#তুমিময়_বসন্ত
৩৬.
#writer_Mousumi_Akter
ঘরের মধ্য গুটিসুটি মেরে বসে আছি আমি।রান্না ও করিনি কিছুই।দুঃচিন্তায় হাত পা বরফ হয়ে এসছে আমার।রান্না করার কথা খেয়াল ও নেই।আমি কিভাবে এই বিপদ থেকে বের হবো জানিনা।ফোন থেকে অহনার নাম্বার ডায়াল করে আরহী কে কল করলাম।দুবার রিং হবার পর আরহী হেলে দুলে এসে ফোন রিসিভ করে বললো,
‘হাই মুগ্ধ কি অবস্থা। ‘
খুব ঘাবড়ানো কন্ঠে চাপা উত্তেজনা নিয়ে বললাম,
‘প্লিজ হেল্প মি!আমাকে বাঁবা আরহী।’
আরহী আমার এমন কন্ঠ শুনে সিরিয়াস হলে বললো,
‘এই মুগ্ধ কি হয়েছে।এত ভয় পেয়ে আছিস কেনো?’
‘ও এসেছে। ‘
‘ও কে’?
‘অ”অভি।অভি এসছিলো আরহী।আমার বাসায় এসছিলো ও।কি বিভৎস চেহারা নিয়ে এসছিলো।’
আরহী কন্ঠে বেশ রাগ নিয়ে বললো,
‘জা*নো*য়া*র টা ওখানে চলে গেছিলো।কি বলেছে ও।’
‘আ”আমাকে এখান থেকে নিয়ে যেতে চাইছে।অভি কোনো কথা শুনতে চাইনা।সে চাইছে আমাকে তার সাথে করে নিয়ে যেতে।আমি অভিনামক ঝামেলায় আর জড়াতে চাইছি না।’
‘ডোন্ট ওরি!আমি আসছি রাতের বাসেই।অভির সাথে এবার ফাইনাল খেলা খেলবো মুগ্ধ।’
‘ আচ্ছা সব সময় সব অশান্তি কি আমার সাথেই হয়।যখন অভিকে চাইছিলাম তখন পাইনি।এখন অভিকে চাইছি না সে এসে হাজির।’
‘অভি থেকে তুই দূরে থাক মুগ্ধ।আমি আসচি জাস্ট রাত টুকু অপেক্ষা কর।’
অহনা ফোন কেটে দিলে আমি নিশ্চুপ কিশোরীর মতো বসে রইলাম।চোখ দিয়ে পানি ঝরছে ক্রামগত।আবার ও কলিং বেল চাপার শাব্দ হচ্ছে।যদি অভি হয় সেই ভয় আর দরজা খুলছি না।এরই মাঝে আয়াস আমার ফোন নাম্বারে কল করলো।ফোন রিসিভ করতেই বললো,
‘ঘুমিয়ে পড়েছো নাকি মুগ্ধতা।কতক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি।’
আয়াসের ফোন কেটে বেসিং এ গিয়ে চোখে মুখে পানি লাগিয়ে আবার কিছুটা স্বাভাবিক ভাবে দরজা খুললাম।দরজা খুলে আয়াসের দিক তাকালাম না।অন্য দিন দরজা খুলে আয়াসের সাথেই ঘরের ভেতরে প্রবেশ করি।কিন্তু আজ তার ব্যাতিক্রম ঘটলো।আয়াস দরজায় রেখে আমি রুমের ভেতরে প্রবেশ করলাম।ভেতরে এসে আয়াস আমার হাত টেনে ধরে বললো,
‘দাঁড়াও মুগ্ধতা।তাকাও তো আমার দিকে।’
আমি আয়াসের দিকে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে তাকানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু আমরা কেউ ই মনের বিরুদ্ধে যেতে পারিনা।ভেতরে যা আছে তা বাইরে প্রকাশিত হবেই।আমি যতই বাইরে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করিনা কেনো কিন্তু আমার চোখে মুখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে আমি ঠিক নেই।
‘আয়াস আমাকে বললো, কি হয়েছে রাগ করেছো?’
‘অন্যমনস্ক ভাবে উত্তর দিলাম,রাগ করবো কেনো?’
‘তুমি রাগ করেছো সিওর।না হলে আমার বউতো এমন মুখ করে থাকে না।আমার বউ এর মুখে সব সময় মিষ্টি হাসি লেগে থাকে।’
‘সত্যি রাগ করিনি।’
‘তখন বাইরে গিয়েছি বলে তোমার রাগ হয়েছে তাইনা।যাও তিন দিনের ছুটি নিলাম তোমার জন্য।’
‘আমি বৈদ্যুতিক গতিতে বলে উঠলাম না না ছুটি নিতে হবেনা।ছুটি নিতে হবে কেনো?’
‘কি ব্যাপার ছুটি নিয়েছি শুনেও খুশি হও নি।আমি ছুটি নিয়েছি শুনলে তো তুমি অনেক খুশি হও।’
‘না খুশি হয়েছি,হয়েছি।’
‘অনিচ্ছায় বললে খুশি হয়েছো।’
আয়াসের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখে চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।মুখটা কালো হয়ে গিয়েছে চিন্তায়। আয়াস কে জড়িয়ে ধরলাম শক্ত করে।কেনো জানি আমার খুব ভয় করছে।আয়াস কে নিজের সবটা দিয়ে জড়িয়ে ধরে বললাম,
‘আমাকে নিয়ে একটু বাইরে কোথাও ঘুরতে যাবেন।’
আয়াস বুঝতে পারলো আমার কিছু একটা হয়েছে।আমার মাথায় চুমু দিয়ে বললো,
‘অবশ্যই যাবো,অফিস থেকে এবার লং ছুটি নিয়ে আমরা সাজেক যাবো খুশি।’
‘আমি কাল ই যেতে চাই কোথাও ঘুরতে।’
‘রাগ করোনা প্লিজ।কাল অফিসের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ আছে বেবিডল।’
ভেবেছিলাম এখান থেকে কোথাও ঘুরতে গিয়ে অভির হাত থেকে বাঁচবো কিন্তু সেটাও হলোনা।খুব ভয় করছে অভি যদি আমাদের দুজনের এক সাথে তোলা কোনো ছবি দেখায় আয়াস কে তাহলে কি করবো আমি।আয়াসের খারাপ লাগবে।আমাকে ভুল ও বুঝতে পারে।আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।বারবার ভেতরের কষ্ট কাঁন্না হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে।
খানিক টা রাত হয়েছে আমি আজ আগেই সুয়ে পড়েছি কিন্তু ঘুম আসছে না।কিন্তু ঘুমের ভান ধরে পাতলা কাঁথা মুড়িয়ে সুয়ে আছি।আয়াস আমার গায়ে হাত দিয়ে ডাকছে,মুগ্ধতা রাত এগারোটা বাজে না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে নাকি।আমাকে ও কি খেতে দিবেনা।
আয়াসের অনেক্ষণ ডাকাডাকিতে বিছানায় উঠে বসলাম।আয়াসের দিকে তাকিয়ে আছি আমি।কি খেতে দিবো এখন তাকে।আজ দুপুরে তো রাতের জন্য রান্না করেছিলাম না।ভেবেছিলাম রাতে রান্না করবো কিন্তু করতে খেয়াল ই নেই।কি বলবো এখন আয়াস কে আমি।আয়াস আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু নাচালো আর বললো কি ভাবছো।
গায়ের কাঁথা ফেলে দিয়ে তডিঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে নেমে বললাম,
‘একটু অপেক্ষা করুণ প্লিজ।:
‘আয়াস আমার হাত টেনে ধরে বললো,কি হয়েছে বলবে তো।’
‘কিছুই হয়নি জাস্ট একটু ওয়েট করুণ।’
‘আয়াস নাছোড়বান্দা ছাড়লো না।বললো,চলো আমিও যাচ্ছি তোমার সাথে।’
‘এবার মাথা নিচু করে মিহি কন্ঠে বললাম,আমার আসলে রান্নার কথা খেয়াল ই নেই।ভেবেছিলাম দুপুরের টা আছে।কিন্তু দুপুরের কোনো অবশিষ্ট খাবার নেই।’
ভেবেছিলাম আয়াস অন্য হাজবেন্ডদের মতো ভীষন রেগে গিয়ে কিছু একটা বলবে।কিন্তু না আয়াস মৃদু হেসে বললো,
‘আচ্ছা কোনো ব্যাপার না।আমি তোমাকে রান্না করে খাওয়াবো।কি খাবে বলো?’
‘ছিঃছি আপনি রান্না করবেন কেনো?’
‘আমাকে এই আপনি বলা কি আর অফ হবেনা।’
‘হবে।’
‘কবে,কখন?’
‘হুট করেই আপনি থেকেই তুমি হয়ে যাবেন।’
‘এখন হলে কি কোনো প্রব্লেম আছে। ‘
‘না নেই,।’
‘এইবার বলো, কি খাবে তুমি।’
‘আলুভর্তা খাবো।’
‘আর কিছু খাবেনা? ‘
‘নাহ।’
‘তাই বললে কি হয়।ইলিশ মাছ বের করো ভাজি করি।’
‘আপনাকে করতে হবে না,আমি করছি।’
‘উফফ এই মেয়েটা এত পাকা কেনো।আমি করছি বললাম না।’
আয়াস থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে কিচেনে মাছ ভাজিতে বিজি আছে।প্রেসার কুকারে চাল দিয়েছে।আমি এদিক সেদিক উকি দিচ্ছি অভি আবার কোথাও লুকিয়ে থাকেনিতো।জানালা দিয়ে উঁকি দিতেই চমকে
উঠলাম।বিল্ডিং এর পাশের যে ফাঁকা জায়গা টা আছে অভি তার বন্ধুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এক দৃষ্টিতে আমাদের ফ্ল্যাটের দিকে তাকিয়ে।অভি কেনো যায় নি এখনো।দ্রুত জানালা লাগিয়ে দিলাম।এর ই মাঝে আমার ফোন বেজে উঠলো।আননাউন নাম্বার ভেষে উঠেছে ফোনের স্ক্রিণে।ফোন টা রিসিভ করতে ভয় করছে।ফোন স্পর্শ করতে হাত কাঁপছে।আয়াস কিচেন থেকে চিল্লায় বলছে মুগ্ধতা ফোন বাজছে তোমার।দ্রুত ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাস থেকে অভি কাঁন্না ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো,
‘আমি থাকতে পারছিনা মুগ্ধ।আমি পারছিনা তোমাকে ছেড়ে থাকতে।’
‘প্লিজ এভাবে ফোন করবেন না আমার সমস্যা হবে।’
‘আমার অপরাধ কি মুগ্ধ।বলো আমার অপরাধ টা কি।অন্তত একটা অপরাধ দেখিয়ে সেই অপরাধের শাস্তি দাও আমি মেনে নিবো।’
‘এখন এসব বলে কি লাভ অভি।আমাদের জীবন আলাদা দিকে চলে গিয়েছে অনেক আগেই।’
‘আমি আর তুমি তো আলাদা ইচ্ছা করে হইনি।তোমার কি একটা বার ও মনে হচ্ছেনা যে প্লানফুলি তোমাকে আর আমাকে আলাদা করেছে অপরাধি সে।তোমাকে আর আমাকে ইচ্ছাকৃত আলাদা করা হয়েছে মুগ্ধ।যে এই কাজ টা করেছে শাস্তিটা তার পাওয়া উচিত।’
‘দেখুন সত্যি সত্যি আমার এসব ভাবতে ইচ্ছা করছে না,জানতে ইচ্ছা করছে না প্লানফুলি নাকি আল্লাহ চেয়েছিলো তাই।কিন্তু এটাই হয়তো হওয়ার ছিলো।’
‘আয়াস কে পেয়ে তুমি এইভাবে আমাকে ভুলে গেলে।আয়াস কি তোমাকে আমার থেকেও বেশী ভালবাসে।’
‘হ্যাঁ বাসে,আয়াস আমাকে আপনার থেকে বেশী ভালবাসে।আর আমি আয়াসের ভালবাসার কম্পেয়ার করতে চাইনা।’
‘বাহ মুগ্ধ!আয়াস আর আরহী দুজনে প্লান করে এসব করেছে। যে ছলনার আশ্রয় নিয়ে তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিলো তুমি তার সাথে থাকতে রাজি অথচ যে তোমাকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে হয়ে গিয়েছে তার কাছে ফিরতে পারবে না।হুয়াই মুগ্ধ।তোমাকে ছাড়া আমি কিছুতেই বাঁচবো না।যদি আয়াসের মতো ঠকবাজের সাথে থাকতে পারো আমার সাথে কেনো নয়।’
‘দেখুন,যা হয়েছে সবটাই ভুল বোঝাবুঝি।এটাই হয়তো নিয়তির লিখন ছিলো।আমাদের পথ চলা ওইটুকুই ছিলো।’
‘তুমি কি চাও আমি ম★রে যায়।’
‘প্লিজ অভি নিজের আর ক্ষতি করবেন না।’
‘মুগ্ধ বিনাঅপরাধে আমি কষ্ট পাচ্ছি।এটা কি এক প্রকার আমাকে চরম ভাবে ঠকানো হলো না।’
অভি বেসামাল ভাবে কাঁদছে।অভি আবার ও বললো,
‘আমি কি করবো এখন তুমি বলে দাও।তোমার কি আমার জন্য একটুও খারাপ লাগছে না।’
‘এরই মাঝে আয়াস এসে বললো,কার সাথে ফোনে কথা বলছো মুগ্ধতা।’
দ্রুত ফোন কেটে দিয়ে ভ*য় ভ*য় চোখে আয়াসের দিকে তাকালাম।আয়াস আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বিছানায় রেখে বললো,
‘খেতে হবে এসো।মাছ টা বেশী কড়া ভাজি হয়ে গিয়েছে আমি বুঝতে পারিনি মোটেও।তোমার অসুবিধা হবেনাতো।’
‘মাথা নাড়িয়ে বললাম না।’
যাক আয়াস হয়তো কিছুই শোনেনি।নাকি শুনেও এড়িয়ে গেলো।
চলবে..?