অবশেষে তুমি পর্ব-২৬+২৭

0
569

#অবশেষে_তুমি
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৬
____________________
অন্ধকার কামরা।আলোর ছিটেফোঁটাও নেই।মেঝেতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে একজন মানবী।মুখেও স্কচটেপ লাগানো।উঠে বসা কেন একটু নড়াচড়া করার শক্তিটুকুও নেই যেন।নিভু নিভু চোখে তাকালো সে তবে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পেলো না।হুট করেই আলোর রশ্মি পড়ল চোখে।আকস্মিক আখিতে আলোর রশ্মি পড়ায় সাথে সাথে বন্ধ করে নিলো আঁখি জোড়া।মিনিট বাদে নিভু নিভু চোখে তাকালো।সামনেই তাকাতেই চমকে গেলো সে।এটা তো সেই ড্রাইভার যাকে টাকা দিয়েছিলো এক্সিডেন্ট করানোর জন্য।কিন্তু সে এখানে কেন?তাকে দেখে সামনে থাকা মানুষটা ও চমকে গিয়েছে।চকিত গলায় বললো –

-ম্যাম আপনি?

-তুমি এখানে কেন?তোমাকে না পালিয়ে যেতে বলেছিলাম।

-ম্যাম আস,,আসলে আপনি যে টাকা দিয়েছিলেন সেগুলো জু*য়া*র বা*জি*তে হেরে গিয়েছিলাম তাই

তার কথা শুনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো তার দিকে। তার মানে তোর জেরেই কাব্য আমাকে..

-তোমাকে ধরেছি।

আচমকা কারো কণ্ঠ পেয়ে চকিতে তাকালো সামনের দিকে।কাঁপা কাঁপা গলায় বললো –

-কা,,কাব্য।

-হ্যা আমি।কেমন লাগছে আমার খাতিরদারি। ঠিকমতো আছো তো তুমি?রিয়াআআ…

-আম,,আমাকে এখা,,এখানে কেন এনেছেন?

-কেন জানোনা তুমি

-আব,,বা,,না না তো।আম,,আমি জানিনা

-তোতলাচ্ছ কেন তাহলে?ভয় পাচ্ছো আমায়?

-ন,,না

কাব্য বাঁকা হাসি দিয়ে বললো-

-তাহলে আরও কিছু করি যাতে ভয় পাও।

ভয়ার্ত চোখে তাকালো তার দিকে।

কাব্য আবার বললো-

-কি হলো করবো নাকি নিজের মুখে স্বীকার করবে

নিশ্চুপ রিয়া।

-আরও আগেই সন্দেহ ছিল তোমার ওপর শুধু সিওর ছিলাম না আমি আর না ছিল কোনো প্রমাণ। সেদিন ভার্সিটিতেও যাও নি তারওপর আমার বন্ধুর বোন তাই কিছু করতে পারিনি। তবে এবার যা করেছো তারপর প্রমানের আশায় বসে থাকার মতো বোকামি করবোনা। তোমার শাস্তি তুমি পেয়ে যাবে নো টেনশন জান্স।

-প্লিজ কাব্য মাফ করে দিন আমায়।ভুল হয়ে গেছে আমার। প্লিজ ছেড়ে দিন।(অনুনয়ের স্বরে বললো)

-তোমাকে ছেড়ে দেয়া মানে আমার নূরের সাথে বেইমানি করা।সেটা তো করা যাবেনা। আমার কলিজায় হাত দিয়েছ তার শাস্তি তো পাবেই।

-প্লিজ দেখুন বিশ্বাস করুন আমি চাইনি এমনটা করতে।আমি নূরের কাছে মাফ চেয়ে নিব আর আমি জানি নূর মাফ করে দিবে আমায়।প্লিজ ছেড়ে দিন।

-No baby I can’t leave you nor I will.You have to die and I will kill you.Get ready.

কাব্যের কথা শুনে রিয়া বিস্ফোরিত নয়নে তাকালো তার দিকে। তা দেখে কাব্য বললো-

-It’s no use looking like this I’ll do what I said.Get ready to die.
.
.
.
-কাব্য নূরকে আজকের দিনটা হসপিটালেই রাখতে হবে।কালকে সকালে ডিসচার্জ করবো।কিছু কাগজপত্র ঠিক করতে হবে আর নূরের একটা ইনজেকশন এর কোর্সি বাকি ওটা শেষ হলে একেবারে বাসায় নিয়ে যাবে।এক সপ্তাহ পর আবার চেকআপ করাবে।ঠিক আছে?

-ঠিক আছে আঙ্কেল।

-এজন্যই ডেকেছিলাম

-আসি তাহলে।

-হ্যা।

ড.আশরাফের কেবিন থেকে বের হয়ে নূরের কেবিনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো কাব্য। কেবিনে আসতেই দেখলো তন্নী বসে আছে নূরের পাশে আর নূর আধশোয়া অবস্থায় বেডে বসে আছে।

কাব্য তন্নীর নজরে পরতেই ক্ষিপ্ত গলায় বললো –

-কই ছিলি?সেই সকালে বেরিয়েছিস এখন বাজে দুপুর দু’টা।তোকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ না করলেই ভালো হতো।এত দৌড়োদৌড়ি করতি না।

-কাজ ছিল রেগে যাচ্ছিস কেন

-রাগবোনা তো আদর করবো,,হুহ।নে ধর খায়িয়ে দে। তুই আসছিস না এজন্য নূর ও খায়নি। (হাতে থাকা স্যুপের বাটিটা এগিয়ে দিয়ে)

-দে।রিদ বাইরে আছে ওর সাথে যেয়ে তুইও খেয়ে নে।

-হু।

তন্নী চলে গেলে স্যুপের বাটিটা নিয়ে টুল টেনে সামনে বসল কাব্য। এক চামচ স্যুপ নূরের মুখের সামনে ধরলে মুখ ঘুরিয়ে নিল নূর।

-কি হয়েছে? খাচ্ছো না কেন?

নিশ্চুপ নূর।

-হা করো নূর।

আরও খিচে মুখ বন্ধ করে রাখলো নূর যেনো মুখ খুলতে নয় তালা লাগাতে বলেছে।

এবার নূরের সামনে থেকে চামচ সরিয়ে নিল কাব্য। নিজের মুখে পুড়লো।অতঃপর আরেক চামচ নিয়ে তার মুখের সামনে ধরলো। আর বললো –

-এবার হা করো।

আড়চোখে সবটা দেখলো নূর।মুখ ঘুড়িয়ে চুপচাপ খেয়ে নিলো।মনে মনে হাসলো কাব্য। আরেক চামচ মুখের সামনে ধরতেই নূর বললো-

-খাচ্ছেন না কেন

-খেয়ে নিব আমি, তুমি খাও

-খাবোনা

-নূর

-আমি জানি আমার নাম নূর আপনাকে বলতে হবে না। খেলে খান নাহলে যান।আর আপনি না কথা দিয়েছেন

-ঠিক আছে খাচ্ছি। কথা দিয়ে ভেজালে পড়ে গিয়েছি

-হি হি হি। ভালো ই হয়েছে। হুহ।

-হা করো এখন।
.
.
চারিদিক আযানের স্বরে মুখরিত হয়ে গেছে।মাগরিবের আযান হচ্ছে।বেডে বসে মন দিয়ে সেই মধুর স্বর শুনছেন নূর আর জবাব দিচ্ছে আযানের।আযান শেষ হতেই মুখটা ছোট হয়ে গেলো তার।আজ চারদিন সে নামায পড়ছেনা।নামায যে মানসিক শান্তি। অথচ চারদিন ধরে সেই শান্তি থেকে বঞ্চিত।তবে কালকে বাসায় যাবে সেটা মনে পড়তেই শান্তি লাগলো তার।

-হাসছো কেন?

-কালকে বাসায় যাবো।

-ওহ,,নাও শাওন কল দিয়েছে।

কথাটা শুনেই খুশিতে চকচক করে উঠলো নূরের মুখখানা।ভিডিও কল দিয়েছে হোয়াটসঅ্যাপে।ফোনটা হাতে নিতেই শাওনের বিষন্ন মুখশ্রীটা চোখে পড়লো তার।খানিক সময় চুপ রইলো দু’জন।নিরবতা ভেঙে নূর ই জিজ্ঞেস করলো-

-কেমন আছিস ভাইয়া?

নূরের প্রশ্ন শুনে তেতে উঠলো শাওন।রুদ্ধ কণ্ঠে বললো –

-আমি কি তোর কেউ না?কিছু মনে করিস না আমাকে?এত কিছু হয়ে গেলো আর আমাকে কেউ জানালো ও না।তন্নী যদি ভুল করে আমাকে না বলতো তাহলে তো জানতেই পারতামনা।

-রাগ করছিস কেন ভাইয়া।তুই আমেরিকাতে কাজের জন্য গিয়েছিস এসব শুনলে টেনশন করবি এজন্য বলে নি।রাগ করিসনা প্লিজ

-রাগ করতে যাবো কেন আমিতো কেউ না তোদের।

-ওলেএ আমার কিউট ভাইয়া টা রাগ করলেতো তোকে দারুন লাগে।যে কোনো মেয়ে ক্রাশ খেয়ে যাবে।তুই না সবসময় রাগ করে ই থাকবি আর মুখটা এমন করে রাখবি তাহলে আমি তাড়াতাড়ি একটা ভাবি পাবো।হি হি হি

-এই সময়েও তোর মজা করতে হবে

-একটুও মজা করছিনা একেবারে সত্যি

-হ্যা বুঝেছি সত্যি না কি

-আচ্ছা শোন তুই ফিরবি কবে?

-টিকিট পেলে কালকেই ফিরে আসতাম কিন্তু পাই নি দেখি কবে পাই

-ওহ,,আচ্ছা শোন

-বল

-আসার সময় এত্তগুলা চকলেট নিয়ে আসবি আমার জন্য। আর আমার কাছেই কিন্তু দিবি।অন্য কারো কাছে দিলে সেটা আবার পাবোনা আমি।

-মানে?

-কিছু না তুই চকলেট গুলা আমার হাতেই দিবি

-আচ্ছা দিব।নিজের খেয়াল রাখিস।

-হু তুই ও সাবধানে থাকিস।

-আচ্ছা কাব্যকে দেয়।

-নিন(কাব্যের দিকে ফোনটা বাড়িয়ে)

মিনিট পাঁচেক কাব্যর সাথে কথা বলে ফোন রেখে দিল শাওন।ফোন রাখতেই কাব্য নূরকে বললো –

-কি বলছিলে অন্য কারো কাছে চকলেট দিলে সেগুলো আর তুৃমি পাবেনা কাকে বোঝাচ্ছ?

-আপনি ছাড়া আমার চকলেটে আর কে ভাগ বসায় শুনি

-আমি মোটেও তোমার চকলেটে ভাগ বসাইনি এখনো সবগুলা কাবার্ডে পড়ে আছে

-তারমানে ওগুলা কাবার্ডে রাখা যাক বাসায় যেয়ে ই হামলা দিতে হবে। থ্যাঙ্কু বলার জন্য।

থতমত খেয়ে গেলো কাব্য তার মানে ইচ্ছে করে ই ভাগ বসানোর কথা বলেছে নূর।হায় ভুল করে ভুল কথা বলে দিয়েছে।তবুও বললো-

-তোমার যাওয়ার আগেই হাওয়া করে দিব সেগুলো।

-দেখুন আপনি কিছু করবেন না ওগুলা নিয়ে।এমনিতেই আসার সময় ইরাম ভাইয়া যে ডার্ক চকলেট টা দিয়েছিলো আপনার জন্য নিয়ে আসতে পারিনি। (একটু মন খারাপ করে)

-এজন্য ই তো আজকেও নিয়ে এসেছি।

আচমকা কারো কণ্ঠ পেয়ে সামনে তাকালো নূর সাথে কাব্য ও।কেবিনের দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে ইরাম,তিশা,ঈশা আর তন্নী।চট্টগ্রাম থেকে আজকেই এসেছে তারা।তাদের দেখে মুখ প্রসারিত করে হাসলো নূর। তিশা সামনে এগিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

-এখন কেমন আছো ভাবি?

-আলহামদুলিল্লাহ তোমরা কেমন আছো?

-আলহামদুলিল্লাহ।

-ভাবি চকলেট(ইরাম)

-থ্যাঙ্কু।ভালো হয়েছো তোমরা এসেছ একা একা ভাল্লাগে না। ছোট আম্মু এসেছে?ফুপ্পি?

-আম্মু এসেছে।ফুপ্পি আসেনি।

-দাদি কেমন আছেন?

-আলহামদুলিল্লাহ।

-আম্মু আসতে চেয়েছিল ভাইয়া বললো কালকে বাসায় গেলেই দেখতে কষ্ট করে আসতে হবে না।তাই আসেনি।(ঈশা)

-ওহ

-হুম।
.
.
রাত দশটা ১৫মিনিট।বেডে শুয়ে আছে নূর। তন্নী তিশারা চলে গেছে একটু আগে।নূরকে খায়িয়ে দিয়ে সাথে নিজেও খেয়ে নিয়েছে কাব্য। এখন সোফায় বসে কি যেন করছে ফোনে।নূর আলতো স্বরে ডাক দিল-

-শুনুন।এদিকে আসুন

সোফা থেকে উঠে কাছে আসলো কাব্য।

-বলো,,কিছু লাগবে?

-হুম লাগবে

-কি?

ডান পাশে সরে যেয়ে কাব্যর শোয়ার জায়গা করে দিলো নূর। তারপর বললো-

-এখানে ঘুমান

মৃদু হাসলো কাব্য। বললো-

-আমি সোফায় শুতে পারবো।তুমি ঘুমাও।

-বলেছিনা এখানে ঘুমান।আপনাকে লাগবে আমার(নিচু স্বরে)

আবারো হাসলো কাব্য তবে মনে মনে। নূরের পাশে শুয়ে পড়লো।কাব্য শুতেই তার বুকে মাথা রাখলো নূর।ভাঙা গলায় বললো –

-জানেন সেদিন এক্সিডেন্টের সময় মনে হয়েছিল ওখানেই শেষ হয়ে যাবে সবকিছু। আপনার সাথে বাচার ইচ্ছে টা বুঝি আমার অপূর্ণ ই থেকে যাবে।বারবার মনে পড়ছিল সবার চেহারাগুলো। কষ্ট হচ্ছিল খুব।দম বন্ধ হয়ে আসছিলো।তারপর,, তারপর চোখ খোলার পর যখন আপনাকে পেলামনা তখন আরও বেশি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।

বুকের দিকটায় গরম কিছুর আভাস পেতেই বুঝলো কাব্য যে নূর কাঁদছে।তাকে শক্ত করে আবদ্ধ করলো নিজের মাঝে।অতঃপর তার মাথায় চুমু খেয়ে ধীর কণ্ঠে বললো –

-তেমন কিছু হয় নি নূর।আল্লাহর রহমতে ঠিক আছি আমরা। এখন সব কিছু ঠিক আছে।কান্না করো না।

-আপনি হারিয়ে যেয়েননা কাব্য। মরে যাব আমি।

-দেহে প্রাণ থাকতে কাব্য শুধু নূরের আর নূর শুধু কাব্যর।সে চাইলেও তাকে যেতে দিবো না আমি।জোড় করে রেখে দিব।প্রাণপাখি।

কাব্যর মুখে উক্ত বাক্যটুকু শুনে শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো নূরের।মনে মনে বার কয়েক আওড়ালো ‘প্রাণপাখি’শব্দটা। আর প্রতিবারই মুখে হাসি ফুটলো তার।

#চলবে

#অবশেষে_তুমি
#লেখিকা_Nazia_Shifa
#পর্ব_২৭
_________________________
সকাল নয়টা ত্রিশ মিনিট।বেডে পা ঝুলিয়ে বসে আছে নূর।হাতে কিছু কাগজপত্র নিয়ে নাড়াচাড়া করছে কাব্য।দশ মিনিট ধরে খেয়াল করছে নূর। বিরক্ততিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ সূচক আওয়াজ বের করে বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বললো –

-কতক্ষণ ধরে দেখছি কাগজ গুলো দেখেই যাচ্ছেন।আর কতক্ষণ দেখবেন হয়েছে তো চলুন না এবার।

নূরের দিকে একবার তাকিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে গেলো নিজের কাজে।

মিনিট দশেক পর সবকিছু ঠিকঠাক করে বললো-

-এখন কোথায় যাবে।দুপুরে যাব আমরা।

-কেন?

-ডিসচার্জ করবে যখন তখনই তো যাবে।

-হু।
.
.
.
দুপুর ২টা ০৫মিনিট।বেডে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে নূর। কাব্য ফোন টিপছে সোফায় বসে।একটু বাদে ফোন পকেটে পুড়ে নূরের সামনে দাঁড়িয়ে বললো-

-চলো।

-যাক আপনার ফোনের সাথে আই কনটাক্ট করা শেষ হয়েছে।চলুন।

বেড থেকে উঠে দাড়াতে নিলেই নূরকে আটকে দিলো কাব্য।

-দাড়াও

-কেন আবার কি হয়েছে?

নূরকে কোলে নিয়ে বললো-

-এবার চলো।

-নামান নামান কোলে নিয়েছেন কেন?আমি যেতে পারব হেঁটে। আর আপনার হাতও তো ঠিক হয় নি এখনো।নামান কাব্য।

-হুশশ।তোমার মতো তালপাতার সিপাহি না আমি যে এতটুকু ব্যথায় কাত হয়ে যাব।চুপ করে থাক।

মুখ গোমড়া করে দু’হাতে কাব্যর গলা জড়িয়ে ধরলো চুপ করে রইল নূর।

নূরকে গাড়ির পেছনের সিটে বসিয়ে নিজেও বসে পড়ল কাব্য।ড্রাইভিং সিটে রিদকে দেখেই নূর হাসি হাসি মুখে একটু জোরেই জিজ্ঞেস করলো –

-কেমন আছো রিদ ভাইয়া?

-আলহামদুলিল্লাহ

-আমাকে জিজ্ঞেস করবে কে?(মুখ গোমড়া করে)

-তুমি বাসায় ই যাবে রিদও বাসায় যাবে তাই এখন চুপচাপ থাক যা বলার বাসায় যেয়ে বলিও।(কাব্য)

-হু।

একটু বাদেই নূর বললো-

-আন্টি কেমন আছে রিদ ভাইয়া?

-আলহামদুলিল্লাহ

-আন্টিকে কালকে বাসায় নিয়ে আসবে।

-দেখি

-দেখি না আনবে

-হুম।

-আচ্ছা রিদ ভাইয়া তোমা…আর কিছু বলার আগেই চুপ হয়ে গেল নূর কাব্যর চোখ রাঙানোতে।মুখে আঙুল দিয়ে বসে রইল চুপচাপ।

খানিকবাদে সিটে হেলান দিয়ে গা এলিয়ে দিল নূর।দূর্বল লাগছে এখন।ঝিমঝিম করছে মাথাটা।কাব্য নূরের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত গলায় বললো –

-কি হয়েছে খারাপ লাগছে?

-উহুম।দুর্বল লাগছে একটু।

নূরের মাথাটা আলগোছে নিজের কাধে রাখল কাব্য। আলতো ভাবে মাথায় বুলিয়ে দিতে লাগলো হাত।মুচকি হাসলো নূর।
.
.
সোফায় বসে আছে নূর আর তাকে ঘিরে বসে আছে সবাই।মিনিট দশেক আগেই এসেছে তারা বাসায়।নূরের একপাশে মিসেস রেহেনা আর একপাশে মিসেস রাহেলা।

-নূর কি খাবি বল বানিয়ে দিব এখন(মিসেস রাহেলা)

-কিছু খাবোনা এখন ছোট আম্মু।পরে দিও

-আচ্ছা।

-রুমে যেয়ে রেস্ট নেয় তাহলে (মিসেস রেহানা)

-হ্যা চলো অনেকক্ষণ হয়েছে বসে আছো(কাব্য)

-আরেকটু পর যাই(নূর)

-বললামনা চলো

-হুম(মুখ ছোট করে)
.
.
ধরনীর বুকে সন্ধ্যা নেমে এসেছে।আকাশে লালাভ মেঘের আানাগোনা।সাথে হালকা হালকা বাতাস।তবুও গরম যেন তার থেকে দ্বিগুন।এসির পাওয়ারটা৷ আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে পুনরায় গালে হাত দিয়ে বসে রইল নূর।বসে থাকতে থাকতে এখন বিরক্ত লাগছে তার।কাব্য ব্যালকনিতে।সেই সুযোগে বেড থেকে নেমে পা টিপে টিপে দরজার দিকে যাচ্ছিল নূর।তখনই পেছন থেকে হাত ধরে ফেললো কেউ। ভয়ে বুকের ভেতর ধুকপুক ধুকপুক করছে নূরের। ‘আজ শেষ তুই নূর।নির্ঘাত ফ্যানে লটকিয়ে রাখবে না হয় চড়িয়ে লাল করে ফেলবে।’

-কোথায় যাচ্ছিলে?

নূর চুপ। কথাও বের হচ্ছে না।

-কি হলো বলো কোথায় যাচ্ছিলে?

নূর কাব্যর দিকে ঘুরে আমতা আমতা করে বললো-

-আব,,ব ওয়াশরুমে হ্যা ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম

ভ্রু কুচকে কাব্য জিজ্ঞেস করলো-

-সত্যি ওয়াশরুমে?কিন্তু ওয়াশরুম তো এদিকে তাহলে ওইদিকে যাচ্ছিলে কেন?

-ওহ,,হ্যা আসলেই তো ভুলে গিয়েছিলাম।মাথায় ব্যথা পেয়েছি তো এজন্য বোধহয়।

কাব্য একটু কাছে যেয়ে শক্ত কণ্ঠে বললো-

-বোকা পেয়েছ আমায়।আমি ভালো করেই জানি কেথায় যাচ্ছিলে তুমি।

নূর ভয় পেয়ে কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো-

-বিশ্বাস করুন আমি বাইরে যাচ্ছিলাম না আমি সত্যি ওয়াশরুমেই যাচ্ছিলাম।

-আমি কখন বললাম তুমি বাইরে যাচ্ছিলে?

খেয়াল হলো নূরের যে সে কি বলেছে।ধরা পড়ে গেছে সে তাই এখন আর লুকানোর বৃথা চেষ্টা করে লাভ নেই।কিছুটা হাসার চেষ্টা করে মিনমিনিয়ে বললো-

-ওই আর কি মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে।সলিইই

-যাও গিয়ে চুপচাপ বসে থাক।

-হু।

পূর্বের ন্যায় গালে হাত দিয়ে বেডে বসে আছে নূর। বারবার হামি দিচ্ছে। বোর হচ্ছে সে।’বাইরে সবাই কত আড্ডা দিচ্ছে আর আমি এখানে বসে আছি।খরুস একটা’।কাব্যকে খানিক বকে পুনরায় দৃষ্টি রাখলো ব্যালকনিতে। সেখানেই বসে আছে কাব্য। কি করছে এতক্ষণ ধরে ব্যালকনিতে।উঠে দেখতে যাবে তখনই টোকা পড়লো দরজায়। তাকিয়ে দেখল তন্নী,ঈশা আর তিশা দাঁড়িয়ে আছে।

-আসবো(তন্নী)

-আয়(মুখ গোমরা করে)

তন্নী বেডে বসতে বসতে বললো-

-কি হয়েছে মুখটাকে এমন করে রেখেছিস কেন?

-এতক্ষণ পরে মনে পড়েছে যে এখানে কেউ একা একা বোর হচ্ছে।

-তুই রেস্ট নিচ্ছিস এজন্যই আসিনি

-হ্যা এখন আবার ভইয়া আসতে বললো তাই তো আসলাম।(ঈশা)

-উনি আসতে বলেছে?

-হ্যা।

-ওহ।

কথার মাঝে ঈশা আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলো-

-আচ্ছা ভাবি ওই ভাইয়াটা কই?

-কোন ভাইয়া ঈশা?(নূর)

-ওইযে আমাদের বাসায় গিয়েছিল যে তোমাদের সাথে।

বুঝতে পারলো নূর। বললো –

-রিদ ভাইয়া?(নূর)

ঈশা লাজুক হেসে বললো –

-হ্যা।

তন্নী থমথমে গলায় জিজ্ঞেস করলো-

-কেন ওনাকে দিয়ে তোর কি কাজ?

তন্নীকে জ্বালানোর জন্য বললো-

-আরে ঈশার ক্রাশ যে রিদ ভাইয়া তুই তো জানিস না।ও আমাকে বলেছে।

ফুসে উঠলো তন্নী। কপোট রাগ দেখিয়ে বললো-

-কত ক্রাশ খাস তুই।কয়টা লাগে ক্রাশ।দেখ যত ক্রাশই খাস তবে ওনার থেকে দূরে থাকবি।ভুলে যা উনি তোর ক্রাশ।

তন্নীর এমন রিয়েকশনে তিশা আর ঈশা অবাকের চরম পর্যায়ে।তার এমন ব্যবহার আশা করেনি দু’জনের একজনও।খানিকটা সন্দেহ ও হচ্ছে তিশার। নূরের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুটি উঁচু করে জিজ্ঞেস করলো।নূরও মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।চকিতে তন্নীর দিকে তাকালো তিশা আর বললো-

-তন্নীপু ঘটনা কি সত্যি? তুমি আর রিদ ভাইয়া..

-হ্যা আমি আর রিদ ভাইয়া… এতটুকু বলেই দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো তন্নী।

-কি? (ঈশা)

-কি,,কিছুনা।তো,,তোরা থাক আমি আসি।

তন্নী যেতেই তিনজন শব্দ করে হেসে দিল। কিছুক্ষণ একসাথে আড্ডা দিতে দিতেই ডিনারের জন্য ডাক পড়লো।
.
.
ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে চুলে বেনী করার চেষ্টা করছে নূর আর কিছু একটা ভাবছিলো।কাব্য বেডে বসে কাজ করছিলো ল্যাপ্টপে।অন্যমনস্ক থাকায় চিরুনিটা নূরের হাত থেকে নিচে পড়ে যায়।নিচু হয়ে সেটা উঠিয়ে নিতেই গেলেই ড্রেসিং টেবিলের কোণার সাথে মাথা লেগে যায়।যার দরুন একটু ব্লাড ও বেড়িয়ে গেছে। না চাইতেও মৃদু স্বরে মুখ দিয়ে আর্তনাদ বেড়িয়ে যায় তার।কাব্য তাড়াতাড়ি করে উঠে আসে নূরের কাছে।রাগী স্বরে বললো-

-এত কেয়ারলেস কেন তুমি নূর?দেখেশুনে কাজ করতে পারোনা।ব্লাড বেড়িয়ে গেছে।এদিকে আসো।

মাথার চোটের থেকে বেশি কাব্যর ধমকে চমকে গেছে নূর।চুপচাপ বসে রইলো সে। কাব্য মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ক্ষত হওয়া জায়গায় মেডিসিন লাগাতেই চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো নূর।সেখানটায় ফু দিতে দিতে কাব্য বললো-

-জ্বলছে বেশি?ঠিক হয়ে যাবে।তোমারই তো দোষ এমনিতেই মাথায়..
তাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে নূর কাব্যর হাতের ওপর হাত রেখে বললো –

-কিছু হয়নি।ঠিক আছি আমি।আপনি পাশে থাকলে বাকিটুকু ও ঠিক হয়ে যাবে।

মৃদু হাসলো কাব্য। ব্যান্ডেজ চেন্জ করে দিয়ে বললো –

-চলো রাত হয়ে গেছে অনেক।

-হুম

#চলবে