তুমিময় আসক্তি ২ পর্ব-২৪+২৫

0
470

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম(লেখিকা)
“২৪”


– আচ্ছা তুমি তোমার বিশ্বাস নিয়ে থাকো তাতে আমার প্রবলেম নেই। এখন চলো।

– কোথায়? চমকে যাওয়া কন্ঠে বলে দোলা সামিরের কথায়।

– আমাকে বিয়ে করতে। সামির দোলার দিকে ঝুকে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস কন্ঠে বলে কথাটা। দোলা চমকানো চোখে তাকিয়ে বলে মানে?
– মানে পরে বুঝলেও চলবে। এখন চলো আমার সাথে কথাটা বলে সামির দোলার হাত চেপে ধরলে দোলা রাগী দৃষ্টিতে সামিরের দিকে তাকিয়ে বলে আমার হাত ছাড়ো। আমি কোথাও যাবো না তোমার সাথে। দোলার কথায় যেনো মজা পাই সামির। তাই হো হো করে হেসে উঠে বলে তুমি তো আমার সাথেই যাবে। নাহলে! দোলা ভ্রু কুচকে বলে নাহলে? কি নাহলে?

– তোমার বাচ্চার ক্ষতি করে দেবো আমি। সামিরের কথাটা শেষ হতেই দোলা চিৎকার দিয়ে সামির বলে হাত ওঠাতে যায় মারার জন্য কিন্তু সামির পুনরায় দোলার হাত শক্ত করে ধরে ফেলে।
– ভুলেও আর এই কাজ করার সাহস দেখিও না। এই হাত যদি উঠাতেই হয় তবে ভালোবেসে আদর করার জন্য উঠিও। এখন চলো নয়তো! তোমার বাচ্চাকে শেষ করতে আমার পাঁচ মিনিটও সময় লাগবে না।

— তুমি না দোলাকে ভালোবাসো সামির? তাহলে ওর ক্ষতি করার কথা ভাবো কিভাবে? ওর সুখ ‘দুঃখ যদি না বুঝো তাহলে কেমন ভালোবাসা তোমার? তাচ্ছিল্যের সুরে বলে আশা।
– বাসি তো! অবশ্যই ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই দোলাকে আমার করে পেতে চাই। ও রুদ্রর সন্তানের মা হতে যাচ্ছে জেনেও বিয়ে করতে চাই। এটা কি কম স্যাকরিফাইস হেয়ালি নিয়ে বলে সামির।

– ভালোবাসা মানে শুধু কাছে পাওয়া না সামির। যাকে ভালোবাসি তার সাথে জীবন কাটাতে হবে এমনটাও নয়। ভালোবাসা তো দূর থেকেও হয়।
– আশার কথায় সামির আবারও শব্দ করে হেসে উঠে। দোলা আর আশা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে সে হাসির দিকে৷ সামির হাসি থাকিয়ে কন্ঠে গাম্ভারিতা এনে বলে আমি এতটাও মহান প্রেমিক নয় যে নিজের প্রেমিকা অন্যের হাতে তুলে দিয়ে নিজে বিরহে দিন কাটাবো। স্যাড সং শুনে, এক্স প্রেমিকার কথা ভেবে চোখে জলে নাকের জলে একাকার করবো। আমি হলাম সেই প্রেমিক যে তার ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিতে জানে। যদি আমার ভালোবাসা আমার না হয় তো আমি কারো হতে দেবো না।

যার মধ্যে নুন্যতম মানবিকতা নেই, মনুষ্যত্ব নেই তার মুখে ভালোবাসা কথাটা শুধু উপহাস মাত্র। ব্যঙ্গ করে বলে দোলা।
– অনেক কথা হয়েছে৷ এবার বাকি কথা ওইখানে গিয়ে হবে চলো। এরপর সামির তার লোকদের ডাকলে ওরা এসে দোলা আর আশার হাত আর চোখ বেধে দেয়। তারপর গাড়িতে উঠায়।

— তোর কি মনে রুদ্র! রোজার ওইখানে গিয়ে কোনো লাভ হবে? রুদ্র ড্রাইভ করতে করতে গম্ভীর মুখে তাকায় রাজের দিকে। রুদ্রর তাকানো দেখে রাজ বলে! আমি বলতে চাচ্ছি যে দোলা যদি রোজার কাছে না থাকে। তাহলে তো আমাদের সব প্ল্যান ফ্লপ হয়ে যাবে। অসহায় মুখ করে বলে রাজ।
– আমার বিশ্বাস দোলাকে আমি পাবো৷ রোজায় দোলাকে আটকে রেখেছে তার সাথে সামিরও আছে। যদি দোলার কিছু হয় আমি কাউকে ছাড়বো না আজ।
– রাজ আর রুদ্র একটু আগেই বের হয় দোলাকে খোঁজার জন্য। রুদ্রর দৃঢ় বিশ্বাস দোলা রোজার কাছেই আছে। তানিয়া আর সজল গেছে আশার বাড়ি৷ রাজ বলে তাদের ওইখানে যেতে।
— ভাবি! জেসমিন চৌধুরী আসেন ঘর থেকে হন্তদন্ত হয়ে রত্না চৌধুরীর ঘরে। জেসমিন চৌধুরীকে ব্যতিব্যস্ত দেখে রত্না চৌধুরী ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বলে কি হয়েছে জেসমিন? তোমাকে এত অস্থির দেখাচ্ছে কেনো? দোলাকে পাওয়া গেছে? রুদ্র কি নিয়ে এসেছে দোলাকে? রত্না চৌধুরী চিন্তিত এবং ঘাবড়ে আছেন।
– জেসমিন চৌধুরী আগের তুলনায় মুখটা আরও মলিন করে কাঁদো কাঁদো গলায় বলে ভাবি দোলাকে পাওয়া গেছে। রুদ্র ফোন দিয়েছিলো আমায় বলল তোমায় নিয়ে যেতে। দোলার নাকি অবস্থা ভালো না।
– রত্না চৌধুরী আঁতকে উঠে বলে কি হয়েছে দোলার? কোথায় আছে ও। আমাকে এক্ষুনি নিয়ে চলো দোলার কাছে। রত্না চৌধুরীর কথায় জেসমিন চৌধুরী বলে আমার সাথে চলো ভাবি তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি আমি। এরপর জেসমিন চৌধুরী রত্না চৌধুরীর হুইলচেয়ার ধরে নিয়ে যায় মুখে তার পৈশাচিক হাসি একটা।

— আরে আসুন আসুন মিস্টার রুদ্রনীল চৌধুরী। কি সৌভাগ্য আমার। আরে কে কোথায় আছিস এনাদের বরণ করে নে কথাটা বলতে বলতে এগিয়ে আসে রোজা। রুদ্ররা রোজার বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করতেই কথাগুলো কানে আসে। রুদ্র ক্রোধান্বিত হয়ে তাকায় রোজার দিকে। রাজ ভ্রু কুচকে আছে। রোজার ভাবগতি দেখে মনে হচ্ছে সে আগে থেকেই জানতো রুদ্ররা এখানে আসবে আর তাদের জন্যই অপেক্ষা করছিলো সে।
— দোলা কোথায় রোজা? কাঠগলায় বলে রুদ্র।
– আরে রুদ্র সবে তো এলে! বসি আমরা। দুই চারটা কথা বলি এরপর নাহয় কণের খবর দেওয়া যাবে।
– রোজার কথার মানে কিছুই বুঝতে পারে না রুদ্র আর রাজ। তাই দুজনেই ভ্রু কুচকে কৌতুহলী হয়ে বলে কনে মানে?

– রোজা হাসে। মুখের হাসিটা গাঢ় করে বলে কনে মানে পাত্রী। বিয়ের পাত্রী যাকে বলে। আর সেটা হলো তোমার পিয়ারের দোলা-রাণী। যে আজ কিছুক্ষণ বাদে আমার ছোট ভাই সামিরের বউ হতে চলেছে।

– রোজা! অনেক বাজে কথা হয়েছে। দোলা কোথায় বলো? ওকে কেনো নিয়ে এসেছো এখানে?

– রুদ্র বলে অনেকটা রেগে। রুদ্রর কথায় রোজা ঠোঁট উল্টোয় বলে উঁহু! তোমার ভুল হচ্ছে রুদ্র। আমি নিয়ে আসিনি। তোমার ওয়াইফ, উপস সরি! তোমার এক্স ওয়াইফ নিজে পায়ে হেঁটে হবু শ্বশুর বাড়ি চলে এসেছে। আমি তো শুধু আপ্যায়ন করে এখানে নিয়ে এসেছি ওকে। কারণ আমি জানতাম তোমার প্রথম সন্দেহের তীর টা আমার দিকে আসবে। আর সে সন্দেহবশত তুমি আমার কাছেই ছুটে আসবে। যেহেতু আমি সন্দেহের তালিকায় আগে আছি। সেহেতু অযথা দোষ নিয়ে তো লাভ নেই৷ তাই দোষটা করেই ফেললাম। আর অপেক্ষা করছিলাম কখন কনেপক্ষ আসবে আর তাদের সুন্দর মতো আপ্যায়ন করবো। হেয়ালি করে বলে রোজা৷
— দেখ রোজা তোর এইসব হেয়ালিপণা একদম সহ্য হচ্ছে না৷ দোলা কোথায় বল? নিয়ে আয় ওকে।
– রাজের কথায় রোজা মুচকি হেসে বলে বাবাহ তোর দেখি দোলার জন্য অনেক চিন্তা। সেদিনও দেখলাম সবার থেকে তোর আগ্রহটাই বেশি ছিলো দোলাকে নিয়ে। কি ব্যাপার রে রাজ? দোলার সাথে কি কোনো গোপন চক্কর আছে নাকি? তুই কোনো ভাবে বন্ধুর বউয়ের সাথে…. শাট আপ রোজা। রাজ রেগে চিৎকার করে চুপ করিয়ে দেয় রোজাকে।
– তুই এতটা নিচ মনের মানুষ সত্যি ভাবতে অবাক লাগছে। তুই যে আমার বন্ধু এটা ভাবলেও আমার নিজের প্রতি করুণা আসে। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সম্পর্কে কিভাবে এতটা বাজে কথা বলতে পারিস। তোর মতো জঘন্য নোংরা মেয়েমানুষ আমি দুটো দেখিনি। তুই যে আমার বন্ধু ছিলিস এটাও ঘৃণা আসে ভাবতে। দোলা আমার বোন হয় বুঝলি। ওকে আমি বোনের মতোই ভালোবাসি। তোর নোংরা কথায় সে সম্পর্ক মিথ্যা হয়ে যাবে না। রাজের কথায় রোজা হো হো করে হেসে উঠে।

– তোকে বলেছিলাম না রাজ! দোলা এখানেই আছে। রোজাই ওকে আঁটকে রেখেছে। আমার কথা এবার তো বিশ্বাস হলো দাঁতে দাঁত চেপে বলে রুদ্র।

— এরপর রোজা দোলা আর আশাকে নিয়ে আসতে বললে তাদের নিয়ে আসা হয়। সাথে আসে সামিরও। দোলার সাথে আশাকে দেখে চমকে উঠে রাজ। রুদ্রও অবাক হয়। তার মানে আশা আর দোলা একসাথে আছে এখানে।
– রুদ্র ভাইয়া আমাদের এখান থেকে নিয়ে চলেন প্লিজ। আমরা ভুল করেছি আপনাদের না জানিয়ে এখানে এসে। সামির যে আমাদের সাথে এমন কিছু করবে সত্যি আমরা বুঝতে পারিনি। মাথা নুয়ে ফেলে আশা কথাটা বলে। দোলার মধ্যেও অপরাধবোধ৷ করুণ চাহনি রাখে দোলা রুদ্রর দিকে। রুদ্র দোলার দিকে আহত দৃষ্টিতে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷

— দোলাকে ছেড়ে দাও রোজা। নাহলে কিন্তু ভালো হবে না। আমি চাচ্ছি না এখানে কোনো ঝামেলা হোক। আমি দোলাকে নিয়ে যেতে এসেছি শুধু। রুদ্র নরম কন্ঠে বলে কথাটা। রোজা মুচকি হেসে বলে! অতিথিশালা আমার, ইনভাইটও করেছি আমি। তাই আপ্যায়নটাও আমাকেই করতে দাও। কীভাবে কি করবো সেটা নাহয় আমাকে ভাবতে দাও। বেশি বাড়াবাড়ি করার একদম চেষ্টা করবে না। তাহলে এর ফল একটুও ভালো হবে না। থ্রেট দিয়ে বলে রোজা।

এবার কাজের কথায় আসা যাক দুই হাত ভাঁজ দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে রোজা। সবাই আগ্রহ পূর্ণ হয়ে তাকায় রোজার দিকে।
– সামির এবার কাজের কাজ করি আমরা। রোজার কথায় সামির হাসিমুখে এগিয়ে আসতে গেলে রোজা সামিরকে থামিয়ে দিয়ে বলে, ওয়েট সামির! সামির বিস্মিত হয়ে তাকায়।
– আগে ওদের থেকে ফোন গুলো নিয়ে নে। আমি একটুও বিশ্বাস করিনা এদের। কথাটা শক্ত কন্ঠেই বলে রোজা। রোজার কথায় একজন লোক এগিয়ে আসতে গেলে রুদ্র বলে খবরদার আমাদের কাছে আসবে না। আমরা ফোন দেবো না। আর রোজা! তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো।
– হ্যাঁ করছি বাড়াবাড়ি তো? কি করবে তুমি? কিচ্ছুটি করতে পারবে না। তাই আমি যা বলছি সেটাই শুনতে তোমরা বাধ্য নয়তো তোমার আদরের বউ দোলার গর্ভে যে তোমার অনাগত সন্তান আছে। তার জন্য কিন্তু একটু ভালো হবে না ব্যাপারটা। রোজার কথায় চমকে উঠে সবাই। দোলা ঘাবড়ে গিয়ে পেটে হাত রাখে।

– রোজাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই রুদ্র। ও যা বলছে তাই শোনা ছাড়া আর কোনো উপাই নেই আমাদের হাতে। তবে এর শেষটা দেখেই ছাড়বো আজ! রাজ বলে মিনমিন কন্ঠে। রাজের কথা মতো রুদ্র ওর ফোনটা বের করে এগিয়ে দেয়। সাথে রাজেরটাও দিয়ে দেয়। রোজা স্বার্থক হাসি দেয় একটা।
– সামির একটা পেপার এনে রুদ্রর সামনে ধরে বলে সাইন করো এটাই। হঠাৎ এমন কথায় কৌতুহলী হয়ে যায় রুদ্র। উত্তেজিত কন্ঠে বলে কিসের পেপার এটা?

ডিভোর্স পেপার! তোমার আর দোলার ডিভোর্স পেপার। সাবলীল ভাবে বলে রোজা।
– হোয়াট? রোজা তুমি কিন্তু সব সীমা অতিক্রম করে ফেলছো এবার রেগে বলে রুদ্র।
– বলেছি না আমি যা বলব তাই হবে আজ। বাড়তি কোনো কথা হবে না এখানে৷ বেশি কথা না বলে সাইন করে দাও। তোমার সাথে ডিভোর্স হয়ে গেলে আজ এখনই সামির দোলাকে বিয়ে করবে আর সেটা তুমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে আর ছটফট করবে ভালোবাসার মানুষটা হারিয়ে যাওয়ার শোকে। যেটা দেখে আমি শান্তি পাবো দাঁতে দাঁত চেপে বলে রোজা।

— তুই এইসব কেন করছিস রোজা। রুদ্রর সাথে তোর কিসের এতো শত্রুরা? তুই তো রুদ্রকে ভালোবাসতিস এক সময়। তাহলে এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারিস?

– ঘৃণা করি আমি ওকে আর এটাই করতাম সব সময়। ভালোবাসা সে-তো লোক দেখানো ছিলো মাত্র। বলতে পারিস আমার একমাত্র হাতিয়ার ছিলো ভালোবাসা। যেটা আমি রুদ্রর সাথে করেছি। অভিনয় করেছি শুধু ভালোবাসার। রুদ্র অবাক চোখে তাকায় রোজার দিকে। দোলার ইচ্ছে করছে রোজার গালে কয়েক-ঘা চ/ড় বসিয়ে দিতে।

– রুদ্র তাড়াতাড়ি সাইন করো বলছি। রোজার কথায় রুদ্র জেদ নিয়ে বলে জীবন থাকতে কেউ আমাকে দিয়ে এই ডিভোর্স পেপারে সাইন করাতে পারবে না।
– ওকে ফাইন! আমার কাছে অন্য রাস্তা আছে। নো প্রবলেম বেশ খোঁস মেজাজে বলে রোজা। বিস্ময় নিয়ে তাকায় সবাই ওর দিকে।

– রুদ্র একবার পেছনে তাকাও ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে রোজা৷ রোজার কথা মতো সবাই পিছু ঘুরতেই দেখতে পাই রত্না চৌধুরী আর জেসমিন চৌধুরীকে।
– মা তুমি এখানে? অবাক করা কন্ঠে বলে রোজা।
– আসুন এক্স শাশুড়ীমা। ওয়েলকাম। আপনি ছাড়া ঠিক জমছিলো না। তাই পিপিকে বলে আপনাকে নিয়ে আসা এখানে! স্বাভাবিক ভাবে বলে রোজা।

– পিপি? কৌতুহল নিয়ে বলে রুদ্র।
– হুম পিপি। যে কি-না তোমার খেয়েছে, পড়েছে। তোমার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সব-সময় কাজ করেছে আমার হয়ে। উদাহরণস্বরুপ নিজেই দেখে নাও সি!
– পিপি তুমি এমনটা করতে পারলে আমাদের সাথে। আমরা তো তোমার নিজের মানুষ পিপি। আমি তোমার ছেলের মতো। তাহলে কিভাবে? রুদ্র আর কিছু বলতে বা ভাবতে পারছে না। ঘরের মানুষী যখন বেইমান সেখানে পর-কে আপন ভাবা বিলাসিতা মাত্র।
– জেসমিন তুমি আমাকে মিথ্যা বলে এখানে নিয়ে এসেছো? অবাক হয়ে বলে রত্না চৌধুরী। জেসমিন চৌধুরী রত্না চৌধুরীকে নিয়ে ভেতরে এসে হো হো করে হেসে বলে খুব অবাক হচ্ছো সবাই। হওয়ারই কথা। হও হও! আরো অবাক হও। অবাক হতে হতে মরমে মরে যাও তোমরা।

– পিপি আপনি কেনো করলেন এমনটা? রুদ্র তো আপনার নিজের ভাইয়ের ছেলে? তাহলে কিভাবে সম্ভব এইগুলা? রাজ বলে হতাশ হয়ে।
– তো কি হয়েছে তাতে। কি পেয়েছি আমি ওদের থেকে। সারাজীবন লাঞ্চিত হয়েছি শুধু। পায়ের তলায় পড়ে থেকেছি। কখনো কোনো কথার দাম পাইনি আমি ওদের থেকে। ওদের ব্যবহার দিয়ে আমাকে সব সময় বুঝিয়ে দিয়েছে যে আমি তাদের বাড়ির আশ্রিতা একজন। হেও করেছে আমায়।

– এইগুলো তুমি কি বলছো পিপি? আমরা কখনো তোমাকে ছোট করে দেখেনি। এমনকি এমন কিছু কখনো ভাবিনি। তুমি আমার পরিবার। আমার আপনজন। আমার বাড়ির মানুষ! ঘরের মানুষ।
– রুদ্রর কথায় জেসমিন চৌধুরী বলে সারাজীবন ঘরের মানুষ হয়ে কি লাভ আমার? সব সম্পত্তি তো তোর বাপ তুই দখল করে বসে আছিস। আমার মেয়ের কি ভবিষ্যৎ নেই। আমার নিজের ভবিষ্যৎ নেই সব সময় তোদের গোলামি করবো এটাই ভেবেছিস?

– আহ পিপি! এবার থামো। ওরা তোমায় অবহেলা করেছে তো কি হয়েছে। আমি তোমাকে প্রায়োরিটি দেবো। তোমার কাজের যথাযথ মূল্য তোমায় আমি দেবো মৃদু হেসে বলে রোজা।
– আমি জানি রোজা তুমি আমাকে কখনো ঠকাবে না। তাই তো সব সময় তোমার সাথে থেকেছি। তোমার হয়ে কাজ করেছি। তুমি আমাকে বলেছিলে রুদ্রর থেকে সব সম্পত্তি লিখে নিয়ে তার অর্ধেক ভাগ আমাকে দেবে৷ এবার নিশ্চয় আমার সে আশাটা পূরণ হবে। বেশ গদগদ কন্ঠে বলে জেসমিন চৌধুরী। তার কথায় রোজা মুখের হাসিটা চওড়া করে বলে অবশ্যই পি-মনি। আমি তোমার কাজের উপহার এখনি দেবো। সামির! রোজা সামিরের দিকে ইশারা করলে সামির পকেট থেকে একটা রি/ভো/ল/বার বের করে জেসমিন চৌধুরীর দিকে তাক করলে জেসমিন চৌধুরী ঘাবড়ে যায়। চমকানো চোখে তাকিয়ে আমতাআমতা করে বলে এইগুলো কি হচ্ছে রোজা। সামির আমার দিকে ব/ন্দু/ক ধরেছে কেনো?

– তোমার কাজের প্রাপ্য সম্মান দিতে। রোজার কথাটা শেষ হতেই সামির জেসমিন চৌধুরী বুকে একটা আর একটা পেটে গু/লি করে। সবাই চমকে উঠে অবাক হয়ে তাকায়। রোজা এতটা ডেঞ্জারাস হয়ে উঠেছে ভাবতেই সবার আত্মা শুকিয়ে আসে। জেসমিন চৌধুরী মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ছটফট করতে থাকে। সামির আর রোজা একসাথে হাসতে থেকে। আজ যেনো মরণ খেলায় নেমেছে তারা। বেইমানের সাথে বেইমানিই করতে হয়। যে বিশ্বাসঘাতক হয় তাকে কখনো বাঁচিয়ে রাখতে হয়না। রোজা বলে কথাটা।

– জেসমিন চৌধুরী হাত বাড়িয়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করে কিন্তু সেটাও তার হয়ে উঠে না৷ কিছুক্ষণের মধ্যে প্রাণ ত্যাগ করে সে।

চলবে…..

#তুমিময়_আসক্তি_২
#আলো_ইসলাম (লেখিকা)
“২৫”

– এটা তুমি কি করলে রোজা? ফুপিকে মেরে দিলে? ফুপি তো তোমার হয়ে কাজ করেছে। তাহলে কেনো করলে এমনটা? অবাক হয়ে বিস্ময়ভরা কন্ঠে বলে দোলা। রোজা দোলার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট এলিয়ে হেসে বলে বেইমানের সাথে এমনই করতে হয়। পিপি রুদ্রর খেয়েছে-পড়েছে ওর থেকে সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করেছে। আর ওর বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করেছে। বেইমানি করেছে সে তার পরিবারের সাথে। সেখানে থেকে যে আমার সাথেও এমনটা করবে না কখনো তার কি নিশ্চয়তা আছে? যে নিজ স্বার্থ হাসিল করতে আপনজনদের সাথে এমন করতে পারে সেখানে আমি তো কেউ না। তাই আর রিস্ক রাখলাম না। প্রাপ্য সম্মান দিয়ে ফুড়ুৎ কথাটা বলে রোজা শব্দ করে হেসে উঠে। সাথে সামিরও হাসছে৷ সবাই যেনো অবিশ্বাস্য চাহনি বজায় রেখেছে রোজার দিকে।

– তাছাড়া এটা আমার অনেক আগে থেকেই প্ল্যান ছিলো। আমার কাজ শেষ হলে পিপিকে আর দরকার নেই। কারণ সে ওই চৌধুরী বাড়ির রক্ত। আর চৌধুরী বাড়ির কেউ জীবিত থাক এটা আমি চাইনা। দাঁতে দাঁত চেপে বলে রোজা।

— কেনো এমন করছো তুমি? কিসের এতো রাগ তোমার চৌধুরী পরিবারের প্রতি? কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করে দোলা। সবার মধ্যেই এই কৌতুহল। কেনো রোজা এমন খেলায় মেতেছে সেটা এবার জানার সময় এসেছে।
– আমার জানা মতে তোমার বা তোমার পরিবারের সাথে আমাদের কোনো শত্রুতা নেই বা ছিলো না। তাহলে কেনো করছো তুমি এমন? কিসের প্র/তি/শো/ধ নিচ্ছো আমাদের থেকে? রত্না চৌধুরীর কথায় রোজা বলে শত্রুতা ছিলো না? সত্যি কি ছিলো না? রোজার এমন প্রশ্ন করায় রুদ্র, রত্না চৌধুরী ভ্রু কুচকে তাকায়।

– এই পৃথিবীতে কেউ যদি আমার সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে থাকে সেটা তোমরা। তোমরা সবাই আমার বাবার খু/নি। মে/রে ফেলেছো তোমরা আমার বাবাকে। আমার বাবাই ছিলো আমার সব। আমার আশ্রয় আর সেটা তোমরা কেড়ে নিয়েছো। কি করেছিলো আমার বাবা? অবৈধ পথে পা বাড়িয়েছিলো। কালোবাজারি সাথে যুক্ত হয়েছিলো এটাই তো। কিন্তু তোমরা! নাহ তোমার স্বামী মিস্টার জাহির চৌধুরী কি করলেন। তার প্রাণ প্রিয় বন্ধুকে জেলে পাঠিয়ে দিলেন। যে বন্ধুত্বের দাবী নিয়ে সম্পর্ক চলছিলো সেদিন এক নিমিষে শেষ করে দেয়। রোজার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে কথা গুলো বলতে।

– তোমার ভুল হচ্ছে রোজা৷ তোমার বাবা অনেক খারাপ একটা মানুষ ছিলো যেটা আমরা কেউ জানতাম না। তোমার বাবার জন্য আমাদের কোম্পানি অনেক লসের মুখে পড়ে। যেটা থেকে বেড়িয়ে আসতে অনেক কিছু সাফার করতে হয় আমাদের। তোমার বাবা ইচ্ছে করে কোম্পানিতে দুই-নাম্বার জিনিস ঢুকিয়ে দেয়। তাছাড়া তোমার বাবা রুদ্রর বাবাকে হ/ত্যা করার ষ/ড়/যন্ত্রও করেছিলো। আর তুমি বলছো এইগুলো সামান্য ব্যাপার। তোমার বাবা নির্দোষ ছিলো এত কিছু করেও। শুনো রোজা! তোমার বাবা যা করেছে তার শাস্তি তিনি পেয়েছেন। আর এটাই ছিলো উনার প্রাপ্য। কিন্তু তোমার বাবা যে নিজ থেকে আ/ত্ন/হ/ত্যা করবে এটা ভাবিনি কেউ আমরা। কিন্তু এর জন্য মোটেও আফসোস নেই আমাদের। কারণ যে যেমন কর্ম করবে সে তেমন ফল পাবে এটাই স্বাভাবিক দৃঢ় কন্ঠে বলে রত্না। রত্না চৌধুরীর কথা শেষ হতেই রোজা একটা আঙ্গুল তুলে চিৎকার করে বলে চুপ একটাও বাজে কথা শুনতে চাইনা আমার বাবাকে নিয়ে। রোজার চিৎকারে কেঁপে উঠে রত্না চৌধুরী। রুদ্র রাগী কন্ঠে রোজা বলে উঠে।

– আমার মায়ের সাথে ভদ্রভাবে কথা বলো।।নাহলে কিন্তু খুব খারাপ হয়ে যাবে। অনেক সহ্য করছি তোমার এইসব অন্যায়। তুমি যা করছো সেগুলো তো ঠিক নয় বরং অনেক বাড়াবাড়ি। যেটার জন্য তোমাকে অনুতপ্ত হতে হবে৷ ভুগতে হবে। রুদ্রর কথায় রোজা আবারও মুখে হাসি এনে বলে ও আচ্ছা তাই বুঝি! তা এত ঝাড়ি যে নিচ্ছো কি করবে আমার? এখানে থেকে কেউ বেঁচে ফিরতে পারবে বলে মনে হয় তোমার। এমনি এমনি আজকের আয়োজন করিনি আমি। তোমাদের সবাইকে শেষ করবো আজ। প্রথমে তোমার বাবাকে শেষ করেছি, তারপর নিজ হাতে নিজের সন্তানকে শেষ করেছি যাতে তুমি ভেঙে চুড়ে গুড়িয়ে যাও ভেতর থেকে। কারণ আমি জানতাম ওই সন্তানটা নিয়ে তোমার কত স্বপ্ন ছিলো। তুমি কত আশা নিয়ে ছিলে তুমি। বাচ্চাটা ছিলো তোমার দুর্বলতা। এরপর তোমাকে ছেড়ে এসে একদম চূর্ণবিচূর্ণ করে দিয়েছি কিন্তু এই দোলা। এই মেয়েটার জন্য আবার সব বদলে যায়। ও তোমার জীবনে এসে সব অন্ধকার সরিয়ে নতুন করে আলোর প্রবেশ ঘটায়। জীবনটা নতুন করে রঙিন করে সাজায়। কিন্তু এখন আর তা হবে না। তোমাকে আমি আবারও ভেঙে পড়া দেখতে চাই। তুমি না পাওয়ার কষ্টে ছটফট করবে আর আমি সেটা দেখতে চাই। তাই আজ আবারও তোমার সামনে তোমার স্বপ্ন তোমার আকাঙ্খা এই নব-সন্তান ” যে একটু একটু করে দোলার গর্ভে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাকে আমি শেষ করে দেবো।

–খবরদার রোজা ভুলেও আমার সন্তানের দিকে হাত বাড়াবে না। আমি বেঁচে থাকতে আমার সন্তানের কোনো ক্ষতি হতে দেবো না। তুমি তো একটা মেয়ে রোজা। তাহলে কিভাবে পারছো এমন কঠিন হতে। কিভাবে একটা নিষ্পাপ সন্তানের মৃত্যু কামনা করছো যেখানে সে এখনো এই দুনিয়ার মুখটাই দেখতে পারলো না। তাকে তুমি প্রতিশোধের খোরাক বানাচ্চো। লজ্জা করে না তোমার। ধিক্কার দিয়ে বলে দোলা।

– শুধুমাত্র সামির তোমায় ভালোবাসে বলে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছি তোমায়। নয়তো অনেক আগেই শেষ করে দিতাম আমি তোমাকে। এই যে এত বড় বড় কথা বলছো এখানে দাঁড়িয়ে সেটা পারতে না। শুধুমাত্র সামিরের জন্য বেঁচে যাচ্ছো তুমি দাঁতে দাঁত বলে রোজা।
— রোজা জাহির আঙ্কেলের যে গাড়িটা যে এক্সিডেন্ট হয়। ওইটা কি তুই করিয়েছিস? হঠাৎ করে বলে উঠে রাজ। রাজের কথায় রোজা ভ্রু কুচকে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থেকে স্বাভাবিক ভাবে বলে একটু আগে তো বললাম আমি কথাটা৷ আমি মে/রে/ছি উনাকে প্ল্যান করে। রুদ্রর হাতের মুঠো শক্ত হয়ে আসে। রাজ একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। রত্না চৌধুরী অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে আছে৷ সবাই বিস্মিত হয়ে যায়।
– আসলে রোজা না৷ উনাকে মেরেছি আমি। কিন্তু প্ল্যানটা ছিলো রোজার বেশ গর্বের সাথে বলে সামির।

-আচ্ছা মারার আগে কয়েকটা কথা ক্লিয়ার করে নিই। তোমরা যখন বাঁচবেই না নিশ্চিত সেখানে কিছু সত্য কথা শুনে নাহয় যাও। তাও একটু হলেও শান্তি পাবে আশা করি। রুদ্র শুধু অগ্নিমুর্তি ধারণ করে সবটা দেখছে শুনছে৷

– আমি রুদ্রকে ইচ্ছে করেই বিয়ে করি। আমার বাবাকে জেলে দেওয়ার পরও আমি এমন একটা ভাব বজায় রাখি যাতে রুদ্রদের সন্দেহ না হয় আমার উপর। তাই আমার বাবার ব্যাপারে কোনো ইন্টারেস্ট দেখায় না। কিন্তু আমার বাবার সাথে যোগাযোগ ছিলো। আর বাবা কোথায় কি করতেন তার সবটাই আমি জানতাম। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো এই যে আমি রুদ্রকে ভালোবাসার যে প্রলোভন টা দেখাতাম। আই মিন আমি যে রুদ্রকে ভালোবাসি এটা সবার সামনে উপস্থাপন করতাম। ওইটা ছিলো শুধুমাত্র লোক দেখানো।।আসলে আমি তো রুদ্রকে কখনো ভালোই বাসিনি। ভালোবাসতাম ওর বাবার টাকা, নাম জোশ আর এত এত সম্পত্তিকে। রুদ্র একমাত্র সন্তান। তাই আঙ্কেলের যা কিছু আছে সব রুদ্রর নামেই হবে৷ যার জন্য আমি আর বাবা এটা ঠিক করি যে রুদ্রর সাথে বিয়ে করবো। ওকে ভালোবাসার কথা বলে। কিন্তু যখন আমার বাবা ধরা পড়ে যায়৷ তাকে জেলে পাঠানো হয় তখনও আমি কিছু করতে পারিনি বাবার জন্য। আমি তখনো অভিনয় করে গিয়েছি ভালোবাসার। কিন্তু কি হলো শেষ পর্যন্ত। আবার বাবা হঠাৎ করে এমন একটা কাজ করবে আমিও ভাবিনি। বাবা কেনো এমন একটা ডিসিশন নিয়েছিলো আমি জানি না। কিন্তু বাবা যে এই অপমান এই অবহেলা মানতে পারিনি এটা আমি বুঝে গিয়েছিলাম। আর এইসবের মূলে ছিলো চৌধুরী পরিবার। তাই আমি আস্তে আস্তে আমার প্ল্যান বদলায়। রুদ্রকে শেষ করে দেওয়ার চিন্তা করি। যার জন্য রুদ্রকে প্রতিটি পদে পদে আমি নিঃশ্বেষ করি। যেদিন আঙ্কেল আর আন্টি একটা কাজের জন্য একসাথে বাইরে যায় সেদিনই আমরা ভেবেছিলাম দুজনকে শেষ করে দেবো। আমি সামিরকে প্ল্যানটা জানালে ও সব ব্যবস্থা করে। আঙ্কেলের গাড়িটা এক্সিডেন্ট করায় এমন ভাবে যাতে কেউ সন্দেহ না করতে পারে। আর হয়েছিলো তাই। কিন্তু ওই এক্সিডেন্টে আঙ্কেল মা/রা যান। বেঁচে যায় আন্টি। এরপর আমি আন্টিকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করি কিন্তু পড়ে জানতে পারি আঙ্কেল বেশ কিছু সম্পত্তির মালিকানা করে যান রত্না চৌধুরীর নামে। তাই আর আন্টিকে মারার কথা ভাবিনি। এরপর আমি রুদ্রকে আস্তে আস্তে বিষিয়ে তুলি ওর প্রিয় জিনিস গুলো কেড়ে নিয়ে। ভেবেছিলাম রুদ্র শোক কাটানোর আগেই ওর সব সম্পত্তি আমার নামে করে নেবো। আর এর জন্য আমি পিপির সাথে কথা বলি। তাকে অনেক টাকা আর রুদ্রর সম্পত্তির অর্ধেক দেওয়ার প্রলোভন দেখায়। আর তাতেই তিনি আমার হয়ে কাজ শুরু করেন। এমনকি পিপি অনেক বার চেষ্টা করে আন্টির থেকে ওইসব সম্পত্তির মালিকানা নেওয়ার । তাই অনেক বার দলিলে সাইন করাতে গিয়েও ব্যর্থ হয় তিনি।

— আমি না অবাক হচ্ছি জানো। এতটা নিচ! এত জঘন্য কাজ কেউ করতে পারে৷ মানুষের মধ্যে প্রতিশোধের নেশা থাকলে সে যে কি ভয়ংকর হয়ে উঠে সেটা তোমাকে না দেখলে জানতাম না। অন্যায় করেছো তোমরা! আবার তোমরাই প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছো। আচ্ছা সব তো শেষ এরপরও কিসের প্রতিশোধ নিতে চাও? আমার তো মনে হয়না কিছু বাকি আছে আর। একটা পরিবারকে দিনের পর দিন শেষ করে দিয়েও তোমরা ক্ষান্ত হতে পারোনি৷ আবারও নতুন করে শুরু করেছো সব কিছু। আমি জানি না তোমাদের ঠিক কি শাস্তি দেওয়া উচিত আর কীভাবে দেওয়া উচিত। তবে তোমাদের সাথে যায় করা হোক না কেনো সেটাই কম করা হবে.। তোমাদের মতো মেয়ের জন্য পুরো মেয়ে-সমাজ লজ্জিত, অবহেলিত, ঠক-প্রতারক ট্যাগ বহন করছে।এই তোমার মতো মেয়েগুলোর জন্য প্রত্যেকটা মেয়ে দোষী হয়ে যায়। একজনের দোষের জন্য সবার অপমান, সমাজ থেকে যথাযথ সম্মানটাও আসে না ছিহ বলে মুখ ফিরিয়ে নেয় দোলা। সবার মধ্যে ঘৃণা বিদ্যমান।

– সামির দোলাকে চুপ করতে বলো। আমার ওকে জাস্ট সহ্য হচ্ছে না। শুধুমাত্র তোমার জন্য কিছু করতে পারছি না আমি৷ নয়তো এতখনে বলে রোজা দোলার দিকে এগিয়ে যেতে নিলে সামির হুংকার ছেড়ে বলে খবরদার রোজা দোলার দিকে যাবিনা। তাহলে কিন্তু তুই তোর কোনো কাজে আমাকে পাশে পাবিনা আর। তোর যা ইচ্ছে ওদের সাথে কর( রুদ্রদের দেখিয়ে বলে) কিন্তু দোলার সাথে কিছু করার কথা ভুলেও ভাবিস না। সামিরের মুখে তুই শুনে রোজা অবাক হয়ে বলে তুমি আমার সাথে এমন বিহেভ কেনো করছো সামির? সামির নিজেকে সামলে নিয়ে বলে সরি রোজা। দেখো দোলাকে আমি ভালোবাসি অনেক। তাই ওর ব্যাপারে কোনো খারাপ কথা আমি সহ্য করতে পারিনা।
রুদ্রর মুখে মুচকি হাসি। কিন্তু এই হাসি এটা শুধুমাত্র রুদ্রই জানে।
— অনেক কথা হয়েছে এবার কাজের কাজটা করি আমরা। সামিরের কথায় রোজা হাসার চেষ্টা করে বলে রুদ্র সাইন করে দাও কাগজটাই।
– করবো না সাইন যা ইচ্ছে করে নাও। রুদ্রর কথার সুর চেঞ্জ সাথে ভাব-ভঙ্গিও অন্য রকম লাগছে। গা ছাড়া ভাব নিয়ে দাঁড়ায় রাজ আর রুদ্র।

– রোজা ভ্রু উঁচিয়ে বলে উল্টো আমার সাথেই জেদ করছো। ওকে তাহলে দেখো আমি কি করতে পারি বলে রোজা একজনকে ইশারা করলে সে একটা ঘরে যায়। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণ বাদে সে ফিরেও আসে৷ তবে তার হাতে একটা ইঞ্জেকশন। এটা দেখে সবার মধ্যে কৌতুহল অস্থিরতা দেখা যায়। রোজা আর সামিরের মুখে ডেভিল হাসিটা জ্বলজ্বল করে উঠে।

– কি এটা? উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে আশা।
– এই ইঞ্জেকশনটা যদি একবার দোলার শরীরে যায় তাহলে কি হবে জানো রুদ্র? প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে বলে রোজা।
– রুদ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে শুধু। দোলা ঘাবড়ে আছে ভীষণ।
– এই ইঞ্জেকশন একবার দোলার শরীরে প্রবেশ করলে তোমাদের অনাগত সন্তান চির-বিদায় নেবে গর্ভেই। চমকে উঠে সবাই রোজার কথায়৷ কিন্তু রুদ্র সে বেশ স্বাভাবিক ভাবে। তার মধ্যে কোনো ভাবগতি নেই।

– তুই একবার দোলাকে টাচ করে দেখা বাকি রইলো আমার সন্তান। গম্ভীর কন্ঠে বলে রুদ্র। রোজা রেগে গিয়ে বলে বাড়াবাড়িটা তুমি শুরু করলে এবার তার দায়ভারটও তোমার বলে রোজা দোলার দিকে যেতে লাগলে সজল আর তানিয়া আসে হন্তদন্ত হয়ে।

— ওদের দেখে থেমে যায় রোজা। সামির অবাক হয়ে বলে তোমরা এখানে?
– ভালোই তো হলো সামির। তানিয়া এখানে এসে আমাদের কাজটা আরো সহজ করে দিয়েছে। আলাদা করে ওকে আর মারতে যেতে হবে না আমাদের।
– কিন্তু সাথে ওইটা কে? সজলকে উদ্দেশ্য করে বলে রোজা।
– আমাকে দেখে এত খুশি হবে আমি না সত্যি ভাবতে পারিনি রোজা আপু৷ এতটা মিস করছিলে আমায় আগে জানলে আরো আগে চলে আসতাম ওখানে৷ অবশ্য অনেক আগেই এসেছি আমরা আর এসে কি করছিলাম জানো? ফিসফিস কন্ঠে ভ্রু উঁচিয়ে হেয়ালি নিয়ে বলে তানিয়া।

– কি করছিলে? মলিন কন্ঠে বলে সামির।

– এই যে তোমরা এত সুন্দর সুন্দর স্টোরি শুনাচ্ছিলে এদের আই মিন তোমাদের কু-কর্মের কথা গুলো সব এইটাই ভিডিও এন্ড রেকর্ড করছিলাম হাসিমুখে বলে তানিয়া হাতে একটা ক্যামেরা নিয়ে। আঁতকে উঠে তারা। রুদ্র আর রাজের মুখে মুচকি হাসি। তারা যেনো সব আগেই জানতো এইগুলো।

– তোমরা এখানে ঢুকলে কি করে? সামির আমাদের লোকজন কোথায়? ওরা কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাচ্ছে নাকি উত্তেজিত কন্ঠে রেগে বলে রোজা।

– তোমার লোকজন এতখন উপরে যাওয়ার হাফ-টিকিট কেটে ফেলেছে৷ বাকিটা করবে পুলিশ আসলে। সজল বলে মুচকি হেসে।

– কি হচ্ছে এখানে এইসব। সামির তোমার লোকজন একটাও কাজের না তোমার মতো। এখানে যদি পুলিশ আসে আর প্রমাণ গুলো তাদের হাতে যায় তাহলে কি হবে বুঝতে পারছো? ঘাবড়ে যায় রোজা।

সব দোষ তোমার। কি দরকার ছিলো এতো কথা বলার। সব গুলোকে শেষ করে দিলেই তো হয়ে যেতো। সামির বলে রোজাকে দোষ দিয়ে।
– আগে শেষ করতে পারিনি তো কি এখন করবো। যদি আমরা ম/রি তো এদের সাথে নিয়েই ম/র/বো বলে রোজা রুদ্রর দিকে একটা ব/ন্দু/ক ধরলে পেছন থেকে কয়েকজন লোক এসে সামির, রোজা আর বাড়ির মধ্যে কয়েকজন লোককে ধরে আটক করে। রুদ্র হাসতে শুরু করে। হো হো করে হাসছে৷ রাজের মুখেও প্রাপ্তি হাসি। রুদ্র সামনে এগিয়ে গিয়ে সোফার উপর গা এলিয়ে দিয়ে বসে। এবার যেনো সবাই অবাক হয়ে রুদ্রর কর্মকান্ড দেখছে।

– তোমার কি মনে হয় রোজা? রুদ্রনীল চৌধুরী দুর্বল! কিছু করতে পারবে না। তোমার এখানে এমনি এমনি চলে এসেছি আমি? দ্যা গ্রেট রুদ্রনীল চৌধুরী আমি। টপ বিজনেসম্যানদের মধ্যে একজন। এমনি এমনি হয়নি। এই যে দেখছো এটা (রুদ্র তার মাথা দেখিয়ে বলে) এটার জোরে। বুদ্ধি! বুদ্ধি সবই বুদ্ধির জোরে। তবে তোমার বুদ্ধির তারিফ না করে পারছিনা সত্যি৷ যদিও ওইগুলাকে কু-বুদ্ধি বলে গণ্য করা হয়। রোজা দাঁতে দাঁত চেপে সবটা শুনছে। রাগের চোখ দিয়ে আগুন ঝরে পড়ছে যেনো এমন ভাব।

— চলবে..