#আমার তুমি
#পর্বঃ২১
#তানিশা সুলতানা
তুলতুল গাল ফুলিয়ে বসে আছে। খুব করে ফুপির কাছে রিকোয়েস্ট করলো সুমুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ফুপি যেতে দেবে না। সায়ান যে কানাডা দ
গিয়ে তুলতুলের সাথে একটা কথাও বলবে না সময় দেওয়া তো দুরের কথা এটা তুলতুল জানে। তাই তো সুমুকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলো।
শান হাই তুলতে তুলতে বাসায় আসছিলো। কাল রাতে ঘুমতে পারে নি। বন্ধুর পার্টিতে উরাধুরা ডান্স করেছে। আবার সকাল সকাল ভার্সিটিতে দৌড়াতে হয়েছে। এখন ঘুমে চোখে দেখছে না। কোনোরকমে চোখ দুটো টেনে টেনে বাসার গেইট দিয়ে ঢুকে। কোনো দিকেই তার খেয়াল নেই। চোখ দুটো খোলা থাকলেও মনটা ঘুমিয়ে আছে। সিঁড়ির কাছে যেতেই কেউ হুমড়ি খেয়ে শানের বুকের ওপর পড়ে। হকচকিয়ে ওঠে শান। মুহুর্তেই ঘুম উড়ে যায়।
দুই হাতে আগলে নেয় মেয়েটাকে। শান ভেবেছে হয় সিঁড়ি থেকে পড়েছে। শান তো আর জানে না মেয়েটা ইচ্ছে করেই শানকে জড়িয়ে ধরেছে।
শান ইশার পিঠে হাত রাখতেই মুচকি হাসে ইশা। শান যে ঘুমিয়ে হাঁটছৈ এটা ইশা ভালোই বুঝতে পেরেছিলো। তাই এই সুযোগেই একটু বুক থেকে ঘুরে আসলো।
শান ইশার দুই কাঁধে হাত দিয়ে সরিয়ে আনে ইশাকে। ইশা গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে আছে শানের দিকে।
“আর ইউ ওকে?
বিচলিত কন্ঠে বলে শান।
” এতততততততততো গুলো ওকে।
ইশা দুই হাত প্রসারিত করে মিষ্টি হেসে বলে।
“তো পড়ে যাচ্ছিলেন কিভাবে?
” আবার পড়ে দেখাবো?
“নাহহহ থাক।
আসছি। মারাক্তক ঘুম পেয়েছে।
শান ইশার পাশ কাটিয়ে হাই তুলতে তুলতে চলে যেতে নেয়।
” শুনুন
ইশা মাথা নিচু করে নরম গলায় বলে।
“বলুন
শানের এই আপনি বলে ডাকায় ভীষণ রাগ হয় ইশার। কতো কিউট করে ডাক দিলো সুন্দর একটা কথা বলার জন্য। কতো সুন্দর করে লজ্জা পাচ্ছিলো। মুডটাই নষ্ট করে দিলো এই আপনি শব্দটা।
” ঠিক সময় বিয়ে করলে আপনার আমার সমবয়সী একটা মেয়ে থাকতো। আর আপনি আমাকে আপনি বলছে?
মাএ ১৫ বছর বয়স আমার। আপনি ডাক শোনার মতো বয়স হয় নি এখনো।
গাল ফুলিয়ে বলে ইশা।
শান একটু হাসে।
“তো মামনি বলো কি বলবে? আমার সোনা মা টা। বলো সোনা।
ইশার মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরী গলায় বলে শান।
আরও বিরক্ত হয় ইশা।
” এই আপনার মেয়ে লাগি না। আমি একটা কিশোরী মেয়ে। আপনার মতো এই টুকু ছেলের মেয়ে না।
শান মাথায় হাত দেয়।
“তো কি বলবো তোমাকে?
” শুধু তুমি বলে ডাকবেন।
“ওকে শুধু তুমি। বলো কি বলবে?
” আল্লাহ আমাকে তুইলা নাও, এক্কেবারে না এই লোকটার সামনে থেকে।
ইশা দুই হাত তুলে বলে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
শান মুখ টিপে হাসে।
“থাক আর তুইলা নিতে হবে না। আমিই চলে যাচ্ছি
শান আবার যেতে নেয়।
” বললাম না কথা আছে।
ইশা শানের সামনে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রাগি মুড নিয়ে বলে।
“হুমম বলো। শুনতেই তো চাচ্ছি।
” এখানে বসুন
ইশা সিঁড়িতে বসে শাসনকে বসার ইশারা করে বলে। শান গালে হাত দিয়ে ইশার দিকে তাকিয়ে বসে।
“আমার নাম ইশারা মাইমনা। আমি খুব ভালো মেয়ে। একদম শান্তশ্রিষ্ঠ নম্নভদ্র। সবাই জানে এটা। কখনো বাঁদরামি করি না। মাটি নরে তো আমি নরি না।
” তারপর
শান এবার দুই গালে হাত দিয়ে ইশার দিকে একটু ঝুঁকে বলে। ইশা নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রপোজ করা যায় না কি? কথার মাঝখানে খালি বাগড়া দেয়।
‘আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কথা বললে কান্না করে দেবো আমি।
কাঁদো কাঁদো ফেস করে শানের দিকে আঙুল তুলে বলে ইশা।
শান নরেচরে বসে।
“ওকে
নেক্সট
” আমি বড় হয়ে গেছি। এটা বলছি কারণ আমি এখন আপনাকে যা বলবো সেটা শুনে আপনি বলবেন “ইশা তুমি এখনো ছোট” তাই আগেই বলে দিলাম।
এখন মূল কথায় আসি।
ইশা এক পলক শানের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে দুটো শ্বাস নেয় ইশা। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
“আপনি চোখ বন্ধ করেন?
আমতা আমতা করে বলে ইশা।
” কেনো?
শান ভ্রু কুচকে বলে।
আবার রেগে যায় ইশা। দাঁত কটমট করে।
“আপনাকে আপনি এখন আই লাভ ইউ বলবো তাই চোখ বন্ধ করতে বলেছি। চোখ খুলে রাখলে আমার লজ্জা লাগবে।
রাগী গলায় বলে ইশা। শান বড় বড় চোখ করে তাকায় ইশার দিকে। ইশা কি বললো বুঝতে পেরে জীভ কামড়ে ধরে।
লজ্জায় মরি মরি অবস্থা। আর এখানে থাকা যাবে না। কোনো দিকে না তাকিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় ইশা। ইশা চলে যেতেই শান হেসে ফেলে।
” পাগলী একটা
🥀🥀🥀🥀
দুপুরের খাবারটা আজকে সবাই এক সাথেই খাবে। সবাই খেতে বসে গেছে। সাহেদা বেগম সবাইকে খাবার দিচ্ছে। সায়ান ফোন দেখছে আর খাচ্ছে। তুলতুল মাথা নিচু করে এক মনে খেয়েই যাচ্ছে। না জানি আর কখনো এমন খাবার খেতে পারবে কি না।
“কানাডা থেকে ফেরার সময় খুশির খবর নিয়ে ফিরবি।
সাহেদা বেগম সায়ানের পাতে মাছের পেটি দিতে দিতে বলে।
“অবশ্যই মা। ডিল ফাইনাল করেই ফিরবো।
সবাই হতাশ হয় সায়ানের কথা শুনে। শান আর সুমু অধিক আগ্রহ নিয়ে সায়ানের মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলো। সাহেদা বেগম বিরক্ত হয়।
তুলতুল ফোঁস করে শ্বাস ছাড়ে।
” খুশির খবর বলতে ডিল ফাইনাল না। পুচকু আসার খবরের কথা বলছে। তবে ফুপি তোমার ছেলে যে বেরসিক
তুলতুল মুখ ফসকে বলে। যখন বুঝতে পারে কি বললো সাথে সাথে মুখ চেপে ধরে। চোখ বড় বড় করে সায়ানের দিকে তাকায়।
শান আর সুমু হেসে ফেলে। সোহেল মিয়া খুকখুক করে কাশি দেয়। সায়ান মুখে পানি দিয়েছিলো তুলতুলের কথা শুনে বিষম খায়। সাহেদা বেগম মুচকি হাসে।
কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে তুলতুলের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায়।
“ইডিয়েট
বিরবির করে বলে সায়ান
তুলতুল চোরের মতো মুখ লুকিয়ে এক দৌড়ে রুমে চলে যায়। শশুড় শাশুড়ী দেবর ননদের সামনে কি বলে ফেললো। ছি ছি ছি
তুলতুল যেতেই শান আর সুমু সুর টেনে এক সাথে চিল্লিয়ে বলে।
” বুঝলি ভাইয়া?
আমাদের পুচকু চাই।
সায়ান দুই হাতে কান চেপে ধরে।
সোহেল মিয়া শব্দ করে হেসে ফেলে।
“ছেলে মেয়ে আমার ভুলেই গেছে এখানে বাবা বসে আছে।
শান আর সুমু দাঁত দিয়ে জিভ কাটে। খেয়ালই করে নি বাবাকে।
” সব গুলোর মাথা গেছে।
সায়ান হাত ধুয়ে উঠে যায়।
তুলতুল সুমুর রুমে মুখ ঢেকে বসে আছে। এখন সায়ানের সামনে পড়লে নির্ঘাত বলবে “ইডিয়েট তোমার সাহস হলো কি করে এসব বলার? ইচ্ছে করছে তোমাকে খু*ন করে ফেলি”
একটু পর তো ওনার সাথেই যেতে হবে। তখন কি করবে? নিশ্চয় গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে। নাহলে প্লেন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে। যদি ফেলেই দেয় তাহলে প্লেন থেকে ফেলে দিলেই ভালো হবে ব্রেকিং নিউজ তো বের হবে। তুলতুলের ছবি টিভি খবরের কাগজ ফেসবুক টিকটিক সব জায়গায় ভাইরাল হয়ে যাবে। ব্রেকিং নিউজ থাকবে “তাহমিনা তুলতুল নামের এক তরুনীকে প্লেন থেকে ধাক্কা দিয়ে মার্ডার করেছেন তার একমাত্র স্বামী। দারুন হবে ব্যাপারটা।
খুশিতে লাফিয়ে ওঠে তুলতুল। মরবেই যখন তখন মরার আগে একটু সেলিব্রেট করাই যায়। একটু সাজুগুজু করতে হবে। ছবিটা ভালো আসবে তাহলে।
সন্ধা ছয়টায় ফ্লাইট। এখনই রওনা দিতে হবে। সায়ান রেডি হচ্ছে। সুমু তুলতুলকে সাহায্য করছে।
নীল একটা গাউন পড়ে নেয় তুলতুল। মুখে হালকা পাউডার কানে ইয়া বড় ঝুমকো। এটা পাখিকে ফলো করে কিনেছে তুলতুল৷ খুব ভালো লেগেছিলো। ঠোঁট লিপস্টিক দেয় না কারণ গাড়ি উঠলেই বমি হবে শুধু লিপস্টিক নষ্ট করার মানেই হয় না।
তবে মনে মনে আল্লাহ আলো করতে যাতে বমি না হয় তাহলে সায়ান যে কি করবে তা ভাবতেও কান্না পাচ্ছে তুলতুলের।
সায়ান একবারই তুলতুলের দিকে তাকায় না। আগে আগে লাগেজ নিয়ে ফোন দেখতে দেখতে হাঁটতে থাকে।
তুলতুল পেছন পেছন আসছে। তুলতুলের লাগেজটা শান নিয়ে আসছে। গাড়ি ওবদি এগিয়ে দেবে ওদের।
সাহেদা বেগম এটা ওটা বলছে তুলতুলকে। তুলতুল শুধু মাথা নারে।
সায়ান নিজের গাড়ি নিয়ে যাবে না। পাখি গাড়ি নিয়ে এসেছে। এটা দেখেই তুলতুলের মাথা গরম হয়ে যায়।
এটা কি ঠিক? একটা বিবাহিত ছেলের পেছনে আঠার মতো লেগে আছে। ইচ্ছে করছে গাড়ি সহ পাখিকে উপড়ে ফেলতে।
পাখি গাড়ি থেকেই সায়ানকে হাই দেয়।
পাখি ড্রাইভারের পাশে বসেছে।
তুলতুল এক লাফে পেছনের ছিটে বসে পড়ে। সায়ান ভ্রু কুচকে তাকায় তুলতুলের দিকে। সায়ান তাকাতেই তুলতুল মেকি একটা হাসি দেয়।
“পাখি পেছনে এসো। আমি সামনে বসবো।
পাখি এক পলক তুলতুলের দিকে তাকায়। তুলতুল বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।
এটাই চাই ছিলো তুলতুল।
” এবার পাখি বেবি তুমি বুঝতে পারবে তুলতুল কি জিনিস।
এমন জাদু করবো না তুলতুল নামটা শুনলেই তুলতুলের জামাইয়ের আশেপাশে আসার সাহসটা হারিয়ে যাবে।
এসো বেবি
কাম হেয়ার
বিরবির করে বলে তুলতুল।
“আমি মানে আসলে
পাখি আমতা আমতা করে।
“আপু আমার পাশে বসো না প্লিজ। দুজনে গল্প করতে করতে যাবো। আসলে আমার উনিটা ভীষণ লাজুক। তোমার আর ড্রাইভার কাকার সামনে আমার পাশে বসতে লজ্জা পাচ্ছে। ওনাকে আর লজ্জায় ফেলো না। শেষ মেষ দেখা যাবে আমার পাশে বসে উনি বেহুশ হয়ে গেছে লজ্জায়।
হাত দিয়ে বাতাস নিতে নিতে বসে তুলতুল। সায়ান দাঁত কটমট করে তাকায় তুলতুলের।
” একবার কানাডা পৌছায়। তারপর দেখাবো আমার সাথে ইয়ার্কি করার মজা।
সায়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলে।
চলবে
#আমার তুমি
#পর্বঃ২২
#তানিশা সুলতানা
সায়ান দুই হাতে নিজের চুল টানছে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। নিজেকে পাগল পাগল মনে হচ্ছে। ইচ্ছে করছে তুলতুলকে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে ফেলে দিতে। বেচারি তুলতুল ঘাপটি মেরে সায়ানের বুকে মাথা রেখে পড়ে আছে। মাঝে মাঝে মাথা তুলছে শুধু বমি করার জন্য।
“ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেই।
সায়ান দাঁত কটমট করে বলে।
” এমন করেন কেন? আমার বমি পেলে আমি কি করবো?
গাল ফুলিয়ে বলে তুলতুল।
“কি আর করবি আমার ওপর বমি করে দিবি।
চিবিয়ে চিবিয়ে বলে সায়ান।
” ঠিক আছে। আবার বমি আসলে আপনার ওপর করবো।
“নাহহহহহহ একদম না।
একদম গলা টিপে মেরে ফেলবো।
তুলতুল মুখ টিপে হাসে।
মাঝখানে তুলতুল বসেছে এক পাশে পাখি আরেক পাশে সায়ান।
প্রথমে পাখি একাই বসেছিলো তুলতুলের পাশে। সায়ান ড্রাইভারের পাশে বসেছিলো। গাড়ি ছাড়তেই তুলতুল গড়গড় করল বমি করে দেয় পাখির ওপর। চিল্লায়ে ওঠে পাখি। ডাইভার গাড়ি থামায়।
পাখির সারা শরীর বমিতে মাখামাখি। এমনিতেই পাখি ভীষণ খুতখুতে টাইপের। তারপর আবার বমি। এবার নিজেরই বমি পাচ্ছে।
কিন্তু এখানে ড্রেস চেঞ্জ করতে পারবে না ফ্রেশও হতে পারবে না। এয়ারপোর্টে গিয়েই কিছু ব্যবস্থা করতে হবে।
তুলতুল দুই বার বমি করার পরে এবার পাখিও বমি করে দেয়।
সায়ান এসে তুলতুলের পাশে বসে।
তুলতুল বমি করে অস্থির হয়ে গাড়ি ছিটে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে ছিলো। সায়ান তুলতুলের পাশে বসাতে তুলতুল সায়ানকে এক গালে জড়িয়ে বুকের ওপর মাথা রাখে।
পাখি নাকে টিস্যু চেপে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।
সায়ান দাঁত কটমট করে তুলতুলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তুলতুলের মুখের সামনে পলিথিন ধরে আছে। বলা তো যায় না আবার সায়ানের ওপরও বমি করে দিতে পারে। রিক্স নেবে না সায়ান।
প্রায় আধ ঘন্টা করে ওরা এয়ারপোর্টে এসে পৌছায়। পাখি নেমেই এক দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
সায়ান তুলতুলকে পানি খাওয়ায়। মুখ পরিষ্কার করে দেয়। ওড়নাটা ভিজে গেছে। তুলতুলের ওড়নাটা গাড়ির পেছনে রেখে দেয় সায়ান। তুলতুল সায়ানের দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে শুধু। সায়ানের চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ। তুলতুল মুখ বাঁকায়।
“ঢং দেখে বাঁচি না।
তুলতুল মুখ বাঁকিয়ে বিরবির করে বলে।
“আর একবার মুখ বাঁকালে মুখ একদম ভেঙে দেবো। ইডিয়েট
” খুব লাগছে না তাই না বাবু? আপনার আদরের পাখির ওপর বমি করেছি বলে?
আমি কি ইচ্ছে করে করেছি না কী? আমি কি পাগল? হঠাৎ করে হয়ে গেছে।
“নামবি তুই? না কি এখানে রেখেই চলে যাবো?
তুলতুল গটগট করে নেমে যায়।
সায়ান লাগেজ খুলে তুলতুলের জন্য অন্য ওড়না আনে।
” এই নে
তুলতুল ওড়না গায়ে জড়িয়ে নেয়।
“ইচ্ছে করছে খু*ন করে ফেলি।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে সায়ান। তুলতুল ভেংচি কাটে।
” ইসসসস একটু সেবা করেছে তাই কেমন মেজাজ দেখাচ্ছে। তুলতুল ঋণ রাখে না। আপনি অসুস্থ হলে সেবা করে দেবো।ইকুয়েক ইকুয়েল
বলে তুলতুল হাঁটতে থাকে।
“ইডিয়েট
সায়ান বিরবির করে বলে।
জীবনে প্রথমবার এয়ারপোর্টে এসেছে পিক না তুললে হয়? ফটাফট কয়েকটা পিক তুলে নেয় তুলতুল। সায়ান একটু দুরে লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এদিক সেদিক তাকাচ্ছে আর একটু পরপর হাহহহহহ বলে শ্বাস ছাড়ছে।
তুলতুল ফটাফট সায়ানের কয়েকটা পিক তুলে নেয়৷ ফেসবুকে আপলোড দেবে বলে। ক্যাপশন দেবে “জামাইয়ের সাথে হানিমুনে যাচ্ছি”
ফ্রেন্ড লিস্টের সবাই একদম হা হয়ে যাবে।
পাখি রাগে ফুসতে ফুসতে আসে। ড্রেস পাল্টে অন্য ড্রেস পড়ে এসেছে। মুখটা ধুয়েছে আবার মেকআপ করার টাইম পায় নি। তাই এখন নেচারাল চেহারাটা দেখা যাচ্ছে।
সায়ান দুই মিনিট তাকিয়ে থেকে পাখিকে চিনতে পারে। প্রথমে তো ভয়ই পেয়ো গেছিলো। ভাবছিলো এরকম ধৈই ধৈই করে কে আসছে? তারপর ভালো ভাবে তাকিয়ে বুঝতে পারে এটা পাখি। ভীষণ অবাক হয়ে গেছিলো সায়ান। এতদিন দেখে এসেছে ফর্সা পাখিকে। আর আজকেই পাখি কালো হয়ে গেলো?
মনে মনে বলো “মেক আপের কি গুণ”
হালকা কাশি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে সায়ান।
“তুমি কি ওকে বলে দেবে এটা ও একদম ঠিক করে নি। আমার মেকআপ ড্রেস সব নষ্ট করে দিয়েছে। পাপা সিঙ্গাপুর থেকে এনে দিলো ড্রেসটা।
পাখি নেকা কান্না করে বলে।
” কুল ডাইন।
বকে দিয়েছি। বেচারি ইচ্ছে করে
করে নি।
সায়ান পাখির হাত ধরে বলে।
পাখি এখনো রাগে ফুঁসতে।
“ওই মেয়েটা একদম বজ্জাতের হাড্ডি। কিন্তু তুমি আজ ওর হয়ে সাফাই গাইছো কেনো? প্রেমে পড়ে গেছো না কি?
সন্দেহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে পাখি।
সায়ান অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।
” দেরি হয়ে যাচ্ছে চলো
পাখির হাত ধরে হাঁটা শুরু করে সায়ান। পাখি ভ্রু কুচকে সায়ানের দিকে তাকিয়ে আছে।
সায়ান আর পাখি আগে আগে হাঁটছে আর তুলতুল পেছন পেছন হাঁটছে আর চারপাশে চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। পাখির মুখটা এখনো দেখেনি তুলতুল।
হঠাৎ করে একটা পুলিশের সাথে ধাক্কা খায় তুলতুল। হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে নিজেকে সামলে নেয় তুলতুল
” কোন কানা রে? মেয়ে দেখলেই নিকনিক শুরু হয়ে যায়? ধাক্কা দিতে ইচ্ছে কর
সামনে তাকাতেই তুলতুলের চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। সামনে একটা পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।
পুলিশটা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে তুলতুলের দিকে। তুলতুল কানে দুই হাত দিয়ে মুখ কাঁদো কাঁদো করে তাকিয়ে আছে।
“এতোগুলো সরি পুলিশ ভাইয়া। আমি আসলে বুঝতে পারি নি আপনি।
পুলিশটা কিছু না বলেই তুলতুলের দিকে তাকিয়ে আছে।
” আসলে হয়েছে কি হয়েছে বলুন তো?
আমি তো খুব ভালো মেয়ে, চেহারাটা দেখো ভোলাভালা মনে হয়। তাই আমি ভাবছিলাম কেউ হয়ত ইচ্ছে করে আমাকে ধাক্কা দিয়েছে।
পুলিশটা এবার বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ায়। তুলতুল পুলিশ টার হাবভাব বুঝতে পারছে না। গালে হাত দিয়ে কিছুখন ভাবে।
তারপর আইডিয়া করে নিশ্চয় কালা। শুনতে পায় না। একটু হাসে তুলতুল।
তারপর হাত নারিয়ে ইশারায় সরি বোঝায়।
“আমি কালা না। শুনতে পাই।
গম্ভীর গলায় বলেন উনি। তুলতুল একটা শুকনো ঢোক গিলে। এতোদিন ধরে একটা হনুমানের সাথে বসবাস করছি কখনো এতোটা ভয় পায় নি। এখন তো মনে হচ্ছে আমি অঙ্গান হয়ে যাবো।
” ইডিয়েট এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?
সায়ান কর্কশ গলার বলে।
সায়ানকে দেখে তুলতুলের জানে পানি আসে।
“আসি ভাইয়া এতোগুলো সরি। প্লিজ আমার নামে থানায় ডাইরি করিয়েন না। ভালো থাকবেন।
বলেই সায়ানের হাত ধরে এক দৌড়ে চলে যায় তুলতুল।
পুলিশটি মুচকি হাসে।
” মেয়েটা একটু বেশিই চঞ্চল। বাট বেশ মিষ্টি।
🥀🥀🥀
শান লুঙ্গি আর সেন্ডো গেঞ্জি পড়েছে। কানে হেডফোন গুঁজে “লালালা লিলালা লা”
গানটা শুনছে আর মাথা নারাচ্ছে চেয়ারে বসে।
ইশা বই বুকে জড়িয়ে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে দেখছে। কি দারুণ লাগছে ওর ফিউচার বফকে।
ফোন নিয়ে এসেছে ইশা। শানের ফেসবুক আইডি এখনো পায় নি। এখন ফেসবুকে এস হয়ে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেবে।
শানের পেছনে দাঁড়ায় ইশা।
শান এবার হাত পা নারিয়ে নাচতে থাকে। ইশা ভিডিও করছে।
হঠাৎ করে শানের হাত গিয়ে পড়ে ইশার মাথায়। সাথে সাথে চমকে ওঠে শান। ইশা কোনো রকমে ফোন বন্ধ করে কোমরে গুঁজে নেয়।
শান হেডফোন খুলে পেছনে তাকিয়ে ইশাকে দেখে চোখ বড়বড় করে ফেলে।
“ততততুমি এখানে?
শান নিজের দিকে এক বার তাকিয়ে বলে।
ইশা মুচকি হাসে। বুঝতে পারে লুঙ্গি পড়েছে বলে লজ্জা পাচ্ছে।
” আর লজ্জা পেতে হবে না। আমি আপনাকে প্রতিদিনই লুঙ্গি পড়তে দেখি।
এক গাল হেসে বলে ইশা।
শান চমকে ওঠে।
“কককি বললে তুমি? লুঙ্গি পড়তে দেখো মানে?
উত্তেজিত হয়ে বলে শান। মানসম্মান কি তাহলে সব শেষ?
” ইয়ে মানে থুক্কু লুঙ্গি পড়তে দেখি না। আপনি লুঙ্গি পড়ে যখন বেলকনি দিয়ে হাঁটেন আর নাচেন ওই টা দেখি।
মাথা নিচু করে বলে ইশা।
শান ভীষণ লজ্জা পায়। ছি ছি ছি এখন কিভাবে মুখ দেখাবে মেয়েটাকে।
“বাবা বলেছে আজ থেকে প্রতিদিন আপনার কাছে আসতে।
আমতা আমতা করে বলে ইশা।
” মানে? কেনো?
ভ্রু কুচকে বলে শান।
“ইংলিস পড়তে।
” আচ্ছা
বসো
ইশা খাটের ওপর বই রাখে।
“কাল আপনাকে প্রপোজ করলাম কিছু বললেন না তো?
” কি বলবো?
“আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
” কেনো বলবো?
“আমি তো সিনেমায় দেখেছি। কোনো মেয়ে ছেলেকে ভালোবাসি বললে ছেলেরা তো তাই বলে।
” আমি বলবো না।
শান গম্ভীর গলায় বলে।
“কেনো?
” কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে ইশা।
“আমি যে সবাইকে বলে ফেলেছি আপনার সাথে আমি রিলেশনশিপ এ আছি। এখন তে ফোন নিয়ে এসেছি আপনার সাথে ট্যাগ করে রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দেবো বলে।
শান চোখ বড়বড় করে তাকায়।
” সবাই মানে?
“সবাই মানে মা বাবা দাদা ভাইয়া আপনার মা মোট কথা আমাদের আশেপাশে যতবাড়ি আছে সব বাড়ির মানুষদের বলেছি।
এখন শুধু তুলতুল ভাবি আর সায়ান ভাইয়া বাকি আছে।
ইশা বলে।
শান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
এবার মাকে কি বলবো আমি?
চলবে