#ভালোবাসার স্নিগ্ধতায় তুমি
#পর্বঃ২৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
* হঠাৎ করে অধরার সামনে চলে আসে ইরা। ইরাকে দেখতে পেয়ে অধরা একটু চমকে উঠে। ইরা হঠাৎ এখানে কেনো? ইরা অধরাকে দেখতে পেতেই অধরার দিকে দৌড়ে এগিয়ে আসে। অধরা একটু আমতো আমতো করতে লাগলো। ইরা অধরাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। হাস্যজ্বল মুখে ইরা অধরাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— আপু আমাকে ক্ষমা করে দে। ঐ দিন তোকে আমি রাগের মাথায় অনেক কথা বলে ফেলেছি। দয়া করে ক্ষমা করে দে আমায়। তুমি তোর ছোট বোনকে ক্ষমা করবি না? বল!
অধরা অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও হাসার চেষ্টা করলো। অধরা পুরনো কথা গুলো কোনো মতেই ভূলতে পারেনি। কি করে ভুলবে? ইরার কাজ গুলো এতোটাই নিচ যে অধরার মনে ইরার জন্য বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই। যা আছে তা হলো ঘৃণা। অধরা ইরার থেকে নিজেকে আলতো করে ছাড়িয়ে নিলো। মৃদু হেসে অধরা ইরাকে উদ্দেশ্য বলল
— আরে নারে। আমি অসব মনে রাখিনি। তো কেমন আছিস?
— এই তো আপু ভালো আছে। একটা প্রশ্ন, তুই হাসপাতালে কি করছিস? সব ঠিক আছে? তোর কোনো সমস্যা হয়নি তো?
— না। ঐ এমনি মেডিক্যাল চেকাপের জন্য এসেছি।
— ওহহহ।
— আচ্ছা আসছি আমি। অয়ন আবার বাড়ি ফিরে এসে আমাকে না দেখতে পেলে চিন্তা করবে।
— ঠিক আছে। আপু অয়নকে নিয়ে বাড়ি আসিস। বাবা মা অনেকদিন হয়েছে তোকে দেখে না।
— আচ্ছা আসবো। আসি রে এখন।
* অধরা কথাটা শেষ করেই রিক্সায় উঠে বসে পরে। বাড়ির মেতে হবে। ইরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধরার চলে যাওয়ার দিকে। অধরার ব্যবহার দেখে ইরা বেশ বুঝতে পাচ্ছে অধরার তাকে ক্ষমা করেনি। ইরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসপাতালের ভিতরে চলে যায়।
— আসতে পারি স্যার?
মিসেস সাবিনার মায়া ভরা কন্ঠস্বর ভেসে আসতেই অয়নের ঘোর কাটে। সাবিনা হলো অয়নের অফিসে চাকরি করে। সাবিনা ও তার স্বামী মিস্টার রাতুল এক সাথেই এই অফিসে জয়েন করেন। মিসেস সাবিনা অয়নের কেবিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে। অয়ন সাবিনাকে দেখতে পেয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে তাকে ভিতরে আসতে সম্মতি জানায়। সাবিনা ভিতরে এসে অয়নের দিকে কিছু ফাইল এগিয়ে দিলো। অয়ন ফাইল গুলো দেখতে পেতেই ফ্যাকাশে হয়ে থাকা মুখে হাসির ঝিলিক চলে আসে। অয়ন সাবিনাকে উদ্দেশ্য করে বেশ আনন্দের সুরে বলে উঠলো
— সাবিনা আপনি এটা কি করেছেন?
— স্যার তেমন কিছু না আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি শুধু।
— জানেন আজ আমি খুব অপমানিত হয়েছি। একটা হাঁটুর বয়সি মেয়ে আমাকে অপমান করেছে।
— স্যার আমি সব জানি। রোজ আপনাকে সবার সামনে কটাক্ষ করেছে। রোজের কথা ভাববেন না। সফলতার পাশা পাশি ব্যর্থতার গল্প মানুষকে সফলতার সাধ বোঝায়। সো রোজকে তার অপমানের যোগ্য জবাবটাও দেয়া উত্তম হবে।
— জ্বি ঠিক বলেছেন। আমিও তাই করবো।
— জ্বি স্যার।
অয়ন ফাইল গুলো ভালো করে চেক করে নিলো। আজ আরেকটা টেন্ডার পাওয়ার কথা ছিলো অয়নের। অয়ন সেই মিটিং এ নিজে না গিয়ে তার সব থেকে বিশ্বস্ত দুজন কর্মীকে পাঠায়। সাবিনা ও রাতুল মিলে বেশ সুন্দর প্রেজেন্টেশন করে অয়নের জন্য সুখবর নিয়ে আসে। অয়ন বেশ খুশি।
* অফিস শেষ করে অয়ন ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে। হঠাৎ করে অয়নের ফোনে একটা ম্যাসেজ চলে আসে। ম্যাসেজটা অপেন করতেই অয়ন দেখতে পায় ইরার ফোন থেকে ম্যাসেজটা এসেছে। অয়ন একটু অবাক হয়ে যায় ম্যাসেজটা দেখে। “এখন তো ইরফানের সাথে ইরার সব ঠিক হয়ে গেছে। তবে আজ আবার ইরা কেনো আমাকে মিট করতে বলছে”? অয়নের মাথায় কিছু ঢুকলো না। অয়ন অফিস থেকে বেরিয়ে যায়।
* কিচেনে বেশ আগ্রহ নিয়ে অধরা অয়নের জন্য রান্না করছে। আজ অয়নের পছন্দ করা খাবার গুলো রান্না করা হচ্ছে। অধরা রান্না করছে আর আপন মনে বলছে “অয়ন তোমাকে অনেক অবহেলা করেছি। আর পারছি না করতে। আমি বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছি। এখন থেকে আর অবহেলা করবো না। পাগলের মতো ভালোবাসা দিবো। বেশি দিন তো সময় পাবো না। তাই এই শেষ বেলায় আর অবহেলিত হতে চাই না। তোমাকে আঘাত করে কয়েক গুণ বেশি আঘাত আমি নিজে পাই”। আপন মনে অধরা অয়নের কথা ভাবতে লাগলো। অধরার অয়নের কথা ভাবতেই একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়। অধরার ঘোর কাটে হাতে গরম তেলের আঁচে। অধরা উফফফফ! করে আঁচ কমিয়ে নিজের ভালোবাসা দিয়ে প্রিয়জনের জন্য রান্না করতে লাগলো।
— হুম ইরা বলো হঠাৎ করে আমাকে এখানে কেনো ডেকেছো?
প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে ইরার দিকে তাকিয়ে অয়ন।ইরা অয়নকে মিট করার জন্য একটা কপি শপে ডাকে। অয়নের প্রশ্ন সূচক দৃষ্টি ইরা বুঝতে পারলো। ইরা শান্ত গলায় অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— কেনো ডেকেছি বলতে? তুমি কি ব্যস্ত? বিরক্ত হচ্ছ কোনো ভাবে?
অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে বলল
— আরে না। তেমন নয়। আসলে অধরা তো একা। আর এই সময় আমাকে ওর খুব প্রয়োজন। তাই আরকি।
ইরা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। অয়নের দিকে তাকিয়ে একটু মলিন কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল ইরা
— একদম ঠিক বলেছো এই সময় তোমাকে ওর খুব প্রয়োজন। এই সময় আর হতো আসবে না। এই সময় একটা নারীর কাছে খুব স্পেশাল হয়। একজন নারী এই সময়টা তার পরিবারের থেকেও বেশি তার স্বামীকে চায়।
— হুম।
ইরার সাথে কিছু কথা বলে অয়ন দ্রুত কপি শপ থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। ইরাও নিজের বাড়ি ফিরে চলে যায়।
* অধরা নিজের রুমে বসে অয়নের জন্য অপেক্ষা করছে। অয়ন আসলে আজ একদম অয়নকে চমকে দিবো। আমার হাতের রান্না অয়নের কাছে বরাবরই প্রশংসিত। তবে বিশেষ দিনে বিশেষ খাবার গুলো অয়ন বেশ আনন্দের সাথে গ্রহণ করে। আজ অয়ন বাড়ি ফিরলে বলবো আমাকে খাইয়ে দিতে। অনেক দিন আমাকে খাইয়ে দেয় না। আজ দিতেই হবে।
অধরা পাগলের মতো একা একা কথা গুলো বলছে। অয়ন ছাড়া তো আর কেউ নেই যে অধরার পাগলামো গুলো সহ্য করবে। অধরা অয়নের কথা ভাবতেই অধরার কানে ভেসে এলো কেউ একজন তাদের রুমের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসছে। অধরা একটু ভালো করে শুনতে চেষ্টা করলো। হুম হয়তো অয়ন আসছে। অধরা বিছানায় উঠে বসতেই দরজার ওপার থেকে অয়ন রুমের মধ্যে ঢুকলো। অধরা অয়নের চোখের দিকে তাকাতেই বেশ অবাক হয়ে যায়। অয়নের চোখ জোড়া দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে আসবে এখনি। অয়নের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে আছে। অয়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধরার দিকে। অধরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই অয়ন কাঁধের উপর থেকে ব্যাগটা ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিল। অধরার দিকে এগিয়ে এসে অধরার দিকে রাগান্বিত কন্ঠে বলল
— হাসপাতালে কেনো গিয়েছো? আমাকে বলো নাই কেনো যে তুমি হাসপাতালে গেছো?
অধরা একটু অপ্রস্তুত হয়ে অয়নকে বলল
— না মানে এমনি গিয়েছিলাম আমি।
— ঐ রিহানের সাথে দেখা করতে? কি সম্পর্ক রিহানের সাথে? বাচ্চা নষ্ট করতে গিয়েছিলেন বুঝি? উত্তর দাও।
অয়নের কথা শুনে অধরা নির্বাক হয়ে যায়। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা অধরা। অধরাকে নিশ্চুপ দেখে অয়ন আবারও চেঁচিয়ে বলে উঠলো
— চুপ কেনো? আমার উত্তর চাই। তাও সত্যি সত্যি উত্তর।
— হুম তুমি যা ভাবছো তাই।
অধরার কান্না ভেজা কন্ঠের উত্তরটা অয়নের মনকে শান্ত করতে পারেনি। অয়ন অধরার হাত শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসে তাকে। অধরার দিকে রেগে ফিসফিস করে বলছে অয়ন
— আর কত লুকাবে আমার থেকে? আমি সবটা জেনে গেছি।
অয়নের কথাটা অধরার মনের মধ্যে কম্পন সৃষ্টি করলো। অয়ন অধরাকে অবাক করে দিয়ে অধরার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে তা
যায়…………….
#চলবে……………….