#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_১৬
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
বধুর সাজে বসে আছে অতশী।লাল বেনারসি পড়ে একদম লাল টুকটুকে একটা বউ।একবার তাকালে কেউ আর চোখ ফেরাতে পারছে না।তবে চোখেমুখে তার ভীষণ আতঙ্ক।বুকটা শুধু ধড়ফড় করছে।আজ কি হবে কে জানে?কারণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তানিমকেই বিয়ে করতে হচ্ছে তাকে।শুধুমাত্র তার আসল ভালোবাসার মানুষ কে খুঁজে পাওয়ার জন্য।
অতশীর সকল বান্ধুবীরাই এসেছে।নেহা একদম নতুন বউ এর মতো সেজেছে।কারন তার বিশ্বাস শুভ্র আসবে অনুষ্ঠানে। শুভ্রকে ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছে সে।লিশা আর সুইটি সিম্পল ভাবে সেজেছে।তাদের এতোবেশি মাতামাতি নাই অনুষ্ঠান নিয়ে।লিশা সেই থেকে ফোন কানে ধরেই আছে।কারন ফোনের ওপাশ থেকে বয়ফ্রেন্ড প্রচুর টেনশন করছে।বিয়ে বাড়িতে গিয়েছে,না জানি কাকে আবার পছন্দ করে ফেলে।
হঠাৎ ইভানের বন্ধুরা আসলো।ওদের কে আসা দেখে সুইটি অতশীর কানে কানে গিয়ে বললো,ইভান তো আসলো না, তবে ওর ফ্রেন্ডরা এসেছে।এরপরেও বলবি ইভান তোকে ভালোবাসে।
এসব কল্পনা ভুলে যা।ইভান তোকে ভালোবাসে না।আমার তো মনে হয় চিরকুট গুলো সত্যি সত্যি তানিমই পাঠাতো।
সুইটির কথা শুনে অতশীর ভয় আরো বাড়তে লাগলো।তাহলে কি সত্যি সত্যি তানিমের সাথেই তার বিয়ে হবে!
অন্যদিকে তানিম বরের বেশে রওনা দিয়েছে।তার আজ সবচেয়ে আনন্দের দিন।কি যে খুশি লাগছে তাকে কাউকে বোঝাতে পারছে না।এই দিনটার জন্য অনেক পরিশ্রম করেছে সে।আর তার সাথে সাথে প্রচুর টাকাও খরচ করেছে।সেদিন যারা অতশীকে এট্যাক করেছিলো তারাও কিন্তু তানিমেরই লোক ছিলো।তানিম চেয়েছিলো অতশী আর তার পরিবার কে সবচেয়ে আতংকের মধ্যে রাখতে।যাতে তারা সবসময় সকল প্রয়োজনে তানিম কে ডাকে।যেহেতু এখন অয়ন নেই।তানিম যেমন ভাবে পরিকল্পনা করেছে তেমনভাবেই সবকিছু হয়েছে।
অতশী টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছিলো।এখন পর্যন্ত তো ইভান কিছুই করলো না।তারমানে ইভানের মনে সত্যি সে নাই।ইভান ইগনোর করা সত্ত্বেও অতশী ইভানের আশায় বসে ছিলো।তার বিশ্বাস ইভান আসবে।
সবাইকে অবাক করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত ইভানও আসলো।অতশীকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য গিফটও নিয়ে এসেছে সে।ইভান কে দেখামাত্র নীলয় বললো,
–দোস্ত তুই?শেষ পর্যন্ত তাহলে আসলি?
ইভান সেই কথা শুনে হেসে হেসে বললো,আসতে হলো।তোরা সবাই এসেছিস!কি আর করার! তা না হলে অতশী ভাববে গিফট দেওয়ার ভয়ে আসে নি।
আচ্ছা বাদ দে।নতুন বউ কই?দেখা করি একটু!বেশি দেরী করবো না আমি!এই বলে ইভান অতশীর রুমে প্রবেশ করলো।
ইভান কে দেখামাত্র অতশীর হার্টবিট বাড়তে লাগলো।সে তার মন কে শান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বুকে হাত দিয়ে বললো এতো লাফালাফি করিস না,উনি তোকে বিয়ে করতে আসে নি,বিয়ের দাওয়াত খেতে এসেছে।
ইভান কে আজ অন্যরকম লাগছিলো।বিয়ে বাড়িতে আসবে দেখে নিজেকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে।এরকম সাজ এ আগে কখনো দেখে নি অতশী।সাদা শার্টের উপর কালো কালারের ব্লেজার ইভান কে একদম গিলে খাচ্ছিলো।অতশী ভুলেই গেলো আজ তার বিয়ে হচ্ছে।সে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে।
ইভান তখন অতশীর হাতে একটা গিফট বক্স দিলো।আর বললো, কংগ্রাচুলেশনস।নতুন জীবন সুখের হোক।
অতশী ইভানের কথা যেনো শুনতেই পেলো না।সে শুধু ইভান কে দেখছে!
–কি হলো নাও!
অতশী চমকে উঠে গিফট টা নিতে ধরলো।তার হাত টা একদম কাঁপছিলো।ইভান তখন নিজেই এগিয়ে দিলো অতশীর হাতে।অতশী ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেলো।
ইভান তখন বললো,কথা না বললে অন্তত ধন্যবাদ টুকু দাও।
–থ্যাং,,,,ক,,,ই,,,উ
ইভান ওয়েলকাম বলেই রুম থেকে বের হয়ে তার ফ্রেন্ডদের কাছে চলে গেলো।
ইভান রুম থেকে বের হয়ে যাওয়াই অতশীর মন টা ভেংগে টুকরো টুকরো হয়ে গেলো।তার মন কিছুতেই আর বিয়ে করতে সায় দিচ্ছে না। ইচ্ছে করছে দৌঁড়ে গিয়ে ইভান কে জড়িয়ে ধরতে।অতশীর চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো।
অতশীকে কাঁদতে দেখে নেহা বললো,অতশী প্লিজ চুপ কর।কাঁদছিস কেনো এভাবে?এবার বুঝলি তো তুই মরিচীকার পিছনে ছুটছিস?ইভানের মুখে বা চোখে কোনো অনুতাপ নেই আর নেই কোনো অনুভূতি। আর তুই তাকে পরিক্ষা করার জন্য বউ সেজে বসে আছিস।
এখন কর বিয়ে তানিম কে।
লিশা তখন বললো নেহা চুপ কর এখন।ওকে আর কিছু বলিস না।এখন ভাব বিয়ে টা আটকাবি কেমনে?
সুইটিও সেটাই বললো।হ্যাঁ, যেভাবেই হোক বিয়েটা আটকায় চল।
অতশী তখন রাগ করে বললো,না,কিছুই করবি না তোরা।বিয়ে আটকাতে হবে না।আমি তানিম কেই বিয়ে করবো।আমাকে নিয়ে কাউকে আর ভাবতে হবে না।যে আমাকে ভালোবাসে আমি শুধুমাত্র তারই।
মেহমানরা এক এক করে আসছে।যাদের তাড়া আছে তারা খাওয়াদাওয়া করেই চলেই যাচ্ছে।এদিকে বর রওনা দিয়েছে অনেকক্ষন।কিন্তু এখনো আসে নি।সবাই বরের জন্য অপেক্ষা করতে করতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
হঠাৎ সবাই চিৎকার করে উঠলো।এসেছে!এসেছে!বরের গাড়ি এসেছে।
বর আসার কথা শোনামাত্র অতশীর মাথা চক্কর দিতে লাগলো।তার প্রেশার বেড়ে গেলো।এই বুঝি সে মাথা ঘুরে পড়ে যায়।
সবাই বর কে দেখার জন্য গাড়ির কাছে চলে গেলো।কিন্তু গাড়ি থেকে বর নামলো না।বরের পরিবর্তে তানিমের বাবা মা নামলো।সবাই শুধু ফুসুরফাসুর করছে।কি ব্যাপার!বর নামে না কেনো?তানিমের বাবা মা গাড়ি থেকে নেমেই অতশীর রুমে চলে গেলো।আর কোনো কথা না বলে অতশীকে টেনে হিঁচড়ে বের করে আনলো রুম থেকে।আর চিৎকার করে বলতে লাগলো,কই লুকিয়ে আছে তোর প্রেমিক?তাড়াতাড়ি ওর নাম ঠিকানা দে।
কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না।সবাই সবার মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো।
অতশীর আম্মু দৌঁড়ে এলো।কি করছেন এসব?ছেড়ে দিন অতশীকে।মারছেন কেনো ওকে?
তানিমের আম্মু অতশীর আম্মুকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।অতশীর আম্মু তখন বললো, কেউ একটু বাঁচাও আমার মেয়েটাকে।ওকে তো মেরেই ফেললো।
সেই কথা শুনে সবাই তানিমের আম্মুকে আটকালো।তানিমের আম্মু সবাই কে গা ঝাটকা দিয়ে ফেলে দিলো।তিনি আবার চলে গেলেন অতশীর কাছে।অতশীর বান্ধুবীরাও এগিয়ে গেলো,কিন্তু তানিমের আম্মুর শক্তির সাথে কেউই পাচ্ছে না।ইভান আর তার ফ্রেন্ড রা এবার ভালো করে ধরলো তানিমের আম্মুকে।আর বললো,আন্টি কি হয়েছে?আপনি এমন করছেন কেনো?
তানিমের আম্মু তখন বললো, এরা সবাই মিলে আমার ছেলেটাকে খুন করেছে।এই বলে তানিমের আম্মু কাঁদতে লাগলো।
তানিমের আম্মুর কথা শুনে সবার মাথায় মনে হয় আকাশ ভেঙে পড়লো।তানিম খুন হয়েছে কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না।
তানিমের আব্বু তখন বললো, আমরা একই গাড়িতে ছিলাম।হঠাৎ একদল সন্ত্রাস আমাদের পথ আটকায়।আমাদের কে বেঁধে রাখে।আর আমাদেরই চোখের সামনে তানিম কে খুন করেই পালিয়ে যায়।আমরা তাড়াতাড়ি করে তানিম কে হাসপাতালে নিয়ে যাই কিন্তু ডাক্তার তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
এবার ইভান কথা বলে উঠলো।সে বললো,তানিম খুন হয়েছে এতে অতশীর কি দোষ? ওকে মারছেন কেনো?
হয় তো তানিমের কোনো শত্রু মেরেছে ওকে।
–না নেই।আমার ছেলের কোনো শত্রু নেই।এই মেয়ের প্রেমিক মেরেছে।আজ ওর বিয়ে দেখে নিশ্চয় সেই লোক পাঠিয়ে দিয়েছে।
অতশীর বান্ধুবীরা তখন বললো, অতশীর কোনো প্রেমিক নেই।আপনি খবরদার আজেবাজে কথা বলবেন না।
–চুপ। তোরা চুপ থাক।মিথ্যাবাদীর দল। তোদের সবাইকে আজ আমি পুলিশে দিবো।ওর যদি প্রেমিক নাই থাকে তাহলে ও বিয়ে তে রাজি ছিলো না কেনো?হাজারবার বুঝানোর পরও রাজি হয় নি।তাছাড়া রোজ রোজ কে যেনো তাকে চিঠি দিতো।এই চিঠিওয়ালাই আমার ছেলেকে খুন করেছে।
তানিমের আম্মুর কথা শুনে সবাই পরিষ্কার বুঝে গেলো যে চিরকুট গুলো তানিম পাঠাতো না।সে এই চিরকুট গুলোকে নিজের নামে চালিয়ে অতশীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলাইতে চাইছিলো।
অতশীর দাদী এসব কথা শুনে মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।সেজন্য ওনার মাথায় সবাই পানি ঢালা নিয়ে ব্যাস্ত।এদিকে অতশীর মা জোরে জোরে চিৎকার করে করে কাঁদতে লাগলো। তাদের সাথে আরো কত অন্যায় হবে আল্লাহ।একের পর এক বিপদ হচ্ছে তাদের।
অতশী সেই থেকে মেঝেতেই বসে আছে।সে শুধু ভাবছে তার সাথে আর কি কি হওয়ার বাকি আছে!সকল মেহমান অতশীকে এভাবে ঘিরে ধরে থাকায় ইভান অতশীর বান্ধুবীদের বললো,ওকে ঘরে নিয়ে যাও।আর ওর সাথেই থাকো।
ইভানের কথা শুনে নেহা আর লিশা অতশীর হাত ধরে যেই ওঠাতে ধরেছে অতশী তখন কথা বলে উঠলো।সে বললো,আমি ঠিক আছি।লাগবে না ধরা।এই বলে অতশী ঘরের ভিতর গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো।
অতশীকে এভাবে দরজা লাগানো দেখে সবাই জোরে জোরে করে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলো।কিন্তু অতশী দরজা খুললো না।
মুহুর্তের মধ্যে বিয়ে বাড়ির হইচই একদম নিরব হয়ে গেলো।এদিকে তানিমের মৃত্যুর খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।সারাশহর রটে গেলো অতশী আর তার প্রেমিক খুন করেছে তানিম কে।কিন্তু কে সে প্রেমিক কেউ চেনে না তাকে।
কিছুক্ষন পর পুলিশ ও আসলো সেখানে।কারন তানিমের বাবা মা পুলিশ কে সবকিছু জানিয়েছে।
পুলিশকে দেখামাত্র ইভান আর তার বন্ধুরা এগিয়ে গেলো।ইভান কে দেখে পুলিশ কিছু বলার আগেই ইভান পুলিশের কানে কানে কি যেনো বললো।পুলিশটি তখন তার মাথা নাড়িয়ে ইনভেস্টিগেশন শুরু করে দিলো।
পুলিশ একে একে সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করলো।এক পর্যায়ে অতশীকে তার সেই প্রেমিক সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলো। অতশী তো নিজেই জানে না কে সে?এতোদিন তো সে ইভান কে ভেবে এসেছে।কিন্তু আজ পরিষ্কার বুঝে গেলো এটা ইভান নয়।অতশী কোনোকিছু না লুকিয়ে সব চিরকুট আর গিফট পুলিশের হাতে দিয়ে বললো,আমি এনাকে কোনোদিন দেখি নি,বা ইনি আমার সামনে কোনোদিন আসে নি।
পুলিশ তখন বললো, আপনি অচেনা নাম না জানা মানুষের পার্সেল কেনো রিসিভ করেছেন?এ ব্যাপারে আপনার পুলিশ কে ইনফর্ম করা উচিত ছিলো।
অতশী তখন বললো,তানিম আমাকে জানিয়েছিলো যে সেই এগুলো পাঠাতো।সেজন্য আর কাউকে বলি নি কিছু।
ইনভেস্টিগেশন শেষ হলে পুলিশ চলে গেলো।
অতশীর আম্মু সেই থেকে শুধু কেঁদেই যাচ্ছে।তিনি কিছুতেই থামছেন না।কারন তানিম কে তিনি নিজের ছেলের মতোই ভাবতেন।তানিম তাদের সবসময় খোঁজখবর নিতো।বিপদে আপদে সবার আগে সে এগিয়ে আসতো।আজ ছেলেটা এইভাবে হারিয়ে গেলো!
অতশীর মা এবার অতশীর কাছে গিয়ে বললো,সত্যি করে বল তো আমায়।সত্যি তুই তাকে চিনিস না?
অতশী তার মায়ের কথা শুনেও চুপ করে রইলো।কারন এই এক প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে সে ক্লান্ত!
অতশীর মা তখন বললো,কথা কস না কেন?চুপ করে থাকলে তো সবাই এটাই সত্য ভাববে।এই বলে অতশীর কানে কপালে চড় দিতে লাগলো।
ইভান তখন এগিয়ে এসে বললো, আন্টি থামুন এবার।আর ওকে কোনো প্রশ্ন করেন না। ও যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছে।আপনি ওর মা হয়েও যদি এভাবে পুলিশদের মতো জেরা করেন তাহলে ও তো একদম ভেংগে পড়বে।সবাই যে যার রুমে চলে যান প্লিজ।অনেক রাত হয়েছে।পুলিশ তো সবকিছু শুনেই গেলো।এখন যা করার ওনারাই করবে।
ইভান কে এতোক্ষণ খেয়াল করে নি অতশীর আম্মু।তিনি তখন বললেন,তুমি কে বাবা?তোমাকে তো চিনলাম না।
ইভান কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছিলো না কিছু।
#চলবে,,,
#অনুভবে_তুমি
#পর্ব_১৭
#মুমতাহিনা_জান্নাত_মৌ
বাড়িভরা মেহমানের মধ্যে অতশীর আম্মু ইভানের পরিচয় জানতে চাইলো,ইভান কি পরিচয় দেবে খুঁজে পাচ্ছিলো না।হঠাৎ অতশীর আম্মু ইভানের বাকি ফ্রেন্ডদেরও খেয়াল করলো।তা দেখে অতশীর আম্মুর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো।কারণ অতশীর আম্মুর মনে পড়ে গেলো এরা তো সেই ছেলেগুলো যারা অতশীর ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো।আর অতশীকে মাঝে মাঝে ইভানের সাথে কথা বলতেও দেখতো।তাহলে কি ইভানের সাথে অতশীর কোনো কানেকশন আছে!
অতশীর আম্মু অতশীর কাছে চলে গেলো।আর বললো,এসব ছেলেদের সাথে কবে থেকে ভাব জমায়ছিস?অয়ন না থাকায় বেশ পাখনা গঁজিয়েছি দেখি।ছেলে বন্ধুদের বিয়েতে ইনভাইট করেছিস?
অতশী সেই আগের মতোই চুপচাপ হয়ে আছে।তার এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে একদম ইচ্ছে করছে না।
তখন লিশা এগিয়ে এসে বললো,আন্টি আপনি শুধু শুধু ভুল বুঝছেন।আসলে এদের আমরাই ইনভাইট করেছি।
লিশা তখন দিশান আর নিলয় কে দেখিয়ে বললো এরা দুইজন আমার ভাই হয় আন্টি।শুভ্র নেহাকে দেখিয়ে বললো আমরা দুইজন ফ্রেন্ড হই।
অতশীর আম্মু তখন ইভান কে বললো, তুমি কার কে হও?তুমি কিছু বলছো না যে?
ইভান সেই আগের মতোই চুপ হয়ে থাকলো।সুইটি তখন বললো আসলে আন্টি ইভান আমার সাথে এসেছে।ও আমার কাজিন হয়।
অতশীর আম্মু তখন বললো,কোনটা সত্য কথা আর কোনটা মিথ্যা কথা সেটা আমি মুখ দেখেই বুঝতে পারি।তোমরা সবাই মিথ্যা কথা বলছো?
অতশী এবার আর চুপ করে থাকলো না।সে এগিয়ে এসে বললো, আম্মু তুমি এমন করতেছো কেনো?তুমি আমার ফ্রেন্ডদের কিন্তু অপমান করছো।আমাকে যা নয় তাই বলো কিন্তু এরা আমার ফ্রেন্ড হয়।এদের তুমি এভাবে বলতে পারো না।প্লিজ চুপ করো।
অতশীর আম্মুর কথা শুনে ইভান আর তার ফ্রেন্ডরা বেশ লজ্জিত হলো।তারা আর এক মুহুর্তও দেরী করলো না।তাড়াতাড়ি করে চলে যেতে ধরলো।
অতশী তখন ইভানের সামনে গিয়ে বললো,আম্মুর হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।আসলে আম্মু একটু ওরকমই।সবকিছুতেই সন্দেহ করে।আসলে আমার কোনো ছেলেফ্রেন্ড ছিলো না তাই আপনাদের দেখে একটু অবাক হয়েছে।
ইভান তখন বললো, তুমি জানোই তো তোমার ফ্যামিলির লোকজন এমন।তাহলে আমাদের ইনভাইট করলে কেনো?
অতশী ইভানের কথা শুনে চুপ করে থাকলো।
তখন ইভান বললো, অতশী আমি কখনো ভাবতেই পারি নি তোমার বিয়ে তে এসে এইরকম কিছু হবে।আগে জানলে আসতামই না।এই বলে ইভান চলে গেলো।
হঠাৎ অতশীর দাদী ইভান কে বললো,দাঁড়াও তুমি।কই যাচ্ছো?যাবে না কোথাও।
ইভান কিছুই বুঝতে পারলো না।সে দাদীর কথা শুনে দাঁড়িয়ে গেলো।
দাদী তখন বললো তুমিই তাহলে ইভান!এতোদিন নাম শুনেছি।আজ সরাসরি দেখলাম।
ইভান সেই কথা শুনে অতশীর দিকে তাকালো।
অতশীর আম্মু তখন বললো, আম্মা আপনি কেমনে চিনলেন? অতশী নিশ্চয় বলেছে ওর কথা।
–আমি বলি নি কিছু। দাদী অযথায় ভুলভাল বলছে।
দাদী তখন বললো,মিথ্যা বলছিস কেনো অতশী?তুই তো বলেছিলি ইভান নামের কেউ তোকে চিরকুট পাঠায়।আর সে রোজ তোর ভার্সিটিতে তোর ডিপার্টমেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে।
–হ্যাঁ বলেছিলাম।কারন আমি ভেবেছি ইভান ই হয় তো আমাকে চিরকুট পাঠাতো।কিন্তু আজ দিয়ে বুঝলাম এটা আমার সম্পূর্ণ ভুল ধারনা ছিলো।
মেহমানরা তা শুনে কানাঘুষা করতে লাগলো।নিশ্চয় এই ছেলের সাথেই অতশীর সম্পর্ক আছে।
ইভান বুঝতে পারলো এখানকার পরিবেশ ভালো না।যেকোন মুহুর্তে খারাপ কিছু হতে পারে। সেজন্য সে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে ধরলো।
হঠাৎ একজন আন্টি বললো,তুমি এভাবে পালিয়ে যাচ্ছো কেনো?সত্য করে বলো অতশীর সাথে তোমার কিসের সম্পর্ক?
ইভান তখন অতশীর সামনে গিয়ে বললো, তুমি কি এই জন্যই আমাদের ডেকেছিলে?কি শুরু করেছে সবাই?তুমি কিছু বলছো না কেনো?
অতশী সেই কথা শুনে সবার উদ্দেশ্যে বললো, আপনারা ওনাকে নিয়ে আর খারাপ কিছু বলেন না।
ওনার সাথে আমার সত্যি কোনো সম্পর্ক নাই।
সেই কথা শুনে অতশীর চাচা বললো,দুইজনে প্রেম করো সেটা স্বীকার করলেই তো হয়?এভাবে লুকোচুরি করার কি দরকার?
তখন অতশীর চাচী অতশীর আম্মুর কাছে এগিয়ে এসে বললো,দুইজন রে বিয়ে পড়ে দাও অতশীর মাও।এটাই সুযোগ।এতোকিছুর পরে মনে হয় না আর কেউ অতশীকে বিয়ে করবে!
ইভান সেই কথা শুনে চমকে উঠলো।কি বলছে এসব!
ইভান সেজন্য সবাইকে রেখে চলে যেতে ধরলো।
কিন্তু অতশীর গ্রামের লোকেরা যেতে দিলো না ইভান কে।তারা অতশীকে বিয়ে করার জন্য জোর করতে লাগলো।
ইভান তখন চিৎকার করে বললো,শাট আপ।আর এক পা যদি কেউ এগুচ্ছো তাহলে খবর আছে সবার।আপনাদের সাহস দেখে সত্যি আমি অবাক হচ্ছি।এতো বড় স্পর্ধা আপনাদের?আপনাদের সবাই কে আমি জেলে পুরে দিবো।
ইভানের এমন রাগ থেকে পাড়াপ্রতিবেশি এক চাচা এগিয়ে এসে বললো,আমাদের কে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছো!দাঁড়াও আজ তোমাকেই পুলিশে দিবো।পুলিশ কে বলবো তুমিই সেই চিরকুট ওয়ালা ছেলে।আর তুমিই তানিম কে খুন করেছো।
ইভানের বন্ধুরা তখন বললো,আংকেল আপনি গুরুজন বলে কিছু বললাম না।তা না হলে আপনাকে আজ এমন শাস্তি দিতাম জীবনেও ভুলতে পারতেন না।বিনা কারনে আপনি ইভান কে দোষারোপ করতে পারেন না?
আংকেল তখন রাগান্বিত হয়ে তার ভাইদের ডাকতে লাগলো।এই ছেলে বলে কি?আমাকে থ্রেড দেয়।ধরো সবাই এদের।আজ এদের আমিই এমন শাস্তি দিবো যে জীবনেও ভুলবে না।এই বলে সবাই ইভান আর তার বন্ধুদের মারতে লাগলো।
ইভান আর তার বন্ধুরা কোনো উপাই না দেখে তাদের পিস্তল বের করে উপর দিকে ফাঁকা গুলি ছুঁড়তে লাগলো।পিস্তলের আওয়াজ শুনে সবাই দৌঁড়ে পালিয়ে গেলো।
ইভান এবার চিৎকার করে বললো,এগিয়ে আসো।কে আমাকে মারতে চাইলে?তাড়াতাড়ি এগিয়ে আসো।
কেউ আর ভয়ে সামনে আসলো না।সবাই থরথর করে কাঁপতে লাগলো।
ইভান এবার পিস্তল টা ঢুকিয়ে রেখে অতশীর কাছে চলে গেলো।অতশী ভয়ে চুপ করে আছে।
ইভান তখন বললো,হ্যাঁ আমিই সেই।যে তোমাকে সন্ত্রাসীর হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম।এটা আমার দায়িত্ব ছিলো।সেজন্য আমি তোমাকে রক্ষা করেছি।কিন্তু তাই বলে এটা ভেবো না যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর হ্যাঁ,পরিষ্কার করে সবাই কে বলে দিচ্ছি আমি অতশীকে কোনো প্রেমপত্র দেই নি।এতো অভার কনফিডেন্স কেনো তোমার?আমি তোমাকে বলেছি কখনো?তাহলে তোমার দাদীকে বলেছো কেনো আমার কথা!আর যেনো কখনো এ নিয়ে কথা বলতে না শুনি।
অতশী নিচ মুখ হয়ে তাকিয়ে রইলো।তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।সে কান ধরে তওবা করলো কখনোই সে ইভানের সামনে যাবে না।বা ইভানের দিকে ভুল করেও তাকাবে না।ইভান নামে সে কাউকে চেনে না।
এদিকে নেহা ভয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে।সে এই শুভ্র কে চায় নি।সে তো ভেবেছিলো শুভ্র একজন সহজ সরল ভালো ছেলে।কিন্তু এ তো দেখি একজন সন্ত্রাস!পিস্তল হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
হঠাৎ কয়েকজন পুলিশ আসলো সেখানে।ইভান আর তার বন্ধুদের হাতে পিস্তল দেখে কেউ একজন ইনফর্ম করেছিলো।
পুলিশ কে দেখে বিন্দুমাত্র ভয় পেলো না ইভান।সে পুলিশের সামনে দিয়েই চলে গেলো।
এদিকে পুলিশ সবাই কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলো।কি হয়েছিলো এখানে?
তখন কেউ একজন ইভানদের দেখিয়ে দিলো।যে ওরাই সেই সন্ত্রাস যারা আমাদের এট্যাক করেছে।
পুলিশ তা শুনে ভীষণ রাগ হলো।বললো,এভাবে ভালোভাবে না জেনে কাউকে সন্ত্রাস বলবেন না।ওনাদের আমরা ভালো করেই চিনি।আর বিনা কারনে অযথাই পুলিশদের ডেকে হয়রানি করা ঠিক না।এই বলে পুলিশও চলে গেলো।
অতশীর গ্রামের লোকজন হা করে তাকিয়ে রইলো। কেউ কিছুই বুঝতে পারলো না।
চারদিন পরের ব্রেকিং নিউজ,
তানিমের এক খুনীকে ধরা হয়েছে।খুনী অন্য কেউ নয়। তানিমের ফ্রেন্ড হয় সে।বাকি তিনজন খুনী পলাতক।তানিমের ফ্রেন্ড কে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।রিমান্ড শেষে জানা যাবে এর আসল কাহিনী।কি জন্য তানিমের ফ্রেন্ড এই কাজটি করলো।
তানিমের খুনীর কথা শুনে অতশীর ফ্যামিলির সবাই বেশ অবাক হলো।বিশেষ করে অতশী।কারন এরা সবাই তো বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো।খুব মিল ছিলো সবার মধ্যে।একসাথে একই অফিসে সবাই চাকরি করতো। অয়ন সবসময় বলতো তাদের ফ্রেন্ডের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্কের কথা।তাহলে তারা এ কাজ কেনো করলো?
অতশী রোজ জানালা দিয়ে দেখতো এদের।অফিস টাইমে সবাই এসে তার ভাইয়াকে নিয়ে যায়।কিন্তু হঠাৎ করে এদের কি হলো?তমাল খুন হলো,অন্যদিকে অয়ন জেলখানায়,তানিম আবার তার বন্ধুতের হাতেই খুন হলো।ব্যাপারটি খুব রহস্যজনক মনে হলো সবার কাছে।
তানিমের খুনী ধরা পড়ায় অতশী নিশ্চিন্তে বাসা থেকে বের হলো।এ কয় দিন সে বাসা থেকে বের হই নি।কারন অনেকেই অতশীর দিকে আংগুল তুলে কথা বলতো।যেটা তার ভালো লাগতো না।কিন্তু এভাবে ঘরে বসে থাকলে চলবে না।অতশী সেজন্য আজ মৌরির বাসায় চলে গেলো।কারন মৌরির বাবার সাথে তার ভাইয়াকে নিয়ে কথা বলতে হবে।এদিকে চারদিন থেকে সে বাচ্চা দুইটিকে ও প্রাইভেট পড়াতে যায় না।
অতশী মৌরির বাড়িতে চলে গেলো।বাসার কলিং বেল বাজিয়ে সে দাঁড়িয়ে থাকলো।কিন্তু কেউ খুললো না দরজা।অতশী সেজন্য আবার কলিং বেল বাজালো।এবার কে যেনো দরজা খুললো।দরজা খুলতেই অতশীর চোখ কপালে উঠে গেলো।সে তার দিকে না তাকিয়ে নিচ মুখ হয়ে থাকলো।
চলবে,,,,