অবাধ্য প্রেম পর্ব-১৩+১৪

0
500

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১৩(১+2)
#নন্দিনী_নীলা

মামির সামনে সরাসরি বলে উঠল রাফসান তিনি আমার সাথে আলাদা করে কথা বলতে চায়। আমি আগে হলে হয়তো এই কথাটা শুনে খুশি হতাম কিন্তু এবার আমি খুশি হতে পারছিনা কারণ একটু আগে
নিবিড় আমাকে আমার ব্যাগটা নয় শুধু ফোনটা ফেরত দিয়েছে। আর ফেরত দেয়ার সাথে সাথে ফোনে মেসেজ করেছে। আমি যেন কাকার সাথে কোনভাবে একা কথা না বলি। উফফ কি বিরক্ত কর উনি আবার এখানে বাদ সাধলেন কেন? আর এইরকম ভাবে উনার কাকাই বা আমার সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়েছে কেন সেটাই তো আমি বুঝতে পারছি না। ওনাকে আমি জিজ্ঞেস করতে পারছিনা আমি যে বিয়েতে রাজি নয় সেইটা কি উনি জানিয়ে দিয়েছেন। যে কথাটা কিভাবে শুরু করব সেটাই বুঝতে পারছি না।

আমার মনে হচ্ছে উনার জন্য আমার এই বিয়েটা ভাঙ্গা হবে না। কেন যে উনাকে বিশ্বাস করতে গেলাম। আমি ফোন নিয়ে ঘটর মটর করছি তখনই দরজার সামনে এসে দাড়ালো রাফসান। আমি চোখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। তিনি এসে বিছানায় বসলো আয়েশ করে। আমি চুপচাপ মাথা নিচু করে এদিক ওদিক দেখচ্ছি।

রাফসান বলল, ‘ দাঁড়িয়ে আছো কেন বসো।’

আমি বসবো না তাই বললাম, ‘ সমস্যা নাই কাকা আপনি বসুন।’

নিজের মুখ দিয়ে এভাবে কাকা শব্দটা বের হয়ে যাবে আমি ভাবতেই পারিনি‌‌। আমি মুখে হাত দিয়ে শুকনো ঢোক গিললাম। রাফসান আমার দিকে বিহ্বল চোখে তাকালো। আমি মুখে হাত দিয়ে অবাক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছি। উনি সাথে সাথে বিছানা থেকে উঠে গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমিও পেছন পেছন এলাম। রুম থেকে বের হবো তখন আমার ফোনে আর একটা মেসেজ আসলো। মেসেজ ওপেন করে দেখলাম মেসেজ পাঠিয়েছে নিবিড়।

‘তুমি বিয়েটা করতে চাও না। সেই সব কিছু বলো না এখন। যা বলে শুধু শুনো। কাকাকে আমি যা বলার বলে দেব। তুমি যদি এখন সরাসরি না করে দাও তাহলে কাকার আত্মসম্মানে লাগবে। কাকা এমনিতেও বিয়েটা করতে চাচ্ছে না এজন্যই বারবার তোমার সাথে কথা বলতে চাইছে। তোমার মত জানার জন্য কিন্তু আমার এখন মনে হয় তুমি সরাসরি না করার থেকে আমি না হলে তো তুমি মুখের উপর না করে দিলে কাকার আত্মসম্মানে লাগবে। ‘

আমি মেসেজটা পড়ে বাইরে এসে দেখলাম হে রাফসান চলে যাচ্ছে তার পেছনে নিবিড়ও কিছু না বোঝো চলে যাচ্ছে।
মামী আছে রান্নাঘরে। তিনি খেতে দেওয়ার জন্য রান্না করতে বসেছে। আমি দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছি গালে হাত দিয়ে। অবশেষে যাই হোক তবে বিয়েটা মনে হয় ভাঙতে পারলাম। মুখ দিয়ে কাকা শব্দ বের হয়ে ভালই হয়েছে। উনিও বুঝতে পেরেছে উনাকে আমি কাকার নজরে দেখি উনি আমার হাজব্যান্ড হওয়ার উপযুক্ত না।

আমি একটা শান্তির নিশ্বাস ছাড়লাম। উফ শান্তি শান্তি লাগছে। উনারা আজকে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেবে বিয়েটা হচ্ছে না কালকে আমি চলে যাব এখান থেকে। মামির প্যারা থেকে বাঁচতে পারব।
আমি দরজা বন্ধ করতে যাব তখন নিবিড় ধাপ করে আমার সামনে এসে আমার হাত টেনে বাইরে টেনে নিল।

আমাকে আচমকা এমন টেনে বাসা থেকে বের করে বাইরে আনার জন্য বললাম, ‘আপনার মাথা একেবারে গেসে নাকি। আপনি আমাকে এমন টেনে বের করে আনলেন কেন? মামি যদি দেখে নিতো তাহলে কি হতো?’

নিবিড় আমার চোখের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করল, ‘ তুমি কাকাকে কি বলেছো? কাকা এতো রেগে চলে গেল কেন? ‘

আমি হাত ঝামটা মেরে বললাম, ‘কিছুই বলিনি। শুধু বলেছি কাকা। কাকা বলে সম্বোধন করতেই‌ চলে গেছে আমার সাথে আর কথা বলেনি।’

নিবিড় থমকানো গলায় বলল, ‘ হোয়াট?’

‘আপনাকে আর আমার বিয়ে ভাঙার জন্য কষ্ট করতে হবে না আমি মনে হয় কাজটা করে দিছি। কাল কলেজ আমার ব্যাগ নিয়ে আসবেন।’

মামি রুমে থেকে ডাকাডাকি করছে আমি নিবিড় কে রেখে রেখে চলে গেলাম রুমে।

মামি আমার দিকে প্রশ্ন ছিল ছুঁড়ল, ‘ সবাই ক‌ই গেল?’

আমি নির্লিপ্ত গলায় বললাম, ‘ চলে গেছে!’

মামি হতভম্ব গলায় বলল , ‘ কি আমি এত কিছু রান্না করলাম আর কিছু না খেয়ে চলে গেল!’

আমি এগিয়ে এসে খাবারের দিকে তাকিয়ে বললাম,’ এমন ভাবে বললে মনে হলো বিশ পদ রান্না করে নিয়ে এসেছো। কিন্তু তোমার এখানে তো আমি এক শুধু আমার রান্না করা সবজি আর ভাত দেখতে পাচ্ছি তাহলে তুমি রান্নাটা করলে কি?’

মামি কটমট করে বলল, ‘ বেশি কথা কইবি না।’

‘আইচ্ছা মামি তুমি একটু তাড়াতাড়ি খাবার খেয়ে নাও। আমার মনে হয় না বেশি লেট করলে খাবারগুলো খেতে পারবে আর।’

মামি অবাক গলায় বলল, ‘কেন খেতে পারব না কেন তুই কি সব খাবার একাই খাওয়ার চেষ্টা করছিস নাকি।’

‘না আসলে একটু পর তোমার কাছে এমন কোন সংবাদ আসতে পারি যে তুমি খাওয়ার পরিস্থিতিতেই থাকলে না। তাই আরকি।’

মামি বলল, ‘ তোর কথা বার্তা তো আমার ভালো ঠেকছে না রে। ওদের সাথে কিছু উল্টা পাল্টা কিছু করিস নি তো। ওরা যদি তো সাথে বিয়েটা ভেঙে দেয় মনে রাখিস আমি লাভলী তোকে সেই জসিমের সাথে তাকে বিয়ে দেবো।’

‘ কি কি বললে তুমি সেই লম্পট গুন্ডা জসিমের সাথে তুমি আমার বিয়ে দেবে?’

‘হ্যাঁ দেবো।’

‘তুমি আর আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে রাখতে পারবে না মামা শুধু আমার না। সে তোমার হাজব্যান্ড তোমার ছেলের বাপ আমি কেন শুধু মামার কথা ভেবে নিজের জীবন উৎসর্গ করতে যাব। আমি জানি তুমি মামার কিছুই করবেনা শুধু শুধু আমাকে ভয় দেখাচ্ছ। আর তুমি আমাকে বাসায় নিয়ে এসেছো মায়ের শেষ স্মৃতির গহনাগুলো নিতে। কিন্তু তোমার কপাল খারাপ গহনা গুলো এখন আর আমার কাছে নাই তাই তো সেই গুলো হাতাতে পারছ না।’

‘তুই ওদের সাথে কি করেছি সত্যি করে বল। এত ভালো ফ্যামিলিতে বিয়ে ঠিক করলাম তুমিও সুখে থাকতি আমরা সুখে থাকতাম। কিন্তু তোর তো সহ্য হলো না বিয়ে ভাঙার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিস।’

‘তোমার মত মহিলার সাথে আমি কথাই বলতে চাই না আমি এখনই চলে যাব। আর শুনো ঠিকই বলেছ আমি ওই ছেলেটাকে এমন কথা বলেছি ছেলের পরিবার আজকে ফোন দিয়ে বিয়ে ভেঙে দিবে।’

বলে রুমে চলে এলাম আর বাইরে মামী চিৎকার করে বলছে, ‘হায় আল্লাহ কি সর্বনাশ করলো। কতোভালো পোলাটা পাইছিলাম আজ সেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিল।’

আমি দরজার কাছে সাবা চিৎকার করে বললাম, ‘ এতই যেহেতু পছন্দ হয়েছে তুমি নিজেই বিয়ে করে নিতা। আমি কাকার বয়সী কারো বউ হতে পারব না। ‘

মামি রেগে এসে আমার চুলের মুঠি ধরে গালের মধ্যে ঠাস করে থাপ্পর মেরে বলল, ‘ কাজটা তুই ঠিক করিস নি বিয়ে যেহেতু ভেঙে দিয়েছিস ওই জসিমের সাথে হলেও তোকে আজকে আমি বিয়ে দেবো। আমাকে বড়লোক আর সুখে থাকার শেষ রাস্তা যেহেতু তুই হতে দিলি না তোকে আমি মদ গাজা খাওয়ার লম্পট জসিমের হাতে তুলে দেবো।’

মামির থাপ্পর আমি প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছি তবুও আমি দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে সাহসের সাথে বললাম, ‘ তোমার কোন অধিকার নেই আমাকে ওই গাঞ্জাখোর জসিমের হাতে তুলে দেওয়ার। আমি এখনই বাসা ছেড়ে চলে যাব।’

‘তুই বলবি আর আমি তোকে ছেড়ে দেবো তাই না। এতদিন খুব ভালোভাবে তোকে বলেছি এবার তুই আমার খারাপ রুপ দেখবি না। তোর মামীকে তুই ভালো করে চিনিস নিজের কাজ হাসিলের জন্য সবকিছু করতে পারে আর জসিম গাঞ্জাখোর হলেও ওর হাতে যথেষ্ট টাকা আছে ও বলেছিল তোকে ওর সাথে বিয়ে দিলে ও আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দেবে।’

আমি চিৎকার করে বললাম, ‘মামি তুমি এটা করতে পারো না।’

‘ আমি কি করতে পারি একটু পরেই দেখতে পাবি।’বলে মামি আমাকে ধাক্কাদিয়ে রুমের ভেতরে ফেলে বাইরে থেকে দরজা লক করে দিলো। আমি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেলাম কিন্তু ব্যাথা অনুভব করার দেখার টাইম এখন নাই আমি ছুটে এসে দরজা ধাক্কাতে লাগলাম।

‘ মামী তুমি কিন্তু এসব ঠিক করছো না দয়া করে দরজা খোলো আমাকে যেতে দাও আর অন্যায় করোনা।’

মামীর কোন সাড়া শব্দ পেলাম না আমি দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে চিৎকার করলাম কতক্ষণ।

এদিকে মামীর কাছে সত্যি ফোন আসলো নিবিড় দিছো র বাসা থেকে বিয়ে ভেঙে দিল তারা। মামী তাদের অপেক্ষা করেনি তাদের ফোন আসার আগেই তিনি জসিম কি কল দিয়ে বাসায় আসতে বলেছে। এতদিন পর জসিম মামীর ফোন পেয়ে অবাক। মামী যখন কল দিয়ে তাকে বলেছে যে তোর সাথে আজকে ছোঁয়ার বিয়ে। বিয়ে যদি করতে চাস তাড়াতাড়ি বাসায় আয়। জসিমকে আর পায় কে সাথে সাথে জসিম ছুট্টে চলে এসেছে। এসেই হাবলাটা খুশিতে মামীর পা ধরে সালাম করা শুরু করে দিয়েছে। মামি জসিম কে বলেছে টাকা ফেল আর আপদটাকে বিয়ে করে নিয়ে যা।
জসিম বলেছেন এত টাকা দিতে পারবে না অগ্রিম নাকি এক লাখ টাকা দেবে আমি তখন বাদ সেধেছে। তখন ও বলেছে ওর কাছে নাকি তিন লাখ টাকা ছিল ২লাখ একা নাকি একজন হাওলাত নিছে। মামী অনেক ভেবে-চিন্তে রাজি হয় আর বলে বিয়ের বাজার সদাই করে দিতে আর মেয়ের জন্য জিনিস নিয়ে সন্ধায় আসতে।
খুশিমনে জসিম ফিরে যায়।

আমি রুমের ভেতর থেকে ওদের পরিকল্পনা সব শুনতে পাচ্ছি রাগে আমার শরীর কাঁপছে মন চাচ্ছে জসিমের মাথা ফাটিয়ে দিতে।
এক বিপদ যেতে না যেতেই আরেক বিপদ আল্লাহ এই গাজা খোর জসিমের হাত থেকে আমাকে তুমি রক্ষা করো এখানে থেকে পালানোর একটা ব্যবস্থা করে দাও প্লিজ।
আমাকে যে ফ্লোরে ফেলে গে ছিল আমি সেই ফ্লোরে দরজার সামনে বসে ছিলাম। জসিম সন্ধ্যায় বিয়ের পোশাক দিয়ে গেলে মামী আমার রুমে দরজা খোলে। আমি দরজার সাথে লেপ্টে বসে ছিলাম এজন্য দরজা খুলে ধাক্কা দিতে আমি ঠাস করে পড়ে যায়।

#চলবে..…..

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১৩(২)
#নন্দিনী_নীলা

দরজা খুলে ভেতরে আসতেই আমি নিচে পড়ে গেলাম আর পড়ে গিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলাম, ‘ তোমার আক্কেল জ্ঞান নাই একজনকে যে বন্ধ করে রেখেছো তার কি খিদে পায় না? আবার এখন আমাকে নিচে ফেলে দিলে।’

‘ তুই দরজার সাথে লেপ্টে বসে ছিলি কেন জানিস না আমি এখন আসব।’

‘ এমনভাবে বলছ যেন আসার আগে আমাকে জানিয়ে আসছো। ‘

‘ এই শোন এই যে এখানে তোর জন্য শাড়ি আছে জসিম নিজে পছন্দ করে এনেছে তাড়াতাড়ি গুলো পড়ে রেডি হয়ে নে।’

‘পারবোনা!’

‘যা বলছি চুপচার তাই কর আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি। শেষবারের মতো খাইয়ে দেই।’
বলেই মামি দরজা খুলে রেখে চলে গেল।

আমি দরজার সামনে থেকে উঁকি মেরে দেখলাম, ড্রইংরুম একদম ফাঁকা। আমি এখন এখান থেকে পালাতে পারবোনা কি বুঝতে পারছিনা‌। বারান্দায় থেকে আমি দেখতে পেয়েছি শয়তান জসিমের বাচ্চা বাসার সামনেই ঘুরঘুর করছে। একদম জামাই সেজে ঘুরছে।

আমি আর কোনো দিকে না তাকিয়ে যেভাবে আছি এভাবেই শুধু ফোনটা হাতে নিয়ে দৌড়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এলাম দরজা খুলে বের হতে আমার রবিনের সাথে দেখা হবে। ও নিশ্চয়ই বাইরে ছিল আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করল,’ আপু কি হয়েছে তোমার কোথায় যাচ্ছে এভাবে ছুটে?’

আমি কথার উত্তর না দিয়ে ওকে টেনে নিয়ে আসলাম। ও কথা বলতে চাইছিল আমি ওকে চুপ করে আমার সাথে আসতে বলেছি।

নিচতলায় নিয়ে এসে ওকে বললাম, ‘ রবিন ভাই আমার আমি পালিয়ে যাচ্ছি। তুই মামাকে দেখে রাখিস। আমি এই বিয়েটা করতে পারব না রে। জসিমকে বিয়ে করে আমার জীবন আমি নষ্ট করতে পারবোনা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না আমাকে এখনই পালাতে হবে যেভাবেই হোক। এখানে থাকলে আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে। ‘

রবিন ভয়ার্ত গলায় বলে, ‘আপু তুমি কিভাবে পালাবে নিচে তো জসিম ভাইয়ের লোকেরা ঘোরাফেরা করছে।’

আমি বললাম, ‘সেসব নিয়ে তুই চিন্তা করিস না তুই বাসায় যা। ওই দেখো মামি চিৎকার করছে। জেনে গেছে আমি পালিয়েছি। তুই মামীকে গিয়ে সামলা। জসিম কে এখনি জানি মামি জানাতে না পারো আমি পালিয়েছি। তুই শুধু আমার এইটুকু সাহায্য কর মামি যেন এখনই জসিমের সাথে যোগাযোগ করতে না পারে।’

রবিন বলল, ‘আচ্ছা তুমি পালিয়ে যাও আমি দেখছি কিছু করতে পারি কিনা।’

শেষবারের মতো ভাই টাকে জড়িয়ে ধরে চলে এলাম ও আমার মামাতো ভাই হলেও। আমাকে নিজের আপন বোনের মত ভালবাসে ছোট বেলা থেকে। মামি চেষ্টা করেও নিজের ছেলেকে নিজের মতো বানাতে পারে নি।

নিচতলায় আসতেই নিচতলার সে আন্টির সাথে দেখা হলো যিনি প্রতিদিন আমাদের বাসায় যায় এটা ওটা চাইতে।

আমাকে দেখে তিনি জিজ্ঞেস করে ওঠে,’ আরে ছোঁয়া না। তুমি সন্ধ্যা বেলা কোথায় যাচ্ছ?’

আমি আঁতকে উঠে বললাম, ‘ না মানে আসলে ওই….

কি বলব বুঝতে পারছি না। এমনিতে আমার যাওয়ার তাড়া আর উনি আবার আমাকে আটকে দিচ্ছে। আমি তাড়াহুড়ো গলায় বললাম, ‘দোকানে যাচ্ছি আন্টি। আপনার সাথে আমি পরে কথা বলি।’

উনাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমি ওনাকে পাশ কাটিয়ে বাইরে ছিলাম উনি হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

আশে পাশে আমি জসিম কে দেখছি না এটাই সুযোগ আমি দৌড়ে হাঁটা দিলাম। হাতে একটা টাকাও নাই কিভাবে যাব । আমি সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হাঁটছি তখনি ধাক্কা খেলাম কারো সাথে। পাশ ঘুরে তাকাতেই থমকে গেলাম এটা তো জসিম। আমি তারাতাড়ি মুখ ঘুরিয়ে ফেললাম।

জসিম রেগে গিয়ে একটা বকা দিল আমায় আমি আর তার দিকে তাকালাম না। মুখটা বেঁধে এসে ভালো করেছি। না হলে এখন দেখলেই শয়তানটা আমাকে চিনে ফেলত।

আমাকে চিনতে না পেরে জসিম চলে গেল আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম যেন। আমি এখন এই হাঁটতে হাঁটতে না যেতে পারব লিলির বাসায় আর না যেতে পারব নিজের বাসায়। কি করবো কতক্ষণই বা হাঁটবো কোথায় যাবে। আর এখন জসিম মামার বাসায় যাবে যদি গিয়ে জানতে পারলাম আমি পালিয়েছি তাহলেই ত নিজের দলবল নিয়ে চলে আসবো আমার পেছনে ধাওয়া করতে। ও জানার আগেই আমাকে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। ওকে শেষবার বলেছিলাম খুব ভালো কর ওকে বুঝেছিলাম। আমার পেছনে যেন পরে না থাকে। আর মামী কেউ যেন লোভ না দেখায়। ও আমার কথা শোনেনি সে আবার আমাকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে মামির কথায়‌।

আমি শয়তান জসিমকে কিভাবে শায়েস্তা করবো। আর কোথায় যাবো এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছি জানিনা হঠাৎ করে তীব্র হর্নে আমি চমকে উঠলাম। সাথে সাথে আমি ভাবনা থেকে বাস্তবে ফিরে এলাম। আর রাস্তা থেকে সরে আসার আগেই ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেলাম।

খুব ব্যথা বেশি না পেলে ও পায়ের হাঁটুতে হাতের কনুইয়ে ব্যথা পেয়েছি। গাড়ি থেকে লোকটা ধড়ফড়িয়ে নেমে আসলো আরে এসে উত্তেজিত গলায় জিজ্ঞেস করলো, ‘ আই এম ভেরি সরি। আপনি ঠিক আছেন?’

আমি লোকটার দিকে মাথা উঁচু করে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমার সামনে দাড়িয়ে আছে নিবিড়।

নিবিড় চিনতে পারে নাই কারন আমার মুখ ওড়না দিয়ে বাঁধা। আমি চুপ করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে দেখে নিবিড় বিরক্তিকর কন্ঠে বলল, ‘দেখুন এখানে সম্পন্ন দোষ আপনার আপনি রাস্তার মাঝখানে চলে এসেছেন। তাই এটা নিয়ে আবার আমাকে ফোর্স করবেন না। আপনি হয়তো আঘাত পেয়েছেন তার জন্য আমি কিছু টাকা দিয়ে দিচ্ছি আপনি ডাক্তার দেখিয়ে নিয়েন।’

আমার প্রচন্ড রাগ হল টাকার কথা বলায়‌। সব সময় এই লোকটা দেমাক আমাকে নিয়ে চলে। আমি ভেবেছিলাম হয়তো বা শুধু আমাকে পছন্দ করে না বলে আমার সাথে এমন করে। এখন তো আর আমাকে চেনে নাই অচেনা একজন মানুষ ব্যথা পেয়েছে কোথায় সাহায্য করে চেষ্টা করবে তা না টাকা দেখি পার পাওয়ার চেষ্টা করছে। অকৃতজ্ঞ একটা।

আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। নিবিড় পকেট থেকে আমাকে 1000 টাকার দুইটা নোট হাতে ধরিয়ে দিল। তারপর গাড়িতে উঠার জন্য পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আমি টাকা গুলা হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ করে জ্বলন্ত চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আছি‌। নিবিড় গাড়িতে উঠার সাথে সাথে আমি ছুটে নিবিড়ের অপরপাশ দিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।

আমাকে গাড়িতে উঠতে দেখে নিবিড় চিৎকার করে উঠল, হোয়াট আর ইউ ডুইং। হুয়াই আর ইউ গেটিং ইন দা কার‌।’

আমি উনার প্রশ্নের উত্তর দিলাম না। উনার দেওয়া দুই হাজার টাকা আবার উনার দিকে ছুড়ে মেরে মুখের বাধন খুলে ফেললাম। প্রচন্ড গরম লাগছিল গরমের মধ্যে মুখ বেঁধে ছিলাম তার মধ্যে টেনশনে ছিলাম সব মিলিয়ে আমার অবস্থা নাজেহাল। মুখের বাধন খুলতেই নিবিড় আমাকে চিনে ফেলল ও চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

বিস্মিত গলায় বলল, ‘ তুমিইইই!’

‘ হ্যাঁ আমি।’

‘ ইউ তুমি এখানে কি করছো? মনে হচ্ছে পালিয়ে যাচ্ছ!’

‘ হ্যাঁ পালিয়ে যাচ্ছি।’

‘ বাট হোয়াই? বিয়েটা ভেঙ্গে গেছে। এখন আর পালানোর কি দরকার? ওয়েট ওয়েট এখন কি নিজের বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে যাচ্ছো নাকি?’

আমি বিরক্তকর কন্ঠে বললাম, ‘আমি আপনার মত এত ফালতু না। ফালতু কাজ আমি সময় ব্যয় করি না। আমি একাই পালিয়ে যাচ্ছি।’

‘ কেন?’

‘ আগে আপনার বাসায় চলেন তারপর বলছি।’

‘হোয়াট! আমার বাসা যাব মানে কি? তুমি কি আমার সাথে আমার বাসায় যেতে চাইছ নাকি।’

‘ আপনার বাসায় যাব না আমি আপনার বাসার সামনে থাকব। আপনি বাসার ভেতরে গিয়ে আমার ব্যাগটা নিয়ে আসবেন তারপর আমি চলে যাব।’

‘ তুমি বললে আমি তোমাকে ব্যাগ দিয়ে দেবো নাকি
আমি দেবো সেটা বলেছি আর আমি কালকে এমনিতেও তোমাকে কলেজে ব্যাগ দিয়ে দিতাম
আমি জানি তো কাল তুমি কলেজ আসবে এখন আমার সাথে তোমাকে আমার বাসায় যেতে হবে কেন?’

#চলবে….

#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_১৪
#নন্দিনী_নীলা

‘আমার জিনিস আমি বললে দেবেন না তো কে বললে দেবেন? আর আপনি যে কতোটা অকৃতজ্ঞ আর অহংকারী সেটা তো আমি একটু আগেই বুঝতে পেরেছি। আমার জিনিস আমাকে দেন আমি আর জীবন আপনার মুখ্য দর্শন করতে চাই না।’

আমার কথা শোনে নিবিড় কপালে ভাঁজ ফেলে বলল, ‘কি বললে তুমি আমাকে আমি অহংকারী অকৃতজ্ঞ।’

‘ হ্যাঁ।’

‘আচ্ছা মানলাম আমি তোমার সাথে কি করেছি যে আমি অকৃতজ্ঞ হয়ে গেছি?’

আমি ফুঁসে উঠে বললাম, ‘একটু আগে একজন অসহায় মানুষকে আপনি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন সে খুব বেশি ব্যথা না পেলেও পেয়েছে। আপনি তাকে টাকা দিয়ে পার পেতে চাই ছিলেন। একটু ভালো করে কথা বললে কি হত? তা না টাকার গরম দেখাচ্ছি লেন। ধনী হয়েছেন তাই বলে সব জায়গায় কি সবাইকে শুধু টাকা দেখাবেন? ‘

নিবিড় রক্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে গাড়ির হেন্ডেলে একটা ঘুসি মেরে বলল, ‘ আমি অহংকারী অকৃতজ্ঞ ঠিক আছে। নামো আমার গাড়ি থেকে।’

আমি চোখ বড় বড় করে নিবিড়ের দিকে তাকালাম। এখন গাড়ি থেকে আমার কিছুতেই নামা যাবে না। আমি বাইরে জসিমকে দেখতে পেয়েছ দৌড়ে আসছে এদিকে। এখন আমাকে নিবিড়ের সাথে পালাতে হবে আমি যদি গাড়ি থেকে নেমে যায় তাহলে আমি ধরা পড়ে যাব। আর আমি কিছুতেই ওই শয়তানটার হাতে ধরা পড়তে চাই না।

নিবিড় আমার হাত শক্ত করে ধরে ধাক্কা মেরে বলল, ‘ গেট আউট অফ মাই কার।’

আমি অসহায় মুখ করে নিবিড় দিকে তাকিয়ে বললাম, ‘প্লিজ এমনটা করবেন না। আমার এত বড় সর্বনাশ করবেন না। জীবনে তো কোনদিন ভালো কিছু করেন নাই। আজকে একটা অন্তত ভালো কাজ। সাহায্য করেন আমাকে। আমাকে গাড়ি থেকে বের করে দিলে আমি খুব বড় বিপদে পড়ে যাব আমার জীবনটা শেষ হয়ে যাবে।’

নিবিড় আমার দিকে কঠোর চোখে তাকিয়ে বলল, ‘নো আমি ভালো কাজ করি না আমি তো খারাপ। আর আমি না কাউকে সাহায্য করে আমিতো অকৃতজ্ঞ। বের হও আমার গাড়ি থেকে তোমার যা খুশি তাই হোক আই ডোন্ট কেয়ার।’

আমি করুন কন্ঠে বললাম, ‘ এতটা নির্দয় হবেন না প্লিজ। ওই দেখুন জসিম ছুটে আসছে ও যদি আমাকে একবার দেখতে পায় আমাকে তুলে নিয়ে যাবে। আর ওর সাথে আমার বিয়ে হবে। জানেন ও একটা খুব খারাপ ছেলে। মদ খেয়ে মাতলামি করে। আমাকে আগে অনেক ডিস্টার্ব করতৌ। মামি ওর সাথে হাত মিলিয়েছে। আপনার কাকার সাথে আমার বিয়ে ভেঙে গেছে বলে এখন ওর কাছে আমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছে প্লিজ আমাকে বাঁচান।’

নিবিড় এবার গাড়ি খুলে ধাক্কা দিয়ে আমাকে গাড়ি থেকে বের করে বললো, ‘ আমার মতন নির্দয় মানুষ কাউকে সাহায্য করে না। তোমাকে আমি সাহায্য করতে চেয়েছিলাম আর শোনো তখন আমি তোমাকে টাকা দেখেছিলাম তোমাকে রাগানোর জন্য কারণ তুমি মুখটা যে ভাবে বেঁধে রাখো না কেন? নিবিড়ের থেকে পালাতে পারবে না। তোমাকে প্রথমে এক নজর দেখে আমি চিনে ফেলে ছিলাম যে তুমি ছোঁয়া। এর জন্য আমি তোমার প্রতি এতটা উদাস হয়েছিলাম আর তোমাক ইচ্ছে করে টাকা দেখিয়েছি।’

আমি নিজের ভুল ভাবনার জন্য লজ্জিত কন্ঠে বললাম, ‘আচ্ছা আমাকে ক্ষমা করে দিন আমি আর কখনো আপনার কে কিছু বলবো না। কখনো আপনাকে খারাপ কিছু বলবো না। আপনার সাথে তো আর তর্ক করতেও যাব না আজকে আমি তোমাকে বাঁচিয়ে নিন প্লিজ।’

আমি হাতজোড় করে নিবিড় কে এসব বলছি তখনই দেখতে পেলাম জসিম শয়তানটা আমাকে দেখে ফেলেছে আর শয়তান টা আমাকে দেখিয়ে চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ ছোঁয়া ডার্লিং তুমি ওইখানে কেন? আমাকে বিয়ে না করে তুমি কোথায় পালিয়ে যাচ্ছো ডার্লিং?’

জসিমের বাচ্চা রাস্তার ওপাশে আছে আমি এপাশে জসিম এবার আমার দিকে ছুট লাগাবে রোড ক্রস করলেই ও আমার কাছে চলে আসবে। আমি ওর দিকে ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে আছি আর এদিকে তখনই নিবিড় আমার হাত ধরে একটানে গাড়ির ভেতরে ঢুকিয়ে গাড়ি লক করে দিল। সাথে সাথেই এপাশে চলে এলো জসিম এসে গাড়ির দরজা ধাক্কাতে লাগলো চিৎকার করতে লাগলো। কিন্তু আমি গাড়ির ভেতর থেকে ঠিক কিছুই শুনতে পেলাম না।

গাড়ির লক করা বাইরের কোনো কথা আমি শুনতে পাচ্ছি না। কিন্তু জসিম এমন জোরে দরজা ধাকাচ্ছে যেন গাড়ি ভেঙে ফেলবে এ দিকে নিবিড় আমাকে সিট ব্রেল বাঁধতে বলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে শয়তান জসিমকে ফেলে আমাকে নিয়ে চলে এলো। জসিমকে ছেড়ে আসতে আমার জানে প্রাণ ফিরে এলো। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম।

নিবিড় আমাকে পেছন থেকে একটা পানির বোতল এনে দিল আমি পানির বোতল পেয়ে গপগপ করে পানি খেতে লাগলাম। একদম বোতলের মুখ লাগিয়ে খেয়েছি। সেটা দেখে নিবিড় আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘একটা ছেলের পানির বোতলের মুখ লাগিয়ে খেতে লজ্জা করে না তোমার!’

নিবিড়ের কথা শোনে আমি বোকা চোখের নিবিড়ের দিকে তাকালাম। আমি মাথা নিচু করে বললাম, ‘সরি আসলে খুব পানি পিপাসা পেয়েছিল মনে ছিল না এটা অন্য কারো বোতল। বিশেষ করে এটা কোন ছেলের বোতল তাই বুঝিনি। বুঝলে কি আর আমি আপনার মুখ লাগানো এঁটো বোতলের মুখ লাগাতাম?’

নিবিড় বলল, ‘ কি বললে তুমি আমার এঁটো? আমার বোতলে আমি মুখ লাগাব না তো কে লাগাবে।’

‘ আমি….

নিবিড় আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ‘তুমি আবার আমার সাথে ঝগরা করছো। তর্ক করছো একটু আগে কি বলছিলে নামিয়ে দেব নাকি গাড়ি থেকে?’

আমি আঁতকে উঠে বললাম, ‘ নানানা সরি প্লিজ। আর কোন কথাই বলব না। এই যে মুখে হাত দিলাম।’

বলেই নিজের আঙ্গুল নিজের মুখে দিয়ে মুখ অফ রাখলাম। মনে মনে তো আমি ফুঁসছে বিপদে পড়েছি বলে এভাবে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা হচ্ছে আমারও দিন আসবে তখন আমিও এর সুদে আসলে উসুল করব।

নিবিড় ড্রাইভ করতে করতে উঁচু গলায় বলে উঠলো
, ‘মনে মনে আমাকে কিভাবে শায়েস্তা করবে তা ভাবা বন্ধ না করলে ধাক্কা দিয়ে গাড়ি থেকে বের করে দেব।’

আমি চোখ কপালে তুলে বললাম,’আপনি আমার মনের কথা কিভাবে জানলেন?’

নিবিড় বলল, ‘আমার পাশে বসে আমাকে নিয়ে শয়তানি প্ল্যান করবে আর আমি তা ধরতে পারবো না ভাবলে কি করে? ‘

আমি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললাম, ‘ আমি কিছু বলিনি বিশ্বাস করুন।’

‘আর কিছু না ভাবলে বিশ্বাস করব।’

‘আচ্ছা আর কোন প্ল্যান করব না সত্যি করে বলছি।’

নিবিড় আমার কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলল না।
মনে মনে একটা কিছু ভাববো তা ভেবে ও শান্তি নাই। কি লোক রে বাবা এ দেখি মনের খবরও
জেনে যায়।

নিবিড় আমাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কোথায় যাবে এখন ঠিকানা দাও!’

আমি বললাম, ‘আমি যে বাসায় থাকি সেখানে তখন ঢুকতে পারবো না। আপনি আমাকে লিলি দের বাসায় নিয়ে যান। আর আপনার ফোনটা একটু দেন ওকে আমি ফোন দিয়ে জানিয়ে দেই আমি আসতেছি।’

‘কেন তোমার ফোন তো আমি দিয়ে দিয়েছি। আমার ফোন দেওয়া লাগবে কেন?’

‘ খালি ফোন থাকলে হয় নাকি ফোনে তো টাকা লাগবে। ফোনেতে ব্যালেন্স নাই ফোন দেবো কিভাবে।’

‘ এত সুন্দর একটা সু পাত্রের সাথে তোমার মামি তোমার বিয়ে ঠিক করেছিলো। তুমি কেন পালিয়ে এলে?’

‘ সুপাত্র না গাজা খোর একটা।’

নিবিড় শয়তানি হাসি দিয়ে আমার দিকে ফোন টা বাড়িয়ে দিলো। আমি লিলি কে কল দিলাম কিন্তু ফোন দিয়ে যা শুনলাম তা শুনে সেখানে যাওয়ার রাস্তা টা আমার বন্ধ হয়ে গেল। লিলি নাকি ওর চৌদ্দগোষ্ঠী নিয়ে নানীর বাড়ি গেছে। রাগ আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে এখন আমি যাব কোথায়?’

সেখানে যেতে পারবেনা শুনে তো নিবিড় হাসতে হাসতে শেষ। আমার দিকে তাকিয়ে টিটকারি মারা গলায় বলল, ‘আচ্ছা এখন তাহলে কোথায় যাবে? তাহলে তোমাকে তোমার মামার বাড়ি রেখে আসি ওই সুন্দর ছেলেটাকে বিয়ে করে সংসারী হও।’

‘ওই মাতাল গাঁজাখোর টাকে বিয়ে করলে আজীবনের মাতলামি দেখতে দেখতে আমি মরে যাব। না বাবা ওকে বিয়ে করার থেকে আমার পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে মরা ভালো।’

‘তাহলে কি কোন পুকুরের সামনে নিয়ে যাব?’

আমি কান্না করে দিয়ে বললাম,’আপনি সত্যিই এত নির্দয় আর পাষাণ। মরার জন্য আমাকে পুকুরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন কোথায় আমাকে সান্তনা দেবেন। একটা পথ দেখাবেন তা না মরে যেতে বলছেন।’

#চলবে…..