যেদিন তুমি এসেছিলে পর্ব-১৯+২০

0
794

#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_১৯+২০
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
__________________
অর্ষা অশ্রুশিক্ত নয়নে আহনাফের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আহনাফ হতবাক হয়ে জানতে চায়,’কাঁদছ কেন তুমি?’

দৃষ্টি নামিয়ে নেয় অর্ষা। জড়ানো কণ্ঠে বলল,’কই? না তো!’

আহনাফ নির্বাক হয়ে যায়। কথা বলার ভাষা আপাতত নেই। বলার মতে সে কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। মস্তিষ্ক ফাঁকা। মাথায়, শরীরের প্রতিটি শিরায় শিরায় এখন তার রাগের আধিপত্য।

সে গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’আচ্ছা তুমি রুমে যাও।’

অর্ষা নিরবে যেমন বারান্দায় উঁকি দিয়েছিল সেরকমই নিরবে ঘরে ফিরে আসে। কী যে হচ্ছে তার সাথে! ঐটুকু কথায় চোখের কোণে পানি কেন আসতে হবে? আজকাল কি চোখের পানিও বেশি হয়ে গেছে? দুঃখের সাথে সাথে বুঝি অশ্রুও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।

বাড়িভর্তি এত মানুষ। তবুও তার নিজেকে বড্ড নিঃসঙ্গ, একাকি লাগছে। ইচ্ছে করছিল বন্ধুদের থেকে যেতে বলবে। কিন্তু ওদের-ও তো পরিবার, এছাড়া অন্যান্য কাজকর্ম থাকতে পারে। এসব ভেবেই মূলত সে এই আরজি করেনি। অপরদিকে এই বাড়িটিতে তার সবচেয়ে কাছের মানুষ, প্রিয় বন্ধুটি আহিল। সে এখন থেকেও না থাকার মতো। অন্য অনেকের মতোই সেও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে অর্ষার থেকে। অভিমান হয়েছে হয়তো। কতদিনই বা থাকবে? অর্ষার ধৈর্যশক্তি প্রবল। সে তার বন্ধুর ফিরে আসার অপেক্ষায় থাকবে।

বিছানায় পা গুটিয়ে বসে থেকে নানাবিধ চিন্তা করছিল অর্ষা। চিন্তার রাজ্য থেকে ফিরে আসে রেণুর ডাকে।

রেণু ঘরে প্রবেশ করে বলল,’আপা, আপনার ভাই-ভাবি আসছে।’

অর্ষা খুশি হয়। ঠোঁটের কোণায় এক ছটা হাসি ফুটিয়ে জানতে চায়,’কোথায় এখন?’

‘বসার ঘরে আছে। আপনে আহেন।’

রেণুর সাথেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেল অর্ষা। ড্রয়িংরুমের সোফায় তখন ভাই-ভাবি আর তিয়াস বসে ছিল। ওদের সামনে হরেক রকমের খাবার। কুসুম এদিক-সেদিক তাকিয়ে বাড়ির সাজসজ্জা দেখছে। সে আজকের পূর্বে কখনো এই বাড়িতে আসেনি। রুহুলের মুখে অবশ্য অনেক গুনগান আর প্রসংশা শুনেছিল। তবে আজ স্বচক্ষে দেখে সে বশীভূত হয়ে গেছে। মনে মনে কেয়াকে সে ভীষণভাবে তিরস্কার করল। কতটা বোকা হলে এত বড়ো বাড়ি, রাজ্যের রানি হওয়ার সুযোগ পেয়েও এমন সুযোগ হাতছাড়া করে? এদিক থেকে অর্ষাকে তো নিঃসন্দেহে ভাগ্যবতী বলাই যায়।

অর্ষা সামনে এসে ভাই-ভাবিকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করল,’কেমন আছো?’

রুহুল অর্ষার হাত ধরে পাশে বসাল। আদরের কমতি নেই যেন। তিয়াস লাফিয়ে গেল অর্ষার কোলে। তার নিজস্ব ভাষায় এবং আধো আধো বু্লিতে সে অনেক কিছু বলছে অর্ষাকে। অর্ষাও সিরিয়াস মুখভঙ্গি করে তিয়াসের সব কথা শুনছে। কখনো বা শব্দ করে হেসে উঠছে।

আমেনা বেগম অর্ষাকে বললেন,’কুসুম তো এই বাড়িতে প্রথম এলো। যাও ও’কে বাড়িটা ঘুরিয়ে আনো।’

অর্ষা মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। কুসুমও আমেনা বেগমের এই প্রস্তাবে বেশ খুশি হয়। তিয়াস অর্ষার কোলে। আর অর্ষা কুসুমকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সব দেখাচ্ছে। সব রুম দেখানো শেষ হলে ওরা ছাদে আসে। ছাদে ফল-ফুলের বাগান। পুরো ছাদ জুড়েই গাছ-গাছালি। মাঝখানে একটা দোলনা রয়েছে। কুসুম গিয়ে দোলনায় বসল। আরাম করে দোল খেতে খেতে বলল,

‘তোর তো দেখি রাজ কপাল রে অর্ষা।’

কুসুমের কথাটি বুঝতে না পেরে অর্ষা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। কেয়া বলল,’কার ভাগ্য কে নেয় তাই না? তোর জায়গায় থাকার কথা ছিল কেয়ার। আর এখন রাজ্যের রানি হয়ে গেলি তুই।’

একটু থেমে ফের তাচ্ছিল্য করে হেসে বলল,’তুই অবশ্য এমনিতেও এই বাড়ির রানি হতি। বাড়ির ছোটো রানি। তা আহিল কোথায়? তোর শোকে দেবদাস হয়ে গেছে নিশ্চয়ই?’

আহিলকে জড়িয়ে এসব বাজে কথা শুনে অর্ষার মেজাজ চটে যায়। সে চোখমুখ শক্ত করে বলে,’উলটা-পালটা কথা বলবে না ভাবি। আর কতবার বলব আহিল আর আমি শুধুই বন্ধু?’

কুসুম শ্লেষেরসুরে বলল,’হয়েছে। বন্ধু নাকি কি তা বুঝি আমি।’

‘আজকাল অনেক ভুল বোঝা শুরু করেছ।’

কুসুম চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বলল,’বাপরে! বড়ো লোক বাড়ির বউ হয়ে কি সাহস বেড়ে গেছে নাকি তোর? মুখে মুখে তর্কও করিস দেখি।’

অর্ষা বাঁকা হাসি প্রদান করে বলল,’আল্লাহ্ যদি এই সাহসটুকু আমায় বিয়ের দিনও দিত! তাহলে অনেক বাঁচা বেঁচে যেতাম।’

‘ঢং করিস না তো। আহনাফকে আমার পছন্দ ছিল না এ কথা ঠিক। কারণ ঐ ছেলে চরম বেয়া’দব। অবশ্য বেয়াদ’দবিও তো তোর জন্যই করেছিল। কেয়ার বর হিসেবে পছন্দ না হলেও তোর জন্য তো ঠিকই আছে। মিথ্যে বলব না, কেয়ার ওপর এখন আমার রাগ লাগছে। ও তো দেখছি তোর চেয়েও চরম বোকা। নয়তো এই সুবর্ণ সুযোগ কেউ হাতছাড়া করে? যাই হোক শোন, কান্নাকাটি, মন খারাপ করা এসব বাদ দে। আহিলের চেয়ে আহনাফ কোনো অংশে কম না।’

কুসুমের নিচু মানসিকতার সামনে কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না অর্ষা। সে নিশ্চুপ থেকে হার মানতে বাধ্য হয়। লোভী, স্বার্থপর ব্যক্তিদের সাথে সত্য-মিথ্যা নিয়ে তর্ক করা বৃথা। সে আদতে জানে, তাদের অগোচরে অনেকেই হয়তো ভাবে আহিল এবং অর্ষার মাঝে অদৃশ্য অথবা নামহীন কোনো সম্পর্ক রয়েছে। তবে এসব চিন্তা-ভাবনা মিথ্যা বৈ অন্যকিছুই নয়। মেয়েদের যে তৃতীয় নয়ন থাকে, এই নয়ন দ্বারা তার প্রতি আকৃষ্ট যেকোনো ছেলের হাভভাব, মনোভাব চট করেই ধরতে পারে। সেখানে এত কাছাকাছি থাকার পরও অর্ষা বুঝতে পারবে না? সে এটাও জানে, মানুষের ভাবনার ওপর জোর করা যায় না। যার যা ইচ্ছে ভাবুক; সত্যটা নিজেরা জানলেই হবে।
.
ভাই-ভাবি রাতের খাবার খেয়ে একেবারেই গেল। যাওয়ার পূর্বে রুহুল আমেনা বেগমকে বলল,’আন্টি আমি কিন্তু কাল সকাল সকালই আসব। এসে বোন আর বোন-জামাইকে আমার গরীবের বাড়িতে নিয়ে যাব। দুটো দিন থাকবে ওরা আমার বাসায়।’

এই বাড়িতে এসে কুসুমেরও পরিবর্তন হয়েছে। সেও রুহুলের সাথে সহমত পোষণ করে হেসে হেসে বলল,’হ্যাঁ, একদম কোনো বারণ শুনব না। আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে ননোদ আর ননোদ-জামাইকে আপ্যায়ন করব। কোনো ত্রুটি রাখব না।’

আমেনা বেগম হেসে বললেন,’তোমাদের বোন, তোমাদের বোন-জামাই। তোমরা নেবে; সমস্যা কী? ধনী-গরীব কিছুই না রুহুল। আন্তরিকতা আর ব্যবহারই আসল।’

রুহুল সন্তুষ্টচিত্তে হাসল। যাওয়ার পূর্বে তিয়াসকে অর্ষার কোল থেকে নিয়ে অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,’সকালে তৈরি থাকিস কেমন?’

অর্ষা ঘাড় নাড়িয়ে সায় দিলো। রুহুল ফের বলল,’আহনাফ কোথায়? দেখছি না যে?’

অর্ষা নিচুস্বরে বলল,’উনি বাইরে গেছে।’

‘ওহ। আচ্ছা ভালোমতো থাকিস। কাল দেখা হচ্ছে।’

‘সাবধানে যেও।’

ওরা চলে যাওয়ার পর অর্ষাকে নিয়ে নিজের ঘরে গেলেন আমেনা বেগম। জহির চৌধুরী শুয়ে ছিলেন। অর্ষা সালাম দেওয়ায় তিনি উঠে বসলেন।

সালামের উত্তর নিয়ে বললেন,’ওয়া আলাইকুমুস-সালাম মা। বসো।’

অর্ষা খাটের একপাশে বসল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,’তোমার ভাই-ভাবি চলে গেছে?’

‘জি।’

কী জানি ভেবে একটু চুপ থেকে তিনি সুধালেন,’তুমি কি আমাদের ওপর রেগে আছো?’

অর্ষা ঠিক বুঝতে পারল না, কোন কারণে রাগ করার কথা জিজ্ঞেস করছেন তিনি। তাই চুপ করে রইল। তিনি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বললেন,’আসলে তখন কিছুই করার ছিল না মা। কী থেকে যে কী হয়ে গেল! তবে আমার ছেলেটা কিন্তু খারাপ নয়।’

কারণ জানতে পেরে অর্ষার বুকচিরেও দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। আসলে এই প্রসঙ্গে তার দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করা ব্যতীত মুখ ফুটে বলার কিছু নেই।

আমেনা বেগম অর্ষার পাশে বসলেন। হাত ধরে বললেন,’শোনো, যেহেতু তোমাদের বিয়েটা এমন হুট করে হয়ে গেছে তাই আহনাফ কিন্তু এখনো রেগে আছে। ওর একটাই কথা, আমরা তোমার জীবন নষ্ট করেছি। কিন্তু তুমি তো সিচুয়েশনটা বুঝতে পারছ বলো?’

অর্ষা কিছু না বলে এবারও চুপ করে রইল। তিনি বললেন,’আমরা তো ও’কে তোমাদের বাসায় যাওয়ার কথা বলবই। যতটুকু মনে হয় রাজি হবে না। এক্ষেত্রে তুমি ও’কে রাজি করাতে পারবে। তুমি বললে শুনবে।’

এই পর্যায়ে অর্ষা বলল,’যেতে না চাইলে জোর করাটা কি ঠিক হবে?’

‘বিয়ের পর প্রথম বাবার বাড়ি যাচ্ছ। স্বামী ছাড়া একা যাওয়াটা খারাপ দেখায়। মানুষজন নানান ধরণের কথা বলবে। এমনিতেও এভাবে বিয়ে হওয়াতে কত কুৎসাই তো তারা রটাচ্ছে। তুমি শান্তভাবে বললেই রাজি হয়ে যাবে। পারবে না?’

অর্ষা ছোটো করে বলল,’আচ্ছা।’

রাতে খাবার টেবিলে আজ শুধু পরিবারের লোকজন। মেহমান সবাই আগেই খেয়ে শুয়ে পড়েছে। কাল সকাল সকাল সকলে নিজেদের বাড়িতে রওনা হবে। তাই খাওয়া-দাওয়ার পাট আগেই চুকিয়ে ফেলেছে। আজ ডাইনিংরুমে আহিলও উপস্থিত। কিন্তু সবসময়ের মতো চঞ্চল নয়; একদম স্তব্ধ। না তাকলে ওর উপস্থিতিও বোঝা যাবে না। অপরদিকে আহনাফ গম্ভীর হয়ে বসে আছে।

আফরিন আর অর্ষা সকলকে খাবার বেড়ে দেয়। জহির চৌধুরী বললেন,’তোরাও বোস।’

আমেনা বেগম চোখের ইশারায় জহির চৌধুরীকে প্রসঙ্গটি তুলতে বললেন। জহির চৌধুরী কেঁশে গলা পরিষ্কার করে বললেন,’কোথায় চলে গেছিলে সন্ধ্যায়?’

আহনাফ খাচ্ছে চুপচাপ। মুখ না তুলেই গম্ভীর হয়ে বলল,’বাইরে।’

‘কোনো দরকারী কাজ ছিল? দেখলে যে অর্ষার ভাই-ভাবি এসেছে; বিদায় পর্যন্ত থাকা উচিত ছিল।’

আহনাফ নিশ্চুপ। তিনি একটু চুপ থেকে বললেন,’যাই হোক, কাল সকালে অর্ষাকে আর তোমাকে নিতে আসবে রুহুল। তৈরি থেকো।’

আহনাফ খাওয়া থামিয়ে জিজ্ঞেস করল,’নিতে আসবে মানে?’

‘মানে বিয়ের পর মেয়েরা যে বাপের বাড়ি যায়? নাইওর যায় যে! আফরিনও তো এসেছিল।’

‘তো যাক। আমি কেন? আমি কোথাও যেতে পারব না।’

‘এটা কেমন কথা বললি বাবু? নিয়ম মানবি না?’ বললেন আমেনা বেগম।

আহনাফ অল্প একটু খেয়ে হাত ধুয়ে ফেলে। তাচ্ছিল্য করে বলে,’মানুষ কথা দিয়ে কথাই রাখে না; আর তো রইল নিয়ম! এগুলো কোনো বাধা-ধরা নিয়ম নয় মা। আমরা নিজেদের স্বার্থে এসব নিয়ম মেনে থাকি। তবে অর্ষা যাক। আমার কোনো আপত্তি নেই।’

আহনাফ কথা শেষ করে নিজের রুমে চলে যায়। জহির চৌধুরী স্ত্রীর দিকে তাকান। আমেনা বেগমও হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকেন। শুধু আহিলই একদম ভাবলেশহীনভাবে খাচ্ছিল। খাওয়া শেষ করে সেও নিজের রুমে চলে যায়। অর্ষা খাবারের প্লেটে অযথা আঁকিবুঁকি করছে। শেষ ভরসা এখন সবাই তাকেই করছে।

রেণু টেবিল গোছাতে গোছাতে বলল,’আরে চিন্তা কইরেন না। অর্ষা আপারে তো আর ভাইজান রাগ দেখাইতে পারব না। আপার প্রতি ভাইজানের অনেক মায়া।’

জহির চৌধুরী আর আমেনা বেগমকে নিয়ম করে খাওয়ার পরে ওষুধ খেতে হয়। তাই তারা নিজেদের রুমে চলে গেছেন। যাওয়ার পূর্বে সবকিছু পূণরায় বুঝিয়ে বলে গেছেন অর্ষাকে। এখন এখানে শুধু অর্ষা, আফরিন আর রেণু।

রেণুর কথা শুনে আফরিন জিজ্ঞেস করল,’তুমি কী করে জানলে?’

রেণু দাঁত বের করে হেসে বলে,’আপনে যে কী কন না আপামনি! এসব কি জানোন লাগে? চোখ দেখলেই কওন যায়।’

‘বাব্বাহ্! তুমি দেখি অন্তর্যামীও হয়ে গেছ।’

রেণু হাসল। আফরিন অর্ষাকে বলল,’তুমি ঘরে যাও। ভাইয়াকে বলো গিয়ে।’

অর্ষা মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে যায়। আহনাফ সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করছিল। অর্ষা কীভাবে কথা বলা শুরু করবে বুঝতে পারছে না। শাড়ির আঁচল ধরে আঙুলে পেঁচাচ্ছিল।

আহনাফ একবার ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,’আজও কি সোফায় ঘুমাবে?’

প্রশ্ন শুনে অর্ষা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আহনাফ বলল,’তাহলে আমি উঠে যেতাম এখান থেকে।’

‘হু। সোফাতেই ঘুমাব।’

‘আচ্ছা।’ বলে আহনাফ বিছানায় চলে যায়।

অর্ষা সোফায় গিয়ে বসে। অনেকক্ষণ যাবৎ চুপ করে থেকে মনে সাহস সঞ্চয় করে। কণ্ঠ পরিষ্কার করে বলে,’একটা কথা বলতাম।’

আহনাফ ল্যাপটপে কাজ করতে করতেই বলল,’বলো।’

‘আপনি আমাদের বাসায় যাবেন না কেন?’

‘এমনি।’

অর্ষা এতটাই সাহস সঞ্চয় করে ফেলেছিল যে ফড়ফড় করে বলা শুরু করল,’এমনি কেন? কেয়া আপু থাকত বলে? তার কথা মনে পড়বে বলে? আপনি না বলেছেন আপনি তাকে ভালোবাসেন না? তাহলে সমস্যা কোথায়?’

কেয়ার নাম শুনে মাথায় রক্ত উঠে যায় আহনাফের। অপমানের কথা মনে পড়ে যায়। দগদগে ঘা আরো দগদগে হয়ে ওঠে। সে ল্যাপটপ ছুঁড়ে মারে ফ্লোরে। অর্ষা ভয়ে চমকে যায়।

আহনাফ চিৎকার করে বলে,’তুমি কি পুরনো ঘা খুঁচিয়ে আরো অপমান করতে চাইছ আমায়? কেয়ার নাম কেন বললে? আমি বলেছি না ওর নাম আমার সামনে বলবে না? এমনিতেই তোমায় দেখলে মাথা ঠিক থাকে না। ওর কথা মনে হয় আর রাগে-জিদ্দে ইচ্ছে করে নিজেকেই শেষ করি। তাও কেন? আমি যাব না তোমাদের বাসায়, সেটা একবারই বলে দিয়েছি। সবার সামনে বলেছি। তাও কেন যাব না ইত্যাদি ইত্যাদি কেন জিজ্ঞেস করা লাগবে বলো?’

অর্ষা ভয়ে কান্নাই করে ফেলে। পাশের ঘর থেকে আহিল অনেকক্ষণ যাবৎ সব শুনছিল। আর সহ্য করতে না পেরে সে এই ঘরে আসে।

আহনাফ তখনো রাগে ফুঁসছিল। আহিল রুমে এসে কান্নারত অর্ষার দিকে তাকায় একবার।

আহনাফের ওপর রাগ দেখিয়ে চিৎকার করে বলে,’তুমি ওর সাথে এভাবে কেন কথা বলছ?’

ছোটো ভাইকে দেখে ওর মাথা আরো গরম হয়ে যায়। অর্ষা উঠে এসে আহিলকে থামানোর চেষ্টা করে। ওদের ঝগড়া শুনে বাড়ির সবাইও এই ঘরে চলে আসে। পরিস্থিতিটা আগে বোঝার চেষ্টা করে। ক্ষিপ্ত আহিলকে ঘর থেকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নেয় আহিল।

আহনাফ গম্ভীরকণ্ঠে বলে,’তুই এখানে কেন এসেছিস?’

‘তুমি ওর সাথে খারাপ আচরণ কেন করছ? ওর দোষটা কোথায়? ও তো বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে যায়নি। যতদূর জানি দুই পরিবারের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে। ও’কে নিয়ে যখন তোমার এতই সমস্যা তখন কেন ‘না’ করোনি?’

আহনাফের রাগে মাথার রগ কাঁপছে। সে কৈফিয়ত দিতে ইচ্ছুক নয়। সেদিন তো সে হুশেই ছিল না; যখন জানল কেয়া পালিয়েছে। এভাবে প্রতারণা করার, ঠকানোর তো কিছু ছিল না।

আহিল অর্ষাকে ধমক দিয়ে বলল,’বেরিয়ে আয় ঘর থেকে।’

অর্ষা আহতদৃষ্টিতে তাকায়। সে কী করে বেরিয়ে যাবে? আহিলকে সে কীভাবে বোঝাবে এখন শুধু সে তার বন্ধুই নয় বরং তার বড়ো ভাইয়ের বউ!

অবস্থা বেগতিক দেখে বাবা-মা আহিলকে জোর করে নিয়ে যায়। অর্ষা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। আহনাফের রাগ সীমা অতিক্রম করেছে। সে ক্ষুব্ধ হয়ে তাকিয়ে রয়েছে অর্ষার দিকে।

রাগে ফুঁসে উঠে বলে,’যেই মেয়ের প্রতি আমার চেয়ে আমার ভাইয়ের দরদ, মায়া, ভালোবাসা বেশি; তার সঙ্গে আমি সারাজীবন একসাথে থাকতে পারব না।’

এটা বলেই আহনাফ প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র গোছাতে শুরু করে।

অর্ষা কাঁদতে কাঁদতে বলে,’আপনিও কি ভাবেন আহিলের সাথে আমার সম্পর্ক রয়েছে?’

আহনাফ এবার ধমক দিয়ে বলে,’লিসেন, আমার ভাইকে আমি চিনি। ও যদি তোমায় ভালোবাসত কিংবা তোমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক থাকত তাহলে আর কেউ না জানলেও মা জানত। আর মা সব জেনেশুনে তোমাকে আমার বউ করে আনত না।’

‘শুনুন, আমার ভুল হয়েছে। আমি আর কখনো তার নাম বলব না। আপনাকে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য ফোর্সও করব না। প্লিজ আপনি আমার ওপর রাগ করে সবাইকে ছেড়ে যাবেন না। এত রাতে বের হবেন না প্লিজ!’

আহনাফ আর কিছু না বলেই জিনিস-পত্র নিয়ে তৎক্ষণাৎ বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। জহির চৌধুরী, আমেনা বেগম অনেক থামানোর চেষ্টা করে। কিন্তু সে বাবা-মা কারও বারণই শোনে না।

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]
#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_২০
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
___________________
জানালার কার্ণিশে মাথা ঠেকিয়ে নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে অর্ষা। বিবাহিত জীবন সম্পর্কে তার কোনো ধারণা স্পষ্টভাবে না থাকলেও; অস্পষ্ট ছিল না। তাই বলে এত করুণ আর বিষাদময়ও বুঝি হয়? পরক্ষণে সে তার মনকে বোঝাতে উঠেপড়ে লাগে। যেখানে বিয়েটাই স্বাভাবিক নয়; সেখানে সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে এমন প্রত্যাশা করা আকাশ-কুসুম’ই বটে।

আজ একে একে সিনেমার দৃশ্যপটের মতো প্রতিটি দৃশ্য অর্ষার নেত্রদ্বয়ে পূণরায় দেখতে পাচ্ছে। আহিলের ফোনে, এই বাড়ির দেয়ালে আহনাফের অনেক ছবিই অর্ষাসহ বাকি বন্ধুরা দেখেছিল। তবে আহনাফকে সামনা-সামনি আফরিনের বিয়েতেই প্রথম দেখে। প্রথম আলাপও শুরু হয় বিচ্ছিরি এক প্রসঙ্গ নিয়ে। আফরিনের বিয়ে ঠিক হওয়ার তিনদিন আগে থেকে অর্ষাসহ সকলকে আহিলের বাসায় থাকতে হবে বলে সিদ্ধান্ত জানিয়েছিল আহিল। বাকিদের সমস্যা না থাকলেও অর্ষার ঘোর আপত্তি ছিল। তার তো বাকিদের মতো এত ভালো জামা-কাপড় নেই যেগুলো সে এই বাড়িতে এসে পরবে। অনেক নয়-ছয় বুঝিয়ে তখন আহিলের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে পেরেছিল। কিন্তু বিয়েতে যে পরে আসবে এমন ভালো জামা-ও তার ছিল না। অনেক বলে-কয়ে কুসুমের হাত ধরে শাড়ি নিয়েছিল। শর্ত ছিল শাড়ির যেন কোনো ক্ষতি না হয়। কিন্তু বিধিবাম! পুরো রাস্তা খুব সাবধান এবং সতর্কভাবে এলেও বিপত্তি বাঁধল নামার সময়। নামার সময় শাড়ির আঁচল রিকশার কাঠের কোণায় বেধে গেল, যেটা সে একদমই খেয়াল করেনি। ভাড়া মিটিয়ে হাঁটার সময় শাড়ির আঁচলে টান লাগে এবং পেছনে তাকিয়ে দেখে অনেকখানি ছিঁড়ে গেছে। কষ্টে, আফসোসে অর্ষার ইচ্ছে করছিল তখনই কেঁদে ফেলতে। এই ছেঁড়া শাড়ি পরে বিয়ে বাড়িতে যাবে নাকি নিজের বাড়িতেই ফিরে যাবে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছিল। বিয়েতে না গেলে আহিল যে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলত এতে কোনো সন্দেহ ছিল না। অগত্যা তাকে ছেঁড়া শাড়ি পরেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে হয়েছিল। সকলের দৃষ্টি থেকে যখন শাড়ির ছেঁড়া অংশটুকু লুকানোর জন্য জান-প্রাণ দিয়ে চেষ্টা চালাচ্ছিল তখনই সামনে এসে হাজির হয় স্বয়ং আহনাফ। আর এসেই মুখের ওপর অমন প্রশ্নটি ছুঁড়ে দেয়।

তখন আহনাফের ওপর মৃদু রাগ হলেও পরবর্তীতে যখন আহিলকে ডেকে দিয়ে নিজেই সাহায্যের কথা বলল, তখন রাগটুকুও আর রইল না। এছাড়া অর্ষাকে কলেজে পৌঁছে দেওয়া, কুসুমের হাত থেকে বাঁচানো, হাসপাতালে ভর্তি করা, রাতে হাসপাতালেই থাকা এসব কিছু সে পূণরায় কল্পনা করে। শুধু আফসোস লাগে এটা ভেবেই, যেই মানুষটা তাকে একটা সময়ে এত এত সাপোর্ট করেছিল, আজ সেই মানুষটাই তাকে সহ্য করতে পারে না। ভাগ্য আসলেই বড্ড নির্দয় ও নির্মম। সহায় ভাগ্য ক’জনের হয় সেটা আদতে তার জানা নেই।
.
ড্রয়িংরুমে বসে শাড়ির আঁচলে মুখ গুঁজে কান্নাকাটি করছেন আমেনা বেগম। এমন হট্টগোলে অনেক মেহমানেরই ঘুম ভেঙে গেছে। তারাও এখন এখানে উপস্থিত। জহির চৌধুরী নির্বিকার ভঙ্গিতে বসে রয়েছেন।

অনেকক্ষণ পর্যন্ত আমেনা বেগমের কান্না দেখে বললেন,’এভাবে কাঁদছ কেন?’

তিনি কাঁদতে কাঁদতেই বললেন,’তো কাঁদব না? ছেলেটা এভাবে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল!’

‘ও তো ছোটো বাচ্চা নয়। এত চিন্তা কোরো না।’

এই পর্যায়ে আফরিন বলল,’ভাইয়াকে এভাবে জোর করা ঠিক হয়নি। তাও আবার অর্ষাকে দিয়ে বলানো এটা বোকামি হয়ে গেছে।’

জহির চৌধুরী বললেন,’এখানে জোর করার কী দেখলি? সমাজ, নিয়ম-নীতি এসব মানতে হবে না? বিয়ে যখন হয়েই গেছে তখন সবকিছু তো মানতে হবে। দুটো দিন ঐ বাড়িতে থাকলে এমন কি সমস্যা হয়ে যেত ওর? মেয়েটা না হয় বলেছে যাওয়ার কথা, তার জন্য বাড়ি থেকে চলে যেতে হবে?’

‘শুধু অর্ষার জন্য নয়। আহিল যে রেগে গেল; এতে মনে হয় ভাইয়ার রাগ আরো বেড়ে গেছে।’

‘কাকে কী বলব? কারও থেকে তো কারও রাগ কম নয়।’ কথা শেষ করে তিনি রুমে চলে গেলেন।

মেহমানরাও বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আমেনা বেগমকে ঘুমাতে পাঠিয়ে দিলো। আফরিন গেল অর্ষার কাছে। অর্ষা তখনো জানালার কাছে ছিল।

‘কী ভাবছ?’ অর্ষার কাঁধে মাথা রেখে জানতে চাইল আফরিন।

অর্ষা চট করে গালে লেপ্টে থাকা চোখের পানিগুলো মুছে ফেলার জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে। চোখের পানিতে গাল দুটোও চিটচিটে হয়ে আছে।

আফরিন ওর হাত ধরে বলল,’আমার থেকে কান্না লুকাতে হবে না।’

একটু থেমে ফের বলল,’স্যরি অর্ষা।’

অর্ষা নির্বাক দৃষ্টিতে কিয়ৎক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,’স্যরি কেন বলছ আপু?’

‘ভাইয়াকে রাজি করানোর দায়িত্ব তোমায় দেওয়া উচিত হয়নি। অযথা কত বকাঝকা শুনতে হলো।’

অর্ষা মুহূর্তেই অপ্রতিভ হয়ে উঠল। হাসার অভিপ্রায় করে বলল,’আসলে উনি যাওয়া নিয়ে তেমন রাগ করেনি। কেয়া আপুর নাম শুনতে পারে না। আর আমিও একটু বেশি বেশি বলে ফেলেছিলাম। দোষ আমারও আছে।’

আফরিন হেসে ফেলে। অর্ষার গাল টেনে বলে,’বাব্বাহ্! এখনই স্বামীর দোষ ঢাকতে শিখে গেছ?’

অর্ষা অপ্রস্তুত হয়ে দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে। সে এতসব ভেবে কিছু বলেনি। আফরিন তাড়া দিয়ে বলল,’এখন যাও চোখে-মুখে একটু পানি দিয়ে আসো। আমি থাকব আজ তোমার সাথে। আপত্তি নেই তো?’

অর্ষা দু’দিকে মাথা নাড়িয়ে বলল,’একদম না।’

আফরিন মিষ্টি করে হাসল। অর্ষার মনে হয় এই মানুষগুলোর জন্য হলেও সবকিছুর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে।
.
.
এর মাঝে ঘড়ির কাটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সময় অতিবাহিত হয়েছে ব্যাপক। কেটে গেছে দুটো দিন। অর্ষার আর নিজেদের বাড়ি যাওয়া হয়নি। যাওয়া হয়নি বললে ভুল হবে, আহনাফের বাড়ি থেকে যেতে দেয়নি। এমনিতেই সজ্ঞানে হোক বা অজ্ঞানে তাদের জন্য মেয়েটাকে কম কষ্ট সহ্য করতে হচ্ছে না। এখন যদি আহনাফকে ছাড়া বাপের বাড়ি যায়, তাহলে পাড়া-প্রতিবেশীদের কথার তোপে টিকে থাকতে পারবে না। তাই রুহুলকেও একাই ফিরে যেতে হয়েছিল।

দুটো দিনে গ্যাঞ্জাম পার্টির সকলেই এসেছিল অর্ষার কাছে। শুধুমাত্র এক বাড়িতে থেকেও আহিলের দর্শন সে পায়নি। ঐদিন রাতের ঘটনার পর কি আহিল ওর ওপর আরো রেগে গেছে? এসব ভাবতে ভাবতেই রেণুর সাথে টুকটাক রান্নার কাজ করছিল অর্ষা। আফরিন আজ শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে, তাই ওর পছন্দমতো সবকিছু রান্না করা হচ্ছে।

আমেনা বেগম রান্নাঘরে এসে দেখেন, অর্ষা অন্যমনস্ক হয়ে রয়েছে। তিনি গিয়ে অর্ষাকে কিছুটা দূরে সরিয়ে বললেন,’আগুনের এত কাছে কেন?’

অর্ষা কিছুটা লজ্জা পেল। তিনি বললেন,’দেখো তো ঘেমেনেয়ে কী অবস্থা হয়েছে! যাও যাও ঘরে যাও। আমি তো আছি রেণুর সাথে কাজ করার জন্য।’

কুসুমের ব্যবহারের কথা মনে পড়ে যায় অর্ষার। রান্নার জন্যও তাকে কত অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। পরীক্ষার সময় রাত জেগে পড়ে ভোরে রান্নাবান্না করতে হয়েছে। ভালোমতো ঘুমানোর সময় তো পেত-ই না বরঞ্চ পড়াগুলো যে রিভাইস করবে সেই সময়টুকুও পেত না। সবকিছুতেই ছিল কুসুমের বাড়াবাড়ি রকমের অত্যাচার। আর সেখানে সে আমেনা বেগমকে দেখে ভারী অবাক হয়। মানুষটা কি প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই ভালো না? না, একটু নয়! অনেক বেশি ভালো অনেক!

অর্ষাকে নিষ্পলকভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আমেনা বেগম চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করেন,’কী?’

অর্ষা মৃদু হেসে বলল,’কিছু হবে না। আপনি আজ রেস্ট নিন। সারাদিন বসে থাকতে থাকতে আমারও ভালো লাগে না। আমি প্লিজ আজ রান্না করি? আমার রান্না কিন্তু এত খারাপও নয়।’

তিনি হেসে ফেলেন। অর্ষার চিবুক ছুঁয়ে বলেন,’পাগলী মেয়ে!’

রান্নাঘর থেকে চলে যাওয়ার পূর্বে রেণুকে বলে গেলেন,’অর্ষার দিকে খেয়াল রাখিস রে রেণু।’

রেণু দাঁত-কপাটি বের করে হেসে বলল,’আইচ্ছা। কুলে নিয়া রাখমু।’

অর্ষা হেসে বলে,’আপনি অনেক মজার মানুষ রেণু আপা।’

‘জীবনে মজা, আনন্দ ছাড়া আর কী আছে কন? দুঃখ, হইল রেগুলার একটা রুটিন। এই রুটিনের বাইরে গিয়া আনন্দ, আহ্লাদ উপভোগ করতে হয় বুঝছেন?’

‘বুঝেছি। আর কথাটাও কিন্তু আপনি বেশ বলেছেন।’

প্রত্যুত্তরে রেণু হাসল। অর্ষা এখন গরুর মাংস রান্না করছে। গরম মশলার কৌটা খুলতে গিয়ে তাকে বেশ কসরত করতে হয়। এত শক্ত করে আটকানো যে রেণুও খুলতে পারছে না। প্রাণপণ চেষ্টা অর্ষা চালিয়েই যাচ্ছিল। আচানক পুরুষালী একটি হাত অর্ষার হাত থেকে কৌটাটি নিয়ে এক চান্সেই খুলে ফেলে।

রেণু এবং অর্ষা হা করে তাকিয়ে থাকে। কৌটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আহিল। রেণু তো বিস্ময়ে বলেই ফেলল,’ভাইজান কী খাইয়া এমুন শক্তি বানাইছেন?’

‘আগে তুমি বলো কী খেয়ে এমন শক্ত করে কৌটার মুখ লাগিয়েছিলে?’ পালটা প্রশ্ন করল আহিল।

রেণু মাথা চুলকে বলল,’কী জানি ভাইজান! তহন কী খাইছিলাম মনে নাই তো!’

‘থাক, আর মনে করা লাগবে না। আফরিনের জন্য শরবত বানাও।’

রেণু অন্যপাশে গিয়ে শরবত বানাচ্ছে। আহিল অর্ষার পাশে দাঁড়িয়ে কৌটাটি হাতে দিলো। প্রচণ্ড অস্বস্তি, সাথে ভয় হচ্ছে অর্ষার। আহিল কি আবার রাগ দেখাতে এসেছে?

অর্ষাকে অবাক করে দিয়ে আহিল বলল,’স্যরি বোকারানী।’

বিস্ময়ে হা হয়ে যায় অর্ষার মুখ। চোখগুলো বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে আছে সে। সত্যিই আহিল তাকে স্যরি বলেছে?

আহিল ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,’এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?’

‘তুই সত্যিই স্যরি বললি?’

‘হ্যাঁ, বললাম। তোর পছন্দ না হলে আমার স্যরি আমাকে ফিরিয়ে দে।’

‘স্যরি।’

‘সত্যি সত্যি ফিরিয়ে দিলি?’

‘না। এটা আমি নিজে থেকে বললাম। জেনে হোক বা না জেনে, ভুল হয়তো আমারও কিছু ছিল বা আছে।’

আহিল কিছুক্ষণ চুপ করে তাকিয়ে থেকে বলল,’তোকে খুব কষ্ট দিয়েছি তাই না?’

অর্ষা তরকারি নাড়তে নাড়তে বলল,’ধুর! এসব কিছুই না।’

‘তোর ধৈর্য অনেক বুঝলি?’

‘বুঝলাম।’

‘কচু বুঝেছিস। বাই দ্য ওয়ে, তুই কেন রান্না করছিস?’

‘এটা আবার কেমন প্রশ্ন ছিল? আমার রান্না করা বারণ নাকি?’

‘না, এমনি জিজ্ঞেস করলাম।’

‘আমিও এমনিই রান্না করছি।’

আহিল হেসে ফেলে। রেণু বলে,’আমি শরবত দিয়া আহি।’

আহিল রেণুকে থামিয়ে বলল,’আমিই যাচ্ছি। আপুর সাথে কথা আছে। গ্লাসটা আমায় দাও।’

অর্ষার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে গ্লাস নিয়ে চলে যাচ্ছিল আহিল। আবার ফিরে এসে অর্ষার পাশে দাঁড়ায়।

অর্ষা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন করে,’কী?’

আহিল অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,’তুই সবসময় হ্যাপি থাক, আমি এটাই চাই।’

অনেকদিন বাদে আহিলের থেকে সেই ভরসা, সেই পুরনো ভালালাগার স্পর্শ মাথায় পেয়ে সত্যিকার অর্থে ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠে অর্ষার। সেই সাথে চোখজোড়ায় টলমল করছে অশ্রু। খুশির অশ্রু!

দুপুরে খাওয়ার সময়ে বিনা নেমন্তন্নে হাজির হয় গ্যাঞ্জাম পার্টির সকলে। সবেমাত্র বাড়ির সকলে খেতে বসেছিল তখন।

দিদার লম্ফঝম্প দিয়ে চেয়ারে এসে বলে,’বাপরে! আজ এত আয়োজন? তোমরা জানতে নাকি আমরা যে আসব?’

আফরিন বলল,’ব্যাঙের মতো লাফালাফি না করে আগে চুপ করে বোস।’

হাত ধুতে ধুতে আহিল জিজ্ঞেস করল,’এই সময়ে কী মনে করে?’

উত্তর দিলো আশিক। সে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবৃত্তি করে বলল,’এসেছিলাম তোর বাড়ি খেতে গরু,
তোর কথা শুনে ভেতরটা হয়ে গেল হাহাকার মরু।’

ওর কবিতা শুনে সকলে হেসে ফেলে। জহির চৌধুরী তো ঠাট্টার ছলে বলেই বসলেন,’বুঝলে আশিক, অতি শীঘ্রই তোমার উচিত একক কবিতার বই বের করা।’

আশিক আনন্দে উচ্ছস্বিত হয়ে বলল,’তাই না আঙ্কেল? দেখলেন, আপনি আমার প্রতিভা ঠিকই বুঝলেন। কিন্তু যাদের সাথে আমার প্রত্যহ চলাফেরা এরা কেউ এই পর্যন্ত বুঝলই না!’

‘আহা! থাক, এতে মন খারাপ কোরো না। নিজের প্রতিভা বিকশিত করতে হবে।’

আশিক শার্টের কলার নাচিয়ে ভাব দেখিয়ে বলল,’শোন, শোন। শেখ কিছু।’

জুঁই মুখ ভেংচি দিয়ে বলল,’আঙ্কেলের কথার আসল মর্ম যদি তুই বুঝতি, তাহলে লজ্জায় লেজ গুটিয়ে পালাতি এখন।’

খ্যাঁক করে ওঠে আশিক। ‘আন্টির বাচ্চা জুঁই, সারাজীবনেও ধ্বংস হবে না তোর আজাই’রা গাঁইগুঁই।’

আমেনা বেগম ওদেরকে থামিয়ে বললেন,’হয়েছে হয়েছে। ঝগড়াঝাঁটি বন্ধ করে এখন সকলে খাওয়ায় মনোযোগ দে তো।’

‘আমি তো কোপ আগেই শুরু করে দিয়েছি। খাওয়ার সময় ঝগড়া করে টাইম ওয়েস্ট করে বোকারা।’ খেতে খেতে বলল দিদার।

রেশমি বিড়বিড় করে বলল,’তোর দ্বারা পেটুকের থেকে এটাই আশা করা যায়।’

দিদার কথাটি শুনলেও কিছু বলল না। আগে পেটপুরে খেয়ে পেটকে শান্তি করাই হচ্ছে আসল কাজের কাজ। বাকি সকলকিছু নস্যি, অযথা।

লামিয়া খেতে খেতে বলল,’এখনো কিন্তু জানলাম না এত আয়োজন কেন?’

উত্তরে অর্ষা বলল,’আজকে আফরিন আপু শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে তাই।’

বন্ধুরা সব আহতদৃষ্টিতে আহিলের দিকে তাকাল। আশিক বলল,’আহাগো! সোনাগো আমার। বোনের কষ্টে আবার বনে-জঙ্গলে না চলে যায়।’

আহিল চোখ পাকিয়ে তাকায়। আফরিন মেকি ধমক দিয়ে বলে,’খবরদার আমার ভাইকে নিয়ে মজা লুটবি না তোরা।’

অনেকদিন বাদে গল্পে গল্পে সময় কাটল সবার। কিছুটা সময় হলেও চিন্তার জগৎ থেকে সকলে দূরে ছিল। চিন্তা হলেও সেগুলো এটলিস্ট এই সময়টায় কেউই বুঝতে দেয়নি। সবাই চেয়েছে অর্ষা অন্তত ভালো থাকুক। কিছু সময় হলেও ভালো থাকুক। মনে মনে ঠিকই আহনাফের জন্য বাবা-মায়ের চিন্তায় কলিজা শুকিয়ে গেছে। এখনো পর্যন্ত আহনাফের কোনো খোঁজ মেলেনি। সেই যে নাম্বার বন্ধ করে রেখেছে; এখনো পর্যন্ত নাম্বার অন হয়নি।

গ্যাঞ্জাম পার্টির আজ আসার বিশেষ একটা কারণ হচ্ছে খুশির সংবাদ। সকলকে একসাথে খুশির সংবাদ দেবে বলেই সরাসরি এই বাড়িতে চলে আসা। লামিয়া অর্ষার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। বাকিরা একেকজন একেকভাবে শুয়ে আছে।

আশিক হাত-পা ছড়িয়ে ফ্লোরে বসে বলল,’এই জুঁইশাক, পুঁইশাক বল কী বলবি এবার।’

জুঁই দাঁতমুখ খিঁচে বিচার দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল,’এই বান্দরটাকে ফাল’তু কথা বলতে বারণ করবি তোরা? নাকি ওর বামে একটা লা’ত্থি মেরে পাঁচ তলা ছাদ থেকে নিচে ফেলে দেবো?’

‘আহাগো! কী শখ গো। এই বেয়া’দব তোর হবু বরের বামে যাইথা লা’ত্থি, গুঁতা দে গা, আমার দিকে এত নজর ক্যান? অশ্লী’ল!’

জুঁই রাগে একটা বালিশ ছুঁড়ে মারল আশিকের দিকে। রেশমি বিরক্ত হয়ে বলল,’মারামা’রি বন্ধ কর। আর সু-সংবাদটি দে।’

লামিয়া শোয়া থেকে উঠে বসে। লজ্জায় লাল হয়ে বলে,’কেমনে যে বলি!’

‘হইছে শুরু ঢং!’ বিড়বিড় করে বলল দিদার।

ভাগ্যিস লামিয়া শোনেনি। নয়তো আরেকটা যু’দ্ধ এখানে হতো। অনেকক্ষণ সময় নিয়ে লামিয়া বলল,’আমার আর জুঁইয়ের বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়েছে। সামনের সপ্তাহেই দুজনের একসাথে বিয়ে।’

সকলে সমস্বরে বলল,’সত্যি?’

লামিয়া আর জুঁই মাথা নাড়াল। দিদার খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,’তাহলে ট্রিট কবে দিচ্ছিস?’

লামিয়া ওর পায়ে একটা লা’ত্থি দিয়ে বলে,’এই আঙ্কেলের বাচ্চা পেটুক সবসময় এত খাইখাই করস ক্যান? আমি মর’লেও তোরা কবরে গিয়া ট্রিট চাইবি?’

‘যদি দিতে পারতি তাইলে চাইতাম।’

অর্ষা ঝগড়া বেশিদূর এগোতে না দিয়ে বলল,’তাহলে তো তোরা দুজন এখন খুশিতে উড়তেছিস।’

রেশমি মনমরা হয়ে বলল,’ওদেরই তো উড়ার সময়। মাঝখান থেকে আমি আমের আঁটি হিসেবে রয়ে গেলাম।’

আহিল রেশমিকে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বলল,’মন খারাপ করিস না। বিয়ে বাড়ি মানেই হচ্ছে ছেলে-মেয়ের মেলা। একটা না একটা হিল্লে তো হয়ে যাবেই।’

‘হবে বলছিস?’

‘আলবৎ।’

রেশমি হাসল। গ্যাঞ্জাম পার্টি এবার আলোচনায় মেতে উঠল। কে কী করবে, কে কোন গান গাইবে, কে কে গেইট ধরবে ইত্যাদি ইত্যাদি আরো কত কী!
________
সূর্যের কুসুমরাঙা হলদেটে রশ্মি ক্যাথিওনের চোখের ওপর পড়ায় সে গড়াগড়ি খেয়ে লাফ দিয়ে আহনাফের পিঠের ওপর ওঠে। যার দরুণ ঘুম ভেঙে যায় আহনাফেরও।

সে বিরক্ত হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ক্যাথিওনের দিকে তাকায়। ক্যাথি ততক্ষণে লেজ গুটিয়ে পিঠ থেকে নেমে বিছানায় শুয়ে পড়েছে। এরপর অনেকক্ষণ ঘুমানোর চেষ্টা করেছে আহনাফ। তবে ভাঙা ঘুম পূণরায় আর চোখে নেমে আসেনি। তাই কিছুক্ষণ বিছানায় গড়াগড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে।

সেদিন রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা বন্ধুর বাসায় চলে গেছিল। ভেবেছিল রাগ কমলে হয়তো বাড়ি ফিরবে। তবে রাগ কমার পর সিদ্ধান্ত বদলাল। কাউকে কিছু না বলেই ফের চলে এলো সুইজারল্যান্ড। আর সে বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছে না। এই দেশ, এই দেশের মানুষগুলোকেই সে আপন করে নেমে।

ফ্রেশ হয়ে এসে ভাবল বাড়িতে একটা ফোন করবে। বাবা-মা নিশ্চয়ই অনেক চিন্তা করছে? তবে যেভাবে সিনক্রিয়েট করে, রাগারাগি করে বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছে এরপর তো আর কথা বলারও উপায় নেই। কেমন যেন গিল্টি ফিল হচ্ছে। তাই সিদ্ধান্ত নিল ফোন নয়; বরং ম্যাসেজ করে তার সুইজারল্যান্ড চলে আসার খবর দিয়ে দেবে।

ব্রেকফাস্ট করে কাপড় পালটে ক্যাথিকে নিয়ে বাইরে বের হয়। বাড়ির সামনে মাঝারি একটা মাঠ। একপাশে বাগান। পুরো মাঠজুড়ে সবুজ ঘাসের বিচরণ। কাঠের একটা নকশা করা বেঞ্চও আছে। সে ক্যাথিকে নিয়ে সেখানে বসল। ক্যাথি অবশ্য স্থির রইল না। সে মাঠে দৌঁড়াদৌঁড়ি শুরু করে।

আহনাফ ফোন হাত নিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকে। এরপর হোয়াটসএপে মায়ের নাম্বারে ম্যাসেজ করে,’আসসালামু আলাইকুম মা। কেমন আছো? আমার ওপর হয়তো রেগে আছো। কিন্তু আমি নিরুপায়! আপাতত ফোনে কথা বলার মতো পরিস্থিতিতে আমি নেই। তাই ফোন না দিয়ে ম্যাসেজ দিলাম। তোমরাও আপাতত কেউ আমাকে ফোন দিও না। আর দুশ্চিন্তা কোরো না। আমি সুইজারল্যান্ড চলে এসেছি।’

ম্যাসেজটি পাঠিয়ে অনেকক্ষণ চুপ করে রইল আহনাফ। ভেতরে ভেতরে এখনো গিল্টি ফিল হচ্ছে। অর্ষার জন্য! এভাবে খারাপ ব্যবহার করাটা নিশ্চয়ই তার উচিত হয়নি। সেই সময়ে হানির মা এলি বাড়ি থেকে বের হয়। আহনাফকে দেখে এদিকেই এগিয়ে আসে।

হেসে হেসে ইংরেজিতে বলে,’আহনাফ! একা একা কেন? বউ কোথায়?’

আহনাফ কী বলবে এখন? বিয়ে ঠিক হওয়ার পর হানির বাবা-মাকে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিয়ের কথা জানিয়েছিল। বউকে সাথে নিয়েই তার সুইজারল্যান্ড আসার কথা ছিল। কিন্তু ঘটনা তো ঘটে গেছে ভিন্নকিছু।

এলি পাশে বসে বলল,’কী হয়েছে? তোমাকে এত আপসেট দেখাচ্ছে কেন?’

আহনাফ বিমর্ষস্বরে বলল,’অনেক কিছু হয়ে গেছে।’

‘এনিথিং রং?’

আহনাফ শুরু থেকে শেষ অব্দি এলিকে সব বলে। এতক্ষণ মনোযোগী শ্রোতা হয়ে এলি সব শুনছিল। কিছুক্ষণ ভাবুক হয়ে বলে,’সব বুঝলাম। এখানে তুমি এবং অর্ষা দুজনই পরিস্থিতির শিকার।তোমার দিকটাও বুঝতে পারছি। কিন্তু ঐ মেয়েটারও তো কোনো দোষ নেই। এটলিস্ট ওর সাথে এমন ব্যবহার করা উচিত হয়নি তোমার।’

এলির কথা শুনে আহনাফের অনুতাপ বাড়ে। সে মাথা নত করে বসে থাকে। কিছুক্ষণ মৌন থেকে জিজ্ঞেস করে,’তাহলে আমার কী করা উচিত?’

‘ও’কে স্যরি বলা উচিত।’

আহনাফ পড়ে যায় বিপাকে। সে কী করে অর্ষাকে স্যরি বলবে? অর্ষা তো ফোন ব্যবহার করে না। ওর সাথে কথা বলতে হলে বাবা কিংবা মায়ের ফোন দিয়ে কথা বলতে হবে। আর বাবা-মাকে কী করে বলবে যে অর্ষার সাথে কথা বলতে চায়? বিষয়টি আরো বেশি অপ্রীতিকর এবং অস্বস্তিকর হয়ে যাবে। অর্ষাকে স্যরি বলার অন্য কোনো রাস্তা নেই বলে, স্যরি যে আর বলা হবে না এটা বুঝতে পারে আহনাফ। তবে এ ব্যাপারে সে এলিকে কিছু বলল না। হানির কথা জিজ্ঞেস করে প্রসঙ্গ বদলাল।
.
.
রাতে ঘুমাতে গিয়ে ঘরটাকে বড্ড ফাঁকা ফাঁকা মনে হলো অর্ষার। ঘরের সবকিছু আগের মতোই আছে। শুধু ঘরের মালিক-ই নেই। কেন জানি তার ভেতর কেমন অপরাধবোধ কাজ করে। অপরাধ না করেও এমন অনুতাপে দগ্ধ হওয়া ভারী লজ্জার বিষয়। সে ডিম লাইট জ্বালিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। পুরো রুম এবং বিছানায় এখন শুধু তারই একচ্ছত্র আধিপত্য। কেউ নেই কিছু বলার। অবশ্য যার রুম সেও কখনো কিছু বলেনি।

অর্ষা বালিশে মাথা এলিয়ে দিতেই আবারও সেই নানান রকম চিন্তা তার মাথায় আসছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি যেই প্রশ্নটি তাকে বেশি ভাবিয়ে তোলে সেটি হচ্ছে, কেয়ার হঠাৎ করেই এমন উধাও হয়ে যাওয়া। কোথায় গেল, কেন-ই বা গেল সবকিছু তার কাছে গোলকধাঁধার মতো লাগে। পরিশেষে শুধু একটা কথাই বারবার মনে হয়, কেয়া আপু এমনটা না করলেও পারত। তার খামখেয়ালিপনা সিদ্ধান্তে ঐ মানুষটার জীবন শেষ। যেমন হয়েছে অপমানিত, তেমন পেয়েছে কষ্ট। মানুষটার রাগ, ক্ষোভ-ই যেন এখন বেশি। হঠাৎ করে সেও যে কোথায় চলে গেল! পরক্ষণেই সে মাথায় মৃদু আঘাত করে বলল,’অর্ষা! তুই সত্যিই বোকা। শাশুড়ি না তখন বলল আহনাফ সুইজারল্যান্ড চলে গেছে? যাক, সে যেখানেই থাকুক, ভালো থাকুক।’

চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]