প্রেমনগরে প্রশান্তির ভেলা পর্ব-২৩

0
633

#প্রেমনগরে প্রশান্তির ভেলা
#আফসানা_মিমি
| তেইশ তম পর্ব |

” আমাদের দেশে মুড়ি ভাজা খুবই জনপ্রিয় একটা খাবার। মুড়ি ভাজার জন্য মালা ইরি ধান নিতে হয়। ধান মাড়াই থেকে শুরু করে সেই ধান পানি দিয়ে সেদ্ধ করে রোদে শুকাতে হয়। যতক্ষণ পর্যন্ত দু’একটি ধান ফেটে চাল না বের হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সেদ্ধ করতে হয়। ধান সিদ্ধ হলে অন্য একটি পাত্রে পানিতে
ভিজিয়ে রাখতে হয়। পরদিন সকালে ধানগুলো আবার সেদ্ধ করতে হয়। এর পর ধানগুলো পানি থেকে ছেঁকে নিয়ে পরিস্কার একটি স্থানে বা চাতালে ছড়িয়ে দিতে হয়। কড়া রোদে দিলে এক দিনেই ধান শুকিয়ে যায়।
শুকনো ধানগুলো ঢেঁকিতে ভাঙ্গাতে হয় যেন
খোসাগুলো আলাদা হয়ে যায়। অথবা ধানভাঙ্গার
মেশিনেও চাল তৈরি করা যায়। এই ধাপের পর কুলায় ঝেড়ে চালগুলো খোসা (তুষ) থেকে
আলাদা করে ফেলতে হয়। মুড়ি ভাজতে ২টি চুলা দরকার হয়। একটি চুলায় চালগুলো অনবরত নাড়তে হয় যেন সেগুলো বাদামী
হয়ে যায়। অন্য চুলায় বালি গরম করতে হয়। চুলায়
দেওয়ার আগে চালগুলোতে লবণ ও সামান্য পানি
মাখিয়ে নিতে হয়। চাল উত্তপ্ত হয়ে যে সময় দুই একটি ফুটতে থাকবে তখন গরম বালির পাত্রে চালগুলো ঢেলে দিয়ে ক্রমাগতভাবে নাড়তে হবে। এভাবে নাড়তে
থাকলে সবগুলো চাল ফুটে যাবে। চাল ফোটা শেষ হলে চালুনী বা ছিদ্রযুক্ত পাত্রে ঢেলে নাড়া দিলে মুড়িগুলো বালি থেকে আলাদা হয়ে যাবে। ”

গ্রাম গঞ্জে লোডশেডিং নতুন কোন বিষয় না। প্রিয় নিবাস আপাতত রাতের কালো আঁধারে ঢাকা। বাহিরে আম বাগানের পাশেই শীতলপাটি বিছিয়ে গল্পের আসর জমিয়েছে আজাদ সাহেব। গল্পের কথাপ্রসঙ্গ হচ্ছে মুড়ি। গ্রামে এসেছেন আর মুড়ি মাখানো খাওয়া হবে না তা তো হয় না। মুড়ি কীভাবে তৈরি হয় তা এতক্ষণ বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন আজাদ সাহেব। রাইসার আকাশের সহিত ভাব বিনিময় করছে চোখে চোখে। মুড়ির ইতিহাস সম্পর্কে তাঁদের কোন জ্ঞান নেই আপাতত। আয়েশা আজাদ পাশে বসে পেঁয়াজ মরিচ কুঁচি কুঁচি করছেন মুড়ি মাখাবে বলে। সন্ধ্যায় নাদিফ আকাশকে দিয়ে চানাচুর আনিয়েছে। স্বামী তাঁর ভীষণ ভোজনরসিক মানুষ। গ্রামে এসেছেন আর মুড়ি মাখা খাবেন না, তা হয় না।
পেঁয়াজ মরিচ কুঁচি করে কেঁ’টে তার সাথে ধনিয়াপাতা বেশি করে, সাথে সরিষার তেল দিয়ে মাখানো মুড়ি ভর্তার স্বাধ’ই আলাদা।
ইতিমধ্যে আজাদ সাহেবের নাকে সরিষা তেলে মাখা মুড়ির ঘ্রাণ চলে এসেছে।

” বড়ো বোলে একসাথে মুড়ি খাওয়ার মজাই আলাদা। আজ না ছোট বেলার কথা মনে পড়ছে খুব। ছোট বেলায় বাবা-মা, দাদা-দাদী, চাচাতো ভাই বোনদের সাথে বসে জমিয়ে আড্ডা দিতাম আর মুড়ি খেতাম।”
আজাদ সাহেবের কথা শেষ হতেই আয়েশা আজাদ বলে উঠে,

” এখন ছেলে মেয়েদের সাথে বসে খান। ছেলেবেলার কথা ভুলে যাবেন।”

বড়ো বোল রাখা হয়েছে শীতলপাটির ঠিক মধ্যিখানে। মুড়ির বোলের চারপাশে গোল করে সকলে বসে আছে। রাইসা ফোন বের করে সকল কিছুর ক্যামেরায় ধারণ করে নিচ্ছে। এমন আনন্দ রুপ,রাইসা কখনও করেনি। পরিবার কি এমন হয়! রুপ ভাবছে।

” নাও নাও সবাই শুরু করো।”

আয়েশা আজাদ স্বামীর পাশে বসে সকলকে তাগিদ দিচ্ছেন মুড়ি খেতে। স্ত্রীর কথা শুনে আজাদ সাহেব চট করে বলে উঠলো,

” আরে কি করছো সবাই! আম তলায় খাবো আর ভূতদের অভুক্ত রাখবো? তা তো হবে না। আগে সবাই চোখ বন্ধ করে এক মুঠো মুড়ি ভূতের জন্য আলাদা প্লেটে রেখে নাও আর আমি যা বলবো সাথে সাথে সাথে বলে নাও। নয়তো পেট খারাপ করবে।”

আয়েশা আজাদ কটমট চোখে স্বামীর পানে তাকালেন। স্বামী যে তার মিথ্যা বলে সকলকে গোল খাওয়াচ্ছেন তা আয়েশা আজাদের জানা। আয়েশা আজাদ কিছু বলবেন তাঁর আগেই আজাদ সাহেব চোখ টিপে চুপ থাকতে বললেন। এদিকে ফাহিমা কৌতূহলী হয়ে শ্বশুরের উদ্দেশ্যে বলল,

” ঐ যে আমাদের বাসায় যেমন আপনারা সবাই কাদা ভূত সেজেছিলেন তেমন ভূত আসবে?”

” ঠিক সময়ে শ্বশুরের শরীরে কীভাবে চুলকোতে হয় তা তোর জানা আছে দেখি রে মা! যা বলেছি তা কর নয়তো কালো ভূত আসবে।”

শ্বশুরের কথা শেষ হতেই ফাহিমা চোখ বন্ধ করে রইলো। কিন্তু বড়ো বড়ো দামড়া পুলাপাইন কি আর ফাহিমার মতো বোকা! নাদিফ, রুপ,রাইসার আকাশ সকলেই ভ্রু যুগল কুঁচকে আজাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে রইলো। সকলের তাকানো দেখে আজাদ সাহেব দাঁত কেলিয়ে হাসছেন। মনে মনে আরো কিছু ছক কষে বললেন,

” বিশ্বাস না করো, কিন্তু বড়োদের কথা মানবে তো? তোমরা জানো না! বড়োদের কথা শুনতে, মানতে হয়!”

সকলে বুঝতে পারলো আজাদ সাহেব নাছোড় বান্দা সকলকে চোখ বন্ধ করিয়ে নিজের কাজ করিয়েই ছাড়বেন। অগত্যা সকলে চোখ বন্ধ করে নিলো। একে একে হাতের মুঠোয় মুড়ি নিয়ে আলাদা প্লেটে রাখলো। আজাদ সাহেব সকলের কান্ড দেখে জয়ী হাসি হাসলেন। প্লেটে রাখা মুড়ি শেফালিকে দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিলেন রাতে বসে খাবে বলে। এবার নিজেও চোখ বন্ধ করে রইলেন যেন উনিও সকলের মতো একই কাজ করেছেন আর ভুত এসে প্লেট নিয়ে চলে গিয়েছে।

এদিকে সকলের অগোচরে দুই প্রেমিক যুগল তাঁদের কাজ করে যাচ্ছে।
” এই রাইসু আমাকে একটু খাইয়ে দাও না গো!”

রাইসা এক প্রকার আকাশের সাথে ঘেঁষে বসে আছে ভূতের ভয়ে। আকাশের কথায় লাজুক হেসে চোখ বন্ধ করা অবস্থায় আকাশের মুখে মুড়ি তুলে দিলো। আকাশ মুচকি হেসে তা মুখে পুরে নিলো।

” এই অপরুপ! ভালোবাসি বলো না? না বললে কিন্তু আমি কঠিন কাজ করে বসবো।”

” বলবো না সাহেব! কি করবেন?”

রুপের পাশে নাদিফ বসেছে। সকলের অগোচরে ফিসফিসিয়ে রুপের কানে ভালোবাসার আবদার করছে। রুপ চোখ অবস্থায় হাসছে নাদিফের পাগলামিতে। রুপেরও ইচ্ছে করে নাদিফের পাগলামি থামিয়ে দিতে কিন্তু পরমুহূর্তে রুপ ভাবে, নাদিফের ছটফটে ভাবটা তো আর থাকবে না যা রুপ প্রতিমুহূর্তে উপভোগ করে। রুপ নিশ্চুপ। কিছুক্ষণ পর অনুভব করলো গালে কারোর ঠোঁটে ছোঁয়া। তাৎক্ষণিক রুপের চোখ খুলে গেলো। চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইলো নাদিফের পানে। নাদিফ চোখ বন্ধ করে হাসছে যেন সে কিছুই করেনি।
এদিকে নাদিফের কান্ড আরো একজন দেখে ফেলে। হাতে করে ছোট স্টিলের কৌটা নিয়ে এদিকেই আসছিলো। সকলের অগোচরে নাদিফের রুপকে চুমু দেয়ার দৃশ্য দেখে হাত থেকে কৌটা নিচে পড়ে যায় যার কারণে ঝনঝন শব্দের সৃষ্টি হয়। ঝনঝন শব্দে সকলে চোখ খুলে এবং শব্দের উৎসের দিকে দৃষ্টিপাত করে।
মায়া ছলছল চোখে নাদিফের পানে তাকিয়ে আছে। যেন চোখের পলক ফেললেই অশ্রুকণা গড়িয়ে পড়বে গাল বেয়ে। মায়ার সামনে আচার ভর্তি কৌটা নিচে পড়ে আছে। আয়েশা আজাদ বসা থেকে উঠে মায়ার নিকটে গেলেন। বিচলিত কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করলেন,

” কিরে মায়া! কি হয়েছে তোর? হাত থেকে কৌটা নিচে পড়লো কীভাবে?”

শাশুড়ি মা যেখানে বউমা সেখানে থাকবে না তা তো হয় না। আয়েশা আজাদের পিছু পিছু ফাহিমাও চলে আসে আসল কাহিনী দেখতে। আয়েশা আজাদের কথার প্রত্যুওরে ফাহিমা বলে,

” আমার মনে হয় মা, মায়া ভূত দেখেছে। ঐ যে বাবা যেই ভূতের কথা বলেছে সেই ভূত। আমরা সকলে ভূতের জন্য খাবার রেখেছি কিন্তু মায়া তো রাখে নি। তাইতো ভূত নিজের খাবার নিজেই জোগাড় করে নিলো। মায়ার কৌটা নিচে পড়ে রইলো আর ভূত সব আচার চেটেপুটে খেয়ে চলে গেলো।”

আয়েশা আজাদ রক্তিম চোখে ফাহিমার দিকে তাকালো। পিছনে এদিকে তাকিয়ে থাকা আজাদ সাহেবকে চোখ দিয়ে কিছুক্ষণ বকে নিলো মিথ্যা বলার জন্য।

” ঐসব কথা ছাড় মায়া। আয় মুড়ি ভর্তা খাবি।”

মায়া টলমল পায়ে আয়েশা আজাদের সাথে সামনে আগালো। কিন্তু বিপত্তি ঘটলো মায়া বসবে কোথায়। বোলের চারপাশে জোড়ায় জোড়ায় যে যার সঙ্গীর সাথে বসেছে। চোখের পানি মুছে মায়া বলে উঠলো,

” আমি নাদিফ ভাইয়ার পাশে বসবো।”

মায়ার এক কথায় পুরো পরিবেশ নীরব হয়ে গিয়েছে। এদিকে এতো কাহিনীর মধ্যে মুড়ি আর মুড়ি নেই মিইয়ে গিয়েছে এতক্ষণে।

” আমার পাশে এসে বোস মায়া। একপাশে তুই আর একপাশে বউ।”

আজাদ সাহেবের বড়ো ছেলে নাবিল এতক্ষণে মুখ খুললো। নাবিল বরাবরের মতোই চুপচাপ স্বভাবের। সকলের সামনে কথা কম বলে। নাদিফ মনে মনে বড়ো ভাইকে ধন্যবাদ জানালো। কিন্তু মায়ার কথা শুনে নাদিফ ভ্রু যুগল কুঁচকে নিলো।

” আমি তো তোমাদের চাচাতো বোন। আমি ছোট মানুষ। যখন ইচ্ছে ভাইদের কাছে আসতে পারবো, পাশে বসতে পারবো। আমি নাদিফ ভাইয়ার পাশেই বসবো। ঐ বড়ো আপুকে বলো সরে গিয়ে জায়গা করে দিতে।”

সকলে হতবাক মায়ার কথা শুনে। আজিদ সাহেব তো মুখে হাত দিয়ে রেখেছে। ফাহিমা ভাবছে এবার কি হবে। নাদিফ কি এই মেয়েকে তুলে আম গাছের উপর উঠিয়ে আবার নিচে ফেলবে? নাকি পাশে বসাবে।

” তুমি এখানে এসে বসো, আমি সরে বসছি।”

রুপের উওরে যেন সকলে আরো হতবাক। ফাহিমা এবার রুপের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে, “মেয়েটার কপাল পুড়লো রে! নিজে ডেকে সতিনকে ঘরে আনলো যে।”

রুপ ঠিকই সরে বসলো আর মায়া রুপের জায়গায় এসে বসলো। নাদিফের চেহারা দেখার মতো হয়ে আছে এখন। চুপচাপ বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে।

” খাওয়া শুরু করো সকলে। ”

আজাদ সাহেবের কথা শুনে সকলে মুড়ি খাচ্ছে। এক মুঠো দুই মুঠো করে আজাদ সাহেব খাচ্ছেন আর ছেলের ভাবগতি বুঝতে চেষ্টা করছেন।
মুড়ি মাখার আগ মুহূর্ত যেমন উৎফুল্লতা দেখা দিয়েছিলো সকলের মধ্যে এখন আর সেটা নেই। সকলে নীরব হয়ে খাচ্ছে। সকলের মাঝে মায়া নাদিফের উদ্দেশ্যে আহ্লাদে বলে উঠলো,

” আমাকে এক মুঠো মুড়ি খাইয়ে দিবে নাদিফ?”

সকলে হতভম্ব। পর পর দুই দুইটা থাপ্পড়ের শব্দ শোনা গেলো উপস্থিত সভায়। আজাদ সাহেব খাচ্ছেন মনমতো। নাদিফ যে এমন কিছু করবেন সেটা যেন তিনি আগে থেকেই অবগত ছিলেন। রাগে থরথর করে কাঁপছে নাদিফ। রুপের দিকে রক্তিম চোখে তাকিয়ে আছে। রুপ নাদিফের রাগান্বিত চেহারা দেখে শুকনো ঢুক গিলে।

” আমার জ্ঞান লোপ পাইনি এখনও। এতো বড়ো মেয়ে হয়েও নিজ হাতে খেতে পারো না? ভাইয়ের হাতে মুড়ি খাওয়া হয়েছে এবার? খবরদার মায়া! তোর এমন মায়া জা’দু আমার উপর কাজ করবে না। ভাইয়া ডেকেছিস ভাই’ই ভাববি, সাইয়া ভাবতে যাবি না।”

নাদিফ মায়ার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে হনহন করে উঠে চলে গেলো। এদিকে মায়া ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আয়েশা আজাদ মায়াকে সামলে নিচ্ছে।
—————–

মধ্যরজনী। কিন্তু প্রিয় আবাসে কারোর চোখে ঘুম নেই। আয়েশা আজাদ, আজাদ সাহেব অনেক আগেই ঘরে চলে গিয়েছেন। গরমের এই সিজনে রাতে ঝিঝি পোকা বেশি থাকে। বাহিরে এখন বাচ্চারা বসে আছে।
মায়ার কান্না থেমেছে। ফাহিমা বরের সাথে চন্দ্র বিলাস করছে। রাইসা আকাশের পিঠে হেলান দিয়ে ঘুমুচ্ছে। রুপ একপাশে বসে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা গণনার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে। মায়ার মনে কিছু একটা চলছে। প্রায় আধঘন্টা কিছু ভেবে ফাহিমার উদ্দেশ্যে বলল,

” ভাবি ও ভাবি, শুনো না! নাদিফ ভাইয়াকে ডেকে আনো না। আমি আর দুষ্টুমি করবো না। এখানে একা একা ভালো লাগছে না। চলো গানের কলি খেলি।”

গানের কলির কথা শুনে ফাহিমা খুশিতে নাচতে নাচতে চলে গেলো নাদিফকে নিয়ে আসতে।
প্রায় পাঁচ মিনিট পর ফাহিমা অসাধ্য সাধন করে নাদিফকে নিয়ে হাজির হয়। নাদিফ এসে কোন কথা না বলে রুপের পাশে বসে যায়। মায়া এতে কোন কথা বলার সাহস পায়নি। মায়া এবার নিজেই প্রথমে শুরু করে,

” আমি প্রথম গান গাইবো এরপর বড়ো আপু। যার গান গাওয়া সুন্দর হবে সে সকলকে যেই গান গাইতে বলবে সেই গান সবার গাইতে হবে।”

মায়ার কথা শুনে সকরে ভ্রু যুগল কুঁচকে মায়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। আকাশ ঠাট্টা স্বরে বলে উঠলো,

” কি গো পিচ্ছি! তুমি গানের কলি খেলতে এসেছো নাকি গানের প্রতিযোগিতা করতে এসেছো?”

আকাশের কথায় মায়া ভরকে যায়। মায়া ইনিয়ে বিনিয়ে বলে,

” এটা নতুন খেলা। আমাদের গ্রামে খেলে। ”

মায়ার কথা শেষ হতেই নাদিফ বলে উঠে,

” ঠিকাছে এভাবেই খেলা হোক। মায়া তুই প্রথমে শুরু কর।”

নাদিফকে স্বাভাবিক দেখে মায়ার মনে ঘণ্টা বাজতে শুরু করলো। গ্রামে মায়ার সহপাঠীরা সবাই বলে মায়ার কন্ঠস্বর খুবই সুন্দর। মায়ার সূরে যেন সকল কিছু দোলে। মায়া গলা ঝাড়া দিয়ে গাইতে শুরু করলো,

দিল লাগা লিয়া,
মেইনে তুমছে পেয়ার কারকে।
তুমছে পেয়ার কারকে!
তুমছে পেয়ার কারকে!
দিল লাগা লিয়া
মেইনে তুমছে পেয়ার কারকে
তুমছে পেয়ার কারকে
তুমছে পেয়ার কারকে
দিল চুরা লিয়া,
মেইনে ইকারার কারকে
ইকরার কারকে
ইকরার কারকে
দিল লাগা লিয়া
মেইনে তুমছে পেয়ার কারকে
তুমছে পেয়ার কারকে
তুমছে পেয়ার কারকে,,,,,

মায়ার গানে আকাশ কানে হাত দিয়ে রেখেছে। নাবিল ফোনে কাজ করছিলো তা বাদ দিয়ে মায়ার মুখশ্রীর দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। রুপ এবং নিদিফ অনুভূতিহীন। নাদিফ অপেক্ষা করছে দ্বিতীয়বারের মতো রুপের কন্ঠস্বরে গান শোনার। নাদিফের অন্য কোথাও মনোযোগ দেয়ার সময় নেই। আকাশ কান থেকে হাত সরিয়ে বলে উঠলো,

” মাশাআল্লাহ, মাশাআল্লাহ খুব সুন্দর গান গাইতে পারো তো তুমি! তা কোথায় শিখেছো এমন গান? আমার কানে তো এখন শুধু তোমার গান’ই বাজছে।”

মায়া লজ্জা পাচ্ছে ভীষণ। মায়ার গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে আসছে। মায়া লাজুক ভঙ্গিতে প্রত্যুওরে বলে,

” ধন্যবাদ ভাইয়া। এই কথা সবাই বলে। আমার কন্ঠ নাকি অনেক সুমধুর।”

” সুমধুর নাকি অসুমধুর! তা বুঝেছি বাপু! এবার রুপের কন্ঠে গান শুনবো।”

রুপ ভয় পাচ্ছে। নাদিফের দিকে তাকাতেই নাদিফ ভরসা দেয়। সকলের অগোচরে রুপের হাতজোড়া নিজের হাতের মুঠোয় আবদ্ধ করে নেয়। রুপ যেন ভরসার হাত পেয়ে গেলো। নাদিফের পানে তাকিয়ে গান ধরলো,

তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে
আমায় দিতে পারো
আমার ভালো লাগা ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো!
তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবো না আর কারো!
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে
হচ্ছে জড়সড়!
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে
আমায় দিতে পারো
আমার ভালো লাগা ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো!

চলবে……