#ভালোবাসা_একটা_বাজি(১৮)
আরাফা সুয়ে সুয়ে আপেল খাচ্ছে। আরিয়ান তাকে আপেল খাইয়ে দিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে। দুইদিন হলো বাসায় এসেছে আরাফা। তার বাবা মেয়ের এই অবস্থা দেখে ম’রি ম’রি পালা। আরাফা আর আরিয়ান মিলে উল্টা সিধা বুঝিয়েছে তাকে। তবুও সে মেয়ের ব্যাথায় কাতর। আরাফার ছোট বোন তো কেঁদেই ভাসিয়ে দিয়েছে, বোনের এই অবস্থা দেখে। আরাফাকে খাওয়াতে খাওয়াতে আরিয়ান তাঁর দিকে তাকিয়ে বলে-
-” তোমার আমার ওপর রাগ লাগছে না?
আরাফা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে-
-” রাগ করবো কেন? তুমি কি জেল পলাতক আসামি যে আমি রাগ করবো?
আরিয়ান ইতস্তত করে বলে-
-” আমার জন্যই তো তোমার এত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো। আমি যদি তোমাকে না ফেলে যেতাম তাহলে তো এসব হতো না। তুমি আমার সাথে কথা বলছো আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। অন্য কেউ হলে আমার ছায়াই মারাতো না।
আরাফা হেসে বলে-
-” আরে যাই হোক ওটা আমার ভাগ্যে ছিলো। তুমি যখন যাচ্ছিলে, আমি তখন তোমার পেছনে দৌড়াতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে গেলাম। বুড়ো আঙুলের নখ উঠে গেল। তারপর তোমাকে না পেয়ে এসে পার্কে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিলো তুমি আসলে না। তখন তিনটা ছেলেকে দেখে আমি উঠে হাঁটতে চেষ্টা করি, কিন্তু ভাগ্য আমার সাথে ছিলনা। ব্যাথা পেয়ে পড়ে যাই। পরে ওরা আমার মুখে রুমাল চেপে ধরে। পানির ঝাপটায় আমার জ্ঞান ফেরে। চোখের সামনে একটা মেয়ে আর চারটা ছেলেকে দেখি। কিন্তু ওরা মুখোশ পড়া ছিলো! তারপর যা হবার তাই হয়। আসলে আমারই ভুল হয়েছে তোমার সামনে অনিকের কথা বলা উচিত হয়নি। তবুও তোমায় আমি একটা সারপ্রাইজ দেবো। আগে সুস্থ হয়ে উঠি।
আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলে-
-” কি সারপ্রাইজ দেবে?
-” বলবো না সারপ্রাইজ!
-” আচ্ছা আমি বাসায় যাব তুমি থাকো।
আরাফা ঠোঁট ফুলিয়ে বলে-
-” আমার একা একা বোরিং লাগবে।
-” মিহি রাগ করে আছে। কয়েকদিন ধরে বাড়িতে যাই না। আর নার্স তো আছেই। আমি আবার আসবো, বায়।
আরাফা মুখ কালো করে বলে-
-” ওকে বায়।
আরিয়ান চলে যায় দরজা চাপিয়ে দিয়ে। আরাফা সেদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দেয়। কি ভাবছো আরিয়ান তাজওয়ার তোমাকে আমি এত সহজে ছেড়ে দেব? তোমার জন্য আমার এই অবস্থা তোমাকে তো অনেক বড় সারপ্রাইজ দেয়ার আছে। আমি ন্যাকা মেয়ে নই, যে তোমার মিঠা কথায় ভুলে যাব, ইটস মি তাহিয়্যাত আরাফা! ওয়েট করো সময় আসলে সব দেখতে পাবে।
________
আরিয়ান সোফায় বসে আছে। ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে তার। আট জোড়া চোখ তার দিকে প্রশ্নাত্মক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ছোট মাহিও বাদ নেই। সেও মামার দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান আমতা আমতা করে বলে-
-” কি হলো? আমাকে এখানে বসিয়ে এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? তোমাদের মতলব টা কি?
শহিদ সাহেব খ্যাক করে গলা পরিষ্কার করে। তারপর বলে –
-” আরাফার এই অবস্থা কি করে হলো? তোমার বন্ধুদের মতে ঐদিন আরাফাকে তুমি জোড় করে গাড়িতে উঠিয়ে ছিলে। কিন্তু পরে কি হয়েছিলো?
আরিয়ান একটা শুকনো ঢোক গিলে। কথাগুলো সব মাথায় সাজিয়ে নেয়। তারপর বলা শুরু করে-
-” আমি ওকে নিয়ে একটা পার্কে গিয়েছিলাম। তারপর আরাফা বলে সে নাকি অনিকের সাথে দেখা করবে। তাই আমি রাগ করে ওকে ওখানে রেখে চলে গিয়েছিলাম। ও কেন অনিক অনিক করবে? কিন্তু ওর ফোনটা আমার গাড়িতে ছিল, আর ওর কাছে পার্স ও ছিল না। ও আমার জন্য বসে অপেক্ষা করছিল। পরে তিনটা ছেলে ওকে নিয়ে যায়। একটা মেয়ে ওকে প্রচুর আঘাত করে এই অবস্থা করে। আমি তো ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম ওকে দেখে।
সবাই আরিয়ানের ওপর খেপে যায়। ওর জন্য আজকে একটা মেয়ের এই অবস্থা। মিহি রেগে বলে-
-” তুই কি পারোস এই ফালতু রাগ করা ছাড়া? আমি মানছি অনিক যা করেছে তা উচিত নয়। তাই তুই ওকে সহ্য করতে পারিস না। কিন্তু আরাফার সাথে যেটা করলি সেটা কি উচিত হয়েছে? তুই সবসময় পুরো কথা না শুনেই রিয়্যাক্ট করিস। কেন রে রাগ কি আর কারো নেই? মেয়েটার সাথে যদি বাজে কিছু হয়ে যেত? আমরা কেউই তোকে ক্ষমা করতে পারতাম না। তুই একটা কেয়ারলেস ছেলে এটা কি জানিস? তুই সবসময় নিজের স্বার্থ নিয়েই চিন্তা করিস কেন?
শায়লা রহমান মিহিকে থামানোর চেষ্টা করে বলে-
-” প্লিজ মিহি থাম তুই। এতো উত্তেজিত হোস না প্লিজ।
মিহি শায়লা রহমানকে থামিয়ে বলে-
-” না মামনি আজ আমাকে বলতে দাও। আচ্ছা তুই আরাফার উপরে কিসের জন্য এত অধিকার খাটাস? তুই ওর কি হোস?
আরিয়ান চুপ থাকতে না পেরে বলে-
-” ভালোবাসি আমি ওকে ভালোবাসি তাই অধিকার খাটাই। ওর উপর সব অধিকার শুধু আমার। ও অনিকের সাথে মিশতে পারবেনা। অনিক ভালো নয়। ওকে শুধু আমার মনমতো চলতে হবে।
শায়লা রহমান ছেলে বলে-
-” তুই ওকে ভালবাসিস মানলাম। ও কি তোকে চায়? হতে কি পারেনা ও অনিক কে ভালোবাসে? বা অন্য কাউকে পছন্দ করে? তুই নিজের ভালোবাসার কথা ওকে বলিস নি তাহলে কেন অধিকার দেখাবি? ও অন্য কাউকে ভালোবাসতেই পারে এটা ওর নিজের ইচ্ছে, তুই বাঁধা দেয়ার কে?
আরিয়ান থম মে’রে যায়। আরাফার কেন অন্য কাউকে ভালোবাসবে? ওকে কি ভালোবাসা যায়না? রাইয়ান আরিয়ানের বিধ্বস্ত মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। আরিয়ান শান্ত গলায় বলে-
-” না ও অন্য কাউকে ভালো বাসবে না। আমি দেব না ওকে কাউকে ভালোবাসতে। ও শুধু আমার।
রাইয়ান তখন বলে –
-” দেখ আমরা মাঝে মাঝে কাউকে মন প্রান দিয়ে ভালোবেসেও পাইনা। সে অন্য কাউকে ভালোবাসতেই পারে তাইনা। তো আমাদের উচিত তার পথ থেকে সরে আসা। বুঝলি?
রাইয়ানের কথায় আরিয়ানের টনক নড়ে। মনে পড়ে যায় কয়েক বছর আগের কথা। আরিয়ান দুর্বল হেসে বলে –
-” রাইয়ান তুই আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দিচ্ছিস?
আরিয়ানের কথা কেউ না বুঝলেও, রাইয়ান খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারে। সে মুচকি হেসে বলে-
-” তা নয় জীবনে ওর চেয়েও ভালো মেয়ে পাবি অপেক্ষা কর। একজন কে ভালোবাসলে যে পেতেই হবে, এমন তো কথা নেই। ছোট এই জীবনে কত মানুষ কেই তো আমরা ভালোবাসি তাই না। আরেকটা কথা আছে- ” কারো কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিয়ে, তার কাছ থেকেও কিছু খোয়া যায়”! আজ আসি আন্টি আপনারা ভালো থাকবেন।
রাইয়ান কথাগুলো বলে উঠে চলে যায়। আরিয়ান তাঁর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রাইয়ানের মুখৈ ঝুলছে সয়তানি হাঁসি। শিহাব তখন বলে-
-” রাইয়ান কিসের কথা ফিরিয়ে দিলো আরিয়ান? আর কি বলেছিলি তুই ওকে?
আরিয়ান তখন হেসে বলে-
-” কিছুনা ওই ওকে একবার স্বান্তনা দিয়েছিলাম তাই আর কি!
শায়লা রহমান সন্ধিহান চোখে বলে-
-” তাই কি? নাকি অন্য কোন ঘাপলা আছে? যদি লুকোস খুব খারাপ হবে কিন্তু!
মিহি ফোড়ন কেটে বলে-
-” মামনি তোমার ছেলে কিছুই বলেনা কাউকে। সবই লুকায়। দেখবে একদিন খুব আফসোস করবে!
আরিয়ানের কাছে এদের কথা বিষের মত লাগছে। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে রাইয়ানের একটা কথাই ” কারো কাছ থেকে কিছু ছিনিয়ে নিলে, তার কাছ থেকেও কিছু খোয়া যায়”! কথাটা দিয়ে কি বুঝালো? আরিয়ান সবার মধ্যে থেকে উঠে নিজের রুমে যায়। দরজা বন্ধ করে কতক্ষন সাদিয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকে। এই মানুষটা কত সহজেই সব সমাধান করে দিতো থাকলে। কিন্তু এ নিজেই অনেক বড় প্রশ্ন রেখে গেছে। যার সমাধান আজ অব্দি পাইনি। রাইয়ান কিসের ইঙ্গিত দিচ্ছে বারবার। এ কি ঝড় আসার পূর্বাভাস? আরিয়ান কতক্ষন থম মে’রে বসে থাকে। মাথার মধ্যে কত প্রশ্ন তালগোল পাকাচ্ছে। রাইয়ানের শেষের কথাটা নিয়ে অনেকক্ষন ভাবতেই মাথায় সেই পুরনো দিনের কথা ভেসে ওঠে। তখনি আচমকা আরিয়ান চোখ খোলে, এতদিন নিজেই শত্রুকে বন্ধু ভেবেছে। সেই কিনা এমন করলো! বেঈমানির শাস্তি তো পেতেই হবে তোকে!
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)
#ভালোবাসা_একটা_বাজি(১৯)
ক্যালেন্ডার থেকে অনেক গুলো দিন কাটা পড়েছে। আরাফা এখন হাঁটাচলা করতে পারে। এই কদিন আরিয়ান পুরো খেয়াল রেখেছে আরাফার। মাঝে মাঝে আরাফার রহস্যময় কথায় হারিয়ে গেছে। আরিয়ান এতদিন ধরে সুন্দর করে নিজের প্ল্যান সাজিয়েছে। শত্রুকে কয়েক মাস সময় দিয়েছে। আরাফা আজ ভার্সিটি যাবে বলে জেদ ধরেছে। চোখ মুখ কুঁচকে বসে আছে সে। আরিয়ান গা জ্বলা হাসি দিয়ে বলে-
-” কি গো আরু বেইবি এমন বাংলার পাঁচের মত মুখ বানিয়ে রেখেছো কেন?
আরাফা আরিয়ানের দিকে র’ক্তচক্ষু নিয়ে তাকায়। আরিয়ান ভয় পাবার ভঙ্গিতে বলে-
-” প্লিজ এভাবে তাকিও না। আমার ভীষণ ভয় লাগছে। তুমি প্লিজ চোখদুটো ছোট করো।
আরাফা বিরক্তিতে “চ” শব্দ উচ্চারণ করে বলে-
-” আরিয়ান ন্যাকামি আমার পছন্দ নয়। আমি আজ ভার্সিটি যাব মানে যাব। সামনে পরীক্ষা। এই কমাস কিছুই পড়তে পারিনি। তুমি উল্টো জ্বালিয়েছো।
আরিয়ান ইনোসেন্ট ফেস করে বলে-
-” আমার মত নাদান বাচ্চার নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছো? ছিহ তুমি কত খারাপ। আর কি যেন সামনে পরীক্ষা তাই না। তার আগেই তোমাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়ে দেব। পরীক্ষার বদলে বাচ্চা পালবে।
আরাফা চোখ মুখ কুঁচকে চিৎকার করে বলে-
-” আরিয়াইন্না! বাজে বকবি না। আমি যাব মানে যাব। দরকার পড়লে তোকে আমাদের ছাদ থেকে ফে’লে দিয়ে, তারপর আমি ভার্সিটিতে যাব।
-” আচ্ছা বাবা, খুব জিদ্দি তুমি। তবে আমার সাথে যেতে হবে তোমার। তুমি আমার বাইকে না হয় গাড়িতে যাবে।
আরাফা কিছুক্ষন ভেবে বলে –
-” বাইক নয় গাড়ি, গাড়িতে যাব।
-” তবুও যাওয়াই লাগবে। মনে হচ্ছে ভার্সিটিতে জামাই বাচ্চা রেখে এসেছে।
-” হ্যা রেখে এসেছি, তোর দরকার আছে?
-” হেই বেবি কুল কুল। নিচের গাড়ি আছে গিয়ে বসে পড়। নাকি কোলে নেয়া লাগবে?
-” তোর কোলে ওঠার জন্য আমার বয়েই গেছে।
আরাফা রেডি হয়ে গাড়ির কাছে যায়। পেছনের সিটে গিয়ে বসে। আরিয়ান এসে পিছনের সিটের দরজা খুলে আরাফার পাশে বসে। আরাফা কপাল কুঁচকে বলে-
-” কি?
আরিয়ান না বোঝার ভান করে বলে-
-” কি?
আরাফা রেগে বলে-
-” তুমি আমার পাশে বসলে কেন? গাড়ি কে চালাবে?
আরিয়ান অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে-
-” তুমি আমার পাশে না বসলে পেছনে তোমাকে দেখতে গিয়ে এক্সিডেন্ট হয়ে যাবে। তুমি কি এই বয়সেই ম’রতে চাও?
-“এই তোমার বাজে কথা বন্ধ করো। যাও গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দাও।
-” তুমি আমার পাশে বসবে চলো।
-“না আমি পেছনেই ঠিক আছি।
-” ওকে তাহলে আমিও এখানেই ঠিক আছি।
আরিয়ান বসে বসে ফোন ঘাটছে। আরাফা রেগে গিয়ে সামনের সিটে বসে। আরিয়ান মুচকি হেসে ড্রাইভিং সিটে বসে। গাড়ি স্মুদলি চালাচ্ছে আরিয়ান। ভার্সিটির সামনে গাড়ি থামাতেই আরাফা খরগোশের মত লাফিয়ে নেমে পরে। আরাফাকে দেখে অর্পিতা এসে জড়িয়ে ধরে। হাসি মুখে বলে-
-” খুব মিস করেছি রে আরু।
আরাফা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে-
-” আমিও অনেক মিস করেছি রে।
আনিকা, অনিক, ইমা সবাই এসে আরাফার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে। আরিয়ান রেগে এসে আরাফার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়। আরাফা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে –
-” গরুর মত টানছো কেন? কই নিয়ে যাচ্ছো?
আরিয়ান হাত ঝটকা মেরে ছেড়ে দেয়। আরাফা কোনমতে উঠে দাঁড়ায়। রেগে চোয়াল শক্ত করে আরিয়ান বলে-
-“তোর সাহস তো কম না তুই আবার অনিকের সাথে কথা বলেছিস! তোকে মে:রে পু;তে দেব। ওর আশেপাশেও যাবিনা।
আরাফা রেগে চিল্লিয়ে বলে-
-” পারো টা কি তুমি হ্যা? ঐদিন আমি অনিকের সাথে গানের লিরিক্স এর জন্য দেখা করতে চেয়েছিলাম। তুমি কি বুঝবে এসবের গুরুত্ব। তুমি তো কম্পিউটারে কিছু শব্দ দিয়ে ডিজে পার্টি করো। গানের কোন মূল্য আছে কি তোমার কাছে? গিটারের টুংটাং আওয়াজ শুনলেও মনটা ভালো হয়ে যায়। আর তোমার ডিজে শুনলে আমার মাথা ব্যাথা করে।
-” আমি যাই করি না কেন। বা পারিনা কেন। তুই অনিকের কাছে যাবিনা ব্যাস। ও ভালো নয়।
-” তুমি নিজে কতদুর ভালো? কত কত মেয়ের সাথে রিলেশন করেছো, তার ইয়াত্তা নেই। অনিক না হয় ফিজিক্যাল রিলেশন করেছে। আমার ফ্রেন্ড ও আমি কথা বলবো। তোমার জাত শত্রু থাকলেও তাতে আমার কিছু আসে যায়না।
-” তোমাকে লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি!
আরিয়ান আরাফা কে আর কিছু বলেনা। গটগট করে হেঁটে চলে যায়। শিহাব কে কল করে-
শিহাব আরিয়ানের কলেরই অপেক্ষায় ছিলো। রিংটোন বাজার সাথে সাথে কল রিসিভ করে, হন্তদন্ত হয়ে বলে-
-” হ্যালো আরিয়ান, হ্যা বল।
আরিয়ান কপাল কুঁচকে বলে-
-” পানি খাও আগে। যেমনে কথা বলতাছোস মনে হয় অলিম্পিক থেকে দৌড়ে আসলি। শোন তুই সব রেডি করে রাখ আমি আসছি।
-” কিন্তু এটা তুই কেন করছিস? আমার মতে আজকে তো ওর বার্থ ডে নয়। তাহলে ?
আরিয়ান বাঁকা হেসে বলে-
-” বার্থডে নয় তবে আজকে ওর জীবনের একটা স্মরণীয় ডে তো বানানোই যায়।
ওপাশ থেকে শিহাব কপালে আঙুল ঘসে বলে-
-” তুই কি করতে যাচ্ছিস আমি বুঝতে পারছিনা। তোর প্ল্যান বুঝতে চাইও না তাহলে, পাক্কা অ’ক্কা পাব।
-” আমি এসে বুঝিয়ে দেব সব। এখন ওদের তিনজনকে কিডন্যাপ কর আগে। আমি আমার সানসাইন কে নিয়ে আসছি। টাটা।
-” আরে শোন…
আরিয়ান কলটা কেটে দেয়। এপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিহাব। সুহাস শিহাবের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” কিছু বুঝলি ভাই?
শিহাব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে –
-” ওর মাথায় কি ঘুরছে এটা, ওয় আর ওর আল্লাহ্ জানে। তবে আমাদের কাজটা করে ফেলা লাগবো। চল।
-” চল!
__________
আরাফা ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে। অর্পিতা হেসে বলে-
-” আরু ভালোই কাজ করলি। আমাদের ক্রাশ তোর প্রেমে এখন হাবুডুবু খায়। কি করেছিলি রে? যে এত পাগল হয়েছে?
অনিক মুখ বাঁকায়। মনে মনে বলে- ও এমনিতেই একটা প্লে বয়। ও তো সবার প্রেমেই হাবুডুবু খায়। কয়দিন পর আবার অন্য কারো পিছে ঘুরবো। আর এই মেয়েগুলো ক্রাশ খাচ্ছে। ইমা ভেবে বলে-
-” আমাদের আরাফা এমনিতেই সুন্দরি। আরিয়ান এর চেয়ে ভালো ছেলেরাও ওকে দেখছে ফিট পড়বে সো কুল।
আরাফার বিরক্ত লাগছে এসব প্যাচাল। আজকে ডোজটা বেশিই দিয়েছে আরিয়ান কে। কখন না এসে আবার এ্যাটা’ক করে। সবাই বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু আরাফার চোখ অশান্ত। অনিক আরাফার ছটফটে অবস্থা দেখে বলে-
-” কি হয়েছে আরাফা? এমন করছো কেন?
আরাফা জোড়পূর্বক হেসে বলে –
-” কই না তো কিছু না।
তখন ঝড়ের বেগে আরিয়ান আসে কোথাও থেকে। আরাফার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে টানে। আরাফা যাবে না, সে হাত ছুটাছুটি করে বলে –
-” পেয়েছো টা কি? ছাড়ো বলছি। তুমি আসলেই একটা সাইকো।
আরিয়ান আরাফাকে টুপ করে কোলে তুলে বলে-
-” আমি সাইকো আমি জানি। কিন্তু তুমি ছোটছুটি করছিলে কেন?
আরাফা আরিয়ানের চুল টেনে বলে –
-” নামাও বলছি। তোমার কোলে আমি উঠবো না। নামাও!
-” নামাবো না বেশি পকপক করলে ফেলে দেব কিন্তু। এইবার তাহলে কোমড় ভাঙবে।
আরাফা হাত পায়ের ছো’ড়া’ছু’ড়ি’ থামিয়ে দেয়। সে জানে আরিয়ান ফেলে দিতে পারবে। পেছন থেকে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। অর্পিতা ইমাকে বলে-
-” এই আরিয়ানের হলোটা কি? আরাফা এখন চুপ করে আছে কেন? প্রথমে কি ঢং করলো তাহলে।
অনিক মুখ বাঁকা করে বলে-
-” আরিয়ানের যত ঢং আমার গা জ্বলে দেখলে।
আরিয়ান আরাফাকে গাড়িতে উঠিয়ে বলে-
-” কোথায় ঘুরতে যাবা বলো?
আরাফা রাগে মুখ ঘুরিয়ে বলে-
-” জাহান্নামে যাব।
আরিয়ান মুচকি হেসে বলে-
-” মহারানীর হুকুম পালনে আমি সর্বদা সচেতন। চলুন তবে আমার জাহান্নামে।
আরাফা মুখ বাঁকিয়ে জানালার দিকে মুখ করে বসে। আরিয়ান উঠে দুজনের সিটবেল্ট বেঁধে গাড়ি স্টার্ট করে।
#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)