রঙ বেরঙের অনুভূতি পর্ব-১১

0
243

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(১১)

সুহানি নোহানের বাড়িতে ফিরে যায়। নোহা একটু অবাক হয়,সে ভেবেছিলো সুহানি ফিরবে না কিন্তু সুহানি ফিরেছে কিন্তু কেন? নোহান সুহানিকে ফিরতে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো, ওহ খুব ভালো করেই জানতো সুহানি ফিরবে। সবকিছু জানার জন্য সুহানি ঠিক ফিরবে। নোহানও চাই সুহানি সবটা খুঁজে বের করুক। দিয়ার আসল খু”নী কে সবার সামনে নিয়ে আসুক।

সুহানি এমনি এমনি ফিরে আসে নি।‌কিছু সন্দেহ কিছু তথ্য সুহানি কে আসতে বাধ্য করেছে এখানে।সুহানির মনে থাকা সন্দেহ আরো বেড়ে গেছে। সবকিছুর গভীরে ওকে যে যেতেই হবে।

সুহানি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বললোঃ দিয়া তোকে আমি কথা দিচ্ছি তোর খু’নীকে আমি নিজের হাতে শাস্তি দেবো।প্রমিস।‌

সুহানি নিজের মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অফিসে কোনো তথ্যই পেলো না।‌নোহানের রুমে ঢুকে এদিক ওদিক দেখছিলো কিন্তু তেমন কিছুই পেলো না।‌ সুহানি ঘর থেকে বের হয়ে যাবে এমন সময় একটা জিনিসে চোখ আটকে গেলো, কৌতুহল বশত সেটাকে তুলে নিয়ে দেখলো। কিছু একটার বিল, কিন্তু কিসের?

সুহানি বিলটাকে না ফেলে দিয়ে নিজের সাথে নিয়ে গেলো। সন্দেহ, কৌতুহল সবকিছুই ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কোনো কিছুই বুঝতে পারছে না। কাউকেই সন্দেহের বাইরে রাখতে পারছে না।‌এমনকি নোহান কেও না।

সুহানি বিলটাকে নিয়ে ভালো করে দেখেতে লাগলো কিন্তু কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।‌অনেক দোটানার মধ্যে গিয়ে বিলটাকে রেখে দিলো। সবকিছুই ধোঁয়াশা।

পরেরদিন,অফিসে..

সুহানি নিজের ডেস্কে মন খারাপ করে বসে আছে তখন শাওন এসে বললোঃ কি হয়েছে মন খারাপ কেন?

সুহানিঃ কিছু না।

শাওনঃ আরে বলো না,যদি কিছু হেল্প করতে পারি।

সুহানি শাওনের দিকে একপলক তাকিয়ে,কিছু একটা ভেবে বললোঃ একমিনিট।

তারপরে নিজের ব্যাগ থেকে বিলটা বের করে বললোঃ‌এটা কিসের বিল বলতে পারবে?

শাওন সুহানির হাত থেকে বিলটা নিয়ে ভালো করে দেখে বললোঃ এটা তুমি কোথায় পেলে।

সুহানিঃ বলবো পরে আগে বলো।

শাওনঃ আমি সিওর না আমি সত্যিটা যাচাই করে বলবো।

সুহানিঃ আচ্ছা।

শাওন চলে গেলো।‌সুহানির সন্দেহটা অনেক বেড়ে গেলো।

রাত্রিবেলা…

শাওনঃ হ্যালো সুহানি।

সুহানিঃ বলো।

শাওনঃ তুমি যেই বিলটা দিয়েছিলে সেটা তুমি কোথায় পেলে।

সুহানিঃ কেন কি হয়েছে বলো।

শাওনঃ বিল গুলো কোনো বেআইনি কাজের বিল।

সুহানি চমকে উঠলো। নোহানের ঘর থেকে বেআইনি বিলটা কি করে এলো।‌তারমানে কি নোহান কোনো বেআইনি কাজের সাথে যুক্ত। সুহানি কে সবকিছু জানতেই হবে।

২দিন পর..

সুহানি নোহানের বিরুদ্ধে সমস্ত কিছু খোঁজ খবর নিয়েছে। সবকিছু জানতে পেরে স্তব্দ হয়ে গেছে। নোহান বাড়ি ফিরতেই সুহানি ওর সামনছ দাঁড়িয়ে বললোঃ আপনার সাথে আমার কিছু কথা আছে?

নোহানঃ কি বলো।

সুহানিঃ আমার সন্দেহ হচ্ছে একটা বিষয়ে।

নোহানঃ কি

সুহানিঃ আমার মনে হচ্ছে আপনিই দিয়াকে খু’ন করেছেন।

নোহান রক্ত চক্ষু করে সুহানির দিকে তাকালো।

নোহানঃ পাগল হয়ে গেছো নাকি?

সুহানিঃ না আমি পাগল হয়নি আমি একদম ঠিক আছি, আপনি আপনার বেআইনি কাজ ঢাকার জন্য দিয়াকে মে”রে ফেলেছেন।

নোহানঃ বেআইনি কাজ মানে?

সুহানিঃ আমার সামনে বেশি নাটক করবেন না। আমি আপনার আসল চেহারা জানতে পেরে গেছি‌,আপনিই সবকিছু করেছেন, আপনিই দিয়ার খু’নী।

নোহান সুহানির কোনো কথায় বুঝে উঠতে পারছে না।

নোহানঃ কি বলছো এসব।

সুহানিঃ সবকিছুর প্রমান এখানেই আছে। ভালো করে দেখে নিয়েন। আমার ভাবতেই ঘৃনা হচ্ছে আপনি আমার স্বামী।

নোহান ফাইলটা নিয়ে দেখতে লাগলো। ফাইলটা তে যত সব বে’আ’ই’নি কাজের প্রমান আছে। নোহান কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। তার কোম্পানির পেছনে এরকম কিছু কাজ চলছে সেটা কখনোই ভাবতে পারেনি।

পরেরদিন…

সুহানি বাড়ি থেকে চলে গেছে নোহানকে অ’প’রা’ধী করে দিয়ে। বাড়ি ফিরে কাউকে কিছু না বলে ঘরের দরজা দিয়ে কান্নায় ভেংগে পড়লো।

ভাগ্য কোথায় কাকে নিয়ে আসে সেটা কেউ বুঝে উঠতে পারে না। সুহানির ভাগ্যটা এতটা খারাপ সেটা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনি। ভাগ্য কোন খেলায় মেতে উঠেছে কেউ জানে না।

২দিন পর..

আজকে সুহানি অফিসে এসেছে।

সুহানিঃ আসবো।

নোহান সুহানিকে দেখে অবাক হলো। সুহানি আজকে অফিসে আসবে সেটা বুঝে উঠতে পারিনি।

নোহানঃ হ্যা আসো।

সুহানিঃ আমি আর এই অফিসে কাজ করবো না।এই তার দরখাস্ত।

নোহানঃ এটা কিন্তু এগ্রিমেন্ট পেপারে লেখা ছিলো না।‌

সুহানিঃ আমাকে জোড় করে আর কিছু করাতে যাবেন না। তার ফলটা কিন্তু ভালো হবে না তাহলে।

নোহান সুহানির দিকে তাকালো। সুহানির চোখে মুখে রাগ দেখতে পাচ্ছে। নোহান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সুহানির করা অভিযোগ গুলো কে মিথ্যা বলে প্রমান করতে কিন্তু কিভাবে করবে?নোহানের এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে সুহানি নয় অন্য কেউ এসবের পেছনে আছে।

নোহানঃ সুহানি আমার কথাটা একবার শোনো।

সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আমি কিভাবে আপনার কথা শুনবো আপনি একবারও শুনেছিলেন আমার কথা। বিনা দোষে আমাকে শাস্তি দেবার জন্য বিয়ে নামক একটি পবিত্র সম্পর্কের সাথে আমাকে জড়ালেন। আর আপনার বিরুদ্ধে সমস্ত কিছুর প্রমান আছে আমার কাছে তাই আমি আপনার কথা শুনবো না।

নোহান নিজের ভুলটা বুঝতে পারলো।‌ সত্যি দিয়ার মুখের কথা শুনে সুহানিকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি।‌ সকল সত্যতা যাচাই না করে প্রতিশোধের নেশায় অনেক বড়ো একটা ভুল করে ফেলেছে।

সুহানি অফিস থেকে বেড়িয়ে কাউকে একজনকে দেখে চমকে উঠলো। মানুষটার পেছন দিতে থাকলো। হঠাৎ সামনে একটা গাড়ি চলে আসে, সুহানি রাস্তায় পড়ে যায়। হাতে একটু ব্যথা পাই।

গাড়ি থেকে নেমে আসলো একজন সুদর্শন পুরুষ।

ছেলেটাঃ সরি মিস।

কোনো পুরুষের কন্ঠ শুনে সুহানি মাথা তুলে তাকিয়ে চমকে উঠলো। উল্টো দিকের মানুষটাও চমকে উঠলো।

দুজনে একসাথে বলে উঠলঃ তুমি।

সুহানিঃ ধাক্কাটা আমাকেই দিতে মন চাইলো তোমার।

রাহাত আলতো করে হেসে বললোঃ কি করবো বলো‌ বুঝতে পারিনি।আর বুঝতে পারলে তোমাকে কখনোই ধাক্কা দিতাম না।

সুহানিঃ হুম বলো খবর কি।

রাহাতঃ আমার তো খুবই ভালো। তোমার

সুহানি মেকি হাসি দিয়ে বললঃ আমার ওহ ভালোই।

রাহাতঃ তো ম্যাডাম মুখটা এমন লাগছে কেন?

সুহানিঃ কিছু কিছু সময় সবকিছু কারন বলা ঠিক না।

রাহাতঃ আচ্ছা রাস্তায় দাঁড়িয়ে কথা বলবো নাকি চলো না কোথাও গিয়ে বসি।

সুহানিঃ এখন না।

রাহাতঃ প্লিজ।

সুহানিঃ ওকে।

রাহাত আর সুহানি কফিশপে গিয়ে বসলো।‌দুজনে দুজনের সাথে কথা বলছে ।

সুহানিঃ আঙ্কেল বললেন বিয়ে করবে। তার মেয়ে কে?

রাহাতঃ এখনি জানতে হবে। কয়েকদিন অপেক্ষা করো। একটা পার্টিতে তাকে প্রোপস করবো।

সুহানিঃ প্ল্যান টা তো ভালোই মনে হয় সে রাজি হয়ে যাবে।

রাহাতঃ সত্যি

সুহানিঃ হ্যা তুমি কোন দিক থেকে কম আছো।‌সব মেয়েই চাইবে তোমার মতো স্বামী পেতে।

রাহাতঃ তোমার কথায় ভরসা পাচ্ছি।

সুহানিঃ হুম।

কয়েকদিন পর…

নোহান আর সুহানির যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। নোহান নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছে। তবে কিছুই আর করার নেয় সুহানি ওকে ভুল বুঝে চলে গেছে।

আজকে রাহাতের জন্মদিনের পার্টি আছে।সুহানিকে যাবার জন্য বার বার রিকুয়েস্ট করেছে। সুহানি ও এসেছে।

সুহানিঃ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ রাহাত।

রাহাতঃ থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।

সুহানিঃ ওয়েলকাম।

রাহাতঃ থ্যাঙ্ক গড তুমি এসেছো।

সুহানিঃ কেন আমি কি স্পেশাল কেউ নাকি।

রাহাতঃ হয়তো।

সুহানিঃ মানে?

রাহাত একটা মুচকি হাসলো। সুহানি কিছুই বুঝতে পারলো না রাহাতের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

রাহাত ওদিকে চলে গেলো।সুহানি সবার সাথে কথা বলতে লাগলো।‌ সবটাই দূর থেকে লক্ষ্য করছে নোহান। রাহাত আর সুহানি কে একসাথে দেখে বুকের ভেতরে জ্বালা পুড়া করছে। সুহানির জন্য মনের ভিতরে একটা দূর্বলতা তৈরি হয়ে গেছে।

হুট করেই রাহাত একটা এমন কাজ করলো তাতে সুহানি চমকে উঠলো।

#চলবে…

বিঃ দ্রঃ-ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।