শূণ্যতার পূর্ণতা তুমি পর্ব-১৭

0
417

#শূণ্যতার_পূর্ণতা_তুমি
#রোকসানা_আক্তার
#পর্ব_১৭

শাশুড়ী মা সূবর্ণার সাথে ফোন কাটলেই বার বার কেঁদে উঠেন!খুবই আওয়াজ করে কেঁদে উঠেন।ইদানীং কয়দিন যাবৎ এরকমই হচ্ছে!কারণ সূবর্ণার শ্বশুর বাড়িতে অবস্থা ভালো না!দিনভর শাশুড়ী,শ্বশুর এবং ননদ মিলে সূবর্ণার ওটাসেটা দোষ ধরছে।আবার রান্নায় কোনো উপকরণ কম দিতে ভুল হলে শাশুড়ী খাবার সময় ওমনি খাবার উপড়ে নিচে ফেলে দেয়।তারপর আর খায় না।উঠে চলে যায়।আর নিজের রুমে গিয়ে ছেলের কান ভারী করে।কেঁদেও দেয়।ছেলে তো মা পাগল।মা যা বলে তাই শোনে।শান্তি নেই সূবর্ণার!তাছাড়া,সূবর্ণাকে আসতেও দিচ্ছে না!আমাদের এদিকে কারো মনে শান্তি নেই!খুব কাঁদতে ইচ্ছে করতেছে সূবর্ণার জন্যে।শাশুড়ী মা আমাদের রুমে আসেন।আকাশকে বলেন,

“আমার মেয়েকে এনে দে তাড়াতাড়ি!কি ভুলে ওখানে আত্মীয়তা করতে গেলাম।মেয়ে আমার বিয়েতে রাজি ছিল না।কেনো জোর করে বিয়ে দিলাম।কি মনে হয়ে বিয়ে দিলাম!”

আকাশ চুপ করে থাকে।সাথে আমিও।কি বলবো আর আমরা!আমরা তো কেউই বিয়েতে রাজি ছিলাম না!শাশুড়ী মা আবার বলেন,
“আকাশ?তোর বোন কে বাঁচা।আমার মেয়েটাকে ওরা মেরে ফেলবে!যা আমার মেয়েকে নিয়ে আয়।”

আমিও এবাট বললাম,
“সূবর্ণাকে নিয়ে আসেন!আমার খুব কষ্ট লাগতেছে!”

আকাশ বলে,
“ওরা তো দিবে না মনে হয়।”
“না দিলে জোর করে নিয়ে আসবি!”
“তাহলে তো তোমার মেয়ের সংসার আর থাকবে না।আচ্ছা,ওয়েট আমি সূবর্ণার জামাইকে কল দিই।সূবর্ণা কাল একটা নাম্বার দিয়েছিল আমাকে।”

এ বলে আকাশ ফোনটা বের করে।আর নাম্বারটা ফোনে তুলে।তারপর কল দেয়।নাম্বার ঢোকে।রিসিভ হয়নি ওপাশ থেকে।আকাশ আবারো চেষ্টা করে।এবার রিসিভ হয়।আকাশ সাথে সাথে বলে উঠে,
“হ্যাঁলো?”

ওপাশ থেকে,
“কে বলছেন?”
“জ্বী,আমি সূবর্ণার বড় ভাই।তোমার সাথে কিছু কথা বলার ছিল!”

আকাশের পরিচয় জানতে পেরেই সূবর্ণার স্বামী সাথে সাথে কলটা কেঁটে দেয়!আকাশ এবার শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকায়,
“কথা বলবে না আমাদের সাথে!”

শাশুড়ী মা বলেন,
“আমরা কি দোষ করেছি?আমার মেয়ে কি দোষ করেছে!নতুন বিয়ে হয়েছে!আর এতটা খারাপ,এতটা জানোয়ার এরা!আকাশ কালকেই তুই আমার সাথে যাবি।কালকেই আমরা কথা বলবো।আর দেখবো কি সমস্যা এদের!কেনো এরা এরকম করতেছে।”

আকাশ বলে,
“যাবো।”

তারপর আকাশ এবং শাশুড়ী মা যায় সূবর্ণার শ্বশুর বাড়িতে!আকাশ যাওয়ার সময়,
“আমানকে চোখে চোখে রেখো!টেনশন করো না।আশা করি ভালো কিছুই হবে।”

এ বলে আকাশ চলে যায়।আমার ভেতরটা ধু ধু করে উঠে।জানি না সূবর্ণার কি হয়!খুব রাগ হচ্ছে শাশুড়ী মায়ের উপর কেনজানি!সারাটা দিন আমানকে খাইয়ে,আমানের সাথে গল্পগুজব করে সময়টা কাঁটে।আর বার বার বাইরের দিকে নজর এঁটে।আকাশ এবং শাশুড়ী মা কখন আসবেন এই ভেবে।কিন্তু সন্ধে গড়িয়ে গেল এলো না।ভাবলাম কল করি এবার।তাই আমানকে সোফার একপাশে বসিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে কল করলাম।ওমনি দরজায় কলিং বেল।দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।সূবর্ণা সামনে দাঁড়িয়ে।আর আমাকে খুব শক্ত করে ধরে।কেঁদে দেয়!

“ভাবী!ভাবী!”
আমার ঝরঝর করে চোখের পানি বেয়ে পড়তে থাকে।আকাশ পাঁচ কেঁটে চুপচাপ আমানকে নিয়ে রুমে চলে যায়।আর শাশুড়ী মা রাগ মুখে ধপাস করে গিয়ে সোফার উপর বসেন!আর বলতে থাকেন,

“আমার মেয়ে কি নদীকে ভেসে আসছে নাকি!দিব না আমাদের মেয়ে!দিব না!আমার একটা মেয়ে!তাছাড়া যদি দিই ই জানোয়ারের বাচ্চাদের শিক্ষা দিয়ে তারপর দিব!”

ঠিক তখন সূবর্ণা আমার বুক থেকে মাথা তুলে চোখমুখ শক্ত করে শাশুড়ী মায়ের দিকে তাকায়।বলে,
“সব তোমার কারণে হয়েছে!তুমিই এসব কিছুর জন্যে দায়ী!এখন ন্যাঁকামো করতে এসেছো!বিয়েতে রাজি ছিলাম না।কথার টনকে সবাইকে থামিয়ে নিজেই একা একশো ভাবটা নিয়ে বিয়ে পড়িয়ে দিয়েছো!হয়ে গেলো বিয়ে!বিয়ে তারপর যেভাবেই হলো তারপরের সুখ টুকুও তোমার কারণে হয়নি!”

“আমার কারণে মানে!?”
“হ্যাঁ,তোমার কারণে!তুমিই একমাত্র দায়ী!তুমি!”

আমি বললাম,
“কি বলতেছিস সূবর্ণা…! ”

সূবর্ণা বলতে থাকে,
“ভাবীর সাথে যেগুলা করলে আজ সেগুলা আমাকে দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত হচ্ছে তোমার!পরের মেয়ে ভেবে ভাবীর সাথে যা তা ব্যবহার করলে,তুচ্ছতাচ্ছিল্যতা করলে আর তার সম পরিমাণ সব আজ আমি পাচ্ছি!আজ বুঝো কষ্টের পরিমাণ?যতটা কষ্ট ভাবী পেয়েছিলো!ভাবীর পরিবার পেয়েছিলো!?তুমি বুঝো নি সেদিন!আজও বুঝবে না!পরের মেয়ের ভালো কিছুও তোমার চোখে ভালো না।ঠিক সেইরকম যেখানে আমাকে বিয়ে দিয়েছো,তাদের চোখেও আমার কিছু ভালো না!আর কখনো ভালো হবেও না!নরকে আছি।এভাবে নরকেই থাকতে হবে।শুধুমাত্র তোমার কারণে!তোমার মতন এরকম মা আমি আমার জীবনেও দেখি নি!আমার খোদাকে খুব বলতে ইচ্ছে করতেছে কেনো তোমার মতন মা পেলাম আমি!”

আমি সূবর্ণাকে শুধলাতে চাচ্ছি!
“সূবর্ণা এসব বলে না!রুমে যাও।রেস্ট নাও।আমি আসতেছি!”

আকাশ তখন বেরিয়ে আসে রুম থেকে।বলে,
“কি হয়েছে?”

আমি দু’পাশে মাথা নাড়লাম।মানে বুঝালাম কিছু না।আকাশ শাশুড়ী মায়ের দিকে একনজর তাকালো।তারপর সূবর্ণার দিকে,
“রুমে যা সূবর্ণা।”

সূবর্ণা রুমে চলে গেলো।আকাশ এবার শাশুড়ী মাকে বললো,
“আমি আজকে তোমাকে একটা কথা বলি মা..সবসময় একপাক্ষিক মতামত ভালো কিছু দেয়না!আমি বলবো না সব তোমার দোষ!শুধু এটুকুই বলবো..যখনই যা সিদ্ধান্ত নাও,শুধু একটিবার চারপার্শ্বিক সব ভেবেচিন্তে, নিজেকে অন্যের জায়গাও ভেবে তারপর সব সিদ্ধান্ত নিবে।নিজের মনের মতন সব হয়না মা!”

শাশুড়ী মা এবার বলেন,
“তাহলে সব আমার দোষ!”
“আমি জানি না কার দোষ!তবে দোষ যারই হোক,সে যদি তার নিজের দোষটা নিজেই না ধরতে পারে তাহলে আর অন্যকেউ ধরতে পারবে না কখনো!”

বলে আকাশ আমার দিকে তাকায়,
“খাবার রেডি করো তাড়াতাড়ি।সূবর্ণা কিছুই খায়নি।না খেয়ে আছে সারাদিন।”

এ বলে চলে যায়।শাশুড়ি মা চুপচাপ বসে থাকেন।আকাশের শেষ কথাটা শাশুড়ী মায়ের হয়তো একটু হলেও কলিজায় লাগে!

চলবে…..