বাঁকা হেসে বলে,
–বুঝতে হবে!

তূর দাঁত কিড়মিড় করে সামনের দিকে দৃষ্টি সরায়। নাকের পাটা রাগে ফুলে যাচ্ছে বারবার। মিহাল তা দেখে আড়ালে দাঁত কে’লা’চ্ছে।

তূরের বাড়ির লোকেরা ও নীরারা সবাই এসে গেছে। তূর গিয়ে ওর বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে তারপর নীরাকে, নাফিহাকে, কাকিকে ও তূর্যকে। নীরার পড়নে মিষ্টি কালার বেনারসি। খুব ভালোভাবে অনুষ্ঠান শেষ হয়। তূর ও মিহাল তূরদের বাড়িতে যায়। আগামিকাল নীরার রিসেপশন। তূরদের বাড়িতে যাওয়ার পর তূরের কাজিনরা তূরকে ঘিরে ধরলো শ্বশুরবাড়ির গল্প শুনতে। তূর কোনোমতে ওদের থামিয়ে রুমে এসে শুয়ে পড়লো। মিহাল বাহিরে গেছে তূরের কাজিন ভাইদের সাথে। তূর ভাবলো তার ব্যাক্তিগত ডায়েরিতে যে কয়েকদিন বিয়ের জন্য লিখে উঠতে পারে নি সেগুলো লিখে ফেলবে। মিহালের আসতে আরও ঘন্টাখানেক লাগবে। তূর একে একে সব সুন্দর করে লিখে ফেললো তারপর ডায়েরি বন্ধ করে বুকে জড়িয়ে ধরে স্বগোতক্তি করে,

“আমার শেষের পঙক্তির সকল স্মৃতিকথা। ”

______

পরেরদিন নীরার রিসেপশনে যায় সবাই। নীরাকেও অনেক সুন্দর লাগছে। নীরার রিসেপশনে মিহালের পরিবার গিয়েছে আলাদা ভাবে যেহেতু মিহাল তূরদের বাড়িতে। অনুষ্ঠান শেষে মিহাল তূরকে নিয়ে তূরদের বাসায় যায় নীরাদের সাথে। বিকেল হয়ে গেছে। একটু পর সন্ধ্যা নামবে। তূর ও বাকি কাজিনরা নীরাকে ঘিরে ধরেছে শ্বশুরবাড়ির মানুষজন কেমন জানতে। মিহাল, ইফতি ও তাদের শ্যালক গুষ্টির সাথে ছাদে গিয়ে আড্ডা দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ওরা নিচে এসে তূরদের সাথে যোগ দেয়। মাগরিবের আজানের পর তূর ও মিহাল বিদায় নেয় মিহালদের বাড়িতে যাবার উদ্দেশ্যে। তূরের মা তূরকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। তূর ওর মাকে সামলাতেই পারছে না। নীরা ও নাফিহা এসে কোনোমতে সামলায়। তূরের বাবা মেয়েকে বুকে আগলে নিয়ে চোখের কোনা মোছেন। উনারা রাত এগারোটায় এয়ারপোর্টে যাবে তূরদের সাথে। তূর নিজের প্রয়োজনীয় সব ও জামা-কাপড় নিয়ে নেয়। মিহাল ও তূর আজ রিকশা ভ্রমণ করে ওদের বাড়িতে যাবে ভাবলো। আবার দুই বছর পর ছাড়াতো দেশে আসতে পারবে না।
হুড খোলা রিকশা চলছে তার আপন গতিতে। তূর মিহালের কাঁধে মা’থা রেখে বাহু জড়িয়ে বসে আছে। গতকাল রিসেপশনের সময় থেকে সে মিহালের সাথে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। মিহাল রাস্তার ধারে এক মহিলাকে বাচ্চা কোলে নিয়ে বেলি ফুলের মালা বিক্রি করতে দেখে রিকশা থামাতে বলে তারপর নেমে মহিলার কাছে থাকা চারটা মালাই কিনে আনে। তূর তা দেখে মুচকি হাসে। তারপর রাস্তায় দাঁড়িয়ে সোডিয়াম লাইটের আলোয় রিকশায় বসা প্রিয়তমার হাতে মালা গুলো পড়িয়ে দিয়ে আলতো চুমু এঁকে বলে,

–ভালোবাসি।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

#শেষের_পঙক্তি
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৭
অশ্রুসিক্ত বিদায় সম্ভাষণের পর বিমানে উঠেছে তূর, মিহাল, রিজভী, রাফিরা। আর পনেরো-বিশ মিনিট পর টেকঅফ করবে। তূরের আঁখিযুগল নোনাজলে সিক্ত হচ্ছে বারংবার। মিহাল এক হাত দিয়ে আগলে রেখেছে ওকে। স্থির বিমানের জানালা দিয়ে রানওয়ের পাশে সবুজ ঘাস গুলো রানওয়ের ঈষৎ হলুদাভাব আলোয় স্বর্ণকণার মতো লাগছে। রাত আটটার দিকে বৃষ্টি হয়েছিল বলে আমেরিকা ও কানাডা গামী ফ্লাইট পিছিয়ে রাত একটায় আনা হয়েছে। তন্দ্রা লেগে যাচ্ছে তূরের। তূর ও মিহালের পরিবার রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত থেকে ফিরে গেছে। মূলত ওরা জোর করেছে। তূরের বাবা চাইছিল বিমান এয়ারপোর্ট ছাড়ার আগ পর্যন্ত থাকবে। কিন্তু তূর ও মিহালের বারবার বোঝানোতেও লাভ হচ্ছিলো না বিধায় ইফতি তাদের বুঝিয়ে নিয়ে গেছে।

রিজভী ও রাফি নিজের সিট থেকে উঠে এসে মিহালের কাছে জিজ্ঞাসা করে,
–তানজিনাকে দেখলাম। সে কই যাচ্ছে?

মিহাল অবাক হয়ে বলে,
–কই আমি তো দেখি নি। তোরা কই দেখলি? এই মেয়ে কী আমার পেছোন ছাড়বে না নাকি! আজব একটা।

রিজভী হাত দিয়ে ইশারা করে বলে,
–কুল কুল। হাইপার হোস না। তূরের সাথে কথা বলতে দেখেছিলাম।

মিহাল যেনো আরও উত্তেজিত হয়ে গেলো।
–মানে কী! ওই মেয়ে তূরের কাছে কেনো এসেছে? তার মুখে তো কাউকে হার্ট করার সময় লাগাম থাকে না।

মিহাল তূরকে আস্তে করে ডাক দেয়। হালকা নিদ্রাতে ডুবে গেছিলো তূর। মিহালের ডাকে চোখ হালকা করে খুলে বলে,
–কী?

মিহাল উৎকণ্ঠিত হয়ে সুধায়,
–তানজিনার সাথে তোমার কী কথা হয়েছে? সে কী তোমাকে কস্ট দিয়ে কিছু বলেছে?

তূর এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। তারপর ক্লান্ত স্বরে বলে,
–তানজিনা কানাডা যাচ্ছে। ওর বাবা ওকে কানাডা পাঠাচ্ছে পড়ালেখা ও আচরণে পরিবর্তন করতে। সেখানে ও যেখানে থাকবে সেই পরিবার অনেক স্ট্রিক্ট তাই তানজিনার বাবা ওকে সেখানে পাঠাচ্ছে। আর তানজিনা দেড় মাস যাবত ঘর থেকেও বের হতো না। অনেকটা নরম হয়ে গেছে। এগুলোই বলল। তাকে মাফ করে দিতে বলল পূর্বের আচরণের জন্য।

মিহাল সিটে গা এলিয়ে তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,
–বাহ! এতো দ্রুত পরিবর্তন? অবশ্য রমজান মাসে মানুষ নিজেকে শোধরাতে চায়। যাক ভালো হলেই ভালো। তুমি ঘুমাও। তোরা যা নিজের সিটে। সিটবেল্ট বেঁধে নে। এখনই টেকঅফ করবে সময় তো হয়ে এলো।

________

সূর্যের মৃদু উত্তাপে উদ্ভাসিত ক্যালিফোর্নিয়ার নীল অন্তরিক্ষ। জুন থেকে আগষ্ট মাসে তাপমাত্রা ২০-২৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়। বৃষ্টিপাতহীন থাকে এই ঋতু। তবে প্রকৃতির দোলাচল কেই বা ধরতে পারে! অবকাশ যাপনের অন্যতম সময় এখন ক্যালিফোর্নিয়ায়। সমুদ্র উপকূল সৈকতে পর্যটকসহ স্থানীয়দের অবকাশ যাপন করতে লক্ষ্যনীয়।
মুক্ত বাতাসে প্রাণ খুলে শ্বাস নিলো তূর। ক্যালিফোর্নিয়া তার সেকেন্ড হোম বলা চলে। এই অঙ্গরাজ্য তার হৃদয়ের কাছাকাছি অনেকে আছে। আত্মীয়রা বাদেও পেয়েছে কিছু বন্ধু যারা চারটা বছর তূরের ভালো-খারাপের সঙ্গী ছিল। এয়ারপোর্টে এরিক, এলেক্স, ওলিভা, ম্যাক্স, এলিনা, রিম, শারিক এসে হাজির। রিম, ওলিভা ও এলিনা এসে তূরকে জড়িয়ে ধরে। তূরও ওদের জড়িয়ে নেয়।

ওলিভা বলে,
–হেই নূর!(তূর) ইউ আর ফরগোটেন আস? হাউ কুড ইউ বেব?

তূর ওলিভার গুলোমুলো গালগুলো টেনে বলে,
–সরি ডিয়ার। আমি এলিনার সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। তুমি ও এলেক্স নাকি আবারও ব্রেকআপ করেছিলে? তাই আমি তোমাকে নক করি নি। তোমরা এত ব্রেকআপ করে থাকো কী করে?

ওলিভা গাল ফুলিয়ে বলে,
–হোয়াই হি টক উইথ রোলিনা? আই ডোন্ট লাইক হার এট অল। সি ইজ সো মাচ এনোয়িং। টুমি জানো? অন পারপোসলি সি কিসড এলেক্স এন্ড এলেক্স ওয়াজ জাস্ট লেট হার গো! হোয়াই এলেক্স ডিডেন্ট স্ল্যাপ(থা-প্প র) হার? আমি রাগ করেছি অনেক বেশি। টুমি থাকলে রাইট জাজ করতে।
(ওলিভারা ভাঙা ভাঙা অনেকটা ভালোই বাংলা বলতে পারে ও বুঝে।)

তূর এলেক্সকে ডেকে বলে,
–তুমি এতো রাগাও কেনো ওকে?

এলেক্স মাথা চুলকে বলে,
–সি লুকস মাচ মোর বিউটিফুল, হোয়েন সি ইজ এংড়ি এন্ড ক্রাইং। দেন হোয়াট শুড আই ডু?

তূর চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বলে,
–সো ডিল উইথ হার এলোন।

এলিনা তূরের হাত ধরে বলে,
–জিজু? উই ওয়ান্ট টু টক উইথ হিম। ইন্ট্রুডিউস করাবে না?

তূর সবার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দিলো। এলিনার বড় ভাই এরিক তাড়া দিয়ে বলে,
–গাইস, কাম ফাস্ট। উই আর ইন হ্যারি(জলদি)।

ওরা সকলে গাড়িতে উঠলো। দুইটা মাইক্রো এনেছে ওরা। আজ ওরা এলেক্সদের বাড়িতে উঠবে। এলেক্সের বাবা-মা নিউ ইয়র্কে থাকে। এখানে মাঝে সাঝে আসে বাচ্চাদের সাথে সময় কাটাতে। এলিনা ও এরিক এলেক্সের কাজিন। এরিক ও এলিনার বাবা-মা সেপারেশনে আছেন। এই বাড়িটা ওদের তিন জনের নামে লিখে দিয়েছে ওদের পেরেন্টসরা। এরিক তার বাবা-মাকে সহ্য করতে পারে না একদমই।

ফাইজা তূরের কানে কানে বলে,
–দোস্ত ওই গম্ভীর ছেলেটা এতো কিউট কেন? আর এটিটিউট তো মাশাআল্লাহ।

তূর ভ্রঁ নাঁচিয়ে বলে,
–এরিক এমনি। সে গম্ভীর হয়েছে তার পরিবারের কারণে। এটিটিউট এতো কারণ সে নিজের মত ছাড়া কারোটাই শোনে না।

ফাইজা এরিককে দেখে চলেছে। ওলিভা, এলিনা ও রিম মিলে তূর ও মিহালের জন্য এখন চটপট রুম সাঁজিয়ে ফেলেছে। বাকিদের কয়েকজন করে একেকটা রুমে রেস্ট করতে পাঠিয়ে দিয়েছে।

_______
প্রমিতি সিঙ্গাপুরের এক গাইনির ডক্টরের সামনে বসে আছে। সে জানতে এসেছে তার রোগগুলোর কারণে কী কনসিভ করতে প্রবলেম হবে কিনা? ডাক্তার বলেছে হাইলি রিস্ক থাকবে। কিন্তু প্রমিতির বাচ্চা নেওয়ার খুব ইচ্ছে। দুই মাস যাবত ওরা সিঙ্গাপুরে আছে। প্রফেসর আরিফ সিঙ্গাপুরের একটা ভার্সিটিতে নিযুক্ত হয়েছেন। প্রফেসর আরিফ ভার্সিটিতে আর এই ফাঁকে প্রমিতি ডাক্তারের কাছে চলে এসেছে। এই দুই মাসেও প্রমিতি ও প্রফেসর আরিফের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক গড়ে উঠেনি প্রমিতির অসুস্থতার কারণে। কিন্তু প্রমিতি তার স্বামীর সান্নিধ্য চেয়েছিল অনেকবার। প্রমিতির বারবার মনে হয় সে বাঁচবে না। তাই সে তার স্বামী প্রফেসর আরিফের সন্তান নিজের উদরে ধারণ করতে চায়।

প্রমিতি হতাশ হয়ে ফিরে যায়। তাও সে বেবি কনসিভ করতে চায়। দরকার পরলে প্রফেসর আরিফকে ইনটক্সিসাইট করবে। তার জীবনের শেষ চিহ্নের মাঝে সে তার ভালোবাসার মানুষটার জীবনে আজীবন থাকতে চায়।

_______
সময়ের পরিক্রমায় সবাই অগ্রসর হয়। দুইমাস কেটে গেছে। তূর ও মিহাল একটা বেডরুম, ওয়াশরুম ও কিচেন সহ ছোট ফ্লাট নিয়েছে। ওদের পাশের ফ্লাটে অর্ক, ও রিজভী। আর আরেকটা ফ্লাটে রিম, ফাইজা। রাফি, রণক, জারিন ও লিরা আরেকটা ভার্সিটিতে আর সেটা অনেকটা দূরে হওয়াও ওরা এখানে থাকে না। ওরা পরের সেমিস্টারে চেষ্টা করবে মাইগ্রেশন করার। সবাই একসাথে হলে একত্রে বড় ফ্লাট নিবে। মিহাল ও তূর সারাদিন ক্লাস, জব করে এসে দুজন একান্তে কিছু সময় কাটায়। এভাবেই দিন এগোচ্ছে। এর মাঝে রায়হান এসে তূর ও মিহালকে কনগ্রাচুলেট করে গেছে। তূর সেদিন ভয় পাচ্ছিলো যদি রায়হান মিহালকে কুটুক্তি করে? কিন্তু রায়হান সেসব কিছুই করে নি। তূররা সবাই আজকে তূরের খালার বাড়িতে যাবে। তূরের খালামনি তূরকে অনেকবার বলেছে কিন্তু তূরের সময় হচ্ছিলো না। দুই সপ্তাহ আগে ফ্রি ছিলো একদিনের জন্য তখন তূর তার প্রফেসরের বাড়িতে সবাইকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিল। প্রফেসরের বাড়ি অনেকটা কাছেই। এরিক ও এলেক্সরাও সাথে যাবে। ফাইজা এটা শুনে একটু ভালো করে পরিপাটি করলো নিজেকে। এরিক ও এলেক্সরা অন্য ইউনিভার্সিটিতে আছে তাই মাসে দুইবার কী তিনবার দেখা হয়।

তূরের খালামনি সবাইর সাথে কুশল বিনিময় করেন। তূরকে জড়িয়ে ধরে বলেন,
–তোমার এতোদিনে খালামনির কথা মনে হলো? জামাইকে নিয়ে এতোদিন পরে এলে।

তূর হাসিমুখে বলে,
–আগে বাসা ভাড়ার টেনশন ছিলো না কিন্তু এখন আছে। আর রিসার্চের কাজও অনেক। টাইম পাইনি গো। এখন তো এসেছি। আমরা আজ থেকে যাবো। ফাইজা, রিমদেরও বললাম কিন্তু ওরা থাকবে না। আমি ও মিহাল থাকবো। কাল এক্সট্রা ছুটি পড়েছে। ওরা কাল এলেক্সদের ওখানে পিকনিক করবে। আমি ও মিহাল বিকেলে জয়েন করবো তারপর রাতে ফিরে যাবো। আমি তো জানি তুমি আমাদের রাতে থাকতে বলবেই তাই সময় করে এসেছি।

তূরের খালাতো বোনেরা ও ভাবি অনেকদিন পর তূরকে পেয়ে উৎফুল্লিত। মিহালকে সবাই মিলে জামাই আদর করছে। মিহালের সাথে সাথে বাকিদেরও ভালো ভাবে আপ্যায়ন করা হচ্ছে।

রাতে তূর তার কাজিনদের সাথে গল্প করছে। তখন তূরের ভাবি বলে উঠে,
–তা আমি মামি হচ্ছি কবে?

তূর লজ্জায় আরক্ত হয়ে বলে,
–যাহ কী বলো! আমরা স্টাডির জন্য এসেছি।

তূরের ভাবি বলে,
–তো কী হয়েছে। মাস্টার্স তো তোমরা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে করছো। তাহলে শেষের দিকে বেবি নিলে প্রবলেম কী? আরও ভালো বুঝলে। আমি ও জিহান ডাক্তারের সাথে কনসাল্ট করছি। আমার মাস্টার্সও আর ছয় মাস আছে। বেবি নিয়ে নিবো।

তূর সেখানে আর বসে না থেকে তার জন্য বরাদ্ধ করা রুমে চলে যায়। ওখানে থাকলে ভাবি আর অনেক কিছু বলবে। রুমে গিয়ে দেখে মিহাল সেখানে আগে থেকেই কপালে হাত রেখে শুয়ে ছিল। তূর গিয়ে মিহালের পাশে বসে কপালে হাত দিয়ে চেক করে শরীর খারাপ করলো কিনা। মিহাল তূরের সংস্পর্শে তন্দ্রাভাব কাটিয়ে উঠে বসে বলে,

–মা’থাটা হালকা ব্যাথা করছে। কফি হলে ভালো হতো।

তূর চটজলদি উঠে গিয়ে দুই মগ কফি করে আনে। তূর মিহালের হাতে কফির মগ দিয়ে বলে,
–কপাল টিপে দিচ্ছি তুমি কফিটা শেষ করো।

তূর সুন্দর করে আস্তে আস্তে কপাল টিপতে থাকে। মিহাল তূরের ডান হাতটা নিজের কপাল থেকে টেনে নিয়ে আলতো চুমু এঁকে বলে,

–তোমার যত্নে মাথাব্যথা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। তোমাকেই প্রয়োজন ছিল। আই ওয়ান্ট ইউ। লেটস মেক সাম লাভ ডিয়ার বউজান।

মিহাল তূরকে হাত ধরে পেছোন থেকে সামনে এনে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয়। লজ্জায় রক্তিম হয় তূরের মুখশ্রী।

কৃষ্ণ অম্বরে পূর্ণ চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে ওদের প্রেমময় প্রহরের সাক্ষী হয়ে।

চলবে ইন শা আল্লাহ্,

শেষ হলো না।😐