#সীমাহীন_ভালোবাসার_নীড়২
#লেখিকাঃনওশিন_আদ্রিতা
#পার্টঃ১৫
,
,
,
,
পুরাতন সৃতি ভাবতেই চোখ বেয়ে অশ্রু গরিয়ে পড়তে শুরু করলো।ছেলেদের চোখ দিয়ে নাকি সহজে অশ্রু বের হয় না। যতোক্ষন না আঘাতটা তীব্র হয়। নির আর সহ্য করতে পারলোনা এর আগেও একবার এই ওটি থেকে সাদা কাফনে একজন বেরিয়ে এসেছে সে পারবেনা পুনরায় সে কষ্ট সহ্য করতে। চোখ মুছে দৌড় লাগালো ওটির ভিতরে। আজ সবার অবাক হবার দিন। আজ প্রথম বার সবাই দেখছে নির্দয় পাষান লোক এর পাগলামী প্রিয়জন কে হারানোর অপরদিকে আজ প্রথম বার ডক্টর আদ্রিয়ান খানের হাত কাপছে অপরেশান থেয়াটারে।
নির ভিতরে ঢুকে চোখ যায় বেন্ডেজ এ আবৃত তার মায়াবিনীকে। কোত টা নিশপাপ লাগছে তার রাগিনী নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে শুভ্র বিছানাই। কষ্টে বুকের বামপাশটা তীব্র ব্যাথায় আক্রান্ত ।
বেড এর পাশেই আদ্রিয়ান কে বসে থাকতে দেখে যেনো নির এর নিশ্বাস আটকে আসছে সকল ডাক্তারের মাথা নিচু হয়ে আছে।
—সবাই আমার বার্বি কে ফেলে বসে আছো কেন আমার বার্বি এই ভাবে নিস্তেজ হয়ে শুয়ে আছে কেনো। আমার বার্বি কেনো কথা বলছেনা কেনো আমাকে রাগ দেখাছেনা কেনো কেনো। আদ্রিয়ান তোর বোন কেন এই ভাবে আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।আদ্রিয়ান আমার বার্বি কে আমার কাছে ফিরিয়ে দে আদ্রিয়ান।
হয়তো ভাগ্যবতী সে নারী যার জন্য তার প্রেমিক পুরুষ তার ভাই পাগলের মতো কান্না করছে।যাকে ধরে রাখারা জন্য হাজারো পার্থনা করছে। এক ভাই ওটিতে বসে কান্না করছে অন্যদিকে ওপর ৩ ভাই(রিয়াজ,রেয়ান,ড্যানি) মসজিদে বসে আল্লাহর সামনে হাত তুলে নিজের বোনের প্রান ভিক্ষা চাইছে বাহিরে দ্বারিয়ে চোখের পানি ফেলছে তার দুই বোন। এতো এতো দোয়া সফল করতেই হয়তো চমৎকার এর মতো আদ্রির হার্টবিট পুনরায় সচল হয়ে উঠলো নড়ে উঠলো নিস্তেজ হয়ে থাকা হাত অস্ফুট শব্দে উচ্চারণ করে উঠলো মা।
ডাক্তার সব উপস্থিত সবাই চমকে উঠলো।বাচার ১০ পার্সেন্ট চান্স নিয়ে হয়তো এই প্রথম কোন রুগী ফিরে এসেছে।
নির ধপ করে বসে পড়লো ফ্লোরে। আদ্রিয়ান যেয়ে জড়িয়ে ধরলো তার বোন কে
—তুই সত্যি বলতি বোন আমি ভাই ছেলে হিসেবে অক্ষম তাই তো প্রথমে মা আর দ্বিতীয় বার তোকে হারাতে বসেছিলাম। তোর কিছু হয়ে গেলো আমি কিভাবে বাচতাম কেন ওই ভাবে পালিয়ে গেলি কেনো
আদ্রি অক্সিজেন মাস্ক পড়া অবস্থায় হাসলো।আদ্রিয়ান যন্ত সহকারে বোনের কপালে চুমু একে দিলো।
—–
পার হয়ে গেলো একটা সপ্তাহ। আদ্রিকে আজ রিলিজ দেওয়া হবে অনেক কষ্টে এই ৭দিন তাকে হস্পিটালে রাখা হয়েছে।
আদ্রি আধশোয়া হয়ে নিহাল খানের সমস্ত কিছুর খবর নিচ্ছিলো হঠাৎ তার মাথায় অদ্ভুদ এক প্ল্যান এলো।ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি বিদ্যমান রেখে ফোন বন্ধ করে চোখ জোড়া বন্ধ করলো হাত বেশিক্ষন নাড়াচাড়া করলেই ব্যাথা করে। হঠাৎ আদ্রির নাকে অদ্ভুদ পার্ফিউম এর ঘ্রাণ এসে লাগতেই চোখ জোড়া মেলে তাকায়
সামনে দৃষ্টি দিতেই বুকে অদ্ভুদ ব্যাথা উঠলো কেন যেনো সামনে থাকা ব্যাক্তিটাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করলো। আদ্রির দৃষ্টি দেখে হাসলো নির হয়তো এই দৃষ্টির কারন বুঝিতে পেরেছে ওই।
—কি বার্বি ডোল এই ভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে কেনো বুকের বামপাশটাই কিছু কিছু হচ্ছে নাকি (আদ্রির মুখের উপর ঝুকে)
নির এর কথায় স্পষ্ট রসিকতা কিন্তু আজকে এই রসিকতাই তার রাগ উঠলোনা লজ্জাও লাগলোনা বরং অদ্ভুদ এক কান্ড করে বসলো টুপ করে নির এর কপালে নিজের অধর চেপে ধরলো।নির চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো সে ভাবেই তার পুতুল বউ এমন কিছু করবে। আদ্রি অধর জোড়া সাথে সাথে সড়ালোনা।বরং নির এর কপালেই তাদের ঠায় দিলো বেশ কিছুক্ষন দূরে সরে আসতে চাইলে নির বাধা দিলো না। বরং আলতো করে আদ্রিকে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে নিলো।
নির এর কোলে করেই ভালোবাসার নীড় নামক বাংলো তে প্রবেশ করলো আদ্রি।
—রিয়াজ ভাইয়া মেহের এলোনা
—নাহ এটা শুধু আমার আর তোমার জায়গা জানেমান এখানে অন্য কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ। এটা আমাদের নীড় সীমাহীন ভালোবাসার নীড়।
আদ্রি নির এর বুকে মাথা গুজলো
—কি হলো জানেমান প্রেমে পড়লা নাকি
আদ্রি হেসে উত্তর দিলো “উহু”
নির হেসে দিলো
—আমি তো প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি ভীষণ ভাবে
—আপনার নাকে সমস্যা হয়েছে ডাক্তার দেখান
—আমার বুকেও সমস্যা হয়েছে একটু দেখে দেওনা
—ডাক্তার নই আমি
—আমার একান্ত ব্যাক্তিগত ডাক্টার তুমি যার ছোয়াই আমার সকল ব্যাথা কষ্ট মন খারাপ দূর হয়ে যায়।
,
,
,
দুপুর পেরুতেই আদ্রির রুমে প্রবেশ ঘটে নির এর। আদ্রি অবাক হয় আচমকা নিড় এর আশাতে। নির আদ্রিকে কিছুনা বলে পাজাকোলে তুলে নেয়
—আরে আরে কি করছেন কই নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে
নির চুপ কিছু না বলে সামনে এগুয়।
আদ্রির চোখ যায় সোফার দিকে যেখানে আদ্রিয়ান রিয়াজ মেহের ড্যানি সহ আরও দুইজন বসে আছে একজন বয়স্ক মুরব্বি টাইপের লোক আরেকজন সুট বুট পরা লোক আদ্রি আৎকে উঠে।সে যেটা ভাবছে সেটা বাস্তবে রুপ নেওয়া মানে ভয়ংকর কিছু
—নির কি চলছে আপনার আপনার মাথায় দেখুন
—সবার সামনে কিছু দেখতে পারবোন জানেমান রাতে দেখিও যা দেখার সব দেখবো এখন এই সব নটি টাইপ কথা বাদ দেও।
আদ্রি আহমক হয়ে গেলো মানে কই থেকে এই লোক কই চলে গেলো। লজ্জায় বিরক্তিতে আপন মনেই “অসভ্য বাক্যটা উচ্চারণ করে উঠলো
—কাজী সাহেব কাজ শুরু করুন
নির এর কথায় কাজী কালেমা পড়তে শুরু করলো। সাথে সাথে আদ্রি দাঁড়িয়ে পড়ে
—আমি কিছুতেই এই বিয়ে করবোনা
নির কিছু বলবে তার আগেই আদ্রিয়ান আদ্রিকে বুকে টেনে নিলো
—সোনা বাচ্চা তোর বিশ্বাস আছেনা তোর ভাইয়ের উপরে
আদ্রি ছোট করে জবাব দিলো “হুম”
—তাহলে বিয়ে টা করে না বোন আমার। সোনা বাচ্চাটার কোন ক্ষতি এই ভাই করবে না
আদ্রি আর কিছু বললোনা ভাইয়ের বুকে জোড় সোড় হয়েই বসে পড়লো। কাজীও নিজের কাজ করলো।৩ কবুল বলতে বলাই কিছু সময় থম মেরে বলে উঠলো।নির কে জিজ্ঞেস করলে সে ও বলে উঠে।কাজীর কাজ শেষ হলে উকিল ও রেজিস্ট্রার পূরণ করে দিলো। কিছু সময়ের ব্যবধানেই দুইজন বেধে গেলো নতুন সম্পর্কে।স্বামি স্ত্রী নামক পবিত্র বন্ধনে।
,
,
,
রাতের দিকে।আদ্রি গোসল করার জন্য বিছানা থেকে উঠতে নিলেই হাতে ব্যাথা করে উঠায় বসে পড়ে।নির খাবার নিয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখে আদ্রি এক হাতে ভর করে উঠার ট্রাই করছে কিন্তু দুর্বল শরীর নিয়ে উঠতে পারছেনা সাথে ব্যাথায় ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরাও তার দৃষ্টি এড়ায় না
—উঠছো কেন বার্বি ডোল কিছু চায়
—সাওয়ার নিবো কেমন জানি লাগছে আজ ৭দিন হতে চললো গোসল করিনা চুল গুলাও কেমন আঠা আঠা করছে(নিচু স্বরে কথা বলে উঠে অজনা কারনে তার প্রচুর লজ্জা লাগছে।)
নির বিনা কথাই কোলে তুলে আদ্রিকে ওয়াসরুমে নিয়ে গেলো।একটা টুলে বসিয়ে দিয়ে যত্ন করে আদ্রি চুলে স্যাম্পু করে দিলো।আদ্রি অবাক হয়ে দেখছে।
—ব্যান্ডেজ যেনো না ভিজে সে ভাবে সাওয়ার নেও আমি এখানেই দ্বাড়িয়ে রয়েছি।
কিছুক্ষন পরেই আদ্রি ডাক দিতেই পিছনে ঘুরতে নিলে আদ্রি বাধা দেয়
—পিছনে ঘুরবেন না প্লিজ কোন মহিলা স্টাফ কে ডেকে দিবেন আসলে এক হাতে চেঞ্জ করতে পারবোনা
হঠাৎ নির এর করা কাজে বকা বনে গেলো আদ্রি মুখ জোড়া হা হয়ে গেলো।
চলবে!