অবেলায় তোমার আগমন পর্ব-৪৬+৪৭

0
659

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
#পর্ব_সংখ্যা_৪৬
[❌কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ❌]

সন্ধ্যা ৭ টা বেজে ৩০ মিনিট,হসপিটালের এক কোণায় বসে রিপোর্টগুলোর জন্য ওয়েট করছে শ্রীজা,প্রায় আধ ঘন্টা পর তার ডাক পড়লো। ডক্টর কিছুটা অবাক হয়েছিলো পেশেন্টকে একা দেখে তবুও সময় নষ্ট হবে দেখে তেমন কিছু বলেনি রিপোর্টের সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছেন।হসপিটালের সব কাজ-ঝামেলা শেষ হবার পর শ্রীজা বাড়ির পথে রওনা দিলো।শ্রীজা খেয়াল করেছিলো শরৎ শেই আগের যায়গাটাতে দাড়িয়ে আছে তাই নিজেকে আড়াল করে,চুপিসারে সি এন জি ডাকিয়ে নিয়ে বাড়ির পথে এগোতে লাগলো।
_______🥀_____

আজ আমি আমার বাড়িতে যাবো ,দিয়ের বাড়িতে আর কতোদিন?বাড়ি ফেরার পরই মা আমাকে জিঙ্গেস করতে লাগলো কেমন দিন কাল কাটলো আমার,আমি শুধু ছোট ছোট শব্দের উত্তর দিচ্ছিলাম মাকে।হাত মুখ ধুয়ে নিয়ে আমার ঘরটার খাটের ওপর গিয়ে বসলাম।ঘরটার ঘ্রাণটা আমার চিরচেনা কতো পুরাতন।কতো শতো স্মৃতিতে ঘেরা।বিছানায় শুয়ে আড়-চোখে বারান্দায়(বেলকণি) তাকালাম আমার প্রিয় রক্তজবা ফুল গাছটাতে কতোগুলো ফুটেছে অথচ কানে ফুল গোজার এই আমিটাই শুধু আসবার সময় পাই না।ফুল ছেড়া নিয়ে দিও বকে না আমায় হাহ্।এসব ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।মা ঘরে এলো হাতে দু গ্লাস শরবত ফ্রিজ থেকে কমকমে ঠান্ডা বরফের কিউব বের করে তার কুচি কুচি করে লেবুর শরবত করেছে মা।সব-সময় এভাবেই করে।মা আমার দিকে শরবত এগিয়ে দিয়ে নিজে শরবতের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে বললেন…

“ছাদে আমার লেবু গাছে কগোগুলো কাগজি লেবু হয়েছে বুঝলি সেই গাছের তাজা লেবু আর বিটনুন দিয়ে শরবত করেছি তোর জন্য,একটা রিফ্রেশমেন্ট পাবি নে খা।”

বলে মা কয়েক ঢোগে পুরো শরবতটা শেষ করে নিলো।আমাকে না খেতে দেখে মা পিতলের চা চামচটা দিয়ে শরবতটা নেড়ে নিয়ে শরবতে ভরপুর কাঁচের গ্লাসটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো,বললো…

“উম নে ঠান্ডা ঠান্ডা খেয়ে নে,পরে গরমের তাপে নরমাল হয়ে গেলে খেতে স্বাদহীন লাগবে তো।গাছের লেবু বুঝলি,ট্যাং ফ্যাংয়ে স্যাগারিন ছাড়া আর কি পাবি?নে ধর,এটা খা।আমি দুটো আম কেঁটে আনি তোর বাবা বাজার থেকে দু কেজি রুপালি আম কিনে এনেছে গুড়ের মতো মিষ্টি।এটা দ্রুত শেষ কর আমি ততোক্ষণে আমিগুলো কেঁটে আনি বড়।”

আমি শুধু মাথা নাড়লাম,আমার সম্মতি পেয়ে মা রান্নাঘরে চলে গেলো।মায়ের এই কেয়ারগুলো আমার খুব ভালো লাগে,অনেক বেশি আবেগী হয়ে যাই মাঝে মাঝে আজ অনেক বেশীই আবেগী হয়ে গেছি যদিও কারণটা আমার জানা।তাই তো চোখের কোণে জল জমে এলো।শরবতের গ্লাসটা নিয়ে দেখলাম শরবতের ওপর লেবুর খোসা আর কুচোঁ করা বরফগুলো ভাসছে,খাওয়ার ইচ্ছে নেই তবুও মায়ের মন রাখতে এক টানে খেয়ে নিলাম সবটা।শরবত শেষ হতেই হাতের কনুই দিয়ে ঠোঁটের ওপড়ের অংশটা মুছতে নিলেই মা জোড় গলায় ধমকের স্বরে বললো…

“মারবো এক চড়,রাস্তার নোংরা ধুলো-বালি জামায় সেটে আছে,আর সেই নোংরা সমেধ তুই মুখ মুচ্ছিস?”

টিস্যু-বক্স থেকে একটা টিস্যু দ্রুত গতিতে টান দিয়ে বের করে নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে দিলো।বললো…

“এই নে এটা দিয়ে মুখ মোছ,আর আমগুলো খা,হাত নোংরা করবিনা একদম কাটা চামচ দিয়ে খাবি।”

আমি হাসঁলাম মায়ের শাষনগুলো দেখে।ভালোই লাগছে তবে মাঝে মাঝে হুট করেই রাগ উঠে যায় মায়ের কিছু কর্ম-কান্ড দেখে তবুও পরে মায়ের কাছেই ফিরে আসে।কিউব করে কেঁটে রাখা আম খেতে খেতে বললাম…

“বাবা কই?বাড়িতে তো দেখছি না।”

গ্লাস ধুতে ধুতে মা রান্নাঘর থেকে উত্তর দিলো…

“তুই আসবি শুনে বাজারে গেলো মাছ-টাছ কিনতে কিছু বাজারও করবে বলেছে।”

“বাড়িতে যা আছে তাই রান্না করতে শুধু শুধুই কষ্ট বাবার তো আবার প্রশারের সমস্যা।”

“বাড়িতে আর আছে কি?ওই শশা,পটল,ঝিঙে,টমেটো এসব সবজি খেয়ে আমাদের মতো দিন পার করতে পারবি না,জ্বিহবার ছাল উঠে যাবে।”

“মানে?মাছ-মাংস ছেড়ে নিরামিষ ভোজি হলে নাকি?”

মা হুট করেই চটলো ভিষন রাগী গলায় গরগর করতে করতে বললো…

“তোর বাপের ভুড়ি কেমন বড় হয়েছে দেখেছিস?ওজন কতো বেড়েছে সে খবর জানিস?ডাক্তারের কাছে চেকআপ করাতে গিয়ে তো সেই ধমক খেয়ে এলো তাও এসব ছাই-পাশ গেলা ছাড়ে না।আমিষ তো গেলোই সাথে মশলা-পাতিও গেলো।রোগ বাড়ছে দিন দিন ডাক্তার খাবারের রুটিন করে দিয়েছে সবজি আর সবজি প্রায় দু মাস ধরে সবজি খাচ্ছি শুধু তোর ওই বাপের জন্য।সেদ্ধ সবজি মানুষ খায়?কোনো তেল-মশলা নাই নিজেকে দিন দিন তোর বাপের মতো ছাগল মনে হয় খালি ঘাসের মতো সবজি গিলি।প্রথমে আমার জন্য আলাদা রাঁধতাম কিন্তু তোর বাপতো চুরির খাতায়ও নাম লিখিয়ে সে উপায়ও গোল্লায় গেলো তোর বাপের জন্য।সব মরা আমার কপালে এসেই জোটে।”

আমি হাঁসি আটকাতে পারলাম হু-হা করে হেঁসে উঠলাম মা রাগে ফুঁসছে রিতিমতো সাপের মতো ফুসুরফাসুর আওয়াজ ছাড়ছে।

দুপুরে রান্না হলো লাউ পাতায় চিংড়ির পাতুড়ী। শিল-পাটায় বাটা শুকনো লঙ্কা ছোট ছোট দেশি আলু দিয়ে আলুমাখা।আর টেমোটো দিয়ে পাবদা মাছের ঝোল।শুকনো বড়ই দিয়ে টক মুসুর ডাল।বাবা জম্পেশ খেলো আর মায়ের বকুনিতো আছেই খাবার পাতেই বাবাকে শাষিয়ে বলছিলো…

“এই এই এভাবে খাচ্ছো কেন?ধীরে খাও একদম আলুমাখা নেবে না,ওটায় বেশ ঝাল আছে শ্রীজার জন্য করেছি ধরবে না ওটা।”

বাবা কি আর মানে?ভুলিয়ে-ভালিয়ে ঠিক খেয়ে নিয়েছো।এক ফাঁকে ফোনটা বের করে নিয়ে চার্জ দিয়েছিলাম।ফোনের ওয়াইফাই অন থাকায় হুট করেই মেসেন্জার থেকে কল এলো,দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেলাম।বাবা বারণ করলেন না,দেখে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম।সন্দেহর তীর সঠিক স্থানে আঘাত হেনেছে শরৎ ভাই এক্টিভ দেখে ফোন করেছে।ফোনটা কাটলাম না,বেচাঁরা অনেক দিন পর ফোন করেছে এইটু কথা বলাই যায়।ফোনটা ধরলাম শরৎভাি সাথে সাথেই কথার গিরি থেকে নতুন নতুন কথা আমদানি করে আমার কাছে ছুড়ে দিতে লাগলেন…

“শ্রীজা তুই আমাকে বোঝার চেষ্টা কর?আমার আমার কোনো কিছু ঠিক নেই,আমি সত্যি বলছি সব ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছ।আমি আমি বুঝতে পেরেছি আমি ভুল আমি সত্যিই তোকেই চাই আর তোকেই ভালোবাসি।আমি তুই ছাড়া ঠিক নেই,প্লিজ চলে আয় আর ভুল হবে না।সরি আমি সত্যি সরি।মাফ কর আমায়।আমি অধম ক্ষমা করা তো মহৎ গুণ তুই তো মহৎ ক্ষমা কর আমায়।ইকটু দয়া কর সুযোগ দে একটা আমি নিজেকে শুধরে নিতে চাই প্লিজ শ্রীজা মাফ কর, প্লিজ আমি আমি আর নিতে পারছি না।বিচ্ছেদের ভয় আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে যে যাই বলুক আমি মেনে নেবো কিন্তু তুই তুই কিছু বললে করলে আমি মানতে পারছি না বুকের মধ্যখানে আঘাত লাগছে আগুনে দগ্ধ হচ্ছে এ যায়গা নিভিয়ে আগুন।মায়া কর,আমায় ক্ষমা কর।”

শরৎ ভাই আর কিছু বলতে পারছেন না।কষ্টরা কান্নারা বোধয় গলার স্বর জড়িয়ে-প্যাচিয়ে ধরেছে, শিকল বন্ধি হয়ে এবার বোধয় কাদঁছেন উনি নিঃশব্দে আমি অদ্ভুতভাবে তা অনুভব করতে পারছি।আমার ইচ্ছে হলো কিছুটা বলার তাই বলতে লাগলাম…

“জানেন শরৎ?মাঝে মাঝে আমাদের অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে বলতে পারি না।আবার না বলার দহনে ছাই হয়ে যাই পুড়ে।আমার ক্ষেতে বোধয় এটাই হচ্ছে।আমি আপনাকে মাফ করলাম,কিন্তু নিয়তি আমাকে কখনোই মাফ করেছি একটা অদ্ভুদ কারণে?দোষ ছাড়াই,কি দোষ করলাম?কি পাপ করলাম তা আমার অজানা হয়তোবা পুরো বিশ্ব-ভ্রমান্ডেরই তা অজানা।বিধাতা হয়তোবাহ্ জানে আমি নির্দোষ তবুও আমি শাস্তি পাচ্ছি অকারণেই, ভালোবাসলে শাস্তিও পেতে হয় শরৎ ভাই তাই বলে…।
সে যাই হোক,আমি কি বলবো?ভাবতে পারছি না।বলার শব্দ হারিয়ে গেছে বাক্যগুলো মুছে গেছে আমায় ক্ষমা করবে।আমি ক্ষমা করার কেউ না বিধাতা তোমায় ক্ষমা করুক আমায় ক্ষমা করুক,দুজনকে একসাথে না করলে দুজনকেই না করুক।যদি আমাকে করে তোমায় না করে তবে চরম বিচ্ছেদ হবে শরৎ,সব ছাড়-খাড় হবে।ধোঁয়াশা গুলো হারিয়ে সব সত্যি খুঁজে পাবে কিন্তু আমায় পাবে না।অদৃশ্য হবো আমি দৃশ্যমান হবে বাকিসব।”

বলেই টুপ করে ফোন-কল কেঁটে দিলো শ্রীজা।শরৎ কিছুই বুঝতে পারলো না শুধু বুঝলো সে কিছু প্রশ্নে আটকা পড়েছে সব গোলকধাঁধার মতো হয়ে যাচ্ছে।ধোঁয়ায় ঢেকে যাচ্ছে,ভালোবাসারা হারিয়ে যাচ্ছে।সব এলো-মেলো থেকে লন্ড-ভন্ড হয়ে যাচ্ছে।সব শেষ হয়ে যাচ্ছে কিচ্ছু ভালো হচ্ছে না কিচ্ছু না।

#চলবে_

#অবেলায়_তোমার_আগমন🥀
#পর্ব_সংখ্যা_৪৭
#Adrrija_Aman(লেখনীতে)
[❌কার্টেসি_ছাড়া_কপি_নিষিদ্ধ❌]

“ডাকলেন কেনো?”

চারুর এমন প্রশ্ন করাটা স্বাভাবিক নাদিম বললো…

“কেনো আবার?কথা বলার জন্য।”

চারুর কপালে এবার কিছুটা বিরক্তির রেখা দেখা গেলো।পিছু ফিরে নাদিমকে বললো…

“আমার সাথে আবার আপনার কিসের কথা?”

নাদিম এগিয়ে এলো ধীর কন্ঠে বললো…

“আরেহ্ চড়ুইপাখি রাগছো কেন?চড়ুই পাখি ছটর-ফটর করলে সেটা মানা যায়।কিন্তু রাগটা মোটেও শোভনীয় নয়।”

চারুর রাগ এবার সপ্তম আকাশে আঙুল তুলে বললো…

“বাড়াবাড়ি করছেন কিন্তু,আজকের পর কালকে আপনার বিয়ে তরতাজা বউ ফেলে বাড়ির ভাড়াটিয়ার সাথে ফাজলামো করছেন?ভালো হবে না বলে দিলাম দূরে সরুন।বজ্জাত লোক”

নাদিম দু কদম পিছিয়ে গেলো হাতজোড়া ওপরে উঠিয়ে বললো…

“আচ্ছা আচ্ছা সারেন্ডার করলাম,কিন্তু আমি ফাজলামো করছি না, তোমার সাথে আমার সত্যিই জরুরী কিছু কথা আছে।তুমি এখন যেতে পারবে না।”

চারু সামনে এগিয়ে নীল রঙয়ের কাপড়ের বালতিটা ছাঁদের মেঝেতে রেখে হাতের ওপড় হাত রেখে নাদিমের দিকে তাকিয়ে বললো…

“বলুন….”

নাদিম হাত নামিয়ে নিলো,বললো…

“আমাকে চেনো কতোদিন ধরে?”

চারু ভকরে গেলো,চোখের পলক দ্রুত ফেলতে লাগলো তারপর বললো…

“আপনি আমাকে যতোদিন ধরে চেনেন।”

নাদিম ছাঁদের উঁচু দেয়ালে ধপ করে উঠে বসলো,চারুর মনে ভয় হলো।ভাবলো…

“মানুষ এতো নির্ভয়ে এই যায়গাটাতে বসে কি করে?যদি পরে টরে যায় তখন!বারণ করবো নাকি?”

এরপর তার মনে হলো…

“না থাক,পরে আবার কি না কি ভাববে।”

নাদিম বললো…

“মিথ্যে বলছো আমাকে?”

“আজব মিথ্যে বলবো কেন?আন্দাজে কথা বলবেন না,আপনি জানেন আমি মিথ্যে বলছি না সত্য?”

চোখ বন্ধ করে মনে মনে ভয় আর ওপড়ে সাহস দেখিয়ে বললো,চারু।

নাদিম হালকা হেঁসে বললো…

“জানি বলেই বলছি, কোথা থেকে দেখেছো চিনেছো সবটা জানা আমার।”

চারু মিথ্যে রাগ দেখাতে লাগলো কেনো রকমে কেটে পরার জন্য,কিন্তু ভেতরে তার চরম ভয়।

“ফালতু বকবেন না।আমি যাচ্ছি।আপমার মতো ফালতু সময় নিয়ে ঘুড়ি না আমি।”

বলে বালতিটা মেঝে থেকে উঠিয়ে নিয়ে চলে যাওয়ার পথ ধরতেই,নাদিম পেছন থেকে জোড় গলায় বললো…

“ভুলে গেছো সব?আমি বলবো নাকি?না তুমি স্বীকার করবে?”

চারু থামলো না তা দেখে নাদিম বলতে লাগলো…

“নিশিকে তো চেনো?নিজের বেষ্টফ্রেন্ডকে তো আর অস্বীকার করতে পারবে না!ওর বার্থডেতে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য ছোট্ট একটা অনুষ্ঠান করেছিলো ওর ভাই।আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ইমান,ওকেও চেনার কথা মাঝে সাঝেই আমাদের বাড়িতে আসে,আর বেস্টুর ভাই কে চিনবে না এটা মানা যায় না।ছুটির পর ইমানের কথাতেই কিন্তু নিশিকে নিয়ে তুমি ইশা সহ আরো কয়েকজন রেস্টুরেন্টে আসো,সেখানে আমি ইমান আর সাদিক ছিলাম সাথে ছিলো বিথি আমাদেরই সার্কেলের।আমি তোমাকে দেখে ছিলাম বাট কাজের ক্ষেত্রে ব্যাস্ত থাকায় তেমন খেয়াল করা হয়নি,তারওপর মুখের মাক্স খুলছিলেই না তুমি, কেকটাও মুখে ঢুকিয়ে নিয়ে আবার মাক্স পড়ে নিয়েছিলে।সেদিনই ফাস্ট দেখা,এম আই রাইট?”

চারু থমকে গেলো,হৃদস্পন্দনটাই যেনো থমকে যেতে চাইলো কিন্তু থামা তো যাবে না।নাদিম আবার বললো…

ইশা আমায় নিয়ে মোটামোটি ভালোই গুণগান করছিলো।নিশি বোধয় মজা করে বলেইছিলো “বেচারা আজম সিংগেল,তুই চাইলে ওরে সামান্য দয়া দেখিয়ে মিংগেল করেই দিতে পারিস।”

সেদিন তুমি মুখ ভেংচি দিয়ে কি বলেছিলে মনে আছে?বলে ফিক করে হেঁসে দিলো।চারু নিশ্চুপ,নাদিম চারুর মতো করে বললো..

“উহ্ যেই না চেহারা নাম রাখসে পেয়ারা।ওইটার গালফ্রেন্ড হবো আমি দেখতে শলার ঝাড়ুর মতো,কেমন ডেউয়া ডেউয়া চোখ,শর এখান থেকে।”

চারুর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হলো,ও শুধু মনে মনে ভাবছে…

“এগুলো এই লোক কি করে জানলো।”

“ঠিক এক বছর পর আমার বার্থডেতে তুমি নিজের ডায়েরীতে লিখে আমায় উইশ করেছিলে।সেটার ফটোও বন্ধু মহলে শেয়ার করতে ভুলোনি।”

চারুর লজ্জায় পুরো মুখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করছে।সব সিক্রেট কথাগুলো যেনো খোলা বইয়ের মতো প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে।

“আমাকে প্রোপোজ করবার জন্য যখন সবাই ঠেলা-ঠেলি করতে লাগতো তখন তুমি ভয়ে জমতে থাকতে।ভয়টা ছিলো এই যদি তোমায় রিজেক্ট করি বা মিস-বিহেভ করি।আর প্রোপোজ না করার আরেজটা মুখ্য কারণ ছিলো রিলেশনটা তুমি লাইক করো না।”

নাদিম বললো…

“সব কথা বাদ,এখন আসল কথা যেটা সেটা হচ্ছে।আমার মনে হয় তোমার চেয়ে বেটার লাইফ পাটনার বোধয় আমি আর পাবো না।আর পেলেও আমি শুধুই তোমায় চাই এবং তুমি চাইলে আমিও চাইবো।আমি জানি তুমি আমার সবটা জানো,সবই জানো কিছু বলার মতো নেই তোমায়।আমার অনুভুতিগুলোকে সম্মান করো,তাই সত্যি আমি লাকি। আমি একটা সুযোগ চাইছি বিয়ে করবে আমায়?এক সাথে বুড়ো-বুড়ি তো হতে পারবো না,কারণ খুব আগেই বুড়ো হয়ে গেছি।তুমি বুড়ি হতে হতে আমার এক ঠেং কবরে তলে ডুকে যাবে,তাও আমি চাইছি তুমি আমি দুজনকে দুজনে মানিয়ে নেই,স্বার্থহীনভাবে আমি তোমায় ভালোবাসি না,তুমি আমায় ভালোবাসো বলেই আমি তোমায় ভালোবাসতে চাই।তোমার মতো করে বসাতে পারবো না হয়তো কিন্তু শিখিয়ে তো নিতে পারবে?”

নাদিম অধির আগ্রহ নিয়ে বসে রইলো চারুর প্রশ্নের উত্তরের আশায়।আজ সে সবটা খোলাসা করতে চায়।তার তৃষ্ণার্ত চোখ বলে দিচ্ছে তার মনের ভাষা মনের অবক্ত্য কথা।চোখও তো কথা বলে,গোপন কথা মনের কথা।

______🥀_____

সকাল সকাল ফোনের ক্রিং ক্রিং আওয়াজে ঘুম ভাংলো আমার।বালিশের নিচ থেকে ফোন বের করে। ঘোলাটে চোখে দেখলাম শরৎ ভাই ফোন করেছে।মোটেও অবাক হোলাম না।ফোনটাও কাটলাম না,ধরলাম।ফোনটা কানের পাশে ধরেই ধম করে নরম তুলতুলে বালিশের ওপড় শুয়ে পড়লাম।ঘুম জড়ানো কন্ঠে জানা শর্তেও প্রশ্ন করলাম…

“কে?”

ফোনের অপর পাশে থাকা বিশেষ ব্যাক্তিটি অবাক হলেন কিঞ্চিত পরিমানে।তবুও ভদ্রতার খাতিরেই বোধয় উত্তর দিলেন…

“আমি শরৎ।”

আমার সোজা প্রশ্ন…

“ফোন কেনো করেছেন?”

উনি না বলতে বলতেও আমতা আমতা করে বললেন…

“আ আম দেখা করবি ইকটু।”

আমি কিছুটা না পুরোটাই ব্যাঙ্গ করে বললাম…

“বাংলায় একটা প্রবাদবাক্য আছে শুনবেন.. আচ্ছা আমিই বলি.. বইতে দিলে খাইতে চায়,খাইতে দিলে ফুইতে(শুতে) চায়।”

শরৎ গলা খাকরি দিয়ে উঠলেন,হাস-ফাস করছেন উনি ফোনের অপর প্রান্তে থাকা শর্তেও ম্যাজিকের মতো বিষয়টা বুঝে গেলাম,এই যে লোকটা বেশ লজ্জা পেয়েছেন।ম্যাজিক ম্যানের আপটেড ভার্সন হয়ে গেলাম তাও আবার ফিমেল।ভাবতেই কেমন হাঁসি পাচ্ছে।শরৎ ভাই ক্ষুদ্র একটা উত্তর দিলেন…

“কথা আছে।”

আবারও প্রশ্ন করলাম…

“কি কথা।”

যেনো প্রশ্ন-উত্তর পর্ব চলছে।শরৎ ভাইয়ের ধৈর্য বেড়েছে বৈকি।প্রমাণ পাচ্ছি খুব,তার কর্ম-কান্ডের মাধ্যমে।কিন্তু আফসোস এই যে তার পরিবরর্তনটা যদি আরো কিছুদিন আগে হতো,মন্দ হতো না।একটা দীর্ঘশ্বাসকে পরম যত্নে নিজের ভেতরে পুরে নিলাম,ওকে যে বের হতে দেয়া যাবে বা।কিছুতেই না,চোখে ঠান্ডা ঠান্ডা অনুভব করলাম।নিজেকে মনে মনে প্রশ্ন করলাম… আ আ আমি কি কাঁদছি,এই না না কাঁদা যাবে না।আরে আমি কাঁদবো কেনো?আমি তো ভালো আছি আমি খুব সুখি একটা মেয়ে।আমায় হাঁসতে হবে খুব করে প্রাণ খুলে হাঁসতে হবে।

“তুই আয় তোদের বাড়ির পশ্চিম দিকের ওই নদীর পাড়টার দিকে ঘুড়তে যাবো ইকটু।”

শরৎ ভাইয়ের কথায় ভাবনার আর আনমনা প্রশ্নের রেশ কাটলো আমার।বললাম…

“কখন আসবো?”

“আধ ঘন্টা পর!”

“এখন বাজে কটা?”

শরৎ নিজের চামড়ার কালো রঙের হাত ঘড়ির দিকে তাকালো।ঘড়ির দুটো কাটা জানান দিচ্ছে এখন সময় ৮ টা বেজে ৩০ মিনিট।শরৎ কিছুটা সময় ব্যায় করে বললো…

“৮ টা ৩০!”

আমাকে যেনো অলসতা ঘিড়ে ধরলো বললাম…

“উহ্ নাহ্,আমি যেতে পারবো না এখন,বিকেলে যেতে চাইলে পারেন।”

শরৎ ফুস করে ছোট্ট একটা দম ফেলে জিঙ্গেস করলো…

“কটার দিকে.?”

আমি কিছুক্ষন ভেবে বললাম…

“ওই বিকেল চারটার দিকে,তখন রোদটাও পড়ে যাবে, আর হেটেও বেশ মজা পাওয়া যাবে।”

“আচ্ছা শোন,তোর বাসন্তি রঙয়ের শাড়িটা আছে না ও বাড়িতে?”

“হ্যা আছে তো।”

“ওটা পরে আসিস,ভালো লাগবে।”

“ওকেহ্”

ফোনটা এবারও আগে আমিই কাটলাম।মাঝে মাঝে ভাবতে খুব অবাক লাগে যাকো আমি একটা সময় হৃদয় দিয়ে চাইতাম সে এখন আমায় মন প্রাণ দিয়ে চায়।আমি লোকটার মন পাবার জন্য শাড়ি পরে তৈরি হয়ে থাকতাম নিষ্ঠুর লোকটা ফিরেও তাকাতো না মন ভাঙতো প্রতিক্ষণ প্রতি প্রহরে।আজ সে আমায় নিজ থেকে বলে তার কাছে পরিপাটি হয়ে যেতে কতো চাহিদা তার।তারও মন ভাঙবে আমার চেয়ে গুরুতরভাবেই ভাঙবে।লোকটা সে ব্যাথায় উন্মাদ না হয় সে চিন্তায় এখন প্রহর কাটে আমার।উন্মাদ হবার মতো কি ভালোবাসে আমায়?যদি তা হয় আমি যে চরম শান্তি পাবো,যদিও তা দেখার মতো সৌভাগ্য কিংবা দুর্ভাগ্য আমার হবে না।তবুও আমি খুশি হবো।বিধাতাও যখন মুখ ফিরায় তখন কি আর করার থাকে?তবুও যা সে করে ভালোর জন্যই করে।তার করা আমার ভালো যদি আমার চোখে বেদনার অশ্রু আনে আমি তাও মেনে নিবো হাঁসি মুখে,মেনে নিচ্ছিতো।

________🌸______

বিকেল ৩ টা বেজে ৩০ মিনিট যদিও সময়টা আনুমানিক বলা ২৯ বা ২৮ বোধয় বাজে।২-১ মিনিটেরই ব্যাপার ওটা বাঙালিদের কাছে তেমন কিছু না,নিত্তান্ত্যই সাধারণ বিষয়।আমি তো শরৎ ভাইয়ের কথা মতো শাড়ি ঠাড়ি পড়ে একদম রেডি।মোজয়টা পরে সু দুটো পরছি আপাততো।ফোনটা ব্যাগে আছে কিনা চ্যাক করে নিলাম।হ্যা সব ঠিক ঠাক।এবার দরজাটা মেলে বাহিরে বের হলাম।লিফ্টের সামনে যাবার আগে মাকে কিছুটা আওয়াজ করে বললাম…

“ও মা দরজাটা দিয়ে দাও,খুলে রেখো না।”

মা দরজা লাগাবার জন্য এগোতেই আমি লিফ্টের বাটনে ক্লিক করলাম।

_🥱_

শ্রীজা চলে যেতেই শ্রীজার বাবা তার স্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন…

“ওই কই গেলো?”

শ্রীজার মা ভ্রু কুচঁকে নিয়ে বললেন…

“এমন ঢং করছো যেনো কিছুই জানো না।তোমার মেয়ে ওমন না বলে সেঁজেগুজে কার সাথে দেখা করতে যেতে পারে তা বোঝার জ্ঞানও তোমার হয়নি?বলি এতো বছর ধরে সংসার করো কোন গুণে?”

পরক্ষনেই কিছুটা ইমোশনাল হয়ে বললেন….

“আজ আমার মেয়েটা নিজের বরের সাথে ইকটু সুখ-দুঃখের আলাপ করবে, তাও তা লুকিয়ে লুকিয়ে করতে হচ্ছে।শুধু তোমার জন্যে।”

শ্রীজার মায়ের ওমন রাগ দেখে তিনি বললেন…

“এমা,আমি আমার কি করলাম।”

শ্রীজার মা বললেন…

“কি করোনি বলো তা।দুটোকে জুদা(আলাদা) করার নাটকটাকি আমি এটেছিলাম?হ্যা..”

শ্রীজার বাবা অপরাধীর মতো মুখ করে বললেন…

“যা করেছি তা তো ভালোর জন্যই করেছি তাই না।ওই দুটোই তো বেশি তিড়িংবিড়িং করছিলো তাই…”

“তাই বলে মিথ্যে ডিভোর্সের কাগজ পত্তর বানিয়ে তুমি হুমকি দিবে দুটোকে.?কি ভেবোছো?তোমার হুমকিতে কাজ হয়ে যাবে আর দুটো হে হে হে করে দাঁত কেলিয়ে হাসঁতো হাঁসতে এক হয়ে যাবে।ভারতীবাংলা সিনেমা পেয়েছো নাকি?”

“ওমন ঢং করছো যেনো তুমি আমার কথায় সাড়া দাওনি।”

শ্রীজার মা সাথে সাথে জ্বলন্ত কয়লার মতো করে জ্বল জ্বল করতে লাগলেন,ফুঁসিয়ে উঠে বললেন…

“কি?তুমি বলতে চাইছো আমি দুটোর সংসার ভাঙতে চেয়েছি?তোমার মতো আমার মাথায়ও ব্যামো আছে?তোমার কথার ধারাতেই বুঝতে পেরেছি আমি।”

ধপ করে উনি ফ্লোরে বসে পড়লেন,কপাল চাপড়ে কাদঁতে কাঁদতে বলতে লাগলেন…

“ও বাবাগো এসে দেখে যাও গো এ আমার কি হলো গো।তুমি তো আবেএওও না,হায় হায় নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারলাম এ কি করলাম গোওওও,কেনো এই বেটার সাথে প্রেম করে বিয়ে করতে গেলাম গোওও,এবার আমার কি হবে গোওও,বাবাগো সেদিন তোমার কথা শুনলে আমার আজ এই দিন দেখতে হতো নাগো,এ্যাএএএএ হে হে হেএএ।”

শ্রীজার মা কাঁদছেন ঠিকই কিন্তু মজার বিষয় তার চোখ থেকে পানি পড়ছে না।শ্রীজার বাবা ধীর পায়ে সোফার দিকে এগিয়ে গেলেন সোফার এক কোণে অবহেলা পরে থাকা ফতুয়াটা দ্রুত গায়ে দিয়ে আস্তে আস্তে দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়লেন।এ মহিলার সাথে প্রায় ৩৫ বছর সংসার ওনার ৫ বছর চুটিয়ে প্রেম অতঃপর পালিয়ে বিয়ে যদিও পরিবার থেকে মেনে নিয়েছে।কিন্তু শ্রীজার মাকে তিনি কখনোই জোড় গলায় কিছু বলেননি যতো রাগ সব শ্রীজার মাই তার কাছে দেখিয়েছেন।আর এই যে এখন কাঁদছে সেটা ওনার অতি ভালোবাসার ফল।একে ন্যাকা কান্না বললে তিনি ঘর ভাসিয়ে কাঁদতে লাগেন তাই শ্রীজার বাবা এমন পরিস্থিতি হলেই সর্বদা এভাবে ঘর থেকে টুপ করে বেরিয়ে পরেন।তার মতে তার স্ত্রীকে শান্তনা দিতে গিয়ে ওনার জালে ফেঁসে ছটফটানোর চেয়ে বেশ হয়,পাড়ার মোড়ের সেলিম ভাইয়ের টংয়ের দোকানে বসে বসে লেবু চা খাওয়া আর মহল্লার বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দেয়া।

#চলবে_