ইতি নিশীথিনী পর্ব-৪৩+৪৪

0
645

#ইতি_নিশীথিনী
#৪৩তম_পর্ব

“কি মোসাদ্দেক বাঘের মাং*স কেমন লাগলো? আজ থেকে ছাগলও মাংসাশী, কি বলো?”

মোস্তাকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলো না মোসাদ্দেক। তার পূর্বেই একটি ট্রাক পিষে দিলো তাদের জিপ। রাস্তার এক ধারে পড়ে রইলো নিথর দুটো দেহ। মূহুর্তেই সেখানে লোকের সমাগম হলো। ভিড় জমলো পুলিশের গাড়িটিকে ঘিরে। ট্রাকটি চোখের আড়াল হলো ঠিক ই। কিন্তু একজন সোচ্চার মানুষ তার নাম্বারটা ঠিক টুকে নিলো। উলটে থাকা গাড়ি থেকে খুব কষ্টে বের করা হলো র*ক্তা*ক্ত শরীর দুটোকে। ভিড়ের একজন ফোন লাগালো এম্বুলেন্সকে, একজন নিকটবর্তী পুলিশ ফাঁড়িতে। একজন নিরেট পুরুষালী কন্ঠ এর মাঝেই বলে উঠলো,
“শ্বাস আছে, শ্বাস আছে। বাঁইচে যাইবো”

মোসাদ্দেকের মাঝে হেলদোল হলো না। কিন্তু তার শ্বাসের গাঢ়ত্ব বাড়লো। মোস্তাক একটু সময়ের জন্য চোখ খুললো। তীব্র আলোতে তার চোখ ঝলসে গেলো। মস্তিষ্ক এখন বুঝতে পারছে না কি হয়েছে তার সাথে। প্রচন্ড ব্যাথায় চোখের সম্মুখে যেনো আঁধার নেমে এসেছে তার। অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু পারছে না। তার পূর্বেই জ্ঞান হারালো সে৷ ভিড়ের মাঝে অস্থিরতা তৈরি হলো। এখানে কেউ কাউকে চিনে না অথচ উপস্থিত সবাইকে এই অপরিচিত মানুষদুটোকে বাঁচানোর জন্য উগ্রীব দেখালো। যেনো এখন এই কাজের থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আর হতেই পারে না।

গোধূলী বিকেল, রোদের তেজ নেই এর কাছাকাছি। মুক্ত আকাশে উড়ে যাচ্ছে সফেদ মেঘের মালা। কিছুক্ষণ পূর্বের ঝিমিয়ে যাওয়া বৃষ্টির শেষে শীতল বাতাসে ভেজা মাটির গন্ধ নাকে এসে লাগছে। রাস্তার গর্ত গুলোর মাঝে কাঁদা পানি জমেছে। পাঁচ ছটা ছোট ছেলে মেয়ের দল সেটায় লাফালাফি করে খেলছে। এক অমায়িক দৃশ্য সেটা। আজ নিশীর মনের প্রফুল্লতার ঢেউ উঠেছে। বহুদিনের শেকল থেকে মুক্ত হবার আনন্দ বুঝি এমন ই হয়। নিশী সেই আনন্দকে অনুভব করতে পারছে শীতলের সমীরের স্নিগ্ধতায়। প্রণয় গাড়ি চালাচ্ছে, তার দৃষ্টি পিচের রাস্তার উপর। মাঝে মাঝে আড়চোখে দেখছে নিশীকে। ঠোঁটের কোনায় এখনো একটি তৃপ্তির হাসি লেগে আছে। রাস্তার দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই বললো,
“আগামীর প্লান কি?”
“কিসের প্লান?”

প্রণয়ের প্রশ্নের বিপরীতে অবাক কন্ঠে পাল্টা প্রশ্ন করলো নিশী। প্রণয় স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো,
“বাহ রে! আমরা বিয়ে শাদী করবো না? বুড়ো হয়ে যাচ্ছি তো! সেদিন দেখলাম বেশ কটা চুল পেকে গিয়েছে। আমি চান্স নিতে চাইছি না”

পেছনের সিটে বসে ছিলো সুহা। প্রণয়ের কথা শুনতেই সে হেসে উঠলো। নিশী পেছনে তাকাতেই সে বললো,
“আমি অদৃশ্য, প্লিজ ক্যারি অন”

নিশী এবার চোখ গরম করে তাকালো প্রণয়ের দিকে। কিন্তু প্রণয়ের তাতে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ হলো না। সে উল্টো জিজ্ঞাসু কন্ঠে বললো,
“আমাকে কবে বিয়ে করছো?”
“আপনার মুখে কি কিছুই আটকায় না? আর এক বিকেলেই আপনি থেকে তুমি তে চলে এলেন?”

নিশীর কথায় নিঃশব্দে হাসলো প্রণয়। গাড়ির স্টেয়ারিং এর তার ডান হাত। বা হাত দিয়ে কপালের উপরের অবিন্যস্ত চুলগুলো পেছনে ঠেলে বললো,
“সম্পর্ক বদলালে সম্বোধনও বদলায়। তুমি তো বুদ্ধিমতী মেয়ে এটুকু জানো না?”
“তা কি সম্পর্ক বদলেছে শুনি?”
“অনেক বদলেছে, অপরিচিত নারী থেকে মক্কেল, মক্কেল থেকে মেয়ের শিক্ষক, সেখান থেকে আমার প্রেয়সী। বদলায় নি?”

প্রণয়ের মুখে “প্রেয়সী” ডাকটি শুনতেই থমকে গেলো হৃদয়। প্রণয়ের গাঢ় নয়নের দিকে আর তাকিয়ে থাকা সম্ভব হলো না। দৃষ্টি সরিয়ে গাড়ির জানালার বাহিরে দিলো নিশী। ঠোঁটের কোনে অক্ষত রয়ে গেলো এক মিষ্টি হাসি। কতদিন পর এমন প্রশান্তির লহর উঠেছে জানা নেই নিশীর।

গাড়ি এসে থামলো নিশীর বাসার সামনে। সুহা সবার আগেই নেমে গেলো। সদ্য প্রেমের পরিস্ফুটন ঘটা মানব মানবীকে একা ছেড়ে দিলো সে। নিশী গাড়ি থেকে নামলো ঠিক ই। কিন্তু ভেতরে গেলো না। আজ প্রথম তার প্রণয়ের সাথে একাকীত্বে অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। অনুভূতিগুলো অবর্ণনীয়, কিঞ্চিত লজ্জা, কিঞ্চিত অস্বস্তি এবং একসমুদ্র ভালোলাগার ঢেউ। প্রণয় মুচকি হেসে গাঢ় কন্ঠে বললো,
“বললে না তো, কবে বিয়ে করছি?”
“তাড়া কিসের?”
“অনেক অপেক্ষা করেছি নিশীথিনী। আর পারবো না। এতোদিন তোমাকে পাবার আকাঙ্খা ছিলো, তাই অপেক্ষাটুকুও মিষ্টি লাগতো। কিন্তু এখন সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে, তাই অপেক্ষাটি যন্ত্রণাময় হয়ে উঠছে। আমার এলোমেলো জীবনে যে তোমাকে চাই। প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ। আমার হবে না নিশীথিনী?”

প্রণয়ের আবদারে আজ শিহরণ অনুভূত হচ্ছে নিশীর। নিখাঁদ আবদার তার, কোনো ভনীতা নেই, লুকোচুরি নেই। মনের দোয়ার খুলে নিশীকে আগলে রাখার আবদার জানিয়েছে। এতে কোনো অন্যায় নেই। নিশীর চিকন ঠোঁটজোড়া প্রসারিত হলো। কাঁপা স্বরে বললো,
“তবে আসুন বরযাত্রী নিয়ে। আমি অপেক্ষা করবো”

আজ নিশীর মাঝে জড়তা নেই। প্রণয়ের অসীম ভালোবাসার জোয়ারে ভাসতেও তার বাঁধা নেই। প্রণয় কিছুসময় ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো নিশীর দিকে। লোকলজ্জার কথাটা হাওয়ায় উড়িয়ে আকচমা বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করলো সে নিশীকে। প্রণয়ের এরুপ কার্যে মুহূর্তের জন্য জমে গেলো নিশী। শিরদাঁড়া বেয়ে উষ্ণ রক্তের প্রবাহ বইলো। নরম গালজোড়া রক্তিম হয়ে উঠলো নিমিষেই। সে শক্ত পাথরের ন্যায় দাঁড়িয়ে রইলো। প্রণয় শক্ত করে তাকে জড়িয়ে রেখেছে। যেনো ছেড়ে দিলেই কোথাও হারিয়ে যাবে নিশীথিনী। ধীর কন্ঠে বললো,
“আমি খুব জলদি ই আসবো, তোমাকে অপেক্ষা করাবো না দেখো”

এর মাঝেই কর্কশ রিংটোনটা বেজে উঠলো প্রণয়ের মোবাইলের। রিংটোনের বিশ্রী শব্দ কানে আসতেই কপাল কুচকালো প্রণয়। নিশীকে ছেড়ে ফোনটা রিসিভ করলো সে। নিশী এখনো ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে। তার মস্তিষ্কে অসাড়তা দেখা দিয়েছে। নিউরণ গুলো এখনো প্রণয়ের আচকমা বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করার ব্যাপারটা ধারণ করতে পারছে না। প্রণয় স্বাভাবিকভাবে ফোনটি ধরলো, হ্যালো বলতেই তার চোখ মুখ স্থির হয়ে গেলো। হাসি মিলিয়ে গেলো। মুখশ্রী কঠিন হয়ে গেলো। প্রণয়ের মুখোভাবের পরিবর্তন নজর এড়ালো না নিশীর৷ প্রণয় গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“এখন কি অবস্থা?”

অপরপাশের কথা চুপ করে শুনে ‘রাখি’ বলে ফোন রেখে দিলো প্রণয়। নিশী অবাক কন্ঠে শুধালো,
“কি হয়েছে?”
“মোস্তাক স্যার এবং এস আই মোসাদ্দেককে ট্রাক চাঁপা দেওয়া হয়েছে। তারা এখন হাসপাতালে?”
“বেঁচে আসেন তো?”
“এটাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। দুজন ই বেঁচে আছেন। মোসাদ্দেক মাথায় চোট পেয়েছে। কাঁচ ভেঙ্গে ওর কপালেও ঢুকেছে। এখনো জ্ঞান ফিরে নি। মোস্তাক স্যারের মাঝে জ্ঞান ফিরেছিলো। কিন্তু এখন ঘুমাচ্ছেন। তার পায়ে আর বা হাতে ফ্রাকচার হয়েছে। সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে। পায়ের হাড় ফেঁটে গেছে বলে ডাক্তারের ধারণা”
“কে করলো এমন টা”
“তদন্ত চলছে। দেখা যাক”

নিশীর মনের প্রফুল্লতা হুট করেই মিয়ে গেলো। এতো সময়ের আনন্দ সব যেনো শরতের অতর্কিত বর্ষায় ধুয়ে গেলো। এক বিশ্রী বিষন্নতা হৃদয়কে ঘিরে ধরলো। নিশীর বিষাদে ঘেরা মুখশ্রীটা একপলক দেখলো। সন্তপর্ণে একটা ছোট নিঃশ্বাস আঁড়াল করে বললো,
“চিন্তা করো না, যারা ভালো তাদের সাথে খারাপ হয় না”
“এখানে মাহাদীদের হাত নেই তো?”

বিষন্ন কন্ঠে কথাটা বললো নিশী। এই কথায় চাঁপা ক্ষোভ ও প্রকাশ পেলো। প্রণয় উত্তর দিলো না। সে শুধু বললো,
“যা হয় হয়তো ভালোর জন্য হয়”

******

ঢাকায় যাবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রণয়। নুশরাতের কেসটি যার আন্ডারে ছিলো তার সাথে কিছুদিন যাবৎ কথা হচ্ছিলো প্রণয়ের। সে আজ সকালে ফোনে জানিয়েছে সে প্রণয়কে সাহায্য করতে পারবে। তাই অবিলম্বে সে ছুটছে ঢাকা। শুধু একা সে যাচ্ছে এমনটি নয়, শুধু সে নয়, শেফালী বেগম, মায়া এবং পৃথা ও যাচ্ছে। নীরা এই কয়েকদিন নিশীর কাছে থাকবে। নিশীর থেকে নিরাপদ স্থান আর দ্বিতীয়টি নেই বিধায় ই প্রণয় সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রফিককে কাজ বুঝিয়ে দিয়েছে সে। এই কয়েকদিন কোর্ট কাচেরির কাজ ও নেই। ব্যাগ গুছিয়ে বিছানার পাশে রেখেছে প্রণয়। আলমারী খুলে একটি সাদা শার্ট বের করেছে। শার্টটি কুচকে আছে। কিন্তু শার্টটি ধোঁয়া তাই এটাই পড়বে সে। দু মাস পর চুল কেটেছে, দাঁড়িটা একটু ট্রিম করেছে। উকিল সাহেব কোনোকালে নিজের সাজসজ্জার উপর গুরুত্ব দেন নি। আজ দিচ্ছেন। তার কারণ আজ সে নিশীথিনীর সাথে ঘুরতে যাবে। নিশীথিনীর সাথে একান্তে কিছু সময় কাটাবে। ঢাকায় গেলে সপ্তাহ খানেক কই চলে যাবে টের পাবে না প্রণয়। তাই আজ বিকেলটা নিশীর জন্য তুলে রেখেছে। বুকের ভেতরে আনচান হচ্ছে। আত্মবিশ্বাসী উকিলের তার হাটু কাঁপছে। প্রেমের ব্যাপারে তার অভিজ্ঞতা যে একে বারেই শুন্য। এমন সময় ঘরে প্রবেশ করলেন শেফালী বেগম। তার চোখ লাল হয়ে আছে। তিনি রেগে আছেন। রেগে আছেন নিজের ছেলের উপর। প্রণয় শার্টটা ইস্ত্রী করতে যাচ্ছিলো, কিন্তু পারলো না। তার পূর্বেই শেফালী বেগমের হিনহিনে কন্ঠে কানে এলো,
“শুনলাম তুমি নাকি বিয়ে করবে?”

প্রণয় শান্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো। তারপর ইস্ত্রী টা গরমে দিয়ে বললো,
“এতোদিন তো তুমি ই বিয়ের জন্য উতলা ছিলে। তাহলে এখন কি হলো?”
“মেয়েটি কি নিশী”
“জানোই যখন, কেনো জিজ্ঞেস করছো?”
“প্রণয়, তুমি কি ভুলে গেছো আমি তোমার মা?”

এবার প্রণয় শান্ত দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকালো। গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“ভুল নি, তাই বিয়ের আগে জানাচ্ছি। ভুলে গেলে জানতে পারতে না”
“ওই মেয়েটার সংস্পর্শে বে*য়াদব হয়ে গেছো তুমি!”
“মা, আমি একজন প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক। নিজের ইচ্ছে, অনিচ্ছে জাহির করার অধিকার আমার আছে। আর এখানে নিশীকে টানছো কেনো? আমি তো বরাবর ই এমন। নিজের মনমর্জির মালিক। নীরাকে দত্তকের ঘটনায় তোমার ব্যাপারটায় অবগত হবার কথা। যাক গে, নিশীকে আমি বিয়ে করছি। আমার মনে হয় ব্যাপারটা নিয়ে আর জলঘোলা না করাই শ্রেয়। তোমার উচিত মা হিসেবে ছেলের খুশিতে খুশি হওয়া। আর যদি নিতান্ত দুঃখ পেয়ে থাকো আমার কিছু করার নেই। কারণ অন্যকে খুশি করা আমি বহুআগেই ছেড়ে দিয়েছি”

শেফালী বেগম চিৎকার করে বলে উঠলেন,
“তুই ঠিক করেই নিয়েছিস মামা বাড়ি আমার সম্মান রাখবি না?”
“যে বাড়িতে সম্মান নেই, যেখানে রাখা বা না রাখার প্রশ্নই উঠে না মা। আর তোমার সব কাজ কেনো সেই সম্মানেই এসে ঠেকে! কিছু কিছু সিদ্ধান্ত সুখী হবার জন্য ও নিতে হয়। তুমি বুঝবে না মা, এতোদিন বুঝো নি। আজ ও বুঝবে না”

বলেই ঘর থেকে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো প্রণয়। মায়ের সাথে অভদ্রতা করা ইচ্ছে না থাকলেও কেনো যেনো ঘুরেফিরে বে*য়াদব ছেলেটি হয়ে যায় সে। আচ্ছা, মা কেনো বুঝতে চায় না। এই জীবনটা তার। তারও সুখী হবার অধিকার আছে! সে সুখী হতে চায়। নিশীথিনীর মাঝে নিজেকে ফিরে পেতে চায়।

******

শেখ ভিলায় থমথমে পরিবেশ। মাহাদী খাবারের প্লেটের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তার গলা থেকে খাবার নামছে না। সোলাইমান শেখ কয়েকদিন যাবৎ চুপ করে বাসায় দরজা দিয়ে বসে আছেন। কার্যালয়ে যাওয়া হয় না তার। এবারের নির্বাচনের টিকিট ও পাবেন না তিনি। মাহাদীর জন্য তার বেশ নাম খারাপ হচ্ছে। কিন্তু তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। ছেলেকে বাঁচার চেষ্টায় আছেন তিনি। বিচারককে টাকা খাওয়াবার ব্যাবস্থা হয়ে গেছে। মাহাদীকে একবার বাঁচাতে পারলেই সব চিন্তার জ্বলাঞ্জলি দিবেন। নেতাগোতাদের একটু আধটু কলংক গায়ে মাখাতেই হয়। পরোটার টুকরো মুখে দিতে যাবেন তখন ই ইমাদ ছুটে এলো। আতংকিত কন্ঠে বললো,
“চাচা, পুলিশ আসছে”

সোলাইমান শেখ সাথে সাথেই চোখ মুখ কুচকে ফেললেন। গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“কই তারা?”
“বসার ঘরে”

সোলাইমান শেখ হাত না ধুয়েই উঠে গেলেন। যাবার আগে মাহাদীকে বললেন,
“তুমি যায়ে শুয়ে থাকো”

মাহাদী মাথা নাড়ালো। তার চোখে মুখে আতঙ্ক। এতোকালের নাটকের কি তিবে ইতি হতে চলেছে!

বসার ঘরে যেতেই পুলিশের মুখোমুখি হলেন সোলাইমান শেখ। তিনি কিছু বলার পূর্বেই এস.আই নিরব ওয়ারেন্ট পেপার দেখিয়ে বললো,
“ওসি মোস্তাক আহমেদ এবং মোসাদ্দেক রহমানকে হ*ত্যার চেষ্টায় আপনাকে এরেস্ট করা হলো, জনাব সোলাইমান শেখ”………

চলবে

#ইতি_নিশীথিনী
#৪৪তম_পর্ব

বসার ঘরে যেতেই পুলিশের মুখোমুখি হলেন সোলাইমান শেখ। তিনি কিছু বলার পূর্বেই এস.আই নিরব ওয়ারেন্ট পেপার দেখিয়ে বললো,
“ওসি মোস্তাক আহমেদ এবং মোসাদ্দেক রহমানকে হ*ত্যার চেষ্টায় আপনাকে এরেস্ট করা হলো, জনাব সোলাইমান শেখ”

নিরবের শীতল কন্ঠটা বোধগম্য হতে সময় লাগলো সোলাইমান শেখের। সে হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো৷ কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না৷ হ*ত্যা! তাও ও.সি মোস্তাককে? অসম্ভব। হ্যা তার মোস্তাকের উপর ক্ষোভ জন্মেছিলো। প্রতারণা করেছে সে। টাকা নিয়েও সে তাকে পেছন থেকে ছো*রা চালিয়ে দিয়েছে। এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতার শাস্তি সে পেতো ঠিক কিন্তু এতো জলদি নয়। বর্তমানে রায়ের ব্যাপারেই সোলাইমান শেখের সম্পূর্ণ মনোনিয়োগ ছিলো। সেখানে এই পুলিশ কি না বলছে সে তাকে হ*ত্যার চেষ্টা করেছে। সোলাইমান সাহেবের কপাল কুঁচকে গেলো বাজে ভাবে। হিনহিনে স্বরে বললেন,
“মাথা ঠিক আসে? কি বলছেন? আমি কেনো তাদের মা*রতে যাবো?”
“প্রমাণ তো তাই বলছে। এই নাম্বার প্লেটের ট্রাকটি তো আপনার তাই না? আপনার নামেই রেজিস্ট্রেশন। চালক ও আপনার লোক। আপনার মালামাল পাঠাবার ব্যাবসা আছে। মালামাল এইজেলা থেকে অন্য জেলায় পাঠাতে এই ট্রাক ব্যবহৃত হয়। তাই না?”

সোলাইমান সাহেব হা করে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলেন। ইমাদের মুখের রঙ ও পালটে গেলো। এই ট্রাকটি তাদের গোডাউনের ট্রাক। কিন্তু তারা তো এমন ষড়*যন্ত্রের ছক কাটে নি। ইমাদ একটু গলা উঁচিয়ে বললো,
“তাতে কি? এই ট্রাক আমাদের হইলে কি প্রমাণ হয়?”
“প্রমাণ অনেক কিছুই হয়। জেলে গেলে সব প্রমাণ মিলিয়ে দিবো। এই ইনাদের দুজনকে এরেস্ট করো”

নিরবের শান্ত আদেশের পালন হলো সাথে সাথেই। হাবিলদার ইকবাল সাথে সাথেই এরেস্ট করলো দুজনকে। ইমাদ এখনো বুঝে উঠতে পারছে না। হচ্ছে টা কি তার সাথে। সোলাইমান শেখ গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“কাজটা ঠিক হচ্ছে না”
“ঠিক ভুল না হয় আমরাই বুঝে নিবো”

পলি বেগমের মুখশ্রী শান্ত। তিনি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তার চোখে বিষন্নতা। তিনি দাঁড়িয়ে আছেন বসার ঘরের দরজার হাতল ধরে। তার স্বামীকে হাতে হাতকড়া লাগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এমন পরিণতি যেকোনো স্ত্রীর পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তবুও তিনি শান্ত চোখে দেখছেন সেই দৃশ্য। বিষন্ন চোখে সবকিছু দেখছেন তিনি। তারা ইমাদকেও ছাড়ে নি। মাহাদীর অসুস্থতার বাহানায় তাকে গ্রেফতার করা হয় নি। তবে খুব জলদি তার অসুস্থতার সত্যতা প্রকাশিত হবে। মোস্তাকের জ্ঞান ফিরলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মোস্তাকের জিপ যে রাস্তায় ছিলো সেখানে ওভারটেক করাটা অস্বাভাবিক। এবং ট্রাকটি এমনভাবেই জিপ পিষেছে যাতে সেটা দূর্ঘটনা কম ইচ্ছাকৃত ঘটনা বেশি দেখাচ্ছিলো। পুলিশদের শত্রুর অভাব নেই ঠিকই কিন্তু শত শত্রুর মাঝে বিশেষ শত্রুটিকে খুঁজে নিতেও তাদের সময় লাগে না। মোস্তাকের ভাষ্যে সন্দেহের তীর যাচ্ছিলো সোলাইমান শেখের দিকেই। তারপর ট্রাকের এবং ট্রাকচালকের খোঁজ পেতেই দুয়ে দুই চার হলো। ট্রাকচালকের ভাষ্য,
“আমি দিন খাটা মজুর সাব। টেকা পাইলে কাম করতে আমার গায়ে বাঁধে না। আমারে যা কওয়া হইছে আমি তাই করছি। আমারে ছাইড়ে দেন। আমার দোষ নাই। আমার দোষ নাই”

তার ভাষ্যের উপর ই ওয়ারেন্ট বের করা হয়েছে। যার ফলাফল আজ ইমাদ এবং সোলাইমান শেখ জেলে। এবার মাহাদী শেখের পালা।

****

শরতের সাদা মেঘের আকাশে একরাশ প্রসন্নতার মিষ্টি গন্ধ। দুধ সাদা কাঁশফুলগুলো শীতল বাতাসে নুয়ে যাচ্ছে। বিকেলের রোদে তেজ নেই। হালকা তাপ গা বুলিয়ে যাচ্ছে শুধু। কাঁশফুলের সারির মাঝে ভেজা মাটিতে খালি পায়ে হাটছে নিশী। তার শুভ্র নগ্নপায়ে কাঁদা লেগে যাচ্ছে। তবুও জেদ খালি পায়ে হাটবে। এতে করে নাকি মাটির কাছে থাকা যায়। প্রণয় বাঁধা দিলো না। সে তার নিশীথিনীকে দুজন ভরে দেখছে। শুভ্র শাড়িতে অনন্য লাগছে তার প্রেয়সীকে। কাজলকালো চোখে দিয়েছে কৃষ্ণ কাজল। ঠোঁটজোড়ায় হালকা রঙ্গের লিপস্টিক। পায়ে রুপোর নুপুর। হাটলেই রিনঝিন শব্দ হচ্ছে। যা দোলা দিয়ে যাচ্ছে প্রণয়ের শীতল হৃদয়ে।পড়ন্ত বিকেলের তেজহীন আভায় যেনো শুভ্র নারীটিকে আরোও বেশী স্নিগ্ধ লাগছে। দুচোখ ভরে দেখছে প্রণয়। একটি নুয়ে পড়া কাশফুল ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে তার ঘোরলাগা গাঢ় নয়নে নজর পড়লো নিশীর। সেই দৃষ্টির দিকে বেশি সময় তাকাতে পারলো না নিশী। লজ্জা ভর করল তার শরীরে। শুভ্র গালজোড়া রক্তিম হয়ে উঠলো। নিশী তার দৃষ্টি নামিয়ে বললো,
“এভাবে হাভাতের মতো না দেখলেই পারেন”
“হাভাতে হলে হাভাতে। তা বলে কি আমার শুভ্র জ্যোৎস্নাকে দেখবো না! এতে আলাদা শান্তি। তুমি বুঝবে না। তোমার মাঝে সেই প্রেমপ্রেম রসটুকুই নেই”

প্রণয়ের কন্ঠে কিঞ্চিত অভিমানের আভাস পেলো। তার মুখখানাও খানিকটা লম্বাটে লাগলো। প্রণয়ে এই মিয়ে যাওয়া মুখখানা দেখে বেশ হাসি পেলো নিশীর। তবুও হাসি দমিয়ে বললো,
“তাহলে এই রসকষহীন কাঠখোট্টা নারীর সাথে প্রেম করতে কে বলেছে? প্রেমপ্রেম রসসহ কাউকে বেছে নিতেন”
“আমি তো প্রেম করতে চাই না। আমি ভালোবেসেছি। ভালোবেসেছি আমার নিশীথিনীকে। সে যে সবচেয়ে আলাদা”

নির্লিপ্ত কন্ঠে কথাটা বললো প্রণয়। তার কথাটা হৃদয়ে যেয়ে লাগলো যেনো। হৃদস্পন্দনের বেগ বাড়লো। সূর্য অস্ত যাচ্ছে, পৃথিবীর বুকে নামছে তমসা। সেই সাথে নিশীর হৃদয়ে নেমে এলো প্রণয়ের এক পলশা বৃষ্টি। শীতল বৃষ্টিতে থমকে গেলো মস্তিষ্ক। গভীর নয়নে তাকিয়ে রইলো সে প্রণয়ের দিকে______

*****

মোস্তাকের রুমটি অনেক প্রশস্থ। বেশ গোছানো। টেবিলের উপর একটি ফুলদানীও আছে। যাতে সকালেই তাজা ফুল রাখা হয়। হাসপাতালের এই কেবিনটাকে কেবিন বলেই মনে হয় না তার। তার স্ত্রী থাকার বন্দোবস্ত ও আছে। এতোটা বিলাসিতা জানা থাকলে আর দু-তিনবার দূর্ঘটনা হলেও ক্ষতি নেই। তার চিকিৎসার খরচ সরকারি ভাবেই হচ্ছে। তাই যত দামী রুম ই হোক না কেনো তার চিন্তা নেই। মোস্তাক মহানন্দে স্ত্রীর দেওয়া আপেল খাচ্ছে। তার স্ত্রী আবার ঢং করে আপেলের খোসাও ছিলে দিয়েছেন। তবে দাঁতে লাগছে না। এমন সময় প্রণয়ের প্রবেশ ঘটলো। হাতে একটি ফুলের বুকে। রোগী দেখতে আসলে ফল এবং হরলিক্স নিয়ে যাওয়া এই দেশের প্রথা। অনেকে আবার বিদেশী ফল ও নিয়ে আসে। ড্রাগণ ফল। ফলটি অখাদ্য বটে, তবে আয়রন অনেক। প্রণয় আবার তা করলো না। সে সুন্দর রজনীগন্ধার বুকে নিয়ে এলো। তাকে দেখেই মোস্তাক হাসি মুখে বললো,
“একি মশাই, আপনি?”
“এলাম আপনাকে দেখতে। কেমন আছেন?”
“এই তো ফিট এন্ড ফাইন”

প্রণয় বসতে বসতে বললো,
“মোসাদ্দেক কেমন আছেন?”
“আলহামদুলিল্লাহ জ্ঞান ফিরেছে। ওকে নিয়ে ভয়ে ছিলাম”
“একটু রিস্ক হয়ে গেলো না?”

ভনীতাবিহীন ভাবেই প্রপণয় কথাটা বললো। তার কথায় কিছুসময় তার দিকে তাকিয়ে রইলো মোস্তাক। তারপর স্ত্রীকে ইশারা করলো যেনো সে একটু বাহিরে যায়। তার স্ত্রীও তাই করলেন। তারপর বাঁকা হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে মোস্তাক বললো,
“বড় মাছ ধরতে গেলে একটু আধতু পোনার জাল বিছাতেই হয়। আপনি তো উকিল, আপনি তো জানেন ব্যাপারটি। বড় জয়ের আগে ছোট খাটো বলি”
“হ্যা, সেটাই দেখলাম সোলাইমান শেখ এখন শিকের ভেতরে। তব আপনি যে নিজেদের উপর ই হামলার প্লান করবেন ভাবতে পারি নি”
“কি করবো বলুন, শু**** টাযে বিচারক কে হাত করার ধান্দায় ছিলো। এই সুযোগ ছাড়লে হতো?”
“যাই বলেন, আসল খেলা আপনি ই খেলেছেন। আচ্ছা একটু এদিক ওদিক হলে কি হতো? আপনার আর মোসাদ্দেকের পরিবার আছে”

প্রণয়ের কথাটা শুনতেই মোস্তাকের হাসিটি চওড়া হলো। এই পুরো দূর্ঘটনাটি তার, প্রণয় এবং মোসাদ্দেকের একটি প্লান ছিলো। মাহাদীকে শিকে পুরার সুযোগ হলেও সোলাইমান শেখের ক্ষেত্রে সেটা ছিলো না। বরং সে বাহিরে থাকলে মাহাদীর শাস্তি হবে না। সোলাইমান শেখের মতো মানুষেরা বিত্ত এবং ক্ষমতার প্রয়োগে বাঘের দুধ ও কিনতে পারে। তাই এই মারাত্মক খেলাটা তার খেলে। জীবনের ঝুকি নিয়ে এই বিশাল পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করে। ট্রাক যদিও ধাক্কাটা আস্তেই দিয়েছিলো। কিন্তু তাতে মোসাদ্দেক বেশ আঘাত ই পেয়েছিলো। শুধু সৃষ্টিকর্তার দয়া ছিলো নয়তো প্রাণ ও যেতে পারতো। প্রণয় বহুবার তাদের বারণ করেছিলো। কিন্তু মোস্তাক সুযোগ ছাড়া করে নি। ফলে সারা দুনিয়া জানে এই দূর্ঘটনাটি সোলাইমান শেখের ই করানো। মোস্তাক হাসি অক্ষত রেখে বলে,
“এই ইউনিফর্মটা পড়ার সময় আমি শপথ নেই, অন্যায়কারীরা শাস্তি পাবে। আর অসহায় মানুষ ন্যায়। এই সমাজের কিছু অযৌক্তিক অন্যায়ের জন্য সেটা হয় না। তাই মাঝে মাঝে আমাদের ও শয়তান হতে হয়। অন্যায়কারীদের হারাতে কিছুটা অন্যায় করতে হয়, ঝুকি নিতে হয়। এটা এমন কিছু না। নিশ্চিন্ত থাকুন। মাহাদী শাস্তি পাবেই”

প্রণয় হাসলো। বুকে টা টেবিলে রেখে বললো,
“আজ আসছি। ভালো থাকবেন”

বলেই বেরিয়ে গেলো সে। মোস্তাক হেসে কাটা আপেলের টুকরো মুখে দিলো। মজাই লাগছে আপেলের টুকরো খেতে।

******

নিশীর ঘরের মেঝেতে নীরার ড্রয়িং পেপারের ছড়াছড়ি। প্রণয় ঢাকা যাবার পূর্বে তাকে তার বাড়িতেই রেখে গেছে। যাবার আগে বলে গেছে,
“ম্যাডামকে কিন্তু যন্ত্রণা দিবে না”

অবুঝ বাচ্চাটা কি বুঝলো জানা নেই, তবে সে মাথা দোলালো। নীরা আজকাল কথায় সাড়া দেয়। মাথা দোলায়, গলায় আওয়াজ করে। যা নিশীর খুব ভালো লাগে। সে এখন নিজের নাম লিখতে পারে। যদিও এবড়োখেবড়ো তার লেখা। কিন্তু সে বাংলার “নীরা” লিখতে পারে। নতুন স্কুলের ম্যাডামদের সাথেও তার বেশ মিল হয়েছে। প্রথম দিন যেদিন গিয়েছিলো, নিশীর ওড়না ধরে ছিলো সে। মোটেই ভেতরে যাবে না। হারমান মাইনর স্কুলের ম্যাডামরা নিশীকে তখন অনুরোধ করে,
“আপনি ওর সাথেই থাকুন আজ। আসলে বাচ্চারা মা ছাড়া থাকতে চায় না”

নিশীর বলতে ইচ্ছে হয় নি যে সে তার মা নয়। উলটো সেই দিন নীরার সাথেই স্কুলে কাঁটিয়েছে সে। ধীরে ধীরে এখন নীরা তাকে ছাড়া স্কুলে থাকে। ওখানে অনেক স্পেশাল চাইল্ড আছে। তাদের দেখলেই বুকের ভেতরটা শীতল হয়ে যায়। কতটা নিষ্পাপ তারা। অথচ এই সমাজ তাদের হেয় করে। নীরা একটি কাগজ নিয়ে নিশীর হাতে দিলো। নিশী অবাক চোখে কাগজটির দিকে দেখলো। কি চমৎকার সেই আঁকা! একটি ছোট মেয়ে এবং তার পাশে একটি নারীর। যার পোশাক নিশীর মতো। নিশীর কোমল কন্ঠে শুধালো,
“এটা কে? আমি?”
“হু”

করে শব্দ করলো নীরা। নিশী তার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
“আমার নীরা অনেক জিনিয়াস”

এমন সময় কলিংবেল বাজলো। সাথে ফোনটি বেজে উঠলো নিশী। নিশী প্রথমে দরজা খুললো। রফিক দাঁড়িয়ে আছে। নিশী তাকে দেখে অবাক হলো।
“আপনি এখানে?”

নিশীর প্রশ্নে সে বললো,
“স্যার পাঠিয়েছে। আপনাদের বাজার করে দিতে বলেছেন। একটু পানি হবে?”
“অহ, বসুন”

রফিকের হাতের বাজারের ব্যাগটি নিয়ে ভেতরে চলে এলো নিশী। নীরা সেখানেই মেঝেতে ড্রয়িং করছে। নিশীর ফোনটি এখনো বাজছে। নিশী বিরক্ত হয়ে ফোনটি ধরতেই প্রণয়ের ব্যাগ্রকন্ঠ শোনা গেলো,
“নিশী, তুমি কোথায়?”
“আমি বাসায়?”
“নীরা কি করছে?”
“ও ড্রয়িং করছে”
“আমার কথা কান দিয়ে শোনো। আমি খুলনা আসছি। রাস্তায় এখন। তুমি আর নীরা সাবধানে থাকবে। বাসায় যেনো কেউ না আসে। কেউ না মানে কেউ না”
“কিন্তু রফিক ভাইয়া এসেছে বাজার নিয়ে। আপনিই তো পাঠিয়েছেন
“আমি রফিককে পাঠাই নি…….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি