ভালোবাসা একটা বাজি পর্ব-২০+২১

0
401

#ভালোবাসা_একটা_বাজি(২০)

-” তুই আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?

আরিয়ান আরাফার দিকে তাকিয়ে বলে-

-” তুই তাকারি করছো কেন? হয়েছে টা কি বলবে?

-” তোকে তুই বলব নি তো কি বলবো? পাষাণ তুই, শুধু নিজের স্বার্থ বুঝিস শুধু।

-” তোমার হয়েছে টা কি বলবে?

আরাফা রাস্তার দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলে-

-” তুই আগে সামনে তাকিয়ে ড্রাইভ কর। আমায় কি মা’রার প্ল্যান করেছিস?

আরিয়ান সামনে তাকিয়ে দ্রুত গাড়ি সাইড করে। গাড়ি থামিয়ে আরাফার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলে-

-” এখন বলো সমস্যা কি?

-” সমস্যাটা হলি তুই। তুই বুজতে পারছিস না আমি তোকে সহ্য করতে পারিনা। এতদিন অনেক সহ্য করেছি। আর না। আই হেইট ইউ!

আরিয়ান শান্ত গলায় বলে-

-” আচ্ছা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলো তো এই কথাটা।

আরাফা আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়। চোখে তাকালেই হারিয়ে যাবে‌। আরিয়ান আরাফার নতজানু মুখটা হাত দিয়ে উপরে তুলে বলে-

-” যেইদিন আমার‌ চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারবে। ঐদিন আমি নিজ থেকে সরে যাব। কসম তোমার সামনেও আসবো না। একদম তোমার থেকে হারিয়ে যাব। আর‌ কখনোই খুঁজে পাবে না। কিন্তু যা বলবে ভেবে বলবে।

আরাফা ঝটকা মে’রে আরিয়ানের হাত সরিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। আরিয়ান আবারো গাড়ি স্টার্ট দেয়।

_______

অন্ধকার রুমের মধ্যে তিনজন ছটফট করছে। কথা বলার ও জো নেই। মুখ, হাত-পা সব বা’ধা। কেউই জানেনা কেন এখানে আনা হয়েছে। হঠাৎ ক্যাচ করে দরজা খোলার শব্দ হয়। তিনজনেই কান খাঁড়া করে শোনার চেষ্টা করছে। আরাফা আরিয়ানের হাত খামচে ধরে ফিসফিস করে বলে-

-“‌এখানে কেন এনেছো? আর এত অন্ধকার কেন?

আরিয়ান “শ” জাতীয় শব্দ করে আরাফাকে চুপ করিয়ে দেয়। কান খাঁড়া করে ফিসফিসানি ছাড়া কিছুই শুনতে পেল না কেউ। আরিয়ানের পেছনে পেছনে শিহাব আর সুহাস ও‌ আসে। আরিয়ান হাতড়ে লাইট জ্বালায়। আরাফা আলোর ঝলকানিতে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আরিয়ান সামনে বাঁধা তিনজনকে দেখে বাঁকা হাসে। আরাফা চোখ খুলেই হতভম্ব হয়ে যায়। আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার সামনের তিনজনের দিকে‌ তাকায়।‌ সুহাস আরো চারটা চেয়ার নিয়ে আসে। আরাফা আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রেগে বলে-

-” এইসব কি‌? তুমি ওদের এই অবস্থা কেন করেছো?

আরিয়ান বাঁকা হেসে বলে-

-” আগে আগে দেখো হোতা হ্যায় ক্যায়া!

সুহাস একটা চেয়ার আরাফার দিকে দিয়ে বলে-

-” বসে পড়ো। তুমি আমার ক্লাসমেট তাই তুমি করেই বলছি। রাগ করো না।

আরাফা কথা না বলে চেয়ার টেনে বসে। সে এখনও বুঝতে পারছেনা এসব কি হচ্ছে। মনে হাজারো প্রশ্ন কিলবিল করছে। কিন্তু আরিয়ান একটা প্রশ্নের উত্তর ও এখন দিবেনা এটা ভালো করে জানে সে। এই কয় মাস হাঁড়ে হাঁড়ে চিনেছে সে। অনিক আর রায়হান ওদের কথা শুনে, হাত পা নাড়াচাড়া করছে ছোটার জন্য। আরিয়ান শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে-

-” ওদের সবার চোখ‌ আর মুখ খুলে দে।

শিহাব নির্দেশ পাওয়া মাত্রই বাধ্য পেয়াদার মতো, সবার চোখ মুখ খুলে দিলো। অনিকের মুখ খুলতেই রেগে বলে-

-” চোরের মতো বেঁধে রেখেছিস কেন? পারলে হাত পা খুলে দে। দেখ তোর কি করি।

আরিয়ান চোখমুখে কাঠিন্য এনে বলে-

-” কি করিস নি তুই? আমার কলিজায় হাত দিয়েছিস। আর কি করবি তুই। তোর ডানা গজিয়েছে অনেক তাই না। একটা কথা আছে জানিস “পিপীলিকার পাখা গজায় ম’রিবার তরে”।

রাইয়ান অনেকটা অবাক হয়ে বলে –

-” কি রে আরিয়ান আমায় কেন এভাবে বে’ধে রেখেছিস? আমি কি করেছি আবার?

আরিয়ান জবাব না দিয়ে আনিকার দিকে তাকিয়ে বলে-

-” হেই ধান্দাবাজ মহিলা। সরি ডিয়ার এক্স কেমন লাগছে? আরো কয়টা হকি স্টিক আরো কয়টা লাগবে। বলো আমি অর্ডার দিচ্ছি।

আনিকার চোখে রাজ্যের ভয়। সে শুধু ঢোক গিলছে। আরাফা আরিয়ানের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। একটু আগেও মুখে বাঁকা হাসি ছিল। এখন শুধু হিং:স্রতা। রাইয়ান আবার বলে-

-” আরিয়ান ড্রামা বন্ধ করে আমাকে কেন এভাবে বেঁধে রেখেছিস ওটা বল।

আরিয়ান এবার রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-

-” আমিও জানিনা কেন এনেছি। আয় ট্রুথ ডেয়ার খেলি। তারপর মনে পড়লে বলবো কেন এনেছি এখানে।

রাইয়ান রেগে বলে-

-” তুই ফাজ”লামি করছিস? হাত পা খোল।

আরিয়ান মুখটা ইনোসেন্ট করে বলে –

-” আমি‌ তো হকি স্টিক আর‌ ব্যাট এর ব্যবস্থা করেছি। একসাথে হকি আর ক্রিকেট খেলবো তাই। তুই চলে গেলে কি করে হবে? তুই ই তো এখানের, মেইন প্লেয়ার।

আরাফা ধৈর্য হারা হয়ে বলে-

-” দেখো আরিয়ান কথা না পেঁচিয়ে কি জন্য এমন করছো সেটা বলো!

আরিয়ান তখন সবার দিকে তাকায়। আনিকা বাদে বাকি সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান বলে-

-” আরাফা তোমাকে তো একটা মেয়ে মেরেছিল তাই না?

আরাফা মাথা নাড়িয়ে বলে-

-“‌ হ্যা কিন্তু অনেকগুলো ছেলেও ছিলো।

আরিয়ান সুহাস আর শিহাবের দিকে তাকিয়ে বলে-

-” যা বন্ধুরা বাকি তিন সোনার সন্তান কে নিয়ে আয়। তারপর হবে টুইস্ট।

শিহাব আর সুহাস গিয়ে বাকি তিনজনকে এক এক করে এনে চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখে। রাইয়ান, অনিক আর আনিকা তিনজনেরই ঘাম ছুটে গেছে। রাইয়ান বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। এত দিনের সাজানো সব চোখের সামনে ধ্বসে পড়ছে। সে কিছুই করতে পারবেনা। আরিয়ান তুড়ি মে’রে বলে-

-” কি রে তোরা ঘামছিস কেন? ঐ ফ্যান ছাড় এসির পাওয়ার ফুল স্পীডে দে।

আরাফা তিনজনের দিকে তাকিয়ে রেগে উত্তেজিত হয়ে বলে-

-” এই তিনজনই তো আমাকে কিডন্যাপ করেছিলো। ওদের কোথায় পেলে। আমি ওদের খু’ন করেই ফেলবো।

আরিয়ান আরাফাকে ধরে বলে শান্ত হও, বসো প্লিজ। আরাফা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চেয়ারে বসে। সেই বখাটে তিনটা ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে-

-” কি রে এতদিন তো খাতির যত্ন করলাম। আজ তবে আসল ডোজ টা দেই কি বলিস?

তাদের মধ্যে থেকে একজন কেঁদে বলে-

-” ভাই আমাগো আর মাই’রেন না। আপনার দুইডা পায়ে পড়ি।

আরিয়ান আবারো চোখেমুখে হিং’স্রতা ফুটিয়ে বলে-

-“‌ তাহলে যা যা জিজ্ঞেস করবো সব ঠিকঠাক বলবি।

আরেকজন ছেলে তাড়াতাড়ি করে বলে-

-” ভাই কেউ না বললেও আমি বলমু। আপনি আমারে মা’ইরেন না আর। আমি সব বলমু।

আরিয়ান রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-

-” হুম তাহলে বল তোরা আরাফা কে কেন কিডন্যাপ করেছিলি?

অনিক আর রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে দুইটা ছেলে ভয়ে মিইয়ে যায়। তখন একটা ছেলে ভয়ে ভয়ে বলে-

-” আমরা ওনাগো ( অনিক, আনিকা আর রাইয়ান কে দেখিয়ে) কথামতো কাম করছি। আফারে খালি নিয়া গেছি আবার আইনা ফালাই রাইখা গেছি। আর যা করার ওনারাই করছে।

রাইয়ান রাগে চোখ বন্ধ করে বলে-

-” তোদের তো আমি খু:ন করবো। মিথ্যা বলছিস কেন?

আরাফা, সুহাস, শিহাব তিনজনের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে। কাছের মানুষ এইভাবে ছু’ড়ি মা:রং;লো? সুহাস অবিশ্বাস্য স্বরে বলে –

-” এই ছেলে তোরা ভয়ে ভুল কিছু বললে কিন্তু তোদের খবর আছে!

আরিয়ান বিরক্ত হয়ে ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে বলে-

-” তুই বা হাত দেস কেন? ওরা মিথ্যা বলছেনা। আর আমার কাছে প্রমান ও আছে। তবে আরাফার জন্য ওদের কথাগুলো শোনার জরুরি। তাই না আরাফা?

আরাফা রাগে থরথর করে কাঁপছে। অনিক কিনা এসবে জড়িয়ে আছে? অনিক চিৎকার করে বলে-

-” হ্যা আমরাই করেছি এইব। মূল হোতা ছিল রাইয়ান। বাকি কাজে আমি আর আনিকা হেল্প করেছি। তুই তো আমাদের কম কিছু করিস নি! তুই আনিকার সাথে ব্রেকাপ করে দিয়েছিস। রাইয়ানের স্বপ্ন ভেঙেছিস। ছেলেটি তোর পা ধরে কেঁদেছে, তুই ওকে উল্টাপাল্টা বলে স্বান্তনা দিয়েছিস।

আরিয়ান রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে-

-” কেন করলি এমন তুই? কি লাভ পেলি? মেয়েটা এতদিন ব্যাথায় কাতরেছে? জানিস কষ্টে একদিন ও ঘুমাতে পারতাম না। আনিকা তোর সাথে আমার কিসের শত্রুতা? প্ল্যানিং করে রিলেশন করলি কিন্তু যেই ব্রেকাপ করে তোর প্ল্যান টা ক্যান্সেল করে দিলাম আর তুই আরাফা কে তারগেট করলি? তোরা চাস টা কি? কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে তার কষ্ট না সহ্য‌ হয়না। আরাফা এতদিন আমাকে ভূল বুঝেছে এটাও আমাকে প্রতিনিয়ত কষ্ট দিয়েছে। আচ্ছা তোদের মূল উদ্দেশ্য টা কি রে?

#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)

#ভালোবাসা_একটা_বাজি(২১)

আরাফা আরিয়ানের রাগান্বিত মুখটার দিকে তাকাচ্ছে আর ভয়ে ঢোক গিলছে। আরিয়া চেঁচিয়ে বলে-

-” জবাব দে আমায় রাইয়ান। আর আনিকা তো তোর চাচাতো বোন তাইনা?

রাইয়ান চমকে তাকায় আরিয়ানের দিকে। এতক্ষন সব শুনতে পারলেও, এবার ভয় করছে। ঘন ড়নভ এত এত ইনফরমেশন কালেক্ট করলো কোথা থেকে। রাইয়ান ভয়ে ঢোক গিলে বলে-

-” এটা তুই জানলি কি করে।

আরিয়ান ব্যাথাতুর হেসে বলে-

-” তুই কি ভেবেছিলি? আনিকা আমায় ধোঁকা দেবে, আর আমি ওর দুঃখে পাগল হয়ে যাবো?

রাইয়ান চেঁচিয়ে বলে-

-“‌ হ্যা হ্যা আমি তোকে জ্বালাতে চেয়েছি। আমি চেয়েছি আমি যেই আগুনে বারবার দ’গ্ধ হচ্ছি, সেই আগুন তোর বুকেও লাগুক। কিন্তু তুই তো পাশা উল্টে দিলি। তুই আমার সাজানো সব প্ল্যান নষ্ট করে দিলি।
ড় আমার ধ্যধদক কক্স
আরিয়ান তালি দিয়ে বলে-

-” তুই হলি আ”নাড়ি খেলোয়াড়। আমি এতোটাও বোকা নই রে। আনিকার সাথে আমি ব্রেকাপ করেছিলাম, কারন আমি জেনে গেছিলাম ও তোর চাচাতো বোন। তোকে একবার শুধরানোর চাঞ্চ দিয়েছিলাম। বাট তুই শুধরানোর পাত্রই না‌। যখন দেখলি আনিকা পারলো না তখন তুই আরাফার দিকে হাত বাড়ালি!

রাইয়ান ঢোক গিলে বলে-

-” তোকে আনিকা কে দিয়ে বাগে আনতে না পেরে অনেক ঝেড়েছিলাম ওকে। তারপর যখন দেখলাম তুই আরাফার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়েছিস তখন নতুন পথ পেলাম। অনিক আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড ছোটবেলা থেকেই, আমি কি তোর জন্য ওর সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবো নাকি? পড়ে আমি আনিকা, অনিক তিনজনে মিলে প্ল্যান করি‌ আরাফাকে শেষ করার। তোদের পিছনে লোক লাগানো ছিল যারা ফলো করতো তোদের। ঐদিন আরাফাকে যখন ফেলে গেলি, আমরাও কাজটা করিয়ে নিলাম। কিন্তু বোকা আনিকার জন্য সব এলোমেলো হয়ে গেল। আরাফা বেহুঁশ হওয়াতেই ও ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তারপর ওর জোড়াজুড়িতেই আরাফাকে ফেলে আসি। নাইলে ওর এমন অবস্থা করতাম, যা দেখলে কোন মানুষ কেঁপে উঠতো। আর তুই তিলে তিলে ওর শোকে ম’রতি।

রাইয়ানের কথা শুনে আরিয়ান উঠেই ওকে ঘু’ষি মা’রে। সুহাস আর শিহাব আরিয়ান কে সরিয়ে আনে। তারাও রাগে কাঁপছে। ভাবতেই পারছেনা এরকম একটা বেইমান কে বন্ধু বানিয়েছে তারা। আরাফা বাকহীন মূর্তির মত বসে আছে। তার ভান্ডারে শব্দ মজুদ নেই আর। আরিয়ান সুহাস আর শিহাব কে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে-

-” ছাড় আমার, কু**রের বাচ্চা কে আজ আমি মে”রেই ফেলবো। শা’লা, প্রতারক, বেইমান। ছাড় তোরা আমায়।

আরাফা অনেক কষ্টে আওয়াজ বের করে বলে-

-” থামো তুমি, বসো আরিয়ান। রাইয়ান ভাই আপনি কেন ওর ওপর প্রতিশোধ নিতে চাইছেন? কি দোষ ওর আর আমার?

রাইয়ান পাগলের মত হেসে বলে-

-” ওর কাছে আমার ভালোবাসা ভিক্ষা চেয়েছিলাম। ওর পা ধরে কেঁদেছি আমি। ওর বোনকে আমি ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসি। কিন্তু মিহি কখনোই আমার অনুভূতি বোঝে নি‌। মিহির বিয়ের দিন পাগলের মতো আরিয়ানের পা ধরে কেঁদেছি আমি। ওকে কতোটা ভালোবাসি তা কাউকেই বোঝাতে পারবোনা। আরিয়ান তখন বলে কি জানো “দেখ আমরা মাঝে মাঝে কাউকে মন প্রান দিয়ে ভালোবেসেও পাইনা। সে অন্য কাউকে ভালোবাসতেই পারে তাইনা। তো আমাদের উচিত তার পথ থেকে সরে আসা। বুঝলি? তুই জীবনে ওর চেয়েও ভালো মেয়ে পাবি অপেক্ষা কর। একজন কে ভালোবাসলে যে পেতেই হবে, এমন তো কথা নেই। ছোট এই জীবনে কত মানুষ কেই তো আমরা ভালোবাসি তাই না। মিহি আর রাজ একে অপরকে ভালোবাসে, ও যদি কাউকে না ভালোবাসতো তাহলে তোর সাথেই ওর বিয়ে দিতাম কিন্তু এখন আমার বোন যা চাইবে তাই হবে”। তারপর অনেক ভেবেছি আমার‌ একতরফা ভালোবাসার জন্য কেন মেয়েটার জীবন নষ্ট করবো? তখন ওকে ভোলার চেষ্টা করি কিন্তু ভোলা কি এতই সহজ? তারপর যখন শুনলাম মিহির হাজবেন্ড মা’রা গেছে, আমার মধ্যে আবারো ওকে নতুন করে পাওয়ার ইচ্ছে জেগে ওঠে। ঐদিন আবারো আরিয়ানের কাছে আর্জি করি‌ মিহিকে আমার‌ করে দেয়ার। কিন্তু আরিয়ান রাজি হয়না। সে বলে বন্ধু আছো বন্ধুই থাক। আর মিহি প্রেগন্যান্ট ওকে এইসময় প্রেশার দেয়া ঠিক না। আমি বলেছিলাম যে আমি বাচ্চাসহ ওর দায়িত্ব নেব, কিন্তু আরিয়ান সেটা মানলোই না উল্টো বলল আর কখনোই আমার সামনে আসবি না যদি এই কথা তুলিস। আর কখনোই মিহিকে চাইতে ওর কাছে যাইনি। দূর থেকে দেখতাম ওকে। মেয়েটা দুইবার সুই’সাইড এটেম্প করেছিল। কতটা ডিপ্রেশন এ আছে ও। আমরা দুজনেই পুড়ছি কাউকে ভালোবেসে আরিয়ান কি পারে না আমার বুকের আগুন নেভাতে? কিন্তু ও পাষাণের মতো করলো।

আরিয়ান, অনিক আর আনিকা বাদে সবাই অবাক হয়ে আছে সুহাস তো বলেই ফেলে-
-” মিহিই কি তোর গুপ্ত প্রেয়শী?

রাইয়ান মাথা দুলিয়ে সায় দেয়। আরাফা বিষ্ময় কাটিয়ে বলে-

-” আপনি না হয় মিহির জন্য এমন করেছেন এখানে আরিয়ানের দোষ কি? ওর বোনকে আপনি নিজে বলতেন গিয়ে দেখতেন সে কি বলে। আচ্ছা অনিক তোমার সাথে আরিয়ানের কি ঝামেলা?

অনিক হেসে বলে–
-” আমারো এই একই লাভ কেস। আসলে হয়তো আরিয়ান তোমাকে বলেছে আমি কেমন। যখন আরিয়ানের মা ওর বাবাকে খু:ন করে অন্য কারো সাথে চলে যায় তখন থেকেই আরিয়ান বদমেজাজি হয়ে যায়। একটুতেই খারাপ ব্যবহার করতো আরিয়ান। তারপর ক্লাস টেন এ ওর একটা মেয়ের সাথে রিলেশন হয়, মেয়েটার নাম অরিন। আরিয়ান অনেক ভালোবাসতো অরিন কে, কিন্তু অরিন ওর রাগ সামলাতে পারতো না। তো ধীরে ধীরে অরিন আমার কাছে চলে আসে ওর সাথে ব্রেকাপ করে। আমিও কয়েকদিন অরিনের সাথে রিলেশন করি, তারপর মেয়েটা সুইসাইড করে।

আরিয়ান চেঁচিয়ে বলে-
-‘ ও বাধ্য হয়েছে সুইসাইড করতে। তুই ওর সাথে বাজে কাজ করেছিলি। আমায় রাগাস না কিন্তু সব সত্যি সত্যিই বল।

অনিক বিরক্ত হয়ে বলে-
-” আরিয়ান যা বলছে সব সত্যি। কিন্তু আমি আমাদের ক্লাসের রোজা নামের একটা মেয়েকে অনেক পছন্দ করতাম, আমার সে ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপ নিয়েছিল। কিন্তু অরিনের সাথে চিট করায় আরিয়ান আমার ওপর প্রতিশোধ নেয়। ও রোজাকে পটিয়ে ফেলে। এরপর থেকেই আমাদের ফ্রেন্ডশীপের ইতি ঘটে আর ওর শত্রু হয়ে যাই আমি হাহাহা। যত প্ল্যান সব আমার আর রাইয়ানের আনিকা শুধু একটা অংশ মাত্র, আরিয়ান ওর সাথে ব্রেকাপ করায় ও আরাফাকে কষ্ট দিয়েছে কাহিনী শেষ।

আরাফা মূর্তির ন্যায় ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে শুধু। এদের একেক জনের কাহিনী সিনেমার মত লাগছে তার কাছে। আরিয়ান তখন চেয়ারে বসে বলে-

-” অনিক আমি আগেও বলছি এখনো বলছি আমি জানতাম না তুই রোজা কে পছন্দ করতি। তাহলে আমি ওর সাথে রিলেশন এ যেতাম না। অরিন কে ভুলতেই ওর সাথে রিলেশন এ গেছিলাম। আর রোজাই আমাকে প্রপোজ করেছিলো, আমি ওকে পটাইনি। তোকে ঐ রিদি বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যা গল্প বলেছে আর সেগুলোই বিশ্বাস করলি। একটাবার যাচাই করার প্রয়োজন মনে করলি না? আর রাইয়ান তোর সাথে তো অন্যায় করেছি তাই না তুই কি জানিস আমার ছোট বোনটা আর বাঁ’চবে না। ও বলেছিল ভাইয়া আমি একটা জিনিস চাইবো তোর কাছে, আমাকে আর‌ বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করিস না, আমি যতদিন বেঁচে আছি রাজের স্মৃতি নিয়েই বাঁ’চতে চাই। আমার মাহিকে নিয়ে বাঁচতে চাই। আমি কি করে বোনের আবদার ফেলে দিতাম? তুই কি পারতি পাষান হতে? আর এখন তো ওর বাঁচা’র সম্ভাবনাই শেষ। আমার মেহু পাখি যে মরনব্যাধী বাধিয়েছে। আর আরাফা তোমার সাথে না অনেক অন্যায় করেছি। আমার জন্য তোমার জীবন বিপদে পড়েছে। সরি আসলে ভালোবাসা টা বেশি ছিল, তাই সহ্য হতো না অনিকের কথা তোমার মুখে। অনেক কষ্ট দিয়েছি আর না। আনিকা তুমি ভালো মেয়ে ওদের চক্করে পড়ে নিজের জীবন টা নষ্ট করোনা প্লিজ। সুহাস, শিহাব তোদের সাথেও অনেক অন্যায় করেছি পারলে মাফ করে দিস। তোরা আমার আপনজন তোদের সাথে কী রাগ করে থাকা যায়? আরাফা সত্যিই তুমি আমার ২য় ভালোবাসা নও একদম প্রথম ভালোবাসা। কারন আমি অরিনকেও ভালোবাসি নি ও আমার আবেগ ছিল শুধু। আর বাকিরা তো চিল করেছে যাষ্ট। আচ্ছা আমরা কি আবার আগের মতো হতে পারিনা?

#চলবে
#মেঘলা_আহমেদ(লেখিকা)