#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১১
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অয়ন প্রচন্ড রেগে গিয়ে পিছন থেকে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— বাহ! বাহ! এটাকি কোনো শুটিং প্লেসে চলে এসেছি আমি! নাকি আমার রুমেই আছি? বুঝতে পারছি না।
অয়নের ক্রোধ মিশ্রিত কন্ঠস্বর অর্ণব ও অধরার কান এড়িয়ে গেলো না। অর্ণব মাটি থেকে উঠতে উঠতে অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল মৃদু কন্ঠে বলল
— আসলে অয়ন আমি একটা ক্ষমার অযোগ্য ভূল করে ফেলেছি। তার জন্য ভাবীর থেকে ক্ষমা চাচ্ছি। কিন্তু ভাবী আমায় ক্ষমা করছে না।
— ওপস তাই নাকি! তা কি ভূল? আমি কি জানতে পারি?
— না। সেটা বলা যাবে না। এটা আমাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।
অর্ণবের কথা শেষ হতেই অয়নের চোখ জোড়া রক্ত বর্ণ ধারণ করে। অর্ণবের কথার মানে সন্দেহ জনক। অর্ণব অয়নের মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের চোখ জোড়ার দিকে অধরা দৃষ্টিপাত করে বেশ বুঝতে পারছে অয়ন রেগে আগুন হয়ে আছে। অয়নের রাগকে কন্ট্রোল করার জন্য অধরা অর্ণবের পিছন থেকে বলে উঠলো
— আচ্ছা অর্ণব আমি বললাম তো তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছি। তুমি এখন যেতে পারো।
অধরার কথার বিপরীতে অয়ন অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে একটু তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিয়ে বলল
— হ্যাঁ, এখন অর্ণব তুই নিজের রুমে যা। সারা দিন তোর ভাবীর থেকে অনেক ক্ষমা চেয়েছিস। অবশেষে তোর ভাবী রাতের দিকে মান অভিমান ভুলে তোকে ক্ষমা করে দিয়েছে। চলে যা।
অয়নের বাঁকা কথার মধ্যে যথেষ্ট নিম্ন ধরনের চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে। অধরা অয়নের দিকে থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে। অর্ণব অয়নের হাত নিজের হাত জোড়া দিয়ে আলতো করে ধরে বলতে লাগলো
— অয়ন তুমি যা মনে করছিস আসলে কিন্তু তা নয়। আমি….!
কথাটা শেষ করার পূর্বেই অয়ন অর্ণবের শার্টের কলার চেপে ধরলো। অর্ণব অয়নের দিকে একটু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। অয়ন অর্ণবের শার্টের কলার চেপে ধরে প্রচন্ড রেগে ফিসফিসিয়ে অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে বলছে
— সকালে আমার বিপক্ষে কথা বলে তুই আমার চোখে নিজের জায়গাটা কতটা নিচে নামিয়েছিস তা বলে বোঝানো মতো নয়। আমি ইদানিং দেখছি তুই আমার রুমে বেশি যাতায়াত করছিস। তুই তো ভালো ছেলে। গুড বয়ের ওয়ারেন্টি কার্ড। তবে আমায় বল কোন ভালো ছেলে এতো রাত উবদি তার ভাইয়ের বউ এর রুমে বসে থাকে? আমার চরিত্র নিচু মানের। হুম মেনে নিলাম কিন্তু তোর চরিত্রটা এমন কেনো? অন্য পুরুষের নিন্দা তার স্ত্রীর সামনে করে। তাকে উপদেশ দিয়ে বলা ছেড়ে দেও তোমার স্বামীকে। তোমার স্বামী একটা রাস্তার ছেলে। ও হাজার নারীতে আসক্ত পুরুষ। ওকে ছাড়ার সময় চলে এসেছে। এই সব বলে নিজের জায়গা তৈরি করার চেষ্টা কোন চরিত্রে পরে? তোর ভাবীকে তো বুঝিয়েছিস। এই বার আমায় ও বোঝা। ওপস সরি তোদের একান্তে বলা ব্যক্তিগত ব্যাপার আমি জেনে ফেলেছি।
অয়ন কথা গুলো বেশ চিৎকার করে বলছে। রাগে অয়নের হাত পা কাঁপছে। অর্ণব থ মেরে ভয়ে চুপসে গেছে। মুখ দিয়ে কোনো প্রকার শব্দ করতে পারছে না সে। অয়ন অর্ণবকে নিরব দেখে আবারও চিৎকার করে বলতে লাগলো
— কি হলো কথা বলছিস না কেনো? চুপ করে আছিস যে! ওহহহ আমি তো তোর ভাবী না তাই কথা বের হচ্ছে না মুখ থেকে।
অয়ন অর্ণবের মাঝে অধরা চলে আসে। অধরা অয়নকে উদ্দেশ্য করে শক্ত গলায় বলছে
— ওর কলার ধরে আছো কেনো? ও তো ভুল কিছু বলে নি। আজ তুমি ওকে চুপ করিয়ে দিতে পারবে কিন্তু তাদের কে কি করে চুপ করাবে তুমি? যাদের কে নিজের জীবনে
এনে ভালোবাসার নামে ভোগ করেছো? তাদেরকে চুপ করাতে পারলেও নিজেকে নিজের কাছে কি করে প্রকাশ করবে? লজ্জা করবে না তোমার? আজ এ বলছে বলে খুব লাগছে? কাল অন্যরা বলবে। তখন কি করে সহ্য করবে? ও যা বলেছে একদম ঠিক বলেছে। তুমি দিনের পর দিন আমাকে ঠকিয়েছো। আমার বিশ্বাস নিয়ে খেলেছো তুমি। তুমি সত্যি একটা নিচু চরিত্রের মানুষ। তোমাকে ভালোবাসা যায় না। তোমার জন্য সকলের ঘৃণা কাম্য। তুমি ঘৃণা পাবার যোগ্য।
অধরার কথা শেষ হতে না হতে অয়ন অর্ণবের গালে সজোরে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। অর্ণব থাপ্পড় খেয়ে মাথা নিচু করে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অয়নের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অধরা। কি থেকে কি হয়ে গেলো পুরোটা মাথার উপর দিয়ে চলে গেছে তার। অয়ন অর্ণবকে উদ্দেশ্য করে একটু হাফ ছেড়ে বলল
— হয়েছে শান্তি! এটাই তো চেয়েছিস আমাদের মাঝে এমনিতেই দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে আরো দূরত্ব বাড়াতে। হয়েছে তো। এখন আমার চোখের সামনে থেকে বিদায় নে। বিশ্বাস কর আমার হাতে খুন হবার ইচ্ছা না থাকলে এখান থেকে বেরিয়ে যা।
* অয়নের কথা শুনে অর্ণব মাথা নিচু করে তাদের সামনে থেকে বেরিয়ে যায়। অর্ণব চলে যেতেই অয়ন নিজের শার্টটা খুলে সোফার উপর ফেলে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। অধরা শুধু মাত্র একটা কাঠের বোবা পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে থাকে। ফ্রেশ হয়ে এসে অয়ন কিছু না খেয়ে বিছানায় শুয়ে পরলো। অধরা অয়নের পাশে বসে আছে। অয়নের দিকে মুখ ফিরিয়ে তাকানোর বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তার। অধরা ভাবছে আপন মনে “অর্ণবের গায়ে হাত তোলার কি প্রয়োজন ছিলো? ছেলেটা তো নিজের ভূল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাইতে এসেছে। কিন্তু অয়ন অর্ণবকে নিয়ে এতোটা নোংরা কথা বললো কি করে? উফফফ আমিও না। যার মস্তিষ্কে নোংরা বাসা বেঁধে আছে। তার থেকে এর বেশি কি আশা করা যায়? সে তো নোংরা কথা মাথায় রাখবেই। আর তার ভাবনা অনুযায়ী অন্যকে বিচার করবে এটা নতুন কিছু নয়”। অধরা আর কিছু না ভেবে অয়নের পাশ থেকে উঠে যায়। অয়ন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। অধরা ব্যল্কনিতে গিয়ে কিছু সময় একা কাটালো। অতঃপর রুমে ফিরে এলো। সোফার উপর দৃষ্টিপাত করতেই অধরা অয়নের শার্টটা দেখতে পেলো। অধরা সোফার উপর থেকে অয়নের শার্টটা হাতে নিতেই অবাক হয়ে যায়। রুমের মধ্যে মৃদু আলোতে স্পস্ট হয়ে আছে অয়নের সাদা শার্টে লেপ্টে থাকা কিছু লিপস্টিকের দাগ। দাগটা শুধু মাত্র শার্টের মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকলো না। শার্টের দাগটা অধরার বুকের মধ্যে এসে বিধলো। অধরা ছলছল চোখে সোফার উপরে বসে পরে আপন মনে বলে উঠলো “সেই তো অন্য নারীর কাছে গেলে তুমি। তবুও কেনো আমাকে আটকে রেখেছো? কেনো অন্য কেউ আমার সাথে কথা বললে তোমার এতো কেনো কষ্ট হয়? যদি সত্যি সত্যি এই কষ্টটা অনুভব করে থাকো তুমি তবে একটিবার উপলব্ধি করে দেখো অয়ন কতটা কষ্ট আমি পাচ্ছি”।
* অয়নের শার্টা হাতে নিয়ে অধরা কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরলো। সকাল হতেই অয়নের ঘুম ভেঙ্গে যায়। অয়ন শোয়া থেকে হকচকিয়ে উঠে হাঁপাতে লাগলো। পুরো শরীর ঘামে ভিজে গেছে তার। অয়ন এদিক ওদিক তাকিয়ে অধরাকে খুঁজতে লাগলো। অধরাকে সোফার উপর দেখে অয়ন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মুখের উপর থাকা ঘাম হাত দিয়ে পরিষ্কার করে নিলো। বিছানা থেকে উঠে অয়ন অধরার কাছে চলে এলো। হাঁটু গেড়ে অধরার পাশে বসলো সে। কি অপূর্ব সুন্দরী লাগছে অধরাকে। কিন্তু অধরার এই সুন্দর্যের মায়ায় আটকে গেলে চলবে না। অয়ন অধরাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে আলতো করে শুইয়ে দিলো। অধরার কপালে আলতো করে একটা চুমু খেতেই অধরার ঘুম ভেঙ্গে যায়। অধরা অয়নকে নিজের কাছে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে অয়নের থেকে নিজেকে একটু সরিয়ে নিয়ে কাঁপা গলায় বলে উঠল
— তুমি! এখানে কি করছো?
— হ্যাঁ, আমি। অন্য কাউকে আশা করেছিলে বুঝি? সরি ফর দ্যাট। আমি বেঁচে থাকতে তা সম্ভব হবে না। আর না আমি হতে দিবো। এতো অবাক হয়ে যাবার কোনো ব্যাপার ঘটেনি। সোফায় পরে ছিলে বলে দয়া হলো তাই এখানে এনে রেখেছি। আমার পাশে শোয়ার ইচ্ছে নাই থাকতে পারে। তবে সেটা আমায় বললে আমি বিকল্প পথ দেখতাম। এভাবে সোফায় পরে থাকা ভালো দেখায় না।
অয়ন অধরার পাশ থেকে উঠে গিয়ে চলে যায় ফ্রেশ হতে। অধরা অবাক হয়ে যায় অয়নের কান্ড দেখে। এই ছেলেকে বোঝা সত্যি অসম্ভব। অন্য মেয়ের সাথে শারীরিক চাওয়া পূরণ করে আমার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে চলে এসেছে। সত্যি কোন ধরনের জীব এই লোকটা বোঝা দায়।
* খাবার টেবিলে বসে অয়ন খাবার খাচ্ছে। অধরা অয়নের পাশেই বসে খাবার খাচ্ছে। হঠাৎ করে অয়নের বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো। অয়ন উঁকি দিয়ে গাড়িটাকে দেখে একটু অবাক হয়ে যায়। অয়ন দেখতে পায় গাড়ি থেকে………………………
#চলবে……………………….