#প্রেমরোগ-১১
#তাসনিম_তামান্না
কুয়াশা আর মেঘা সকালে না খেয়ে তুষার দের বাসা থেকে চলে এসেছে মিথ্যা বলে। তিশা আসতে দিতে না চাইলেও কুয়াশা বুঝিয়ে রেখে এসেছে। সেই সকালে তখন সকলে ঘুমে শুধু তিশা জানে কুয়াশা মেঘার চলে আসার খবর। কুয়াশা মেঘা বাসায় যায় নি একটা লেকের পাড়ে বসে আছে সকাল হওয়া সকলে জগিং করছে। কুয়াশা বসে আছে চুপচাপ মেঘা কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বলল
” এভাবে মিথ্যা বলে নিয়ে আসলি যে। কি হয়েছে তোর কাল রাত থেকে চটে আছিস ”
” কি হবে? ও বাড়িতে আমার দম বন্ধ লাগছিলো। কিছু ভালো লাগতেছিল না। বাই দ্যা ওয়ে ওসব রাখ তুই কান্না কর ”
মেঘা অবাক হয়ে বলল ” কান্না করবো কেনো? ”
” রিদ ভাইয়া নো নো তোমার ভালোবাসা মানুষটির বিরহে ”
মেঘা মুখটা কালো করে বলল ” একদম আমাকে খেপাবি না। জানিস… ”
কুয়াশা ভ্রু কুঁচকে বলল ” থেমে গেলি কেনো? না বললে জানবো কিভাবে? ”
” আমার মনে হয় রিদ ভাইয়া ও না আমাকে ভালোবাসে কাল রাতে যখন কথা হচ্ছিল তখন ওনি বলছিল ওনার মতো এতিম ছেলেকে আমার বাবা-মা জামাই হিসেবে মানবে না তাদের ও তো শখ আছে মেয়েকে নিয়ে ”
কুয়াশা অবাক হয়ে বলল ” রিদ ভাইয়ার নম্বর কোথায় পেলি? ”
” তুষার ভাইয়া কাছ থেকে ”
কুয়াশা চমকে উঠে বলল ” পাগল হয়ে গেছিস তুই শেষে আর লোক পেলি না। ঔ লোকের পেটে পেটে কত শয়-তানি জানিস? একবার সন্দেহ ডুকে গেলে তা বের করে ছাড়ে ”
মেঘা ভাবুক কন্ঠে বলল ” এমন কিছু ই হবে না ”
” হ্যাঁ তুমি তো সব জানতা ”
” ওসব বাদ দে তো টেনশন আর নিতে পারতেছি না
” হুম বাসায় চল না-কি? আর একটু পরে কড়া রোদ উঠবে। ”
” হ্যাঁ চল ”
সকালে নাস্তার টেবিলে কুয়াশা মেঘাকে না দেখতে পেয়ে তুষারের বাবা তিশার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
” কুয়াশা, মেঘা মামনিরা কই? ”
” চলে গেছে কলেজে না-কি কি ইনপটেন কাজ আছে ”
তুষারের বাবা রেগে গেলেন বলল ” আর তুমি যেতে দিলে এতো সকালে দুইটা মেয়ে ”
” ওরা জেদ ধরে ছিল কি করবো ”
” ফোন দিয়ে দেখো পৌঁছেছে কি না ”
” হ্যা দিচ্ছি ”
মেঘ বলল ” মামনি বাবাই আমাকেও অফিসে যেতে হবে। তুতুল থাক আমি যাওয়ার সময় ওকে নিয়ে যাবো ”
” সে কি আজ থেকে জয়েন্ট করছো? ”
” জি ”
তুষার নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে। কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে না। ও জানতো এমন টায় হবে। মাথা ঠান্ডা হওয়ার পর ভেবে দেখেছে চ-ড় মারা টা বাড়াবাড়ি হয়ে গেছে। ভেবেছিল সরি বলে নিবে কিন্তু পর মুহুতে সে সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে।
কুয়াশা মেঘা বাড়ি এসে দেখলো। সকলের সকালের খাওয়া দাওয়া শেষ করে পুরুষেরা নিজেদের কাজে গেছে কেয়া, মুন্নি, পাখি কি নিয়ে কথা বলছে আর হাসাহাসি করছে। কুয়াশা আর মেঘালে দেখে মুন্নি বলল
” আসছেন তাহলে নবাবজাদীরা তা ওতো সকলে বের হলেন আর এখন বাসায় আসছেন? তা কোথায় ছিলেন শুনি? ”
কুয়াশা মেঘা দু’জনে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে বলল
” লেকের পাড়ে ”
” বাহ তা মিথ্যা বলে চলে আসছেন কেনো? ”
কুয়াশা কেয়া কে আর মেঘা মুন্নি কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল ” মিস করছিলাম তো ”
মেয়েদের পাগলামি দেখে না হেসে পারলো না ওরা। কুয়াশা পাখির উচ্চু পেটে কাছে গিয়ে বলল
” কি রে চ্যাপ কেমন আছিস? তাড়াতাড়ি চলে আয় আমাদের এখানে। ”
ফ্রেশ হয়ে নিচে এসে খাচ্ছিল তখন পাখি বলল
” ননদিনীরা প্যাকিং করা শুরু করে দাও ”
মেঘা প্রশ্ন করলো ” কিসের প্যাকিং ভাবি? ”
” আমরা সবাই মিলে গ্রামে বেড়াতে যাবো! ”
কুয়াশা মেঘার চোখ কোটোর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম খুশিতে খাবার রেখে লাফিয়ে উঠে বলল
” সত্যি? কবে? কখন? ”
পাখি ওদের এক্সাইটমেন্ট দেখে বলল
” কাল ”
মেঘা বলল ” কিসে যাবে? ট্রেনে? ”
” নাহ। গাড়িতে ”
কুয়াশা মেঘার মন খারাপ করে বলল ” দূর গাড়িতে গেলে মজা হয় না-কি। ট্রেনে গেলে কত মজা হয় ”
কেয়া বলল ” পাখির এই অবস্থায় ট্রেনে জার্নি সেফ না ”
” তাও ঠিক ”
কুয়াশা মেঘা চোখেচোখে কি বলে দুজনে একসাথে বললে উঠলো
” কিন্তু আমাদের তো কোনো ড্রেস নেই ”
কেয়া রেগে বলল ” মা-রবো টেনে এক চ-ড় বেয়া-দপ দুইটা মেঘার বিয়ে তে কত শপিং করলি আর কোনো শপিং হচ্ছে না ”
কুয়াশা মুখ ভেংচি কেটে বলল ” হুহ্ লাগতো না। কিছু দিতে হবে না তোমাদের ”
কেয়াও বলল ” তোকে দিচ্ছে কে আমি ও দেখে নিবো ”
কুয়াশা আর কিছু বলল না। খেয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। সন্ধ্যায় তুতুল মেঘ বাড়ি ফিরলো। তুতুলের মন খারাপ ছিল সারাটা রাস্তা ওবাড়ি ছেড়ে আসায়। কিন্তু এ বাড়িতে এসে কুয়াশা মেঘার জন্য বেশিক্ষণ মন খারাপ করে থাকতে পারলো না। পাখি বলল ” এতো মন খারাপ করো না। কাল তো দেখা হচ্ছেই ”
তুতুল খুশি হয়ে বলল
” হ্যাঁ তাই তো ভুলেই গেছিলাম ”
কুয়াশা এতোক্ষণে বুঝতে পারলো ও বাড়ির সবাই যাবে মানে তুষার ও যাবে। বড্ড রাগ লাগলো নিজের রাগ সামলাতে না পেরে বলল
” ও বাড়ির সবাই যাবে মানে? তুষার হনুমান ও যাবে? তাহলে আমি যাবো না ”
কেয়া মেয়ের মুখে উদ্ভট কথা শুনে রেগে বললেন
” এসব কেমন কথা কুয়াশা দিন দিন অভদ্র হয়ে যাচ্ছো তুমি। তুষার কে হই তোমার? রেস্পেক্ট দিয়ে কথা বলতে পারলে বলবে না হলে না। আর তোমার যাওয়ার দরকার নেই তুমি বাসা পাহাড়া দিবে ”
কেয়া রেগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো। কুয়াশা মায়ের বকুনি শুনে মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।
পাখি বলল ” কি হয়েছে সোনা মন খারাপ করছিস কেনো? আর এভাবে বলতে হয় না ”
কুয়াশা চুপ করে রইলো কোনো কথা বলল না।
তুতুল বলল ” ভাইয়ের সাথে কি ঝগড়া হয়েছে? মন খারাপ? ”
কুয়াশা গম্ভীর কন্ঠে বলল ” কিছু হয় নি ”
কথাটা বলে আর দাড়ালো না। নিজের রুমে চলে গেলো। মেঘা বসে ফোন টিপছিলো। কুয়াশা চলে যেতেই পাখি আর তুতুল মিলে মেঘাকে চেপে ধরলো। মেঘা ঘাবড়ে গেলো সে তো এ সম্পর্কে কিছু জানে না।
” মেঘা চটপট বলে ফেল কি হয়েছে ”
” আমি সত্যি বলছি ভাবিপু আমি এ সম্পর্কে কিছু জানি না। কাল রাতে কোথায় জানি গিয়েছিল ঘন্টা খানিকক্ষণ পর এসে দরাম করে দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। সারারাত ফ্যাসফ্যাস করে কান্না করলো। কিছু জিজ্ঞাসা করলেই আবল তাবল বলা শুরু করলো। ও কাল রাত থেকেই ক্ষেপে আছে। সকালেও এই জন্য মনে হয় ও বাড়ি থেকে চলে এসেছে। ও আমাকে কিছু বলে নি। ”
তুতুল বলল ” ভাইয়ার কাছে মন হয় বকুনি শুনছে না হলে কুয়াশা সহজে এতোটা ক্ষেপার মেয়ে না। ”
চলবে ইনশাআল্লাহ