বাবুইপাখির অনুভূতি পর্ব-৩৭+৩৮+৩৯

0
249

#বাবুইপাখির অনুভূতি
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৩৭+৩৮+৩৯
_________________

‘ কি হলো আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?’

হুট করেই আহির মুখে এমন কথা শুনে হকচকিয়ে উঠল আদ্রিয়ান। সে একপ্রকার ভুলেই গিয়েছিল সে যে আহির দিকে এখনো তাকিয়ে আছে। আদ্রিয়ান তাঁর দৃষ্টি সরিয়ে বলে উঠল,

‘ না তেমন কিছু নয় তা এত লেট করলে যে,

‘ সরি আসলে ওই তৈরি হতে হতে একটু লেট হয়ে গেছে।’

‘ ওহ তাহলে এখন যাওয়া যাক?’

‘ হুম চলুন।’

এই বলে আহি গিয়ে বসলো গাড়িতে আর আদ্রিয়ান আহি যেতেই জোরে জোরে কয়েক নিশ্বাস ফেললো। কিছুক্ষনের জন্য হলেও আহিতে হারিয়ে গিয়েছিল সে। আদ্রিয়ান আর বেশি কিছু না ভেবে গিয়ে বসলো গাড়িতে। তাঁরপর সিটবেল্ট লাগিয়ে চললো সে আহিকে নিয়ে।’

বেশ কিছুক্ষন পর,

আদ্রিয়ানের গাড়ি এসে থামলো এক বিশাল কবর স্থানের সামনে। আদ্রিয়ান গাড়ি থামিয়ে বলে উঠল আহিকে,

‘ আমরা এসে পড়েছি বের হও?’

এতটুকু বলে আদ্রিয়ান গাড়ি থেকে নেমে গেল। আদ্রিয়ানকে নামতে দেখে আহিও নেমে পড়লো। প্রথমে জায়গাটা খেয়াল না করলেও পড়ে সাইনবোর্ডে কবরস্থান লেখা দেখে হাল্কা থমকে গেল আহি। এমন একটা জায়গায় তাঁকে নিয়ে এসেছে আদ্রিয়ান ভেবে একটু অদ্ভুত লাগলো আহির। আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল আদ্রিয়ান,

‘ চলো যাই।’

‘ হুম।’

এতটুকু বলে মাথায় ওড়না দিলো আহি। তারপর চললো সে আদ্রিয়ানের পিছন পিছন। চারপাশে ছোট বড় অসংখ্য গাছ রয়েছে৷ আর পুরো জায়গা জুড়েই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেই গাছের শুকনো পাতারা। আদ্রিয়ান আহি তাদের পাঁয়ের জুতো খুলে রেখে এসেছে গাড়ির কাছেই। আদ্রিয়ান আশেপাশে বেশি না তাকিয়ে চললো তাঁর গন্তব্যের দিকে। হঠাৎই কিছুদূর এগোতেই বলে উঠল আদ্রিয়ান,

‘ তুমি এখানে একটু দাঁড়াও আমি এক্ষুনি আসছি।’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহিও দাঁড়িয়ে পড়লো ওখানে। উওরে বেশি না ভেবে বললো সে,

‘ ঠিক আছে।’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ানও আর কিছু না বলে চলে গেল তার গন্তব্যের দিকে।’

চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আহি। আহি কল্পনাও করতে পারে নি আদ্রিয়ান তাঁকে এই সময় এমন একটা জায়গায় নিয়ে আসবে। আর তাঁকে রেখে আদ্রিয়ান গেলই বা কোথায়? নানা রকম কথা এসে মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আহির। নীরবভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতেই কেটে গেল কিছুকক্ষন। কিন্তু আদ্রিয়ানের আসার কোনো নাম গন্ধ নেই। আহির ইচ্ছে করছে সামনে গিয়ে দেখতে আদ্রিয়ান গেল কোথায় আর এখনো আসছে না কেন?’ সেটা দেখতে। আহি বেশি কিছু না ভেবে আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল সামনে। কিছুদূর এগোতেই চোখ পড়লো তাঁর আদ্রিয়ানের দিকে। কয়েক কদম দূরেই উল্টো দিক ফিরে দুটো কবরের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আদ্রিয়ান। ঠোঁট নড়ছে তাঁর হয়তো কিছু বলছে। আহি কৌতুহলী এগিয়ে গেল সামনে,কিছুদূর এগোতেই কানে আসলো আদ্রিয়ানের বলা কথা,

‘ আমি জানি বাবা মা তোমরা হয়তো এখনও আমার ওপর অভিমান করে আছো। তোমরা বিশ্বাস করো আমি যদি আগে জানতাম সেদিন বাড়ি থেকে বের হলে আমার পুরো জীবনটা উলোট পালোট হয়ে যাবে তাহলে কখনোই বের হতাম না। জানো তো মা ভাইটা অনেক বড় ডাক্তার হয়ে গেছে। হয়তো এখানে এসে ছিল, আমার নামে অনেক অভিযোগ দিয়ে গেছে তাই না। জানো তো আজ বহুবছর হয়ে গেছে আমি ওর সাথে ঠিক ভাবে কথা বলি না। মাঝে মাঝে আমারও ইচ্ছে করে ওর সাথে কথা বলতে, ওর সাথে সময় কাটাতে। কিন্তু ওঁকে দেখলেই আমার ভিতর একটা অপরাধী কাজ করে। যার কারনে কিছুই হয়ে ওঠে না। তোমরা জানো সেদিন ও আমার অফিসে এসে আমার ভেঙে ফেলা সেই শোপিচটা গিফট করেছে একদম হুবহু সেইটার মতোই দেখতে। আমি যত্ন করে রেখে দিয়েছি আমার বেডের পাশে। তোমরা চিন্তা করো না আমি ভেবে রেখেছি আর ওর সাথে বাজে ব্যবহার করবো না।’

এইরকম আরো অনেককিছু বলতে লাগলো আদ্রিয়ান তাঁর হারিয়ে যাওয়া বাবা মাকে।’

আদ্রিয়ানের কথা আর কাজ দেখে চোখ ভেসে আসলো আহির। সে ভাবে নি আদ্রিয়ান এই কারনে এখানে এসেছে। আহি আরো কিছুক্ষন আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে আসলো ওখান থেকে। সে বেশ বুঝতে পেরেছে আদ্রিয়ানের মনেও ভীষণ কষ্ট আছে।’

____

নিরালায় দাঁড়িয়ে আছে আহি আদ্রিয়ানের কাজ দেখে ভীষণই কষ্ট লেগেছে তাঁর। তবে আহি জানতো না আদ্রিয়ানের ভাইও আছে। এরই মাঝে আহির ভাবনার মাঝে সেখানে উপস্থিত হলো আদ্রিয়ান। আহিকে এখনো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো সে,

‘ সরি একটু লেট হয়ে গেছে?’

‘ ইট’স ওকে।’

বলেই হাঁটা শুরু করলো আহি। আদ্রিয়ানও চললো ওর পিছন পিছন। আজকে আদ্রিয়ানের বাবা মার বিবাহ বার্ষিকী। আদ্রিয়ানের মনে আছে সে যখন ছোট ছিল তখন প্রতিবছরই এই দিনে তাঁরা এখানে আসতো তার দাদা দাদির কবর জিয়ারত করতে। তারপর অসহায় গরিবদের খাবার খাওয়াতো তাঁরা। আদ্রিয়ানও প্রতি বছর একই কাজ করে। প্রতিবার নিলয়কে নিয়ে আসে সে কিন্তু আজ কেন যেন আহিকে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করলো তাঁর।’

চুপচাপ গাড়িতে বসে আছে আহি আদ্রিয়ান। কারো মুখেই কোনো কথা নেই। এই কিছুক্ষনের নীরবতার দড়ি ছিন্ন করে বলে উঠল আহি,

‘ আপনার বাবা মা কি করে মারা গেল?’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান তাকালো আহির দিকে আদ্রিয়ানকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে বলে উঠল আহি,

‘ সরি আসলে তখন আমি একটু একটু শুনেছিলাম আপনার মুখের কথা।”

উওরে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে উঠল আদ্রিয়ান,

‘ ইট’স ওকে আসলে আমি যখন ছোট ছিলাম তখন তাদের একটা এক্সিডেন্টে হয়। আর সেই এক্সিডেন্টেই,,

আর বলতে পারলো না আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানকে চুপ হতে দেখে আহিও বুঝতে পেরে বলে উঠল,

‘ ওহ, আর একটা প্রশ্ন করি?’

‘ হুম বলো,

‘ আপনার ছোট ভাই আছে কই কখনো দেখলাম না তো?’

‘ হুম আছে অনেক বড় ডাক্তার ও কয়েক মাস আগেই ডাক্তার হয়ে হয়েছে।’

‘ ওহ।’

‘ হুম

তাঁরপর নেমে আসলো দুজনের মাঝে নীরবতা। আহির অনেক কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছিল ওনার ভাইয়ের সাথে বাজে ব্যবহার করেন উনি। কিন্তু কিছুই যেন বলতে পারলো না সে। তাঁকেও ঘিরে ধরলো নীরবতা। আর এই নীরবতায় মধ্যদিয়েই আদ্রিয়ানের গাড়ি এসে নামলো একটা সুন্দর আলিশান জায়গার সামনে।’

গাড়ি থেকে নামতেই ওদের সামনে চলে আসলো নিলয়। কয়েক মুহূর্ত আগেই অফিস ছেড়ে এসেছে সে। নিলয় তো প্রথমে অবাকই হয়েছে আজ আদ্রিয়ান একা গেল কবরস্থানে। আদ্রিয়ান নিলয়কে দেখেই বলে উঠল,

‘ সব তৈরি তো নিলয়?’

‘ হুম এখন তুই গিয়ে পরিবেশন করলেই হবে।’

‘ ওকে চল।’

এরই মধ্যে ওদের সামনে আসলো আহি। নিলয়কে বললো সে,

‘ কেমন আছেন ভাইয়া?’

হুট করে কোনো মেয়েলি কন্ঠ কানে আসতেই নিলয় চরম প্রকার অবাক হয়ে আদ্রিয়ানের গাড়ি থেকে আহিকে নামতে দেখে বললো সে,

‘ তুমি এখানে?’

নিলয়ের কথা শুনে আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ ওকে আমি নিয়ে আসছি চলো আহি, তুইও আয়?’

বলেই আহিকে নিয়ে চললো আদ্রিয়ান। আর নিলয় জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলো ওদের যাওয়ার পানে যেন তাঁর বিশ্বাসই হচ্ছে না আহি আদ্রিয়ান একসাথে। তাও কি না আজকের এমন একটা মুহূর্তে। তাঁর মানে কি আদ্রিয়ান আহিকে নিয়ে ওখানে গিয়েছিল। ভাবতেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাঁর।’

অবাক হয়েই এগিয়ে গেল নিলয় আদ্রিয়ান আর আহির দিকে।’

পাশাপাশি দাঁড়িয়ে সবাইকে খাবার সার্ভ করছে আদ্রিয়ান আর আহি। যদিও আদ্রিয়ান আহিকে বলে নি আহি নিজেই আদ্রিয়ানকে হেল্প করছে। সে কল্পনাও করতে পারে নি আদ্রিয়ান তাঁকে নিয়ে এমনটা মুহূর্ত কাটাবে। বেশ লাগছে তাঁর। একটা সুন্দর আলিশান জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে তাঁরা। আশেপাশে অল্প স্বল্প ঘর আছে। চারপাশ দিয়ে ঠান্ডা বাতাস বইছে। বেশ লাগছে আহির।’

হঠাৎই কি হলো নড়তে গেলেই টার্চ লাগলো আহি আদ্রিয়ানের। আদ্রিয়ান তো আহির স্পর্শ পেতেই পুরোই চমকে উঠলো। কিছু একটা অনুভব হলো তাঁর।’

অতঃপর সবাইকে খাইয়ে দাইয়ে এবং নিজেরা খেয়ে অনেকটা সময় পাড় করলো সবাই। আজকে লান্স করার বিষয়টা একদমই অন্যরকম ছিল। খোলা আকাশের নিচে টেবিল পেতে লান্স করা বিষয়টা বেশ লেগেছে আহির।’

গাড়ি নিয়ে এগিয়ে চলছে আদ্রিয়ান আর আহি। নিলয় এখনো ওখানেই আছে। কারন এখনও অনেক কাজ বাকি। এমনি সময় থাকে আদ্রিয়ান নিলয়ের সাথে কিন্তু আজ সে চলে এসেছে আহিকে নিয়ে।
আপাতত এই মুহূর্তে তাঁর ফিরে আসার মূূল উদ্দেশ্য হলো আহিকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া। সময়টা তখন প্রায় বিকেল গড়িয়ে গেছে। অল্প স্বল্প রোদ্দুরের আনাগোনা আছে তখন। একটা সুন্দর ব্রিজ ক্রস করে যাচ্ছে ওঁরা। হঠাৎই ব্রিজের ওপর কিছু একটার নজর পড়তেই আহি বলে উঠল,

‘ থামান থামান।’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ানও গাড়ি থামিয়ে বলে উঠল,

‘ এখানে?’

‘ হুম।’

উওরে আদ্রিয়ান কিছু বলার আগেই আহি গাড়ি থেকে নেমে পড়লো। তাঁরপর দৌড়ে চলে যায় সে এক ঝালমুড়ি ফুচকার দোকানে। ঝালমুড়ি ফুচকা এগুলো আহির মোস্ট ফেবারিট। আহি কয়েক-কদম এগিয়েও আবার পিছনে ফিরে এসে বললো আদ্রিয়ানকে,

‘ আপনি খাবেন ঝালমুড়ি ফুচকা?’

এতক্ষণ পর আহির গাড়ি থেকে নামার আসল কারন বুঝতে পেরে বললো আদ্রিয়ান,

‘ তুমি এই কারনে গাড়ি থেকে নামলে?’

‘ হুম আপনি খাবেন কি না বলুন?’

‘ আমি ওগুলো খাই না।’

‘ আরে খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে।’

‘ তোমার খেতে ইচ্ছে করছে তুমি খাও আমি ওসব খাই না।’

উওরে আহি বেশ কয়েকবার জোর করলো আদ্রিয়ানকে। কিন্তু আদ্রিয়ান শোনে নি, শেষমেশ বাধ্য হয়ে আহি একাই চলে গেল।

আহি দাঁড়িয়ে আছে ফুচকার দোকানের সামনে। আর গাড়ি ভিতর বসে আহিকে দেখছে আদ্রিয়ান। সে বুঝতে পেরেছে নিজের অজান্তেই আহিকে সে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু এটা আহিকে জানাবে কি করে আর তাঁর থেকেও বড় কথা আহির রিয়েকশন কেমন হতে পারে যদিও আহি নীরবকে ভালোবাসে। হঠাৎই আকাশ পথে সাদা বর্ন ত্যাগ করে কালো মেঘে ডুবে গেল। হুট করেই আবহাওয়ার এই পরিবর্তন যেন চমকে দিলো আহি আদ্রিয়ানকে। আদ্রিয়ান আর বেশি না ভেবে চটজলদি গাড়ি থেকে নেমে চলে যায় আহির কাছে। আহি তখনও খাচ্ছিল। আদ্রিয়ান আহির সামনে গিয়ে বললো,

‘ এখান থেকে চলো আহি বৃষ্টি নামবে?’

‘ বৃষ্টি নামলে কিছু হবে না এমনিতেও বৃষ্টি আমার খুব ভালো লাগে।’

‘ পাগল হলে নাকি এই বিকেল বেলা তুমি বৃষ্টিতে ভিজবে ঠান্ডা লেগে জ্বর আসবে।’

‘ কিছু হবে না।’

এরই মধ্যে বলতে না বলতেই মেঘ চিঁড়ে এক ফোটা দুটো করে বৃষ্টি পড়তে লাগলো। বৃষ্টির ফোঁটা গায়ে লাগতেই আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ এখান থেকে চলো আহি?’

‘ এখনো একটা ফুচকা আছে তো এটা খেয়ে নি তারপর যাবো।’

‘ ততক্ষণে পুরোপুরি বৃষ্টি নেমে যাবে আহি।

বলেই ফুচকার প্লেটটা আহির হাত থেকে নিয়ে আদ্রিয়ান দিল ফুচকাওয়ালার কাছে। তারপর বললো

‘ কত হয়েছে?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে ফুচকাওয়ালাও বলে উঠল,

‘ ৪০ টাকা।’

আদ্রিয়ান টাকা দিতে যাবে সেই মুহূর্তে আহি বলে উঠল,

‘ কি করছেন কি আপনি এটার টাকা আপনাকে দিতে হবে না আমি দিচ্ছি।’

বলেই নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করলো আহি।’

‘ তোমাকে টাকা দিতে হবে না আমি দিচ্ছি?’

‘ প্রত্যেক বার আপনি দিবেন কেন?’

‘ প্রত্যেক বার কোথায় একবারই তো।’

বলেই ফুচকাওয়ালাকে টাকা দিয়ে দিলো আদ্রিয়ান। টাকা দেওয়া শেষ হতেই বললো আদ্রিয়ান,

‘ এখন চলো।’

উওরে আহিও কিছু বলতে না পেরে চললো আদ্রিয়ানের পিছন পিছন।’

ওঁরা মাঝপথে যেতেই তুমুল বেগে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আদ্রিয়ান তো চমকে উঠে বললো,

‘ বলেছিলাম বৃষ্টি নামবে।’

‘ একটু নামলে কি হয়েছে চলুন বৃষ্টিতে ভিঁজি।’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান অবাক হয়ে বললো,

‘ হোয়াট?’

‘ আপনি এতো হোয়াট হোয়াট করেন কেন বলুন তো চলুন ওখানে গিয়ে বৃষ্টিতে ভিজি ভালো লাগবে।’

‘ না না বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লাগবে।’

‘ কিছু হবে না চলুন তো।’

বলেই আদ্রিয়ান হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল আহি। মুক্ত আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টিতে পুরো রাস্তা জুড়ে লাফিয়ে ভিজতে লাগলো আহি আর আদ্রিয়ান।’ এই প্রথম হয়তো এভাবে মাঝরাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে আদ্রিয়ান। এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে তাঁর ভিতর।’

____

সেদিনের পর মাঝখানে কেটে তিনদিন। এই তিনদিনে কোনো দেখা হয় নি আহির সাথে আদ্রিয়ানের। আর এই দেখা না হওয়াতে আদ্রিয়ানের যেন আরো বেশি বুঝতে সুবিধা হলো সে ভালোবাসে আহিকে। এই কয়েক দিনে পাল্টে গেছে আরো কিছু, যেমন সোহানকে নিয়ে গতকালই বাড়ি চলে এসেছে রিনিরা। আর নীরব অথৈর দিকে, লিলির বিয়ে হয়ে শশুর বাড়ি চলে গিয়েছিল দু’দিন আগেই। মাঝখানে বউভাতও হয়ে গেছে। নীরব আজ চলে আসবে ঢাকাতে। আর যাওয়ার আগে হয়তো শেষ বারের মতো কথা বলবে অথৈর সাথে। আর অথৈ এই কয়েক দিন নিজেকে যতটা পেরেছে দূরে দূরে রেখেছে নীরবের কাছ থেকে। কষ্ট তাঁরও হচ্ছিল ভীষণ। যতই হোক ভালোবাসা তো।’

.

অফিসে বসে আছে আদ্রিয়ান। তাঁর পাশেই বড় বড় চোখ নিয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে নিলয়। আজ দু’দিন যাবৎ আদ্রিয়ানের কান্ডকারখানা দেখছে কিছু বলবে বলবে তাও সুযোগ করে বলতে পারছে না। কিন্তু আজ সে জিজ্ঞেস করেই ছাড়বে। নিলয় আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তোর হয়েছে কি বলতো?’

‘ আমার আবার কি হবে?’ (ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

‘ আমাকে কি ফিটার খাওয়া শিশু পেয়েছিস নাকি?’

উওরে শুকনো হাঁসলো আদ্রিয়ান। আদ্রিয়ানের হাসি দেখে বলে উঠল নিলয়,

‘ একদম হাসবি না সেদিন যখন আমি আহিকে অফিসে নিয়ে আসলাম তখন কি রাগ করলি আর তুই কি না নিজেই সেদিন আহিকে নিয়ে আসলি ব্যাপারটা কি বলতো।’

‘ একটা কথা বলবো তোকে?’

‘ তোর কথা শোনার জন্যই তো দাঁড়িয়ে আছি।’

‘ কথাটা শোনার পর তোর মাথা ঘুরালে আমার দোষ নেই কিন্তু?’

‘ মানে?’

‘ মানে এটাই আই এম ইন লাভ নিলয়?’ আই এম ইন লাভ?’

এবার যেন সত্যি সত্যি নিলয়ের মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো। চোখ বড় বড় করে বললো সে,

‘ কি?’

‘ হুম আর আজই আহিকে প্রপোজ করবো বুঝলি?’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে নিলয় যেন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ধপাস করে নিচে পড়ে গেল সে। নিজের কানকে যেন বিশ্বাস করতে পারছে না নিলয়। এই মুহূর্তে একটা বাংলার ছবির ডায়লগ খুব করে মাথা আসছে নিলয়ের,

‘ আমি বিশ্বাস করি না, আমি বিশ্বাস করি না।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৩৮
_________________

আচমকা মুখে পানি পড়তেই ধড়ফড়িয়ে লাফ মেরে উঠলো নিলয়। আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো সে এই মুহূর্তে সে কোথায় আছে। সামনেই আদ্রিয়ানকে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল নিলয়,

‘ আমি এখন কোথাই আছি দোস্ত?’

‘ কোথায় আবার কোমায়?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে ধারাম করে শোয়া থেকে উঠে বসলো সে তাঁরপর চোখ বড় বড় করে বললো নিলয়,

‘ কি?’

‘ তোর মাথা উঁঠ তাড়াতাড়ি এভাবে পড়ে গেলি কেন?’

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে কিছুক্ষন আগের আদ্রিয়ানের বলা কথাগুলো মনে করতে লাগলো নিলয়। পরক্ষণেই আদ্রিয়ান আহিকে ভালোবাসে ব্যাপারটা মনে পড়তেই অবাক দৃষ্টিতে আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ দোস্ত তুই কি সত্যি সত্যি আহিকে ভালোবাসিস।’

‘ হুম।’

নিলয় যেন নিজের কানকে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না। নিলয় আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ প্লিজ দোস্ত মজা করিস না আমি হার্ট অ্যাটাক করমু নাইলে।’

‘ আরে মজা করবো কেন আমি সত্যি আহিকে ভালোবাসি ওকে বিয়ে করতে চাই। তুই শুধু বল ওকে প্রপোজ কিভাবে করবো?’

আদ্রিয়ানের এবার কথা আস্তে আস্তে বসা থেকে আদ্রিয়ানকে ধরে উঠে দাঁড়ালো নিলয়। তারপর বললো,

‘ তুই চিন্তা করিস না আমি এক্ষুনি আহিকে ধরে নিয়ে আসছি তারপর দুধ কা দুধ আর পানি কা পানি হয়ে যাবে। আর তখনই তুই ওকে প্রপোজ করে ফেলিস।’

বলেই আদ্রিয়ানের হাত ছেড়ে দিয়ে বুকে হাত রেখে দ্রুত বেরিয়ে গেল সে আদ্রিয়ানের রুম থেকে। আর আদ্রিয়ান জাস্ট অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো নিলয়ের যাওয়ার পানে। সে বেশ বুঝতে পেরেছে নিলয় অবাকের চেয়েও অবাক হয়েছে তাঁর কথা শুনে। আদ্রিয়ান হাল্কা হেঁসে গিয়ে বসলো তাঁর চেয়ারে। তারপর অফিসের সব ফাইলগুলোকে দেখতে লাগলো সে। সাথে মনোযোগ দিলো তাঁর কাজে।’

বেশ কিছুক্ষন পর,

হঠাৎই বাহির থেকে কিছু আওয়াজ কানে আসতেই আদ্রিয়ান তাঁর কাজ রেখে চুপ করে বসে রইলো অল্পক্ষন। এরই মধ্যে বাহিরের আওয়াজ আস্তে আস্তে ভাড়ি হতে লাগলো যেমন কেউ একজন বলছে,

‘ কি করেছেন কি আপনারা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? এইভাবে বলা নেই কওয়া নেই ভার্সিটি থেকে তুলে নিয়ে এসেছেন কেন আমায়? আর আদ্রিয়ানের অফিসে কেন নিয়ে এসেছেন? আরে ছাড়ুন বলছি আমায়? আমি কিন্তু আপনাদের নামে কেস করবো…

এইরকম আরো হাজারো কথা বলতে লাগলো আহি। কিন্তু ওর কথা আপাতত কেউ শুনছে না। কিছুক্ষন আগে বেশ স্বাভাবিক ভাবেই সবার সাথে বসে ভার্সিটিতে ক্লাস করছিল সে। ক্লাস শেষ হতেই টিচার বের হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যে একদল কালো কোট প্যান্ট পরিধিত কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে ভিতরে ঢুকলো কিছু লোক সাথে দুজন লেডিও ছিল। সবাই বেশ অবাক চোখেই তাকিয়ে রয়েছিল ওদের দিকে। আহি তখন কেবল তার খাতা কলমগুলো ব্যাগের ভিতর ঢুকাচ্ছিল এমন সময় সব লোকগুলো তাঁর সামনে এসে বললো,

‘ আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে ম্যাম?’

হুট করেই কিছু মানুষের কথা কানে আসতেই আহি তাকালো তাঁদের দিকে। সামনেই একই রকম পোশাক পড়া এতগুলো মানুষকে দেখে অবাক হয়ে বললো তাঁরা,

‘ আপনারা কারা আর আমায় কোথায় যেতে বলছেন?’

‘ সেটা আপনি গেলেই জানতে পারবেন ম্যাম এখন চলুন আমাদের সাথে?’

‘ এখন আমি কোথাও যাবো না আমার কাজ আছে?’

বলেই নিজের ব্যাগপত্র গুছিয়ে বেরিয়ে যেতে নিয়েছিল সে। আহিকে যেতে দেখে কালো কোট পরিধিত লোকগুলোর একজন লোক সেই লেডি দুটোকে ইশারা করলো। সাথে সাথে তাঁরা গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা শুরু করলো আহিকে। আহি তো তাদের কাজে চরম অবাক। পুরো ক্লাস রুমের স্টুডেন্টরাই জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রয়েছিল আহি আর বাকি সবার দিকে। আর সেই থেকেই আহি চেঁচিয়ে চলেছে তাঁদের ওপর কিন্তু কেউ আহির কোনো প্রশ্নের উত্তর দেয় নি।’

বর্তমানে,

আহির কথাগুলোকে টোটালি ইগনোর করে সেই লেডি দুজন আহিকে কোলে নিয়ে এসে সোজা গিয়ে ঢুকালো আদ্রিয়ানের রুমে।’

হুট করেই দরজার কাছে কারো উপস্থিতি টের পেতেই আদ্রিয়ান তাকালো সামনে। সত্যি সত্যি সামনে আহি আর তাঁর গার্ডগুলোর কাজ দেখে চোখ বড় বড় হয়ে যায় তাঁর। সে সত্যি ভাবে নি নিলয় সত্যি সত্যি আহিকে এইভাবে তুলে নিয়ে আসবে।’

অন্যদিকে সেই লেডি দুজন আহিকে আদ্রিয়ানের সামনে থাকা চেয়ারে বসিয়ে দিল। তারপর বললো,

‘ আমরা নিলয় স্যারের কথা মতো ওনাকে নিয়ে এসেছি বস?’

‘ তাই বলে এইভাবে?’

‘ আসলে উনি আসতে চাইছিলেন না আর নিলয় স্যার বলেছিল উনি যদি আসতে না চান তাহলে আমরা যেন ওনাকে তুলে নিয়ে আসি তাই আর কি।’

‘ ঠিক আছে ঠিক আছে যাও তোমরা।
বলেই আদ্রিয়ান নিজের ফোনটা বের করে ফোন করলো নিলয়কে।’

আর এদিকে আদ্রিয়ানের কথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে স্যার।’

বলেই তাঁরা চলে গেল। কিছুটা বিষন্নতা, সাথে কিছুটা রাগী লুকিং নিয়ে তাকিয়ে আছে আহি আদ্রিয়ানের দিকে। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তাঁর এই মুহূর্তে। আহিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্রিয়ানও নিলয়কে ফোনে ‘এখানে আসার কথা বলে’ আহির দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ তুমি এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন?’

‘ তাকিয়ে থাকবো না তো কি করবো এটা কি করলো আপনার লোকেরা ভরা ভার্সিটির সামনে দিয়ে তুলে নিয়ে আসলো আমায়। সবাই কি ভাবলো বলুন তো। আর আমাকে এইভাবে ধরেই বা এনেছেন কেন?’

আহির কথা আমি আদ্রিয়ানও হতাশা ভরা কন্ঠ নিয়ে বলে উঠল,

‘ বিশ্বাস করো আহি আমি কিছুই করি নি যা করার সব ওই নিলয় করেছে। ও আসুক তারপর ওর সাথেই কথা বলে নিও তুমি।’

.

এরই মাঝে এক প্রকার দৌড়ে এসে রুমে ঢুকলো নিলয়। নিলয় এতটাই ঝড়ের গতিতে আসলো যে আদ্রিয়ান আহি দু’জনেই প্রায় চমকে উঠেছিল। নিলয় হতভম্ব হয়ে আহির সামনে এসে বললো,

‘ তুমি এসেছো আহি খুব ভালো হয়েছে এখনই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

নিলয়ের কথা শুনে আহি বেশ অবাক হয়ে বললো,

‘ কি পরিষ্কার হয়ে যাবে?’

আহির কথা শুনে নিলয় বলে উঠল,

‘ হুম বলবো তবে আমি নই আদ্রিয়ান।’

নিলয়ের কথা শুনে আহিও তাকালো আদ্রিয়ানের দিকে। আর আদ্রিয়ান তো নিলয়ের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো আহি নিলয়ের দিকে। এখন কি করবে সে সত্যি সত্যি তবে এখন আহিকে প্রপোজ করতে হবে তাঁকে?”– ভেবেই৷ শুকনো ঢোক গিললো আদ্রিয়ান।’

_____

রৌদ্রময়ী দুপুরে খোলা আকাশের নিচে, বড় একটা আম গাছের তলার পাশে থাকা বেঞ্চে বসে আছে অথৈ। চোখে মুখে বিষন্নতার ছাপ তাঁর, এই কয়দিনের বিয়ে, হুল্লোড়, আনন্দ গেল কিন্তু এর কোনো কিছুই যেন অথৈকে খুশি করতে পারলো না। শুধু একটা কারনে সে যাকে ভালোবাসে সেই নীরব বলে। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো অথৈ। তাঁর সামনেই দিয়েই বয়ে চলছে একটা নদী, আর নদীতে বয়ে চলছে ঢেউ। অথৈর দৃষ্টি আপাতত সেদিকেই। অথৈ এই মুহূর্তে সেই আম গাছটার নিচেই বসে আছে যে আম গাছটার সামনে দিয়েই নীরব তাঁর হাত ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এখান থেকেই তাঁর প্রথম অনুভূতি শুরু হয়েছিল। আজও গাছে আম আছে, কিন্তু সেই আম পাড়ার মানুষগুলো নেই। কারন সবাই বিজি এখন। সময়ের সাথে সাথে যেন সবকিছুই বদলে যায়। আশেপাশের সব জায়গাতে এমনি নদীর মাঝেও রোদ্দুরেরা চিক চিক করছে শুধু এই বড় আম গাছটার নিচেই একটু ছাউনি পড়েছে। সাধারণত আহির এখানে বসে থাকা কারন দুটো এক এখন নীরব চলে যাবে যেটা সে নিজ চোখে এই মুহূর্তে দেখতে চায় না আর দুই তাঁর বড্ড মন খারাপ। তাঁরাও চলে যেত আজ কিন্তু চাচা চাচির জোরাজোরিতে থেকে গেল কিন্তু কাল সকালে তাঁরাও পাড়ি জমাবে নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে। হাজারো কথা মাথায় নিয়ে চুপচাপ বসে আছে অথৈ। এমন সময় অথৈর ভাবনার মাঝে ওর পাশে এসে বসলো নীরব তাঁরপর বললো,

‘ এখানে একা বসে আছো কেন কারো জন্য অপেক্ষা করছো বুঝি?’

হুট করেই নীরবের কন্ঠ শুনে হকচকিয়ে উঠলো অথৈ। পাশ ফিরে তাকাতেই সত্যি সত্যি নীরবকে দেখে শীতল কণ্ঠে বললো সে,

‘ আপনি এখনো যান নি?’

‘ এই তো এখনই চলে যাবো তবে ভাবলাম যাওয়ার আগে তোমার সাথে লাস্ট বারের মতো দেখা আর কথা বলে যাই।’

‘শেষ বারের মতো’ কথাটা কানে বাজতেই যেন বুকটা কেঁপে উঠলো অথৈর। জবে থেকে অথৈ জানতে পেরেছে যে যাকে ভালোবাসে সেই নীরব তবে থেকেই যেন একটু একটু করে দূর্বল হয়ে পড়েছে অথৈ নীরবের উপর। ভালোবাসাটা তো আগেই থেকেই ছিল তাই সেটা যেন বেশি করে হতে লাগলো আরো। অথৈ মানতে না চাইলেও এটাই সত্যি সে ভালোবাসে নীরবকে।’

‘অথৈর ভাবনাগুলোর মাঝেই সামনের আম গাছটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল নীরব,

‘ এ এইটা সেই আম গাছটা না যেখান থেকে তোমায় নিয়ে দৌড়ে ছিলাম।’

নীরবের কথা শুনে অথৈ ছলছল চোখে নীরবের দিকে তাকিয়ে বললো,

‘ আপনার মনে আছে?’

‘ আরে মনে থাকবে না কেন?’ তবে মিথ্যে বলবো না আমার এই গাছটা দেখেই জাস্ট মনে পড়লো।’

‘ওহ।’

অথৈর কথা শুনে নীরব জোরে এক নিশ্বাস ফেলে বলে উঠল,

‘ আমি জানি তুমি হয়তো আমায় কখনোই ভালোবাসবে না অথৈ। আমার মনে পড়েছে সেদিন ভার্সিটি বসে তুমি বলেছিলে তুমি নাকি অন্য কাউকে ভালোবাসো। আসলে আহির কথা শোনার পর থেকে ওই জিনিসটা আমার মাথা থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। কালকেই হুট করে মাথায় আসলো কথাটা। আর তখন থেকেই বুঝতে পেরেছি আমি অকারণে তোমাকে ডিসটার্ব করা ঠিক হবে না। আর আমি যেমন তোমায় ভালোবাসি বলে আহির ভালোবাসাকে মেনে নেই নি, তেমন তুমিও অন্য কাউকে ভালোবাসো বলে আমায় মেনে নেও নি। আর হয়তো নিতেও পারবে না। তবে সেসব নিয়ে আপাতত আমার খোপ নেই যা হয়েছে হয়তো ভালোর জন্যই হয়েছে। যাইহোক এখন আমায় যেতে হবে। আর হ্যাঁ চাইলে ঢাকাও বেক করতে পারো যতই হোক সামনে তোমার এক্সাম আছে। আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমি আর কখনোই তোমায় ডিসটার্ব করবো না। অবশেষে বলবো,

ভালো থেকো তোমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে।’

বলেই উঠে দাঁড়ালো নীরব। কথাগুলো খুব ইজিভাবে বললেও এখন খুব কষ্ট হচ্ছে নীরবের। যতই হোক অথৈকে সে মন থেকে ভালো বেসেছিল। এসব ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছিল নীরব।’

অন্যদিকে, অথৈর যেন নীরবের প্রতিটা কথা ধারালো চাকু বুকের ভিতর ঢুকিয়ে দেওয়ার মতো আঘাত করছিল। ভয়ংকর ভাবে কষ্ট হচ্ছে তার। কি একটা অদ্ভুত ব্যাপার সে যাকে ভালোবাসে সেও তাঁকে পাগলের মতো ভালোবাসে অথচ তাদের মধ্যে কতটা দুরত্ব। অথৈ ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো নীরবের যাওয়ার পানে এই মুহূর্তে তার ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে নীরবকে জড়িয়ে ধরে বলতে,

‘ প্লিজ আপনি যাবেন না, আমিও যে আপনায় ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার মানুষটা যে আপনিই।’

কিন্তু আফসোস এমনটা সে করতে পারে না কারন এতে যে তাঁর প্রান প্রিয় বন্ধুর সাথে বেইমানি করা হয়। নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে দু’ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো অথৈর। আর সামনের চলে যাওয়া ব্যক্তিটিও যেন পুরো বাকরুদ্ধ হয়ে এগিয়ে চলছে ভিতরটা জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে তাঁর। কিন্তু বাহিরে সেটা বের করতে নারাজ।’

____

বেশ আগ্রহ নিয়েই তাকিয়ে আছে আহি নিলয় আদ্রিয়ানের মুখের দিকে। কারন আদ্রিয়ান অনেকক্ষণ যাবৎই আহিকে কিছু বলার চেষ্টা করছে কিন্তু বলতে পারছে না। আদ্রিয়ানকে এখনো চুপচাপ বসে থাকতে দেখে নিলয় এগিয়ে গেল আদ্রিয়ানের কাছে। তারপর কড়া গলায় বললো,

‘ কি হলো তুই বলছিস না কেন?’

‘ তুই এমন কেন আমি তোকে বলেছি আমি আহিকে প্রপোজ করবো কিন্তু এইভাবে নয়।’

‘ ওতোশতো বুঝি না তাড়াতাড়ি ওঁকে প্রপোজ কর দোস্ত না হলে আমার হয়ে যাবে?’

নিলয়ের কথা শুনে চোখ বড় বড় করে বললো আদ্রিয়ান,

‘ কি?’

‘ হার্ট অ্যাটাক।’

দুজনকে এইভাবে ফুসফুস করতে দেখে বলে উঠল আহি,

‘ আপনারা কি কিছু বলবেন নাকি আমি যাবো, আমার তাড়া আছে।’

‘ হুম যাও (আদ্রিয়ান)

আদ্রিয়ানের কথা শুনে নিলয় বলে উঠল,

‘ না না তুমি যেও না আহি আর একটু অপেক্ষা করো ও এক্ষুনি বলবে, বল বলছি (আদ্রিয়ানের দিকে তাকিয়ে)

নিলয়ের কথা শুনে আহিও বলে উঠল আদ্রিয়ানকে,

‘ আপনিও বা কিছু বলছেন না কেন বলে ফেলুন না তাড়াতাড়ি কি বলতে চান আমায়? আমিও শুনতে চাই তো?’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ানও বলে উঠল,

‘ তুমি সত্যি শুনতে চাও আমার কথা?’

‘ অবশ্যই শুনতে চাই। তাই না হলে বসে আছি এখনো, বলে ফেলুন তাড়াতাড়ি।’

আহির কথা শুনে আদ্রিয়ান একপলক নিলয়ের দিকে তাকিয়ে আহির চোখে চোখ রেখে বললো,

‘ তাহলে বলি?’

‘ হুম বলুন।’

আদ্রিয়ান আহির দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল,

‘ আহি

‘ হুম

‘ আমি আসলে আমি তোমায় ভা

‘ হুম আপনি আমায়

‘ আমি আসলে আমার জামাকাপড় ফেরত চাই। (অস্থির হয়ে)

আদ্রিয়ানের এবারের কথা শুনে আহি নিলয় দুজনেই আদ্রিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে একসাথে বলে উঠল,

‘ কি?’

ওদের মুখের ‘কি’ শুনে আদ্রিয়ান প্রচন্ড ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠল,

‘ হুম তুমি যে শ্রীমঙ্গল বসে আমার জামাকাপড় নিয়েছিলে সাথে সেদিন রাতে বৃষ্টির মধ্যে তোমায় আমায় বাসা নিয়ে যে জামাকাপড়গুলো দিয়েছিলাম সেগুলো সব আমার ফেরত চাই।’

আদ্রিয়ানের কথা অবাক হতাশা দুটো নিয়েই বললো আহি,

‘ লাইক সিরিয়াসলি আপনি আপনার জামাকাপড়ের জন্য আমায় এইভাবে তুলে এনেছেন?’

উওরে আদ্রিয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। ঘেমে পুরো একাকার হয়ে গেছে সে। অন্যদিকে আদ্রিয়ানের কথা আর অবস্থা দেখে নিলয় কপালে হাত দিয়ে বললো,

‘ বুঝতে পারছি এ শালা সত্যি ভালোবাসায় পাগল হয়ে গেছে।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..

#বাবুইপাখির_অনুভূতি🕊️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম🕊️
— পর্বঃ৩৯
_________________

নিরাশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে আহি আদ্রিয়ানের মুখের দিকে। তাঁর ঠিক হজম হচ্ছে না আদ্রিয়ানের কথাটা। তারপরও বেশি না ভেবে বলে উঠল আহি,

‘ ঠিক আছে আমি আপনার জামাকাপড় ফেরত দিয়ে দিবো। এখন তো আমি হসপিটালে যাবো, হসপিটাল থেকে ফিরে এসে আপনায় দিয়ে যাবো আপনার অফিস কয়টা পর্যন্ত খোলা থাকে।’

‘ হুম ১০ঃ০০ টা (নিলয়)

‘ ঠিক আছে আমি ৯ঃ৩০ টার সময় এসে দিয়ে যাবো। তাহলে আজ আসি পড়ে দেখা হবে।’

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় আহি। আর আদ্রিয়ান জাস্ট হাবলার মতো তাকিয়ে থাকে আহির দিকে। কিছুক্ষন আগে সে কি কি বললো সেসব ভাবতেই গিলটি ফিল হচ্ছে তাঁর। ছিঃ ছিঃ শেষে কিনা নিজের জামা কাপড় ফেরত চাইলো। ওইসময় অস্থিরতার কারনে ফট করেই ওসব বলে ফেলে আদ্রিয়ান। আহি যেতেই নিলয় এগিয়ে আসলো আদ্রিয়ানের দিকে তারপর বললো,

‘ তুই শালা জামাকাপড়গুলো এনে ইস্তিরি করে আলমারিতে গুছিয়ে রাখিস, পাগল কোথাকার?’

বলেই হন হন করে বেরিয়ে গেল নিলয়। আর আদ্রিয়ান সে একই ভঙ্গিতে বসে রইলো। আদ্রিয়ান নিজের কাজে নিজেই লজ্জিত কি বলে ফেললো সে?’

____

আদ্রিয়ানের অফিস থেকে বেরিয়ে আনমনেই হাঁটছে আহি। তাঁর এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আদ্রিয়ান তাঁর জামাকাপড় ফেরত চাওয়ার জন্য এইভাবে লোক দিয়ে তুলে আনলো। আনমনেই বলে উঠল সে ‘উদ্ভুত তো।’

ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় ৩টার কাছাকাছি বেজে গেছে। আহি আনমনেই এগিয়ে চললো তাঁর গন্তব্যের দিকে। এমন সময় তাঁরই সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল দুজন কলেজ পড়ুয়া মেয়ে। আর ওদের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তিনজন বখাটে ছেলে একজন বিঁড়ি খাচ্ছিল আর দুজন পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। হঠাৎই সামনের ছেলেগুলো কলেজ পড়ুয়া মেয়েদের দেখে বলে উঠল,

‘ হেই সুন্দরীরা একা একা যাচ্ছো কোথায় সঙ্গে আসবো নাকি?’

ছেলেগুলোর কথা শুনে ভয়ের চোটে মাথা নিচু করেই হেঁটে গেল মেয়েগুলো। আহির ভীষণ রাগ হলো ছেলেগুলোর কথা শুনে। কিন্তু আপাতত সেই রাগটাকে দমিয়ে রেখে চুপচাপ হেঁটে যেতে লাগলো সে ছেলেগুলোর পাশ দিয়ে। এমন সময় বিঁড়ি খাওয়া ছেলেটি আহিকে দেখে বলে উঠল,

‘ কি মাল দেখেছিস? ভাবছি এই মালটাকে বিয়ে করবো মোহন?’

ছেলেগুলোর মুখে নিজের সম্পর্কে এত বড় বাজে মন্তব্য শুনে গা জ্বলে উঠলো আহির। ভেবেছিলো কিছু না বলেই চলে যাবে কিন্তু ছেলেগুলো যা বললো তা শুনে আহির মাথায় যেন আগুন জ্বলে উঠলো। আহি দু’পা সামনে রেখেও আবার দাঁড়িয়ে পিছনে এগিয়ে আসলো তাঁরপর ছেলেগুলোর মুখোমুখি হয়ে বললো,

‘ কি বললেন আপনি?’

‘ কেন ভালো লেগেছে বুঝি তাই আবার শুনতে ইচ্ছে করছে?’

‘ লজ্জা করে না রাস্তাঘাটে দাঁড়িয়ে এইসব অসভ্যপনা করতে।’

‘ না লজ্জা করে না বেবি?’

‘ একদম বাজে কথা বলবেন না তাহলে কিন্তু?’

‘ ও বাবা এ দেখি ভয় দেখাচ্ছে। দুলাল,মোহন আমি তো খুব ভয় পাইছি।’

বলেই হাসতে লাগলো তিনজন তারপর বললো,

‘ তা তুমি কি করবে শুনি মারবে নাকি আমায়?’

রাগ হচ্ছে আহির ভীষণ রাগ। আহি প্রচন্ড রাগ নিয়েই বলে উঠল,

‘ দরকার পড়লে তাই করবো।’

‘ ও বাবা তাই নাকি মারো মারো দেখি তো তোমার কত সাহস মারো আমায়।’

বলেই নিজের গালটা এগিয়ে দিল আহির দিকে। ছেলেটার কাজ দেখে আহির রাগ যেন সপ্তম আকাশে উঠে গেছে। আহিকে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আবারো বলে উঠল ছেলেটি,

‘ কি হলো সুন্দরী মারছো না কেন, মারো তোমার সাহস থাকলে মারো আমায়?’

ছেলেটার এবারের কথা শুনে আহি যেন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ঠাস করে ছেলেটার গালে থাপ্পড় দিয়ে বসলো। আহির কাজ দেখে মোহন,দুলাল যেন অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গেছে তাঁরা ভাবতেই পারে নি আহি সত্যি মাহিনের গালে থাপ্পড় দিয়ে বসবে। আর আহির কাজে মাহিনও বেশ চমকে উঠেছে। পরক্ষণেই রাগে মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো তার। অন্যদিকে আহি ছেলেটির গালে থাপ্পড় দিয়েই জোরে জোরে বলতে শুরু করলো,

‘ কি দেখেছিস সাহস আছে কিনা, রাস্তাঘাটে বের হলেই কি মেয়েদের তোর নিজের বাড়ির প্রোপার্টি মনে হয়। অসভ্য ছেলে বলেই আরেক গালে থাপ্পড় দিয়ে বসলো আহি। আহির কাজে ছেলেটি আহির দিকে তেড়ে আসবে যাবে তাঁর আগেই আহির চিল্লাচিল্লি শুনে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে আসতে লাগলো তাদের দিকে। আশেপাশে লোকজনকে আসতে দেখে দুলাল, মোহন ভয় পেয়ে মাহিনের হাত ধরে বললো,

‘ এখান থেকে চল না হলে পাবলিক ধরে মারবে মাহিন?’

ওদের কথা শুনে মাহিন রেগেমেগে বলে উঠল,

‘ তোকে আমি দেখে নিবো,শুধুমাত্র এই লোকগুলোর জন্য বেঁচে গেলি।’

বলেই মাহিন,দুলাল মোহন তিনজনই দৌড়ে পালালো। আর আহি নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে। এরই মধ্যে সেখানে এসে জড়ো হলো আশেপাশের লোকজন আহির দিকে এগিয়ে এসে বললো তাঁরা,

‘ কিছু কি হয়েছে মেয়ে?’

উওরে আহি বললো,

‘ না না কিছু হয় নি।’

বলেই হাঁটা শুরু করলো আহি। রাগ হচ্ছে তাঁর ভীষণ রাগ দুটো চড় মেরেও যেন শান্তি মিলছে না আহির আরও কয়েকটা দিতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো।’

_____

পরন্ত বিকেলে বেলায়, খোলা আকাশের নিচে বড় সবুজের ঘেরা মাঠের মাঝখানে একটা গাছের পাশ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ। তাঁর মূল উদ্দেশ্য হলো রিনিকে প্রপোজ করা। যা আছে ভাগ্যে তাই হবে, তবে প্রপোজ সে আজ করেই ছাড়বে। এইভাবে না বলে নিজের অনুভূতিগুলোকে আর নিজের মাঝে রাখতে পারছে না শুভ। রাতে রিনির চিন্তাতে ঘুম আসে না তাঁর। তাই ভেবে নিয়েছে শুভ আজ সে রিনিকে প্রপোজ করেই ছাড়বে। আর সেই জন্য সকালে সে ফোন করে বলেও দিয়েছে আজ যেন সময় করে বিকেলবেলা তাঁর সাথে দেখা করে রিনি। রিনিও শুভর কথা শুনে এক কথায় রাজি হয়ে যায়। সাধারণত রিনির নাম্বারটা নিয়েছিল শুভ হসপিটালে বসে। একরাশ অস্থিরতা নিয়ে মাঠের এপাশ ওপাশ পায়চারি করছে শুভ৷ কি করে কি বলবে সেটাই ভাবছে সে তবে আজ রিনিকে প্রপোজ করেই ছাড়বে তারপর যা হয় হবে। এই রকম আরো নানা কিছু ভাবছে শুভ আর পায়চারি করছে।’

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো রিনি পরনে তাঁর ওয়াইট টিশার্ট, সাথে এস কালার জিন্স,এস কালার লেডিস জ্যাকেট,চুলগুলো খোলা,হাতে কিছু ব্যাচ,পায়ে সু পড়ে অসাধারণ লাগছে তাঁকে। বেশ আগ্রহ নিয়েই এগিয়ে আসছে সে শুভর দিকে। আজ প্রায় একদিন পর শুভকে দেখবে রিনি। এই একদিন শুভকে না দেখে তাঁর যেন অবস্থা খারাপ। রিনি বুঝতে পেরেছে সেই ইনোসেন্ট মার্কা সহজ সরল পোলাডারে নিজের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে সে। প্রথম ভালোলাগা তাঁর সেদিন শুভর বাড়িতে বসেই হয়েছিল। জ্বরে ঘোরে শুভকে সেবার করার মুহূর্তগুলো, তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকা অনুভূতিগুলো আজও চোখে ভাসে তাঁর। রিনি ভেবেছিল নেক্সট যেদিন শুভর সাথে দেখা হবে তাঁদের তখনই প্রপোজ করে দিবে। আহির মতো মটেও সে ভিতু নয় এসব ব্যাপারে। যদিও শুভ তাঁর ফাস্ট লাভ। এসব ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে চলছিল রিনি। হঠাৎ তাঁর চোখ যায় তাঁর থেকে কয়েককদম দূরে গাছের পাশে উল্টো দিক ফিরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলের দিকে। রিনি বেশ বুঝতে পেরেছে ওটাই শুভ। রিনি মুচকি হেঁসেই এগিয়ে চললো সেদিকে।’

নার্ভাস হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শুভ কি বলবে না বলবে কিছু বুঝতে পারছে না সে। এমন সময় পিছন থেকে বলে উঠল কেউ,

‘ আপনি আমায় আসতে বলেছিলেন?’

ভয়েসটা রিনির বুঝতে পেরে শুভর যেন শরীর কাঁপছে শুরু করলো। নার্ভাস হয়েই পিছন ফিরে শুঁকনো হেঁসে বললো সে,

‘ হুম।’

‘ কি জানি বলবেন বলছিলেন বলে ফেলুন আপনার বলা শেষ হলে আমারও আপনাকে কিছু বলার আছে?’

রিনির কথা শুনে কিছুটা অবাক হয়ে বললো শুভ,

‘ আপনিও কিছু বলবেন আমায়?’

উওরে লাজুক মাখা মুখ নিয়ে হাল্কা হেঁসে বললো রিনি,

‘ হুম আপনি আগে বলুন তাঁরপর আমি বলছি?’

রিনির কথা শুনে হাল্কা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল শুভ,

‘ আমিই আগে বলবো?’

‘ হুম বলুন কোনো সমস্যা নেই।’

‘ আসলে রিনি হয়েছে কি, কথাটা শোনার পর রাগ করবে না প্লিজ?’

‘ ঠিক আছে বলুন তো আগে।’

‘ শুধু হ্যাঁ না উওর দিলেই হবে।’

শুভর এবারের কথা শুনে হেঁসেই বলে উঠল রিনি,

‘ ঠিক আছে।’

‘ আসলে রিনি

বলেই আশেপাশে তাকালো শুভ, না তেমন কেউ নেই ধারে কাছে। শুভকে এদিক সেদিক তাকাতে দেখে বলে উঠল রিনি,

‘ কি হলো বলুন?’

‘ আসলে হয়েছে কি,

বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে শুভ তারপর ফটাফট বলে দেয় সে,

‘ আসলে রিনি আই লাভ ইউ। জানি না কখন কিভাবে তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি কিন্তু বাসি খুব বাসি। তুমি কি আমায় ভালোবাসবে?’

পুরো একশ্বাসে চোখ বন্ধ করে কথাগুলো বলে ফেললো শুভ রিনিকে। আর শুভর কথা শুনে রিনি চোখ বড় বড় করে বললো,

‘ কি?’

মুহূর্তের মধ্যে হাসি ফুটে উঠলো তাঁর। রিনি ভাবে সে কিছু বলার আগেই শুভ তাঁকে বলে দিবে। অন্যদিকে রিনির ‘কি’ শব্দটা শুনতেই বুকটা যেন কেঁপে উঠল শুভর। চোখ বন্ধ করেই আবার বলে উঠল সে,

‘ প্লিজ প্লিজ রাগ করবেন না, আপনি শুধু হ্যাঁ বা না বললেই হবে।’

শুভর ভয়ার্ত মাখা চেহারা দেখে মুচকি হাসলো রিনি। সে বুঝে উঠতে পারে না এই ছেলেটা এমন কেন? রিনি শুভ কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর গালে চুমু দিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

‘ শুনন এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আমিও ভালোবাসি আপনায়।’

হুট করেই গালে কিছুর স্পর্শ পেতেই সাথে রিনির বলা কথা শুনে শুভ চোখ খুলে তাকালো তারপর রিনির দিকে তাকিয়ে বললো সে,

‘ সত্যি আপনিও আমায় ভালোবাসেন।’

উওরে মুচকি হেঁসে মাথা নাড়ালো রিনি। রিনির জবাব শুনে খুশি হয়ে রিনিকে জড়িয়ে ধরতে নিয়েও আবার থেমে গেল শুভ। শুভর কাজে রিনি হেঁসেই গিয়ে জড়িয়ে ধরলো শুভকে তারপর বললো,

‘ এত ভয় পেলে আমার সাথে সারাজীবন কাটাবেন কি করে?’

উওরে শুভও রিনিকে জড়িয়ে ধরে বললো,

‘ ভালোবাসা দিয়ে।’

শুভর কথা শুনে মুচকি হাসে রিনি।’

আকাশটা পুরোই ধবধবে সাদা হয়ে আছে।
মুক্ত আকাশের মাঝখান দিয়ে উড়ে চললো এক ঝাঁক পাখি। সাথে তাদের পাশে থাকা গাছের পাতাগুলো নড়ছে ভীষণ হয়তো তাঁরাও দুজন প্রকাশিত ভালোবাসার মানুষের খুশিতে আনন্দ পেয়ে নেচে উঠেছে।’

______

রাত নয়টা বেজে চল্লিশ মিনিট।’

অফিসে বসে আছে আদ্রিয়ান। মাথা ভরা টেনশন কাজ করছে তাঁর। এখানে বসে থাকার মূল কারণ হলো আহি। আহি বলেছিল এমন সময় সে আসবে। আদ্রিয়ান ভেবে নিয়েছে দুপুরে যেটা বলতে পারে নি সেটা এখন বলে দিবে। আর দেরি করবে না সে। সাথে এটাও বলবে দুপুরে জামাকাপড় ফেরত চাওয়ার জন্য আহিকে তুলে আনে নি নিলয়। অফিস প্রায় ফাঁকা নিলয়ও চলে গেছে কিছুক্ষন আগে। অল্পকিছুক্ষন বসে থেকে আদ্রিয়ানও উঠে দাঁড়ালো হয়তো আহি আজ আসবে না। আদ্রিয়ান ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অফিস থেকে বেরিয়ে গেল। বাহিরে বেরিয়েই সবার আগে আকাশটার দিকে তাকালো সে হাল্কা মেঘাছন্ন হয়ে গেছে। সাথে কিছুক্ষন পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে হয়তো আজও মুষল ধারে বৃষ্টি নামবে। এই বৃষ্টিই যেন আহি আর আদ্রিয়ানকে খুব কাছে নিয়ে আসে। কিন্তু আজ, ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে আদ্রিয়ান তারপর আর বেশি না কিছু ভেবে গিয়ে বসতে নিলো গাড়িতে এমন সময় হাতে ব্যাগ নিয়ে এক প্রকার দৌড়ে আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো আহি আর বললে লাগলো,

‘ যাবেন না আমার জন্য দাঁড়ান?’

হঠাৎই আহির কন্ঠ কানে আসতেই গাড়ির দরজার কাছে হাত দিয়েও আবার সরিয়ে রেখে চোখ ঘুরে ডান দিকে তাকালো সে, সত্যি সত্যি আহিকে তাঁর দিকে আসতে দেখে ঠিক কেমন রিয়েকশন দিবে আদ্রিয়ান ভুলে গেছে। ততক্ষণে আহিও দৌড়ে এসে আদ্রিয়ানের ঠিক সামনে তারপর তাঁর হাতে থাকা ব্যাগটাকে আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,

‘ এই নিন আপনার জামা কাপড়, সরি একটু লেট হয়ে গেল।’

আহিকে দেখে যতটা না খুশি হয়েছিল আদ্রিয়ান কিন্তু মুহূর্তেই আহির মুখের কথা শুনে চলে গেল তাঁর। আদ্রিয়ান আহির হাত থেকে ব্যাগটা নিয়ে বলে উঠল,

‘ তোমায় আমি বাড়ি পৌঁছে দেই,আহি?’

উওরে আহিও বেশি না ভেবে বলে উঠল,

‘ ঠিক আছে।’

____

রাতের ঝাপসালো অন্ধকারের মাঝ দিয়ে এগিয়ে চলছে আদ্রিয়ান আর আহি। আগের তুলনায় আরো বেশি বিদুৎ চমকাচ্ছে হয়তো মিনিট পাঁচেকের মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হবে। আদ্রিয়ানরাও প্রায় চলে এসেছে আহিদের বাড়ির কাছাকাছি। হঠাৎ আদ্রিয়ান বলে উঠল,

‘ আহি,

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহিও বলে উঠল,

‘ হুম বলুন।’

‘ তুমি কি রাগ করেছো?’

‘ ওমা রাগ করবো কেন।’

‘ না আসলে আমি তোমায় কিছু বলতে চাই আহি?’

‘ হুম বলুন।’

‘ হয়েছে কি সত্যি বলতে দুপুরে আমি তোমায় ওই জামাকাপড়ের জন্য..

আর কিছু বলার আগেই আহি বলে উঠল,

‘ হয়েছে হয়েছে এখানে থামুন আর যেতে হবে না। এখান থেকে আমি একাই যেতে পারবো।’

বলেই আহি বেরিয়ে পড়লো। আহিকে বের হতে দেখে আদ্রিয়ানও গাড়ি থেকে বেরিয়ে বললো,

‘ আহি,তোমায় কিছু বলতে চাই আমি?’

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহিও আদ্রিয়ানের দিকে এগিয়ে এসে বললো,

‘ কাল শুনলে হবে না আসলে দেখছেন তো আকাশের কি অবস্থা, যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারে।’

‘ আমার জাস্ট এক মিনিটের কথা।’

‘ ওহ ঠিক আছে বলুন।’

এমন সময় সেই রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে হেঁটে এদিকে আসছিল মাহিন,দুলাল আর মোহন। মাহিন তো আহিকে দেখেই বলে উঠল,

‘ দুপুরের ওই মেয়েটা না এইবার বাগে পেয়েছি?’

বলেই ওদিকে এগিয়ে যেতে নিলো মাহিন। মাহিনকে যেতে দেখে বলে উঠল দুলাল,

‘ কি করছিস কি মেয়েটার সাথে একটা ছেলে আছে দেখেছিস। ছেলেটা যেয়ে নিক।’

বলেই একটা বাড়ির পিছনে লুকিয়ে রইলো ওঁরা। আর দৃষ্টি রাখলো আহির দিকে।

অন্যদিকে আহি অতিআগ্রহ নিয়ে দাঁড়িয়ে আদ্রিয়ানের কথা শোনার জন্য। আদ্রিয়ান এবার আর বেশি না ভেবে বলে উঠল,

‘ আমি জানি না আহি,তুুমি আমার কথাটা শুনে কেমন রিয়েকশন দিবে। বা তুমি উওর কেমন কি দিবে। কিন্তু আমি বলতে চাই, দুপুরে তোমাকে আমার ওই জামাকাপড় ফেরত চাওয়ার জন্য তুলে নেওয়া হয় নি আহি।

আদ্রিয়ানের কথা বেশ অবাক হয়েই বললো আহি,

‘ তাহলে?’

‘ আসলে আহি আই লাভ ইউ। আমি তোমায় ভালোবাসি আহি।’

মুহূর্তের মধ্যে আদ্রিয়ানের কথা শুনে থমকে গেল আহি। এটা কি বললো আদ্রিয়ান। আহির অবস্থা বুঝতে পেরে আদ্রিয়ান আহির হাত ধরে বলে উঠল,

‘ আমি জানি আহি তুমি হয়তো এমনটা আশা করো নি আমার থেকে। আমি এটাও জানি আহি তুমি নীরবকে কতটা ভালোবাসো। তুমি নীরবকে হয়তো এখনো ভুলতে পারো নি আর হয়তো পারবেও না।

এতটুকু বলে হাল্কা থেমে আবারো বললো আদ্রিয়ান,

‘ তোমাকে আমায় ভালোবাসতে হবে না আহি, আমি তোমায় ভালোবাসবো। তুমি শুধু আমার সাথে থাকবে আমি তোমায় বিয়ে করতে চাই। আই নিড ইউ?

আদ্রিয়ানের কথা শুনে আহি ছলছল চোখে আদ্রিয়ানের থেকে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে বললো,

‘ এটা সম্ভব নয় আদ্রিয়ান, এটা অন্যায়।’

বলেই একপ্রকার দৌড়ে সেখান থেকে চলে আহি। আর আদ্রিয়ান হতাশা ভরা চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলো আহির যাওয়ার পানে। এরই মাঝে আকাশ ফেটে মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে আদ্রিয়ান। কেন যেন আহির এভাবে চলে যাওয়াটা তাঁকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। আদ্রিয়ান নিরাশা ভরা চেহারা নিয়েই কিছুক্ষন আহির যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে গিয়ে বসলো গাড়িতে। গাড়ি ঘুরিয়ে কিছুদূর এগোতেই হঠাৎই লুকিং গ্লাসে আহির সামনে কিছু ছেলেকে ডিস্টার্ব করতে দেখে চটজলদি গাড়ি থামিয়ে বের হলো সে।’

অন্যদিকে আচমকাই দুপুরের সেই বখাটে ছেলেগুলোকে সামনে আসতে দেখে কিছুটা আঁতকে উঠল আহি। এমনিতেই আদ্রিয়ানের কথা শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল, তাঁর ওপর এই ছেলেগুলো। আহি ছেলেগুলোর দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল,

‘ আপনারা?’

‘ হুম আমরা বেবি কি ভেবেছিলে এত তাড়াতাড়ি তোমায় ভুলে যাবো,দুপুরের চড়গুলোর শোধ নিতে হবে তো নাকি?’

‘ দেখুন আমি কিন্তু চেঁচাবো?’

আহির কথা শুনে মাহিনও আহির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠল,

‘ চেঁচাও তোমাকে কে বারন করেছে, এমনিতেও এই বৃষ্টির মধ্যে রাতের বেলা কেউ তোমার চেঁচানো শুনতে আসছে না।’

ছেলেটার কাজে হাল্কা ঘাবড়ে গিয়ে আহিও পিছিয়ে যেতে থাকে। কারন সত্যি এখন সে চেঁচালে কেউ শুনতে পারবে না। আহি উল্টোদিক ঘুুরে দিল দৌড়। আহিকে দৌড়াতে দেখে মাহিনও বলে উঠল,

‘ মেয়েটাকে ধর দুলাল, মোহন?’

বলে ওঁরাও তিনজন দিল দৌড় আহির পিছন পিছন। দুকদম এগোতে না এগোতেই মাহিন ধরে ফেললো আহির হাত। তারপর বললো,

‘ কি ভেবেছো এত তাড়াতাড়ি তোমায় ছেড়ে দিবো তা তো হচ্ছে না সুন্দরী?’

‘ প্লিজ আমায় যেতে দিন?’

‘ কেন দুপুরের সেই তেজ এখন হাওয়া হয়ে গেল নাকি?’

এমন সময় সেখানে উপস্থিত হলো আদ্রিয়ান। বেশি কিছু না ভেবেই মাহিনের বুক বরাবরই পা দিয়ে দিলো এক লাথি সাথে সাথে মুখ থুবড়ে পড়লো সে নিচে। হুট করে এমনটা হওয়া আহি মাহিন দুজনেই চমকে উঠেছে। মাহিন তো আদ্রিয়ানকে দেখে বলে উঠল,

‘ শালারে মার দুলাল?’

তারপর শুরু হলো বৃষ্টির মধ্যে তিনজনের মধ্যে মারামারি। আহি প্রচন্ড ঘাবড়ে গেছে এদের কাজ দেখে। হঠাৎই মাহিনকে মারার সময় পিছন থেকে আদ্রিয়ানের মাথায় রাস্তায় পড়ে থাকা একটা মোটা লাঠি দিয়ে বারি মারলো দুলাল। মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু ধোঁয়াশা হয়ে গেল আদ্রিয়ানের। ধপাস করে নিচে পড়ে যেতে নিলো সে। আদ্রিয়ানকে পড়ে যেতে দেখে দুলাল ওরা দৌড়ে পালালো সেখান থেকে। অন্যদিকে হুট করে এমন কিছু হওয়াতে আহি দৌড়ে এসে কান্না ভেঁজা গলায় আদ্রিয়ানকে ধরে বলে উঠল,

‘ আপনি ঠিক আছেন আদ্রিয়ান?’

বলেই আদ্রিয়ানের মাথার নিচ থেকে হাত বের করতে নিজের হাতে রক্ত দেখে বুক কেঁপে উঠলো আহির। আহি ছলছল চোখে আদ্রিয়ান দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে বলল,

‘ আপনার মাথা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে আদ্রিয়ান, আমার জন্য আপনার,

উওরে আদ্রিয়ান আহিকে কিছু বলতে নিয়েও বলতে পারলো না। মুহূর্তে মধ্যে সব অন্ধকার হয়ে গেল তাঁর।’
!
!
!
!
!
#চলবে…..