#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৪০
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
স্বামী তার স্ত্রীকে ঘরে রেখে অন্য মেয়ের সাথে রাত করে বাইরে ফিরছে, তা কোন স্ত্রীর পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব নয়। যেমনটি রিমির বেলাতেও ঘটেছে। যতই হোক অয়ন তার স্বামী।ঘরে টানটান উত্তেজনা। রিমির তার প্রেমিক পুরুষের বুকে খামচে বসে আছে। প্রেমিক পুরুষটা তাকে আলতো ভাবেই ছুইয়ে দিচ্ছে। আদর করে দিচ্ছে ভালোবাসার সহিত। রিমি অয়নের বুকে দৃঢ়ভাবে লেপ্টে রয়েছে,যেন একটু আগলা হলেই অয়ন ছুটে বেড়িয়ে যাবে তার থেকে অনেক দূরে! নিস্তবতা ছেঁয়ে গিয়েছে গোটা রুম জুড়ে। শুধু রিমির ফুপানির আওয়াজ বিদ্যমান ঘর জুড়ে। অয়ন রিমিকে আগের মতো ভালোবাসে না। আগের মতে চায়না,কিংবা আগের মতে গুরুত্ব নয়,অথবা রিমির থেকেও ইশা অয়নের জীবনে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এমন বাজে কিছু বিচ্ছিরি বিক্ষপ্ত চিন্তাভাবনা রিমিকে একপ্রকার ঝেঁকে বসেছে। অয়ন আলতো ভাবে রিমিকে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরেছে। রিমির ফুপানির আওয়াজ তীব্র হচ্ছে। অয়ন খানিক্ষন নরেচড়ে উঠে।
অয়ন বাসায় আসার পর থেকেই রিমি নিজ থেকে তাকে বলেছিলো,
‘ আপনার বুকে মাথা রাখতে দিবেন? ‘
প্রিয়তমা স্ত্রীর নিঃসংকোচ সিক্ত আবদারে, অয়নের
অধরের কোণে প্রাপ্তি হাসি ফুটে উঠে। রিমিকে কোনপ্রকার উত্তর না দিয়ে,একপ্রকার বুকে টেনে রিমির সমস্ত মুখশ্রীতে আলতোভাবে ভালোবাসার স্পর্শে ভরিয়ে দেয়। অয়নে ভালোবাসা পেয়ে, রিমির মস্তিষ্কে হানা দেওয়া সমস্ত বিচ্ছিরি চিন্তাধারা লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যায়।
‘ ইশা আপুর সাথে বেশ মিশবেন না আপনি! আমার বুকটা পুড়ে। বেশ পুড়ে! ‘
রিমির হুট করে বলা কঠোর আবেদন পেতেই,গাঁ কাপিয়ে হেসে উঠে অয়ন। অধরের বেশ বড়সড় দুষ্ট হাসি ঝুলিয়ে প্রশ্ন করে,
‘ খুব বেশি পুড়ে রিমিপরী? কেন পুড়ে এতো? তবে কি তুমিও সাইকোর প্রেমে পড়ে গেলে? ‘
রিমি যে নিজের অজান্তেই বোকামি করে, তার মনে থাকা তীব্র রাগের কথা অয়নের কাছে প্রকাশ করে ফেলেছে, তা অনুধাবন করতেই, রিমির মুখশ্রী লাজুক হয়ে উঠে। লজ্জায় আড়ষ্ট হয় সারা শরীর। অয়ন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে, রুমের অপরপাশে চলে যায়। হাত নাড়িয়ে পর্দাগুলো টেনে দিতে থাকে। অয়ন বিছানায় হেলান দিয়ে বসে থাকে। রিমি চোখমুখে উপচে পড়ছে লজ্জার তকমা!
‘ লজ্জা পেলে কি হবে রিমিপরী? কি যেন বলছিলে? আমি ইশার কাছাকাছি থাকলে, তোমার পুড়ে কেন?’
‘ জানিনা বাপু। আপনি যান তো। ‘
রিমি গাল ফুলিয়ে অয়নকে জবাব দিলো। অয়ন হাত ভাজ করে, রিমির দিকে এগিয়ে গিয়ে, রিমির কাধে নিজের থুত্নি রেখে বললো,
‘ যখন কেউ কাউকে ভালোবাসে, তখন তার পাশে নিজের ছাঁয়াকেও সহ্য করা যায় না। তার মানে কি দাঁড়ায় রিমিপরী? ‘
রিমি অয়নের দিকে ঘুড়ে, আড়ষ্ট কন্ঠে বলে উঠলো,
‘ অতশত জানিনা আমি। ভালোবাসা কিনা সেইটাও জানিনা, তবে আপনার পাশে অন্য মেয়েকে দেখলে
আমি খুব পুড়ে। ভিতরটা ছাড়খাড় হয়ে যায়। ‘
‘ তুমি তো আমায় ভালোবাসো না, তাহলে আমি ইশার পাশে থাকলেও তোমার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমি বরং যাই ইশা কি করছে দেখি আসি। ‘
কথাটি বলে অয়ন চলে যেতে নিলে, রিমির মাথায় আগুন ধরে যায়। একরাশ রাগ নিয়ে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। সেই দৃষ্টি বেশ উপভোগ করে, চলে গেলো অয়ন। রিমি প্রায় বাচ্চাদের মতো কাঁদতে কাঁদতে বললো,
‘ আপনি আমাকে ভালোবাসেন না ডক্টর এয়ারসি। আপনি বাজে লোক। প্রেমিক হওয়ার যোগ্যতা আপনি হারিয়েছিন। ‘
রিমি প্রায় বাচ্চাদের মতোই নাক টেনে টেনে কথাগুলো বললো। তৎক্ষনাৎ কেউ টিস্যু ধরলো রিমির সামনে। রিমি তাকিয়ে দেখে একজন মহিলা সার্ভেন্ট দাঁড়িয়ে আছে। রিমি অবাক পানে তার দিকে তাকাতেই, মহিলাটি সরলভাবে হেসে বললেন,
‘ অয়ন স্যার পাঠিয়েছেন এবং আপনাকে নিষেধ করেছেন যেন আপনি কান্নাকাটি না করেন। ‘
রিমির কান্নার বেগ বাড়লো। কটমট দৃষ্টিতে টিস্যু হাতে নিয়ে নেয়। অতঃপর দরজার কাছে গিয়ে, টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বলে,
‘ আগে তো নিজে আমার চোখের জল মুছিয়ে দিতেন। আমার চোখের জল সহ্য করতেই পারতেন না।আর এখন…..’
হুট করে অয়ন রিমির সামনে দাঁড়ায়। রিমি চুপ হয়ে যায়। অয়ন রিমিকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে, তার বলিষ্ট হাতজোড়া রিমির কোমড় চেপে ধরে বলে,
‘ খুব অভিমান না আমার প্রতি? আমি চোখ মুছিয়ে দিলে খুব কষ্ট হয়? ‘
‘ খুব অভিমান হয় ডক্টর এয়ারসি। সেই অভিমানগুলো পাহাড়সম ধারণ করছে প্রতিনিয়ত। ‘
‘ কেন এতো অভিমান? যদি ভালোই না বাসো। ‘
রিমি ফুপাতে ফুপাতে বলে উঠলো,
‘ কিছু কিছু অভিমানের কারণ থাকেনা। তা মনের অভ্যন্তরীন থেকে হুট করে চলে আসে। ভালোবাসি কিনা জানিনা, তবে যার প্রতি অধিকার থাকে, তার প্রতি অভিমান আসে। ‘
অয়ন মুচকি হেসে রিমির ললাটে অধর ছুইয়ে দিলো গভীর ভালোবাসা নিয়ে। রিমি কান্না হুট করে থেমে গেলো, আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো সে।
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
______________
ফারহান ডক্টরের কেবিনে বসে সুমাইয়ার বিষয়ে কথা বলছে। ডক্টর জানিয়েছেন, ফারহানের কথামতো মালেশিয়া থেকে সবচেয়ে সেরা কয়েকজন ডক্টীরদের দিয়ে সুমাইয়ার অপারেশন করানো হবে। যদি অপারেশনটা সাফল্য হয় তাহলে সুমাইয়া বেঁচে যাবে, কিন্তু অসফল হলে সুমাইয়ার জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। যদিও ফারহানের তা নিয়ে বেশ চিন্তা। সুমাইয়াকে সে কোন কিছুর বিনিময়ে হারাতে চায় না। ডাক্তার সাহেব ফারহানের মনের অবস্হা বুঝতে পেরে, ফারহানকে ভরসা দিয়েছেন, যেন ফারহান শক্ত থাকে। ফারহান ডক্টরের কেবিনের বেড়িয়ে ঠিক করে সুমাইয়ার কেবিনের দিকে এগোয়। উদ্দেশ্য প্রেয়সীকে মন ভরে দেখার বাসনা।
ফারহান কেবিনে ঢুকেই দেখতে পায়, সুমাইয়ার বিছানার কাছে একজন মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পিছনে ঘুড়ে থাকায় বিধায় তার চেহারা দেখতে পারেনা ফারহান।
‘ কে আপনি? ‘
মেয়েটি হুট করে ফারহানের ডাক শুনে হচকিয়ে যায়। মাথার কাপড় টেনে দ্রুত সামনে গিয়ে ফারহানকে একপ্রকার ধাক্কা দিয়েই দৌড়ে বেড়িয়ে যায়। ফারহান বাইরে বেড়িয়ে চিৎকার করে সিকিউরিটিকে ডাক দেয়, মেয়েটিকে ধরার জন্যে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। ফারহান পিছনে ঘুড়ে দেখতে পায় সুমাইয়ার বিছানার পাশেই ছুড়িখানা পড়ে আছে। ছুড়িটা দেখে ফারহানের বুঝতে বাকি থাকেনা, সুমাইয়াকে কেউ মেরে ফেলার উদ্দেশ্যেই হসপিটালে এসেছিলো।
__________________
রিমি এবং ইশা পাশাপাশি বসে আছে। ইশা রিমিকে এবং তার বন্ধুত্বের গল্প শুনাচ্ছে, যদিও রিমি তা শুনতে মোটেও আগ্রহী নয় তবুও তাকে শুনতে হচ্ছে। ইশার ভাষ্যমতে অয়ন শুধুমাত্র ইশার সাথেই মিশতো, কথা বলতে। অয়নের মতো রুড ছেলে সকলের থেকে দূরত্ব বজিয়ে চললেও, ইশার সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব ছিলো। সকলে তো তাদের এতো ঘনিষ্ট বন্ধুত্ব দেখে ভাবতো তারা বোধহয় প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। রিমি ইশার কথা শ্রবণ করছে, এবং রাগে তরতর করে ফুশছে। মনে হচ্ছে একটু হলেই মেরে ফেলবে। ইশা রিমির আরেকটু কাছে গিয়ে, ফিসফিস সুরে বলে,
‘ জানো? একদিন আমাদের মেডিকেলে বড় একটা অনুষ্টান হয়েছিলো, সেখানে আমি এবং অয়ন কাপল ডান্স দিয়েছিলাম। আমি একটা সাদা গ্রাউন পড়েছিলাম এবং অয়ন একটা সাদা ব্লেজার। ইসস কত্ত কিউট লাগছিলো অয়নকে এন্ড জানো? অয়নের হাত ছিলো আমার কোমড়ে। জাস্ট ইমাজিন রিমি কত্ত কিউট লাগছিলো আমাদের। ‘
ইশার কথা শুনে রিমি একপ্রকার ঘোরে চলে যায়। সামনে ভেসে উঠে অয়ন এবং ইশার সেই নাচের মুহুর্ত। ইশা অয়নের কাধে হাত রেখেছে এবং অয়নের হাত ইশার কোমড়ে। ব্যাস রিমিকে নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারেনা। দ্রুত উঠে ইশার দিকে কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।রিমির সেই ভয়ংকর দৃষ্টি দিকে ইশা চটজলদি দাঁড়িয়ে। রিমি রাগে ফুশতে ফুশতে বলে,
‘ শাকচুন্নি! আমার বরের কাধে হাত রেখে নাচা? আবার সেই গল্প আমাকেই শুনাচ্ছিস? তোকে তো….’
কথাটি বলেই রিমি ফুলদানিটি হাতে নিয়ে ইশার পিছনে দৌড় লাগায়। ইশা ‘ মাগো বাঁচাও ‘ বলে চেচাতে চেচাতে রিমির থেকে বাচতে দৌড়াতে থাকে। রুজা চৌধুরী কেবলমাত্র ড্রইংরুমে ঢুকেছিলো। রিমিকে ফুলদানি নিয়ে এগোতে দেখে, নিজেও ভয় পেয়ে ইশার সাথে দৌড়াতে থাকে।
রুজা চৌধুরী গলায় হাত দিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে বললেন,
‘ কেউ ঐঝা ডাকো। এই মেয়েকে জিনে ধরেছে। ‘
রিমিও পিছনে তাড়া করতে করতে বলে,
‘ হ্যা হ্যা৷ ডাকো। ওই ইশা শাকচুন্নির মাথা থেকে আমার জামাইয়ের ভূত তারাতে হবে। ‘
অয়ন এবং রুহানা চৌধুরী সদর দরজা দিয়ে কেবল ঢুকছিলেন। বাড়ির এই অবস্হা দেখে তারা হতবাক হয়ে যায়। রুজা চৌধুরী দৌড়াতে দৌড়াতে পিছলে পড়ে যায়।
লেগেছে লেগেছে আগুন………
চলবে…..কী?
#তুমিময়_নেশায়_আসক্ত 🖤
#পর্ব- ৪১
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অয়ন পরিস্হিতি বেগতিক দেখে,রিমিকে পাজকোলে তুলে নেয় সকলের সামনে। রিমি হাত-পা নাডাচড়া করে যাচ্ছে অনাবরত। হাতে থাকা ফুলদানিখানা ইশার দিকে তাক করে ক্ষুদ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে থাকে,
‘ ছাড়ুন আমাকে! শাকচুন্নির মাথা আমি আজ ফাটিয়েই দিবো। শাকচুন্নিটার কত্ত বড় সাহস। ‘
ইশা রুহানা চৌধুরী পিছনে গিয়ে লুকিয়ে বড় বড় নিঃশ্বাস ফেলে। বেশ ভয় গিয়েছিলো সে। মেয়েটা যে পাগলের মতো তাড়া করে উঠেছিলো, আরেকটু হলেই বোধহয় মাথা ফাটিয়ে দিতো। রুজা চৌধুরী কোমরের ব্যাথায় বসে থাকে। আর্তনাদের সুরে চেচেয়ি উঠে,
‘ মাগো! মরে গেলাম রে বাবা।কেউ আমাকে ধরো। এই মেয়েকে সত্যি জিনে ধরেছে। ‘
রুজা চৌধুরীর আর্তনাদে কিছু সার্ভেন্ট মিলে রুজা চৌধুরীকে ধরে পাশে থাকা সোফায় বসায়। রুজা চৌধুরী গলা এবং কোমড়ে বেশ ব্যাথা৷ নড়ার শক্তিটুকুও তার শরীরে অবশিষ্ট নেই। কোমড়ে হাত রেখেই বিড়বিড় সুরে আওড়াতে থাকে,
‘ সাইকো ফ্যামেলি হয়ে গেছে। জামাই -বউ দুটোই পাগল। একজনের জন্যে গলার অবস্হা খারাপ, আরেকটার জন্যে কোমরটাও শেষ হলো আমার। মাগো!’
অয়ন রিমিকে কোলে করে, সোফায় বসিয়ে দেয়। রিমি রাগে ফুশফুশ আওয়াজ বের করে, রুজা চৌধুরীর দিকে তীক্ন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
‘ আমাকে জিনে ধরেছে? জিনে ধরেছি তো ওই ইশা শাকচুন্নিকে। কোন ওঝা লাগবে না। আমিই ঝাড়ু দিয়ে ওর মাথা থেকে আমার জামাইয়ের ভূত বের করে দিবো। ‘
রিমি কথাটি বলেই পাশে থাক ঝাড়ুটা হাতে নিয়ে ইশার দিকে তেড়ে যায়। রুহানা চৌধুরী হতবাক হয়ে থাকেন, তিনি বুঝতে পারছেন না আদোও হচ্ছে টা কী বাড়িতে।
‘ মাগো ‘ বলে ইশা পুনরায় দৌড়াতে দৌড়াতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকে,
‘ অয়ন তোর বউ পাগল হয়ে গেছে। প্লিয সামলা ওকে। ‘
‘ হ্যা হ্যা আমি পাগল হয়ে গিয়েছি। এই সাইকো লোকটার সাথে থাকতে থাকতে আমিও সাইকো হয়ে গিয়েছে। ‘
কথাটি বলে রিমি দৌড়াতে নিলে, অয়ন রিমিকে শক্ত করে চেপে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে, রিমির হাত থেকে ঝাড়ুটা ফেলে দিয়ে, শান্ত গলায় বলে,
‘ কুল ডাউন রিমিপরী। তুমি তো এতোটা উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছো কেন? তুমিতো আমাকে ভালোবাসো না তাহলে শুধু শুধু এতো কিসের জেলাসি তোমার? আমার দিকে ইশা নজর দিলেও বা কি তোমার? ‘
[লেখিকাঃ জান্নাতুল ফেরদৌসি রিমি]
অয়নের প্রশ্নে রিমি কিছুক্ষন ঠোট কামড়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অয়নও কি বুঝেও বুঝতে পারেনা? তার মনে থাকা সিপ্ত সুন্দর এক অনুভুতি বিদ্যমান রয়েছে অয়নের প্রতি,যার মাত্রা অধিকতর তীব্র। অয়ন জানে রিমির তাকে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে,অফুরন্ত ভালোবাসা বলে যাকে,যা আজকের কান্ডে একদম পরিষ্কার, কিন্তু অয়ন চেয়েছিলো রিমির মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটি শ্রবণ করবে। কিন্তু তা বোধহয় সম্ভব নয়। রিমির থেকে কোনপ্রকার না উত্তর পেয়ে, রাগের মাথায় কাচের টেবিলটা লাথি দিয়ে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়। রিমির বাহু চেপে ধরে বাজখাই গলায় চেচিয়ে উঠে,
‘ কেন বলো না ভালোবাসি? কেন? আমি কি এতোটাই খারাপ যে, ভালোবাসি শব্দটি আমি ডিসার্ভ করতে পারিনা। আমাকে কি ভালোবাসা যায় না রিমিপরী? ‘
রিমি নিষ্চুপ।অয়ন গম্ভীর মুখে চলে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। ইশা হতাশ পানে রিমির দিকে তাকিয়ে থাকে। ইশা ভেবেছিলো তার কর্মকান্ডে পসেসিভ হয়ে রিমি অয়নকে ভালোবাসি কথাটি বলে দিবে। অয়নের মুখে বিদেশে থাকতেই ইশা শুনেছিলো রিমির কথা। রিমির সম্পর্কে দেশে এসে মোটামোটি ধারণা নিয়েছিলো ইশা। ইশা রিমির আচরণ লক্ষ্য করে বুঝতে পারে রিমি অয়নকে ভালোবাসে, কিন্তু তা প্রকাশ করেনা।
তাই ইশার বুদ্ধি অনুযায়ী, ইশা এবং অয়ন ঠিক করেছিলো রিমিকে জেলাস করিয়ে রিমির মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটি বের করিয়ে ছাড়বে কিন্তু তারা ব্যর্থ। রিমি খানিক্ষন চুপ থেকে, আনমনেই গেঁয়ে উঠে,
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রঙ মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রঙ দিয়ে তোমাকেই আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
অয়ন দাঁড়িয়ে যায়। রিমির গান শুনে পিছনে ঘুড়ে যায় দ্রুত। রিমি অয়নের আখিজোড়ার দিকে তাকিয়ে গাইতে থাকে,
হ্যাঁ, প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষণ দিতে চাই
তোমাকে, ও তোমাকে
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
আর দু’টি নিয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে, ও তোমাকে
অয়ন মুগ্ধ হয়,রিমির গান শুনে। রিমির গানে প্রতিটি লাইনে রয়েছে অয়নের প্রতি একরাশ ভালোলাগা, ভালোবাসার সিক্ত অনুভুতি। অয়নের মুখস্রী দেখে তার ভিতরের অবস্হা বুঝে উঠার সাধ্যি নেই। অয়ন পুনরায় গম্ভীর মুখে উপরে চলে যায়। রিমি অসহায় পানে তাকিয়ে থাকে অয়নের যাওয়ার পানে। ইশা রিমির কাছে ধীর পায়ে হেটে এসে প্রশ্ন করে,
‘ দেখতে পারছো? তোমার মুখে ভালোবাসি ডাকটি শুনার জন্যে কতটা বেকুল হয়ে উঠেছে অয়ন, তুমি যে অয়নকে ভালোবাসো তা তোমার প্রতিটি গানে স্পষ্ট। তাহলে ভালোবাসি বলে দিতে দ্বিধা কিসের? ‘
‘ ভালোবাসি কথাটি বলার চেয়ে তা অনুভব করানোর মাঝে আলাদা এক সুখ লুকিয়ে রয়েছে। ‘
কথাটি বলে রিমি সামান্য মুচকি হাসে,যে হাসির অর্থ বুঝতে পারেনা ইশা।
______________
ফারহান সুমাইয়ার কেবিনে সামনে পায়চারী করে যাচ্ছে অনাবরত। সুমাইয়াকে কে বা কারা মারতে চাইছে? মেয়েটাই বা কে? নানা প্রশ্ন ফারহানের মাথায় ঝটলা পাকাচ্ছে। ফারহান আজকের ঘটনার মধ্য দিয়ে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারে সুমাইয়াকে যারা মারতে চেয়েছিলো তারা ইতিপূর্বে জেনে গিয়েছে সুমাইয়া বেঁচে আছে। যার কারণে সুমাইয়ার জীবনের বেশ ঝুঁকি রয়েছে, তাই ফারহান সুমাইয়ার কেবিনের সামনে কঠোর পাহারা বসিয়েছে। সুমাইয়ার কেবিনের বাইরে এসে, ডক্টর দেখতে পায় ফারহান চিন্তিত মুখে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। ডক্টর এগিয়ে এসে ফারহানের কাধে হাত রাখে। অতঃপর দৃঢ় কন্ঠে আস্বস্ত দিয়ে বলে,
‘ তুমি চিন্তা করো না ফারহান। আগের মতে ভুল হবেনা পুনরায়। ‘
ফারহান কিছুক্ষন চুপ থাকলো। অতঃপর কঠোর গলায় বললো,
‘ দ্বিতীয়বার ভুল আমি হতে দিবোও না। কালকের মধ্যে সুমাইয়ার অপারেশন এর ব্যবস্হা করুন।’
‘ কালকেই? ‘
‘ হ্যা কালকেই। আপনি ডক্টরদের কাল সন্ধ্যার মধ্যে আসতে বলুন। ‘
‘ দেখো ফারহান এতে কিন্তু সুমাইয়া জীবনের রিস্ক আছে। ‘
‘ বড় কোন সাফল্য পেতে হলে, মাঝে মাঝে বড় বড় ঝুঁকির মোকাবেলা করতে হয় ডক্টর। ‘
ফারহানের কথায় মাথা নাড়িয়ে ডক্টর ফারহানের কাঁধে চাপড় মেরে চলে যায়। ফারহান সুমাইয়ার কেবিনের দিকে এগিয়ে যায়। সুমাইয়া শুয়ে ছিলো। ফারহান সুমাইয়ার হাতখানা ধরে আলতোভাবে চুমু খেয়ে, সুমাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে, সিক্ত কন্ঠে বলে,
‘ তুমি সুস্হ হয়ে উঠবে সুমাইয়া। তোমার ফারহান থাকতে কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবে না। ‘
_________
রিমি ফাঁকা ক্লাস রুমে বসে ক্লাস করছে, তার সামনে বরাবর অয়ন দাঁড়িয়ে লেকচার দিচ্ছে। অয়নের আদেশ অনুযায়ী রিমিকে একাই ক্লাস করতে হয়, যদিও কালকে থেকে অয়ন বেশ দূরত্ব নিয়ে আছে রিমির থেকে। ঠিকমতো কথাও বলে না। সবকিছুই অভিমান, কিন্তু অয়ন কি বুঝেনা? অয়নের কঠোর অভিমান রিমির ভিতরটাকে ছাড়খাড় করে দেয় প্রতিনিয়ত, তা কি বুঝে অয়ন? অয়ন লেকচারের মাঝে খেয়াল করছে রিমি তাকে আড়চোখে দেখছে। অয়ন গলা খাকারি দিয়ে, রিমির দিকে হাত বাড়িয়ে ঠান্ডা গলায় বলে,
‘ আপনাকে কয়েকটা নোটস দিয়েছিলাম। আপনার নোটস গুলো হয়েছে মিসেস চৌধুরী? ‘
অয়নের মুখে ‘ আপনি ‘ ডাকটি শুনে বিস্মিত হয়ে যায় রিমি। অয়নের অভিমান কতটা তীব্র তা অয়নের আপনি ডাক শুনেই বুঝা যায়। রিমি উঠে দাঁড়িয়ে অয়নের হাতে নোটস গুলো দিয়ে, চোখ মেরে মুচকি হেসে বেড়িয়ে যায়। অয়ন রিমির কান্ডে হা হয়ে, বসে নোটসগুলো দেখতে গিয়ে খেয়াল করে,নোটস এর ভিতরে লেখা,
‘ ডেয়ার সাইকো বর, আজ রাত ১০টায় ড্রিম নাইট গাডেনে চলে আসিয়েন।’
……..চলবে….কী>