মনের কোণে পর্ব-২২+২৩

0
301

মনের কোণে🥀
আফনান লারা
.
২২
মাথা চুলকে অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ানো হলো তাদের।কিন্তু হয়ে গেছে বিপত্তি।
সামিয়া ওদের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।তার মুখের ভাব দেখে মনে হয় আন্দাজ করছেন কিছু।

সেই কিছুটা হলো এতক্ষণ এই রুমে ওরা দুজন অনেকসময় ধরে ছিল এটা তিনি বুঝতে পেরেছেন।এতে রেগেও আছেন সাথে তার মনে বাসা বেঁধেছে হাজারটা প্রশ্ন।নাবিল ভয়ে কি বলবে না বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না।উপস্থিত বুদ্ধি তার আছে তবে মায়ের সামনে সেটা কাজে আসেনা।মায়ের সামনে সব এলোমেলো হয়ে যায় তার।কথা সাজিয়ে নিতে পারলেও মুখ ফুটে বলতে পারেনা ঠিক।ছোটবেলায় স্কুল কামাই দিলে মা যখন জিজ্ঞেস করতো তখন ও সে কথা গুছিয়ে বলতে পারতোনা,তার জন্য ধাপধুপ মা*র ও খেতো মায়ের হাতে।
এখন ভয় পাচ্ছে এই ভেবে যে এখন না আবার মা*র খায়।
লিখি নাবিলকে এমন ঘামতে দেখে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ছিল।ছাব্বিশ বছরের এত বড় একটা ছেলে কিনা মাকে বাঘের মতন ভয় পেয়ে এখন থরথর করে কাঁপছে?এটাও তাকে বিশ্বাস করতে হবে?
‘এই ছেলে আমায় বিয়ে করেছে কেন!
কাকে বিয়ে করলাম আমি!কেন করলাম!মাকে এত ভয় পায়!বাবাকে দেখলে তো বলে দিবে আমি ওর কিছুই হয়না!!
কি কপাল আমার!’

লিখির ভাবনায় ছেদ ঘটালো নাবিলের একটি উক্তি।খপ করে ওর হাতটা ধরে সে হঠাৎ বলে উঠলো,’অনেক হয়েছে,মা লিখি আমার বিয়ে করা বউ।লিগালি আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ’

মা নাবিলের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লেন।চোখ বড় করে শুধু তাকিয়ে আছেন।শুধু তিনি নন,লিখিও হা করে চোখটা বড় করে নাবিলের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।এতক্ষণ ঘামছিল এতবড় কথাটা বলার জন্য?অবাক করা কথা বলে ফেললো ছেলেটা!অসাধারণ!!’

মা মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে গেছেন,নাবিল লিখির হাত ছেড়ে মায়ের কাছে গিয়ে বসলো।
সামান্য আওয়াজে মামা জেগে গেছেন।তিনি উঠে লিখি নাবিলকে সামিয়ার সাথে দেখে বুঝে গেছেন ঝামেলা কিছু একটা হয়েছে।তাই চুপিচুপি গিয়ে মামিকেও ডেকে এনেছেন,তবে দুজনে পর্দার আড়ালে থেকে দেখছে কি ঘটছে ওখানে।সামনে যাবার সাহস কারোর নাই।

নাবিল মায়ের হাতটা ধরতে যেতেই তিনি হাত সরিয়ে নিলেন।রাগ করে বললেন,’এত বড় একটা কথা তুই আমার থেকে লুকিয়ে রাখলি?আমি জানলে কি তোর বাবাকে সাথে সাথে জানিয়ে দিতাম?আমাকে এত ভয়?’

মামা আর চুপ থাকলেননা,পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বললেন,’সামিয়া আপু!দোষটা ওর না,আসলে আমিই ওকে বলেছিলাম কথাটা এড়িয়ে যেতে।তুমি জানলে ভাল ভাবে নিতেনা তাই….’

‘তাই?ভালভাবে নিতাম না?নাবিল আমার বড় ছেলে।ওর জীবনের এতবড় একটা কথা আমার জানার অধিকার সব চাইতে বেশি!’

লিখি দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে সামনে ঘটতে থাকা বাংলা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা দেখছে।এখন হাতে পপকর্ণ থাকলে কত ভাল হতো।সিনেমা দেখলে পেটটা খাই খাই করে।তবে হাতের কাছে সেই ফিরনির বাটিটা লেগে গেছে।মন্দ কি!ফিরনি চলুক তবে?’

চামচ খুঁজে ফিরনি খেতে খেতে লিখি নাবিলের মায়ের অভিমান নাবিলকে আর মামাকে দিয়ে ভাঙ্গানোর দৃশ্য দেখছে আর পাশের বাসার আন্টির মতন একটিং করছেন মনি মামি।পর্দাকে জড়িয়ে ধরে তিনিও সিনেমা দেখছেন।

‘মা আই এম সরি।আসলে বিয়েটা হুট করে হয়ে গিয়েছিল।আমরা নকল রেজিস্ট্রি করতে গিয়েছিলাম আর ঐ ধোকাবাজ লোকটা সত্যিকারের বিয়ে করিয়ে দিয়েছে’

‘নকল রেজিস্ট্রি করতে চাওয়া তুই ধোকাবাজ না,যে আসল বিয়ে করিয়ে দিয়েছে সে ধোকাবাজ?’

নাবিল থতমত খেয়ে বললো,’এই সিচুয়েশনটা পক্ষপাতিত্বের না আমি তোমায় ঘটনাটা শুনাচ্ছি শুধু।’

‘এই মেয়েটা কে?কি তার বংশপরিচয়?’

লিখি ফিরনির বাটি শেষ করেছে সবে,মিষ্টির পরে ঝাল খেলে বিষয়টা জমে যায় দারুণ।
কিন্তু এই মূহুর্তে ঝাল হিসেবে কিছু একটা খেতে পেলে ভাল হতো।সিনেমাটা জমে উঠেছে কেমন!নাবিলের আম্মু হয়ত এখন জিজ্ঞেস করবেন মেয়ের বাবার সহায়সম্পদ কতটুকু!!ইত্যাদি!!ইত্যাদি ”

এসব ভেবে লিখি হাই তুলছিল তখনই মিসেস সামিয়া বললেন,’এই মেয়ে! এদিকে এসো’

লিখির কাছে মনে হলো পুলিশ ডাকছে সার্চ করার জন্য।চোখ নামিয়ে তাই লাজুকতার ভান করে কাছে আসলো সে।
নাবিল ওর এমন নাটক দেখে মনে মনে ভাবছে গাল লাল করে চড় মা*রবে একটা।
নাটক করছে ভাল কথা।নাটককে নাটক বানিয়ে নাটক করার মানে কি!!এরকম ওভার এক্টিংয়ের কোনো মানে আছে!!’

‘তুমি নতুন বউ হলে শাড়ী পরে থাকবা।টপস আর জিন্স পরে ঘুরছো কেন?’

‘ওগুলো দেয়নি তো’

‘কোনগুলো?’

‘ব্লাউজ -পেটিকোট’

সবার মুখে যেন তালা মেরে গেলো।লজ্জায় নাবিলের ইচ্ছে হচ্ছিল সোফা থেকে লাফিয়ে পড়ে ম*রে যেতে।
মিসেস সামিয়া মুখটা বাংলার পাঁচ করে লিখির মুখের দিকে চেয়ে রইলেন।মামা-মামি একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছিলেন।
অথচ যে কথাটা বললো সে দিব্যি বসে বসে সবার মুখের অবস্থা নোট করছে।

‘তবে শাড়ী দিয়েছে কে?’

‘মামি’

মিসেস সামিয়া আর কিছু বললেননা।নাবিলকে রুমে আসতে বলে চলে গেলেন।
তিনি চলে যাবার পর ড্রয়িং রুমে কঠোর নিরবতা পালিত হচ্ছে এখন।
লিখি ঝাল খাবারের খোঁজে উঠতে যেতেই নাবিল তার পথ আটকে বললো,’কি সমস্যা তোমার?রাত- বিরাতে ভূতে ধরেছে তোমায়?কিসব উল্টাপাল্টা কথা বলে মায়ের সামনে আমার ইজ্জত ধুয়ে দিচ্ছো!’

‘আমি মিথ্যা বলতে পারিনা, গলায় টক লাগে’

নাবিল বিড়বিড় করে বকা দিতে দিতে মায়ের কাছে চলে গেলো,লিখিকে সোজা কথা বললে সবসময় ত্যাড়া উত্তর আসবে।
ও চলে যাবার পর লিখি মামা মামির মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলো তারাও নাবিলের মতন লুক নিয়ে তাকিয়ে আছেন।লিখির কথা তাদের কাছেও উদ্ভট মনে হচ্ছে।
শেষে মামি তো বলেই দিলেন,’মা তোমার মাথা ঘোরে?আশেপাশে অশরীরী কাউকে দেখো?’

কথাটা এবার লিখির কাছে আজব মনে হলো।এরা ভূতপ্রেত এত বিশ্বাস করে জানলে ভূত শেষে ঐ নাবিল ছোকরাটাকে সকাল বিকাল জ্বালাতো।
—–
নাবিল মায়ের কাছে যাবার পরঃ-

মা নাহিদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন।
ফিরনি খেয়ে ওর হাল বেহাল।
পাশেই নাবিল খাটের সাথে লেগে দাঁড়িয়ে ছিল।মাও কিছু বলছেনা আর সেও আগ বাড়িয়ে কিছু বলতে পারছেনা।

রাত অনেক হয়েছে।ঘড়ির কাঁটা আওয়াজ করে জানিয়ে দিলো বরাবর ১টা বাজে।
মা এবার নাহিদের মাথা থেকে হাত সরালেন।কিন্তু নাবিলের দিকে তাকালেন না।গম্ভীর গলায় বললেন,’কাল মার্কেটে গিয়ে তৃননিকাকে শপিং করে দেবে।ওর যা যা প্রয়োজন ওসব কিনে দিবে।
এবার যাও,ঘুমাও।তোমার মামাকে বলো ঢং করে তার বউকে তোমার বউয়ের সাথে যেন আর ঘুমাতে না পাঠায়।যে যার বউকে নিয়ে ঘুমাও যাও।’

নাবিল ভীষণ লজ্জা পেলো কথাটাতে।কিন্তু মামাকে এটা বললে মামা আরও দিগুণ লজ্জা পাবে ভেবে এগিয়ে গেলো মজা দেখার জন্য।মামি লিখিকে মরিচ আর পেঁয়াজ কচলে ডিম ভেজে দিয়েছেন সে বসে বসে ওঠাই খাচ্ছে এখন।
নাবিল মামাকে এসে মায়ের বলা কথাটা বললো গোটা মসলা মিশিয়ে।যেমন ভেবেছিল তেমনটাই হলো।মামা লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গেছে।সামিয়া আপু মাঝে মাঝে এত লজ্জা দেয় যে দুঃখে নদীতে ঝাঁপ দিতে হয়।
—-
নাবিল গিয়ে লিখির হাত থেকে আধ খাওয়া ডিমটা কেড়ে নিয়ে চলে গেছে তাদের রুমের দিকে।
লিখি ওর পিছু যেতে যেতে বললো ‘আমার ডিম দিন বলছি’

নাবিল হঠাৎ থেমে বললো,’তোমার ডিম?’

‘আমার কেন হবে!মুরগীর ডিম।আমি খাচ্ছি তাই আমার’

‘আমার হাতে তাই আপাতত ডিমটা আমার,যাও পানি নিয়ে এসো।স্বামীর যত্ন করা শেখো, কথা পাতলা মেয়ে কোথাকার!’

‘কথা পাতলা মানে?’

‘মানে তুমি ভুল সময়ে ভুল কথা বলো,আবোলতাবোল বলো।এই জন্য তুমি কথা পাতলা মেয়ে’
——
রুমে এসে আলো জ্বালিয়ে ডিমটা মুখে পুরে আবারও পানি চাইলো সে।
লিখি শেষে বাধ্য হয়ে গিয়ে পানি এনে দিয়েছে।

আগের মতন বালিশ মাঝে দিয়ে দুজনে এবার শুলো।
দু মিনিট পর লিখি মাথা ঘুরিয়ে বললো,’আপনার মা চুপিচুপি ডেকে কি বললো আপনাকে?’

‘তোমার ব্লাউজ পেটিকোটের অভাব পূরণ করতে’

‘এটা কেমন কথা!’

‘তুমি যে ঘরভর্তি মানুষের সামনে কইছিলা,সেটা কেমন কথা ছিল?’

‘আমি বলতে পারবো কারণ আমি মেয়ে।মেয়েরা মেয়েদের জামা কাপড় নিয়ে কথা বলতেই পারে,এটা স্বাভাবিক। আমি তো আর আপনাদের ছেলেদের জামাকাপড় নিয়ে কিছু বলিনি’

‘ওহ সেটাও বলার ইচ্ছা আছে তোমার?’

‘জানেন আপনাকে বিয়ে করে আমার সব স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে?’

নাবিল কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো।ম্যাগাজিনে যেসব দ*জ্জা*ল বউয়ের উল্লেখ থাকে, লিখি তার মধ্যে একটা।
তার মনে হয় আমি তার অধিকার খর্ব করি,তার স্বাধীনতা কে*ড়ে নিই।
অথচ এর কিছুই আমি করিনি কিন্তু তার মনে হয় আমি এসব অনবরত করে চলেছি।ইউটিউবে সার্চ করে দেখতে হবে এমন বউদের কি করা উচিত’

‘এ্যাই আপনি দাঁতে দাঁত চেপে কি ভাবছেন?’

‘তোমায় বলবো কেন?’

‘না বললে মাঝরাতে গলা চে*পে ধ*রবো আপনার’

নাবিল মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে পড়েছে।লিখির সাথে হালকা রাগ হবার ভান।
লিখি অনেকক্ষণ ওর মুখের দিকে চেয়ে থেকে সেও শুয়ে পড়লো নাবিলের কোনো নড়চড় না দেখে
চলবে♥

#মনের_কোণে🥀
#আফনান_লারা
#পর্ব_২৩

সামিয়ার এখনও বিশ্বাস হয়না তার আদরের বড় ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে।নিজের চোখে দেখতে না পেলে এটা আসলে সব মায়েরই হুট করে বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে।তার ও হয়েছে তাই।
সারারাত দু চোখের পাতা এক করতে পারেননি।লিখি কেমন মেয়ে,জানা হলোনা।তার বাবা-মাকে দেখা হলোনা,বংশ দেখা হলোনা।একটা সময়ে নাবিলের বাবাকে কি জবাব দেবেন।তিনি জানলে কি তুলকালাম ঘটাবেন এসব ভেবে তার আর ঘুম হলোনা।
নাহিদ দুবার ওয়াশরুম থেকে ঘুরে এসেছে।তার ও ঘুম নেই।
মা যা করে ভালোর জন্য করে এটা সে সবসময় দেরিতে বোঝে।
পেট ব্যাথার অসহ্য যন্ত্রনা তাকে ঘুমাতে দিলোনা।
মায়ের কোলে ঢুকে চোখ বন্ধ করে শেষ রাতে এসে সে ঘুমোলো।
——
ভোরের আলো জানালার কাঁচ ছুঁতেই মিসেস সামিয়া উঠে গেলেন।এমনিতে জেগেই ছিলেন।বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসবেন এখন,মনটাকে তাজা করতে হবে।
নাহিদের মাথা কোল থেকে সরিয়ে বালিশে রেখে তিনি বিছানা ছাড়লেন।জুতা পরে রুম থেকে বের হয়ে দেখলেন মনি খোঁপা করতে করতে রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে।
‘বিয়ে হবার পর যেদিন থেকে সে আমাদের বাড়ির বউ,সেদিন থেকে আমাকে বড্ড শ্রদ্ধা করে।নাবিলকে তো সবার আগে ও কোলে নিয়েছিল।মেয়েটা অনেক সহজসরল। আমি বেড়াতে আসবো শুনলেই ব্যস্ত হয়ে যায়।মা থাকতে যেমন আদর -যত্ন করত এখন আরও বেশি করে।ভাই বলে দিতে হয়না।সে নিজ থেকে সব করে।মাঝে মাঝে ওর এই আনুগত্য ভীষণভাবে মন কাড়ে আমার’

মুখে হাসি ফুটিয়ে সামিয়া দরজা খুলে বাগানে পা রাখলো।মনে হলো বাগানে কেউ বোধহয় আছে।ঢেঁড়স গাছ বাতাসে যেভাবে নড়ে তার চেয়ে দ্রুত নড়ছে।যেন ওখানে কেউ আছে।
কৌতুহল নিয়ে তিনি ওদিকটায় গেলেন।গিয়ে দেখলেন তার পুত্রবধূ, টসটস করে কচি ঢেঁড়স ছিঁড়ছে গাছ থেকে আর মুখে পুরে গাপুসগুপুস করে খেয়ে যাচ্ছে।আশ্চর্য হয়ে তিনি কিছু মূহুর্ত ওমনি দাঁড়িয়ে থাকলেন।লিখি খাওয়া শেষে মাটি থেকে উঠে দাঁড়াতেই নাবিলের মাকে দেখে রোবটের মতন সোজা হয়ে গেলো।আমতা আমতা শুরু হয়ে গেছে তার।

‘খালি পেটে কিসব ছাইপাঁশ খাচ্ছিলে?’

‘কচি ঢেঁড়স অনেক মজা খেতে।আপনি খাবেন?’

‘আমি সকালে মধু মিশিয়ে লেবুর শরবত খাই।বানাতে পারো?’

‘আমি যখন আপনার মতন গুলুগুলু ছিলাম তখন টানা চল্লিশ দিন সকালবেলা খালিপেটে লেবুর শরবত মধু মিশিয়ে খেয়েছি।এখন আবার বডি ফিট তো সকালে কাঁচা সবজি’

লিখির কথা বলার স্টাইল সামিয়ার কাছে দারুণ লাগে।কিন্তু প্রকাশ করেননা।
ঠোঁটের কোণায় হাসি ফুটিয়ে তাই চলে গেলেন সামনের রাস্তাটার দিকে।কিছুসময় হাঁটবেন ঐ পথে।লিখি পেছন পেছন আর গেলোনা।
এই ভদ্রমহিলার দুটো ছেলেকে একটু জ্বালিয়ে আসতে হবে।ভোর বেলা হলো জ্বালানোর মোক্ষম সময়।
——
নাবিল বালিশের তলায় মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।
লিখি এক মগ পানি নিয়ে ওর মাথার কাছে আসলো ঢালবে বলে কিন্তু এমন অবস্থা দেখে কোথায় পানি ঢালবে তাই ভাবতে হচ্ছে।
পরে মগে হাত ভরে বললো,’এই ছেলে!!’

নাবিলের কোনো সাড়া নেই।লিখি বালিশটা টান দিয়ে সরিয়ে পানির ছিঁটা দিয়ে বললো,’এই ছেলে!!’

নাবিল বিরক্ত হয়ে মাথা তুললো এবার।লিখি দাঁত কেলিয়ে বললো,’আপনার আম্মুর লেবুর শরবতে কয় পিস লেবুর রস দিতে হয় জানেন?’

‘২’

‘আর মধু?’

‘১’

‘পানি?ও সরি।পানি তো এক গ্লাস।আচ্ছা থ্যাংকু’

লিখি মিটমিট করে হেসে পালানো ধরতেই নাবিল হাত ধরে বললো,’আমাকে জ্বালিয়ে কি লাভ হলো?’

‘পৈশাচিক আনন্দ। ‘

নাবিল ভাল ছেলের মতন উঠে বসলো।এরপর লিখির অন্য হাত থেকে পানির মগটা ছোঁ মেরে নিয়ে সব পানি ছুঁড়ে মা*রলো ওর গায়ে তারপর বললো,’হিসাব বরাবর ‘

লিখি ভিজে বেড়ালের মতন তাকিয়ে আছে নাবিলের দিকে।হুট করে নাবিল উঠে বসে এমন করবে সে কল্পনাও করেনি।
নাবিল আবার শুয়েও পড়েছে।
লিখি আরও কয় মিনিট রোবটের মতন থেকে এক চিৎকার দিয়ে বললো,’আমি এখন কি পরবো!এমন করলেন কেন!!’

‘মামির থেকে ধার নিয়ে পরো।আমাকে হুদাই ডিস্টার্ব করার পরিণতি এমনটাই হবে’

লিখি ভেজা শরীর নিয়ে সোজা রান্নাঘরে গিয়ে দাঁড়ালো।মামি ওর এমন হাল দেখে বললেন,’এমন হাল হলো কেমন করে?সকাল সকাল কার সাথে লাগতে গেছো?’

‘তোমাদের বংশের সব চাইতে ঘাড়ত্যাড়াটার সাথে’

‘এখন কি হবে!!কি পরবে? ‘

‘আমি যাই বাসা থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে আসি’

চাবি নিয়ে বাসা থেকে অন্য একটা টপস পরে লিখি বের হয়ে এসেছে দশ মিনিটের মধ্যেই।কিন্তু নাবিলকে এই সকাল সকাল না ভেজালে তার শান্তি আর হবেনা।

তাই এক মগ পানি নিয়ে আবারও ওর কাছে যাচ্ছিল ভেজাতে তখনই সামনে এসে পড়লেন মিসেস সামিয়া।
ওর হাতের মগের দিকে চেয়ে বললেন,’পানি নিয়ে কি করবে?’

‘ওনাকে খেতে দিব।’

‘খেতে দিবে নাকি মুখে মারবে?মনি বলছিল নাবিল নাকি তোমার গায়ে পানি ঢেলে দিয়েছে?’

‘আরে না আমি কি ওনার মতন করতে পারি??’

নাবিল ফ্রেশ হয়ে সবেমাত্র বেরিয়েছিল ওয়াশরুম থেকে।লিখির মিষ্টি মিষ্টি কথা শুনে একটু এগিয়ে এসে বললো,’মা ও মিথ্যে বলছে,এই মগ পানি এনেছে আমাকে ভেজাতে’

লিখি দাঁত কেলিয়ে পানির মগটা নাবিলের হাতে দিয়ে বললো,’আপনি না বললেন গ্যাস্ট্রিকের ঔষুধ খাবেন?তাই তো আনলাম’

সামিয়া আর কিছু বললেননা।নাবিল মাকে আরও নালিশ করতে চাইলো কিন্তু লিখির চোখ বড় করা দেখে আর কিছু বলেনি।

‘একদম পানি নাক দিয়ে ঢুকিয়ে দিব।আপনার সাহস তো কম না’

‘তোমার সাহস ও বলিহারি! এত সকাল সকাল আমায় পানির ছিঁটা কেন দিলে?কাঁচা ঘুম না ভাঙ্গালে এত কিছু হতোনা’

—-
‘নাহিদ? ওঠো,যাও তোমার ভাইয়ার কাছে।’

নাহিদ চোখ ডলতে ডলতে বললো,’কেন আম্মু?’

‘তোমার ভাইয়া ভাবীর সাথে ঝগড়া করছে।ঝগড়া থামিয়ে আসো যাও’

‘ভাবী?কিসের ভাবী?ভাবী মানে কি আম্মু?’

‘ভাইয়ের বউকে ভাবী বলে’

‘নাবিল ভাইয়ার বউ কে?’

‘লিখি’

‘ঐ দুষ্টু আপুটা?’

‘হ্যাঁ,যাও’

কথাটা শুনে নাহিদ হনহনিয়ে চললো নাবিল ভাইয়ার কাছে।মা কি বললেন সব মাথার উপর দিয়ে গেছে।
তাও যাচ্ছে ঝগড়া থামাতে।ঝগড়া থামাতে তার ভীষণ ভাল লাগে।

ওখানে গিয়ে রুমে ঢুকে দেখলো লিখি আর নাবিল বালিশ পেটাপেটি করছে, ওকে দেখে বালিশ পেছনে লুকিয়ে ফেললো দুজনে।

নাহিদ কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,’ভাবী!!’

ওর ছোট গলায় ভাবী ডাকটা এত কিউট শোনা গেলো যে লিখি আর ওর গাল না টিপে থাকতে পারেনি।ছুটে এসে ওর গাল দুটো টপে দিলো।নাহিদ গেলো আরও রেগে।
গাল ফুলিয়ে বললো,’তোমরা ঝগড়া কেন করতেছো?’

তখনই নাবিল লিখির মাথায় বালিশ মে*রে নাহিদের কাছে এসে বললো,’কই না তো!!কে বললো তোকে?চল মর্নিং ওয়াকে যাই’

লিখি বালিশের বাড়ি খেয়ে মাথা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল।নাবিল কিছু বলার বা করার সুযোগই দিলোনা,
সামিয়া রুমের সামনে দিয়ে গেছে বলে পাল্টা বালিশ দিয়ে মা*রতে পারেনি সে।
‘নাবিলকে ওর বয়স জিজ্ঞেস করতে হবে আজ।কেমন সেম এজের মতন ব্যবহার করছে,আমি একটা দিলে সে আরও দুইটা দেয়।
যেন পিঠাপিঠি সম্পর্ক।স্বামী হবে বয়সে বড়, ভদ্র,মা*র দিলে মা*র খাবে।জ্বালালে জ্বালানো সহ্য করবে।সে কেন ইটের বাড়ি খেয়ে পাটকেল মা*রতে আসবে??কেন!! কেন!! কেন!!এটা কি বিয়ে করলাম!কি জোরে বালিশ দিয়ে মা*রলো।আহহহ ব্যাথা করে মাথায়।
তার উপর কেমন স্বাদের শাশুড়ি আমার!!ছোটটাকে পাঠিয়েছে বড় টাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতে।’

নাবিল নাহিদকে নিয়ে তাদের বাসা দেখাতে গেছে।সঙ্গে গেছে মা ও।
এদিকে নাবিলের জন্য মামি নুডুলস বানিয়েছে রেখেছিলেন।লিখি সেটাতে গরম মসলা গুড়া পাঁচ চামচ দিয়ে এসেছে।
নাবিলের থেকে প্রতিশোধ তুলতে হবে।যে জোরে বালিশ দিয়ে মা*রলো, ঐ স্পীডে পানি খাবে নুডুলস এক চামচ মুখে দেওয়ার পর পরই।এমন কাশি উঠবে যে লিখিকে বালিশ দিয়ে মা*রার শখ আহ্লাদ সব মিটে যাবে’
——
৯টার দিকে নাবিলেরা সবাই এসেছে।নাস্তা করতে বসার পর নাবিল খেয়াল করলো আজ লিখি বড়ই আদর দেখায়,কেমন যেন অতিরিক্ত।
যার সাথে মা*রামা*রির সম্পর্ক সে যদি মিষ্টি কথা বলে তখন মনে সংশয় সৃষ্টি হয়।
নাবিলের ও তেমনটা ফিল হচ্ছিল কিন্তু বুঝতেছিলোনা লিখি এমন দরদ কেন দেখায়।
সন্দেহ দূর করার জন্য লিখির দেওয়া নুডুলসের বাটিটা ঘুরিয়ে নাবিল জানতে চাইলো নুডুলস কে বানিয়েছে।
মামি বললেন তিনি বানিয়েছেন।
ব্যস তার আর কোনো সন্দেহ রইলোনা।প্রথম চামচে অনেকটা নুডুলস নিয়ে মুখে পুরে ফেলেছে।
চাবানো হওয়ার পর আর ২য় বার চাবানো গেলোনা,গিলা তো দূরের কথা।চোখ বড় করে সর্বপ্রথম লিখির দিকে তাকালো সে।লিখি তখন ফিসফিস করে বললো,’বালিশের মা*র গরম মসলা দিয়ে’
চলবে♥