তুমিময় নেশায় আসক্ত পর্ব-৩৬+৩৭

0
885

#তুমিময় নেশায় আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
নিজের চোখের সামনে নিজের স্বামীকে অন্য কোন মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। দৃশ্যটি অত্যন্ত জঘন্যতম মনে হচ্ছে রিমির কাছে। রিমি হা হয়ে তাকিয়ে আছে অয়ন এবং মেয়েটির দিকে। অয়নও কিছু একটা ভেবে পিছনে ঘুড়ে। অতঃপর খুশি হয়ে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে। রিমির চোখ যেন কটর থেকে বেড়িয়ে যাছে। বড় বড় হয়ে যাবে। অয়নও যে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরবে তা কখনোই ভাবতে পারেনি রিমি। রিমির ইচ্ছে করছে এখুনি গিয়ে মেয়েটার সব চুল ছিড়ে দিতে। কত বড় স্পর্ধা! তারই সামনে তারই স্বামীকে স্পর্শ করে জড়িয়ে ধরছে। এমনকি অয়ন নিজেও মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরেছে। রিমি দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে হাত মুঠো করে। অয়ন কিছুক্ষন মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে,ছাড়িয়ে নেয়। অতঃপর হাঁসিমুখে মেয়েটির হাত ধরে রিমির কাছে আসে। মেয়েটির পরনে কালো একটি ওয়েস্ট্রেন ড্রেস। গলায় সাদা একটা স্কাফ ঝুঁলানো। চোখে মোটা ফ্রেমের সানগ্লাস ফর্সা লম্বাটে মুখে মানিয়েছে। রিমি একপলক রক্তচক্ষু নিয়ে মেয়েটির এবং অয়নের হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। অয়ন অন্য একটা মেয়ের হাত ধরে আছে ভাবতেই শরীর রাগে রিনরিন করে ওঠে রিমির। অয়ন মেয়েটির দিকে মুচকি হেসে, রিমিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘ রিমিপরী! মিট মাই অন এন্ড অনলি বেস্ট ফ্রেন্ড ইশা। পরিচয়ে ইশাও একজন হার্ট সার্জন।
এতোদিন আমেরিকাতে ছিলো। আজ বাংলাদেশে এসেছে। এন্ড ইশা ও হচ্ছে…..

অয়নের কথার মাখে ফোড়ন কেটে ইশা চটজলদি রিমির কাছে এসে খুশি হয়ে বলে,

‘ তুমি তাহলে আমার বন্ধুর সেই রিমিপরী। যার জন্যে ডক্টর এয়ারসি ওরফে অয়ন চৌধুরী দেওয়ানা হয়ে গেছে একপ্রকার প্রেমে। ‘

রিমি প্রতিউত্তরে হাস শুধুমাত্র। যদিও তার প্রচন্ড বিরক্ত লাগছে ইশাকে। বেস্টফ্রেন্ড হয়েছে বলে কি হয়েছে? এইভাবে বিবাহিত পুরুষকে জড়িয়ে ধরবে? এমনকি অয়নও জড়িয়ে ধরলো। কত্ত সাহস! রিমিকে তো ছেলে মানুষ দূরে থাক,কোন মেয়ে স্পর্শ করলেই রেগে আগুন হয়ে যায়, সেখানে নিজে আরেকটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরছে। ইশা রিমিকে উদ্দেশ্য করে দু হাত বাড়িয়ে বলে উঠে,

‘ হেই রিমি লেটস সাম হাগস। কাম ফাস্ট। ‘

ইশা রিমিকে জড়িয়ে ধরতে নিলে, অয়ন তাতে বাঁধা দেয়। ইশার হাত ধরে ইশাকে থামিয়ে দিয়ে, রিমির পাশে দাঁড়ায়। অতঃপর রিমির কাধে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে ভারি গাম্ভীর্য কন্ঠে বলতে থাকে,

‘ ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ মাই গার্ল। সি ইজ অনলি মাইন। সো ডোন্ট ডেয়ার টু টাচ হার। ‘

ইশার মুখটা হা হয়ে গেলো। হাত গুটিয়ে নিলো নিমিষে। অতঃপর এক বিশাল বিস্ময় নিয়ে বললো,

‘ অয়ন! আমি একজন মেয়ে। আমাকে নিয়েও এইভাবে পসিসিভনেস দেখাবি? তুই আসলে কি রে?’

‘ মেয়ে হয়েছিস তো কি হয়েছে? আমার রিমিপরীকে যে কেউ যখন- তখন টাচ করতে পারেনা। আগে আমার পারমিশন নেওয়ার উচিৎ ছিলো তোর। ‘

অয়ন বেশ রাগ নিয়েই কড়া গলায় ইশাকে জবাব দেয়। ইশা অয়নের উত্তরে আগের তুলনায় যে দ্বিগুনভাবে বিম্মিত হয়েছে, তা ইশার চোখ-মুখ দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। রিমির ইচ্ছে করছে নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলো। পাগল এক লোকের পাল্লায় পড়েছে সে।যাকে বলে সাইকো! রিমি বিড়বিড়িয়ে অত্যান্ত বিরক্ত সহিত বলে,

‘ একে বলে জাতে মাতাল তালে ঠিক। নিজের বেলায় সবকিছু জায়েজ। আমার বেলাতেই নাকি পাপ!’

রিমির বিরক্ত লাগলেও অয়নের কথাট বেশ মনে ধরেছে তার। মাই গার্ল। ‘ কতটা অধিকারবোধ কতটা
ভালোবাসার সমিশ্রন থাকতে এতোটা অধিকার নিয়ে দাপটের সাথে কথাগুলো বলা যায়। ভাবতেই ক্ষীন্ন হাঁসে রিমি।

_____________

ফারহান অফিসের কিছু কাজ আজ আগে থাকতেই শেষ করে ফেলেছে। ঘড়ির কাটা প্রায় সারে সাতটা ছুঁই ছুঁই করছে। ফারহান তার হাতে থাকা ফাইলগুলো একত্রে করে একটা রশি দিয়ে বেঁধে নেয়। অতঃপর ফাইলগুলো হাতে নিয়ে সানার কেবিনের দিকে রওনা দেয়। সানা তার কেবিনে মাথা
নিচু করে বসে ছিলো। সকাল থেকেই বেশ মাথা ব্যাথা করছে তার। খানিক্ষন ঘুমিয়ে নিলে হয়তো তার ভালো লাগতো।কড়া ঘুমের ওষুধ খেয়েও লাভ হয়নি সানার। চোখে একফোটা ঘুমের ছিটাফোটাও নেই। ঘুম এলে সানা তার বাসায় চলে যেতো, কিন্তু তার চোখে ঘুমই ধরা দিচ্ছে না। সমস্ত নিদ্রা যেন আজ সানার সাথে গভীর অভিমান করে একসাথে পালিয়ে গিয়েছে। সানা আরেকটু নিবিড়ভাবে মাথাটা ডেস্কে এলিয়ে দিয়ে ঘুমানোর প্রচেষ্টা করে, কিন্তু তাতে বিঘ্ন ঘটিয়ে ফারহান নক না করেই, সানার কেবিনে প্রবেশ করে। সানাকে অসুস্হ দেখে, সানার দিকে এগিয়ে এসে বলে,

‘ মিসেস সানা! আপনি কি অসুস্হ? ‘

সানা মাথা তুলে ফারহানকে একপলক দেখে,নিজেকে স্বাভাবিক করার প্রচেষ্টা করে। ফারহানকে দেখলেই তার গলা চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করে। তার ভাবতেই কষ্ট লাগে যাকে নিয়ে সে এতো স্বপ্ন দেখেছিলো, সে আসলে অন্য কারো। সানা কোনরকম ভেজা গলায় উত্তর দিয়ে বলে,

‘ আমি ঠিকই আছি স্যার। ঠিক না থাকলেও, থাকতে হয়। আমার মতো মানুষের চিন্তা আপনাকে করতে হবে না স্যার। আমি তো আপনার সামান্য পিএ মাত্র। আপনি বলুন না? আপনি ঠিক কোন দরকারে এসেছেন। ‘

সানার কথাটি অদ্ভুদ লাগলেও তা নিয়ে মাথা ঘামায় না ফারহান। হাতে থাকা ফাইলগুলো সানার টেবিলে রেখে, অত্যান্ত শান্ত সুরে বললো,

‘ ফাইলগুলো রেখে গিয়ে গিলাম। আপনি পুনরায় চেক করে নিয়েন। আমিই দিতাম, কিন্তু আপাতত আমাকে যেতে হবে। ‘

‘ আপনি তো নয়টার আগে কখনো বের হন না স্যার। আজ হঠাৎ সাতটা বাজতে বাজতেই চলে যাচ্ছেন যে। ‘

‘ আমার কিছু কাজ ছিলো। ‘

‘ কি কাজ স্যার? সেইটাই জানতে চাইছি। ‘

ফারহানের মুখশ্রী সঙ্গে সঙ্গে গাম্ভীর্যে আকার ধারণ করে শক্ত হয়ে গেলো। ফারহানের চেহারার ধরণ হঠাৎ পাল্টে যাওয়া স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে, তার কাছে সানার প্রশ্নটি অযুক্তিক ছাডা আর কিছুই নয়।
ফারহান সামান্য কেঁশে কিছুটা গম্ভীর সুরে সানাকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে,

‘ আপনি কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে ইন্টারফায়ার করছেন মিস সানা। যা আমার মোটেও পছন্দ নয়। আশা করি নেক্সট টাইম থেকে এইসব প্রশ্ন যেন মোটেও আমাকে করা না হয়। ‘

কথাটি বলে ফারহান বেড়িয়ে যেতে নিলে, সানার কথায় একপ্রকার থমকে যায়।

_________________

রিমি সবেমাত্র তার ক্লাসটা শেষ করে বেড়োতে যাবে, তখনি বলিষ্ট একজোড়া শক্ত শীতল হাত পিছন থেকে রিমির কোমড় জড়িয়ে ধরে। রিমি স্হীর হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। হৃদয় জুড়ে বয়ে যায় তার অদ্ভুদ ভালোলাগার জোয়ার। রিমি পিছনে না ঘুড়েও দিব্বি
বুঝতে পারছে এই গভীর স্পর্শ অয়নের। অয়ন ছাড়া আর সাধ্যি বা ক্ষমতা আছে তার রিমিপরীকে গভীরভাবে ছুঁইয়ে দেওয়ার। অয়ন রিমির কোমড় জড়িয়েই বলতে থাকে,

‘ তোমাকে গভীরভাবে ভালোবাসতে খুব ইচ্ছে করে রিমিপরী। খুব ইচ্ছে করে। অপেক্ষা বড্ড বাজে জিনিস। ‘

কথাটি বলেই অয়ন রিমিকে কোলে তুলে নিয়ে যেতে থাকে কেবিনের দিকে। সকল স্টাফরা দেখেও না দেখার ভান করে নিজেদের মতো কাজ করতে থাকে। রিমি হাত-পা ছড়াতে ছড়াতে বলে,

‘ কি করছেন কি? সবাই দেখলে কি ভাববে বলুন তো? ‘

অয়নের একরোখা জবাবা ‘ আই ডোন্ট কেয়ার। ‘

অয়ন রিমিকে নিজের কেবিনে নিয়ে আসে,অতঃপর নিজে চেয়ারে বসে, রিমিকে নিজের কোলপ বসিয়ে নেয়।। রিমি এবং অয়ন দুজনের গাঁয়েই এপ্রোন। রিমি বরাবরের মতো নিজেকে ছাড়াতে চাইছে কিন্রু সে ব্যর্থ। রিমি কিছুটা লজ্জা নিয়েই বলে,

‘ কেউ আসলে কি ভাব্বেন বলুন তো? আমাকে ছাড়ুন না প্লিয। ‘

‘ আমার হসপিটাল, আমার বউ! আমি যা ইচ্ছে করবো। কার কি? ‘

অয়নের কথার মাঝেই হুট করে ইশা ঢুকে পড়ে। ইশাকে দেখে একদফা লজ্জায় পড়ে যায় রিমি, কিন্তু অয়নের মতো নির্লজ্জ ব্যক্তিকি আদোও তা বুঝবে? সে রিমিকে বিন্দুমাত্র ছাড়েনা বরং শক্ত করে চেপে ধরে। ইশা কিছুটা ঠাট্টার ছলে বলে,

‘ আমি বোধহয় তোদের রোমান্স টাইমে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে চলে আসলাম। ‘

‘ যখন বুঝেছিস তাহলে এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বের হ। ‘

অয়নের কথায় ইশার মুখে এক টুকরো অন্ধকার এসে হানা দিলো, যা অয়ন না দেখলেও রিমি ঠিক খেয়াল করেছে।

চলবে…….কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৩৭
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অন্য একটি মেয়ের সামনে এইভাবে জড়িয়ে ধরে রাখায় বেশ অস্বস্হিতে পড়ছে রিমি। রিমিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের কোলে বসিয়ে রেখেছে অয়ন। ইশা যে অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাদের পর্যবেক্ষন করে যাচ্ছে সে নিয়ে কোনপ্রকার হুশ অয়নের না থাকলেও,রিমির নজরে দৃশ্যটি এড়ায়নি। ইশার চোখমুখে অদ্ভুদ এক ক্ষোভ উপচে পড়ছে রিমি এবং অয়নকে একসাথে দেখে। রিমিরও সকালের অয়নকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্যটি মনে পড়ে গেলো। তৎক্ষনাৎ রিমির মস্তিষ্কে এসে হানা দিলো দুষ্টুমি বুদ্ধি। রিমিও কুটিল হেসে অয়নের গাঁয়ের সাথে বেশ ভালোভাবে লেপ্টে রইলো একদম নিবিড়ভাবে। হাত নাড়িয়ে অয়নের কপালের কিনারে লেপ্টে সিল্কি ঘন
চুলগুলো আলতোভাবে ছুঁইয়ে খেলা করতে লাগলো। ইশার চোখ দ্বিগুনভাবে বড় বড় হয়ে গেলো। ইশা কিছুটা অস্বস্হি নিয়ে বলো,

‘ আমি ভেবেছিলাম তোদের সাথে যাবো। আসলে আমি দেশে এসেছি শুনে,গ্রেন্ডমা বলেছে আমি যেন
চৌধুরী বাড়িতে গিয়ে কয়েকটা দিন থাকি। আসলে আমার তো ফ্যামেলি কেউই বাংলাদেশে থাকেনা। তাই আমি ভেবেছিলাম তোদের সাথেই যাবো। তোরা কি এখন বের হবি? ‘

ইশা, অয়ন এবং রিমির সাথে একই বাড়িতে থাকবে, কথাটি ভাবতে গেলেই মুখটা বেকিয়ে ফেলে। রিমি অয়ন রিমিকে কোলে নিয়েই ল্যাপটপে কি যেন টাইপ করে যাচ্ছে,যেন ইশার কথা সে শুনেই নি।

‘ আমি তোকে কিছু বলছিলাম অয়ন। ‘

অয়নের ধ্যান ফিরে। চটজলদি বলে উঠে,

‘ হ্যা? কি যেন বলছিলি তুই? ‘

‘ তার মানে তুই এতোক্ষন ধরে আমার কোন কথাই শুনিস নি? এতোটাই বউয়ের ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিস? ‘

ইশার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে উদাসিন হয়ে নিজের মতো কাজ করে যায় অয়ন। তা দেখে ইশা চোখমুখ কালো করে দাঁড়িয়ে থাকে ইশা। ইশার বুকের ভিতর থেকে হতাশার দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে শুধু।রিমি কিছুটা ঠাট্টার ছলেই বলে,

‘ ইশা আপু! দেখতেই তো পারছেন আমরা ব্যস্ত আছি। আপনি বরং একাই চলে যান। আমরা নাহয় পরে একসাথে চলে যাবো। ‘

ইশা রিমির কথায় এক মুহুর্ত ও দাঁড়ায় না। গটগট পায়ে বেড়িয়ে গেলো। অয়ন রিমির কথাতে অবাক হলেও,পরক্ষনে মুচকি হাঁসলো।

_______________

‘ আপনার জীবিত ওয়াইফকে মৃত্যু বানিয়ে রাখার কারণ কি স্যার? ‘

সানার হঠাৎ এমন প্রশ্নে বেশ বড়ভাবেই চমকে উঠলো ফারহান। ফারহানের বুঝতে বাকি রইলো না সুমাইয়া যে জীবিত রয়েছে, তা জেনে গিয়েছে সানা। ফারহান পুনরায় গলার স্বর গম্ভীর করে, প্রশ্ন এড়ানোর জন্যে বললো,

‘ আপনি পুনরায় আমাকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছেন মিস সানা। এইভাবে চলতে থাকলে কিন্তু আমি স্টেপ নিতে বাধ্য হবো। ডোন্ট ক্রশ ইউর লিমিট। ‘

সানা থেমে যায়। ফারহান বিরক্ত হয়ে বেড়িয়ে যেতে নিলে, সানা দ্বিগুনভাবে উত্তেজিত হয়ে প্রশ্ন করে,

‘ কিসের এতো লুকোচুরি স্যার? দুনিয়ার সামনে কেন সত্যিটা আড়াল করছেন আপনি? আপনি কি জানেন না? আপনার এই একটা সত্যি লুকানোর ফলে, আমার জীবনটা আজ শেষ হতে চললো স্যার।’

কথাটি বলেই কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো সানা। সানার আস্মমিক কান্নায় নিজের কাঁধে থাকা ব্যাগটি টেবিলে রেখে, ফারহান একপ্রকার ছুটে গিয়ে সানার পাশে বসলো। সানার কান্না যেন থামছেই না, তা সময়ের সাথে সাথে বেড়েই চলেছে প্রখরভাবে। ফারহান হতবাক হয়ে সানাকে পর্যবেক্ষন করলো।

‘ আমি আপনার কথা সত্যিই বুঝতে পারছি না মিস সানা। আপনি কাঁদছেন কেন? ‘

সানা নিষ্চুপ থাকে। ঢুকরে কাঁদতে থাকে কিছুক্ষন।একটা সময় পর সানা নিজের নেত্রপল্লব থেকে আগত পানিগুলো পরম যত্নে মুছে ফেলে। অতঃপর ধীর কন্ঠে বলে,

‘ আমি আপনাকে ভালোবাসি ফারহান স্যার। খুব ভালোবাসি। আপনি তো আদোও আমার ব্যবহারে বুঝতে পারেন না? কতটা ভালোবাসি আমি আপনাকে। ‘

ফারহান সানার কথায় পাথরের ন্যায় একপ্রকার থমকে বসে থাকে। সানা হেচকি তুলে কাঁদছে। কাঁদতে কাঁদতে হেচকি উঠে গেছে তার। কান্নাভেজা গলায় পুনরায় ফারহানকে উদ্দেশ্য করেদোষীর ন্যায় বলে,

‘ আপনি যদি কথাটি আমার থেকে কিংবা দুনিয়ার থেকে না লুকাতেন,তাহলে বোধহয় আপনাকে ভালোবাসার মতো মস্ত বড় ভুলটা কখনোই করতাম না ফারহান স্যার। কেন আপনি লুকালেন? আমি যে পারছি না ফারহান স্যার। আপনি অন্য কারো হওয়া সত্ত্বেও আপনাকে পাওয়ার লোভ আমাকে দিনের পর দিন গ্রাস করে ফেলছে। ‘

সানা থামে, ফারহানের উত্তরের আশায় ফারহানের দিকে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষন। ফারহানের মুখের ভঙ্গিমা দেখে কিছুই বুঝার সাধ্যি নেই। তাই ফারহান মনের অবস্হা বুঝতে ব্যর্থ সানা। ফারহান মন মস্তিষ্কক বার বার সানার ‘ ভালোবাসা ‘ কথাটি ঘুড়পাক খাচ্ছে। ফারহান হুট করে রেগে যায়। অতঃপর কিছুটা ক্ষিপ্ততা নিয়ে বাজখাই গলায় বলে,

‘ আমাকে ভালোবাসার কথাটি এখুনি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন মিস সানা। আপনি এখন নিজেও খুব ভালো করে জানেন আমার ওয়াইফ বেঁচে আছে। তবুও আপনি একজন বিবাহিত পুরুষকে ভালোবাসি বলছেন? জাস্ট সেম অন ইউ। ‘

ফারহান কথাটি বলেই দ্রুত উঠে যায়। অতঃপর গটগট পায়ে বেডিয়ে যায় কেবিন থেকে। সানা ঠোট কামড়ে পুনরায় কেঁদে উঠে।

_______________

রিমি গাড়িতে বসে আছে। পাশেই অয়ন ড্রাইভ করে যাচ্ছে। রিমি আজ বেশ ফুড়ফুড়ে মেজাজে রয়েছে। ইশার মুখটা দেখে তার বেশ মজা লাগছিলো, কিন্তু সে একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছে না ইশা কেন ওইভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো? রিমির ভাবনার মাঝেই, অয়ন গাড়ি ব্রেক কষে। রিমি সামনের দিকে তাকায়। জ্যাম পড়েছে বেশ! ঢাকা শহর জ্যাম থাকাটাই স্বাভাবিক। অয়ন গাড়ির হ্যান্ডেলে হাত রেখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রিমি জানালা দিয়ে রাতের ঢাকা শহর দেখতে ব্যস্ত। তখনি একজন বাচ্চা ছেলে কড়া নাড়ে। হাতে তার তাজা গোলাপ ফুল। রিমি জানালা খুলতে চাইলে,অয়ন তাতে বাঁধা দিয়ে ক্রোধান্তিত গলায় শুধায়,

‘ কি করছো রিমিপরী? জানালা খুলতে চাইছো কেন? ‘

‘ দেখুন না বাচ্চাটা হাতে গোলাপ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেখেই মনে হচ্ছে তাজা। ‘

রিমি বেশ উৎশুক হয়ে গোলাপফুল গুলে দেখে যাচ্ছিলো। অয়নের ললাটের মাঝ বরাবর দাম্ভিক এক ভাজ পড়ে। অয়ন ছেলেটাকে তার জানালার সামনে আসতে বলে। ছেলেটি অয়নের জানালার সামনে আসে। অয়ন জানালা খুলে ছেলেটিকে প্রশ্ন করে,

‘ সব ফুলগুলো কত? ‘

ছেলেটি বড় বড় দাঁত বের করে মিষ্ট হাঁসি উপহার দিয়ে বলে,

‘ জে স্যার। আঙ্গে ১০০ টাহা। ‘

অয়ন হাত বাড়িয়ে সব ফুলগুলো নেয়। অতঃপর পকেট থেকে এক হাজার টাকার চকচকে নোট ছেলেটি হাতে গুজে দিয়ে গম্ভীর সুরে বলে,

‘ কিছু বিক্রি করতে হলে আমার সামনে আসবে। আমার রিমিপরীর সামনে ঘুড়ঘুড় করবে না বুঝলে?’

অয়ন কথায় রিমি মুখ ফুলিয়ে ফেলে। বাচ্চা একটা ছেলেকে নিয়েও পসেসিভ হওয়ার কি হলো?আসলেই লোকটা সাইকো!

ছেলেটা কি বুঝলো কে জানে?মাথা নাড়িয়ে বললো,

‘ ঠিক আছে কিন্তু সাহেব আমার কাছে তো এক হাজার ভাংতি নাই। ‘

‘ তোমাকে টাকা ফিরত দিতে হবেনা। তুমি পুরো টাকাটা রেখে দিও। ‘

ছেলেটি খুশি মনে অয়নকে মনে মনে শত ধন্যবাদ দিয়ে চলে গেলো। আজ সে এবং সাথীরা মিলে বেশ ভালো কিছু খেতে পারবে। রিমিও অয়নের কাজে বেশ খুশি হয়। লোকটা অতোটাও খারাপ নয়। অয়ন রিমির হাতে ফুলের গুচ্ছটি তুলে দেয়। টকটকে তাজা ফুলগুলো দেখে অয়নকে চমৎকার হাঁসি উপহার দেয় রিমি। রিমির হাঁসি দেখে, বুকে হাত দিয়ে সিটে হেলিয়ে বসে অয়ন। রিমি ফুলগুলোর দিকে তাকিয়ে খুশি হয়ে বলে,

‘ ডক্টর এয়ারসি দেখুন! ফুলগুলো সুন্দর না অনেক?’

‘ উহু! গোলাপের থেকেও অধিকতর অদ্ভুদ সুন্দর তুমি রিমিপরী। ‘

রিমি অয়নের কথায় বেশ লজ্জায় পায়, তখনি তার ফোনে একটি অদ্ভুদ মেসেজ আসে।

____________

মেঘ সবেমাত্র কোচিং থেকে ফিরছিলো। আজ সে ঠিক করেছে হেঁটেই বাড়ি ফিরবে। তাই আজকে সে তার ড্রাইভারকে মানা করে দিয়েছিলো। মেঘের হাত থেকে হুট করে সমস্ত বই পড়ে যায়। মেঘ নীচে ঝু্ঁকতেই, খেয়াল করে তার সামনে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে তা স্বয়ং আমান!

চলবে…..কী?