শেষ থেকে শুরু পর্ব-২০+২১

0
312

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২০

রাজিবের সামনে বসে আছে হৈমন্তী। বড় ভাইয়ের প্রতি আলাদা একটা মায়া কাজকরে ওর। ভাইয়ের সঙ্গে এতোদিন যোগাযোগ করতে পারেনি সেই আক্ষেপে মরে যেতে মন চাইছে। রাজীব ছলছল চোখে বোনকে দেখছে। মেয়েটা আগের থেকে অনেক শুকিয়ে গেছে। আগে ফর্সা গোলগাল ছিল তবে এখন কেমন রোগা লাগছে। নিরবতা ভেঙে হৈমন্তী বলে উঠলো,

> ভাইয়া এখনো রেগে আছো? খুব সরি এবারের মতো ক্ষমা করে দাও। প্রমিজ করছি এমন আর হবে না।

হৈমন্তীর কোলের উপরে জান্নাত বসে আছে।। হাতে একটা পুতুল আছে সেটা নিয়েই নাড়াচাড়া করছে আর মুখে দিচ্ছে। হৈমন্তী বারবার ওর মুখ থেকে পুতুলের হাত পা গুলোকে টেনেটেনে ছাড়িয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা মায়ের উপরে রগে গিয়ে মুখে থাবা বসিয়ে দিচ্ছে। মোটামুটি বিরক্ত করছে হৈমন্তীকে তবুও ও নিরবে ভাইয়ের দিকে দৃষ্টি দিয়ে উত্তরের আশায় বসে আছে। রাজীব কোনো উত্তর দিল না বরং জান্নাতকে ওর কোল থেকে নিয়ে নিয়ে বাচ্চাটার মুখে হাত রেখে বলল,

> আম্মু কি নাম তোমার? কথা বলতে পারো?

জান্নাতের সবে কথা ফুটেছে। আধো আধো কথা বলতে পরে। হৈমন্তী ভেবেছিল নিজেই উত্তর দিবে তাঁর আগেই জান্নাত তুতলিয়ে বলল,

> জান্নালতুল এহথান জান্না

রাজীব ভ্রু কুচকে ফেলল। মেয়েটা যে কি বলেছে ওর কান পযর্ন্ত আসেনি। হৈমন্তী হেসে বলে দিলো ওর নামটা। এর মধ্যেই চয়নিকা রনিকে নিয়ে উপর থেকে নেমে আসলো। রুনি বাবার বাড়িতে বেড়াতে গেছে। আরাফাত হৈমন্তীকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে অফিসে চলে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরবে বলে গেলো। চয়নিকা এসে জান্নাতকে কোলে নিয়ে হৈমন্তীকে বলল,

> তুমি কিন্তু কাজটা ঠিক করোনি। কতটা টেনশনে ছিলাম জানো? টেনশনে তোমার ভাইয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

> সরি ভাবি খুব ঝামেলায় ছিলাম তাই সুযোগ হয়নি। এবার তো চলে এসেছি। আম্মা কোথায় ভাবি?

হৈমন্তীর কথা শেষ হলো না এর মধ্যেই আমেনা বেগম ছুটে এসে হৈমন্তীকে জড়িয়ে ধরে একঘর কান্না শুরু করলেন। হৈমন্তী মাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল.

> আমি ঠিক আছি আম্মা। তুমি চিন্তা করোনা।

আমেনা বেগম মেয়েকে পেয়ে বেশ খুশী কিন্তু উনার খুশীটা বেশিক্ষণ টিকলো না। চয়নিকার কোলে মেয়টাকে দেখে চোখ কৌটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো। উনি ভ্রু কুচকে বললেন,

> কে ও?ওটা কার মেয়ে?

হৈমন্তী এই ভয়টাই পাচ্ছিল। কিন্তু কিছু করার নেই। মেয়েটা ওর জীবন। ওকে ও নিজের পরিচয়ে মানুষ করবে। তাই মুখটা কঠিন করে উত্তর করলো,

> আম্মা ও আমার মেয়ে জান্নাত।

আমেনা বেগম চোখ গোলগোল করে বলল,

> তুই আবার বিয়ে করেছিস? কাকে করেছিস? ছেলেটা কে? মুসলমান নাকি অন‍্য ধর্মের। বাঙ্গালী তো? নাকি সেটাও না?

আমেনা বেগম একদমে এতগুলো প্রশ্ন করে থামলেন।হৈমন্তী ঘাবড়ে না গিয়ে সাবলীলভাবে বলে দিলো,

> বিয়ে করিনি। বিয়ে কেনো করবো?দুবার বিয়ে করেছি আর সখ নেই। মেয়েটাকে নিয়ে ভালো আছি। আগামীদিনগুলোও ভালো থাকবো। আমি এখন জব করি আম্মা। মেয়ের দায়িত্ব আমি নিজেই পালন করবো ইনশাআল্লাহ।

হৈমন্তী কথাশুনে আমেনা বেগমের মেজাজ চরম খারাপ হলো। বেহায়া বেলাজ মেয়ে। বিয়ে না করে বাচ্চার মা হয়েছে। ঘৃণাই উনার মুখটা কুচকে গেলো। কি বিষাদ লাগলো মেয়ের মুখটার দিকে তাকিয়ে। এতদিন ছিল না ভালো ছিল ফিরে এসেছে সঙ্গে ঝামেলা নিয়ে ফিরেছে। তাছাড়া পাড়া প্রতিবেশি সমাজের লোকজন কিভাবে দেখবে বিষয়টা আল্লাহ্ জানেন। একঘোঁরে করবে নিশ্চয়ই। মিটিং বসে সমালোচনা হবে। আমেনা বেগম সব কিছুই যেনো চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছেন। যদিও শহরে এসব মানুষের তেমন চোখে বাঁধে না কিন্তু গ্রামে তো এমন না। সেখানে তিল থেকে তাল হতে সময় লাগেনা। মির্জা বাড়ির সম্মান বুঝি ধুলোই লুটিয়ে যাবে। বিষয়টা ভেবে উচি চাপা চিৎকার করে বললেন,

< মেয়েদের এই জন‍্যই বিদেশ পাঠানো উচিৎ না। ভদ্রতা সভ‍্যতার বালাই নেই। লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে এতো বড় একটা বাচ্চা নিয়ে হাজির হয়েছো ছি। তোমাকে কখনও আমি ক্ষমা করবো না।সেই সঙ্গে আমার ছেলে গুলোকেও না। এই অনাচার আমি দেখতে পারবো না। রাজীব আমাকে বাড়িতে পাঠানোর ব‍্যবস্থা করো। আর এই বেহায়া মেয়েটা যেনো কিছুতেই সেখানে না যায়। পারলে ওকে এখুনি চলে যেতে বলো ভালো হবে। মায়ের কথা শুনে হৈমন্তীর চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। চিরকাল মা ওকে ভুল বুঝে এসেছে। এমন ভাব করে যেনো ও এই ভদ্রমহিলার নিজের মেয়ে না। কিন্তু কেনো এই বৈষম্য? রাজীব আমেনা বেগমকে শান্ত করতে বলল, > আম্মা তুমি ওকে ভূল বুঝতেছো। বাচ্চাটা ওর……

হৈমন্তী আর বলতে দিলো না। মুখটা কঠিন করে বলল,

> ভাইয়া ও আমার মেয়ে। শুধু আমার। হুহাতে ওকে মানুষ করেছি। আমাকে ও মাম্মা বলে ডাকে। ওকে নিয়ে আমি আর কোনো কথাবার্তা বলতে রাজি না। বাচ্চাটা বড় হচ্ছে। আমি চাইছিনা সে ছোট থেকেই আমাকে পর ভাবুক। যে পর ভাবে তাকে আপন করার জন্য আমি আমার মেয়েকে বলি দিতে চাইছি না।

হৈমন্তীর এমন বেপরোয়া কথা শুনে আমেনা বেগম ঠোঁট চেপে ধরে বিড়বিড় করে বললেন, বেহায়া একাট, কালসাপ পেটে ধরে এখন জীবনটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে দিলো। আগে মিনমিনে স্বভাবের ছিল এখন আবার মুখের উপরে ঝগড়া করছে নিজের অপরাধ লুকানোর জন্য।” উনি একে সহ‍্য করবেন না। তাই তেঁড়ে গিয়ে বললেন,

> মুখের উপরে কথা বলছো এই শিক্ষা দিয়েছি তোমাকে? মেয়েকে নিয়ে বের হয়ে যাও।তোমার মতো মেয়ের মুখ দেখতে চাইছিনা।ঘৃণা লাগছে আমার। ছিলে না বেশ শান্তিতে ছিলাম।

হৈমন্তীর মায়ের কথা শুনে কেঁদে ফেলল। মা ওকে এই চিনলো। প্রচণ্ড অভিমান হলো মনের মধ্যে। এই বাড়িতে ও কিছুতেই থাকবে না। রাজীব মায়ের মুখ বন্ধ করতে উঠে পড়ে লেগেছে। চয়নিকা বিস্ময়কর দৃষ্টিতে শাশুড়িকে দেখছে। ওর ভাষায় এই ভদ্রমহিলার মেয়ের উপরে কোনো মায়া নেই। শুধু আছে কুসংস্কারের ভরা একটা মন। যেখানে সব মমতা ছাপিয়ে গিয়ে শুধু সমাজ সভ্যতার বসবাস। একে আধুনিক যুগের মা বলে মেনে নেওয়া যায় না। হৈমন্তী হুট করে দাঁড়িয়ে পড়লো। রাজীব ভেবেছিল বোনের উপরে একটু রাগ করে থাকবে কিন্তু হলো না। আরও চুপচাপ থাকলে বোনকে হারাতে হবে। তাই দ্রুতগতিতে হৈমন্তীর হাত ধরে বলল,

> এইটুকু বাচ্চা নিয়ে চলে যাওয়ার কথা ভাবছিস আম্মা বললেই হবে নাকি? আমরা আছি কি করতে? আম্মা সব সময় এমন করে জানিস না? কিছু হবে না। আমি তো আছি সব ঠিক করে ফেলবো।

হৈমন্তী ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলল,

> ভাইয়া আমার মনে হয় উনি আমার মা না। ওই ভদ্রমহিলার জিদের জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে গেছে। রবিনের ভয়ে বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেখেছিল। বিয়েটা দিলো তারপর দুর্ঘটনা। ভেবেছিলাম জীবনটা আবার নতুন করে শুরু করবো। পড়াশোনা শুরু করলাম কিন্তু কি হলো? আরেক লম্পটের সঙ্গে ধরে বেঁধে বিয়ে করিয়ে দিলো। কখনও প্রতিবাদ করেছি আমি? এসবের পেছনে সব ওই ভদ্রমহিলা দায়ী। মায়ের সঙ্গে খারাপ ব‍্যবহার করতে হয়না তবুও করতে আমি বাধ্য হচ্ছি। আমার জীবনটা উনি নরক বানিয়ে ছেড়েছেন। এখন যদি আমার মেয়ের পেছনে লাগে আমি কিন্তু ছেড়ে দিবো না।

হৈমন্তী মনের মধ্যে থাকা রাখ ক্ষোভ সব এক সঙ্গে প্রকাশ করে ফেলল। ওর এখন কান্না পাচ্ছে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পরলো না ফুপিয়ে উঠলো। রাজীব বোনকে নিজের বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে মাথায় হাত রেখে বলল,

> শুধু আম্মা একা না বোন। এর জন্য আমিও কম দোষী না। আম্মার কথা না শুনে যদি তোকে আমার কাছে নিয়ে আসতাম এসবের কিছুই হতো না। আর কোনো ভুল করবো না। তুই ঘরে যা। আমি বললাম তো সব সামলে নিব।

রাজীবের কথা শুনে আমেনা বেগমের রাগ হলো। উনি নিজের দোষটা বুঝতে পারছেন না। হৈমন্তীর কথাগুলো উনার কাছে ভিত্তিহীন বলে মনে হচ্ছে। মা কখনও সন্তানের খারাপ চাইনা। তাছাড়া উনি মেয়েকে দুবার খারাপ যায়গায় বিয়ে দেননি। মেয়ের কপালের দোষ। কিছুদিন আগেও মনে হয়েছিল ফরহাদ দোষী কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সব কিছুর জন্য নিজের মেয়েটাই দোষী। কেমন মেয়ে সে যে নিজের স্বামীকে আকৃষ্ট করতে পারেনা? স্বামী পর নারীতে আকৃষ্ট হয়ে তাঁকে ছেড়ে দেয়। স্ত্রীর অবশ‍্যই উচিৎ স্বামীর পছন্দ মতো চলাফেরা করা। তাকে তোয়াজ করে চলতে হয়। ফাজিল মেয়ে নিজে দোষ করে এখন মাকে দোষারোপ করছে। কথাটা ভেবে উনি গটগট করে নিজের রুমে চলে গেলেন। হৈমন্তী মুখ ঢেকে সোফায় বসে পড়লো চয়নিকার কোলে থাকা জান্নাত মায়ের কান্নাকাটি দেখে কেঁদে ফেলল। চয়নিকা ছেলেমেয়ে দুটোকে নিয়ে ঘরের দিকে চলে গেলো। কাজের মেয়েকে বাচ্চাদের খাবার আনার হুকুম দিয়ে। বাচ্চটার ক্ষুধা পেয়েছে। রাজীব বোনকে এটা ওটা শুনিয়ে বুঝ দিচ্ছে। মাসুদ ফোন করেছিল ওকে এখানকার ঘটনা সংক্ষেপে বলা হয়েছে। সব শুনে মাসুদ মায়ের উপরে কিছু বলতে না পেরে বলল,” ভাইয়া আমি বরং বাসা নিচ্ছি। হৈমন্তীকে নিয়ে সেখানেই থাকবো।।” রাজীব ওকে শান্ত করলো। আরাফাত আসলো একদম পরিস্থিতি শান্ত হলে। ও এসে হৈমন্তীকে কাঁদতে দেখে জিঞ্জাসা করলো কিন্তু হৈমন্তী কিছুই বললো না। শুধু শুধু ঝগড়া ঝামেলা করে কি লাভ। ভাইদের জন্য শতাধিক রাগ অভিমান নিয়ে মির্জা বাড়িতেই থাকতে হলো। তবে ও দুর্বল হবে না। এখানে ওর মেয়েকে নিয়ে ঝামেলা হলে তখনই বের হয়ে যাবে।
________________________________
ঘুম ঘুম চোখে দরজা খুঁলে দিলো আবির। দরজা না খুঁলে উপাই ছিল না। দরজার ধাক্কা ধাক্কির শব্দে ওর কানের পর্দা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম। সারা মুখে বিরক্তিতে ছেয়ে আছে। ভ্রু কুচকে কোনো রকম চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে বিরক্তির পরিমাণ আরও বেড়ে গেলো। আরশী কফির মগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে তাঁর মুগ্ধতার হাসি। এক কাফ কফির জন্য এই মেয়ের এতো আদেক্ষেতার কি আছে বুঝতে পারলো না। আবিরকে দেখে আরশী হাসিটা আরও চাওড়া করে বলল,

> তোমার কফি আমি নিজ হাতে তৈরী করেছি। খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে।

আবির মেয়েটার হাসি দেখে সহ‍্য করতে পারলো না। ফিসফিস করে বলল,

> কাজের মেয়েকে ছাড়িয়ে দিতে হবে দেখছি। কফিটা বরং তুমি নিজেই খেয়ে ফেলো। এতো কষ্ট করে তৈরী করেছো। আমার লাগবে না। নেক্সট টাইম দরজা ধরে ধাক্কা-ধাক্কি করার আগে একবার ভেবে কাজটা করবা। আমি কিন্তু ভূলে যাবো তুমি আমার বোন ছিলে। যাও এখন।

আবির ঝাড়ি দিয়ে দরজা বন্ধ করে বাথরুমে চলে গেলো। সকালটা নষ্ট হলো এই মেয়েটার জন্য। বাড়িতে থাকা রিস্ক হয়ে যাবে। অফিসে যেতে হবে তার আগে হাসপাতালে। গতকাল রাত থেকে অরিন হাসপাতালে রয়েছে। মেয়েটা সংসার ছেড়ে এখানে পড়ে আছে। এভাবে চললে সংসার করবে কখন। বাবাকে বাড়িতে আনা যেতো কিন্তু অসুবিধা আছে অনেক। হাসপাতালে রাখলে ডাক্তার সব সময় দেখাশোনা করতে পারে। কিন্তু বাড়িতে আনলে ডাক্তারকে সব সময় পাওয়া যাবে না। সারাক্ষণ সার্ভিস দেওয়ার মতো এমন ডাক্তার শুধু গল্প উপন‍্যাসে পাওয়া যায়। আবির ফ্রেস হয়ে হাসপাতালে দিকে পা বাড়ালো। হাসপাতাল থেকে অফিসে যাওয়ার পথে খেয়ে নিবে ভেবে।

****
অরিন বসে আছে বাবার হাত ধরে। মানুষটা আগের মতো নেই। মুখটা মলিন হয়ে গেছে। আরাফাত সকালবেলায় ফিরে গেছে। ও ফিরে যাওয়ার পরে একটা মিরাক্কেল ঘটেছে। আলাউদ্দিন সাহেব হঠাৎ উঠে বসেছে তবে কথা বলতে পারেনি। শরীর কাঁপছিল অনেক। কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বলার আগেই অচেতন হয়ে গেছে। ডাক্তার বলেছে এটা খারাপ কিছু না। সুস্থ হয়ে যাবেন। তখন থেকে অরিন থম মেরে বাবার হাত ধরে বসে আছে। চোখের পানি পড়ছে। আবির দ্রুতগতিতে বোনের পাশে এসে দাঁড়ালো। কেবিনে আসার পথে নার্সের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সেখান থেকেই মোটামুটি শুনেছে। ভাইকে দেখে অরিন বসে থাকতে পারলো না। ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল,

> ভাইয়া আব্বু ঠিক হয়ে যাবে বলো? আগের মতো হয়ে যাবে সব। আমাদের দুঃখ থাকবে না।

আবির বোনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,

> সব ঠিক হয়ে যাবে। শোন আব্বুর এই ঘটনাটা কাউকে বললে কিন্তু চলবে না। আম্মুকে পযর্ন্ত বলা যাবে না।

অরিন অবাক হয়ে বলল,

> কেনো ভাইয়া?

> পরে বলবো। আব্বুর ভালোর জন্য হলেও আমাদের এইটুকু করতেই হবে। এখন থেকে তুই দিনে আর আমি রাতে পালা করে আব্বুর কাছে থাকবো। দু ভাইবোন ছাড়া আব্বুর কেবিনে কাউকে আসার সুযোগ দেওয়া চলবে না।

অরিন কিছু না বুঝেই মাথা নাড়ালো। আবির ওকে বুঝিয়ে দিয়ে অফিসের জন্য পা বাড়ালো। রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু খেতে হবে এই আশায়। ও অফিসের পাশে একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঢুকলো। সামান্য কিছু খাবার অর্ডার দিয়ে দিয়ে বসে পড়লো। খাবার আসতে টাইম লাগলো না। খাওয়া শেষ করে বের হয়ে এসে গাড়িতে বসতে বসতে রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে থাকা একটা রমনীকে দেখে ওর চোখ আটকে গেলো।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।

#শেষ_থেকে_শুরু
কলমে:লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২১

রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আবিরের বন্ধু মেহুল। মেয়েটা দেশে ফিরে এসেছে ওর জানা ছিল না। রেস্টুরেন্টে থেকে বেরিয়ে মেয়েটার দিকে ওর চোখ আটকে গিয়েছিল। আবির গাড়িতে গিয়ে না উঠে মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলো। কতদিন পরে দেখা। পাঁচ বছরের অধিক সময় পর বা তারও বেশি হব। রাস্তার এপাশ থেকে আবির হাত নাড়িয়ে চিৎকার করে ওকে ডেকে উঠলো। মেয়েটা গাড়ির শব্দে প্রথমে শুনতে না পারলেও পরে ঠিকই শুনলো। কর্মব্যস্ত নগরী রাস্তায় অসংখ্য গাড়ি চলাফেরা করছে। মেয়েটা রাস্তা পার হতে হিমশিম খাচ্ছে দেখে আবির ওকে ইশারা করে থামতে বলে গাড়ি স্টাট দিয়ে মেয়েটার কাছে গিয়ে দরজা খুঁলে বলল,

> চলে আসো। যেতে যেতে কথা বলি।

মৈহুল অপেক্ষা করলো না ওর গাড়িতে উঠে বসলো। হাসতে হাসতে বলল,

> কতদিন পরে দেখা কেমন আছো? সেইযে ফিরলে আর যোগাযোগ নেই।

আবির মিষ্টি হেসে বলল,

> আব্বুর শরীর বেশ খারাপ। অফিস আর হাসপাতালের মধ্যে রাউন্ড রাউন্ড করে ঘুরছি। বন্ধুদের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি। কিন্তু হঠাৎ তুমি এখানে? বাংলাদেশে ফিরবেনা বলেছিলে।

মৈহুল আবারও হেসে ফেলল। প্রাণবন্ত সেই হাসি। মেয়েটা হাসি দিয়ে অনায়াসে নিজের দুঃখগুলোকে ঢেকে ফেলার ক্ষমতা রাখে। আবির মনোযোগ দিয়ে ড্রাইভ করছে আর মাঝেমধ্যে মেয়েটার দিকে তাঁকাচ্ছে। মেহুল ওকে অপেক্ষা করালো না বলল,

> একটা ডকুমেন্ট তৈরির কাজে এসেছি। অবহেলিত বাচ্চা আর নারীদের নিয়ে কাজ করতে হবে। অফিস থেকে পাঠিয়েছে। ভাবলাম সুযোগ পেয়েছি একবার ঘুরে যায়।

> আন্টিদের সঙ্গে কথাবার্তা হয়েছে?

> উনার সঙ্গে কিসের কথা। আমার মা মারা গেছে আর বাবা হারিয়ে গেছে। ছাড়তো সেসব, এখন তোমার কথা বলো। বিয়ে করেছো? বাচ্চা কাচ্চা কতজন?

আবির মলিন হেসে বলল,

> সময় হলেই দেখতে পাবে। আচ্ছা কোনো রেস্টুরেন্ট বসবে নাকি আমার অফিসে যাবে?

মেহুল আবারও হাসলো। আবির গাড়ি থামিয়ে ওর দিকে তাঁকিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছে। মেয়েটা হাসতে হাসতে বলল,

> আজকে না আরেকদিন বসে আড্ডা দিব। আমাকে তুমি একটা ঠিকানাতে পৌঁছে দাও। আমার কলিগ আছে ওকে নিয়ে বের হবো।

আবির আর অপেক্ষা করলো না। মেহুলের বলা ঠিকানাতে গিয়ে চমকে গেলো। হৈমন্তীদের বাড়ির ওরা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। এই বাড়িতে কে আছে যিনি মেহুলের সঙ্গে কাজ করে? তেমন কাউকে পাচ্ছে না। ওকে ভাবতে দেখে মেহুল আসছি বলে বিদায় নিলো। তবে যাওয়ার আগে নিজের ফোন নাম্বার ওকে দিয়ে দিলো। আবির ওকে নামিয়ে দিয়ে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উত্তেজনাতে ওর কলিগের নাম জানতে মনে নেই।তব মনের মধ্যে খটকা লাগছে। এই বাড়িতে মেহুলের কলিগ আছে বিষয়টা ঠিক হজম হচ্ছে না। ও আনমনে কথাগুলো ভাবছিল।হঠাৎ একটা বাচ্চাকে দেখে ওর ধ‍্যান ভাঙলো। অরিনের ফোনে এই বাচ্চাটার ছবিই ও দেখেছিল। আবির মন্ত্রমুগ্ধের ন‍্যায় গেট পেরিয়ে গেলো। দারোয়ান ওকে চিনে তাই বাধা দিলো না। খোলা জায়গাই মেয়েটা একা একাই খেঁলছে। আবির বাচ্চটার সামনে হামু হয়ে বসলো। ওকে এভাবে বসতে দেখে বাচ্চাটা ফ‍্যালফ‍্যাল করে তাঁকিয়ে হেসে দিয়ে পাপা বলে দুহাতে ওর গলা জড়িয়ে ধরলো। আবির বাচ্চাটাকে বুকের সঙ্গে আগলে নিলো। ওর ওষ্ঠে তৃপ্তির হাসি। এতো সুন্দর অনূভুতি সঙ্গে ওর আগে পরিচয় ঘটেনি। বাচ্চাটা ওকে পাপা বলছে। আবিরের আগেই সন্দেহ হয়েছিল এবার আরও পাকাপোক্ত হলো। তবুও সন্দেহ দূর করতে মেয়েটার মুখটা নিজের দুহাতের তালুতে নিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল,

> জান্নাত
মেয়েটা কি বুঝলো বোঝা গেলো না। আবারও ওর গলা জড়িয়ে আধো আধো করে বলল,আমি জান্না পাপার মাম্মা।

আবির এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। সেদিন অরিন কেনো মেয়েটার পরিচয় গোপন করেছে বুঝতে ওর অসুবিধা হলো না। মেয়েটা সেই ছোট জান্নাত। কতটা বড় হয়ে গেছে ভেবেই চোখে পানি এসে গেছে। কিন্তু হৈমন্তীর উপরে ওর রাগ হচ্ছে। মেয়েটা চরম স্বার্থপর। কিভাবে পারলো ওকে ঠকিয়ে মেয়েকে নিজের করে নিতে। ভালোবাসার পরিমাণ বেশি ছিল তাই ওর কদর করা হয়নি। ও আর যেচে ছোট হতে যাবে না। ওকি এতটাই সস্তা ছিল নাকি। ওতো ভালোবাসার জন্য পাগলামী করেছিল। ভালোবাসার জন্য মানুষ কতকিছু করে। ও শুধু আগলে নিতে চেয়েছিল কিন্তু মেয়েটা ওকে ধোকা দিলো। নিজের স্বার্থ হাছিল করে পালিয়ে গেলো। মেয়েটার সামনে আর নিজেকে সস্তা করে তুলবে না। ওর যা ইচ্ছা করুক তাতে আবিরের কি? আরো জন্য কারো জীবন থেমে থাকে না। এক সময় যাকে ছাড়া নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় এক সময় থাকে ছাড়া ঠিক ভালো থাকা যায়। আবির বাচ্চাটাকে নিজের কোলে তুলে নিলো। এই বাচ্চাটার উপরে ওর অধিকার আছে। হৈমন্তীর যতটা অধিকার ঠিক ততটাই ওর অধিকার। ও ছাড়া কি হৈমন্তী পারতো একে নিজের করে পেতে? স্বার্থপর মেয়ে একটা। আবিরের রাগ ক্ষোভ গিয়ে হৈমন্তীর উপরে গিয়ে পড়লো। ভাবলো হিটলার মরে গিয়ে লেডি হিটলার রেখে গেছে পৃথিবীতে। সে এখন পৃথিবী না পরিবারের লোকজনকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। দুদিন পরে ঠিক তার প্রভাব রাষ্ট্রের উপরে গিয়ে পড়বে। আবিরের মনের মধ্যে এরকম হাবিজাবি কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। ও তাড়াতাড়ি বাচ্চাকে নিয়ে চলে আসলো। হৈমির সামনে যাওয়ার ইচ্ছে আপাতত নেই ওর। দারোয়ানকে বলে দিল কেউ খোঁজ করলে বলে দিতে আবির ওকে নিয়ে যাচ্ছে। সময় মতো রেখে যাবে। জান্নতের একটা বিষয় ওর ভালো লাগলো মেয়েটা প্রথম দেখাতেই ওকে আপন করে নিয়েছে কান্নাকাটি করছে না। মেয়েকে নিয়ে ও অফিসে চলে আসলো। বাচ্চাদের খাবার সম্পর্কে ওর ধারণা নেই। হুটকরে আজেবাজে কিছু খাওয়ানো ঠিক হবে না। আবির সেক্রেটারি জাবেদকে ডেকে নিলো। তাছাড়া বাচ্চা নিয়ে অফিসে ঢোকার সময় কর্মচারীরা ওকে আঁড় চোখে দেখেছে। ও চোখের অদৃশ্য হতেই গুঞ্জন হচ্ছে। স‍্যার বাচ্চাটাকে কোথায় পেলো এসব নিয়ে গসিপ হচ্ছে। জাবেদ রুমে এসে কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

> স‍্যার এই বাচ্চাটা কে হয় আপনার?

আবির দাঁত বের করে হেসে বলল,

> আমার মেয়ে। জান্নাত মাম্মা আঙ্কেলকে হাই বলো।

জান্নাত বাবার বাধ্য মেয়ের মতো শুধু হাত তুলল হাই বলতে পারলো না। ও ছোট থেকেই মানুষের কাছে বড় হয়েছে। লোকজনকে বেশ পছন্দ করে। জাবেদের চোখ পূর্বের ন‍্যায় আবারও বড়বড় হয়ে গেলো। স‍্যারের বিষয়টা ওর কাছে কেমন ভূতুড়ে লাগে। একবার গভীর রাতে গোপনে বিয়ে করলো তার দুদিন পরে বাচ্চা হলো আর এখন এতবড় বাচ্চা। কিভাবে সম্ভব আল্লাহ্ ভালো জানে। মানব শিশু জন্মাতে বা বড় হতে সময় লাগে এতো দেখি হাওয়ার বেঁগে সবকিছু হয়ে যাচ্ছে। আবির জাবেদের মুখের ভাবমূর্তি বুঝতে পেরে বলল,

> জাবেদ আমাকে নিয়ে না ভেবে জান্নাতকে নিয়ে ভাবো। যাও কিছু পোশাক আর বাচ্চাদের খাবার কিনে আনো। আমি জানিনা ঠিক ও কি খেতে পছন্দ করে ।

জাবের জোরপূর্বক হেসে বলল,

> স‍্যার ওর মায়ের কি খবর? মানে আমাদের ম‍্যাডাম কোথায়?

জাবেদ আবিরের সম্পর্কে উল্টাপাল্টা ভাবতে শুরু করেছে।ভাবছে ম‍্যাডামের সঙ্গে স‍্যারের আগে থেকেই সম্পর্ক ছিল যখন ম‍্যাডাম প্রেগনেন্ট হয়ে গেছে তখন বাধ্য হয়ে বিয়েটা করলো। কিন্তু এতো লুকোচুরি কিসের? আবির ওকে পাত্তা না দিয়ে জান্নাতকে টেবিলের উপরে বসিয়ে মেয়েটার কাধে মুখ রেখে বলল,

> মেয়েটা আমার তাই শুধু ওর খোঁজ বলতে পারি। ওর মা কোথায় জানিনা। জানতেও চাইছি না যাও এখন। প্রশ্ন করে মাথা নষ্ট করছো।

ঝাড়ি খেয়ে জাবেদ মাথা নিচু করে চলে যেতে গিয়ে আবারও ফিরে আসলো। আবির ভ্রু কুচকে তাকাতে জাবেদ মিনমিনে কন্ঠে বলল,

> কেউ জানতে চাইলে?
আবির স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,

> বলবে বসের মেয়ে।

জাবের বের হয়ে গেলো। আবির জান্নাতের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। মেয়েটা ওকে চিনতে পারছে নাকি এমনিতেই সবাইকে এমন আপন করে নিতে জানে মেয়েটা? বুঝতে পারছে না। কৌতূহল হচ্ছে খুব। হৈমন্তীকে ওর চেনা আছে। পাষাণ হৃদয় তাঁর। ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখে ভয় পাই। হৈমন্তীর হয়েছে তাই। কাউকে বিশ্বাস করেনা। তাছাড়া নিজেও তো অন‍্যায় করেছিল। ভেবেছিল রোহানের থেকে ওকে বাঁচাতে হবে তাই এতকিছু না ভেবে জোরজবরদস্তি করে বিয়ে করে নিলো। মেয়েটার মনের মধ্যে আসতেই পারলো না উল্টো ওকে দেখলে নাক ছিটকাই। কথাগুলো ভেবে ও জান্নাতের দিকে নজর দিলো। মেয়েটা ওর চুল টেনে দিচ্ছে আর খিলখিল করে হাসছে।
______________________

পায়ের উপরে পা রেখে বসে আছে রোহান। মনটা বেশ ফুরফুরে। কয়েক বছরের ব‍্যবধানে সে পাক্কা ব‍্যবসায়ী বনে গেছে। কিছু ডিলারদের টাকা দিয়ে গ্রাম থেকে অল্পদামে কৃষি পণ্য কিনে গোডাউন বোঝাই করে বাজারে সংকট তৈরী করে চড়া দামে বাজারে ছাড়তে ওর জুড়ি মেলা ভার। কয়েকটা ব‍্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ও। গ্রামে ওর অগাধ যাতায়াত। শহরের দুটো গার্মেন্টস দিয়েছিল সেখানকার চাইতে এটাতেই মনে হচ্ছে ঝামেলা কম। শুধু কিনবে আর কয়েকমাস মজুদ রেখে বাজারে ছেড়ে দিবে। রোহানের মাথা ছুরির মতো ধারালো। বিদের থেকে পড়াশোনা শিখে এসে প্রথমে গার্মেন্টস করেছিল বাবার সাহায্যে তারপর বাকিটা নিজেই করেছে। ওর ধ‍্যান বাঙলো রাজীবের ফোন পেয়ে। রাজীব সহসা ফোন করেনা হঠাৎ ফোন করেছে দেখে রোহান দ্রুত রিসিভ করে বলল,

> দুলাভাই হঠাৎ আপনি?

রাজীব ওপাশ থেকে কটাক্ষ করে বলল,

> হঠাৎ হঠাৎ গায়েব হয়ে যাওয়া তোমার স্বভাব হয়ে গেছে দেখছি। কোথায় থাকো খুঁজে পাওয়া যায়না?

> প্রায় গ্রামে যেতে হয়। নেটওয়ার্কের সমস্যা থাকে। তাছাড়া ব‍্যবসাটা একটু বাড়ানোর চিন্তা করছি। রোবট হয়ে গেছি দুলাভাই। আচ্ছা আপা কেমন আছে?

> খুব ভালো আছে। আমরা সবাই বলতে পারো খুব ভালো আছি। যাইহোক রোবট শালা মশাই ভেবেছিলাম তোমাকে আমার বোনের জামাই করবো কিন্তু হলো না। আমার বোন এমনিতেই নিরামিষ মেজাজী টাইপের তোমার সঙ্গে বিয়ে হলে চুলোচুলি হবে তাই সেসবের দরকার নেই। তোমার বিয়ের জন্য শাশুড়ি আম্মা মেয়ে দেখেছেন। জরুরি বাড়িতে আসো আজকে যাচ্ছি আমরা।

রোহানের কান গরম হয়ে গেলো রাজীবের কথা শুনে। এতকাল প্রতিশ্রুতি দিতে এখন শেষবেলাতে কথা ফিরিয়ে নিচ্ছে। ও কি খেলনা নাকি। কিছুতেই মানবে না। তাই দ্রুতকন্ঠে বলল,

> আপনি কিন্তু নিজেই বলেছিলেন এতদিন পরে কথা ঘুরিয়ে নিচ্ছেন ঠিক হচ্ছে না।

> আরে তুমি দেখতে যেই সুদর্শন তোমার জন্য হৈমন্তীর থেকে বেটার মেয়ে অপেক্ষা করছে। তাছাড়া হৈমন্তীকে আর বিয়ে টিয়ে দিতে চাইছি না। যেমন আছে থাক।

রোহান বিড়বিড় করলো। ও যে সুদর্শন সে ওর অজানা নেই। শুধু আবিরের জন্য এরকম একটা পদক্ষেপ নিয়েছিল। এতদিনে হয়তো আবির নিজের ভূল বুঝতে পেরে হৈমন্তীর থেকে নিজকে সরিয়ে নিয়েছে তাহলে রোহান কেনো এরকম একটা মেয়েকে বিয়ে করবে? নিশ্চয়ই না। ও আবিরের চাইতে সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করে বন্ধু সমাজকে দেখিয়ে দিবে। কথাগুলো ভেবে ও রাজীবকে বলল,

> দুলাভাই আপনারা যা ভালো বুঝেন করেন। আমি আর কি বলবো। বিকালে একটা মিটিং আছে আপনারা এক কাজ করেন মেয়ে পছন্দ হলে পাকাপাকি কথা বলে আসেন। আপনাদের উপরে আমার ভরসা আছে।

রোহান বাঁকা হেসে ফোন রাখলো। মাকে ওর ভালো করে চেনা আছে। খুব খুতখুতে টাইপের মহিলা। কোনো মেয়েকে উনার সহজে পছন্দ হবেনা আর যদি হয় তবে সেটা সেরাই হবে। রোহানের জন্য সামনে যে কি অপেক্ষা করছে এটা শুধু ওর নিয়তি আর আল্লাহ্ ভালো জানে।
______________________
সকালবেলায় হন্তদন্ত হয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল হৈমন্তী। মেয়েকে রেখে গিয়েছিল ফিরে ঘুমন্ত অবস্থায় পেলো। কিছুক্ষণ আগে আবির দিয়ে গেছে তখন ও বাড়িতে ছিল না। গেটের কাছ থেকে চয়নিকাকে ফোন করেছিল ও গিয়ে নিয়ে এসেছে। চয়নিকা বিস্মিত হয়ে জিঙ্গাসা করেছিল জান্নাত ওর কাছে কিভাবে থাকলো কান্নাকাটি না করে। আবির এটা ওটা বলে বুঝিয়ে দিয়েছে। তাছাড়া মেয়েকে নিয়ে যাওয়ার পরে ফোন দিয়ে বলেছিল জান্নাত ওর কাছে যাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করছিল তাই ও নিয়ে গেছে। কেউ আর এসব নিয়ে প্রশ্ন করলো না। রোহানের জন্য মেয়ে দেখতে যাচ্ছে চয়নিকা আর রাজীব। হৈমন্তীকে বলেছিল কিন্তু ওর সময় নেই। অফিসের কাজকর্মকে ব‍্যস্তদিন পার করছে। আবির চয়নিকার মাকে মেয়ে খুঁজতে সাহায্য করেছে সেই হিসেবে ও সকলের সঙ্গে যাচ্ছে। তবে এটা রোহানকে বলা হয়নি। একবারের বিয়ের পরে চমকে দিবে। বন্ধু হয়ে বন্ধুর জীবন সঙ্গী খুঁজতে সাহায্য করছে। এতদিন পরে ছেলের জন্য উপযুক্ত মেয়ে পেয়ে রোহানের মা ভীষন খুশী। আবির মেয়ের ছবি দেখিয়ে এক প্রকার ভদ্রমহিলাকে রাজি করিয়ে ফেলেছে। এবার শুধু যাবে আর দিনতারিখ ঠিক করবে এটাই যা।।

চলবে

ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন।