#বাড়ির_নাম_বৃষ্টিলেখা
#পর্ব-৩০
পলিন কয়েকদিন ধরে স্কুলে যাচ্ছে না। বাড়িতেই আছে। কাজ করছে, ঘুরছে, ফিরছে দিব্যি আছে। রেনু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। বৃষ্টির মা বলল,
“ঠিক হয়ে যাবে। এতো ভাবিস না। ”
বৃষ্টি অবশ্য নিশ্চিন্ত হলো না। পলিন উপর থেকে ভালো থাকার ভান করলেও ভেতরে যে ভালো নেই সেটা ও বুঝেছে। বৃষ্টি পলিন কে বলল,
“এই সিনেমা দেখতে যাবি?”
“এখন? এই দুপুরে?”
“হ্যাঁ। অনেক দিন ঘোরাঘুরি হয় না। চল ঘুরে আসি। ”
পলিনের যেতে ইচ্ছে করলো না। তবুও বলল,
“আচ্ছা। ”
বৃষ্টি বলল,
“একটা শাড়ি পরবি?”
“না না। শাড়ি পরলে আমাকে বাজে দেখতে লাগে। ”
“আরেহ পর না। ভালো লাগবে। ”
বৃষ্টি এক প্রকার জোর করেই পলিন কে শাড়ি পরালো। সেজেগুজে দুপুরবেলাই বেরোলো ঘোরার জন্য। রিকশা নিয়ে সিনেমা হলের দিকে যাওয়ার সময় পলিন বলল,
“বুবু ভালো লাগছে না। ”
“তাহলে যাবি না?”
“না। ”
“বাড়ি ফিরে যাবি?”
“উঁহু। ”
“তাহলে? ”
“চলো স্টেশনের দিকে যাই!”
“আচ্ছা। ”
দুজন মিলে স্টেশনের দিকে গেল। দুপুরবেলা প্ল্যাটফর্ম প্রায় খালিই ছিলো। ফাঁকা জায়গায় দুজন বসলো। পলিন বলল,
“আমার ট্রেন খুব পছন্দ অথচ দেখো আমাদের ট্রেনে করে যাবার মতো কোনো জায়গাই নেই। ”
বৃষ্টি হাসলো৷
পলিন আবারও বলল,
“দূরে কোথাও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে। ”
“পরীক্ষা শেষ হলে দুলু আপার ওখানে গিয়ে থেকে আসিস। ”
পলিন আবারও হাসলো। বৃষ্টির চিঠি পলিন পেয়েছে ঠিকই। কিন্তু এখনো কোনো জবাব দেয় নি। পলিন হঠাৎ করে বলল,
“বুবু একটা প্রশ্ন করি?”
“কর।”
“সাহ্নিক ভাইয়াকে তোমার কেমন লেগেছে?”
“ভালোই। ”
পলিন বৃষ্টির দিকে তাকালো। তারপর হেসে বলল,
“তোমার সঙ্গে ওর বিয়ে না হয়ে ভালোই হয়েছে। ”
“ভালো কী কারনে হলো? ”
“এমনিই। ”
“আচ্ছা পলিন একটা সত্যি কথা বল তো?”
“কী?”
“সাহ্নিক কেন এসেছে?”
“কেন আবার! আমাদের দেখতে। ”
“আমাদের বাড়ি থেকে সাহ্নিক কে তিনটা চিঠি পাঠানো হয়েছে। একটা তুই পাঠিয়েছিস। বাকী দুটো কে পাঠিয়েছে?”
“আমিই পাঠিয়েছি। ”
বৃষ্টি পলিনের দিকে তাকালো। পলিন হেসে বলল,
“চিঠি পাঠানোর খরচ টা অবশ্য আবির ভাইয়ের কাছ থেকে কৌশলে নিয়েছে। সে কিন্তু এসবের কিছু জানে না। সেই বেচারাকে আবার ভুল বুঝো না।”
বৃষ্টি ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“কী লিখেছিস চিঠিতে?”
“তেমন কিছু না। শুধু ওনাকে আসতে বারন করেছি। বলেছি আপনি কোনোভাবেই আসবেন না। তবুও এসে পড়লো। ”
“আর আবিরের কথা কি বলেছিস?”
“তেমন কিছু না। শুধু বলেছি তোমাকে খুব ভালোবাসে। ”
বৃষ্টি জিজ্ঞেস করলো,
“তুই আবির কে এতো পছন্দ করিস কেন?”
“কিছু মানুষ আছে যাদের পছন্দ করতে কারণ লাগে না। আবির ভাই সেই দলের না। তাকে পছন্দ করার অনেক কারণ আছে৷ প্রথম যখন আবির ভাই তোমাকে চিঠি দিতে শুরু করলো তখন আমাকে চিঠির জন্য দুই টাকা করে দিতো। একদিন পর পর একেকটা চিঠি আর দুই টাকার এক একটা নোট। দুই টাকার লোভে আমি অপেক্ষা করে থাকতাম। আবির ভাই এরপর ঢাকায় চলে গেল। আমার একটু মন খারাপ হলো। কিন্তু ঢাকা থেকে ফেরার পর আমাকে একসঙ্গে অনেকগুলো দুই টাকার নোট দিয়ে বলল নে পলিন তোর জন্য জমিয়ে রেখেছি।
এটা তো একটা ছোট ঘটনা। তবে সবচেয়ে বেশী যে কারনে পছন্দ করি সেটা হলো আমি সেই প্রথম থেকে দেখে এসেছি যে আবির ভাই তোমাকে কী পরিমাণ ভালোবাসে।
বৃষ্টি কোনো কথা বলল না। প্ল্যাটফর্মে লোক জড়ো হচ্ছে। ট্রেন আসার সময় হয়ে এসেছে বোধহয়। বৃষ্টি আবারও জিজ্ঞেস করলো,
“আর আতিফ কে কেমন লাগে?”
পলিন হাসলো। বলল,
“ওনার হয়েছে কী?”
“দুলু আপাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম। কিছু বলে নি। কিন্তু আমি জানি। তুই কী শুনতে চাস?”
“না। ”
“কেন?”
“শুনতে চাই না, কারণ আমিও জানি। ”
“কারণ জানার পর তোর বক্তব্য কী?”
“কিছুই না। ”
“আতিফের জন্য তোর কোনো অনুভূতি নেই?”
“আমি বোধহয় অনুভূতি ব্যাপার টাই বুঝিনা বুবু। ”
বৃষ্টি পলিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“খুব হেয়ালি করে কথা বলা শিখেছিস কিন্তু। ”
পলিন মৃদু হাসলো। বলল,
“চলো উঠি। ”
দুজন আরও কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে বাড়ি চলে এলো। আসার পথে আতিফের সঙ্গে ওদের দেখা হলো। আতিফ বৃষ্টিকে বলল,
“বুবু তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে। ”
বৃষ্টি পলিনের দিকে তাকিয়ে ইশারায় যেতে বলল। পলিন চলে যাবার পর বৃষ্টি বলল,
“কী বলবি রে?”
আতিফ কিছুসময় চুপ করে রইলো। বৃষ্টি নরম গলায় বলল,
“তোর কী হয়েছে রে?”
“পলিন তোমাকে কিছু বলেছে?”
“তোর ব্যাপারে কিছু বলেনি।”
আতিফ আবারও চুপ করে রইলো। বৃষ্টি বলল,
“কী হলো বল। ”
“না থাক। ”
“থাকবে কেন? বলতে এসেছিস বলে যা। ”
আতিফ মাথা নাড়িয়ে চলে গেল। বৃষ্টি তাকিয়ে রইলো।
চলবে…..