#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২০
ভাইয়ের উপরে ভয়ংকর রেগে আছে হৈমন্তী। অরিন রাগে দুঃখে শাড়ি চেঞ্জ করে সাদা রঙের গাউন পরেছে। চোখের কাজল ঘেটে চারদিকে ছডিয়ে আছে। ওকে দেখে হৈমন্তীর বারবার বিধবা বিধবা ফিলিংস হচ্ছে। কি সুন্দর সেজেছিল মেয়েটা। তাঁর এই পরিণতি শুধু ওর ভাইয়ের জন্য মানতে পারছে না।। হৈমন্তী মুখ ভার করে মাসুদের পাশে বসে আছে। মাসুদ সেলফি তুলছে আর গার্লফ্রেন্ডকে পাঠাচ্ছে। এটাই যেনো ওর একমাত্র কাজ। হৈমন্তী বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে বলল,
> ভাইয়া মেয়েদের মতো সেলফি তুলছো কেনো? তুমি আগেও যেমন ছিলে এখনো তেমনই আছো। ভাবি নতুন কিছু দেখবে না। পুরাতন মুখ বারবার দেখার কি আছে।
হৈমন্তীর কথা শুনে মাসুদ মুখটা করুন করে বলল,
> পুরাতন মুখ মানে কি হৈমী? তোর গাধা বর তোকে এসব শিখাচ্ছে? প্রিয়জনের মুখ নতুন আর পুরাতন কিরে? সব সময় নতুন লাগে। প্রেম ট্রেম তো কখনও করিসনি। বেচারা গাধা ডাক্তার তোর মতোই নিরামিষ।
মাসুদ কথাটা শেষ করে আবারও সেলফি তুলতে মন দিল। হৈমন্তী রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। মাসুদ ওর বরকে গাধা বলেছে বিষয়টা খুব খারাপ। ওর বরকে গাধা কেনো বলবে ও মানতে পারছে না। তাই রাগ করে এক ঝটকায় মাসুদের ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলল,
> লোকজন খারাপ বলবে। বরকে চুপচাপ থাকতে হয়। বাদরের মতো সেলফি তোলা বন্ধ করো। রাতে ছাড়া ফোন পাবে না।
মাসুদ মুখটা কাচুমাচু করে ফেলল। ফোনটা ওর খুব দরকারি। ঘনঘন ফোন করবে রুনি। যদি ওকে না পেয়েছে তবে মেয়েটা রাগ করবে। সেই রাগ ভাঙাতে গেলে রীতিমতো যুদ্ধ করতে হবে। মাসুদ মুখটা মলিন করে বলল,
> বোন আমার প্লিজ ফোনটা দিয়ে দে। তোর ভাবি রেগে যাবে।
মাসুদের আহাজারিতে হৈমন্তীর হেলদোল হলো না। ফোনটা নাচাতে নাচাতে উঠে আসলো। মাসুদ করুণ দৃষ্টিতে সেদিকে তাঁকিয়ে থাকলো। আশেপাশে তাঁকিয়ে বড় ভাবিকে খোঁজ করলো। কিন্তু পেলো না। বন্ধুরা এসেছে। মাসুদ ওদের সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। আরাফাত আড় চোখে অরিনকে দেখছে। সাদা ড্রেসে মেয়েটাকে দেখতে বেশ শুভ্র লাগছে কিন্তু এই হলুদের দিনে মেয়েটা সাদা কেনো পরেছে।মনের মধ্যে খুতখুত করছে। আরাফাত বেশিক্ষণ কৌতূহল রাখতে পারলো না। অরিনের পাশে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
> আমি এখনো জীবিত আছি তাঁর মধ্যেই তুমি সাদা কাপড়ে ঘুরছো? এই ছিল তোমার মনে?
অরিন ভ্রু কুচকে বলল,
> রঙিন কাপড়ে পেত্নী লাগে তাই সাদা পরেছি। এখন যদি তাঁতেও সমস্যা হয় তবে ড্রেস ছাড়া ঘুরবো। সমস্যা নেই।
অরিনের কাষ্ঠ জবাবে আরাফাত কেশে উঠলো। মেয়েটা যে রেগে আছে বুঝতে বাকী নেই। কিন্তু তাই বলে ড্রেস ছাড়া ঘুরবে কেমন ভয়ানক চিন্তা। আরাফাত লাজুক হেসে বলল,
> লজ্জা শরমের বালাই নেই। কেমন দেখতে লাগবে তোমাকে ভেবেই আমার লজ্জা লাগছে।
অরিন বিরক্ত হলো আরাফাতের কথা শুনে। রাগ করে বলেছে মানেই কি ও এভাবে ঘুরবে নাকি। অরিন ওকে ইগনোর করে তমলালের দিকে পা বাড়ালো। তমাল দূরে দাঁড়িয়ে আছে। আরাফাত ওর মতিগতি বুঝতে পেরে খপ করে ওর হাতটা ধরে নিজের বুকের সঙ্গে নিয়ে বলল,
> ভুল করেও যাওয়ার চেষ্টা করোনা। আমি পছন্দ করছি না। আমি ভয়ানক খারাপ মানুষ। নিজের জিনিসের ভাগাভাগি আমি করিনা। একবার হারিয়েছি সেই কষ্টে মরে যেতে মন চাই। দ্বিতীয়বার সেই ভুল আমি করবো না। আজ থেকে আমি ছাড়া কোনো ছেলের সামনে তুমি আসবে না। ঘরে যাও।
অরিন চোখ বড়বড় করে ফেলল আরাফাতের কথা শুনে। ওর তো ঘর বন্ধি থাকতে অসুবিধা নেই। আরাফাত বললে অরিন আজীবনের জন্য ঘরে নিজেকে বন্ধ করে নিতে পারবে কিন্তু সেখানে আরাফাতকেও থাকতে হবে। দুজন মিলে ঘরটাকে প্রেমের লীলাভূমিতে পরিণত করবে। মানুষের ভাবনার সঙ্গে বাস্তবের যে মিল হয়না। ইচ্ছে করলেও আরাফাত ওর সঙ্গে থাকবে না অরিন ভালো করেই জানে। কেনো যে এই ত্যাড়া ব্যাকা ছেলেটার উপরে নজর পড়েছিল আল্লাহ ভালো জানে। বোনের প্রেমিক হিসেবেই ভালো ছিল। অরিন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলল। ওকে ভাবতে দেখে আরাফাত ফিসফিস করে বলল,
> কি ভাবছো?
অরিন উত্তর দিতে গেল কিন্তু তার আগেই হৈমন্তী ছুটে এসে আরাফাতের সামনে কোমরে হাত দিয়ে বলল,
> তুমি আবার ওকে কষ্ট দিচ্ছ? একজন হবু বউকে সেলফি পাঠিয়ে শহীদ করে দিচ্ছে আর অন্যদিকে তুমি বউকে সামনে পেয়ে ঝগড়া করছো। ভাইয়ার থেকে শিখো কিছু।
আরাফাত ভ্র কুচকে বলল,
> ভাইয়ার ফোন তোর কাছে কেনো? তুই কিন্তু দিনদিন অসভ্য হয়ে উঠেছিস। বড় ভাইকে সম্মান দিবি তানা খোঁচা দিচ্ছিস?
> ভাইয়া ঝগড়া বাদ দাও। চলো ভাবিকে হলুদ লাগিয়ে আসি। বড় ভাবি রেডি এখন তুমি আর ছোট ভাবি রেডি হলেই হবে।
আরাফাত ভ্রু কুচকে বলল,
> যাওয়া যায় কিন্তু ওকে বল চেঞ্জ করে আসতে। বড় ভাবিকে দেখে কিছু শিখতে বল।
> ভাইয়া তুমি ঝগড়া করছো কেনো? যাও গাড়ি বের করো আমি ওকে রেডি করে আসছি। একটা কথাও আর বলবে না।
হৈমন্তী রাগ দেখিয়ে অরিনকে নিয়ে চলে গেলো। আরাফাত বোনেকে প্রচুর ভালোবাসে। ওকে ধমক দেওয়ার ক্ষমাতা ওর নেই। মেয়েটা এই বাড়ির সন্ধ্যা প্রদিপের মতো। সকলের প্রিয়।
_________________
জেল গেটে দাঁড়িয়ে আছে আবির। রাসেলকে দেখতে এসেছে। ছেলেটার মাথায় সত্যিই সমস্যা দেখা দিয়েছে। মহিত ফেরারি হয়েছে। পুলিশে খোঁজ করছে। হঠাৎ কোথায় গায়েব হয়েছে আল্লাহ্ ভালো জানে। আবির আসতে চাইছিল না কিন্তু শেষমেশ আসতে হলো। তাছাড়া ছেলেটা সুস্থ না হলে বিচার সম্ভব না। আগে সুস্থ করতে হবে তাই ডাক্তার দেখানোর জন্য আবেদন করেছে। দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করবে। এইটুকু পযর্ন্ত দায়িত্ব ছিল করে দিয়েছে। জুলিখা কাজী বাড়িতে ফিরে গেছেন। উনার দুই মেয়ে দেশের বাইরে থাকে। ভাইদের খবর পেয়ে দ্রুত দেশে ফিরবে। বড় মেয়ে বিবাহিত কিন্তু ছোটটার বিয়ে হয়নি। আবির সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর যাইহোক ওদের সঙ্গে আর যোগাযোগ রাখবে না। গোলনাহার বানুর শরীর মোটামুটি সুস্থ। উনি মেয়ের নাম গন্ধ সহ্য করতে পারছেন না। আবির খুব যত্ন নিয়ে উনার চিকিৎসা করছেন। আসমা বেগম শাশুড়ির সেবাযত্নের ত্রুটি রাখছেন না। আবির জেল গেট থেকে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।এখন পড়ন্ত বিকেল,সারাদিন গেছে হৈমন্তীর খোঁজ নেই। আবির পকেট থেকে ফোনটা বের করে হৈমন্তীকে ফোন দিলো। দুবার ফোন বাজার পরে মেয়েটা ফোন রিসিভ করলো। আবিরের কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে প্রায় চিৎকার করে বলল,
> ডাকাত সাহেব আমরা নতুন ভাবিকে দেখতে এসেছি। এখানে দারুণ মজা হচ্ছে। আমরা রঙ মেখেছি। ভাবির ভাইবোনেরা খুব মজাদার মানুষ। আপনি দেখবেন আমাকে? অপেক্ষা করুণ ভিডিও কল দিচ্ছি।
হৈমন্তী দ্রুত কল কেটে দিয়ে ভিডিও কল করলো। আবির ভ্রু কুচকে কল রিসিভ করতেই রঙে লাল হওয়া একটা মুখ সামনে ভেসে উঠলো। আবিরের হাসি পেলো। ও শব্দ করে হেসে বলল,
> এই মহান কাজটা কে করেছে শুনি? আমার বউকে আসল রূপে ফিরিয় দিয়েছে। আমি আসা পযর্ন্ত মুখ পরিস্কার করবে না। আমি এসে দেখবো। পেত্নী একটা।
হৈমন্তী মুখ ভার করে বলল,
> আপনি আমাকে পেত্নী বলেছেন তো কথা নেই আপনার সঙ্গে।
আবির কথা বলতে চাইলো কিন্তু হৈমন্তী সুযোগ দিলো না ফোন কেটে দিয়ে বন্ধ করে রাখলো। আবির কয়েকবার চেষ্টা করে যখন ফোন গেলো না তখন আরাফাতকে ফোন দিয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করতে বলে দ্রুত গাড়ি ছাড়লো। মেয়েটা রেগে আছে।
হৈমন্তী ফোন কেটে দিয়ে মেয়েদের সঙ্গে রঙ খেলতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো। ওর হলুদ ড্রেস লাঙ রঙে মাখামাখি অবস্থা। আরাফাতের অবস্থাও শোচনীয়। শুধু রক্ষা পেয়েছে অরিন আর চয়নিকা। ওরা বাড়ির বউ তাই ওদের বিশেষ ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আরাফাত রাজীব আর হৈমন্তীর অবস্থা একদম খারাপ। আরাফাত রাগী মানুষ। অন্যদিকে রাজীব বেশ হাসিখুশি। মেয়ে পক্ষের দলের সঙ্গে ওদের রঙ নিয়ে তুমুল লড়াই চলছে। যে যাকে সুযোগ পেয়েছে মাথার উপরে আবির ঢেলে দিয়েছে। চয়নিকা কটমট করছে। লোকটা মেয়েদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছে দেখে। বাড়িতে নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে ধোলাই দিবে। অন্যদিকে অরিনের চোখ চকচক করছে। বেজায় খুশী লাগছে আরাফাতকে রঙ মাখতে দেখে। লোকটা যে সবার সঙ্গে মিলেমিশে হাসাহাসি করছে এতেই ওর শান্তি। হৈমন্তী রঙ নিয়ে একপাশে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে স্টেজ ঘেরা হয়েছে সেখানে রুনি বসে আছে। মেয়েটা বারবার মাসুদকে ফোন করছে। কিন্তু হৈমী মাসুদের ফোন ওর রুমে লুকিয়ে রেখে এসেছে। রুনি কিছু বলতেও পারছে না আবার সহ্য করতেও পারছে না। হাসি হাসি মুখের আড়ালে লুকিয়ে আছে রাগী একটা মুখ। হৈমন্তীর ধ্যান ঙালো হলুদ পাঞ্জাবী পরা একটা যুবককে কন্ঠ শুনে। ছেলেটা মিষ্টি হেসে বলল,
> আমি রুনি আপার কাজীন। আপনাকে ভয়ংকর সুন্দর লাগছে। ছেলের কে আপনি?
হৈমন্তী মাথার কাপড়টা আরও একটু খানি টেনে নিয়ে ভ্রু কুচকে বলল,
> ধন্যবাদ। আমি ছেলের বোন।
> কোন কলেজে পড়েন? আপনার ফোন নাম্বার পাওয়া যাবে?
হৈমন্তী জোর করে ওষ্ঠে হাসি ফুটিয়ে উত্তর দিতে গেলো কিন্তু তার আগেই পেছনে থেকে আবির উত্তর দিলো,
> আমার বউয়ের নাম্বার চেয়েছো সাহস তো কমনা তোমার যুবক? তুমি জানো আমি কে?
আবিরের কথা শুনে ছেলেট থতমত খেয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল জানেনা। আবির বিরক্তি নিয়ে বলল,
> আমি ডাকাত ডাক্তার। এইযে দেখছো এই মেয়েটার একমাত্র বর। আমি নিজেই মুখিয়ে থাকি কখন বউ আমাকে ফোন করবে আর তুমি আসছো আমার বউয়ের নাম্বার নিতে। ওসব হচ্ছে না। তুমি বরং অন্য কোথাও লাইন দাও।
ছেলেটা মাথা নাড়ালো। এরকম ভয়ানক ঝামেলা হবে জানলে কখনও হৈমন্তীর নাম্বার নিতে আসতো না। ও মিনমিনে কন্ঠে আসছি বলে কেটে পড়লো। ছেলেটার যেতে দেরি হলো কিন্তু হৈমন্তীর উপরে ঝাপিয়ে পড়তে আবিরের দেরি হলো না। আবির দুহাতে রঙটা হৈমন্তীর সারা মুখে লেপ্টে দিয়ে দাঁত বের করে বলল,
> এবার ঠিক আছে।
হৈমন্তী রেগে হাতের রঙ আবিরে মুখে দিতে গেলো কিন্তু হলো না। আবির দ্রুত রাজীবের সঙ্গে কথা বলতে চলে গেলো। হৈমন্তী ওকে একগাদা গালি দিয়ে মুখটা পরিস্কার করতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো।
☆☆
বাড়িতে ফিরে আবির ভয়ংকর একটা অপরাধ করে বসেছে। আমেনা বেগমের পানের বাটা ফেলে দিয়েছে ডাস্টবিনে। রান্নাঘরে পানি আনতে গিয়ে পানের বাটা দেখে বিরক্ত লেগেছিল তাই কিছু না ভেবেই ময়লার ঝুড়িতে পান সুপারি সব ফেলে দিয়ে পানি নিয়ে চলে এসেছে। ও জানতো না এটা ওর শাশুড়ির সম্পত্তি। সেই নিয়ে আমেনা বেগম বাড়ি মাথায় তুলেছে। আবির ভ্রু কুচকে দোতলায় দাঁড়িয়ে আছে। হৈমন্তীদের সঙ্গে ও এই বাড়িতে এসেছে। মাসুদের বিয়ে পযর্ন্ত থাকবে তারপর হৈমন্তীকে নিয়ে বাড়িতে ফিরবে। আমেনা বেগম চোর ধরতে উঠেপড়ে লেগেছে। রীতিমতো গালিগালাজ করছে। আবির রেগে যাচ্ছে। সামান্য পানের জন্য শাশুড়ির এমন আচরণে ও বিরক্ত হচ্ছে। তারপরে আবার গালি গুলো অদৃশ্যভাবে ওর গায়ে এসে লাগছে। আবির এবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলো না। হৈমন্তীকে ডেকে বলল,
> তোমার মাকে বলবে একটু চাপ থাকতে? মুখটা একটু বেশি চলে উনার। এখন বুঝতে পারছি তুমি ঝগড়া কোথা থেকে শিখেছো। উনাকে বলো গালি যেনো না দেন।
আবিরের কথা শুনে হৈমন্তী ভ্রু কুচকে বলল,
> পান খাওয়া উনার নেশা। কেউ ইচ্ছে করে ষড়যন্ত্র করে মায়ের পান ফেলে দিয়েছে। গালি দিচ্ছে বেশ করছে। আমিও দিচ্ছি তবে মনে মনে। কতবড় সাহস বুঝতে পারছেন?
আবির কপাল চাপড়ে বলল,
> বিশাল ষড়যন্ত্র বুঝতে বাকী নেই। দয়াকরে শাশুড়িকে গালি দিতে মানা করো। নয়তো কিন্তু তুমি বিধবা হবে। তখন আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না।
আবিরের কথা শুনে হৈমন্তীর কপালে ভাজ পড়লো। বুঝতে বাকী নেই এই মহান কাজটা কে করতে পারে। কিন্তু কেনো? এতো কিছু রেখে ওর মায়ের পানের দিকে নজর দিতে হলো। হৈমন্তী বিরক্তি নিয়ে গটগট করে নিচে নেমে এসে মাসুদের পাশে বসে ফিসফিস করে বলল,
> ভাইয়া আম্মাকে চুপ করতে বলো।
মাসুদ নেল কাটার দিয়ে যত্ন করে নক কাটছিল হঠাৎ হৈমন্তীর কথা শুনে ভ্রু নাচিয়ে বলল,
> পারবো না। তুই বল। আম্মা আজ থামবে না। যে এই কাজটা করছে গালি দিয়ে তাঁকে শহীদ করে ছাড়বেন।
হৈমন্তী কপালে হাত রেখে বলল,
> ভাইয়া উনি বুঝতে পারেননি করে ফেলেছেন। তুমি বললেই আম্মা চুপ করবেন। উনি রাগে ফুলছেন। গালিগুলো তো উনাকেই দিচ্ছে বলো?
মাসুদ কিছু একটা ভেবে শব্দ করে হেঁসে ফেলল। ওর দারুণ মজা লাগছে। আবিরের মুখটা দেখে ওর হাসি কন্ট্রোল হচ্ছে না। শাশুড়ির পানের সামগ্রী ফেলে দিয়ে আবির কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। না পারছে বলতে না পারছে সহ্য করতে। মাসুদকে হাসতে দেখে হৈমন্তী মুখ ভার করে বলল,
> তুমি খুব খারাপ ভাইয়া। উনার খারাপ লাগছে আর তুমি মজা নিচ্ছো?
মাসুদ খুব কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল,
> তোর মদন ডাক্তারের মাথায় সত্যি সমস্যা আছে। আম্মা পান নিয়ে কতটা সিরিয়াস জানিস না? রাত করে এখন পান কোথায় পাবো বল? আম্মার পানের নেশা ভয়ংকর রকমের। পান ছাড়া রাত পার হবে না। সারারাত ঝগড়া চলবে। তুই বরং ওর কানে তুলো গুজে ঘাপটি মেরে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়তে বল।
মাসুদ একদম কথাগুলো বলে আরেক দফায় হেসে নিলো। হৈমন্তী রাগ করে উঠে আসলো। ভাইকে বলাই উচিত হয়নি। মাসুদ এমনিতেই সামান্য বিষয়ে হাসাহাসি করে তারপর এমন একটা সুযোগ পেয়েছে হাতছাড়া করবে না। যতক্ষণ মনে পড়বে ততক্ষণ হাসবে। সোফায় উল্টে উল্টে পড়ছে। আবির রেগেমেগে রুমে গিয়ে বসে পড়লো।
☆☆☆☆
উদাসীন চোখে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে অরিন। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা বাসাতে মন ভালো হওয়ার চাইতে খারাপ হচ্ছে। অরুনীকে ওর ভাগ্যবতী মনে হয়। মেয়েটা যদি সুইসাইড না করতো কতো ভালোই না হতো। মানুষের জীবনে সমস্যা আসতেই পারে সুইসাইড করা কোনো সমাধান হতে পারে না। দুঃখের পরে তো সুখ এমনিতেই আসে। মেয়েটা তো জানতেও পারলো না এতগুলো মানুষ ওর জন্য কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু যদি বেঁচে থাকতো তাহলে কি সবটা এমন হতো? হতোনা। ওর বাচ্চার কথা জানলে বাড়ি থেকে মান সম্মান বাঁচানোর জন্য রাসেলের সঙ্গেই বিয়ের ব্যবস্থা করতো। যার হাতে নিজের সম্ভ্রমহানি হয়েছে তার সঙ্গে থাকতে হতো ভালো স্ত্রীর নাটক করে। একটা মেয়ের কাছে এর চাইতে বিষাদের আর কিবা হতে পারে? মৃত্যু ভালো তাইবলে সুইসাইড করে না। প্রতিবাদ করতে পারত। আরাফাতকে বলতে পারতো। আরাফাত ঠিক ওর ওর পাশে দাড়াতো। মেয়েটা সত্যিই বোকা। ভালোবাসার মর্ম বুঝতে পারেনি। ভালোবাসার মানুষকে নিজের করতে সেই পথটা সব সময় সরল হয়না। কিছু সময় বক্র হয়। প্রতিকূল পরিবেশ কাটিয়ে উঠতে মনের জোর প্রয়োজন। হয়তো অরুনির সেটা ছিল না কিন্তু অরিনের সেটা আছে। হঠাৎ পেছনে থেকে একটা হাত অরিনের কাধ স্পর্শ করতেই ও চমকে উঠে পেছনে তাকালো।
চলবে
#দৃষ্টিনন্দনে_তুমি
কলমে: লাবণ্য ইয়াসমিন
পর্ব:২১
মির্জা বাড়ির একটা কক্ষে তুমুল ধস্তাধস্তি চলছে। আরাফাত তমালের কলার ধরে উত্তম মাধ্যম ধোলাই দিচ্ছে। এককোনে অরিন জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। বাইরে থেকে বাড়ির লোকজন দরজা ধাক্কা দিচ্ছে। আবির ভ্রু কুচকে আছে। রাজীব বারবার আরাফাতকে ডাকছে। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো সাড়াশব্দ করছে না। বরং মৃদু শব্দে তমালের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ভেতরে যে মারামারি চলছে সেটা বুঝতে কারো বাকী নেই। মাসুদ নির্বাক চিত্তে দাঁড়িয়ে আছে। ও জানে আরাফাত বিনা কারণে কারো গায়ে হাত তুলবে না। অন্যায় যে করবে শাস্তি তাঁকে পেতেই হবে। মান সম্মান এতো ঠুনকো না যে সামান্য আঘাতে তা চুরমার হয়ে যাবে। লোকজন কি বলবে সেই ভয়ে প্রতিবাদ না করে চুপ থেকে খারাপ কাজকে প্রমোট করার দিন শেষ। লোকে কি বলবে লোকে বিষয়টাকে কোন চোখে দেখবে এসব ভাবলে তো আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হতে টাইম লাগবে না। নিজেকে ভালো রাখতে হলে মাঝেমাঝে প্রতিবাদ করতে হয়। সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে ভালো থাকার কারণ খুঁজে নিতে হয়। তাছাড়া ভালোর সঙ্গে সব সময় ভালো কিছু হয়না। মানুষ দুর্বলের পেছনে হাত ধুয়ে পড়ে থাকে। মাসুদের ধ্যান ভাঙলো দরজা খোঁলার আওয়াজ শুনে। ভেতরে ভয়াবহ অবস্থা। আরাফাত তমলের ঘাড় ধরে বাইরে ছুরে দিয়ে গটগট করে বেরিয়ে গেলো। হৈমন্তী আর চয়নিকা হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলো। চয়নিকা গিয়ে অরিনকে নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলো। মেয়েটা ভয়ে কাঁপছে। আবির তমলাকে নিয়ে মেঝেতে বসিয়ে দিয়ে রফিককে দ্রুত পানি আনতে হুকুম দিলো। ছেলেটার ঠোঁট কেঁটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। কপাল ফুলে আলু হয়ে গেছে। শার্টের বোতাম একটাও আর অবশিষ্ট নেই সব ছিড়ে গেছে। চুলগুলো খড়ের স্তুপের সমান। আরাফাত হয়তো বেচারার চুল ধরে টানাটানি করেছে। কিন্তু সকলের প্রশ্ন, এসব হচ্ছে কেনো? আরাফাত শান্তশিষ্ঠ ভদ্রলোক হঠাৎ এমন রাঘববোয়াল হয়ে উঠলো কেনো? রফিক পানির পাত্রটা সমনে বাড়িয়ে দিতেই তমলা দ্রুত সেটা কেড়ে নিয়ে ঢকঢক করে গলাই ঢেলে নিয়ে হাপাতে হাপাতে বলল,
> প্লিজ ক্ষমা করে দিন। জীবনে আর এমন ভূল করবো না। সব মেয়েকে সম্মান করবো।
আবির যা বোঝার বুঝে গেলো। ওর চোখ দুটো জ্বলে উঠলো। একটা বোনকে নিজেদের বেখেয়ালে হারিয়ে ফেলেছে আরেকজনকে হারাতে পারবে না। ও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না। ঠাটিয়ে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বলল,
> তোর সাহসের প্রশংসা করতে হচ্ছে। বাঘের খাঁচাতে এসেছিস শিকার করতে? এখন শিকার করার মতো হাতদুটোকে বাঁচাতে পারবি তো? খুঁন করবো তোকে আমি।
কথাটা বলে ও আরেকটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। রাজীব দ্রুত তমালকে ওর সামনে থেকে সরিয়ে নিয়ে নিচে দাঁড়িয়ে থাকা একটা ছেলেকে ইশারা করলো তমালকে সরিয়ে নিতে। ছেলেটা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। রাজীবের ইশারা পেয়ে ছেলেটা এসে টানতে টানতে তমালকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। মির্জা বাড়ির চৌকাঠ তমালের জন্য চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো। বাইরের বাগানে আরাফাত পাইচারি করছে। মেজাজ চরম খারাপ হচ্ছে অরিনের উপরে। এই কাজের জন্য শুধুমাত্র তমাল ছেলেটা দোষী না। অরিন ইন্ধোন জুগিয়েছে। ছেলেটার সঙ্গে আগ বাড়িয়ে মেলামেশা করেছে যার জন্য তমাল ভেবেছে হয়তো অরিনের ইচ্ছে আছে। তাই তো আরাফাতের অবর্তমানে চুপিচুপি ওর রুমে গেছে। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,
বেলকনিতে অরিন আনমনে দাঁড়িয়ে আরাফাতের কথা ভাবছে আর মন খারাপ করছে। হঠাৎ তমাল পিছন থেকে ওর কাঠে নিজের হাতটা রাখল। অরিন চমকে উঠে পেছন তাঁকাতেই তমাল দাঁত বের করে হেসে বলল,
> নিঃসঙ্গ তোমাকে সঙ্গ দিতে চলে আসলাম। আমি জানি তুমি আরাফাতের সঙ্গে সুখী না। অরিন এরকম ফালতু সম্পর্কে জড়িয়ে কেনো নিজের জীবনটাকে নষ্ট করছো? আমার সঙ্গে চলো। সুখের সমুদে নাও ভাসাবো আমরা দুজন।
তমালের কথা শুনে অরিন ভ্রু কুচকে ফেলল। বিরক্তি নিয়ে উত্তর দিলো,
> আপনি কি সব আজেবাজে কথা বলছেন তমাল ভাই? আমি নিজের ইচ্ছেতে উনাকে বিয়ে করেছি ছেড়ে দিবো বলে না। সারাজীবন এক সঙ্গে থাকবো বলে। আপনি আমার রুম থেকে এখুনি বেরিয়ে জান।
অরিনের কথা শুনে তমাল পিছিয়ে যাওয়ার পরিবর্তে এগিয়ে আসলো। ওর চোখমুখ জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। অরিনের অস্তিত্ব হচ্ছে। কিভাবে এই আপদকে বিদায় করবে ভাবতে পারছে না। ওকে ভয় পেতে দেখে তমাল বাঁকা হেঁসে বলল,
> বিশ্বাস করতে পারছো না তাইনা? প্লিজ একবার বিশ্বাস করে দেখো আমি ঠকাবোনা। আরাফাত কিছু জানতে পারবে না। আমরা দূরে পালিয়ে যাবো। আর এখুনি কিছু করতে হবে না। আগে প্রেম ট্রেম করি। কাছাকাছি আসি তারপর নাহয় ওসব ভাবা যাবে। হাতটা ধরো।
তমাল অরিনের দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই অরিন মৃদু চিৎকার করে বলল,
> আপনাকে আমি ভালো লোক ভেবেছিলাম কিন্তু আপনি মোটেও ভালো মানুষ না। এখুনি বেরিয়ে না গেলে কিন্তু আমি সব উনাকে বলে দিব।
> আমি তোমার ভালো চাইছি আর তুমি হুমকি দিচ্ছো? আরাফাত তোমাকে ভালোবাসে না। ও তোমার বোনকে ভালোবাসে। শুনো আমার কথা মেনে নাও তোমার ভালো হবে। প্লিজ একবার বিশ্বাস করো আমাকে। আমি তোমাকে একটুও কষ্ট দিবো না।
তমাল কথাটা বলে অরিনকে ধরতে চাইলো কিন্তু পারলো না। পেছন থেকে একটা হাত ওর হাতটাকে খপ করে ধরে ফেলল। আরাফাত তমালের পিছনে পিছনে এসেছিল প্রথম থেকেই যেটা ও বুঝতে পারেনি। দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে ও সবটা শুনেছে। এতক্ষণ দাঁত চেপে সবটা সহ্য করলেও এখন আর পারলো না। তমালারে শার্টের কলার ধরে ওর নাকেমুখে কয়েকটা ঘুসি বসিয়ে দিলো। আরাফাতের শক্তির কাছে তমাল পেরে উঠতে পারলো না। তাছাড়া দরজা আগেই আরাফাত বুদ্ধি করে বন্ধ করে রেখেছে। পালিয়ে যাওয়ার উপাই একদম বন্ধ। শেষমেশ পড়ে পড়ে আরাফাতের কিল ঘুষি হজম করতে হলো। তমাল বারবার ক্ষমা চেয়েছে কিন্তু আরাফাত ক্ষমা করেনি। কিসের ক্ষমা? বেয়াদবির একটা লিমিট থাকে। একজন বিবাহিত মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছে। কতবড় অমানুষ হলে এমন করা যায়। আরাফাত নিজের সব রাগ ভালো করে মিটিয়ে নিয়েছে। বাকী আছে অরিনকে কয়েকটা দেওয়ার। কিন্তু পারবে না। ওর মুখের দিকে তাঁকালে আরাফাতের দিন দুনিয়া সব এলোমেলো হয়ে যায়। পারবে না আঘাত করতে। তার আগেই নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করবে।
☆☆☆
অরিন ফুপিয়ে ফুপিয়ে হেঁচকি তুলছে। হৈমন্তী চুপচাপ ওর পাশে বসে আছে। নিজের উপরে নিজেই বিরক্ত হয়ে উঠেছে। সব বদ বুদ্ধি ওর ছিল। ভেবেছিল অরিন সেজে গুজে তমালের সামনে সামনে ঘুঁরলে আরাফাত জ্বলবে। জেলাস হবে তারপর অরিনকে ভালোবাসবে কিন্তু তেমন কিছুই হলো না। তমালারে মতো লুচু ছেলে ও জীবনে দেখেনি। ভাইয়ের বউকে কুপ্রস্তাব দিতে বিবেকে বাঁধলো না? হৈমন্তীর ইচ্ছে করলো ঠাটিয়ে লোকটার গালে দুটো থাপ্পড় দিতে কিন্তু তার আগে নিজের গালে চারটা দিতে মন চাইছে। কিভাবে অরিনকে সান্ত্বনা দিবে বুঝতে পারছে না। চয়নিকা বাইরের গেছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। এই সুযোগে হৈমন্তী ফিসফিস করে বলল,
> ভাবি খুব সরি। সব দোষ আমার। আমার জন্য ভাইয়া এতটা রেগে আছে। তমাল তোমাকে বাজে প্রস্তাব দিতে সাহস পেয়েছে। আমি জীবনে আর তোমাকে খারাপ বুদ্ধি দিতাম না।
অরিন শান্ত হয়ে বলল,
> তোমার বুদ্ধি পুরোপুরি কাজে না লাগলেও আমি তোমার ভাইয়ার চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি হৈমী। সব ক্রেডিট তোমার। আমি বুঝতে পারিনি তমাল ছেলেটা এমন কিছু করবে। তাছাড়া মানুষ চেনা বেশ কঠিন। তুমি এসব আমার ভাইয়াকে বলতে যেওনা। তোমাকে বকবে আমার খারাপ লাগবে।
অরিনের কথা শুনে হৈমন্তীর মন আরও খারাপ হলো। ওর জন্য মেয়েটা বকা শুনছে তবুও ওকে বাঁচানোর চেষ্টাও করছে। এমন একটা বউ এই বাড়ির জন্য সত্যি দরকারি। মেয়েটা মির্জা বাড়ির উপযুক্ত বউ। হৈমন্তী অরিনকে জড়িয়ে ধরে বলল,
> তুমি খুব ভালো ভাবি। দেখবে ভাইয়া তোমাকে ঠিক বুঝতে পারবে। অনেক অনেক ভালোবাসবে।
> এবার থেকে আর কোনো দুষ্ট বুদ্ধি করলে চলবে না। উনি রেগে যাবেন এমন কাজ আমি জীবনে করবো না। উনার স্ত্রী হিসেবে এই ঘরটাতে জায়গা পেয়েছি এটাই আমার জন্য অনেক।
☆☆☆☆☆
নিস্তব্ধ রুমে পাইচারি করছে আবির। হৈমন্তী চুপচাপ বসে আছে বিছানার এক কোণে। আবিরের চোখেমুখে রাগ তবে সেটা কতটুকু হৈমন্তী তা বুঝতে পারছে না। কিছুক্ষণ আগেই অরিনের রুম থেকে ফিরে এসেছে। রুমে আসতেই আবির ওকে জিঞ্জাসা করেছে অরিনকে এসব কে শিখিয়ে দিয়েছে। হৈমন্তী ভয়ে চুপসে গেছে। যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয় কথাটা একদম ঠিকঠাক। কি দরকার ছিল আবিরকে এই বাড়িতে এসে জামাই আদর খাওয়ার? না থাকলে হৈমন্তী আজকের ঘটনা প্রাণ থাকতে বলতো না। কিভাবে এই লোকটাকে বোঝাবে আল্লাহ্ ভালো জানে। হৈমন্তী হাত দুটো মুখে দিয়ে আছে। আবির হঠাৎ থমকে গিয়ে বিছানায় উঠে বসে বলল,
> আমার কেমন জানি ডাউট হচ্ছে। কোনোক্রমে তুমি এসব আজেবাজে কথাঅরিনকে শিখিয়ে দাওনিতো? চয়নিকা ভাবি বলেছে অরিন আরাফাতকে জেলাস করানোর জন্য তমালের সঙ্গে দু একটা কথাবার্তা বলেছে।
হৈমন্তী ফিসফিস করে উত্তম দিলো,
> আপনি আমাকে দেখতে পারেন না তাই সব সময় আমাকে দোষারোপ করেন। আপন বউ না তো তাই জন্য এমন করছেন। পর কখনও আপন হয়না। বিয়ে একজনের সঙ্গে ঠিক ছিল আপনাকে তো জোরজবরদস্তি করে বিয়ে দিয়েছে।
হৈমন্তীর কথা শূনে আবির ওকে ঝাপটে ধরে বলল,
> বউ আবার আপন পর কি? আমার একটামাত্র বউ যে কিনা রূপে গুণে যেমন লক্ষ্মী,দুষ্ট বুদ্ধিতেও তেমন।
হৈমন্তী নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
> দরকার নেই আপনার প্রশংসা করার। আপনি যে আম্মার পান ফেলে দিয়েছেন তাঁর বেলা কিছু না?
অরিনের চথা শুনে আবির ভ্রু কুচকে বলল,
> অতিরিক্ত পান খাওয়া ঠিক না। শাশুড়ি আম্মা ছাগলের মতো পান খান বিষয়টা বিরক্তিকর। আমি এর ঘোর বিরোধীতা করছি। ফেলেছি বেশ করেছি দরকার হয় আরও ফেলবো।
হৈমন্তী গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে আসতে চাইলো কিন্তু পারলো না। আবির হৈমন্তীকে আটকে দিয়ে বলল,
> রাগ করো না বউ। কাজ কারার আগে একবার না দশবার ভাবতে হয়। দুমদাম কাজকর্ম করলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এমন কিছু করবে না যেটার জন্য সারাজীবন পস্তাতে হয়। আমি চাইনা আমার বউ ভুল কাজ করে সারাজীবন আফসোস করুক। বুঝেছো কিছু?
(চলবে)