রাগে অনুরাগে পর্ব-১১

0
474

#রাগে_অনুরাগে💚✨

#পর্ব_১১

#লেখক_ঈশান_আহমেদ

মিহির আর আরাধ্যার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো।এক সপ্তাহ পরে বিয়ে।মিহিররা তাদের বাড়িতে চলে গেলো।

আরাধ্যা ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে রুশার পাশে বসলো।

“আধু ঝামেলা কি মিটে গেছে তোদের দুজনের?”

“হ্যাঁ মিটে গেছে সব ঝামেলা।”

“যাক বাবা টেনশন ফ্রি হলাম।”

“রুশু’ নোমান কই রে?”

“আমি বলতে পারি না।”

“তোরা এতো বোরিং কাপল!”

“তোর ভাই বোরিং বুঝলি।প্রেম করতে পাগল হয়ে গিয়েছিলো যেই রাজি হলাম তার তো পাত্তাই নাই।”

“আরে হয়তো ব্যস্ত আছে।জানিসই তো মামার সব বিজন্যাস ওর সামলানো লাগে।”

“হুম বুঝেছি।”



মিহির বসে বসে কফি খাচ্ছে।মুহিত এসে তার পাশে বসে বললো,

“ভাইয়া যাক তোর বিয়েটা ঠিক হয়ে গেলো।ওফ কি যে ভালো লাগতেছে আমার!”

“মনে হচ্ছে তো আমার না তোরই বিয়ে।তুই যা আনন্দে আছিস।”

“আরে আমি আনন্দে আছি নতুন ভাবি আসবে বলে!”

“হুম বুঝেছি।এখন বেশি কথা না বলে কাজে লেগে পড়।মাত্র এক সপ্তাহ পরেই কিন্তু বিয়ে!”

“ভাইয়া তুই চিন্তা করিস না।সব ঠিকভাবে হয়ে যাবে।”

মিহির কিছু বলতে যাবে এমন সময় তার মোবাইল বেজে উঠলো।মুহিত উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“দেখ আবার ভাবী কল করবো নাকি! আমি বরং যাই তোরা কথা বল।”

মুহিত চলে গেলো।মিহির মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো আননং নাম্বার থেকে কল এসেছে।আরাধ্যার নাম্বার তার মোবাইলে সেভ করা।তাহলে কে কল করলো!

মিহির কলটা রিসিভ করলো।অপর পাশে থেকে টিনা বললো,

“মিহির তুই কলটা তাহলে রিসিভ করলি!আমি তো ভাবলাম তুই আমার কল রিসিভ করবি নাহ্।”

টিনার কথা শুনে মিহির কিছুটা বিরক্ত হয়ে বললো,

“আমি যদি জানতাম এটা তোর নাম্বার তাহলে কখনোই কল রিসিভ করতাম না।”

“ওহ্ আচ্ছা আমার নাম্বার তাহলে তোর মোবাইলে সেভ করা নেই।”

“সেভ করে রাখার প্রয়োজন মনে করিনি কখনো।কেনো কল করেছিস সেটা বল।”

“মিহির প্লিজ আমাকে একসেপ্ট কর।আমি তোকে সত্যিই অনেক ভালোবাসি।”

“এইসব ইস্টুপিট কথাবার্তা বাদ দে টিনা।আর আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।সো তুই আর এই ধরনের কথা বলবি নাহ্।”

মিহির কথাটা বলে কলটা কেটে দিলো।টিনা মোবাইলটা বিছানায় ছুড়ে মারলো।

মিহির কলটা কেটে আরাধ্যাকে কল করলো।আরাধ্যা কলটা রিসিভ করলো।

“মিস.চাশমিশ কি করছেন আপনি?”

“আমি এটাই ভাবতেছি যে আজকে কি ঘটলো!সবটাই অবাক করা বিষয়।”

মিহির মুচকি হেসে বললো,

“আসলেই অবাক করা বিষয়।তা আপনাকে রিজেক্ট করা পাত্র কি আমাদের বিয়ের খবরটা পেয়েছে?”

“ফিহাকে তো জানিয়ে দিয়েছি।ও-তো ওর হাসব্যান্ডকে বলবে’ই।”

“তুমিও কল করে দাওয়াত দিয়ে দিও।ওই ছেলের একটা শিক্ষা হওয়া দরকার।দেখুক ও রিজেক্ট করলেই যে তোমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে এটা ভেবে যে ও ভুল করেছে।”

“আচ্ছা বুঝেছি।এখন আমার কথা শুনেন মিহির বাবু।”

‘হ্যাঁ বলো আমি তো তোমার কথা শুনতে এক পায়ে রাজি আছি।”

আরাধ্যা খিলখিল করে হেসে দিলো।মিহিরও তার সাথে হাসছে।আরাধ্যা হাসি থামিয়ে বললো,

“আমি আর রুশা কালকে শপিং করতে যাবো।আপনি পারলে একটু আসবেন।আপনার জন্য একটা গিফট আছে!আর হ্যাঁ কালকে আমি অফিসে যেতে পারবো নাহ্।

“ওকে অফিসে আসতে হবে নাহ্।আর হ্যাঁ লোকেশনটা এসএমএস করে পাঠিয়ে দিও।”

“ওকে।”

মিহির আর আরাধ্যা আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কলটা কেটে দিলো।

/🍂/

সকালবেলা,

আরাধ্যা ফ্রেশ হয়ে এসে একটা সাদা আর কালো রঙের থ্রি-পিস পড়লো।চোখে হালকা কাজল,ঠোঁটে লিপস্টিক,চুলগুলো ছাড়া।চোখে তার নিত্যদিনের সাথী চশমটাকে পড়ে নিলো।সে রেডি!

আরাধ্যা রুশাকে কল করলো।রুশা কলটা রিসিভ করলো।

“রুশু কই তুই?”

“আমি তোদের বাড়িতে।আন্টি আমাকে জোর করে ব্রেকফাস্ট করাচ্ছে।”

“আরে গাধী আমাকে কল করে জানাবি তো!ও-কে ব্রেকফাস্ট করতে থাক।আমি আসতেছি।”

আরাধ্যা কাঁধে ব্যাগটা নিয়ে নিচে গেলো।গিয়ে দেখলো সবাই ব্রেকফাস্ট করতেছে।আরাধ্যাও গিয়ে বসে পড়লো।

—🌸—

মিহির হালকা নেভি-ব্লু রঙের শার্ট ইন করে পড়েছে,সঙ্গে কালো রঙের ওয়েস্ট কোট আর কালো রঙের প্যান্ট পড়েছে।হাতে সিলভার কালারের ঘড়ি আর পায়ে কালো স্যু।মিহির শার্টের হাতা রৌলড আপ করতে করতে নিচে নামলো।

মিহির গিয়ে মুবিন সাহেবকে ঔষধ দিলো।

“মিহির তুই যা না আমি ঔষধ খেয়ে নিবো।”

“না বাবা তুমি আগে খাও দ্যান আমি যাবো।”

মুবিন সাহেব আর কিছু না বলে বাধ্য হয়ে ঔষধটা খেলেন।মিহির মুচকি হেসে বললো,

“চলো এখন ব্রেকফাস্ট করবে।”

মুবিন সাহেবকে নিয়ে মিহির ডাইনিং টেবিলে গেলো গিয়ে দেখলো মুহিত তাড়াহুড়ো করে ব্রেকফাস্ট করছে।

মিহির অবাক হয়ে বললো,

“মুহিত তুই এতো দ্রুত খাচ্ছিস কেনো?”

“ভাইয়া আমার অনেক লেট হয়ে গেছে।একটু পরেই ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”

মুবিন সাহেব বললেন,

“একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠলেই হয়।”

“পারি না তো বাবা।পারলে তো উঠতামই।”

মুহিত কথাটা বলে পানি খেয়ে দৌড় দিলো।মিহির আর মুবিন সাহেব ব্রেকফাস্ট করলো একসাথে।মিহির ব্রেকফাস্ট করে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো।

||🦋||

আরাধ্যা আর রুশা শপিং করতেছে।

“আধু জিজু কখন আসবে রে?”

“চলে আসবে।যখন আসতে বলছি ঠিক তখনি আসবে।”

হঠাৎ পিছন থেকে আর্য বললো,

“হ্যালো আরাধ্যা।”

আর্যর কন্ঠ শুনতেই আরাধ্যা পিছনে ঘুরে তাকালো।আর্যকে দেখে আরাধ্যার মেজাজটা গরম হয়ে গেলো।আর্য আরাধ্যা সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

“কি ব্যাপার আমাকে দেখে রাগ হলে নাকি?শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আমার ধারণা তাহলে ভুল হয়ে গেলো।তোমার মতো মেয়ের জন্যও পাত্র পাওয়া গেলো।”

রুশা এসে আর্যর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

“আপনার কি আর কোনো কাজ নেই?এখানে এসেছেন ভালো কথা।সেই আরাধ্যার সাথেই এসে কথা বলা লাগবে কেনো আপনার?”

রুশাকে থামিয়ে আরাধ্যা বললো,

“রুশা এইসব অভদ্র লোকের সাথে কথা বলে নিজের মুখ নষ্ট করিস নাহ্।চলে আয়।”

আরাধ্যা রুশার হাত ধরে নিয়ে যেতে যাবে এমন সময় আর্য পিছন থেকে আরাধ্যার ওড়না টেনে ধরলো।আরাধ্যা পিছনে চোখ রাঙিয়ে তাকালো।এক টান দিয়ে আর্যর হাত থেকে ওড়না ছাড়িয়ে ঠাস করে আর্যর গালে একটা চ*ড় মারলো।আর্য গালে হাত দিয়ে চোখ রাঙিয়ে আরাধ্যার দিকে তাকালো।আশেপাশের সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে।

আরাধ্যা আঙুল তুলে বললো,

“এরপরে যদি আমার সাথে এইসব অসভ্যতা করেন।তাহলে কিন্তু আপনার নামে এফআইআর করবো বলে দিলাম।”

আরাধ্যা কথাটা বলে রুশাকে টেনে নিয়ে চলে গেলো।আর্য দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“আমার গায়ে হাত দিয়ে অনেক বড় ভুল করলে তুমি আরাধ্যা।দেখো আজকে তোমার সাথে কি হয়!”

আর্য চারিপাশে তাকিয়ে দেখলো সবাই তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আছে।আর্য রাগে হনহন করতে করতে চলে গেলো।

মিহির শপিংমলে গিয়ে দেখলো আরাধ্যা আর রুশা শাড়ি দেখতেছে।মিহির গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ালো।আরাধ্যা মিহিরকে দেখে হাসি দিয়ে বললো,

“এসেছেন আপনি।রুশু চল।”

মিহির চুল ঠিক করে বললো,

“তোমরা মেয়েরা শপিং করবে।আমাকে ডাকার কি দরকার ছিলো!”

রুশা পাশে থেকে বললো,

“জিজু আপনার জন্যই তো এখানে আসা।ওকে আধু তোরা দুজনে যা।আমি বরং যাই।নোমান আমার জন্য ওয়েট করতেছে।”

আরাধ্যা চোখ ছোট ছোট করে বললো,

“বাহ্ আমার সাথে এসে এখন নোমানের সাথে চলে যাবি।”

“দেখ আমি তোদের সাথে থেকে কি করবো!তুই আর জিজু ঘুরে বেড়া।আমিও আমার হবু বরের সাথে ঘুরে বেড়াই।”

“ওকে যা।”

মিহির ভ্রু কুচকে বললো,

“এখন যাচ্ছেন যান।তবে খাবো কিন্তু সবাই একসাথে।কল করলে নোমানকে নিয়ে চলে আসবেন।”

“ওকে জিজু।”

রুশা হাসি দিয়ে চলে গেলো।মিহির আরাধ্যার আপাদমস্তক দেখে বললো,

“বাহ্ তোমাকে তো আজকে একটু বেশিই সুন্দরী লাগছে।কি ব্যাপার?”

আরাধ্যা মুচকি হেসে বললো,

“বিয়ের ফুল ফুটেছে তো তাই একটু বেশিই সুন্দরী হয়ে গেছি।”

আরাধ্যার কথা শুনে মিহির হেসে দিলো।আরাধ্যাও হাসলো।

আরাধ্যা মিহিরের হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বললো,

“এটা খুলে দেখেন।

মিহির আরাধ্যার হাত থেকে প্যাকেটটা নিয়ে খুললো।সে দেখলো সেখানে পাঞ্জাবি আর পায়জামা রয়েছে।সাথে একটা চিরকুট।মিহির চিরকুটটা হাতে নিয়ে আরাধ্যার দিকে তাকালো।আরাধ্যা ইশারা করে মিহিরকে চিরকুটটা পড়তে বললো।মিহির চিরকুটটা খুলে পড়তে শুরু করলো-

এই যে শুনেন,

“মাঝে মাঝে তো পাঞ্জাবিও পড়তে পারেন।সবসময় কি শার্ট-প্যান্ট,কোট পড়া লাগে নাকি!পাঞ্জাবি-পায়জামাতেও কিন্তু আপনাকে কিউট লাগবে বুঝলেন মিহির বাবু।”

মিহির চিরকুটটা পড়ে মুচকি হাসলো।চিরকুটটা পকেটে ঢুকিয়ে বললো,

“ওয়েট করো আমি আসতেছি।”

মিহির কথাটা বলে কোথায় যেন চলে গেলো!একটু পরে আরাধ্যা দেখলো মিহির তার দেওয়া পাঞ্জাবি আর পায়জামা পড়ে এসেছে।আরাধ্যা অবাক হয়ে বললো,

“আরে আমি কি এখনি পড়তে বলেছি নাকি?”

“আমি তোমার কোন ইচ্ছা অপূর্ণ রাখতে চাই না।তুমি যখন এটা আজকে বলেছো সো আমি আজকেই পড়লাম।তবে দেখো তোমার আর আমার ড্রেসের কালার ম্যাচ হয়ে গেছে।এবার কিন্তু ভালোই লাগছে।”

“আপনি আসলেই পাগল।”

“হ্যাঁ তোমার জন্য মাই ডিয়ার চাশমিশ।”

মিহিরের কথা শুনে আরাধ্যা মুচকি হাসলো।দুজনে শপিংমলের এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে।আর কেনাকাটা করছে।মিহির একটা ঝুমকো জোড়া কিনে আরাধ্যার কানে সযত্নে পড়িয়ে দিলো।

“আরাধ্যা তোমার তো ঝুমকোর দোকান আছে।ওই দোকানে না হয় এটাকেও স্থান দিও।”

“তার মানে আপনি সেদিন আমার রুমে ঝুমকোর বক্স দেখে ছিলেন?”

“হ্যাঁ দেখেছি তো।আর এটাও বুঝেছি যে তোমার খুব পছন্দের জিনিস ঝুমকো।”

“ঠিকই বুঝেছেন।সত্যিই ঝুমকো আমার খুবই ভালো লাগে।”

#চলবে………………….