#অতঃপর_প্রেমের_আগমন
#ইরিন_নাজ
#পর্ব_১৪
— পড়া যা দিয়েছি তা কিন্তু কমপ্লিট হওয়া চাই। আমি এসে যেনো সব পড়া পাই। আর যদি না পারো তাহলে শা*স্তি’র জন্য প্রস্তুত থেকো। তখন কিন্তু কেউ ঠে’কা’তে পারবে না আমাকে। মাথায় রেখো।
আদ্রিশ কথা শেষ করে সোজা নিচে নেমে গেলো। মা কে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো সে। আয়ানা সেদিকেই কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। সে এতক্ষন নিজের রুমের সামনে এসে চিন্তা করছিলো ভিতরে যাবে কি যাবে না। এর মাঝেই রুমের বাহিরে আসে আদ্রিশ। আর উপরোক্ত কথাগুলো বলে। আয়ানা দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে রুমে প্রবেশ করলো। এখন তাকে পড়তে বসতে হবে।
——-
রাত ১০:০০ টা বা*জে এখন। আয়ানা আদ্রিশ যাওয়ার পর থেকে অনেকক্ষণই পড়েছে। বিকালে এক ঘন্টা ঘুমিয়েছিল। তারপর হালকা কিছু নাস্তা করে আবার পড়তে বসেছে। হাত পা ব্য*থা হয়ে যাওয়ায় মাঝখানে একবার উঠেছিল। নিচে থেকে একটা ঘু’রা’ন দিয়ে এসে বেলকনিতে গিয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো। এখন আবার পড়তে বসেছে।
আদ্রিশ রুমে প্রবেশ করে দেখলো মনোযোগ সহকারে পড়ছে আয়ানা। তাই তাকে ডিসটার্ব না করে নিঃশব্দে কাপড় নিয়ে চলে গেলো ফ্রেস হতে।
হঠাৎ কেউ চেয়ার টে*নে বসায় কেঁ*পে উঠলো আয়ানা। ভ*য়া’র্ত দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকাতেই আদ্রিশের মুখ টা চোখের সামনে ভেসে উঠলো। আদ্রিশ অবাক হয়ে বললো,
— কথায় কথায় ভ*য় পাও কেনো?
আয়ানা কোনো জবাব দিলো না। মাথা নিচু করে ফেললো। আদ্রিশ আয়ানার জবাবের অপেক্ষা না করে বললো,
— পড়া হয়েছে?
আয়ানা মিনমিন করে বললো,
— মোটামোটি।
আয়ানা জানে না তার হৃ’দ’পি’ন্ড আজ ঢো*ল, ড্রা*মে’র মতো বা*জ’ছে কেনো! এমনিতে সে পড়াশোনায় বরাবরই ভালো। খুব দ্রুতই পড়া আয়ত্তে আনতে পারে। আর এখনো যে তার পড়া হয়নি এমন না, তার মোটামোটি সব পড়াই হয়েছে। কিন্তু আদ্রিশ কে পড়া দিতে হবে ভাবলেই অর্ধেক পড়া মাথা থেকে হা’রি’য়ে যাচ্ছে। আয়ানার অনেক বেশি না’র্ভা’স লাগছে। তার মনে হচ্ছে আদ্রিশ জিজ্ঞাসা করলে সে কিছুই পারবে না।
আয়ানার ভ*য় কিছু সময়ের জন্য দূর করলো আদ্রিশ। বললো,
— চলো ডিনার করে আসি। দেন তোমার পড়া নিবো।
আয়ানা নিরবে সম্মতি দিলো। ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। নিচে এসে দেখলো অনু, প্রীতি আর খালা মিলে টেবিল সাজাছেন। ফোঁ’স করে একটা শ্বাস ছাড়লো আয়ানা। অনু তাকে একটা কাজও করতে দিচ্ছে না। কোনো কাজে হাত লাগাতে দেখলেই তার এক কথা, ‘ কাজ করার জন্য, সংসার সামলানোর জন্য এখনো অনেক সময় পড়ে আছে। সে যেনো পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়।’
———
বই খাতা সামনে নিয়ে বসে আছে আয়ানা। আদ্রিশ তাকে পড়া ধরার জন্য সামনে বসে আছে। ভ*য়ে অনবরত হাত মো*চ’ড়া’চ্ছে সে। আদ্রিশ হয়তো আয়ানার মনের অবস্থা বুঝলো। তাই নরম গলায় বললো,
— ভ*য় পাওয়ার কিছু নেই। যা পারো ঠান্ডা মাথায় উত্তর দাও। আমাকে ভ*য় পাওয়ার কিছু নেই। আমি বা*ঘ ও না, ভা*ল্লু’ক ও না। আমি শুধু চাই, তুমি সময়মতো পড়া কমপ্লিট করো। ফাঁ’কি’বা’জি না করো। এখন আমি যা জিজ্ঞাসা করবো রিল্যাক্স হয়ে উত্তর দিবে।
আয়ানা আদ্রিশের কথায় কিছু টা শান্ত হলো। আদ্রিশ বেশ অনেকগুলো প্রশ্ন করলো আয়ানা কে। আয়ানা মোটামোটি সবগুলো প্রশ্নেরই উত্তর দিতে পেরেছে দুই তিনটা ছাড়া। সেটা নিয়েই আপাতত আয়ানা ভ*য়ে আছে। যদি আদ্রিশ পা’নি’শ’মে’ন্ট দেয়। কিন্তু সে আয়ানা কে পা’নি’শ’মে’ন্ট নিয়ে কিছুই বললো না। শুধু গম্ভীর গলায় বললো,
— আরও ভালো করে পড়তে হবে।
আয়ানা মাথা নাড়ালো। আদ্রিশ পুনরায় আয়ানা কে পড়ানো শুরু করলো। পার হলো প্রায় দেড় ঘন্টা। আদ্রিশ পড়া বুঝাতে বুঝাতে আয়ানার দিকে তাকিয়ে দেখলো, সে ঘুমে ঢু’ল’ছে। আদ্রিশের যে ঘুম আসছে না, তা নয়। তারও ঘুমে চোখ লাল হয়ে গেছে। সে বই টা বন্ধ করে দিলো। আদ্রিশের বই বন্ধ করায় চ’কি’ত হলো আয়ানা। সোজা হয়ে বসলো। আদ্রিশ বললো,
— আজকের মতো এতটুকুই থাক। বাকি টা সকালে বুঝিয়ে দিবো। যাও ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। আমিও ঘুমাবো।
আয়ানা মাথা না’ড়ি’য়ে উঠে গেলো। ফ্রেস হয়ে এসে দেখলো আদ্রিশ ঘুমিয়ে গেছে। যদিও ঘুমাচ্ছে কিনা বোঝা যাচ্ছে না। চোঁখের উপর হাত রেখে শুয়ে আছে সে। মাঝখানে একটা বালিশ দেয়া। আয়ানা কোনো প্রকার শব্দ না করে ধীর পায়ে এগিয়ে রুমের লাইট বন্ধ করে এক কোণে গু’টি’য়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
——-
আগের দিনের মতো আজকেও আদ্রিশের ঘুম আগে ভা*ঙ’লো আর আয়ানার হাত তার বুঁ’কে’র উপর পেলো। তার বুঁ’কে’র উপরের টি-শার্ট এর অংশ শ*ক্ত করে মুঠোয় পুরে নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে সে। আদ্রিশ সাবধানে আয়ানার হাত ছাড়িয়ে উঠে পড়লো। ফ্রেস হয়ে এসে আয়ানা কে ঘুম থেকে তুলে দিলো। তারপর নিয়ম অনুযায়ী দেড় ঘন্টা পড়ানোর পর তাকে ছাড়লো। নাস্তা করে তাকে কোচিং এ পৌঁছে দিয়ে নিজের গন্তব্যে চলে গেলো।
ক্লাসে বসে আছে আয়ানা। আজকেও সে আগে এসেছে। মিথি আর দ্বীপ এখনো আসে নি। আয়ানা ক্লাসরুমে ভালো করে একবার চোখ বুলালো। তাতে সে বুঝলো এখানে চার পাঁচ জন করে আলাদা আলাদা গ্রুপ আছে। সে মনে মনে শুকরিয়া আদায় করলো দ্বীপ আর মিথির জন্য। ভাগ্যিস তাদের পেয়েছে। নাহলে এদের কারোর সাথে মিশার ক্ষমতা তার নেই।
কাঁধে জো*রে’শো*রে একটা থা*বা পড়ায় লাফিয়ে উঠলো আয়ানা। পাশে তাকিয়ে দেখলো মিথি দাঁ’ত কে’লি’য়ে বসে আছে। না চাইতেও আয়ানা চোখ গ*র’ম করে তাকালো মিথির দিকে। মিথির হঠাৎ আ*ক্র’ম’ণে সে প্রচন্ড ভ*য় পেয়েছে।
আয়ানার চোখ গ*র’ম করে তাকানো দেখে মিথি ভ*য় তো পেলোই না উল্টা আরও দাঁ’ত কে’লি’য়ে বললো,
— আরে সুন্দরী দেখি রা*গ ও করতে জানে।
আয়ানা মিথির হাতে হালকা করে একটা বা*রি দিয়ে বললো,
— তুই হঠাৎ করে মা*র’লি কেনো? আমি কতো ভ*য় পেয়েছিলাম জানিস?
মিথি খিলখিল করে হেসে জবাব দিলো,
— মা*র’লে যদি ভ*য় বা ব্য*থা’ই না পাস, তাহলে মে*রে লাভ কি?
আয়ানা নাকের পা*টা ফু’লি’য়ে মিথির হাতে আরেকটা থা*প্প’ড় দিলো কিন্তু মিথির হাসি কমলো না। আয়ানা কে ভ*য় পাওয়াতে পেরে সে বিশ্ব জয় করেছে, এমন একটা ভাব নিচ্ছে। আয়ানা জিজ্ঞাসা করলো,
— তোর ফ্রেন্ড দ্বীপ কই?
মিথি হাসি থামিয়ে মুখ কুঁ’চ’কে বললো,
— ওই যে দেখ আইতাসে রাজার বাচ্চা। বে*টা আস্ত একটা ব*জ্জা’ত। ওর জন্য প্রতিদিন আমার দাঁড়ানো লাগে কিন্তু বে*টা’র খোঁজই পাওয়া যায় না। আজকেও নামে না, নামে না। পড়ে ওর বাসায় গিয়া টা*ই’ন্না নিয়ে আসছি।
দ্বীপ ধু*প করে নিজের ব্যাগ টা টেবিলে রেখে দুঃ’খী দুঃ’খী কণ্ঠে বললো,
— মিথি ফে*ত্নী, তোর জন্য আমি চুলে ভালো করে জেল দিতে পারি নাই। আরেকটু পর আইলে কি হইতো? চুলটাও ঠিকমতো সেট করতে পারলাম না।
মিথি রা*গী রা*গী কণ্ঠে বললো,
— ল’বা, রাখ তোর জেল। এমনিতেই তো চুল তোর কা*উ’য়া’র বাসা। জেল দিয়ে কি পার্মানেন্ট কা*উ’য়া’র বাসা বানাইতে চাস? এতোই যখন সাজুগু’জু’র শখ, ভোর থেকে শুরু করতে পারো না? পড়ে পড়ে ঘুমাবা, আবার কোচিং এ আসার আগ মুহূর্তে সাজবা তা তো হবে না ম’নু।
কথায় না পেরে দ্বীপ ফেইস টাকে দুঃ’খী করে বললো,
— তুই একটুও ভালা না মিথি ফে*ত্নী।
মিথি বললো,
— ঐ’ডা আমি জানি, তোর কওয়া লাগবো না।
এদের ঝ*গ’ড়া দেখে মিটমিট করে হাসছে আয়ানা। সে হাসি চা’পি’য়ে টপিক ঘুরানোর জন্য বললো,
— এখানে সবাই দেখি গ্রুপ আকারে থাকে। তোরা কোনো গ্রুপে নাই?
মিথি মা’ছি তা’ড়া’নোর’ ভঙ্গিমায় হাত নাড়িয়ে বললো,
— আরে না, আমাদের দুইজনের সহজে কারোর সাথে বনে না। আর আমরা কারোর আ’ন্ডা’রে চলতে পছন্দ করি না। নিজের মনমতো চলি। কিন্তু কোনো গ্রুপে গেলে দেখা যায়, তাদের মন রক্ষা করে চলতে হয়। আরও অনেক ঝা*মে’লা আছে। এই যেমন দেখ, ওই যে ফার্স্ট আর সেকেন্ড বেঞ্চের যে কয়জন আছে, তারা সব ব্রিলিয়ান্ট এর দল। একদম কর্নারে যেই ছেলে টা বসে আছে, ও সবচেয়ে ব্রিলিয়ান্ট। তাই ওর সাথে মিশার জন্য বাকিরা সারাক্ষণ ওরে তেল মা*রে। যা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। আর আমরাও এতো বিল্ডিং না। আমরা আমাদের মতো থাকি। যারা ভাব দেখায় না, তাদের সাথে টু’ক’টা’ক কথা বলি। কথা বললেই বোঝা যায় কে ফ্রেন্ডশিপ করতে ইচ্ছুক, মিশতে ইচ্ছুক।যেমন তোকে দেখে অন্যরকম লেগেছে। তাই প্রথম দিনেই ফ্রেন্ডশিপ করলাম। এখন পরবর্তীতে যদি তুই অন্যরকম হয়ে যাস, তখন দেখা যাবে আমরা দুইজন ও তোর থেকে ধীরে ধীরে দূরে চলে আসবো।
জানিস আমার আর দ্বীপের বন্ধুত্বে একটা বিশেষ জিনিস আছে। আমরা প্রচুর ঝ*গ’ড়া করি, সারাদিনই বলতে গেলে ঝ*গ’ড়া করি। কিন্তু দিনশেষে আমরা একে অপরের বেস্টু। সেই ছোট থেকে আমরা এমন। ঝ*গ’ড়া করে ব্রেক আপ করি আবার তার দুই মিনিটের মাথায় প্যাচ আপ হয়ে যায়।
মিথির কথায় মৃদু হাসলো আয়ানা। এরমাঝে দ্বীপ এগিয়ে এসে মিথি কে উদ্দেশ্য করে বললো,
— জা’ন্স ই’মো’শ’না’ল হয়ে গেলাম তোর কথায়। দেখসোস আমি কতো ভালো। তুই নিজেই স্বীকার গেলি। আমার খুব কা*ন্না পাচ্ছে। আয় গলা জড়ায় কাঁ*দি।
মিথি মুখ ঝা*ম’টা মে*রে বললো,
— দ্বীপের বাচ্চা দূরে যা।
দ্বীপ দাঁ’ত কে’লি’য়ে বললো,
— বিয়েই হলো না আর বাচ্চা। অবশ্য তোর কারণেই তো মেয়ে প’টা’তে পারি না। নাহলে এতক্ষনে বিয়ে করে বাচ্চার বাবা হয়ে যেতাম।
মিথি আয়ানা কে ট*প’কে দ্বীপের হাতে জো’রে একটা চি*ম’টি দিয়ে বললো,
— রা*গা’বি না একদম বলে দিলাম।
কিন্তু দ্বীপ তো দ্বীপই। সে এটা ওটা বলে মিথি কে রা*গি’য়ে দিতে লাগলো। আয়ানার ভীষণ ভালো লাগলো তাদের এমন বন্ধুত্ব দেখে। মনে পরে গেলো কলেজ ফ্রেন্ড রিয়ার কথা। মেয়েটা তাকে অনেক ভালোবাসতো। গরীব হলে কি হবে, মেয়েটার মন অনেক বড়। আয়ানার হুট করে ইচ্ছা জাগলো রিয়ার সাথে দেখা করার। সে ভাবলো আদ্রিশ কে বলে দেখবে। রিয়ার বাড়ি সে চেনে। যদি আদ্রিশ তাকে নিয়ে যায়। না জানি মেয়ে টা কেমন আছে?
চলবে?