#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৩৩
#নন্দিনী_নীলা
নিবিড় ছোঁয়ার গালে ছোট ছোট থাপ্পর মেরে ডাকছে ছোঁয়া ছোয়া বলে আর ছোঁয়া বেহুশ হয়ে পড়ে আছে। নিবিড় বিরক্তি কর চোখে ছোঁয়ার দিকে তাকিয়ে আছে মন চাচ্ছে ওর আবিরকে এই ছাদ থেকে ফেলে দিতে। এইসব প্ল্যান আর বুদ্ধি তো ওরই ছিল। এখন কি হলো? এই গাঁধী তো বেহুঁশ হয়ে পড়ল। রাগে মন চাচ্ছে দুটো কেই আচার মারতে। ছোঁয়ার কর্মকান্ডে এমনিতেই নিবিড়ের বিরক্তে সীমা নাই তার উপর আজকের এই কান্ডে ওর মাথা ফেটে যাচ্ছে।
নিবিড় ছোঁয়ার মুখের দিকে দৃষ্টি ফেলে দাঁতে দাঁত চেপে বলল, ‘ওপেন ইউর আইস।’
নো রেসপন্স
নিবিড় ছোঁয়ার গাল থেকে হাত সরিয়ে এক আঙুল দিয়ে অজান্তেই ছোঁয়ার ঠোঁট স্পর্শ করতেই ছোঁয়া চোখ পিটপিট করে তাকালো। নিবিড় আঙ্গুল মুষ্টিবদ্ধ করে হাত সরিয়ে ফেলল।
ছোঁয়া চোখ মেলে তাকিয়ে সবার আগে ভূত বলে চিৎকার করে উঠলো।
নিবিড় বিরক্তিকর গলায় বলল,’ ভীতুর ডিম একটা।’
ছোঁয়া ধরফর করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। বড় বড় চোখ করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ভয় একদম বিছানার এক কোনায় চলে গেল নিবিড় থেকে যথেষ্ট দূরত্বে। নিবিড় কপালে ভাঁজ ফেলে ছোঁয়ার কান্ড কারখানা দেখছে। এ কোনায় জোরসরো হয়ে বসে থরথর করে কাঁপছে। নিবিড় বোকা চোখে তাকিয়ে আছে ছোঁয়ার ভয়ার্ত দৃষ্টির দিকে। ছোঁয়া ওকে দেখে কেন ভয় পাচ্ছে সেটাই ওর মাথায় আসছে না। কিন্তু ওকে দেখে ভয় পাওয়া দেখে নিবিড়ের রাগে মন চাচ্ছে ছোঁয়া কে থাপ্পড় মেরে ভয় পাওয়ার ভূত মাথা থেকে দূর করতে।
‘ ছোঁয়া এদিকে এসে তোমার এই নাটক জাস্ট বিরক্তিকর লাগছে। তখন ওই ভাবে অজ্ঞান হয়ে গেলে কেন? চুপ করে আমার দিকে ওমন অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে কেন? জীবন আমাকে দেখনি। এমনিতে তো দেখলেই ঝগড়া করার জন্য উঠে পরে লাগ। আজকে দেখে ভয় পাচ্ছ? তুমি আবার আমাকে দেখে ভয় ও পাও?’ দাঁতে দাঁত চেপে কঠোর গলায় বলল নিবিড়।
আমি ভীতু নয়নে নিবিড় এর দেখে তাকিয়ে ছিলাম কারণ নিবিড়কে দেখলেই আমার এখন মনে হয় আমার সামনে ভূত বসে আছে। কিন্তু নিবিড়ের কথা শুনে আমার ভয়টা কিছুটা কাটল। কারণ ভূত তো আমার সাথে অন্যভাবে কথা বলছিল। কথার ধরনই ছিল অন্যরকম। কিন্তু এখন তো নিবিড় আসল রূপে চলে এসেছে। আমার সাথে সে আগের মত রাগ নিয়ে কথা বলছে। আমি চোখ বন্ধ করে দোয়া দরুদ পড়ে ভয় কাটানোর উপায় খুঁজছিলাম।
তারপর বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে নিবিড়কে উদ্দেশ্য করে বললাম, ‘ আপনি আমার রুমে কি করছেন?’
নিবিড় বিছানা আয়েশ করে বসে বলল, ‘ যেভাবে ঘাম ছেড়ে অজ্ঞান হয়েছিলে। রুমে না নিয়ে এসে উপায় ছিল না। আর তুমি নিশ্চয়ই অজ্ঞান অবস্থায় হেঁটে হেঁটে রুমে আসতে পারো নি। তার জন্য তো সেই আমার কোলে উঠতে হয়েছে।’
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, ‘ আপনি আমাকে কোলে তুলে রুমে এনেছেন?’
নিবিড় দাঁত কিড়মিড় করে বলল, ‘ ইয়েস। এবার একটা সত্যি কথা বলতো, ওইরকম একটা সুন্দর মুহূর্তে তুমি কি দেখে এত ভয় পেলে আর অজ্ঞান হয়ে সব কিছু বানচাল করলে?’
আমি নিবিড়কে বললাম,’ আপনি চলে যান। আমি কিন্তু আবার অজ্ঞান হতে পারে তাই বলছি ভালই ভালই চলে যান।’
নিবিড় কপাল কুঁচকে বিস্মিত গলায় বলল, ‘ হোয়াট? আমাকে দেখে ভয় কেন পাচ্ছ!’
‘ আপনাকে ভূতে ধরেছে আপনি কেমন পরিবর্তন হয়ে গেছেন। ওই যে তখন কি সব উল্টাপাল্টা কথা বললেন। ওসব আপনি বলতে পারেন না অসম্ভব! আমি শিউর আপনাকে ভূতে ধরেছে আর সেই ভূত এমন অদ্ভুত বিহেভ করছে!’
নিবিড় মাথায় হাত রেখে আছে। আমার এমন উদ্ভব চিন্তা ভাবনায় ও শঙ্কিত।
লিহান উপরে এসেছে। উপরে আসতেই ওর ফোনে কল আসায় ও ছাদে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বললে ১৫ মিনিটের মতো। ফোন কেটে ও ছোঁয়ার রুমের দিকে গেল।রুমের কাছাকাছি আসতেইও ভেতর থেকে দুজনে মানুষের কথোপকথন শুনতে পেল। দরজা চাপানো ছিল ও কে আছে ভেতরে দেখতে দরজা একটু ফাঁক করে ভিতরে উঁকি মেরে নিবিড় আর ছোঁয়াকে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল। কি যেন কথা বলছে দুজনে কথাগুলো শুনতে পেল না ও।
আবির লিহানের হাত টেনে দরজার কাছ থেকে সরিয়ে নিয়ে বলল, ‘ ব্রো এসব কি করছো। ‘
লিহান বলল, ‘ ভেতরে কি হচ্ছে?’
‘ কি হবে কিছু না তো। চলো আমার সাথে। তোমাকে বারণ করা সত্তেও আসলে তাই না তুমি তো ..
‘ তুমি আমায় মিথ্যা কথা বলেছিলে কেন ছোঁয়া তো ঘুমায় নি উল্টা আরেকজনের সাথে গল্প করছে।’
‘ আমি নিজেও তো জানতাম না।’
‘ তোমার ভাইয়া ছিল।’
‘ তাই। অবাক হওয়ার ভান ধরে বলল আবির।
লিহান বলে, ‘ আমি ভেতরে যাব টেনে আনলে কেন? জরুরী কথা আছে ছোঁয়ার সাথে আমার।’
‘ওখানে যাইও না গেলে কিন্তু তুমি ধমক খাবে। পরে বলিও যা বলার।’
লিহান শুনল না ধমক খাওয়ার জন্য চলে গেল।
নিবিড় হাহাহা করে হাসছে। আমি নিবিড়ের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে আছি।
নিবিড় আমাকে কে ব্যঙ্গ করে বলল, ‘ এই বার নিজেই ভাবো তোমাকে কি আমি এমনি এমনি বলি মাথা মোটা। এমন উদ্ভব চিন্তা ভাবনা তোমার দ্বারাই সম্ভব।’
আমি গাল ফুলিয়ে কিছু বলতে যাব তখনই দরজা খোলে লিহান বলে, ‘ ছোঁয়া আসতে পারি?’
আমি সিটকে উঠে দরজার দিকে তাকালো। লিহান এখানে কি করছে এখন! ও আমার সাথে নিবিড় কে রুমে দেখলে রঙ ভাবতে পারে। এটা আবার আপুকে বলে দিলে সর্বনাশ হবে।
আমি গলা উঁচিয়ে বললাম,’ না না, কোন দরকার?’
লিহান না শুনে খুব অপমানিত বোধ করল। তবু ও বলল, ‘ হ্যাঁ একটু দরকার ছিল তুমি কি বিজি?’
আমি নিবিড়ের দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম, ‘হ্যাঁ তোমার সাথে কাল কথা বলি।’
লিহান আচ্ছা বলে চলে গেল। আমি ভাবলাম হয়ত লিহান নিবিড় কে দেখতে পায় নাই। আমি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। এদিকে আমি জানতে পারলাম না লিহান আগে আমাদের দুজনকে দেখে নিয়েছে।
নিবিড় ও সাথে সাথে দরজার খুলে বের হতে যাচ্ছিল আমি পেছন ডেকে বললাম, ‘ আপনি একটু পরে যান আপনাকে দেখে নেবে।’
‘দেখুক আমি কাউকে ভয় পায় নাকি? এটা আমার বাসা আমি এখানকার যেখানে খুশি সেখানে যাব।’
‘ ঘাড় তেরা একটা!’
.
পরদিন সকালে থেকে বিশাল খাবারের আয়োজন। আত্মীয়-স্বজন আসে এজন্য তাদের জন্য বিশাল খাবারের আয়োজন করা হয়েছে। আজকে অবশ্য আমাকে রান্না করতে হচ্ছে না। আমাকে কেন বাসার কাউকে রান্না করতে হচ্ছে না। বাবুর্চি করছে এখন সব রান্নাবান্না। কিন্তু তবু ও আমি ফ্রি নাই আমাকে তো পেয়েছে একজন ফ্রী কাজের লোক। দায়িত্ব পালন করব রাজি হয়েছিলাম এদের সাহায্য করব। এখানে আমি এখানে রাজি হয়ে ফেঁসে গেছি। কি করব মুখ বুজে সব কিছু সহ্য করতে হচ্ছে। কেউ কফি চাচ্ছে কেউ চাচ আছে কেউ জুস চাচ্ছে ঘুরতে ঘুরতে মনে হয় পাগল হয়ে যাব। আর এদিকে আশার তো পাত্তাই নাই। আশাকে তো অন্য কাজ করতে হচ্ছে বাসা তো সাজানো হয়েছে হলুদের প্যান্ডেল সাজানো বাকি আছে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হচ্ছে সেখানে আশা আছে। সেখানে কত কিছু যে লাগছে ও সেগুলো করছে।
তাহমিনা আপু কে তো যে যেখানে পাচ্ছে বসিয়ে রেখে কেউ ভালো কথা বলছে কেউ কটু কথা বলছে। এত বছর বিয়ে করেনি কেন! তার বাড়ির লোক কোথায়! কেউ বরের বাড়িতে থেকে বিয়ে করে নাকি। কিন্তু যে যাই বলুক রাফসান কাকি ঢাল হয়ে তার পাশে দাড়িয়েছে এটা জাস্ট আমাকে মুগ্ধ করেছে।
আমি তো বিরতির করে একটা কথাই বলছিলাম,হে আল্লাহ রাফসান কাকার মত এমন একজন কেয়ারিং জীবনসঙ্গিনী পেলে জীবনটা ধন্য হয়ে যেতো।
সেই মুহূর্তে নিবিড় সেখানে কিভাবে এলো জানিনা আমি তখন গরম পানি করছিলাম চা বানানোর জন্য। নিবিড় এসে আমার কানের কাছে বলে, ‘এর থেকেও বেটার কেউ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে!’
আমি নিবিড়কে দেখে বলি, ‘আপনি এখানে কি করছেন?’
নিবিড় বলল, ‘ আমার জন্য এক কাপ কফি করো তো।’
আমি তেজি কন্ঠে বললাম, ‘ কে আমার জন্য অপেক্ষা করছে?’
নিবিড় না জানার ভান করে বলল,’ আমি কি করে জানবো?’
আমি নাক পাটা ফুলিয়ে বললাম, ‘ তাইলে আপনি বললেন কেন?’
নিবিড় বলল, ‘ আমার মনে হয় সবার জন্যই আল্লাহ তায়ালা বেটার কাউকে চুজ করে রেখেছে তাই বলেছি।’
‘ আমি চা করছি আর এই পর্যন্ত তিনবার চা করলাম। এখন আমি কফি করতে পারব না। নিজেরটা নিজে করে নেন। আমি আপনাদের বাসার কাজের বুয়া না আমাকে হুকুম করবেন না।’
নিবিড় আমার তেজি কন্ঠ শুনে হাহাহা করে হাসছে। তারপর সত্যি নিজেই বানাতে লাগল কফি। আমি আড়চোখে দেখলাম।
#চলবে……
#অবাধ্য_প্রেম
#পর্ব_৩৪
#নন্দিনী_নীলা
নিবিড় কে রেখেই আমি চায়ের ট্রে হাতে বাইরে চলে এলাম। সবাইকে চা দিয়ে ট্রে হাতে কিচেনে আসলাম রাখতে। তখনো দেখি নিবিড় কফি হাতে দাঁড়িয়ে আছে রান্নাঘরে। তিনি হয়তো জানতে আমি আবার আসবো। তাই ইচ্ছে করে দাঁড়িয়ে আছে। আমি নিবিড় কে ইগনোর করে ট্রে হাতে চলে গেলাম ভেতরে। ট্রে রেখে পেছনে ফিরতেই দেখি নিবিড় আমার দিকে কফির মগটা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কুঁচকানো চোখে কফির মগ টার দিকে তাকিয়ে নিবিড়ের মুখে দেখে তাকালাম।
কিছু বলতে যাব তার আগে নিবিড় বলে উঠলো, ‘ আমার বানানো কফি খেয়ে দেখ। এই স্বাদ তোমার মুখে লেগে থাকবে। তুমি তো কিপটা আমাকে এক কাপ চা খাওয়ানোর ভয়ে দরজা আটকে বসেছিলে। আমি তোমার মত না। নাও ধরো।’
আমি দাঁত কিড়মিড় করে বললাম, ‘ হ্যাঁ আমি কিপটা। আমি কার ও টা খাইও না কাউকে দেয় ও না। এবার সরুন আপনার কফি নিয়ে। আমাকে জ্বালাতে আসবেন না। আপনি এমন অদ্ভুত ব্যবহার কেন করছেন সেটা আমার মাথায় আসছে না। এত ভাল বিহেভ করছেন কেন? আপনার মতলব কি সত্যি করে বলেন? হুট করেই আলগা রাগ করা মানুষটা এমন শান্ত স্বভাবের হয় কি করে?’
নিবিড় ঠোঁটে রহস্যময় হাসি এনে বলল,, ‘মগ টা ধরো, খেতে খেতে নয় চিন্তাভাবনা করে বের করো।’
আমি অবজ্ঞা স্বরে বললাম, ‘ আমার তো খেয়ে দেয়ে কাজ নাই আপনাকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে সময় নষ্ট করব।’
নিবিড় জোর করে আমার হাত টেনে কফির মগ ধরিয়ে চলে গেল। আমি হাঁ করে নিবিড়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। লোকটা এত জেদি উফফ কি বলবে জোর করে কফি আমাকে দিয়ে গেল ফাজিল লোক।
কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে আছি কি করবে এখন এই কফি। এটা ফেলে দেব? ধুর ভাল্লাগে না। যতই হোক এটা খাবার তো এটা নষ্ট করব। নিবিড়ের জিনিস আমি কেন খেতে যাব? নিবিড় এটা আমাকে কেন দিল।
আকাশ পাতাল ভেবে কোন দিশা না পেয়ে কফি মগ ঠোঁটের কাছে এগিয়ে নিলাম। অস্বস্তি নিয়েই এক চুমুক দিলাম মগে। মুখে দিয়ে এর স্বাদ পেলাম আসলেই ভালো হয়েছে। আমার মুখ থেকে তৃপ্তি স্বরে বেরিয়ে এলো…. – বাহ দারুন তো। নিবিড় দেখছি ভালোই এক্সপার্ট কফি করতে।
আমি আরেক চুমুক দিতে মগটা মুখের কাছাকাছি নেব তখনি ঝড়ের বেগে ছুটে এলো নিবিড় আর আমার হাত থেকে এক প্রকার কেড়ে নিল মগটা। আচমকা কান্ড দেখে আমি চমকে উঠলাম। বিহ্বল চোখে নিবিড়ের দিকে তাকালাম। এটা কি হলো? আমার বোধগম্য হচ্ছে না। নিজে সেধে দিল আবার নিজেই কেড়ে নিল এটা কেমন ভদ্রতা?
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম, ‘ আপনি কফি কেড়ে নিলেন কেন?’
নিবিড় বলল, ‘ সো সরি এটা আমার। আমি ভুলে আমার টা তোমাকে আর তোমার টা আমি নিয়ে গেছিলাম। তাই চেঞ্জ করতে আসছি।’
আমি রাগ সংবরণ করে বললাম, ‘ তাই বলে এমন করে কেড়ে নিবেন। এজন্য আমি নিচে চাইনি আপনার জিনিস। জোর করে দিয়ে এখন কেড়ে নিচ্ছেন।’
‘ তুমি ভুল বুঝছো। এমনটা না।’
‘ আচ্ছা মানলাম তাই বলে চেঞ্জ করতে এসে কাড়াকাড়ি করবেন। আম–
আমার কথা থেমে গেল নিবিড় আমার চুমুক দেওয়া কফিতে অনবরত চুমুক দিচ্ছে। আমি যে পাশ দিয়ে চুমুক দিয়েছি সেই পাশ দিয়েই দিচ্ছে। আমার গলা শুকিয়ে এলো। বুক ধুকপুক করছে।
নিবিড় শান্ত গলায় বলল, ‘ কেড়ে নিয়েছিল কারণ তুমি চুমুক দিতে চেয়েছিলে। কেড়ে নেওয়ায় দিতে পারো নি।’
বলে নিজের হাতের কফি আমার হাতে দিয়ে আমার খাওয়া কফি খেতে খেতে চলে গেল নিবিড়।
আমি হতবুদ্ধি চোখে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছি। এই কফি আর আমি খাব না। মস্করা পেয়েছে নাকি। আমি কফি ফেলে দিলাম। তারপর গাল ফুলিয়ে বেরিয়ে এলাম। তাহমিনা আপু আমাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেল। আর আমার হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে বলল, ‘ এটা তোর জন্য। রাফসান এনেছে।’
আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ কি আছে?’
‘তোর জন্য দুইটা শাড়ি। রাফসান নিজে পছন্দ করে এনেছে।’ বলেই মিষ্টি করে হাসলো।
‘আমি এটা নিতে পারব না। আমার হলুদ শাড়ি আছে। আমি সেটাই পরব। এসব আমাকে দিও না।’ আমি নিতে না চেয়ে বললাম।
তখন রাফসান কাকা এলো রুমে আর আমার কথা শুনে বলল, ‘ ছোঁয়া তোমার জন্য আজ আমি তাহু কে পাচ্ছি। তুমি হেল্প না করলে তাহু কে আমি মানাতে পারতাম না। আজ আমাদের বিয়েটা হচ্ছে তোমার জন্যেই। আমি অনেক ভালোবেসে এই সামান্য জিনিস তোমার জন্য এনেছে। এটা না নিলে আমি খুব কষ্ট পাব।’
‘ আমি আবার কি করলাম। আপু আপনাকে ভালোবাসে তাই ফিরে এসেছে। এই সব কিছু আপনাদের ভালোবাসার জন্য হচ্ছে।’
‘ তোমাকে এটা নিতেই হবে।’
আমি পরলাম মুসিবতে। কাকা আমাকে না দিয়ে ছাড়বেই না। এটা নিতেও ইচ্ছে করছে না, আবার এমন কথা বলছে না নিয়েও পারছি না। রীতিমতো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করেছে। অবশেষে আমি হার মানলাম।
ব্যাগ উপরে রেখে এসে ব্রেকফাস্ট করলাম সবাই এক সাথে। মাহিকে দেখলাম সেই মেয়েটার সাথে বসে খাচ্ছে। ওই মেয়েটার নাম এখনো আমি জানি না। মেয়ে আমার দিকে অগ্নি চোখে তাকিয়ে আছে। এই রাগের কারণ আমি জানি নিবিড় আমার পক্ষ নিয়েছিল বলে। মেয়েটা মাহিকে আমার দিকে তাকিয়ে কি যেন জিজ্ঞেস করছে। আমি নিশ্চিত আমার সম্পর্কে জানছে।
লিহান ফট করে আমার পাশে বসে বলল, ‘ গতকাল রাতে তুমি নিবিড়ের সাথে রুমের ভেতরে কি করছিলে?’
আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ নিবিড় আমার রুমে থাকবে কেন? কি বলছো?’
লিহান বলল, ‘ আমাকে তাড়িয়ে দিলে মিথ্যা বলে। আমি তো আগে দেখেছি রুমে তুমি আর নিবিড় কি যেন গল্প করছিলে। কিন্তু আমাকে যেতে দিলে না।’
আমি শুকনো ঢোক গিলে কাঁচুমাচু মুখে করে লিহানের দিকে তাকিয়ে আছি। কি বলব বুঝতে পারছি না। লিহান নিবিড় কে আমার রুমে দেখে নিয়েছে আমি তো বুঝতেই পারি নি। কি সর্বনাশ! ও তো রঙ কিছু ভাববে এখন। সব দোষ ওই নিবিড়ের।
আমি আমতা আমতা করে কিছু বলতে যাব তখন নিবিড় আর আবির আমার টেবিলে এসে বসল চেয়ার টেনে। আমি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নিবিড়ের দিকে।
আবির বসেই লিহান কে বলল, ‘ ব্রো তোমার প্লেট কই। খাবার ছাড়া খাবার টেবিলে বসে আছো কেন?’
লিহান বলল, ‘ আমি খাওয়া শেষ করে এসেছি।’
‘ ওহ তা ভাবির সাথে কি কথা বলছিলে ব্রো?’
আমি ও লিহান দুজনেই চোখ কপালে তুলে আবিরের দিকে তাকালাম। আবির আমাকে ভাবি বলে ইশারা করে জিজ্ঞেস করেছে। আমি তো বিষ্ময় এ হতভম্ব। এই পোলা বলে কি?… আমি ওর কোন কালের ভাবি?
আমি রাগে গজগজ করতে করতে বললাম, ‘ এই আমি তোমার কোন কালের ভাবি? আমাকে ভাবি বলছো কেন?’
লিহানের মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না ও নিবিড়ের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে আছে। নিবিড় আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তা দেখে লিহান কিছু সন্দেহ করছে। আর আমি আবিরের সাথে তর্ক বিতর্ক করছি।
এইদিকে মাহি আর ওই মেয়েটাও আমাদের কাছে এসে দাঁড়ালো।
মাহি এসেই বলল, ‘ সবাই এখানে কি করছো?’
নিবিড় বলল, ‘ খাচ্ছি চোখে দেখিস না।’
মাহি বলল, ‘ ভাইয়া রত্না আপু বলল তোমার সাথে নাকি কি কথা বলবে।’
নিবিড় রত্না মানে যে মেয়ে আমার সাথে ঝগড়া করেছিল তার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ বল’
রত্না বলল, ‘ ব্রো এদিকে আয়। ওদের সামনে বলব না।’
নিবিড় বলল, ‘ তাহলে পরে বলিস। এখন কোথাও যেতে পারব না।’
রত্না অভিমানী গলায় বলল, ‘ এই মেয়ের সাথে বসে খাচ্ছো কেন? আমাদের টেবিলে এসে বসো।’
নিবিড় রেগে গিয়ে বলল, ‘ তুই এখান থেকে যাবি?’
ধমক খেয়ে রত্না আর মাহি দৌড়ে পালিয়েছে।
আমি এতজন আসা যাওয়া আর রং ঢং দেখতে দেখতে খেতেই পারলাম না। এতো গুলো ছেলের সামনে বসে কি খাওয়া যায় আমি প্লেট হাতে উঠে দাঁড়ালাম তারা দেখে আবির বলল , ‘ কই যাও আপু?’
আমি বললাম, ‘ খেতে যাই’
আবির বলল, ‘ এখানে বসেই খাও। কোথায় যাও?’
‘তোমাদের যন্ত্রণায় কি আমি খেতে পারব? আমাকে না জ্বালিয়ে তো তোমরা দুই ভাই স্বস্তি নেবে না। তোমরাই থাকো আমি যাই।’ দাঁতে দাঁত চেপে বলে চলে এলাম বিরক্তিকর মুখে।
#চলবে…..