#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৪৪
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[❌কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ❌]
“এরপর যদি আর একটা শব্দও বাড়াও আমি ভুলে যাবো তোমরা আমার পরিবারের কেউ।মা,বাবারা কখনো এমন সিদ্ধান্ত বারে বর নিজের সন্তানের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে না।”
“আমার কথাটা শোন তুই,শরৎকে বলা…”
“আর কিছু শুনতে চাই না আমি।”
কথাটা বলেই ফোনটা ধপ করে কেঁটে দিলো শ্রীজা।বিছানার ওপর মাথার চুল দু হাত দিয়ে আকড়ে ধরে বসে আছে।চোখ থেকে অবিরাম জল গড়িয়ে পড়ছে।কিছু ভাবতে পারছে না ও,আর কিছু ভালো লাগছে না।সহ্যের সীমা পেরিয়ে গেছে।কি করবে?কি বলবে?কিছু বুঝতে পারছে না।মন চাইছে সব কিছু ছেড়ে-ছুড়ে একলা একা কোনো অজানায় পারি জমাতে।সে এখন খুব ক্লান্ত আর নিতে পারছে না।এসব ভাবতে ভাবতেই দুর্বল শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিলো।পুরো সকাল কিছু খাওয়া হয়নি তার,শারিরীকভাবে ততোটাও ক্লান্তি তাকে গ্রাস করতে না পারলেও মানসিক ক্লান্তিরা যেনো পুরোদমে তাকে আকড়ে ধরছে।ইকটু মানসিক শান্তি চাই তার,খুব বেশি না ইকটু।এসব ভাবতে ভাবতেই দুচোখ বুজে ফেললো ঘুমের আবেশে।
শ্রীজার খট করে ফোন কেঁটে দেয়াতেই চিন্তিতো হয়ে পড়লো শ্রীজার মা।শ্রীজার বাবা শরৎকে ডেকে পাঠিয়েছেন আর ডিভোর্সের কথাও বলে দিয়েছেন।শরৎ তেমন কিছু না বললেও তার আচরণের ভঙ্গিতে বোঝা গিয়েছে সে আসছে।আর তাই শ্রীজাকে বলে বোঝাতে চেয়েছিলেন তিনি,কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো?
ফোনটা টেবিলে রেখে একা হাতে ঘর -দোয়ার গোছাতে লাগলেন।কিছু রান্না-বান্নাও বাকি আছে তার।এখন সেসব করতে হবে।
______🥀_____
চোখের সামনে ডিভোর্স পেপারটাকে টুকরো টুকরো করে ফেললো শরৎ।অবাক হয়ে আছেন শ্রীজার বাবা।শ্রীজার মায়ের চোখে মুখে চরম ভীতি প্রকাশ পাচ্ছে।শরৎ দাঁত চেঁপে চোখ শক্ত করে বন্ধ করে দাড়িয়ে রইলো।পুরো শরীর ব্যাথায় বিষিয়ে যাচ্ছে।জ্বর কমার বদলে বাড়ছে যেনো।এই অসুস্থ শরীর নিয়ে সে এখানে এসেছে শুধু-মাত্র শ্রীজার বাবার এমন সিদ্ধান্তের কারণটা জানতে।
“পেপার্সগুলো ছিড়লে কেনো শরৎ?তুমি জানো কতো টাকা গিয়েছে এগুলো তৈরি করতে?”
শরৎ বিরক্ত হলো প্রচুর,চোখ বুজে নিয়ে বললো…
“টাকার গরম অন্ততপক্ষে আমাকে দেখাবেন না ফুপা।টাকা শুধু আপনি না আমিও কামাই।”
“তুমি আমার সাথে তর্ক করছো?”
“নাহ্ জবাব দিচ্ছি,চুপ থাকলে তো অসহ্যকর সিদ্ধান্তগুলো চাপিয়ে দিবেন,তাই জবাব দিচ্ছি।”
শরৎয়ের বাবা গম্ভির মুখে বললেন…
“আমি এক কথা বারে বার বলতে পছন্দ করি না,তাই যা বলার বলে দিয়েছি এখন তুমি যা করার করবে।”
শরৎ কিছুটা ত্যাড়ামো করেই বললো…
“আমারও এক কাজ বারে বার করতে ভালো লাগে না।আমিও বলে দিচ্ছি এই পেপারস্ গুলো যতবার আমার সামনে আসবে আমি ততোবারই ছিড়ে কুটিকুটি করে দেবো।”
শরৎ আর কিছু না বলে বেরিয়ে পড়লো।সে এসব কথা শ্রীজার বাবাকে বলতে চায়নি কিন্তু উনিই বাধ্য করেছেন,আর বেশি বাজে কোনো পরিস্থিতি যেনো না হয় তাই সে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়েছে।
__________
শ্রীজা ঘুম থেকে উঠে হাই তুলতে তুলতে বেলকণিতে গিয়ে দাড়ালো,হুট করেই নিচে তাকাতেই চমকে উঠলো,নিজের চোখকে বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে।
শরৎ বেলকনির নিচে দাড়িয়ে আছে শ্রীজা দু তলায় থাকে,তাই তার চেনায় বা দেখায় কোনো ভুল হবে না নিশ্চই।
শরৎয়ের হাতে একটা গিটার,শ্রীজা জানে শরৎ কলেজ লাইফে টুকটাক গান করতো শখের বসে কিন্তু,,এখন তো?এখন কি করে?
শরৎ তার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে,ঘুমের জন্য মেয়েটার চুল এলোমেলো হয়ো গিয়েছে খানিকটা,চোখ-মুক ফুলে গিয়েছে।বিশেষ করে ঠোঁটেগুলো,কিউট লাগছে তাকে দেখতে।শরৎ খুব বেশি দেড়ি করলো না।চোখ বুঝে নিজের সমস্ত কল্পনা আবেগ মিশিয়ে,, গিটারের টু টাং আওয়াজের সুর তুলে গাইতে লাগলো….
~ভাল্লাগে হাটঁতে তোর হাত ধরে….
ভাবনা তোর আসচে দিন, রাত ধরে।
ভাল্লাগে হাঁটতে তোর হাত ধরে…….
ভাবনা তোর আসচে দিন রাত ধরে..।
এলো-মেলো মনটাকে কি করে কে আর রাখে?
কেনো আমি এতো করে তোকে চাই?
__
এতোটুকু শুনে শ্রীজা মুখ ভেংচি দিয়ে ঘরে চলে যেতে নিলেই শরৎ চোখে মুখে অপরাধ-বোধ জাগিয়ে কানে ধরে আবার গাইতে লাগলো…
~পারবো না…… আমি ছাড়তে তোকে..!
পারবো না… আমি ভুলতে তোকে..!
পারবো না… ছেড়ে বাচঁতে তোকে…
হয়ে যা না.. রাজিইই একবার…..🥺
___
শ্রীজা বেলকণি থেকে ফিরে চোখ ছোট ছোট করে বেলকণির নিচে শরৎয়ের দিকে তিক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে,শরৎ আবার গাইতে লাগলো…
~ভাল্লাগেএএএ…. চাইলে তুই আর চোখেএএ
চাইছি তোর ওই দু চোখ আর তোকে…
~ভাল্লাগে চাইলে তুই আর চোখে,চাইছি তোর ওই দু চোখ আর তোকে…
এলো-মেলো দিস করে,সারাটা দুপুর ধরে।
বসে বসে বুণে চলি কল্পনাই..
পারবো নাআআআআ,আমি ছাড়তে তোকে!
পারবো নাআআআ,আমি ভুলতে তোকে,
পারবো নাআআআ ছেড়ে বাচঁতে তোকে হয়ে যা না রাজি একবারর…
শ্রীজা কোমরে হাত রেখে অভিমান করে বলতে লাগলো….
~দেখা দিয়ে তুই চলে চলে যাস,কি কারনে বল এতো পিছু চাস?আমিও কি চেয়ে বসি তোর কাছে…
সাধা-সিধে মন করে কি এখন
কি কারণে বল এতো উচাটন?
আমিও কি পেয়ে বসি তোর কাছে…
কথা… ছিলো…,কথা রাখার…
আমায় ডাকার…
এই বলে শ্রীজা চলে যেতে নিলে শরৎ বললো…
~পারবো না আমি,ছাড়তে তোকে…
পারবো না আমি ভুলতে তোকে..
শরৎ বাকিটা বলার আগেই শ্রীজা বললো…
“ছাড়তে আর ভুলতে যদি নাই পারতে,তাহলে ধরে রাখতে পারলে না কেনো?এখন কি ঢং করতে আসছেন নাকি?আমি কিছু শুনছি না বাড়ি ফিরে যান।”
শরৎ বললো…
“আমি কি বাড়িতে ঢুকবো?”
শ্রীজা অবাক হলো,তারপর প্রচন্ড ভয় নিয়ে বললো…
“দি দেখলে কুরুক্ষেত্র বাধিঁয়ে ফেলবে।আর আপনি কোন পরিচয়ে বাড়িতে প্রবেশ করবেন?চলে যান।লোকে বাজে বলবে।”
শরৎ আবার বললো…
“তাহলে কি চলে যাবো?”
শ্রীজা চোখ-মুখ শক্ত করে বললো…
“বললাম তো চলে যান।”
শরৎ কান্না কান্না ভাব করে বললো…
“আমার জন্য ইকটুও মায়া হলো না তোর?এভাবে বলতে পারলি?”
শ্রীজা প্রচন্ড অবাক হলো,একটা মানুষের এতোটা পরিবর্তন কি করে হয়?শরৎ এমন আচরণ করছে তা দেখে।শ্রীজা অধৈর্য হয়ে বললো…
“দি এসে প্লিজ এখান থেকে সরে যান।প্লিজ…..”
শরৎ বললো…
“ওকে সরে যাচ্ছি।”
শরৎ চলে যেতেই শ্রীজা নিজের ঘরে গিয়ে, ঘরের দরজা ধপ করে লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়লো।যদি লোকটা আবার আসে?আচ্ছা কি করে জানলো সে তার দির বাড়িতে আছে?লোকেশনই বা কি করে পেলো.?এসব বিড়বিড়িয়ে বলতে লাগলো…..
“তোমার দির বাড়ির লোকেশন বের করা আমার বা হাতের কাজ।”
“উহ্ বললেই হলো বা হাতের কাজ,এতো সোজা…”
বাকিটা বলতে গিয়েই চুপ হয়ে গেলো শ্রীজা।মনে পড়লো আরে এটা শরৎয়ের গলা না,হ্যা তারই তো।শরৎ এখানে কি করে?এটা ভেবেই তখনি ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছে ফিরে দেখলো শরৎ তার সামনে দাড়িয়ে আছে।ওয়াশ-রুম থেকে বেরিয়েছে সে।শরৎ শ্রীজার কাছে এসে ধপ করে বসে পড়ে বললো…
“ফ্রিজ থেকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আয় তো,যা গরম পড়েছে!”
শ্রীজা অবাক হয়ে বললো…
“আপনি এখানে কি করে?”
শরৎ হাই তুলে বলতে লাগলো…
“তোর দি পাশের ঘরে তোর দুলাভাইয়ের সাথে রোমান্স করতেসে।আর তোর দির শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি তো ঘুম..।বাড়ির দরজাটা আমাকে জামাই আদর করবার জন্য খুলে রাখসিলো।তাই আমিও বড়দের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দান করে।ঘরে প্রবেশ করলাম,আর তারপর আমার বউয়ের ঘরেও প্রবেশ করলাম।এখন বউয়ের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি।”
শ্রীজা রেগে মেগে বোম হয়ে বললো…
“চোরের মতো অন্যের ঘরে প্রবেশ করে,আবার বড় বড় গলায় কথাও বলছেন।আপনি কি চোর…”
“নাহ্ আমি কেন চোর হবো?আমার বউয়ের বর চোর,আমি না।”
শ্রীজা বিড়বিড়িয়ে বললো…
“পাগল হয়ে গিয়েছে।”
তারপর আবার বললো…
“দ্রুত যাবেন এখান থেকে,তা না হলে ভালো হবে না কিন্তু।”
“যদি না যাই।”
“আমি কিন্তু চিৎকার করবো…”
শরৎ শ্রীজার কথা শুনে হু হু করে হাসঁতে লাগলো।হাঁসি থামানোর চেস্টা করতে করতে বললো…
“সিরিয়াসলি শ্রীজা?তুই চিৎকার করবি?আচ্ছা কর চিৎকার আমি দেখি কেমন চিৎকার করতে পারিস।”
#চলবে_
#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৪৫
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[❌কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ❌]
আজ বেশ অনেকদিন পর বাড়ি থেকে বের হচ্ছে শ্রীজা।তার সাথে অনুর যাওয়ার কথা থাকলেও অনু কিছু কাজে আটকে গেছে তাই সে যাবে না তাই তার একা যেতে হবে।বেশ কয়েক মাস যাবৎ সে খেয়াল করছে তার শরীরের ওজন অতিরিক্ত কমে যাচ্ছে।শরীরের ভাঁজে ভাঁজে প্রায়ই ব্যাথা হয়।তাছাড়াও অতিরিক্ত ঘামা মাথা ঘোরাও আছে।আজ দুদিন ধরে আবার জ্বর প্রথমে শ্রীজা ভেবেছিলো শরৎয়ের জন্য চিন্তা করে করে এমনটা হয়েছে।কিন্তু তার এই অবস্থা দেখে অনুই তাকে জোড় করে পাঠিয়েছে।অনু বলেছিলো যাওয়ার সময় মাকে সাথে করে নিয়ে যেতে কিন্তু সে তা তার মা কে জানায়নি।
হসপিটালে গিয়ে ডক্টরের সাথে কিছু কথা বলার পর তিনি কয়েকটা টেস্ট বা পরীক্ষা করতে দিলেন।রিপোর্ট কাল বিকেলে নিয়ে যেতে হবে।শ্রীজা ক্লান্ত শরীর নিয়ে রিকশায় উঠে বসলো হাতে একটা মিনারেল মাম পানির বোতল।পানি খেয়ে ওড়না দিয়ে ঘাম মুচচ্ছে সে এমনিতেই আজ বেশ রোদ পড়েছে,তার মাঝে আবার এমন অসুস্থতা।রিকশা আলা মামা রিকশা চালিয়ে যাচ্ছেন।এর মাঝে রাস্তায় হুট করে শ্রীজা শরৎকে দেখতে পেলো।দুজনের চোখা-চোখি হতেই।শ্রীজা প্রচন্ত ভয় পেয়ে রিকশা আলা কে বললো…
“মামা হুডিটা ওপড়ে উঠিয়ে দিবেন ইকটু অনেক বেশি রোদ পড়েছে তো,এর ওপর আমি ইকটু অসুস্থ।”
রিকশা আলা রিকশা চালাতে চালাতে পেছনে মাথা ঘুরিয়ে বললো…
“আফা আফনে উডাইয়া লন উইজে হাত দিয়া রিকশার মাথার দুই সাইডে চাপ দিয়া উডাইলেই হইয়া যাইবো।”
শ্রীজা আমতা আমতা করে বললো…
“মামা আমি স্যালাইন নিয়েছি তো,তাই পারছি না আপনি ইকটু উঠিয়ে দিলে..”
“আইস্সা আইস্সা ঠিক আসে।”
রিকশা আলা রিকশা থেকে নেমে রিকশার হুডি টান দিয়ে ওঠাতে নিলেই,সেখানে হুট করেই শরৎ হাজির।শরৎকে দেখে শ্রীজা ঘাবড়ে গেলো প্রচন্ড।সে এই ভয়টাই পাচ্ছিলো।শরৎকে দেখে শ্রীজার প্রচন্ড বিরক্ত লাগলো।লোকটা এখন আসতে হলো?মাথায় শুধু শরৎয়ের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার চিন্তা।কিভাবে সে শরৎ থেকে মুক্তি পাবে।শ্রাবন মাস গ্রীষ্ম প্রায় শেষের দিকে,তবুও গরমের আঁচ কমছে না,সূর্যের প্রখর তেজ আর রৌদ্রদগ্ধ প্রতিটা প্রহর।শ্রীজা শরৎয়ের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে প্রশ্ন করলো…
“কী সমস্যা?এভাবে পথ আটকে রেখেছেন কেনো?রিকশার কাছ থেকে সরুন দ্রুত।”
শরৎ শ্রীজার দিকে তাকিয়ে বললো…
“চল আমার সাথে।”
শ্রীজা চট করে রেগে গেলো,ভয়ানক রাগা রাগলো সে এমনিতেই প্রখর রৌদ্রময় দুপুরের পুরোটা ভার তার মাথার ওপর পড়ছে।এর মধ্যে শরৎয়ের এসব।শ্রীজা চটে গিয়ে বললো…
“ফাজলামো করছেন আমার সাথে মাঝ রাস্তায়?মুক্তি চেয়েছিলেন না?দিয়ে দিয়েছি,আর কিছু দেয়ার মতো নেই আমার।”
শরৎ বললো…
“আছে তো…
“মানে?”
“আমার তো তোকে লাগবে।”
শ্রীজা রাগে হাত মুঠো করে নিলো তারপর চোখ বন্ধ করে রিকশা আলা কে উদ্দেশ্য করে বললো…
“মামা রিকশা টানুন।”
শরৎ হুট করেই রিকশায় উঠে বসলো,রিকশা আলা কে বললো…
“মামা রিকশা টানো,আমার বউয়ের কথা অমান্য করলে জেল হবে কিন্তু।”
শ্রীজা চোখ পাকিয়ে দেখলো শরৎয়ের দিকে,রিকশা থেকে নেমো সোজা হাটা লাগালো মাঝ রাস্তায়।শরৎও নেমে পড়লো,রিকশায় পড়ে থাকা পানির বোতল থেকে এক ঢোক পানি খেয়ে শ্রীজার পেছন পেছন দৌড়।ওদিকে রিকশা আলা মামা হাক দিয়ে বলছেন…
“আরে মামা আমার ভাড়া ডা দিয়া যাওওওও…”
শরৎ পেছন ফিরে সিটের দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দিলো।ওখানেই টাকাটা রাখা।শ্রীজা চলে যাচ্ছে।দেখে শরৎ দ্রুত পা চালাতে লাগলো।কোনো রকমে শ্রীজার সামনে গিয়ে শ্রীজাকে প্রশ্ন করে বসলো…
“তুই আমার থেকে পালিয়ে বেরাচ্ছিস কেনো?”
শ্রীজা প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও পরে শক্তমুখে বলে উঠলো…
“একবার বললে কথা বোঝেন না?কালা হয়ে গিয়েছেন?”
শরৎ নিজের শরীরে হাত দিয়ে চেক করতে করতে বললো…
“সত্যি কালো হয়ে গেছি?এই রোদে তোর পেছন পেছন ঘুরে ঘুরে আমার এই হাল হয়েছে।”
শ্রীজা বুঝতে পারলো শরৎ ইচ্ছে করে কথা পেচাচ্ছে কিছু না বলে আবার হাঁটতে লাগলো সে,শরৎ ওকে থামাতে গিয়েও ব্যার্থ হলো।
______🥀_____
চারু দুপুরের জন্য টুকটাক রান্না করছে।ফোনে কল আসতেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ইশুর ফোন
রিসিভ করার পর বললো…
“কিরে শ্রীজা ভাবির কি খবর খোঁজ পেয়েছিস?কোথায় আছে এখন?”
চারু ওড়না দিয়ে ঘাম মুছে বললো…
“হুম,ভাবি ওনার মায়ের বাড়িতে আছে,ভাইয়ার সাথে টুকটাক রাগ হয়েছে তাই ওই আরকি অভিমান করে চলে গিয়েছে।আবার অভিমান ভাঙলে আসবে,শরৎ ভাই যা চেষ্টা করছেহ্।বেচারার জন্য মায়া,হয় বড্ড।তা কি মনে করে ফোন করলি আজ?”
চারু সবটা কথা বললো না।লুকিয়ে নিলো অনেকটা।ইশা কথার সুর বদলে নরম গলায় বললো…
“আচ্ছা চারু একটা কথা বলবি আমাকে?”
চারু অবুঝের মতো প্রশ্ন করলো…
“কি বলবো?”
ইশা আমতা আমতা করে বললো…
“তুই কি নাদিম ভাইকে ভালো বাসিস না?”
চারুর শান্ত মেজাজ যেনো হঠাৎ গরম হয়ে গেলো।জোর গলায় বললো…
“এসব ফালতু প্রশ্ন করার জন্য তুই আমাকে ফোন দিয়েছিস?তোকে আমি বারণ করেছি ইশা,তুই তাও এসব প্রশ্ন করিস।আবার এই কথা তুললে তোকে সব যায়গা থেকে আমি ব্লক করবো!”
ইশা নরম গলায় বললো…
“আরে রাগিস কেনো?আমি তো জাস্ট প্রশ্ন করলূম।আগে তো নাদিম ভাইয়ের কথা বললে খুশি হোতি আর এখন।প্রশ্ন করলেই বোম..”
“শোন ইশা আমার এখন আর এসব ভালো লাগে না।এসব আমি মনেও করতে চাই না,প্লিজ বাদ দে না এসব। আমি রিকুয়েস্ট করছি তোর কাছে।”
“আচ্ছা আজই শেষ,শোন না।নাদিম ভাইয়ের কথা শুনলে তুই এমন ফায়ার হয়ে যাস কেনো?এখন কি আগের মতো ভালো লাগে না ভাইয়াকে?তাই না।বলেছিলাম ওসব বয়সের দোষ আবেগ।”
চারু হুট করে হেঁসে্ ফেললো।ভাঙা গলায় বললো…
“কিছু আবেগ থেকেই ভালোবাসার তৈরি হয়।কিছু মানুষ সে আবেগ ধরে রেখে,আপন করে বাচঁতে চায়।কিন্তু ভাগ্য আর নিয়তির কাছে আমরা অসহায়্।একটা সময় পরাজয় মেনে নিয়ে সব ভোলার চেষ্টা করতে হয়।আমিও তাই করছি।ভাগ্যকে লিখা যায় না,মাঝে মাঝে হুট করেই ভাগ্য পরিবর্তন হয়ে যায়।সেটা সবার ক্ষেত্রে হয় না।আমি সব মেনে নিতে চাইছি।সব ভুলে যেতে চাইছি।তাই এসব আর মনে করাস না আমায়।দয়া কর,সত্যটা মনে হলেই ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যায়।”
চারু আর কিছু বলতে পারলো না।গলায় কথা আটকে আসছে।চোখ-মুখ ইতিমধ্যেই লাল।আর বলতে পারলো না।এবার নির্ঘাত কেঁদেই দেবে।সে কাউকে এসব জানতে দিতে চায় না,নিজের দূর্বলতাও জানাতে চায়না কাউকে কাউকে না।
________
“আচ্ছা মা,কেউ যখন কাউকে ভালোবাসে আর তাকে না পাওয়ার চান্স থাকে না তখন তার কি করা উচিঁত।”
নাইমা কাথা সেলাই করছেন নকশি কাথা ছেলের নাতি-পুতির জন্য আগ থেকেই যতো-শতো ব্যাবস্থা।নকশি কাথার ফুলগুলোর দিকটা সেলাই করতে করতে বললেন…
“যদি তাকে কেউ ভালোবাসে তার উচিঁত তাকে মূল্য দেয়া।কারন যে ভালোবাসে সে তার সবটা দিয়ে তার ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখার চেস্টা করে।আর যে তোমাকে ভালো রাখতে চায় তোমার উচিঁত তাকে ভালোবাসার চেস্টা করা।”
নাদিম আর কিছু বললো না।চুপচাপ স্থান ত্যাগ করলো।
______
ছাঁদের এক কোণায় দাড়িয়ে আছে নাদিম আর চারু।চারু মূলতো কাপড় রোদে দিতে এসেছে।সে ছাদেঁ কাপড় দিতে দিতে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নাদিম তার পেছনে দাড়িয়ে আছে।সে দ্রুত কাপড় ছড়িয়ে দিয়ে সিড়ি দিয়ে নামতে নিতেই,হুট করে নাদিম চারুকে ডাক দেয়…
#চলবে_