#ভালোবাসা_একটা_বাজি(১৬)
গাল ফুলিয়ে বসে আছে আরাফা। আরিয়ান তাঁর দিকে তাকাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। আরাফা সহ্য করতে না পেরে বলল-
-” ঐ মিয়া খাটাশের মতো হাসেন কেন?
আরিয়ান দুষ্টুমি করে বলে-
-” তুমি মিষ্টি কুমড়ার মতো ফুলে ফেঁপে আছো কেন?
আরাফা ফুঁসতে ফুঁসতে বলে-
-” কি আপনি আমারে মিষ্টি কুমড়া কইলেন? ঐ আমারে আপনার কোন দিক দিয়া মোটা মনে হয়? আমি মাত্র ৫০ কেজি। আপনি তো একটা হা/তি।
আরিয়ান হেসে বলে –
-” ও মা গো ৫০ কেজি! তাই তো বলি ঐদিন কোলে নিয়ে আমার হাত পা ভেঙে যাওয়ার কায়দা কেন হয়েছিলো?
আরাফা অবাক হয়ে তাকায় আরিয়ানের দিকে। রেগে বলে –
-“ফা’জ’লামি পাইছেন? আমি কি আপনাকে কোলে নিতে বলছিলাম? আপনি কেন নিছেন? লু’চু কোথাকার! খালি মেয়ে দেখলেই গাঁয়ে পড়তে মন চায়।
-” দেখো সিরিয়াসলি আমি জাই হইনা কেন। তুমি কিন্তু একটা চালের বস্তার সমান। ভাবো কত মুটকি তুমি।
আরাফা চেঁচিয়ে বলে-
-” কিহহহ! আমি মুটকি? আপনি খা’টা’স, হ’নুমা’ন, আপনি আপনি একটা গ’ন্ডার। স’য়তা’ন বেডা।
-” হয়েছে থামো চিৎকার করে কানের পর্দা ফা’টিয়ে ফেলবে নাকি আমার? পড়ে বাচ্চারা বলবে তাদের বাবা কানা। আর আমিও বলে দেব তোদের মা ষাঁড়ের মত চেঁচিয়ে আমার কানের পর্দা ফা’টিয়েছে। দেখবে পড়ে তোমাকে কি বলে তাঁরা।
আরাফা চোয়াল ঝুলিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকায়। এইডা কি মানুষ না আর কিছু? আমি একটু চিৎকার করায় এ বাচ্চা পর্যন্ত চলে গেছে। আরাফা বিড়বিড় করে বলে-
-” অ’স’ভ্য লোক
-” প্লিজ বিড়বিড় করে গা’লা’গা’লি করো না। পড়ে তোমার অভি’শাপেই ম’রে যাবো।
-” চুপ আর একটাও কথা বলবেন না। গাড়ি থামান আমি নামবো।
আরিয়ান আরাফার কথার সাথে সাথেই ব্রেক কষে। আরাফা অবাক হয়ে মনে মনে বলে, আরেহ আমি তো রাগ করে বলেছি। আর এই ছেলে গাড়ি থামিয়ে দিলো। একটুও মায়া দয়া নাই। আরিয়ান আরাফার দিকে তাকিয়ে বলে –
-” নামো যাও।
আরাফা কাঁদো কাঁদো হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” এখান থেকে আমি একা কিভাবে যাবো? আমার পার্স আনিনি। আপনি এত নিষ্ঠুর কেন? আমি তো রাগ করে বলেছি। তাই আপনি নামিয়ে দিবেন। আপনি আসলেই ভালো না হুহ।
আরিয়ান নিঃশব্দে হেসে বলে-
-” আরে নামো আগে। আমি ভালো নই এটা আমি যানি। তোমার বলা লাগবে না। তুমি নামো যাও।
-” প্লিইজ আমাকে রেখে চলে যাবেন না। আমি একা কিভাবে যাবো?
আরিয়ান ধমক দিয়ে বলে-
-” নামো বলছি , একটা কথাও বলবা না।
আরাফা রাগে দুঃখে গাড়ি থেকে নেমে যায়। ওপাশ থেকে আরিয়ান ও নেমে আসে। আরাফা দাঁতে দাঁত চেপে জিজ্ঞেস করে-
-” আপনি কেন নেমেছেন?
আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” তোমার কি?
আরাফা নাক ফুলিয়ে রেগে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে-
-” কিছুনা হুহ।
আরিয়ান হাত ধরে হাঁটা দেয়। আরাফা হাত ছাড়িয়ে নেয়ার বৃথা চেষ্টা করে বলে-
-” ছাড়ুন কই নিয়ে যাচ্ছেন?
-” বেশি কথা বললে কোলে তুলে নেবো কিন্তু।
-” আমি তো মোটা না। কেন কোলে নেবেন।
-” নেবো নাকি?
-” এই না, আমি হাঁটছি।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর আরিয়ান একটা পার্কে নিয়ে আসে। আরাফা চারদিকে তাকিয়ে দেখছে। পার্কটা অনেক সুন্দর। দুজনে গিয়ে একটা বেঞ্চে বসে। আরাফা ঘাড় ঘুরিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” এখনে কেন নিয়ে এলেন?
-” তোমার ভালো লাগেনি?
আরাফা হাতের তালুতে হাত ঘসে বলে-
-” তা নয়। আমি বাড়ি যাবো আমার ভালো লাগছেনা এখানে। প্লিইইইজজ বাড়ি চলুন।
আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” কেন?
-” অনিক এর কাছে কাজ আছে। ও আমার
আরিয়ান রেগে উঠে দাঁড়ায়। চোয়াল শক্ত করে বলে-
-” অনিক অনিক অনিক। বলেছি না ও ভালো নয় তারপরেও ওর কাছে কি তোর? তুই খালি ওর কাছে যাস কেন? থাক তুই এখানে। নাইলে অনিকের কাছে যা।
আরিয়ান রেগে হনহন করে চলে যায়। আরাফা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। পুরো কথাটা না শুনেই এমন রিয়্যাক্ট করলো কেন? আরিয়ান চোখের আড়াল হতেই আরাফার হুঁশ হয়। দৌড়ে যায় আরিয়ানের পেছনে। কিন্তু ইটে পা লেগে পড়ে যায়। অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে পায়ে। একটা নখ উল্টে গিয়েছে। গলগল করে র’ক্ত বেরোচ্ছে। আরাফা অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে গিয়ে দেখে আরিয়ান নেই। প্রচুর কান্না পাচ্ছে। পার্স টা গাড়িতে রেখে এসেছে। আর আরিয়ান এভাবে মাঝ পথে ফেলে যেতে পারলো? আর মোবাইল সেটাও তো আরিয়ানের গাড়িতে। এখন আমি কি করবো। আরিয়ান কি আমাকে একা রেখে যেতে পারবে? ও নিশ্চয়ই আবার আসবে। আরাফা মনের মাঝে ক্ষীণ আশার আলো নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে পার্কের সেই বেঞ্চটাতে গিয়ে বসে।
।
কলের আওয়াজে ধর’ফর করে ওঠে এক যুবক। কলটা রিসিভ করে কানে চাপে সে। ওপাশ থেকে বলে-
-” *** পার্কে আছে। আজ তোমরা কাজ করবে। এতদিন সুযোগ পাওনি। আর আমিও সিওর ছিলাম না। এখন সিওর সো কাজটা করে ফেলো
এপাশ থেকে বিশ্রী হাসি দিয়ে ছেলেটা বলে-
-” কোন চিন্তা করবেন না কাম হয়ে যাবে। কিন্তু!
ফোনার ওপাশ থেকে চাপা হাসির সাথে বলে ওঠে-
-” হ্যা টাকা টা অর্ধেক দিয়ে দিয়েছি তোমার সঙ্গীর কাছে। বাকি অর্ধেক কাজটা করার পরেই পাবে। কাজটা ঠিকমত করবে। আর কোন ক্লু যেনো না থাকে। ফেস এ মাস্ক পড়ে যেও।
-” আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি সব কাজ ঠিকমত করুম।
-” আচ্ছা ঠিক আছে।
ওপাশ থেকে ফোনের লাইনটা কেটে যায়। দুই পাশের মানুষই হাসিতে মত্ত হয়। কেউ কাউকে ভেঙে দিয়ে জয়ের হাসি দেয়। কেউ টাকার জন্য হাসি দেয়।
_________
আরিয়ান বসে আছে গাড়িতেই। সেই জায়গায় এসেও মন ভালো হচ্ছে না। হঠাৎই কলের শব্দে সম্বিত ফিরে পায়। তার ফোন তো বাজছে না। তাহলে, সামনেই আরাফার ফোন দেখে অবাক হয়। ও গড মেয়েটার ফোন এখানে ও কি আদৌ বাসায় আসতে পেরেছে? বাড়াবাড়ি করে ফেললাম না তো? আরিয়ান একটা শুকনো ঢোক গিলে ফোন টা ধরে। স্ক্রিনে বাবাই লেখাটা জ্বলজ্বল করছে। ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরতেই, ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠে সৈকত সাহেব বলে-
-” মা তুই কোথায়? এখনো বাড়ি ফিরিস নি কেন? কার সাথে আছিস? কলেজ থেকে কোথায় গিয়েছিস? গাড়ি তে পার্স ফেলে গিয়েছিস। তুই কোথায়? আমি কি গাড়ি পাঠাবো। আমার কিন্তু টেনশন হচ্ছে কথা বল। তুই কি একা? হ্যালো আরাফা, শুনতে পাচ্ছিস?
ভয়ে আরিয়ানের গলা দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। রাগের মাথায় কি করলো। আরিয়ান ঘট করে ফোনটা কেটে দিলো। মেয়েটার কোন বিপদ হলো নাতো? ধুর কি ভাবছি কিছু হবেনা ওর। আমার ওপর রেগে আছে হয়তো? সন্ধ্যা হয়ে আসছে। বোধ হয় এখনো পার্কে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এখান থেকে যেতে প্রায় দেড় ঘন্টার বেশি সময় লাগবে। আরিয়ান দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দেয়।
_______
সন্ধ্যা হয়ে আসছে। একটু পরেই আজান দেবে। আরাফা একা পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছে। পা থেকে র’ক্ত পড়ছে নাড়াচাড়া করলেই। এখন প্রচন্ড ব্যাথায় পা নাড়ানো মুশকিল। ব্যাথায় টনটন করছে বুড়ো আঙুল। আরিয়ান কি আসবেনা। চারদিকে মানুষের আনাগোনা খুবই কম। জায়গাটা শহর থেকে বেশ দূরে। কেন যে পার্স টা নিয়ে এলাম না। কেন যে ফোনটা ওর গাড়িতে রেখে আসলাম। ফোনটা থাকলে বাবাইকে বললেই গাড়ি পাঠিয়ে দিতো। আর আরিয়ান কে অনিকের কথা না বললেও পারতাম। কিছু ছেলে এসে দাঁড়ায় দুরে একটা গাছের পাশে। আরাফা ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে। ছেলেগুলো বারবার নোংরা ভাবে তাকাচ্ছে। আরাফা উঠে হাঁটা দেয়ার চেষ্টা করে। এক পা এগোতেই মৃদু চিৎকার করে বসে পড়ে। ছেলেগুলো এগিয়ে এসে চারপাশ দিয়ে ঘিরে ধরে। তিনটা ছেলে এখানে। আরাফার ভয়ে আত্মা কেঁপে ওঠে। মনে মনে আরিয়ান কে এখনে চাইছে সে। একটা ছেলে বিশ্রী হেসে বলে-
-” কি গো ব্যাথা পাইছো? আহারে চলো ব্যাথা ভালো করে দেবো আমরা।
সাথে সাথে আর দুটো ছেলেও হেসে ওঠে। আরাফার চোখ থেকে অজান্তেই পানি গড়িয়ে পড়ে। জানে না কয়বছর পর সে কেঁদেছে। কিন্তু আজ সব হারানোর ভয়ে আপনা আপনি কান্না পাচ্ছে। পায়ে অসহীন ব্যাথা সঙ্গে ভয়। একটা ছেলে রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে। আস্তে আস্তে চোখদুটো বুজে আসে। শেষ বারের মত চোখদুটো কাউকে দেখার জন্য পলক দিলো। কিন্তু সেই প্রিয় মুখটি দেখতে পেলোনা। সব শেষ করে দিয়ে আরাফাকে সেই পার্কের বেঞ্চির কাছে ফেলে দিয়ে গেলো ছেলেগুলো। ব্যথায় অবশ হয়ে আছে সারা শরীর। চিৎকার করার মত আর শক্তি গায়ে নেই। কি পাশ’বিক নির্যাতন টাই না করেছে ছেলেগুলো। পা ধরে কেঁদেছে তাও ছাড়েনি। মুখ দেখাবো কি করে? আরিয়ান কেন আমায় ফেলে গেলে। পায়ের আঙুলে ব্যাথা যায়গায় লা’থি দিয়ে যায়গা টা আর ক্ষত করে দিয়েছে। ব্যাথায় শরীরের প্রতিটা অঙ্গ টনটন করছে। চোখ দুটো বুজে আসছে। আরিয়ান কি আসবেনা? গাড়ির লাইট পড়ায় চোখ দুটো বন্ধ করলো আরাফা। দৌড়ে আসছে এক পুরুষ অবয়ব তার দিকে। বড্ড চেনা সে। চোখ দুটো বুজে আসে আরাফার। আরিয়ান ধপ করে এসে বসে পড়ে আরাফার পাশে। মাথাটা কোলে তুলে পাগলের মত বলে-
-” আরাফা চোখ খোলো প্লিজ। সব দোষ আমার। আমায় তুমি শাস্তি দাও। চোখ খোলো আরু।
বহু কষ্টে চোখ দুটো খুলে তাকায় আরাফা। হাতটা আরিয়ানের গালে রেখে ভাঙা গলায় বলে –
-” এলে তো ঠিকই, বড্ড দেরী হয়ে গেলো যে।
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)
#ভালোবাসা_একটা_বাজি(১৭)
অস্থির পায়ে হাসপাতালের করিডোরে পায়চারি করছে আরিয়ান। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কেন এত রাগ করলো? আরাফা কে একা ফেলে আসা উচিত হয়নি। আমার জন্য আজ আরাফার এই অবস্থা। আচ্ছা সয়’তান গুলো কি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। কেন কেন তোমার মুখে অনিকের নামটা শুনেই লাগে হলো। আমি কেন আমার রাগ কন্ট্রোল করতে পারিনা। ডাক্তার মিরান কে দেখে দ্রুত এগিয়ে যায় আরিয়ান। অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-
-” মিরান ও ঠিক আছে তো ভাই? ওর কিছু হয়নি তো?
ডক্টর মিরান চিন্তিত কন্ঠে বলে-
-” এখন আউট অফ ডেঞ্জার। কিন্তু ডান হাত আর পা দুটোই ভেঙে গেছে। আর যে পায়ের নখ উঠে গিয়েছিল ওখানে অনেক আঘাত পেয়েছে। মাথায় ও ব্যাথা পেয়েছে। এ অবস্থা কি করে হলো আরিয়ান?
আরিয়ান একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে-
-” ভাই আমি জানি না। কিন্তু যে বা যারা ওর এই অবস্থা করেছে আমি তাদের ছাড়’বোনা। আচ্ছা মিরান.
গলা ধরে আসছে আরিয়ানের। এই একটা করা জিজ্ঞেস করতে এত কেন ভয় হচ্ছে? ডক্টর মিরান ওর এই অবস্থা দেখে অভয় দিয়ে বলে-
-” বলো আরিয়ান। তুমি আমার ছোট ভাইয়ের মত। এত অস্বস্থি বোধ করছো কেন? নির্ভয়ে বলো।
আরিয়ানের গলা শুকিয়ে আসছে বারবার। দুটো শুকনো ঢোক গিলে বলে-
-” ও কি রে’পড্?
আরিয়ান মুখটা নিচের দিকে নামিয়ে নেয়। মিরান চুপ করে আছে। আরিয়ান উত্তর না পেয়ে মিরানের দিকে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলে –
-” প্লিজ ভাই বলো। আমি ম’রে যাচ্ছি। ওর এই অবস্থা আমি মানতে পারছি না।
মিরান অভয় দিয়ে বলে-
-” নো তুমি যা ভাবছো ওর সাথে ওমন কিছুই হয়নি। কিন্তু ওকে প্রচুর আঘা’ত করা হয়েছে। এমন আঘাত কোন ছেলে একটা মেয়েকে করতে পারে বলে মনে হয়না। কিছুক্ষণ পরেই জ্ঞান ফিরবে। ভয় পেয়েছে অনেক। ওর জ্ঞান ফিরলে কোনরকম প্রশ্ন করবেনা। এখন কিছুটা মানসিক চাপের মধ্যে আছে ও।
আরিয়ানের বুক থেকে একটা পাথর নেমে গেল। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে মিরান কে বলে-
-” ভাইয়া তুমি ওর মেডিসিন গুলো প্রেসক্রাইব করে দিও। ওকে বাড়ি নিয়ে যাবো কালকে প্লিজ তুমি সব ব্যবস্থা করে দাও। ওর সাথে একজন নার্স দিয়ে দেবে।
মিরান আস্বস্ত করে বলে-
-” তুমি চিন্তা করো না আমি সব ঠিক করে দেবো। একটা কথা বলো- ভালোবাসো মেয়েটাকে?
আরিয়ান মিরানের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” জানিনা! তবে ও আমার কাছে এমন একজন যাকে দেখার জন্য আমি গভীর রাতেও ওদের বাড়ির দেয়াল টপকাই। ও আমাকে ইগনোর করলে আমার খুব কষ্ট, রাগ, অভিমান হয়। আমি তো আর জানিনা ভালোবাসার সঙ্গা।
মিরান আরিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বলে-
-” ভালোবাসা জিনিসটা হারানোর আগে কেউ কদর বোঝেনা। এই দেখো ও অসুস্থ তাই তোমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু সুস্থ থাকলে কি এতটা উপলদ্ধি করতে পারতে। আমি আসি আমার কাজ আছে। তুমি থাকো।
মিরান নিজের কাজে চলে যায়। আরিয়ান কাঁচের এপাশ থেকে দেখে, বড্ড নিষ্পাপ লাগছে আরাফাকে। আরাফা তোমার সাথে যারা এমন করেছে প্রত্যেক কে আমি এর চেয়েও ভয়া’নক সাজা দেবো। আরাফার বাবাকে আরিয়ান বলেছে, আরাফা বান্ধবীর বাসায় আছে। লোকটা মেয়ের জন্য অনেক চিন্তা করেন। আরিয়ান এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরাফার দিকে। কাঁধে কেউ হাত রাখতেই চমকে ওঠে আরিয়ান। পেছনে তাকিয়ে দেখে তার তিন বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। সুহাস একবার আরাফার দিকে তাকিয়ে বলে-
-” কোন শা’লা’য় মেয়েটাকে এমন ভাবে কষ্ট দিছে। আরিয়ান আরাফারে সুস্থ হতে দে। ঐ শা’লা’গো আমি জিন্দা কবর দিমু। আমার বন্ধুর ভালোবাসাল গায়ে হাত দিছে।
আরিয়ান বিরক্ত হয়ে বলে-
-” চুপ গালি দেস কেন? আর আমি যা ধারনা করেছিলাম তা ভুল। ওকে অনেক আঘাত করা হয়েছে। বাট বেশি বাজে কিছু হয়নি।
শিহাব বলে-
-” যাক আল্লাহ রহম করছে। ভাবি কি এখন সুস্থ?
আরিয়ান দুঃখী গলায় বলে-
-” না রে ওর ডান হাত আর দুটো পা ই ভেঙে গেছে। আমি সত্যিই ওদের ছাড়’বোনা।
রাইয়ান আরাফার দিকে তাকিয়েই বলে-
-” মেয়েটা কষ্টে কুঁকড়ে আছে রে। সব দোষ তোর। তুই ওকে কেনো ফেলে রাখতে গেলি? ওকে একা রেখে কেন গেলি? তাহলে কি আজ এত কিছু হতো?
আরিয়ান মাথা নিচু করে বলে-
-” আমি সত্যিই আর কখনোই এমন করবো না। আরু কি আমাকে মাফ করবে?
-” সেটা তুই দেখিস আরাফা কি করে। আমি গেলাম। সুহাস আর শিহাব চাইলে থাকতে পারিস।
আরিয়ান সুহাস আর শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” তোরা থেকে কি করবি? আমি একাই যথেষ্ট আছি ওর জন্য। সব কয়টা দৌড়া। একটাও এখানে থাকতে পারবিনা।
রাইয়ান গেলেও সুহাস আর শিহাব যেতে চাইছে না। আরিয়ান দুইটাকে ঠেলে পাঠিয়ে দেয়। নিজে এসে বসে হাসপাতালের বেঞ্চে। কিছু ভালো লাগছেনা। এর মধ্যেই ব্যাঘাত ঘটায় ফোনের রিংটোন। কর্কশ শব্দে ফোনটা বেজে ওঠে। আরিয়ান রিসিভ করে কানে নেয়। ওপাশ থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলে-
-” বাবা আরিয়ান কই তুই?
মায়ের এমন অস্থিরতা দেখে আরিয়ান হেসে ফেলে। এই মানুষটা কেন প্রথম থেকে জীবনে থাকলো না। তাহলে তার জীবনটাও অন্যরকম হতো। আরিয়ান নরম গলায় বলে-
-” মা আমি হাসপাতালে আছি।
শায়লা বেগমের অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা। চেঁচিয়ে বলে-
-” কি তুই হাসপাতালে কেন? কি হয়েছে? কারো সাথে মা’রামা’রি করেছিস? নাকি বাইক বা কার এক্সি’ডেন্ট করেছিস? কোন হাসপাতালে? কি হয়েছে বল আমায়।
-” মা তুমি এভাবে চেঁচামেচি করছো কেন? আমার কিছুই হয়নি।
-” তাহলে তুই হাসপাতালে কেন?
-” মা আরাফার সাথে আছি। কালকে বাড়ি যাবো।
-” কি হয়েছে আরাফার।
-” জানিনা।
আরিয়ানের কারো প্রশ্নের উত্তর দিতে ভালো লাগছেনা। শায়াল রহমান ওপারে বোকার মত দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলা নাই কওয়া নাই কল কেটে দিলো। সে রাগে ফোনটা ছুঁড়ে মেরে উপরে মিহির কাছে যায়। শহিদ নিউজ পেপারের ফাঁকা দিয়ে ব্যাপারটা লক্ষ করে। কিন্তু এখন কিছু বললেই বো’মা বিষ্ফো’রণ হবে। চুপ থাকাই শ্রেয়। আরিয়ান ফেসবুক নিউজ ফিড স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ আরাফার একটা হাসিমাখা ছবি সামনে পড়ে। ছবিটা আজকেই আপলোড করা। সকালে ভার্সিটি আসার আগে আপলোড করেছে। এই হাঁসি মাখা মুখে এখন বিষাদের ছায়া। আরাফা নড়ে ওঠে। আরিয়ান কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে। ফ্লোরে বসে আরাফার মাথায় হাত বুলায়। আরাফা পিটপিট করে চোখ খোলে। আরিয়ান হেসে বলে-
-” কেমন লাগছে?
আরাফা কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। আরিয়ান তখন কান ধরে বলে-
-” সরি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। আর আমি ভেবেছিলাম তুমি তোমার বাবাকে কল দিয়েছো আর সে তোমার জন্য হয়তো গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে।
আরাফা করুন চোখে তাকালো। আস্তে আস্তে বলল-
-” হয়তো এর মধ্যেই আমার জীবন টাকে ফেলে দিলেন? আপনি জানেন না একটা মেয়ের জন্য এই শহর কতটা নিরাপদ? তবুও একটা বার আসলেন না। আমার সব শেষ হয়ে গেলো।
আরাফা ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। আরিয়ান অস্থির হয়ে বলে-
-” প্লিজ কেঁদো না প্রেশার নিও না। আর তোমার কিছু শেষ হয়নি। তুমি যা ভাবছো তা কিছুই হয়নি।
আরাফা আরিয়ানের দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকায়। আরিয়ান মাথা নাড়িয়ে বলে-
-” সত্যিই তোমার শুধু হাত পা ভেঙেছে। আর কিছুই হয়নি। ওরা তোমার আর কিছু করতে পারেনি। জানো ঐ মেয়েটা খুব খারাপ নিজে একটা মেয়ে হয়ে আমাকে কিভাবে মা’র’লো। আমি ওর কি ক্ষতি করেছিলাম। বার বার বলেছে তুই আমার থেকে সব কেড়ে নিয়েছিস। তোর এমন অবস্থা করবো যাতে তোর প্রিয় মানুষ ও আঁতকে ওঠে। আমি ওর পা ধরে কেঁদেছি তাও ছাড়েনি। ঔ ছেলেগুলো আমার পায়ে পাড়া দিয়েছে। কত ব্যাথা করছিলো। ওরা খুব বাজে খুব বাজে।
আরিয়ান আরাফাকে থামিয়ে বলে-
-” আরু প্লিজ উত্তেজিত হয়ো না। আমি সব শুনবো। কিন্তু এখন নয়। এখন রেস্ট নাও। কথা বেশি বলো না প্লিজ। আমি ডক্টরের কাছে থেকে আসছি।
আরিয়ান উঠে দাঁড়ালে আরাফা হাত টেনে ধরে বলে-
-” ভালোবাসা নামের পাগলামি তবে আসক্তি এসেছে”
” তোর শহরের মাঝে আসক্তি মিশে গেছে”
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)