ল#রাগে_অনুরাগে💚✨
#পর্ব_১২
#লেখক_ঈশান_আহমেদ
মিহির আর আরাধ্যার কেনাকাটা শেষ হলে তারা নোমান আর রুশাকে কল করে ডাকলো।তারপরে চারজনে মিলে রেস্টুরেন্টে গেলো।রেস্টুরেন্টের বাইরে এসে নোমান বললো,
“আচ্ছা আমার একটু তাড়া আছে।একটা জরুরি কাজ পড়ে গেছে।”
রুশা মুখ গোমড়া করে বললো,
“তোমার তো অলটাইমই জরুরি কাজ থাকে।”
“রুশা আজকে সারাদিনই তো তোমার সাথে ছিলাম!”
মিহির হাসি দিয়ে বললো,
“আচ্ছা দুজনে ঝগড়া করো নাহ্।নোমান তুমি যাও।”
নোমান চলে গেলো।নোমান চলে যেতে মিহির বললো,
“আচ্ছা তাহলে চলো তোমাদের বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি।”
রুশা বললো,
“জিজু আপনি যান।আমরা একটু পরে চলে যাবো।আমাদের কিছু জিনিস কেনা বাকি আছে।”
“পরে জিনিসগুলো কিনলেও তো হয়।আজকে চলো।আমার তোমাদের রেখে যেতে মন চাচ্ছে নাহ্।”
“জিজু আপনার সাথে আধুর বিয়ে হয়ে গেলে আর আমার সাথে নোমানের বিয়ে হয়ে গেলে আমরা দুই বান্ধবী এমন একা ঘুরার সুযোগ পাবো নাহ্ সো আজকে একটু ঘুরে নেই জিজু প্লিজ।”
“আরে আমি আরাধ্যাকে সবসময় তোমার সাথে ঘুরতে যেতে দিবো।”
“কিন্তু নোমান যদি না দেয়।
মিহির রুশার কথা শুনে আরাধ্যার দিকে তাকালো।আরাধ্যা রুশার কথা শুনে হেসে বললো,
“মিহির বাবু আপনি যান।আমাদের কিছু জিনিস কিনতে হবে।”
মিহির একটা নিশ্বাস নিয়ে বললো,
“আচ্ছা ওকে।সাবধানে যেও।আর বেশি লেট করো নাহ্।এমনি সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তোমাদের বাড়ির দিকে যাওয়ার মেইন রোড তেমন ভালো কিন্তু চাশমিশ।এটা মাথায় রেখো!”
“ওকে মিহির বাবু।আমরা একটু পরেই চলে যাবো।”
“আমার তোমাদের রেখে যেতে কেমন যেন লাগছে!”
রুশা হাসি দিয়ে বললো,
“আরে জিজু কয়েক মিনিটের রাস্তা।এতো চিন্তা করার দরকার নেই।আপনি নিশ্চিন্তে বাড়ি যান।”
মিহির মুচকি হেসে চলে গেলো।মিহির ড্রাইভ করে বাসায় গেলো।বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে তার রুমে বসে আছে।তার কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে।
হঠাৎ করে তার মোবাইলে একটা কল আসলো।মিহির মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখলো রুশা কল করেছে।মিহির কলটা রিসিভ করতে অপর পাশ থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসলো।মিহির হকচকিয়ে বললো,
“রুশা তুমি কাঁদতেছো কেনো?”
রুশা কান্না কান্না গলায় বললো,
“জিজু আরাধ্যাকে আর্য আর কতগুলো ছেলে মিলে ধরে নিয়ে গেছে।”
কথাটা শোনা মাত্র মিহিরের বুকটা ধুপ করে উঠলো।তার হয়তো এই কারণেই এতোটা অস্বস্তি লাগছিলো।মিহির তাড়াতাড়ি করে বললো,
“তুমি এখন কোথায় আছো?”
রুশা জায়গায় নাম বললো।
“রুশা তুমি ভয় পেও নাহ্।আমি এখনি আসতেছি।চাশমিশের কিছু হবে নাহ্।”
মিহির বাড়ির কাউকে কিছু না বলে বাড়ি দিয়ে বেরিয়ে গেলো।মিহির দ্রুত ড্রাইভ করে রুশার কাছে গেলো।মিহির গিয়ে দেখলো রুশা একটা বেঞ্চে মনমরা হয়ে বসে আছে।মিহির রুশার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে রুশা উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
“জিজু আপনি এসেছে।”
“হ্যাঁ।ওরা চাশমিশকে কোথায় নিয়ে গেছে?”
“ওইদিকে রাস্তায়।ওখানে আর্যর একটা বাগান বাড়ি আছে আমার জানামতে।আমার মনে হয় ওখানেই আধুকে নিয়ে গেছে।”
“আমি এর জন্যই তোমাদের একা রেখে যেতে মন চাচ্ছিলো নাহ্।এখন তো আর এইসব বলে লাভ নেই।গাড়িতে উঠে বসো।”
এরমধ্যে নোমান এসে পৌঁছালো।নোমান রিক্সা থেকে নেমে দৌড়ে আসলো মিহিরের কাছে।নোমানকে দেখে মিহির বললো,
“নোমান তুমি এসেছো।এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলে সময় নষ্ট করলে চলবে নাহ্।সবাই গাড়িতে উঠো।এখনি না গেলে ওরা আরাধ্যার অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলতে পারে।”
—🤍—
আরাধ্যাকে নিয়ে রুমের বিছানায় ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।আরাধ্যা হাত আর মুখ বাঁধা তাই সে কিছু করতে বা বলতে পারতেছে নাহ্।তারপরেও সে নিজেকে ছাড়ানোর বৃথা চেষ্টা করে চলেছে।
আর্য আরাধ্যার চুল মুথো করে ধরে বললো,
“আমাকে থা*প্পড় দিয়েছিস নাহ্!এখন দেখ তোকে কি করি।তোর সাথে এখন যা হবে তারপরে তুই আর এই সমাজে মুখ দেখাতে পারবি নাহ্।”
আরাধ্যাকে বিছানার সাথে বাঁধা শুরু করলো আর্য।
মিহিররা আর্যর বাগান বাড়িতে গিয়ে দেখলো মেইন দরজা খোলা।আসলে বাড়িটা এমন জায়গায় যেখানে মানুষের কোনো আনাগোনা নেই।এখানে যদি কেউ গলা ফাটিয়ে চিৎকারও করে তাও কেউ তা শুনতে পারবে নাহ্।
মিহির ধীর গলায় বললো,
“আমি সামনের দরজা দিয়ে ঢুকবো।তোমরা দেখো পিছনে কোনো দরজা আছে নাকি!আর শুনো রুশাকে সেভ রাখবে নোমান।আর নিজেও সেভ থাকবে।আর হ্যাঁ পুলিশকে খবর দেও।”
নোমান মিহিরের কাঁধে হাত দিয়ে বললো,
“জিজু তুমিও নিজে দেখেশুনে সবটা করো।”
মিহির মৃদু হাসলো।মিহির সামনে দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকতে দুইটা ছেলে তার দিকে দৌড়ে আসলো।মিহির একটা লাঠি নিয়ে দুইটা ছেলেকে ইচ্ছামতো পিটিয়ে মেঝেতে শুইয়ে দিলো।
তারপরে হাতে লাঠিটা নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠা শুরু করলো।মিহির একের পর এক রুম চেক করতেছে।কিন্তু সবগুলো রুম তালা দেওয়া।শেষের রুমটা থেকে কিছু মানুষের কথার আওয়াজ তার কানে ভেসে আসলো।সে বুঝলো আরাধ্যা ওখানেই আছে।মিহির ধীর পায়ে ওই রুমের দিকে এগিয়ে গেলো।
মিহির দরজায় দেখলো দুইটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।দুইজনের মাথা বরাবর দুইটা বাড়ি দিলো।দুজনে চিৎকার দিকে ফ্লোরে পড়ে গেলো।চিৎকার শুনে আর্য হকচকিয়ে উঠলো।
মিহির রুমের ভিতরে তাকিয়ে দেখলো আরাধ্যাকে বিছানায় সাথে বেঁধে তার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।তবে ছেলেগুলোর চিৎকার শুনে আর্য তার জায়গায় দাঁড়িয়ে পড়লো।মিহিরকে দেখে সে পৈশাচিক হাসি দিয়ে আরাধ্যার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার উপরে উঠতে যাবে এমন সময় মিহির তার পিঠের উপর লাথি দিলো।যার ফলে আর্য খাটের কোণার সাথে মাথায় আঘাত পেলো।
মিহির আর্যর কলার ধরে তুলে তার হাতে থেকে লাঠিটা ফেলে দিয়ে বললো,
“তোকে মারার জন্য আমার হাতই যথেষ্ট এই বলে আর্যকে এলোপাতাড়ি মারা শুরু করলো।”
এরমধ্যে নোমান আর রুশা পুলিশ নিয়ে হাজির হলো।মিহিরকে দুজন পুলিশ আর্যর থেকে ছাড়ালো।মিহির রাগে ফুসছে।হঠাৎ তার চোখ পড়লো আরাধ্যার দিকে।সে দেখলো আরাধ্যার কোনো সাড়াশব্দ নেই।মিহির গিয়ে আরাধ্যার সব বাঁধন খুলে দিলো।আরাধ্যা অজ্ঞান হয়ে গেছে।আরাধ্যার চোখে মুখে পানি দিতে আরাধ্যার জ্ঞান ফিরলো।
আরাধ্যা মিহিরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।মিহিরের চোখেও পানি।সেও আরাধ্যাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
রুশা’ ফিহাকে কল করে সবটা জানিয়ে ছিলো।তাই ফিহাও এসে হাজির হয়েছে আর্যর বাবা-মাকে নিয়ে।ফিহা এসে ঠাস ঠাস করে আর্যর দুই গালে দুইটা চ*ড় মেরে বললো,
“তোর মতো নরপিশাচকে আমি কি দেখে ভালোবেসে ছিলাম তাও ভাবতেও আমার ঘৃণা হয়।অফিসার ও-কে এমন শাস্তি দিবেন ও যেন আর কোনোদিন জেল থেকে বের হতে না পারে!”
সুফি বেগম পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“হ্যাঁ অফিসার ফিহা যা বলেছে তাই করেন।”
ফারুক সাহেব গিয়ে আর্য গালে একটা চ*ড় দিয়ে বললো,
“তুই কিভাবে আমার ছেলে হতে পারিস?আমার বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে তোর শরীরে আমার রক্ত বইছে।”
আর্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই সুফি বেগম বললেন,
“অফিসার ও-কে এই মূহুর্তে এখান থেকে নিয়ে যান।”
পুলিশরা আর্যকে আর সঙ্গের ছেলেগুলোকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেলো।
সুফি বেগম গিয়ে আরাধ্যার দুটো হাত চেপে ধরে বললো,
“মা রে আমাদের পারলে ক্ষমা করিস।তোর জীবনের কষ্টগুলোর সাথে আমরা বারবার জড়িয়ে যাই।”
আরাধ্যা চোখ মুছে বললো,
“আন্টি প্লিজ এভাবে বলবেন নাহ্।আপনি আমার গুরুজন হোন।”
রুশা আর ফিহা গিয়ে আরাধ্যাকে জড়িয়ে ধরলো।রুশা হাসি দিয়ে বললো,
“তবে যেই যাই বলো নাহ্ কেনো আমাদের জিজু কিন্তু হিরো।”
রুশার কথায় সবাই হেসে দিলো।
||🌼||
আরাধ্যাকে নিয়ে তার বাসায় আসলো মিহির।সঙ্গে রুশা,ফিহা আর নোমানও আছে।হিমু সাহেব আর রুমা বেগমকে সব ঘটনা বলা হলো।রুমা বেগম আরাধ্যাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“তোর জীবনে ওই ছেলেটাকে আমরাই নিয়ে এসেছিলাম রে মা।নাহলে তোর সাথে ওর দেখাও হতো নাহ্ আর এতোকিছু ঘটতোও নাহ্।”
ফিহা এসে রুমা বেগমের কাঁধে হাত দিয়ে বললেন,
“আন্টি কান্নাকাটি করবেন নাহ্।আর্যকে তো পুলিশ অ্যারেস্ট করে নিয়ে গেছে।ও এতো সহজে আর ছাড়া পাচ্ছে নাহ্।”
রুমা বেগম ফিহার গালে হাত দিয়ে বললো,
“মা ও তো তোমার বর।তুমি এখন কি করবে?”
“আন্টি ও-কে আমি ডিভোর্স দিয়ে দিবো।এই সম্পর্কটা থেকে আমি বের হয়ে আসতে চাই।”
মিহির চুপচাপ একটা সোফায় বসে আছে।আরাধ্যা গিয়ে তার পাশে বসলো।মিহির আরাধ্যার দিকে তাকালো।আরাধ্যা দেখলো মিহিরের চোখে পানি।আরাধ্যা মিহিরের চোখের পানি মুছে দিলো।মিহিরের আরাধ্যার একটা হাত ধরে বললো,
“আরাধ্যা আমার মায়ের পরে তুমি আমার জীবনে দ্বিতীয় নারী।আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি।নিজের চেয়েও অনেক বেশি।প্লিজ তুমি মায়ের মতো আমার থেকে হারিয়ে যেও নাহ্।আমি তাহলে আর বাঁচতে পারবো নাহ্।”
আরাধ্যা মিহিরের হাতটা শক্ত করে ধরে বললো,
“আমি আপনার কাছে থেকে কখনো হারিয়ে যাবো নাহ্ মিহির বাবু।”
“আমি বলেছিলাম আমার তোমাদের রেখে আসতে মন চাইতে ছিলো নাহ্।তাও তোমরা বললে আমাকে চলে যেতো।রুশাকেও যদি তোমার সাথে ধরে নিয়ে যেতো তাহলে কি হতো?আমরা কি কিছু জানতাম নাকি কিছু করতে পারতাম।”
আরাধ্যা কানে হাত দিয়ে বললো,
“সরি মিহির বাবু।আমি এরপরে থেকে আপনার সব কথা শুনবো আর এমন করবো নাহ্।
আরাধ্যাকে কান ধরতে দেখে মিহির হেসে দিলো।
#চলবে………….
[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন]