তুমিময় বসন্ত পর্ব-৩৫

0
491

#তুমিময়_বসন্ত
৩৫.
#writer_Mousumi_Akter

বিভৎস চেহারার মানুষ টা ক্রমশ আমার দিকে এগিয়ে আসছে। মানুষ টা কে চিনতে আমার একটুও ভুল হলো না।ভয়,কেঁপে উঠা হৃদপিন্ড নিয়ে জড়ানো কন্ঠে বললাম,

‘আ–আ আপনি?’

ছেলেটি ইমোশনাল কন্ঠে বললো,

‘আপনি কেনো?তুমি আমাকে আপনি করে কেনো বলছো মুগ্ধ।আমি, আমাকে চিনতেছো না তুমি।আমি অভি।’

‘চিৎকার করে বললাম,না চিনছি না।আমি কাউকে চিনতে চাইনা।বেরিয়ে যান এখান থেকে। ‘

‘তুমি আমাকে না চিনলে কে চিনবে মুগ্ধ।’

‘আপনি বেরয়ে যান বলছি।আপনি বেরিয়ে যান।আমি চিনিনা আপনাকে।’

‘কিসের ভয় মুগ্ধ।কেনো মুগ্ধ এসব।’

‘আপনার শরীরের র/ক্ত বন্ধ করুণ প্লিজ।আর এখান থেকে যান।’

‘এই র/ক্ত সামান্য কিছু। তুমি শরীরের বাইরের আঘাত দেখছো।ভেতরের আঘাত কেনো দেখছো না মুগ্ধ।আমি ভালো নেই।তোমার অভি ভালো নেই তোমায় ছাড়া।’

‘কোনো বেঈমান ঠক,প্রতারক কে আমি চিনতে চাইনা। আপনি এক্ষুনি বেরিয়ে যান এখান থেকে।’

‘অভি চিৎকার দিয়ে বললো,আমি?আমি বেঈমান।তুমি এই কথা বলছো।বেঈমান কথাটা কি আমার সাথে যায়।’

‘তাহলে কার সাথে যায়,বলুন কার সাথে যায়।আমার জাস্ট ঘেন্না লাগছে আপনার মুখ দেখতে।আর কি চান আপনি?এখানে কেনো এসেছেন।আমার জীবনের অনেক ক্ষতি আপনি করেছেন কিন্তু আর নয়।আমার বিবাহিত জীবনে আপনার প্রভাব আমি পড়তে দিবো না।’

অভি তাচ্ছিল্যর সুরে হেসে বললো,

‘বিবাহিত জীবন।কিসের বিবাহিত জীবন।যেখানে বিয়েটা তোমাকে জোর করে করানো হয়েছে।তোমার জীবন আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে কাটাতে পারোনা মুগ্ধ।’

‘জোর করে হলেও সেটা আমার সৌভাগ্য।’

অভি আস্তে আস্তে রুমের মাঝে প্রবেশ করলো।সোফায় ধাক্কা খেয়ে উহ শব্দ করে উঠলো যন্ত্রণায়।ফ্লোরে র/ক্তের ছাপ লেগে আছে।আমার কাছে এসে জোর পূর্বক আমার হাত খুব শক্ত ভাবে চেপে ধরে বললো,

‘দেখো মুগ্ধ আমার শরীরের আঘাত দেখো।তুমি ছাড়া ভালো নেই আমি।যন্ত্রনায় ছটফট করছে তোমার অভি।’

‘আপনার এ অবস্থা কেনো?’

‘আমার এ অবস্থা হবেনাতো কার এ অবস্থা হবে।দুইদিন তোমার জন্য অপেক্ষা করেছি। সেদিন আমাদের বিয়ের দিন ছিলো মুগ্ধ।অথচ তুমি এলে না।আমার পরিবর্তে এই আয়াস তোমাকে বিয়ে করে নিয়ে চলে আসলো।কি কম ছিলো আমার মাঝে মুগ্ধ।আমি কি কেয়ারিং ছিলাম না।তোমাকে কম ভালবাসতাম।নাকি তোমার হাসি মুখের কারণ হতে পারিনি।কোনটা মুগ্ধ কোনটা?আমাকে জাস্ট এটুকু বলো কিসের কমতি ছিলো আমার মাঝে যার জন্য আমার জীবন টা এইভাবে ছারখার করে দিলে তুমি।তুমি কি জানো তুমি ছেড়ে আসার পর প্রতিটা দিন রাত পা;গ/লের মতো খুজেছি তোমায়।কোনো ফ্রেন্ড সার্কাল কেউ বলতে পারেনা তোমার কথা।প্রতিটা দিন কষ্ট পেয়েছি আজ ও কষ্ট পাচ্ছি।ঘুমহীন ছিলো আমার প্রতিটা রাত।রোজ নিজেকে একটু করে আঘাত করতে করতে আজ আমার এই অবস্থা। অনেক কষ্টে তোমার শ্বশুরবাড়ির ঠিকানা যোগাড় করে সেখান থেকে কোনরকম আয়াসের ঠিকানা যোগাড় করে এ পর্যন্ত এসেছি।আর আজ আমি তোমায় খুজে পেয়েছি।চলো মুগ্ধ তুমি আমার সাথে।আমার পৃথিবীতে। তোমার বিয়ে হয়েছে তাতে কি।আমি এক্সেপ্ট করতে রাজি তোমায়।আমার কিছুই যায় আসেনা তোমার বিয়ে হয়েছে নাকি হয়নি।’

অভির হাত ঝাড়ি মেরে ফেলে দিয়ে বললাম,

‘গো টু হেল অভি।আমার বিয়ে নিয়ে আপনার কিছু যায় আসুক আর না আসুক আমার অনেক কিছুই যায় আসে।আমি আমার বিবাহিত জীবনে অনেক হ্যাপি আর অনেক সিরিয়াস।’

অভির স্পর্শ আমার এতটায় বিরক্তি লেগেছে যেনো কেউ আমায় স্পর্শ করেই অপবিত্র করে দিয়েছে।অভির স্পর্শ আজ প্রমান করেছে আমার শরীরে আয়াসের স্পর্শ ছাড়া অন্য কারো স্পর্শ কত বেশী নিষিদ্ধ। অভি আমার হাত স্পর্শ করার সাথে ঘেন্নায় ঝাড়ি মারলাম ওর হাত
আমি জাস্ট নিতে পারিনি ওর স্পর্শ। এই হাত কেনো একটা পশম ও আয়াস ছাড়া অন্য কেউ স্পর্শ করতে পারবেনা।

অভি যন্ত্রণাদায়ক কন্ঠে বললো,

‘আমাকে অসুখি রেখে আমার ভালবাসা কেড়ে নিয়ে আয়াস সুখ করবে আমি সেটা হতে দিবো না। আমার তোমাকে লাগবে মুগ্ধ।’

‘আমাকে লাগবে?আমাকে ঠকিয়ে শান্তি পান নি আপনি।’

‘আমি তোমাকে কিভাবে ঠকিয়েছি বলো।ঠকালে কি খুজতাম এভাবে।’

‘আপনি একজন বিবাহিত মানুষ হয়ে আমার সাথে ভালবাসার অভিনয় করেন নি।এক নিজের ওয়াইফ কে ঠকিয়েছেন দুই আমাকে ঠকিয়েছেন।না জানি আর কাকে কাকে ঠকিয়েছেন।ভীষণ কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন।কষ্টে ভেঙে পড়েছিলাম আমি।কিন্তু আমার স্বামি আমার জীবনের সব অতীত জেনে আমাকে ভালবাসা আর পূর্ণতা দিয়ে বাঁচিয়ে তুলেছে।’

অভি সোফায় লাথি মেরে বললো,

‘আমি বিবাহিত কোন কু***বাচ্চা বলেছে আমি বিবাহিত।কে বলেছে বলো আমাকে।’

‘ভাষা সংযত করে এখান থেকে বেরিয়ে যান প্লিজ।আপনার কালো ছায়া আমার জীবনে আর না পড়ুক।অনেক কষ্টের পরে সুখ খুজে পেয়েছি আমি।’

‘আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না।তুমি সেই মেয়ে।যে মেয়ে আমি ছাড়া পৃথিবীর কাউকে চিনতো না।আমি ভেবেছিলাম আমাকে দেখলে তোমার রিয়্যাকশন সম্পূর্ণ অন্যরকম হবে।কিন্তু এমন হবে আমার কল্পনাতেও ছিলোনা।মানুষ এতটা চেঞ্জ কিভাবে হতে পারে।মানুষ চেঞ্জ হয় তাই বলে এতটা চেঞ্জ।’

‘আমি সেই মেয়ে যে আর আজ আপনার মিথ্যা অভিনয়ে ভুলছে না।আমি অতীত নিয়ে আর মাথা ঘামাতে চাইনা। আপনি যান প্লিজ।’

‘আমি তোমার অতীত হয়ে গেলাম অথচ তুমি আমার বর্তমান হয়েই রয়ে গেলে
।’

আমি আপনার ব্যাপারে মুখ খুলতে চাইছিনা।আমি এখন বিবাহিত। আমার জীবন থেকে বিদায় হন প্লিজ।

‘আমাকে এত সহযে তুমি বিদায় করতে পারবে না।আমি আমার জীবনের থেকে তোমাকে বেশী ভালবেসেছি আর তুমি আমাকে ছেড়ে সংসার করছো?কোথায় আছো?কেমন আছো?একটা বার তো জানাতে পারতে।’

‘আমি জানায়নি আপনাকে।আমার বিয়ের পরে আপনাকে মেসেজ করেছিলাম।আর আপনি কি করেছিলেন। আপনি নিজে বলতে না পেরে আপনার ওয়াইফ কে দিয়ে বলিয়েছেন যে আপনি বিবাহিত।আমি সেসব ব্যাপারে আর কথা বলতে চাইছিনা।’

‘ ওয়াইফ!রিয়েলি।আমার ওয়াইফ কোথা থেকে আসলো।এক্ষুনি আমার বাড়িতে চলো।আমার এলাকায় শুনবে চলো আমি বিবাহিত কিনা জানতে পারবে তুমি।’

‘এখন আর কিছুই জানতে চাইনা আমি।আমার জানার কোনো আগ্রহ নেই।’

‘কিন্তু আমার আগ্রহ আছে।কে তোমাকে বলেছে আমি বিবাহিত।প্লিজ মুগ্ধ অন্তত এটুকু তো বলো।’

‘আপনার গ্রামিন নাম্বারে মেসেজ করে জানিয়েছিলাম।তারপর অন্য একটা নাম্বার থেকে কল আসে।আর আমাকে সে তুমিসহ তার সমস্ত ছবি দেখিয়েছে।আই জাস্ট হেট ইউ।’

‘আমার সে সিম টা আজ ৫ মাস নিঁখোজ।ফোন চুরি হওয়ার পর সিম টা আর পাওয়া যায়নি।এক ফ্রেন্ডের স্মার্ট কার্ড দিয়ে সিম কেনা ছিলো।ফ্রেন্ড টার সাথে আর দেখা হয়নি তাই সিম টাও আর তোলা হয়নি।কেউ তোমার সাথে চালাকি করেছে মুগ্ধ।আমার কাছ থেকে আলাদা করতে কেউ এটা করেছে।কসম আমি তোমাকে ভাল বাসি আমি বিবাহিত নই।’

‘আমি এই মুহুর্তে সেসব বিষয়ে আর কিছুই জানতে চাইছি না।আমাকে ক্ষমা করুণ।’

‘আমি কোথাও যাচ্ছিনা এখান থেকে।আমি তোমাকে নিয়ে যাবো এখান থেকে।’

‘আমার জাস্ট বিরক্ত লাগছে অভি।এখনি আয়াস চলে আসবে।যান আপনি দোহাই লাগে।আমি আয়াস কে ভীষণ ভালবাসি।’

‘আর আমাকে?’

‘আপনি আমার অতীত ছাড়া আর কিছুই না।’

‘মুগ্ধ আমি তোমার অতীত হতে চাইনা।আমি তোমার ছিলাম আর আছি।তুমি কি যাবে নাকি আয়াস আসলে আমি আয়াস কে বলে সব টা ক্লিয়ার করে নিয়ে যাবো।’

‘হোয়াট আপনি আয়াস এর জন্য অপেক্ষা করবেন।আমি আপনার সাথে পরে দেখা করবো যান এখান থেকে।’

‘পরে কখন।’

‘পরশু আয়াস বাসায় থাকবে না।এখন আপনি যান প্লিজ।’

অভি চলে গেলে ফ্লোর মুছে পরিষ্কার করে ফ্লোরে বসে রইলাম।আমি কিছুতেই অভির সাথে দেখা করতে চাইনা।কিছুতেই না।অভি বিবাহিত হোক আর না হোক তাতে আজ আর আমার কিছুই যায় আসেনা।আয়াস আর অভি মুখোমুখি হলে আয়াস যদি আমাকে ভুল বোঝে।নিজেকে ভীষণ অসহায় লাগছে।জীবনের এমন এক টা সময়ে এসে দাঁড়িয়েছি এর থেকে খারাপ সময় আর বিপদ বোধহয় কোনো মেয়ের জীবনে আর নেই।কিন্তু অভি ও যদি বিবাহিত না হয় তাহলে ওইসব ছবি কি মিথ্যা ছিলো।অভির বিরুদ্ধে কে মিথ্যা বললো।কে আমাকে অভির বিরুদ্ধে দাঁড় করালো।ওই মেয়েটা কে ছিলো।কে আছে এর পেছনে।আজ আমি আয়াস কে ভালবাসি তবুও অভির কাছে অপরাধী আমি।অভির কাছে ক্ষমা চেয়ে অভিকে বোঝাতে হবে আমার জীবন থেকে সরে যেতে।

চলবে..?