ভালোবাসা একটা বাজি পর্ব-০৪

0
444

#ভালোবাসা_একটা_বাজি(৪)

আরিয়ান সোফায় বসে বসে ফোন টিপছে। আরাফা যেই কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার বাবা এসে বলে-

-” আরিয়ান এসে গেছো।

আরিয়ান দাঁড়িয়ে পড়ে। কিউট একটা হাঁসি দিয়ে বলে-

-“জ্বী আংকেল।

-” কখন এলে?

-” এই তো দু মিনিট।

আরাফার বাবা আরাফার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকায়। আরাফা বুঝে গেছে এই খবিশ লোকটাকে বাবাই ডেকেছে। আরাফার বাবা সৈকত সাহেব তাকে বলেন-

-” তুমি আমাকে ডাকবে তো আরু। তা না করে এখানে দাঁড়িয়ে ছিলে? যাও দুটো কফি দিতে বলো।

বাবার থেকে হালকা ধমক খেয়ে আরাফার রাগে গা জ্বলছে। এই সয়তা”ন ছেলেটার জন্য বাবা তাকে বকলো। আরাফা আরিয়ানের দিকে চোখ কটমট করে তাকায়। আরিয়ান কিউট একটা হাঁসি দেয় আবারো। আরাফার বাবা সোফায় বসতে বসতে বলেন-

-” আরাফা দাড়িয়ে না থেকে সার্ভেন্ট কে বলো কফি দিতে।

আরাফা কিছু একটা ভেবে সয়তানি হাসি দেয়। দৌড়ে কিচেনের দিকে চলে যায়। সৈকত সাহেব বুঝতে পারলোনা মেয়ের দৌড় দেয়ার কারণ। আজকালকার ছেলেমেয়েদের বোঝা বড় দায়। সৈকত সাহেব আরিয়ানের দিকে তাকায়। তারপর বলে-

-” আরিয়ান তুমি কি রাগ করেছো?

আরিয়ান প্রশ্ন করে-

-” কেন? রাগ করবো কেন? আপনি তো এমন কিছুই করেননি যার জন্য আমি রাগ করবো।

-” আসলে তোমার সব এলবাম আমিই রিলিজ করেছি। কিন্তু সেদিন আসলে আরাফার মায়ের মৃত্যু বার্ষিকী ছিলো তো তাই আরাফাকে তোমার কাজের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। আরাফা সব ঠিকঠাক করেছে কি না। তার জন্য মনটা খচখচ করছে। আর তুমি রেগে আছো নাকি এই জন্যই।

আরিয়ান ঠোঁটে হাসি ঝুলিয়ে বলে-

-” আপনি আমার বাবার মতো। আর বাবাদের ওপরে সন্তানরা রাগ করে থাকতে পারেনা। আর আপনার মেয়ে সবটা ভালোভাবেই হ্যান্ডেল করেছে। আমি তার কাজে সন্তুষ্ট।

সৈকত সাহেব সোফায় হেলান দিলেন। যেনো বড় একটা বোঝা মাথা থেকে নেমে গেছে। তিনি এই এলবাম টা নিয়ে একটু চিন্তিত ছিলেন। আরাফা দু কাপ কফি করে নিয়ে আসে। হাঁসি হাঁসি মুখে একটা আরিয়ানের দিকে দেয় আরেকটা তার বাবার দিকে রাখে। সৈকত সাহেব চোখ বন্ধ করে আছেন। আরাফা দৌড়ে ট্রে টা রেখে আসে। তারপর তার বাবাকে ডাকে-

-” বাবাই বাবাই কফি এনেছি।

সৈকত সাহেব চোখ মেলে তাকায়। সোজা হয়ে বসে। আরাফা খুশিতে গদগদ হয়ে বলে-

-” বাবা কফিটা আমি বানিয়েছি।

সৈকত সাহেব নিজের কফির কাপটা হাতে নেয়। আরেকটা আরিয়ানকে দেয়। সৈকত সাহেব স্বাভাবিক ভাবেই বলে-

-“এত পাকনামি করার কিছুই ছিলোনা। সার্ভেন্ট কে বললেই বানিয়ে দিতো। আর করেছো যখন, তখন ভালো কাজ করেছো। মেয়ে মানুষ সব কাজ শিখা উচিত। এতে খুশিতে নাচানাচি করার কিছুই দেখছি না আমি।

আরাফার মুখটা কালো হয়ে যায়। কই একটু প্রশংসা করবে তা নয়। জ্ঞান দিচ্ছে। আরাফার অবস্থা দেখে আরিয়ানের প্রচুর হাসি পেলেও সে নিজেকে সামলে নিয়েছে। আরাফা তবুও খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে। সে মোক্ষম সময়টার জন্য অপেক্ষা করছে। আরিয়ান কাপে চুমুক দিয়ে চোখ বন্ধ করে। আরিয়ান প্রশংশা করে বলে-

-” দারুন টেষ্ট হয়েছে কফিটার।

আরিয়ান আরেকটা চুমুক দেয় কফিতে। আরাফার কিছুই বোধগম্য হলোনা। আরিয়ান স্বাভাবিক কি করে। সে কি নাটকের মতো খারাপ খাবার খেয়েও ভালো বলার অভিনয় করছে। কিন্তু পাশ থেকে সৈকত সাহেব চেঁচিয়ে ওঠে-

-” ছিঃহ আরাফা এটা কি বানিয়েছো। অখাদ্য বানিয়েছো কেন? যেটা করতে পারোনা সেটা কেন করতে যাও। ছিহ এত লবন কেউ দেয়? আর ঝাল কেন লাগছে কফিতে কি কেউ মরিচ দেয়? তুমি কি কফি বানিয়েছো।

আরাফা কাঁদো কাঁদো চোখে একবার বাবার দিকে তাকায় একটার আরিয়ানের দিকে তাকায়। আরিয়ান মুচকি হাসছে। আরাফার রাগে আরো বেড়ে যায়। কিন্তু একটা মিথ্যা বলে দেয় সে-

-” আসসসলেএএ বাবাই আমি না নতুন একটা কফির রেসিপি দেখেছিলাম তাই ওটা তোমার জন্য করেছি। কিন্তু আরিয়ান ভাইয়াকে স্বাভাবিক কফি করে দিয়েছি। বাবা আমি বুঝতে পারিনি যে তোমার টা এমন হবে। আমি ভালোই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু –

মাঝপথে আরাফাকে থামিয়ে দিয়ে বলে তার বাবা-

-” হ্যা অতি চালাকের গলা’য় দড়ি। বেশী পাকনামি করো তাইনা। কে বলেছিলো স্পেশাল কফি করতে? যাও এখান থেকে। মুখের টেস্টটাই বিগড়ে দিলে।

আরাফার বাবা মাঝে মাঝেই আরাফা ভূল করলে বকাঝকা করেন। তার মতে শাসন না করলে ছেলেমেয়েরা উশৃঙ্খল হয়ে পড়ে। আরাফা মন খারাপ করে এক দৌড়ে সিঁড়িতে ধুপধাপ পা ফেলে উপরে চলে যায়। আরিয়ান এক পলক সেদিকে চেয়ে ভাবতে থাকে।

কিছুক্ষণ আগে-

আরাফা যখন কফি দিয়ে ট্রে টা কিচেনে রাখতে গেলো। আরিয়ান কাপে দুটো এক্সচেঞ্জ করে নেয়। আরাফা ঐ অখাদ্য কফি আরিয়ানের জন্য বানিয়েছিলো। কিন্তু আরিয়ান চালাকি করে বেঁচে গেছে এখন। আর দুষ্টুমি করতে গিয়ে আরাফার শাস্তিটাও মন্দ হয়নি। আরিয়ান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে-

-” আংকেল আজকের মতো আসি।

সৈকত সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে বলেন-

-” সে কি তুমি প্রথম আমার বাড়ি এসেছো না খেয়ে চলে যাবে?

-” না না আংকেল অন্য‌ একদিন খাব। আজ আমার একটু কাজ আছে। এমনিতেই দেড়ি হয়ে গেছে খুব। আমি আসি আল্লাহ হাফেজ।

-” এসো তবে।

আরিয়ান চটপট উঠে কেটে পড়ে। বাপরে বাপ নিজের মেয়েকেই যা শাসন করে। আর যদি জানে আমি তার মেয়ের সাথে ফ্লার্টিং করার চেষ্টা করছি। আমায় তাহলে জ্যান্ত পু’তে ফেলবে। আরিয়ান বেরিয়ে যাচ্ছে আরাফাদের গেইট থেকে। উপর থেকে আরাফা কটমট দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আজ আরিয়ানের জন্যই বাবা বকেছে। ওকে তো সে নাস্তানাবুদ করবেই। আরিয়ান বাইক স্টার্ট দেয়। পথিমধ্যে থেকে আইসক্রিম, ফুসকা আর দু প্যাকেট বিরিয়ানি কিনে নেয়।

মিহি বসে আছে মাহিকে নিয়ে। মেয়েটা একটুও খেতে চাইছে না। বারবার মামামা করছে। মিহি এবার বিরক্তি নিয়ে বলে-

-“‌মেরি মা একটু খা। তোর মামা কাজে গেছে। আসবে তো বলেছে। বারবার অমায় কেন বিরক্ত করছিস? তুই তোর বাবার মতো হয়েছিস একদম। আমাকে জ্বালিয়ে শেষ করলি।

ছোট মাহি কি বুঝলো তা মিহি জানেনা তবে আধো আধো কন্ঠে বলে উঠলো –

-‘ বাববাই বাববাবা।

মিহির হাতটা থেমে গেলো। শান্ত চোখে মেয়ের দিকে তাকালো। আপনা আপনি পানিতে চোখদুটো ভরে আসছে। এই ডাকটা যে শুনবে তো আর‌ এখানে নেই। কত প্রফুল্ল ছিলো সে। আজ মেয়ে ঠিকই ডেকেছে কিন্তু সারা দেয়নি কেউ। মাহি চুপচাপ সব টুকু সুজি খেয়ে নেয়। এরপর মিহি ওকে কোলে করে নিয়ে নিচে নামে। দুপুর দুইটা বাজে। রান্না সহ সকল কাজ করে ঘুমিয়ে গেছে সার্ভেন্ট। ওই মেয়েটার অসময়ে ঘুমানো তার বোধগম্য হয়না। বাড়িটা ফাঁকা ফাঁকা লাগে সবসময়। আনাচে কানাচে কত শত স্মৃতি। আবার সেই র’ক্ত আর র’ক্তের কথা মনে পড়ে মিহির। মাথা থেকে যতোই ঝাড়তে চায় ততই জেঁকে বসে চিন্তাটা। কলিংবেলের আওয়াজে মিহি ভাবনা থেকে বের হয়। মাহি কোলেই ঘুমিয়ে গেছে। মিহি গিয়ে এক হাতে দরজা খোলে। সামনে আরিয়ান দাড়িয়ে আছে। ঘামে শার্ট ভিজে একাকার। দুপুরেই এই রোদে যে তার ভাই বাইক চালিয়ে এসেছে তা বেশ বুঝতে পারছে। চোখ যায় আরিয়ানের হাতের দিকে। হাতে খাবার অনেক। আরিয়ান ক্লান্ত হেসে বলে-

-” কি রে বাচ্চার মা ঢুকতে দিবি নাকি দায় করিয়ে রাখবি আইসক্রিম গলে যাচ্ছে তো।

মিহি টু শব্দটি না করে সরে দাঁড়ায়। আরিয়ান তারাতাড়ি খাবারগুলো টেবিলে রাখে। আইসক্রিম গুলো ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখে তাৎক্ষণিক। এরপর মাহিকে নিয়ে দোলনায় রেখে আসে। মিহি কে টেনে নিজের পাশে বসার। হাসির ছলে আরিয়ান বলে-

-‘ কিরে পেত্নি মুখে খই ফুটছে না কেনো?

আরিয়ান বিরিয়ানি থেকে এক লোকমা মিহির মুখের সামনে ধরে জিজ্ঞেস করে। মিহির মুখে চাপা কষ্টের ছাপ। মিহি কান্না চেপে বলে-

-” ভাই ভাইয়া ওও আমার মাহি আজকে বাবা ডেকেছে।

আরিয়ানের হাতটা নেমে গেলো প্লেটের উপর। মিহির দিকে তাকিয়ে ব্যাথাতুর হেসে বলে-

-” সবই আমাদের কপাল আমরা কাউকে বেঁধে রাখতে জানিনা। আর না কেউ আমাদের আঁকড়ে ধরে।

আরিয়ান মিহিকে খায়িয়ে দেয়। এইটুকু মেয়েটার জীবনেও কত কষ্ট। জীবনটা নাটকীয় কোন মঞ্চ কষ্টের সীমানা নেই যে। আরিয়ান নিজেও খাওয়া শেষ করে। কল দিয়ে কাকে যেনো আসতে বলে। প্রায় আধাঘণ্টা পর কলিংবেল বেজে ওঠে। মিহি গিয়ে দরজা খুলে দেয়। এখানে তো আরিয়ানের তিন বন্ধু শিহাব, রাইয়ান আর সুহাস। তারা মিহির সাথে কুশল বিনিময় করে উঠে বসে। আরিয়ান মাহিকে নিয়ে নিচে নেমে আসে।‌ মাহিকে মিহির কাছে দিয়ে দেয়। তিনজনেই দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান আচমকা সুহাস আর শিহাবের গালে থা*প্পর লাগায়। ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতভম্ব হয়ে যায়।

#চলবে

#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)