#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_১৬
#মিদহাদ_আহমদ
রাত বাজে দুইটা। সেহরির সময় হয়ে গিয়েছে। সেন্টার থেকে লোকজন চলে যাচ্ছে, যাবে এমন। আমার ননদ আর ননাস দুজনেই ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত। এদিকে একটার পর একটা কল করতে করতে শেষমেশ আমার ননাসের স্বামীকে নিয়ে আসতে সক্ষম হলাম। তিনি চায়নিজের পাশের কফিশপে আসবেন৷ আমি সবার চক্ষু গোপন করে তার সাথে দেখা করতে চলে গেলাম। আমি যাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই তিনি চলে এসেছেন। তার মুখোমুখি চেয়ারে বসলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন,
‘এভাবে ডাকার কারণ?’
‘আপনি নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পারছেন দুলাভাই আমি কেন ডেকে এনেছি?’
কিছুক্ষণ মানুষটা চুপ থাকলো। আমি মৌনতা ভেঙ্গে বললাম,
‘আপনি বলুন, বাচ্চা কি মহান আল্লাহর দান নয়? এর মাঝে কি আপনার আমার হাত আছে? আজ আল্লাহ দিচ্ছেন না, কাল আল্লাহ দিবেন। আর না দিলেও কি জীবন মুশকিল হয়ে যায়? আমরা তো কতকিছুই জীবনে পাই না। সব পেতে হবে এর নাম কি জীবন দুলাভাই? জীবন মানুষকে শেখায়, মানুষকে এক্সপ্লোর করার সুযোগ দেয়। মানুষও শিখে। এখানে কারোর ইচ্ছা অনিচ্ছায় আসলেই কি কিছু আসে যায়? এরকম এহেন সিদ্ধান্ত আপনার থেকে কি আশা করা যায় দুলাভাই?’
লোকটা এবারও শুধু কথাগুলো শুনলো। কোন উত্তর দিলো না। আমি আবার বললাম,
‘আপনি আমি দেখেন দুনিয়ার নিয়মে আবদ্ধ৷ এই যে দেখছেন, আমাকেই দেখেন৷ কত স্বপ্ন ছিলো আমার! আমি কিছু করবো, নিজের পায়ে দাঁড়াবো। মা বাবার ভরসা হবো। কিন্তু কই? আমার ইচ্ছা বা স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে? আদতে কি হবে? হবে না। সব ইচ্ছা আসলে পূর্ণ হয় না। আর তার উপর দেখেন একটা মেয়ে সর্বক্ষণ নিজের সব বিসর্জন দিয়ে যার রক্ষা করে চলে, যাকে নিজের বলে দাবী করে, সেই নিজের মানুষ ছাড়া নারী জীবন অসম্ভব। এই জীবনের স্বাদ এবং অন্বেষণেই যে আমরা আমাদের জীবন কাটিয়ে দেই দুলাভাই।’
এতক্ষণে আমার ননাসের স্বামীর মুখ খুললো৷ তিনি বললেন,
‘দেখো নুপুর, তুমি আমার শালার বউ বলে কিছু কথা বলছি সরাসরি। হয়তো অন্য কারো সামনে আমি বলতেও পারতাম না। আমি তানিয়াকে অনেক ভালোবাসি। তানিয়া ছাড়া আমি আমার এক মুহূর্তও কল্পনা করতে পারি না।’
‘তাহলে সেই ভালোবাসাকে দূরে ঠেলে দিবেন? এইটা ধর্মের সইবে? আপনি সহ্য করতে পারবেন? মনকোটরে সুখস্মৃতি সবসময় পীড়া দিয়ে যাবে না আপনাকে?’
খেয়াল করলাম তানিয়া আপার স্বামীর চোখের কোণে জল এসে জড়ো হচ্ছে। পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ভাষার চোখে যখন মন গলা জল দেখা যায়, তখন সেই জল সাক্ষী হয়ে রয় ভালোবাসার। নিরেট ভালোবাসা ছাড়া পুরুষের চোখে জল আসে না।
আমি পানির গ্লাস এগিয়ে দিলাম দুলাভাইর দিকে। তার হাত ধরে বললাম,
‘দুলাভাই, একবার দেখেন চিন্তা করে, জীবন মানুষের একটাই। মানুষ এই জীবনে যা সিদ্ধান্ত নেয়, পুরো জীবনে তাই বয়ে বেড়ায়। এরচেয়ে বড় কোন সত্য হতে পারে না।’
‘কিন্তু আমি যে অসহায়, নিরুপায় নুপুর।’
‘কেন? কেন নিরুপায়?’
‘আমি আমার মায়ের কথা ফেলতে পারবো না।’
‘যদি সেই কথা আপনার মনে সায় না দেয় তার পরও?’
‘হুম। তার পরও’
আমি আর কোন ভাষা খুঁজে পেলাম না এরপর কিছু বলার। মানুষ যখন কিছু নির্ধারণ করে ফেলে নিজের মাঝে, তখন সেই নির্ধারণ বদলানো যায় না, সিদ্ধান্ত বদলানো যায়। আমি বুঝালাম আরও কিছুক্ষণ আমার ননাসের স্বামীকে। বললাম যে মানুষের জীবনে অনেক বাক আসে। অনেক খারাপ সময় আসে, অনেক প্রতিকূলতা আসে। সবশেষে একসাথে যদি দুজন মানুষ এই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন প্রতিকূলও অনুকূলে এসে দাঁড়িয়ে যায়। মানুষের সাথে সাথে এইটা শাপে বর হয়ে ধরা দেয়। মানুষ তখন লাভ করে এক অসীম প্রশান্তির আবেশ।
‘আপনার স্ত্রী কি আপনার জীবনে কোন অংশীদার রাখে না? কোন প্রভাব রাখে না?’
আমার এই প্রশ্নেও আমার ননাসের স্বামী নীরব ছিলো। তার কোন উত্তর ছিলো না।
কিছুক্ষণ বুঝালাম আমার ননাসের স্বামীকে। জানি না সে বুঝতে পারলো কিনা না। তাকে বলে এলাম, কাল দুপুরে আমি তাকে কল করবো। আশা রাখবো যেনো পজেটিভ কোন সিদ্ধান্ত আমাকে জানান৷ মনের মধ্যে এক অজানা শঙ্কা নিয়ে আমি বের হলাম কফিশপ থেকে। রাত তখন দুইটা বেজে বিশ মিনিট। চায়নিজে এখনও বাসার সবাই আছে। সেহরি সেখানেই করবে সবাই। আমি চুপিচুপি গিয়ে ঢুকলাম। শাশুড়ি কাছ ঘেষে গিয়ে বসলাম। তাৎক্ষণিক আমার ননাস তেড়ে আমার দিকে এলো। তারপর বললো,
‘আজ কেন আমার স্বামী আসেনি অনুষ্ঠানে? আর কেন লুকিয়ে চুপিচুপি তার সাথে তুমি দেখা করতে গিয়েছিলা? নতুন কী ফন্দি আটছো তুমি?’
শাশুড়ি বললেন,
‘থাম তানিয়া। এখন এখানে কথা বাড়াস না।’
‘কেন? কেন থামবো আমি? এতরাতে আমার অগোচরে আমার স্বামীর সাথে কী এমন কথা ওর? আর দেখবে? দেখবে সে কী করেছে?’
আসিফ এগিয়ে এলো। সে বললো,
‘কী করেছে? কী করেছে নুপুর?’
আসিফের সামনে তখন আমার ননাস তার মোবাইল স্ক্রিন তুলে ধরলো। আসিফ কিছুক্ষণ দেখে আমার সামনে এসে বললো,
‘কী এসব?’
আমি আসিফকে বললাম,
‘তুমি আমার উপর বিশ্বাস করো তো?’
আসিফ নিশ্চুপ হয়ে রইলো। আমি আবার তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘আমার উপর তোমার বিশ্বাস আছে তো?’
আমার ননাস এসে বললো,
‘বিশ্বাস অবিশ্বাস কী আবার? আমাকে জবাব দাও কী এসব? তুমি আমার স্বামীর হাতে ধরে কফিশপে বসে আছো? কী এসব? এই বয়সী মেয়েরা এমন হয় জানতাম কিন্তু স্বামী সংসার রেখে? কোন লাজ লজ্জা নেই নাকি? নাকি গ্রামের গরীব ঘরের মেয়ে বলে এমন যা ইচ্ছা তাই করতে হবে বলতে হবে?’
শাশুড়ি এসে বললেন,
‘তানিয়া এখন বন্ধ কর। এখন আর কোন কথা বলিস না তুই। এখানে আর নতুন করে সিন ক্রিয়েট করিস না।”
‘সিন ক্রিয়েট? আর আমি? মা শুনো, পুরুষ মানুষ সব সময় নরম, কোমল মনের। তাদের যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে পরিচালনা করা যায়। সমস্যা হলো এই নুপুরের মতো মেয়েরা। এরা অন্যের ঘর ভাঙ্গতে উঠেপড়ে লাগে।’
আসিফ সামনে এসে বললো,
‘কী বলছো এসব আপু? ভুলে যেও না ও আমার বিয়ে করা বউ’
‘বিয়ে করা বউ? পর নারীর স্বামীর সাথে যে মেয়ে রাত বিরাতে গিয়ে একা একা দেখা করে আসে সেই মেয়েকে বউ বলছিস তুই?’
‘হ্যাঁ। আমি জানি এর পেছনে কোন কারণ আছে। এমনি এমনি সে দেখা করতে যায়নি।’
শাশুড়ি এসে আমার ননাসকে থামতে বললেন৷ সে থামছে না দেখে শাশুড়ি ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিয়ে বললেন,
‘নিজের খেয়ে পরের করতে যাচ্ছে যে, তাকে না জেনে কথা শুনাচ্ছো তুমি? আমি বারবার না করছি তবুও?’
এদিকে আমি অবাক হলাম যে মানুষটাকে আমি আপন করে নিতে পারিনি এখনও, সেই মানুষটাই আমাকে কেমন জানি বিশ্বাস করে নিজের ভাবতে শুরু করেছে! আজ যদি আসিফ আমার উপরে ইশারা ইঙ্গিতে হাত তুলতো তাহলে এই অবিশ্বাস নিয়ে আমি আর বাঁচতে পারতাম না। আমি বাঁচতে বাঁচতে যেনো পৃথিবীর সব ভয়ংকর নিশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতাম। সেহরি আর আমাদের হলো না। গাড়িতে করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে আসিফ আমার কাছে জিজ্ঞেস করলো,
‘আপার সাথে কি দুলাভাইয়ের কিছু হয়েছে?’
‘হুম! দুলাভাই আপাকে ডিভোর্স দিতে চায়’
‘কী?’
(চলবে)
#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_১৭
#মিদহাদ_আহমদ
বাসায় গিয়ে শাশুড়ি সব জানালেন আমার ননাস কে। বললেন,
‘তোর বাচ্চা হচ্ছে না তাই তারা চায় তোকে যেনো তাদের ছেলে ডিভোর্স দিয়ে দেয়!’
আমি খেয়াল করলাম আমার ননাস একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে গিয়েছে। কথা বলার অবস্থায় আর সে রইলো না। হেলাম দিয়ে পিলারে মাটিতে বসে পড়লো৷ আসিফ সম্ভবত আমার হয়ে কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার বোনকে। আমি আসিফকে আটকালাম। ফিসফিস করে বললাম,
‘এখন সময় না এসবের। এখন একজোট হয়ে এর সমাধান কী হয় এইটাই খুঁজে বের করার সময়।’
সেদিন রাত আমাদের এভাবেই নিরানন্দে কেটে গেলো। আসিফ বারান্দায় বসে বসে সিগারেট টানছে আর বলছে,
‘আপার জীবনে কী হবে এখন? যদি দুলাভাই সত্যি সত্যি আপাকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়?’
আমি বললাম,
‘ডিভোর্স এতো সহজ নাকি? বললেই হয়ে গেলো? চিন্তা করো না তুমি। দেখবে সব সহজ হয়ে গিয়েছে। একবার জানো, আমাদের কী হয়েছিলো? আমাদের বাড়িতে চাল নেই। চাল নেই মানে বাবা যে ধান বিক্রি করেছেন সেই ধানের টাকা গতকাল পাওয়ার কথা কিন্তু পাননাই। হাত একেবারে খালি। দুপুরে খেয়ে রাতে কী খাবো এর জোগাড় কিছুই হয়নি। মা রেগেমেগে অস্থির একদম। কেন বাকিতে ধান বিক্রি করলা,কেন চাল ভাঙ্গালা না, এখন এই রাত বিরাতে কার ঘর থেকে চাল খুঁজতে যাবো? এইসেই নানাকিছু। আমার বাবা একদম নিশ্চুপ৷ শুধু বললেন, রিজিকের মালিক আল্লাহ৷ তিনি কোন না কোন ভাবে রিজিকের ব্যবস্থা করে ফেলবেন৷ দেখে নিও। মাও সেদিন বাবাকে শুনিয়ে বলেছিলেন, সব সময় আল্লাহর ভরসায় থাকলে কীভাবে হয়? বাবা কোন জবাব দেননি।’
আসিফ বললো,
‘তারপর কী হয়েছিলো?’
সেই রাতেই ধান যার কাছে বিক্রি করেছিলেন, সে ধানের টাকা ও এক বস্তা ভাঙ্গানো চাল উপরি এনে দিয়েছিলো! রাত বাজে নয়টা। এমন সময়ে গ্রামে গঞ্জে কেউ চাল আর টাকা নিয়ে আসার কথাও নয়। লোকটা যাওয়ার পর আমার বাবা সেদিন আমাকে আর আমার মাকে বলেছিলেন,
‘যখন সব পথ বন্ধ হয়ে যায় তখন একমাত্র আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখবা। দেখবা সব ঠিক হয়ে যাবে৷ কোন সিদ্ধান্তে যেতে পারছো না? ব্যস। আল্লাহকে বলো। আল্লাহ সব সিদ্ধান্তের উপর বসা আছেন। তিনি যা করবেন, তাই আমাদের জন্য মঙ্গল।’
আসিফ এবার নড়েচড়ে বসলো। বললো,
‘এবার কি তাহলে উপর থেকে কোন সিদ্ধান্ত আসার পালা?’
‘হ্যাঁ। এখন সব সিদ্ধান্ত উপর থেকে আসবে।’
সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি রান্নাঘরে গেলাম। ঈদ চলে আসছে। কাজ কর্ম অনেক বাকি। আমি ইফতারের আয়োজন করতে লাগলাম৷ খেয়াল করলাম শাশুড়ির মন ভার ভার। কথা বলছেন না। আমার ননদের রুমে গেলে সে চিৎকার করে বলে উঠে,
‘এখানে কেন এসেছো? আমাদের দুই বোনের কষ্ট দেখে দেখে মজা নিতে? এখন অনেক মজা নিচ্ছো তাইনা? অনেক ফুর্তি হচ্ছে আমাদের অবস্থা দেখে তাইনা? আর হবেই বা না কেন। ভালোর সাজে মন্দ তো তুমিই৷ তোমার আসার পরেই এসব হচ্ছে।’
আমি আমার ননদ আর ননাসের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কথা আর বাড়ালাম না। আসিফ কোথা থেকে এসে তার বোনকে বললো,
‘এভাবে ভাবির সাথে কথা বলে তামান্না? সে তো এমনি এসেছিলো। আমি তো দেখছি সব। সে কোন কথাও বলেনি তার পরও?’
‘অহ! এখন তুমি সব কথায় কথায় এসে ভাবির পক্ষে আমাকে কথা শুনাবা?’
‘বন্ধ করো এসব। বন্ধ করো। আমি আর নিতে পারছি না এগুলো। প্লিজ!’
কানে হাত দিয়ে আমার ননাস বললো কথাগুলো৷ আমি আসিফকে রুমে যেতে বললাম। এমন সময়ে কলিংবেল বেজে উঠলো বাসার। আমি দরজা খুললাম। দরজা খুলতেই আমার ননাসের স্বামীকে দেখতে পেলাম। আমার শাশুড়ি এসে তাকে ভেতরে এনে বসাতে না বসাতেই কান্নায় ভেঙ্গে বললেন,
‘বাবা তুমি বলো এসব আমি তুমি জানি? এর মাঝে আমাদের হাত আছে কি? নাকি এগুলো সব আল্লাহর ইচ্ছাতেই হচ্ছে? এর মাঝে তো বাবা আমাদের কোন হাত নেই’
আমার ননাসের স্বামী চুপ থাকলো। ননাস এসে বললো,
‘আমাকে ডিভোর্স দিবা? আমি বন্ধ্যা? আমার বাচ্চা নেই? এজন্য? চিহ! তোমাকে দেখতেই আমার লজ্জা করছে। তুমি? তুমি আমাকে ডিভোর্স দিবা যে আমার বাচ্চা হচ্ছে না এজন্য?’
আমি আমার ননাসকে সামলালাম। এমন অবস্থায় অহেতুক কথাবার্তা আর উত্তেজনা ভালো না। তাকে নিয়ে বসালাম সোফায়। ননদও চলে এলো ড্রইংরুমে। সে কিছু বলতে যাবে এর আগেই আমি তাকে ধরে বললাম,
‘কোন কথা না তামান্না। এখন একদম চুপ। আমরা আগে দুলাভাইর কথা শুনি। তারপর যা বলার বলবো।’
আমি আমার ননাসের স্বামীকে জিজ্ঞেস করলাম,
‘আপনার সিদ্ধান্ত কী? আমাদের কি আপনার সিদ্ধান্ত জানানো যাবে এখন?’
কিছুক্ষণ তিনি মৌনতা অবলম্বন করলেন। তারপর৷ বললেন,
‘আমি বাসায় কথা বলেছি। আমি এই বিয়েতে রাজি নই। তারা যেভাবে আমাকে আমার মামাতো বোনের সাথে বিয়ে করাতে চায়, আমি তাদেরকে অসম্মতি জানিয়েছি। আর এই সিদ্ধান্তও আমার ছিলো না। তানিয়া তুমি এক্ষুণি রেডি হও। আমার সাথে বাসায় চলো।’
ননাস বলল,
‘না। আমি যাবো না৷ এখন আর আমি যাবো না। যেই ঘরের লোকজন এভাবে আমাকে ঘরছাড়া করার সিদ্ধান্ত নেয়, সেই ঘরে আমি আর দ্বিতীয়বার গিয়ে ঢুকবো না৷ কখনোই না ‘
আমি ননাসকে নিয়ে ভেতরে গেলাম। শাশুড়িও এলেন। শাশুড়ি ননাসের কাধে হাত রেখে বললেন,
‘দেখ তানিয়া, মেয়েদের জীবনে স্বামীর ঘর ছাড়া আর কোন কিছুই দ্বিতীয় ঘর হতে পারে না৷ আর কোথাও সুখ মিলতে পারে না৷ সবকিছু বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ আজ যখন জামাই নিজে এসেছে তখন আমাদের আর দ্বিমত করা খাটে না। এখন যা সিদ্ধান্ত আমরা নিবো, তাই যেনো মঙ্গলের হয়৷ কোন ভুল সিদ্ধান্তে একটা জীবন এভাবে শেষ করে দেয়া যায় না ‘
আমার ননাস কয়েকবার আমার শাশুড়ির কথা উপেক্ষা করলো। সে সাফ জানালো যে সে যাবে না। শেষে দেখলাম আসিফ রুমে আসলো। তার বোনকে সে বললো,
‘দেখ আপা, দুলাভাই তোকে নিতে এসেছেন। একটা মেয়ে বিয়ে করে কার সাথে? একটা ছেলের সাথে তাইনা? নাকি একটা মেয়ে একটা পরিবার, একটা আলিশান বাড়ি, টাকা এসবের সাথে বিয়ে করে বল? একটা বিয়ে তো ঠিকেই থাকে স্বামী স্ত্রীর বুঝাপড়া, মতের মিল, ভালোবাসা, একে অন্যকে কেয়ার করার মাঝেই। এর মাঝে তো কোন দ্বিমত নেই তোর তাইনা? তাহলে দেখ, যে মানুষটা তোর জীবনে আসল প্রাধান্য রাখে, যে মানুষটা তোর জীবনের সব, সেই মানুষটাই তোকে নিতে এসেছে। সে কি একবারও বলেছে যে সে তোকে ডিভোর্স দিবে? আমি রাতেই নুপুরের কাছে সব শুনেছি৷ সে জিজ্ঞেস করেছিলো দুলাভাইকে এই কথা সরাসরি।দুলাভাই বলেছে যে সে ডিভোর্স দিতে চায়না, যা হচ্ছে বা হবে সব তার মায়ের ইচ্ছাতেই। আর আজ দেখ, দুলাভাই নিতে এসেছে তোকে। সে হয়তো বুঝতে পেরেছে যে তোকে এভাবে কষ্ট দেয়া, অবহেলা করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তাইতো এসেছে ফিরে তাইনা? এখন কি তোর এমন করা চলে?’
আমার ননাস আসিফকে জড়িয়ে ধরলো। আসিফও কেমন জানি স্থির হয়ে রইলো কিছুক্ষণ! আসিফের মুখে স্বামী স্ত্রীর এই সম্পর্ক, একে অন্যের প্রতি কেয়ার, ভালোবাসা, ভিত্তির কথা শুনে আমি ভেতরে ভেতরে অনুভব করতে লাগলাম, মানবজন্ম স্বার্থক হয়ে যায় এই ভালোবাসার কথাগুলো শুনলে। স্বার্থক হয়ে উঠে নিজের জীবনের লালিত স্বপ্নগুলো। এক পরশেই যেনো মুগ্ধতা এসে জড়িয়ে নেয় মানুষের সব ভালোবাসার আবেগ, অনুভূতি, অনুভব। বর্ষায় যখন জলেরা খেলে রাস্তায়, ঘাটে, মাটে, মানুষ যখন হাহাকার করে উঠে ফসলি জমি রক্ষার জন্য, তখন যে কৃষক পত্নী আর পতি একে অন্যের ভরসা হয়ে উঠে, এর চেয়ে মাটিমাখা ভালোবাসা আর কি হয়? আর কি খুঁজে পাওয়া যায়?
ননাস বললো,
‘আমার কিছু কথা আছে ওর সাথে। তোমরা আমাকে একটু ওর সাথে একা কথা বলতে দাও’
আমি ড্রইংরুমে গিয়ে দুলাভাইকে ডেকে রুমে নিয়ে এলাম। দুজনকে এক রুমে একা ছেড়ে দিলাম। শাশুড়ি মা বাইরে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
‘তানিয়া মানবে তো?’
আমি বললাম,
‘অবশ্যই মানবে। আপনি চিন্তা করবেন না মা।’
এদিকে রুমের ভেতরে দুজন কী কথা বলছিলো এর বিন্দুমাত্র আন্দাজ আমার ছিলো না। কিছুক্ষণ পর তারা বের হলো। ননাস জানালো, আগামীকাল সে তার শ্বশুর বাড়িতে যাবে। দুলাভাই চলে গেলো। আমি জিজ্ঞেস করার কোন সাহস পেলাম না যে কী কথা বললো তারা দুজনে!
রুমে এলাম। আসিফ সিগারেট টানছে। আয়নায় চুল আচড়াতে আচড়াতে তাকে বললাম
‘তুমি অনেক ভালো বুঝো সম্পর্ক সম্পর্কে তাইনা?’
‘কেন? হঠাৎ এমন বিচক্ষণ কথাবার্তা কেন হচ্ছে?’
‘না আপাকে বুঝিয়েছো দেখলাম। তাই আরকি!’
‘হুম! হয়তো। অথবা না ও। কেন? কোন প্রবলেম?’
‘না। প্রবলেম হবে কেন? ভালো লাগলো তাই বললাম।’
‘আপার সিদ্ধান্ত কী?’
‘আগামীকাল চলে যাবে সে শ্বশুর বাড়িতে।’
‘কিছু বলেছে আর?’
‘না। কিছু বলেনি।’
এদিকে ইফতার শেষ হতে না হতেই আমার শাশুড়ি শ্বশুরকে বললেন, আমার ননদ তামান্নার হবু শ্বশুর বাড়িতে আগামীকাল যেনো ইফতারি নিয়ে চলে যান। আর শাশুড়ি কল দিয়ে তাদের বলে দিলেন যে আগামীকাল আমার শ্বশুর ইফতারী নিয়ে আসছেন তাদের বাসায়।
আমি বারান্দায় কাপড় দিয়ে আসার সময় খেয়াল করলাম কাল যে ছেলেদের চায়নিজে দেখেছিলাম কথা বলতে যে তামান্না আমার না হলে আর কারো হবে না, সেই ছেলেটা বাসার নিচে মোটর সাইকেলে বসে আছে। ছেলেটা এক দৃষ্টিতে উপরের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার চোখের সাথে তার চোখ, চোখাচোখি হলো। আমি ভেতরে চলে এলাম। গ্লাস লাগিয়ে দিলাম৷ রান্নাঘরে গিয়ে শুনতে পারলাম, আমার ননাস আমার শাশুড়িকে বলছে,
‘ডাক্তার দেখাতে যাবো সন্ধ্যায়৷ সব টেস্ট করাবো ফাইনাল। যদি আমি মা হওয়ার ক্ষমতা না রাখি আর, তাহলে আমি আমার হাতেই আমার স্বামীকে নতুন বিয়ে দিবো। নতুন বউ ঘরে আনবো৷ আমার জন্য মানুষটাকে বাবা হওয়ার সাধ থেকে আমি বঞ্চিত রাখতে পারবো না। আমার এই সিদ্ধান্তের উপর আর কারো সিদ্ধান্ত হতে পারবে না। আমি এটাই ফাইনাল করেছি এবং তার সাথে এই শর্তেই যেতে রাজি হয়েছি। জানি না তোমরা কী রিয়েক্ট দেখাবে তবে আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড়’
কিছুক্ষণ পর ননাসের শাশুড়ি আমার শাশুড়িকে কল করে যা তা ভাষায় কিছু কথা শুনালেন। সারকথা এই যে,
‘অলক্ষ্মী অপয়া মেয়েকে আমাদের ঘাড়ে চাপিয়েছেন এখন আমার ছেলেটাকেও তাবিজ করেছেন? আল্লাহ আপনার ঘর রাখবে না। আপনার সংসারও ধ্বংস হয়ে যাবে। ধ্বংস হয়ে যাবে বলে দিলাম। ধ্বংস হয়ে যাবে। ‘
(চলবে)
#বিন্নি_ধানের_খই
#পর্ব_১৮
#মিদহাদ_আহমদ
*দেরি হওয়ার কারণ শেষে যুক্ত করেছি। দেখবেন🙂
ইফতারের পর ননাসকে এসে নিয়ে গেলেন দুলাভাই৷ ডাক্তার দেখাতে গেলেন৷ এদিকে শাশুড়ি মা সন্ধ্যার পর থেকে জায়নামাজে বসে আছেন। একাগ্রচিত্ত নিয়ে প্রার্থনা করছেন আল্লাহর কাছে, সবকিছু যেনো ঠিকঠাক হয়৷ কোন গড়মিল যেনো না হয়৷ ডাক্তার যেনো রিপোর্টে সবকিছু ঠিকঠাক জানায়। আমি চা বানিয়ে শাশুড়ি মায়ের রুমে নিয়ে গেলাম। বিছানার এক কোণে বসে ওনাকে বললাম,
‘মা আপনি চিন্তা করবেন না। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে।’
শাশুড়ি মা আমার কথার কোন জবাব দিলেন না। আজ থেকে এক সপ্তাহ আগেও এমন কথা বললে নিশ্চিত শাশুড়ি মা আমাকে গালমন্দ করা শুরু করতেন। গরীব ঘরের মেয়ে, ছোটলোক এসব বলা শুরু করতেন। আজ একদম নীরবে শুনলেন শুধু।
রাত এগারোটা নাগাদ ননাস বাসায় চলে এলো। ডাক্তার কয়েকটা টেস্ট করাতে দিয়েছেন। আগামীকাল রিপোর্ট দিবে সবকিছুর ফাইনাল। শাশুড়ি মা আগ্রহভরে জানতে চাইলেন,
‘ডাক্তার এমনি কী বলেছে? কোন চিন্তার কারণ নেই তো? তুই মা হতে পারবি তো?’
ননাসের সোজা সাপ্টা জবাব ছিলো এমন,
‘আমি জানি না। আগামীকাল সব ক্লিয়ার হয়ে যাবে’
পরেরদিন সকাল হতেই শাশুড়ি ব্যস্ত হয়ে উঠলেন আমার ননদের হবু শ্বশুরবাড়িতে ইফতার পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে৷ বিকাল নাগাদ শ্বশুর ইফতারি নিয়ে রওয়ানা হলেন৷ শাশুড়ি বারবার বলে দিলেন,
‘সব দুই মণের কম যেনো না হয় মিষ্ঠিমিঠাই। মানুষজন দেখবে৷ আর এই অনুপাতেই আমাদের সমাদর করবে। বলে দিলাম আগে ভাগেই’
শ্বশুরও মাথা নাড়ালেন শাশুড়ির কথায়।
ইফতারের মিনিট দশেক আগে ঘটে গেলো এক মহা অঘটন। যে আমেজ, সমারোহ নিয়ে এই ইফতারি পাঠানো হয়েছে আমার ননদের বাসায়, সেই ইফতারি, সেই আয়োজন, সেই আনন্দ সমেত ফিরে এলেন আমার শ্বশুর। শাশুড়ি একেবারে বিধ্বস্ত হয়ে গেলেন। শ্বশুর কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে দাঁড়ানো অবস্থায়। শাশুড়ি বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন কী হয়েছে, ফিরে এলেন কেন। শ্বশুর কিছুক্ষণ নির্বাক থেকে বললেন,
‘তারা এই বিয়েতে রাজি নয় ‘
‘বিয়েতে রাজি নয় মানে? কী বলছো এসব তুমি?’
শ্বশুরের চোখ বেয়ে পানি নামলো। আমি অনুভব করতে লাগলাম মেয়ের জন্য বাবার চোখের অশ্রুসিক্ত নয়ন! শাশুড়ি আর থামতে পারলেন না। কল দিলেন আমার ননদের হবু শ্বশুরবাড়ি। স্পিকারে রাখা ছিলো মোবাইল। শাশুড়ি কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে আমার ননদের হবু শাশুড়ি বললেন,
‘আমরা আপনাদের ঘরে খেসি করতে পারবো না৷’
‘কেন? এটা আগে মনে ছিলো না? বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক হয়ে গিয়েছে, মানুষ জানাজানি হয়ে গিয়েছে তারপর আপনি বলছেন৷? ‘
‘জানাজানি হয়েছে তো? বিয়ে তো আর হয়নি। ভাগ্য ভালো যে আমরা আগে জানতে পেরেছি। আর নাহলে আমাদের সাথেও একই অবস্থা হতো। আপনারা পারেন কীভাবে এসব গোপন করে রাখতে?’
আমরা কেউ বুঝতে পারলাম না কী বলছেন তিনি। শাশুড়ি কিছুটা মৌণসুরে বললেন,
‘বেয়ান আমাকে খুলে বলবেন আমাদের ভুলটা কোথায়?’
ওপাশ থেকে মহিলাটা হাসলো। তারপর বললো,
‘কে বেয়ান? আমি? আপনার? হাসালেন। আমাদের তো কোন সম্পর্কই হয়নি। আর যা জানতে চান, তা জানার কি আর আপনার বাকি আছে? আপনার বড় মেয়েকে দেখেই আমাদের বুঝা উচিত ছিলো যে তার বাচ্চা হয়নি কেন। আমরা তখন আমলে নেইনাই। কিন্তু যখন আপনার বড় বেয়ান কাল রাতে কল দিয়ে জানালেন সব, জানালেন যে আপনার মেয়ের এত বছর হলো বিয়ের তার পরও বাচ্চা হচ্ছে না, আপনারা তাবিজ দোয়া করেছেন তার ছেলের উপর, তখনই আমার সব শখ আহ্লাদ মিটে গেলো আপনার মেয়েকে আমার ঘরের বউ করে আনার। কে গ্যারান্টি দিবে এক মেয়ে বন্ধ্যা যে ঘরের, সেই ঘরের আরেক মেয়ে এমন হবে না?’
শাশুড়ি আর কোন কথা বলার অবস্থায় রইলেন না। আমি মোবাইল হাতে নিলাম। বললাম,
‘কী বলছেন আপনি এসব? সাইন্টিফিক ভাবে এর কোন প্রমাণ নেই। আর আজকাল সব সমস্যার সমাধান আছে। আপনি তানিয়া আপার উদাহরণ টেনে এনে তামান্নার জীবন নষ্ট করতে পারেন না।’
‘নষ্ট? কে করছে? আমরা? আমাদের ছেলের জীবন তো তোমরা নষ্ট করার পথে ছিলা। আমাদের থেকে গোপন করে রেখেছিলা সব।’
‘আমরা কি বলেছি যে তানিয়া আপার বাচ্চা আছে দুই পাঁচটা? এইটা বললে হয়তো গোপন করা হতো।’
‘এই মেয়ে! খবরদার! যে ঘরের ছেলের বউ এমন মুখবাজ, সে ঘরের মেয়ে না জানি কত খারাপ হতে পারে! সাবধান! আমি আগেভাগে এই বিয়ে থেকে সরে আসতে পেরেছি এজন্য দরগায় জোড়া খাসি মানত করবো৷ আল্লাহ বাঁচিয়েছেন এমন পরিবার থেকে।’
কথাগুলো বলেই মহিলাটা কল কেটে দিলো। শাশুড়ি জ্ঞান হারালেন৷ আমার ননাস কেমন জানি চুপসে গেলো! ননদের মুখে কোন কথা নেই।
শাশুড়িকে নিয়ে আমি আর আসিফ হসপিটালে গেলাম৷ ডাক্তার স্যালাইন পুষ করলো। ঘন্টাখানেক পরে আমরা তাকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম। এ যেকো এক গভীর ঘনঘটা আমাদের পরিবারে ভর করেছে। আসিফকে দেখলাম ভীষণ চিন্তিত। তার পাশে গিয়ে বসে বললাম,
‘চিন্তা করো না আসিফ। সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে দেখো৷ কোন চিন্তা না। আল্লাহ পরীক্ষা নিচ্ছেন হয়তো। এই পরীক্ষা থেকে উতরে যেতে পারলেই সব সুন্দর হয়ে যাবে।’
রুম থেকে আমি চিৎকার শুনতে পেয়ে বের হলাম। শাশুড়ি আকাশ ফাটিয়ে কান্না করতে করতে বলছেন,
‘আমার ঘরে অলক্ষ্মীর ছায়া পড়েছে। সে আসার পর থেকেই এমিন হচ্ছে। অলক্ষ্মী, অপয়া মেয়েটা আসার পর আমার ঘরের সব সুখ শান্তি এক নিমিষে শেষ হয়ে গিয়েছে। এই সকল অশান্তির মূল। সে সব অশান্তি নিয়ে এসেছেন তার ভাগ্য করে।’
শাশুড়ির মুখে এই কথাগুলো আমার অভ্যাস ছিলো এতদিন। আর আজ যেনো সরাসরি বিধলো আমার বুকে এসে! একজন মানুষ কীভাবে পারে নিজেদের খারাপ সময়ের ভাগীদার আমাকে বানিয়ে দিতে! অথচ আমার মন, প্রাণ, ইচ্ছা সব জুড়েই ছিলো তাদের ভালো থাকা, ভালো লাগা। কোনভাবেই তাদের খারাপ চাওয়া আমার উদ্দেশ্যে ছিলো না। শাশুড়ি সবকিছু জেনে শুনেও এসব বলছেন!
ননাস আমাকে এসে বললো,
‘নুপুর তোমার রুমে চলে যাও এখন। মায়ের অবস্থা তো বুঝতেই পারছো। কিছু মনে নিও না।’
আমি ভেতরে চাপা কষ্ট নিয়ে নিজের রুমে এলাম। আসিফ জিজ্ঞেস করলো,
‘মায়ের আবার কী হয়েছে?’
আমি এড়িয়ে গেলাম আসিফকে। বললাম,
‘কিছু না। সব ঠিকঠাক আছে।’
এদিকে আমার ভেতরটা যেনো কষ্টে ফেটে যাচ্ছে একেবারে! আমার শাশুড়ি মায়ের কোন কথাই এতদিন আমার বুকে বিধতো না। আমাকে কষ্ট দিতো কিন্তু কষ্টে রাখতো না। আর আজ? আজ তিনি কী অবলীলায় নিজের উপর আসা দুঃখগুলো আমার উপর চাপিয়ে দিলেন! আমি গ্রামের মেয়ে, কখনো কথা বলি না মুখের উপর, কোন প্রতিবাদ করি না, কোন উত্তর দিতে গিয়েও দেই না, এই কি আমার অপরাধ? নাকি আমার সরলতাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে? মানুষ মানুষের ভালো মানুষীকে কীভাবে ভন্ডামিতে রূপ দিয়ে দেয় সহজে! অবাক হতে হয়ে। নিজের মনের সাথে পিষিয়ে যেতে হয় মানুষের এহেন আচরণে। মনের কষ্টের চেয়ে বড় কোন কষ্ট সাগর আর কিছু হতে পারে না। হতে পারে না।
এদিকে রাত এগারোটা নাগাদ তানিয়াকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারে রিপোর্ট আনতে গেলো তানিয়ার স্বামী। তানিয়ার অস্থির মন জুড়ে শুধু একটা খবর পাওয়ার সাধ এখন। সে যেনো মা হতে পারে। আজ ডাক্তারের এই একটা হ্যাঁ বলার উপর তানিয়ার জীবনের অনেক কিছুই নির্ভরশীল। এগারোটা চল্লিশ নাগাদ তাদের সিরিয়াল এলো৷ কাপা মন আর আশার প্রদীপ নিয়ে ঢুকলো ডাক্তারের রুমে। ডাক্তার তানিয়াকে আর তানিয়ার স্বামীকে বললেন….
(চলবে)